লিখেছেনঃ অলভ্য ঘোষ
মাল বাজার থেকে চাল, ডাল,আটা, সুজি বাটার ফর্দ মিলিয়ে অমিত বাজার করেছে ড্রাইভার বুধুয়া ব্যাগ বয়ে বয়ে ঘুরছে পিছন পিছন ।দর-দস্তুর করা থেকে ভাল সবজী বাছাই করে নিতে অমিত ওস্তাদ। শর্মি বোকার মতো শুধু নির্ভেজাল দর্শক হয়ে সঙ্গ দিচ্ছে।
-আপ নিতো বেশ হিসেবী লোক মশাই ।
-আজকাল কার দিনে হিসেবী না হলে চলে ।আপনার বুঝি খুব দরাজ হাত ।
শর্মি পাল টা এমন একটা প্রশ্নের সণমুখিন হবে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি ।তার সম্পর্কিত
কোন কথা উঠলেই সে স্তম্ভিত হয়ে যায় । শামুকের মতো নিজেকে গুটিয়ে নেয় কঠিন অবয়বের অন্তরালে ।প্রতি উত্তর না পেয়ে একাই বকে যাচ্ছিল অমিত ।
-এখান কার জল হাওয়া খুব ভাল ।তাড়া তাড়ি খাবার হজম হয় ।……..তবে সাপ খোপ ……..বিছে……..জোঁক এসব থেকে একটু সাবধান থাকবেন ।……আপনার সু আছেতো?
-না মানে সু পরার অভ্যাস আমার নেই ।অমিত বলে
– তা বললে তো হবেনা ।যেখানে যেমন সেখানে তেমন ভাবে থাকতে হবে ।চলুন জুতোর দোকানে ।
শর্মি বাধা দেয়;-না….না…থাক ।ওটা না হয় কদিন বাদে ।
বুধুয়া বলে; -বিছা বড়া খতর নগ দিদিমণি ।
অমিত এক গাল হাসে ;-বুঝেছি আপনার কাছে এখন পয়সা নেই…..তাই…..
-না মানে।
শর্মি ভীষণ লজ্জা পায় সত্যিই শর্মির কাছে এখন মাত্র গোটা পঞ্চাশ টাকা ।কলকাতা থেকে যে অবস্থায় সে এখানে এসেছে তা শর্মি আà �° ঈশ্বর ছাড়া আর কার পক্ষে জানা সম্ভবপর নয় ।
তবুও তৃতীয় একজন বুঝতে পারলো ।শর্মির হাত ধরে সামনের একটা জুতোর দোকানে অমিত ঢুকে পড়ে ।শর্মি কয়েক মুহূর্তে অমিতের এই আপন করে নেওয়ার উচ্ছলতাকে
প্রতিবাদ জানাতে পারেনা ।সম্মোহিতের মত সে দোকানে ঢোকে ।ভাষা খুঁজে না পেয়ে বলে।
-আমার ভীষণ খারাপ লাগছে ।…….এভাবে আপনি …..
কিছুটা আদুরে শাসন করে অমিত বলে-
-খারাপের কি আছে à ��মি আপনাকে গিফট করছি ।
শর্মি আত্ম-স্বমর্পনে আপত্তি জানায় ।
-মাত্র এক দিনের পরিচয়ে এতটা কি ঠিক হচ্ছে ।
আরো চেপে বসে অমিত ।
-ঠিক আছে আজকের কাচা বন্ধুতা পরে যদি আপনার মনে হয় পাকা সম্ভব নয় ।আপনি না হয় দামটা ফিরিয়ে দেবেন ।
আর মুখ খুলতে পারেনি শর্মি ।বুধুয়া সামনের দুটো পোকা ধরা দাঁত বারকরে হাসে। অমিতের দিকে ইঙ্গিত করে বলে ।
-পাহাড়ি বিছুয়া;যিসকো প�¦ �করা ওগেয়া ।
এবার শর্মি-ও না হেসে পারলোনা ।বাজার শেষে ভ্যানে মাল তুলে বুধুয়া বলে।
-বহুত ভুক লেগেছে অমিত দাদা …..
অমিত বলে ; -চল খোকা ময়রার দোকানে ।
চারটে করে কচুরির অর্ডার দেয় অমিত । শর্মি বলে;
-না আমার দুটো …
অমিত বলে ; -সেকি এতটা পরিশ্রম হলো আপনার খিদে পায়নি ?
বুধুয়া ছোলার ডালে কচুরি চুবিয়ে পাকলাতে পাকলাতে বলে ।
-জিলাপি খাইয়ে দ�¦ �দিমণি কলকাত্তায় এমন জিলাপি পাবেন না ।
অমিত ভেংচি কাটে ।
-জিলাপি খাইয়ে দিদিমণি…..
খাবার জন্যে নোলা একেবারে ছক পক করছে ।শর্মির খাওয়া সবার আগে শেষ হয় ।শর্মি জগ হাতে নিয়ে দোকানের কালো ড্রামটাতে শালপাতা ফেলে হাত ধোয় । দোকানদারের পেট উঁচু হাতপা গিল গিলে মুখে মেছেদা পরা নাক থেকে সিকনি ঝরা ছেলেটা হাপুস নয়নে তাকে দেখতে থাকে ।ব্লাউজের ভেতরে রাখা পার্স বারকরে একটা পঞ্চা শ টাকার নোট দেয় শর্মি দোকানদারকে ।অমিত মুখ ভরা জিলিপি নিয়ে বলে ;
-একি করছেন করছেন –আমি দিচ্ছি ।
শর্মি বলে ; -বন্ধুতা কি একতরফা হবে।
মাল বাজার থেকে ছয় কিলোমিটার পথ ।সারা রাস্তা অমিত বকবক করে চলে ।
-এটা পুলিশ কোয়াটার …ওটা লাটা গুড়ি ফরেস্ট…..ওটা গুরুমারা ক্যাম্প ।তির তির করে বয়ে চলা নদীটার গায়ে বুধুয়াকে বলে;
-গাড়ি থ�¦ �মা ।
দূরে অস্পষ্ট শ্বেত শুভ্র পাহাড় টাকে দেখিয়ে বলে;
-ওই দেখুন কাঞ্চনজঙ্ঘা ;একটু বেলায় আর ওকে দেখতে পাবেন না।
-কেন ও কি ভরের স্বপ্ন ?
শর্মির প্রশ্নের উত্তরে অমিত বলে ; -স্বপ্ন নয় সত্যি ।ও ওর জায়গাতেই থাকে বেলা বাড়লে অমাদের চোখের স্বচ্ছতা কেবল হারিয়ে যায়।
বুধুয়া বলে; -না দিদিমণি ও লুক ছুপি খেলে ।
শর্মি বলে ; -কেন এমন হয় ।
শর্মির মনে হচ্ছিল অমিত এক দার্শনিক যে জীবনের অনেক কঠিন জটিল কথা সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে ।শর্মি যখন ভাবনায় মশগুল ছিল অমিত বুট খুলে ফুল প্যান্ট ফোল্ড করে হাঁটু জলে নেমে পড়ে ।তারপর চোখে মুখে জল ছিটিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। শর্মি এগিয়ে গিয়ে কলকল করে বয়ে যাওয়া জলের স্রোত হাতে মাখে একটা পাথরের ওপর দাড়িয়ে । অমিত হাত বাড়ায় ।
-নেমে আসুন ।
-না ভয় লাগে ।
-আমি আছিতো ।
হাঁটুর কাপড় বাঁহাতে তুলে ধরে ।জুতো জোরা পারে ছুড়ে ফেলে অমিতের হাত ধরে শর্মি । পায়ের তলা দিয়ে বয়ে চলেছিল স্রোত আকাশে মেঘের দৃশ্যপট পালটাচ্ছিল মুহূ মুহূ ।শন শনে হাওয়ায অবাধ্য আঁচলটাকে শর্মি সামাল দিতে গিয়ে জলের তোরে পরে যাচ্ছিল। অমিত জাপটিয়ে ধরে নেয় । লজ্জা মিশ্রিত ভৎশোনায় শর্মি বলে –
-আপনার জন্য এখুনি আমার হাত পা ভাঙছিল । আমাকে পরে তুলে দি�¦ ¨ দেখি ।
বুধুয়া হাতের বিড়ি নিভিয়ে হেসে লুট পুটি খায় ।

সারা দুপুর শর্মি তার পরে যাওয়ার কথা মনে করে একা একাই হাসল । গতকাল শর্মি এখানে এসেছে এর মধ্যে অমিত তার সাথে যেরকম আচরণ করছে যেন কত পরিচিত । শর্মি অমিত সম্পর্কে যত জড়তা প্রকাশ করেছে ;অমিতের প্রাণোচ্ছল আগ্রাসনে ততোই সবকিছু সরল হয়ে গিয়েছে । প্রেম শর্মির কাছে আকাক্ষ্মিত নয় । ভালবাসা বস্তুত একটা ধান্দা ।যার ওপর তার প্রচণ্ড ঘৃণা । কিন্তু কোন অপ্রতিরোধ্য বলে –ঘৃণার ভেতর ভালোলাগাà �° মৌমাছি ভালবাসার পরাগ মেখে উড়ে বেড়ায় ।ব্যাখ্যা করা কঠিন ।

দুপুরটা বিছানায় শুয়ে অক্লেশে দিনের সুখ স্মৃতি রিভিউ করে উল্টে পাল্টে যখন কাটছিল। দরজায় খটখট আওয়াজ পড়লো । বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে অমিত কে দেখে একগাল হাসে শর্মি ।
– চলুন আপনাকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ।
– কোথা থেকে ?
– সামনের গ্রাম থেকে । দেখবেন খুব ভাল লাগবে ।
– তাহলে একটু বসুন , মুখে -চোখে জল দিয়ে নিই ।
অমিত ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই চতুর দিকে চেয়ে বললো ;< BR> – একি ঘর টাতো দেখছি পরিষ্কার করা হয়নি । হারুর মার কাণ্ডজ্ঞান দেখেছেন ।
– না মানে আজ আর সময় পেলাম না কাল ভাবলাম –
– না –না আপনি পারবেন কেন ;এত ঝুল ঝাড়া ; টেবিল চেয়ার সরানো মুখের কথা ।
– আমার অভ্যাস আছে আপনাকে ওনিয়ে ভাবতে হবেনা ।
কথা বলতে বলতে বাথরুমের বেসিন খুলে মুখে সাবান দিতে থাকলো শর্মি ।
শর্মির কাছ পর্যন্ত পৌছাতে গলার জোড় একটু বাড়িয়ে অমিত বল�¦ �ো ।
– এতদিন স্বয়ং এর স্বয়ং সম্পূর্ণ নির ভেজাল সদস্য ছিলাম এক মাত্র আমি । এবার দেখছি সংখ্যাটা বাড়ল ।
টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে শর্মি বাইরে বেড়িয়ে আসে । ঠাট্টা করে বলে –
– কাজের লোকের পরিসংখ্যান বাড়ায় আপনি মনে হচ্ছে আঘাত পেয়েছেন ।
সাথে সাথেই অমিত বলে ;
– মোটেই না । সংখ্যা লঘুদের গরিষ্ঠ হয়ে ওঠা ব্যথার নয় সুখের ।
“মিলে মিশে করি কাজ ;হারি জিতি নাহ�¦ ¿ লাজ । ” তবে আপনাকে আগে ভাগে সাবধান করেদিই ; এই ঘরে এক লড়ি আরশোলা আর দুই লড়ি ইঁদুর রয়েছে । ইঁদুর আরশোলায় যদি আপনার কিঞ্চিত দুর্বলতা থেকে থাকে ; আজ রাতটা আপনি আমার ঘরেই থাকতে পারেন । অমি না হয় ।

আরশোলা ইঁদুরে যে শর্মির ভয়নেই এমনটা নয় । তবে অমিত কে সে আর নতুন করে পীড়ন করতে চায়না । তাই বলে বসলো –
– আপনার মতো বীর পুরুষ সকলে না হলেও । একটু আধটু সাহস অনেকেরই আছে ।
অমিত অক্লেশে বলে -থাকলেই ভালো ।
– প্লিজ আর একটু ।
বাসন্তী রংয়ের শাড়ীটা নিয়ে আবার বাথরুমে ঢুকে যায় শর্মি ।
অমিত বলে । – এই আপনাদের মেয়েদের বড় সমস্যা । সাজতে গুছতে জীবনের অ�¦ �্ধেকটা সময় নষ্ট করে ফেলেন ।
চেঞ্জ করতে করতে বাথরুম থেকে শর্মি বলে ;
– আপনাদেরও সময় নষ্ট হয় মশাই ।দাড়ি কামাতে সময় লাগেনা ।
সামনের টেবিল থেকে ” গীতবিতান ” হাতে তুলে পাতা উলটাতে উলটাতে অমিত বলে ।
– আপনি বুঝি গান করেন ।
শর্মি গলা সপ্তমে তুলে বলে । – একটু আধটু ।
– শোনাতে হবে কিন্তু ।
– শোনাবার মতো গলা আমার নয় ।
– ব্যাপারটা কিন্তু আমি মোটেই হাল্কা ভাবে নিচ্ছি না ।
– সে অন্য কোনদিন হবে খোন ।
– কথা দিচ্ছেন তো ?
শর্মি বাইরে বেড়িয়ে এসে বলে । – মানুষের মুখের কথায় যদি আপনার ভরসা থাকে তাহলে দিলাম কথা । তবে দেখবেন গান শুনে আবার ঘুমিয়ে পরবেন না যেন ।
অমিত বলে ; – না–না গাইতে না পারলেও শুনতে আমি ভীষণ ভালবাসি ।
তারপর দুজনে বেড়িয়ে পড়ে �¥ ¤ ফাঁকা রাস্তা দুপাশে শাল বোন নীড়ে ফেরা পাখির কলরব আর স্নিগ্ধ আবির মাখানো আলুলায়িত আকাশ মাটির সোঁদা গন্ধ ।চুপ চাপ হাঁটার ছেলে অমিত নয় ।একের পর এক প্রশ্ন অবতরণ করে চলেছিল ।পড়া শোনার দিনগুলো কেমন ছিল ? শর্মির বন্ধুদের মধ্যে কেউ অমিতের মতো প্রগলভা ছিল কিনা ? প্রিয় ফুল….প্রিয় রং…আর কত প্রিয় জিনিসের খবর আদায় করে নিচ্ছিল শর্মির কাছ থেকে । অমিতের শেষ প্রশ্নটার জবাবে নিথর হয়ে যায় শর্ মি । – ফেলে আসা জীবনের কোন অধ্যায়টা আপনার সবচেয়ে পছন্দের ।
শাল বনের আঁচলে মুখ লুকান সূর্য টার মতো লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে উঠছিল শর্মি ।বুদ হওয়া চোলাই মদের গন্ধ আর একদল মৃত দেহের সুসজ্জিত বাসরে তার দম আটকে আসা জীবনের স্মৃতি শুধুই বেদনার ।অনেক ক্ষণ শর্মিকে চুপ করে থাকতে দেখে ;অমিত কথা না বড়িয়ে বলে-
– চলুন আপনাকে হরির চায়ের দোকানের চা খাওয়াই । একবার খেলে আজীবন মুখে লেগে থাà ��বে ।
ভারি হওয়া পরিবেশ আবার কথার পিষ্টে কথা চাপিয়ে অমিত হাল্কা করার চেষ্টা করছিল সে জানে এখানে য়ারা আসে তাদের প্রত্যেকের অতীত তার মতো ছিন্নমূল । তবুয়ে কেন শর্মির আঘাত পাওয়ার মতো প্রশ্নটা অমিতের মাথায় এসেছিল অমিত নিজেও জিনে না । মনে মনে অমিত যখন নিজেকে দংশন করছিল; শর্মি বলে বসে –
– আমার কথা তো অনেক বললাম । কই আপনার সম্পর্কে কিছু বললেন নাতো ।
এক গাল হাসে অমিত । – আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছুই নেই জানেন ।
এই জঙ্গল পাহাড় এখান কার মানুষ এরা সবাই আমার আপন জন । এদের সাহচর্যেই আমার কথা বলতে শেখা হাঁটতে শেখা বড় হয়ে ওঠা বাঁচতে শেখা । আমাদের আশ্রমের উত্তরে যে খামর প্রজেক্টটা রয়েছে ; ওখানে আগে একটা আস্তাবল ছিল ব্রিটিশ পিড়িয় ড়ের।
নামেই আস্তাবল ঘোরা টোরা কিছুই ছিলনা । খামার হওয়ার আগে পর্যন্ত ওটা ছিল ধ্বংস স্তূপ । অমি রোজ বিকালে à ��কবার করে যেতাম । সদ্যজাত আমাকে ওখান থেকে কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল শুনে ছিলাম । ছোট বেলায় ভাবতাম যদি আমার মা কখনো ওখানে আমাকে খুঁজতে আসে মাকে বলবো কেন ফেলে গিয়েছিলে ।
আবার স্বভাব সুলভ হাসে অমিত ।
– ফেলে দিলে আবার কখনো কেউ কুড়িয়ে নেয় বলুন ।
শর্মির দিকে চেয়ে দেখে সে দরদর করে ঘামছে । চোখ মুখ থমথমে ।অমিত বলে ।
– একি আপনার চোখে জল । দেখলেন তো শুধু মুধু আমার কথà �¾ বলে এমন সুন্দর বিকাল টাই মাটি করে দিলাম ।
দুঃখ কষ্ট যেন ছায়া শত্রু এড়িয়ে যাব ভাবলেও পিছু ছাড়ে না । আসলে তাদের জীবনে এমন আলোক বর্তিকার সন্ধান কম যেখানে ছায়ার মৃত্যু ঘটে ।আবার অমিতের মোন দংশন করে এই ভেবে ।
অস্ফুটে শর্মি বলে – -আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে । আপনার কি চা না খেলেই নয় ।
অমিত বলে – – না আমার তেমন নেশা নেই ।চলুন আশ্রমে ফেরা যাক ।

আশ্রমে পৌঁছে শর্মি সোজা নিজের ঘরে পৌঁছে যায় । দরজা বন্ধ করে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদে ।

উত্তর কলকাতার ঘিঞ্জি গলির এক ফালি ঘর শর্মির অতীত । কত কাস্টমর এসেছে তাদের ঘরে । বিজলী বাবু নিয়ে ঘরে ঢুকলে শর্মিকে সিঁড়িতে বসে অপেক্ষা করতে হতো। সে তখন বছর তেরোর । ঘুমচ্ছিল ;কখন য়ে মা বাবু নিয়ে ঘরে ঢুকেছিল টের পায়নি । বাবুটি বোধয় সহৃদয় ছিলেন । ঘুম ভাঙাতে দেয়নি । মেঝের ওপর মাদুর পেতে মাথায় বালিশ দিয়ে যখন নগ্ন উন্মত্ততার শ্বাস বায়ু ঝড় তুলেছে ; শর্মির ঘুম ভেঙ্গে যায় ।
– এই রোখ….রোখ….শয়তানি মাগী দুরহ এখান দিয়ে ।
শাড়ি গায়ে জড়াতে জড়াতে শর্মিকে ঘর থেকে বাইরে বাড় করে দেয় শর্মির মা ।বাবুটি ফিক ফিক করে হাসে । শর্মির আজও মনে পড়ে ছুটকি আর সে সেদিনের দেখা প্রক্রিয়ার রেওয়াজ করেছিল লুকিয়ে চিলেকোঠার ঘরে ।সেই প্রথম তার শরীরের বদরক্তে ভরে গিয়েছিল প্যান্ট ।” স্বয়ং” এর সুপ্রিয়া দির তত্ত্বাবধানে শর্মি স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিল । মাকে কারা যেন কান ভাঙানি দà ��ল মেয়েকে ফুসলিয়ে এরা মোটা টাকায় মুম্বাই কিংবা দুবাই তে বেচে দেবে । বইগুলো কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেললো মা ।
–তোর পড়াশোনার কেতায় আগুন । খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করবো আমি আর ফল খাবে ঐ ঢেমনি গুলো ।
ততদিনে শর্মির পড়াশোনার নেশাটা চেপে বসেছিল । মেনকা মাসির কোনার ঘরে বন্দি করাল শরিকে । মাসি এ তল্লাটের পুড়ন তবায়িব । আগে নাকি লখনোউয়ে থাকতো । গানাবাজানা -চৌষট্টি কলা তার আয়ত্তে । মা সমà ��ত সোনাগাছির আর কত মেয়ে য়ে তার হাতে তৈরি তার ইয়ত্তা নেই । নিয়ম করে খানা পিনা আর গানা এই ছিল মাসির ফরমুলা । সেই একাকীত্বের সময় মাসির হাত ধরেই হারমোনিয়াম বাজাতে শিখেছিল শর্মি । মাসি ওকে কতরকম আসন শেখাত পদ্মাসন , ধনু কাসন, বজ্রাসন । মুসুরি ডাল , হলুদ , ব্যসন , মুলতানি মাটি, গোলাপ জল দিয়ে নিয়মিত চলতো
রূপচর্চা । মাসি বলতো –
– এসব না শিখলে যৌবন ফুটবে কেমন করে । বাবু ভুললে পসন্দ à ��রলে তবে না পয়সা মিলবে ।
মাসির পুরনো একটা রেডিও ছিল । ওটার দৌলতে হিন্দি বাংলা এমনকি রবীন্দ্র সংগীত বেস কয়েকটা আয়ত্ত করেছে শর্মি । মাসি বলতো খেয়াল ঠুংরি গজল য়ের মতো গানা হয় নাকি । কিসব রাগ বসন্ত ট সন্তয়ের কথা বলতো মাসি শর্মি সবটা বুঝতে পারতোনা । গায়ের জামা খুলে শর্মিকে তেল মাখাত ডলে ডলে । শর্মির কাতুকুতু লাগতো প্রচণ্ড হাসি পেত । বুকের বৃন্তে চিমটি কেটে মাসি বলতো
-কুত্তিকি যেয়সি চুঁচি রাধা কি কদম ফুল না ফুটলে কৃষন কা নাহাইয়া কেমন করে আসবে ।
মুখে মুলতানি মাটি মাখার পর মাসির মাথার উকুন বেছে দিত শর্মি । কিছুদূরে উল্টে পড়ে থাকা আয়নাটায় চোখ পড়লেই নিজেকে ভূতের মতো লাগতো শর্মির । বড় বড় সুন্দর করে কাটা নখ গুল মাসির মুখের সামনে তুলে ধরে বাঘের থাবার মতো হাত পাকিয়ে মুখ থেকে পেত্নীর মতো আওয়াজ করতো । মাসি বলতো ;
– পাগলী কাহা কি à �¤ চুপসে বেইট ।
তার পর সেদিনের কথা মনে পড়লে রক্ত হিম হয়ে যায় শর্মির ।রঘুয়ার হাতে যেদিন মাসি খুন হয় । রঘু গুণ্ডাকে সে পাড়ায় সকলে ভয় পেত । পুলিসের সাথে নাকি ওর সাট ছিল । পুলিশের বড় বাবুরাও নাকি ওকে তোষামোদ করে চলতো । শীতলা পুঁজর দিন মাসির ক্ষয়রোগের পুড়ন মানসিক রাখতে গঙ্গা থেকে যখন গণ্ডি কেটে ফিরছিল ঢাক , ঢোল , কাঁসর , ঝাঁজর , ক্লারিয়োনেটের আওয়াজে রঘুয়ার দলবল মদ খেয়ে বুদ হয়ে নাচছিল । �¦ �ঘুয়ার নজর পড়ে শর্মির দিকে । তার হাত ধরে টানা হেচরা করার সময় রঘুয়ার সাথে মাসির বচসা হয় । রঘুয়ার রক্ত গরম হতেই কোমরে গোজা ন্যাপালা টা মেনকা মাসির তলপেটে গুজে দেয় । রক্ত মাখা নাড়ি ভুঁড়ি বেড়িয়ে আসে । আর সকলের মতো শর্মিও ছুটে পালিয়ে ছিল । চাতাল নোংরা করেছিল বমি করে । তার পর থানা পুলিশ । শর্মির মা গিয়ে পড়ে স্বয়ং এর সুপ্রিয়া দির পায়ে ।
– মেয়েটাকে আমার বাঁচান ; রঘুয়া শাসা�¦ �্ছে এদিকে কোট কাচারি পুলিশ …….
সুপ্রিয়া সে যাত্রায় ঢাল হয় । স্বয়ং এর ওপর বিজলীর আস্থা বাড়ে । মেয়েকে আবার আগের মতো পড়তে পাঠায় । সুপ্রিয়া দির তত্ত্বাবধানে দেখতে দেখতে বি.এ পাশ করে শর্মি । বিজলী লাইনে দাঁড়ালেও খদ্দের পায়না । কত অনুনয় বিনয় করে ;
-সব খুলে দেব । বড় বড় মাই পাবে । সুখ পেলে টাকা দেবে …
চোখের ইশারা ,হাতে সুড়সুড়ি ,কোন কোন খদ্দেরের বুকের বৃন্তে চিমটি, প্যান ্টের চেনের কাছটা হাত বুলিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে পুরুষত্বে আঘাত দিয়ে বলা ।
-যন্ত্রটা বাড়িতে ফেলে এসেছ নাকি ।
কোন ওষুধেই কাজ হয়না । কেউ ফিরে ও তাকায় না তার ভাঙাচোরা আলগা আঁটুনি শরীর টার দিকে । ভুলেও কেউ তার ঘরে আসতে চায়না । বিরক্ত হয়ে খিস্তি মারে । এদিকে সামান্য সঞ্চয়ের টাকাতেও হাত পড়ে গিয়েছিল । মাথা ঠিক রাখতে পারছিলনা বিজলী ।এবার শুরু হল শর্মির সাথে বিরোধ ।

নাথুরাম ; শর্মির মায়ের পুড়ন দালাল বললো ।
– মেয়ের তো তোমার গতর মন্দনয় । লাইনে নামাচ্ছ না কেন ।
আবার বিজলী গোঁ ধরল ;
-অনেক পড়াশোনা মাড়িয়েছিস এবার ব্যবসায় নাম ।
শর্মি প্রতিবাদের গলায় বলেছিল ;
– ঐ সব নোংরা খারাপ কাজ সে করবেনা ।
নাথু বিজলীকে লোভ দেখিয়ে ছিল ।
– এক বড় লোকের বেটা আছে হাতি বাগানে ব্যবসা;নথ ভাঙ্গানিতে আ নবো নাকি ?
বিজলী বলেছিল;
– নিয়ে আয় । তবে র খরাটা কড়কড়ে হওয়া চাই । এ তল্লাটে এমন মাল খুঁজে পাবেনা ।
নাথুর সোজা কথা ।
– ফেরেস মাল ফেরেস দাম পাবে । তবে আমার টা মাথায় রেখ ।
বিজলী ঝাঁজিয়ে খিস্তি করে উঠেছিল ।
– শালা ঢেমনা । কোনদিন টাকা পাসনি । এখন না হয় খোদদের জোটে না ।এক সময় তো পোদে পোদে লেগে থাকতিস ।
– তখন তোর যৌবন ছিল রয়াব মেনে নিতাম । এখন তো সব ঝুলে তেজপাতা ।
– যা…যা তোর মাগেদের কাছে । আবার দেখিস ব্যবসাটা কেমন দাঁড় করাবো ।

শর্মি দমবন্ধ করে বসেছিল । মুখের সামনে বই খোলা । ইচ্ছে করছিল তাদের সংসর্গ থেকে ছুটে দূরে পালাতে । কিন্তু পৃথিবীটা তার বড় ছোট । এরকম কথায় এ পাড়ায় ভাব বিনিময় শর্মি ছোট থেকে শুনে আসছে । তবে এখন সে এসব পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করে । তার মনে হয় এ জগত তার নয় ভুলকরে এসে পড়েছে ।ডাসবিনে বাস করে ময়লা না পাড়ানো কি সম্ভব ? পাড়াতেই হয় । কিন্তু পাঁকের নির্যাস নিয়েই শর্মি পদ্ম হবার স্বপ্ন দেখে । পà ��ঁকে পঙ্কিল হবার আগে ঈশ্বরের কাছে পাঠনা করে যেন তার মৃত্যু হয় । সজোরে বই বন্ধ করে । দেওয়ালে পোতা গজাল পেরেকে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগটা কাঁধে ফেলে ।দরজার দিকে পা বাড়াতেই ; ক্ষোভের তেজ বুঝে বিজলী পেছন থেকে হাত ধরে টান দেয় ।
-কোথায় চললি ?
-“স্বয়ং” এর মিটিং আছে ।
– খানকি দের ইউনিয়ন । মাসে পঞ্চাশ টাকা করে নেয় । বলে তোমাদের নামে জমছে বুড় বয়সে অনেক টাকা পাবে কাজে আসবে । আমাদের টাকায় শালীরা সংসার চালায় ।
শর্মই বলেছিল ।
– কে বলেছে তোমাকে ?
বিজলী দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত করে বলে ;
– জানিনা ভেবেছিস । ডাক্তার বসিয়ে নিরোধ বিলানো, লেখা পড়া শেখাবার নাম করে এ পাড়া থেকে মেয়ে ফুসলে পাচার করছে । ঐ কালো চশমা সুপ্রিয়া দিদিমণি । সেদিন দেখি সেজে গুজে টি . ভি তে ব্যক্তিতা
মারছে ।পেছন মাড়ানিরা সবাই রà ��নী হয়ে যাবে । অধিকার পাইয়ে দেবে । য়ার ঘরে এমন লগগ্যা মেয়েছেলে তার মাকে ভিক্ষা করে খেতে হবে । নাথু আজি ঐ বেটা টাকে নিয়ে আয় ।
-পাজি দেখবেনা ।
– না । পোড়া কপালির কোন দিন ক্ষণ নেই ।
নাথু সাথে সাথেই মোবাইল টেপে । শর্মি বিজলীর হাত থেকে হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে ।
– না মরে গেলেও আমি ঐ নোংরা কাজ করবোনা ।
বিজলী শর্মিকে পিঠমোড়া করে ধরে ।
-না তুমি মাস্�¦ �ারনি হবে । বেশ্যার মেয়ে যেখানে যাবি লাথি খাবি ।
নাথু আর বিজলী শর্মিকে ঘরে আটকিয়ে চলে যায় । শর্মি সেদিন বিছানার পাশের তাকটায় রাখা ইঁদুর মারা বিষ খেয়েছিল ।

দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হয় । শুয়ে শুয়েই শর্মি বলে ;
– কে…?
– আমি অমিত ।
শর্মি দরজা খোলে ।
হাত কচলাতে কচলাতে অমিত বলে – বিকেলে শরীরটা আপনার খারাপ দেখলাম ….
– আসুন ভেতরে আসুন ।
শর্মির গলাটা থমথম শোনাচ্ছিল ।
– এখন কেমন আছেন ?
শর্মি অক্লেশে বলে ।
– ভাল ।
অমিত বলে ।
– ভুলটা আমারি হয়েছে সকালে অত ধকল গেল এ বেলায় না বেরলেই বোধয় ভাল হত ।
শর্মি অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ;
– আচ্ছা অমিত দা আমরা এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো না ?
অমিত বলে ;
– হটাৎ এমন কথা মনে হল কেন?
শর্মি হতাশার বলি রেখা ধরা পরার ভয়ে বলে ;
– এমনি ।
অমিত স্বভাব সুলà �­ এক গাল হেসে বলে ।
– আমার মনে হয় আমরা গোটা আকাশের
মত । যেখানে মেঘ- বৃষ্টি-বজ্রপাত ,রাত্রি-দিন , চাঁদ-তারার খেলা অবিরত চলছে । অমাবস্যার নিকস কালো অন্ধকার যেমন আছে ।আছে পূর্ণিমার আলোর স্নিগ্ধতা । দুঃখের দিনে তাই আনন্দের ঋতুর অপেক্ষায় থাকি । আনন্দ যে ঢাক ঢোল বাজিয়ে নাচ গান করতে করতে আসে । প্রসারতার খামতি নেই । একাকীত্বটা ধোপেও টেকে না ।

শর্মি উত্তেজিত হয়ে ওঠে ।
– এ সব বই মুখস্থ বানানো কথা বলতে আপনাদের একটুও দ্বিধা হয়না । এই যে আপনি যার কোন কুল কিনারা কিছুই নেই । আপনার মা বাবা কে ;আপনি জানেন না । কত গুলো অপরিচিত লোককে আত্মীয় করে মনে হয় না আপনি জীবনের সাথে ছলনা করে বেঁচে আছেন ।
অমিত শর্মি কে উত্তেজিত হয়ে উটতে দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে । শর্মি র রুক্ষ কথার আঘাত অমিতের মস্তিষ্কে পৌঁছনো মাত্রই শরীরের স ্নায়ু গুলো যেন আরো সচেতন হয়ে ওঠে আর বেশি নমনীয় করে তোলে তাকে ।সে বলে ।
– দেখুন উত্তর আমার কাছে আছে । তবে তা শোনার মতো অবস্থা এ মুহূর্তে আপনার নেই । আমি বরন এখন আসি ।
অমিত ওঠার প্রয়াস করতেই শর্মি হাত চেপে ধরে ।
– এড়িয়ে গেলে হবেনা ।
অমিত শর্মি র ছেলে মানুষী দেখে আবার না হেঁসে পারেনা ।
– দেখ অমার উপমাটা ছিল আট পৌঢ়ে বাংলা কবিতার ; অমাদের à ��ীবন আকাশের মতো । তোমার অসচেতন বাক্য প্রয়োগে তা তুমি নিজেই প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছ । তুমি বলেছ আমাদের কূলকিনারা কিছুই নেই । আকাশের চাইতে ব্যাপ্ত কূল কিনারা হীন ব্রম্ভান্ডে অর কি আছে অমার জানা নেই । তার পরের অভিযোগটা ঠিক অমার মা বাবা কে অমি তা জানিনা । তবে শেষের কথাটা মোটেই তোমার মতো বুদ্ধিমতী মেয়ের মানায় না । অপরিচিত হয়েই এ পৃথিবীতে আমরা সকলে আসি তারপর ধীরে ধীরে আত্মীয়তা হয় । �¦ �ই যেমন তোমাতে আমাতে । কি এই আত্মীয়তা তুমি অস্বীকার করবে ?
শর্মি বলে;
– তা কেন ।
– ঠিক তেমনি অমার সাথে যার হৃদয়ের যোগ সেই আমার আত্মীয় ; রক্তের যোগাযোগে যদি আত্মীয়তা হয় তাহলে অমার ও পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের অধীনস্থ সকলেই অমার আত্মীয় ।
এবার শর্মি ও না হেসে পারেনা । অমিতের শেষের কথায় মনটা আবার বিস্বাদে ভারী হয়ে ওঠে ।
– অমার কি মà ��ে হয় জান । রক্তের সম্পর্ক যাদের সাথে অথচ আত্মার কোন সম্পর্ক নেই তাদের সমাজে আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়ে বেঁচে থাকাটাই আত্মার সাথে প্রতারণা ।
যখন অমিত আর শর্মির সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে পৌঁছেছে বুধুয়া এসে বলে ।
– দিদি মনি আপনাকে বড় দিদি মনি বুলালেন ।
অমিত জিজ্ঞেস করে ;
– কেন বুলালেনরে বুধুয়া ।
বুধুয়া বলে ।
– কোলকাত্তা থেকে এà �• বাবু এসেছেন দিদিমণির সাথে দেখা করতে ।
শর্মি কিছুটা শঙ্কিত ছিল । ওয়েটিং রুমে ঢুকে কমলেশকে দেখে অবরুদ্ধ নিঃশ্বাস ফেলে কয়েক মুহূর্তে নিজেকে প্রস্তুত করেনেয় ।বড়দি মনি মালবিকা দি বললেন।
– আপনারা কথা বলুন । অমি আসছি ।
মালবিকা দি বেড়িয়ে যেতেই শর্মির চোখ দুটো আলেয়ার মতো জ্বলে উঠলো ।
– এখানে কেন এসেছেন ।
দোহারা চেহারা বছর পঞ্চান্নর লোকটা মাà ��ির দিকে তাকিয়ে বললো ।
– তোমাকে নিয়ে যেতে ।
শর্মি দ্বিগুণ জ্বলে ওঠে ।
– কোন অধিকারে ।
চো খদিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে লোকটার ;
– ইও ঊ আর মাই ডটার । অমার ঔরস জাত তুমি । ডি এন এ টেস্ট করলে বুঝতে পারবে ।
তপ্ত যঞ্জে যেন ঘৃতাহুতি হল কমলেশের কথা গুলো ।
– এতদিন কোথায় ছিলেন । কোথায় ছিলেন এতদিন ?
লোকটা পাগলের মতো এটার জি কেস খুলà �‡ একটার পর একটা কাগজ স্মরির সমনে মেলে ধরতে লাগলো ।

– এই দেখ লিগাল নোটিশ । কোট পেপারে তোমাকে অমি সন্তান বলে স্বীকৃতি দিয়েছি । সংবাদপত্র গুলো তে তা প্রকাশ করেছি । অমার সমস্ত প্রপার্টির ঔনারসিপ ………
শর্মির রক্ত যেন সাপের মতো শীতল হয়ে এলো ।
– কিন্তু এতো কিছু কেন ?
– তুমি তো জান সুপ্রিয়া মা হতে পারেনি ।
– তাই এক জন জারজ সন্তানকে টাকর প্রলোভন দেখিয়ে ….
কমলেশ মিত্রির কে আর এ কটা কথাও বলতে দিল না শর্মি । এটার চি কেশটা টেবিলের ওপর থেকে তুলে মেঝেয় আছাড় মেরে প্রচণ্ড চিৎকার করে শর্মি ।
– বেড়িয়ে যান ;বেড়িয়ে যান এখান থেকে ।
উত্তপ্ত তার আঁচ পেয়েই মালবিকা ,অমিত , বুধুয়া , হারুর মা দরজায় এসে দাঁড়ালো ।
কমলেশ অসহয়ের মতো সকলের মুখের দিকে চেয়ে মেঝেয় পড়ে থাকা কাগজ পত্র গুটিয়ে বেড়িয়ে যাবার প্রয়াস করতেই ; বড় দিদিমণি বললেন ;
– রাস্তা ঘাট ভাল à ��য় রতে ফেরাটা আপনার ঠিক হবেনা। আপনি বরন রাতটা আমাদের গেস্ট হাউসে কাটিয়ে যান । বুধুয়া ওনাকে নিয়ে যাও ।
বুধুয়া এগিয়ে এসে বললো ;
– আইয়ে বাবু ।
শর্মির চোখে সন্ধের বৃষ্টি রাতে বন্যার রূপ নীল ।ক্যান্টিনে সে এ লোনা । অমিত কয়েক বার দরজায় ঠোকা মেরে বলেছে ।
– না খেলে শরীর খারাপ করবে ।
শর্মির সাফ উত্তর ।
– খিদে নেই ।

অমিত আর জোড়া জুড়ি করেননি ।

সুইসাইডের চেষ্টার পর সরকারী হাসপাতাল থেকে শর্মি সুপ্রিয়া দির বাড়ীতে গিয়ে ওঠে । শর্মি কে জোর করে বন্ড সাইন করিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সুপ্রিয়া । কর্তৃপক্ষ জিঞ্জেস করেছিল ইনি কে ? সুপ্রিয়া রাখা ঢাকা না করেই বলেন ।
– আমি ওর মা ।
শর্মিও নিশ্চুপ ছিল ; তাই অসুবিধা হয়নি । বিপত্তিটা ঘটলো নাথুকে নিয়ে বিজলী সুপ্রিয়া দির বাড়ী চড়াও হতেই ।
– আমার মেয়ে অমায় ফির�¦ �য়ে দাও ।
বিজলীর ঝাঁজালো গলা সুপ্রিয়া দেবীর বেড রুমে যখন পৌঁছল কমলেশ অফিস বেরোবার তাড়াহুড়োয় ছিল । সমস্ত ব্যাপারটা অবগত হবার চেষ্টায় ডয়িং রুমে পা দিতেই ঘটলো বিস্ফোরণ ।
– অরে রাঙা বাবু তুমি ।
কমলেশের সে মূহুর্তে ইচ্ছে হচ্ছিল ; মেঝের মোজাইক য়ের সাথে মিশে যেতে কিংবা দুই হাতে নিজের মুখ ঢাকতে । সমাজ সেবিকা সুপ্রিয়া গলা চড়িয়ে ছিলেন ।
– কি যা তা বল�¦ �িস বিজলী । উনি রাঙা বাবু নয়; কমলেশ চৌধুরী । আমার হাজব্যান্ড ।
– তোমার হাসবেনকে আমি রাঙা বাবু বলেই চিনি ।কিলো রাঙা বাবু বলনা ।
কমলেশ কি উত্তর করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলনা । এক বার স্ত্রীর মুখের পানে আর একবার শর্মির দিকে অপরাধীর মতো চাইছিল । আড়ষ্ট জ্বিহবা টাকে বল প্রয়োগে বললো ;
– দেখুন আপনার বোধয় কোথাও ভুল হচ্ছে ।
সুপ্রিয়া মেজাজ দেখিয়ে বলে ; – আমার বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে অপমান করার জন্য জান তোমায় মান হানির মামলায় ফাঁসাতে পারি ।
বিজলী আঁচল কোমরে শক্ত করে বেঁধে নিয়ে যুদ্ধের পূর্ব হুংকার ছাড়ে ।
– ধোয়া সব তুলসী পাতা _বেরুল শেষে শাল পাতা । ঐ সব কোট হাজতের ভয় অন্য কাউকে দেখিয় । তোমাদের মতো ভদ্র নোকের বাবুরা আমার সায়ার তলায় থাকে ।
শর্মির হাত ধরে হেঁচকা টান মারে ;
– চল হারামির বাচ্চা …. চল বলছি ।
মেঝেয় হেঁচড়াতে থাকে । মুক্ত হাত সুপ্রিয়া দির দিকে বাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে শর্মি বলে ।
– আমাকে ওরা জবাই করবে দিদি …..
নাথু এসে এবার শর্মিকে চ্যাংদোলা করে তুলতে যায় । সুপ্রিয়া টেলি ফোনের কাছে এগিয়ে গিয়ে রিসিভার তুলে থানার নম্বর ডায়াল করে । ওটা তার মুখস্থ ।
– হ্যালো বড় বাবু অমি সুপ্রিয়া চৌধুরী বলছি …….বিজলী অà ��ার বাড়িতে এসে একটা বিচ্ছিরি রকমের গণ্ডগোল পাকিয়েছে । ……….হে সাথে করে গুণ্ডা নিয়ে এসেছে ।………ইয়েস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ।
এবার বোধয় বিজলী সত্যিই একটু ভয় পেয়ে ছিল । শর্মির হাত ছেড়ে সুপ্রিয়ার কাছে গিয়ে নিজেকে সংবরণ করে বলে ;
– আমার মেয়ে আমি বাড়ী নিয়ে যেতে চাই ; পুলিশ কি করবে ।
সুপ্রিয়ার মোটা কাল ফ্রেমের চশমাটা নাকের ওপর ঝুলে পড়েছিল আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে ওটাকে আঁটসাঁট �¦ �রেনেয় । স্বামীজ