লিখেছেনঃ নুরুল হক

চতুর্থ অধ্যায়

পৃথিবী  প্রতারণার আবাসস্থল।  এখানে এমন কোন স্থান নাই,যেখানে প্রতারণা নাই। স্বার্থের কাছে মানবতা বন্দি। যেখানে স্বার্থ আছে, সেখানে প্রতারণা আছে। স্বার্থ নাই এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। সমস্ত পৃথিবী আজ স্বার্থের বেড়াজালে বন্দি ।

স্বার্থের কারণে মানুষ প্রতারণা করে। এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, বিশ্বে ভাল কাজগুলি কিভাবে হলো বা হচ্ছে?

ভাল মন্দের এই পৃথিবী। যত দিন টিকে থাকবে তত দিন ভাল মন্দ থাকবে, ভাল মন্দ মানুষের মাঝে আছে এবং থাকবে। মানুষ যখন মন্দেরও উর্ধে গমন করে তখন তার দ্বারাও  ভাল কাজ হতে পারে। যেমন: বাঘের খাদ্য চাহিদা মিঠলে,শিকারের  খোজে বাহির হয় না ।

পৃথিবীতে সর্ব ক্ষেত্রে প্রতারণা লক্ষ্য করা যায়। সমাজে এমন কোন স্থান পাওয়া যাবে না যেখানে প্রতারণা নাই। নিঃস্বার্থ কোথায়? ভাল কাজ করার মাঝে ও এক প্রকার স্বার্থ লুকায় থাকে একটু ঘেঁটে দেখলে দেখা  যাবে যে,স্বার্থের জন্যই মানুষ প্রতারণার ফাঁদ পেতে।

সমাজের  সর্ব ক্ষেত্রে প্রতারকরা পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রতারিক হচ্ছে  সাধারন বা দূর্বল মানুষ।পশু-পাখিদের মাঝেও ইহা লক্ষ্যনীয়।দূর্বলরা সর্ব ক্ষেত্রে নিঃগৃহিত হয়।বড় মাছ ছোট মাছ কে ভক্ষণ করে ক্ষুদা নিবারণ করে। এটা প্রকৃতির নিয়ম, মহা নিয়ন্ত্রক থাকলে ছোটদের কে বড়দের খাদ্যে পরিনত হতে হতোনা । শিকারী শিকার করে আর প্রভাবশালী সেই শিকারীর উপড় অধিপত্য বিস্তার করে শিকারের উপর ভাগ বসায়। ভক্ষন করে। এক্ষেত্রে দূর্বলের কোন প্রকার করণীয় থাকে না,উচ্ছিষ্টই দূর্বল শিকারীর প্রাপ্য।

সমাজের সর্ব ক্ষেত্রেই একই দৃশ্য দেখা যায়। যে সকল মেহনতী মানুষ পৃথিবীকে স্বচল রেখেছেন,তাদের অবস্থা একই রুপ। উচ্ছিষ্ট পেয়েই তাদেরকে  সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কারন তারা প্রতারণার স্বীকার। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পৃথিবীর  চাকা সচল রেখেছেন তারা কি তাদের ন্যায্য অধিকার পায়?  শ্রমিক কি পায় তাদের শ্রমের ন্যায্য হিসার, কৃষক কি পায় তার কষ্টে উপার্জিত ফসলের  সঠিক  মুল্য? সর্বকালেই রাজা কর্তৃক প্রজা  প্রতরনার জালে বন্দি। এই হল সামগ্রীক মেহনতী মানুষের হাল। তাছাড়া প্রতারণার ক্ষেত্রে ভাব বাদী যাজকরা  তাদের দুরভিসন্ধি হাসিলে এক ধাপ এগিয়ে। এই বিষয়ে বাংলার দাশর্নিক ব্যক্তিত্ব, আরজ আলী মাতুবর মহোদয় বলেছেন যে, “ধর্ম গুলি যেন কিছু সংখ্যাক মানুষের আসল বিলাসী জীবন যাপনের জন্য সৃষ্টি হয়েছে”।

ভাব বাদী যাজকরা,সাধারন মানুষ কে চাপের মধ্যে রেখেছেন। তারা কথায় কথায় মানুষকে ধর্ম কর্ম না জানার ধুয়া তুলে,নরক বাসী হিসাবে আখ্যায়িত করেন। আর এরই ফলশ্রুতিতে সাধারন মানুষ যাজকদের শরণাপন্ন হন,পরিত্রানের আশায়,এবং যাজকদের  মুক্ত হস্তে দান  দক্ষিনাও করেন।  ভাববাদী সমাজে এই হলো প্রতারণার বাস্তব চিত্র। সমাজের সর্বক্ষেত্রে এই ভাবেই ভাববাদীরা সমাজের খেটে খাওয়া মানুষদের প্রতারিত করে চলেছে।  তাই ব্যাঙ্গাত্বক সুরে বলতে চাই-

সত্য গেছে মরে

ধর্ম ঢুকেছে ঘরে,

প্রতারকরাই উড়ে বেড়ায়

হাওয়াই গাড়ী চড়ে।

এই প্রেক্ষিতে আজকে বাস্তবতা এবং কোরানের কয়েকটি আয়াত নিয়ে আলোচনা করে ৪র্থ অধ্যায়ের ইতি টানার ইচ্ছে পোষণ করছি।

প্রথমে আলোচনা করি  ৪৭:২৩ ও ৪৭:২৪ আয়াত দিয়ে।

(৪৭:২৩) (মুলত)  এরা হচ্ছে সেই সব মানুষ যাদের উপর  আল্লাহ তায়ালা অভিশপ্ত করেন, তিনি তাদের বোবা করে দিয়েছেন। তাই তারা সত্য কথা বলিতে পারে না এবং তাদের তিনি অন্ধ করে দিয়েছেন। তাই তারা সত্য কোনটা দেখতে পারে না।

(৪৭:২৪) তবে কি এরা কোরান সম্পর্কে গবেষনা (কোন রকম চিন্তা) করেন না, নাকি তাদের অন্তর  সমুহের উপর তালা ঝুলে আছে।

উপরোক্ত আয়াত দুটির প্রথম আয়াতের কথাগুলি আল্লাহর নয় বলে প্রতিয়মান হয়,কারন হলো বাক্যের মধ্যে “তিনি-যিনি” সম্বোধন করা হয়েছে। কোরানের অনেক আয়াতে ঐ রুপ ভাব লক্ষনীয়,যাহা মুক্ত মনার অনেক সম্মনিত লেখক ইতি পূর্বেই আলোকপাত করেছেন,তাদের মূল্যবান ও সুচিন্তিত মতামতের মাধ্যমে । যাহা হউক এখানে এ বিষয়  নিয়ে অনর্থক আলোচনা না করে আমি আমার কাঙ্খিত বিষয়ে ফিরে যাচ্ছি।

৪৭:২৩ নম্বর আয়াতে দেখা যায় যে,আল্লাহ নিজ থেকেই তাদের বোবা করে দেন,তারা সত্য বলতে পারে না আর তাকে অন্ধ করে দেন, তারা সত্য দেখতে পারে না। মোট কথা আল্লাহ তাদের অন্তর ও চক্ষুতে সীল মেরে দিয়েছেন।

এখানে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে, যাদের অন্তর বন্ধ এবং চক্ষু অন্ধ,তারা মিথ্যা কিভাবে বলেন আর মিথ্যা কিভাবে দেখেন ?

৪৭:২৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহর বিলাপের তথা  আক্ষেপের সুর পাওয়া যায়। এখানে আল্লাহ বলেছেন যে,এরা কি কোরান সম্পর্কে কোন রকম গবেষনা/চিন্তা করেন না,তবে কি এদের অন্তরের তালা ঝুলে আছে।৪৭:২৩ নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ অন্তর ও চক্ষু বন্ধ করে দিয়েছেন,আর ৪৭:২৪ নং আয়াতে বলা হচ্ছে তবে কি এদের অন্তরের তালা ঝুলে আছে(কে যেন তালা মেরে দিয়েছে?)।

আলোচ্য আয়াত  দুটিতে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য লক্ষণীয়। এটাই ছলনা,দলে  ভিড়ানোর অপকৌশল । আর এভাবে দলে একবার ভিড়ালেই পিছন ফিরে তাকানোর অবকাশ নাই,কারন মহা অস্ত্রের  ভয়।অনন্ত কালের তপ্ত অনলে দোযখ ভোগ। নড়লেই মারবে ।

কোরানের আয়াত দুটির  স্ববিরোধী বক্তব্যই প্রমান হয় ইহা মানুষেরই সৃষ্টি । মোহাম্মদ ক্ষমতার মোহে  এতই উন্মাদ ছিলেন যে,তিনি প্রতিনিয়ত তাঁর মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডকে আল্লাহর নিদের্শে রুপে চালিয়ে যান এবং এর স্বপেক্ষে তিনি তার বক্তব্যগুলোকে চালিয়ে দেন অল্লাহর প্রেরিত বানী বলে ।

মোহাম্মদের ক্ষমতা লিপ্সার একটি বাস্তব উদাহরন এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন তিনি তাঁর ক্ষমতা লাভের মোহে নিজের চাচাতো ভাইয়ের সাথে,তাঁর ঔরসজাত কন্যাকে বিবাহ দিতে কুন্ঠিত বোধ করেননি। কারন সেই চাচাতো ভাই হযরত আলী ছিলেন তৎকালীন আরব্য সমাজে তথা কোরাইস গোত্রের একজন বিশিষ্ট যোদ্ধা। তাকে  সকলেই সমীহ করত। এই অসম  বিবাহটিও তিনি আল্লাহর নির্দেশে রুপে চালিয়ে যান,যাহাতে  আদিম মানুষের যৌন মিলনের স্বাক্ষ্য বহন করে। বিবাহ প্রথা চালু হওয়া থেকে আজ পর্যন্ত সুসভ্য মানব সমাজে কোথাও এই রুপ বিবাহ হয়েছে বলে কোন প্রমান পাওয়া যায় কি? এই নীতি বিবর্জিত বিবাহের ফলে তিনি অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ হন। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে কিছুটা মন বল ফিরে পান। কারন  তৎকালীন  সমাজে হয়রত আলীর মত যোদ্ধার সন্মুখে প্রকাশ্যে দাড়াবার শক্তি কারও  ছিল না আর এই  অসম বিবাহের ফলে তিনি প্রকাশ্য শত্রুর  ভাবী আক্রমন থেকেও শংকা মুক্ত হন এবং অপকৌশলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

মুহম্মদ ইহুদী খ্রষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন কে নিজ দলে ভিড়ানোর  জন্যও অনেক অপকৌশল গ্রহন করেন । ইহুদি-খৃষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থকে আল্লাহর প্রেরিত বানী বলে স্বীকৃতি দেন, আর নিজের প্রচারিত মতবাদকে সর্ব শেষ আল্লাহর প্রেরিত মতবাদ বলে ইহুদী-খৃষ্টান সম্প্রদায়ের অনুসারীগনকে তার মতবাদ গ্রহনের আহ্বান জানান।   মোহাম্মদ তার আহ্বানকে আল্লাহর নিদের্শ বলে দাবী করেন কিন্তু এত কিছুর পরও দলে ভিড়ানোর অপকৌশল যখন ব্যর্থ,তখন তিনি ক্ষমতা প্রয়োগ এর জন্য তরবারীর আশ্রয় গ্রহন করেন। তিনি সর্ব শক্তি নিয়োগ করেন তরবারীতে ।

তিনি সর্ব শক্তির  কলা কৌশল গ্রহন করেন এই তরবারীতে, ফলও পান হাতে হাতে। তরবারী হয়ে যায় ইসলাম প্রচারের প্রধান মাধ্যম,আল্লার বানী নয়। মোহাম্মদ অন্য সম্প্রদায় হতে আগত কিছু কিছু লোকের মাধ্যমে ইহুদি ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্ম গ্রন্থের কিছু কল্প কাহিনী শোনেন এবং ঐ কল্প কাহিনী গুলো আল্লার প্রেরীত বলে গল্প ফাঁদেন ।  উদ্দেশ্য দলে ভিড়ানো ।

মহা প্রতারণার সাক্ষ্য হিসাবে  এবার আলোচনা করতে চাই নূহনবীর মহা প্লাবন নিয়ে। সুপ্রিয় পাঠকগন নিম্নের আয়াতসমূহ লক্ষ্য করুন-

১১:৩৮ তিনি নৌকা তৈরী করতে লাগলেন, আর তাঁর কওমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যখন পার্শ্ব দিয়ে যেত, তখন তাঁকে বিদ্রুপ করত। তিনি বললেন, তোমরা যদি আমাদের উপহাস করে থাক, তবে তোমরা যেমন উপহাস করছ আমরাও তদ্রুপ তোমাদের উপহাস করছি।

১১:৩৯

অতঃপর অচিরেই জানতে পারবে-লাঞ্ছনাজনক আযাব কার উপর আসে এবং চিরস্থায়ী আযাব কার উপর অবতরণ করে।

১১:৪০অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল এবং ভুপৃষ্ঠ উচ্ছসিত হয়ে উঠল, আমি বললামঃ সর্বপ্রকার জোড়ার দুটি করে এবং যাদের উপরে পূর্বহেßই হুকুম হয়ে গেছে তাদের বাদি দিয়ে, আপনার পরিজনবর্গ ও সকল ঈমানদারগণকে নৌকায় তুলে নিন। বলাবাহুল্য অতি অল্পসংখ্যক লোকই তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল।

১১:৪১আর তিনি বললেন, তোমরা এতে আরোহন কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। আমার পালনকর্তা অতি ক্ষমাপরায়ন, মেহেরবান।

১১:৪২আর নৌকাখানি তাদের বহন করে চলল পর্বত প্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝে, আর নূহ (আঃ) তাঁর পুত্রকে ডাক দিলেন আর সে সরে রয়েছিল, তিনি বললেন, প্রিয় বৎস! আমাদের সাথে আরোহন কর এবং কাফেরদের সাথে থেকো না।

নূহ নবীর মহা  প্লাবন নিয়ে আল কোরানের আয়াত গুলির ধারাবাহিক বর্ননা  না করে আমার ক্ষুদ্র  জ্ঞানে  কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো ।

নূহ আল্লার নবী,তিনি আল্লার বাণী তৎকালীন  মানব সমাজে প্রচার করেন । কিন্তু সেই সময়ে তার প্রচারিত বানী অনেকেই গ্রহন করে নাই। ফলে আল্লাহ মহা প্লাবন দেন। আর এই মহা  প্লাবন হতে রক্ষার নিমিত্তে নূহনবীকে আল্লাহ এক খানা নৌকা তৈরীর আদেশ দেন।  আল্লার আদেশ মোতাবেক নৌকা প্রস্তুত করা হয়।যথা সময়ে প্লাবন শুরু হয়। আল্লার পরিকল্পনা মতে নৌকাতে  প্রত্যের জীব কুলের এক জোড়া করে উঠানো হয়। সাথে নূহ নবীর  অনুসারীগনকেও তোলা হয় নৌকায় । শুরু হয় মহা প্লাবন,আর  চলে তার সাথে চলে ঢেউয়ের খেলা ।  সমস্ত পৃথিবী  জলে নিমর্জিত। নূহ  নবীর নৌকায় আশ্রিত  জীব কুল ছাড়া সবই ধ্বংস তথা মৃত। এই হলো  মহা  প্লাবনের  সংক্ষিপ্ত বর্ণনা  ।

নুহ নবীর আবিভাবের সময় কাল আমার জানা নাই। সেই সময়ে লৌহ আবিস্কার হয়েছিল কি না,তাও জানিনা ? নৌকা তৈরীর জন্য কাঠ ফাঁড়াই  কি দিয়ে হয়েছে। নৌকা তৈরীতে যে লোহা-পেরেক  দরকার তাহা  কোন কারখানা হতে তৈরী হয়েছে? ইসলামী মতে ১৮ হাজার মাখলুকাত। ১ জোড়া করে নৌকায় তুললে  সংখ্যায় দাড়ায় ৩৬ হাজার।  তার সাথে নুহ নবীর পরিবার পরিজন ও তার অনুসারীগন সেই নৌকায় স্থান পায়। এখানে আমি সম্মানীত পাঠক সমাজের নিকট হতে জানতে আগ্রহী,বর্তমান আধুনিক যুগে এক সাথে ২টি হাতি ও ২টি তিমি উঠানোর মত কাঠের নৌকা তৈরী হয়েছে কিনা ? আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে কত হিংস্র প্রাণী বাঘ ভালুক, হাতি গন্ডারকে কিভাবে নৌকায় তোলা হলো। এতগুলি  জীবের একসাথে একটি মাত্র নৌকায় তোলার কল্প কাহিনী কিভাবে বিশ্বাস করা যায়? ইহার বাস্তবতা কোথায়? সুধী সমাজ ভেবে  দেখছেন কি? একটা কাঠের নৌকার ধারন ক্ষমতা কত হতে পারে? এখানে মানুষকে কিভাবে ধোকা দেওয়া হয়েছে?

ভাব বাদের অনুসারীরা নিতান্তই গোড়া ধর্মান্ধ। এই ধর্মান্ধতা পরিবার তথা সমাজ হতে প্রাপ্ত। সমাজ ব্যবস্থা ভাব বাদের শিকলে বাধা। এ শিকল ছিন্ন করার শক্তি সাহস কয় জনের আছে। যেমন  আমার নিজের কথাই বলি।আমার স্ত্রী কন্যার চোখের সামনে আমি মুসলিম সমাজের রীতিনীতি গুলি প্রতিপালন করার চেষ্টা করি এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও করি। আমি নিজেই আমার পরিবার এবং সমাজের সাথে প্রতারণা করছি।

আদি কাল যাহার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই,সেই সময় কাল দেখিয়ে ভাব বাদের সকল  কল্প কাহিনী রচিত। আর সেই সকল কল্প কাহীনির উপর নির্ভর করে ভাববাদে অনেক অলৌকিক কাহিনী দেখা যায়  ।

যেমনঃ-

১। সমাতন ধর্মে পাওয়া যায়  কাঠের তৈরী রথ যাহা শূনে উড়ে।

২। ইসলামে কাঠের তক্তা/জায়নামাজ যাহা দ্বারা ইসলামের পীর ফকির নবী উড়ে বেড়াতেন।

৩। সনাতন ধর্মে পাওয়া যায় দৈত্য দানব ভুত প্রেত।

৪। ইসলামে দেখা যায় জ্বীন-পরী। আর এসমস্ত বিষয় নিয়ে রচিত অনেক কল্প কাহিনী।

এখানে মানুষকে ধোকা দেওয়া হয় অলৌকিক ক্ষমতার কথা বলে। অলৌকিক ক্ষমতা মানে অদৃশ্য ক্ষমতা। এই ক্ষমতা মানুষের ক্ষমতার বাহিরে।

ইসলামের নবী মোহাম্মদের নিকট যখন মানুষ বিভিন্ন কল্প কাহিনীর আলোকে অলৌকিক কিছু দেখতে চান,তখন তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন এবং তাৎক্ষনিক ভাবে স্বপক্ষে বানী তৈরী করে ঐশ্বরিক বলে দাবী করে বুঝিয়ে দেন যে,তাকে আল্লাহ কোন অলৌকিক ক্ষমতা দেন নাই। মানব সমাজের  সভ্যতার দোরগোড়ায়,কাগজ আবিস্কৃত হয়েছে । তাতে  বাস্তব ভিক্তিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হচ্ছে। সভ্য সমাজে অলৌকিক কল্প কাহীনির স্থান তাতে দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে।  সুচতুর মোহাম্মদ তাই অতীত কালের কিছু কল্প কাহিনী রচনা করে,ঐশ্বরিক তথা  আলৌকিক কাহীনি রুপে চালিয়ে গেছেন,যাহা বর্তমান সভ্য জগতের ধর্মান্ধ গোঁড়া মুসলিম সমাজ একান্ত বাস্তব রুপে গ্রহন করে চলেছেন। অলৌকিক কল্প কাহিনীর কিন্তু এখানেই শেষ হয় নি। ভাববাদী সমাজে অনেক পীর দরবেশ সাধু সন্নাসীদের অলৌকিক কল্প কাহিনীর কিছু কিছু মাঝে মধ্যে লোক মুখে শুনা যায়। আর এই সকল কল্প কাহিনী ভাববাদীদের অনুসারীগন মনে প্রানে বিশ্বাস করে,ধর্মের অংশ মনে করে। ভাববাদী গ্রন্থ গুলিতে,যেমনঃ- মহাভারত,বেদ,গীতা,ইঞ্জিল-শরিফ, কোরানে এই রুপ অনেক  অলৌকিক গল্প পাওয়া যায়। বর্তমান সমাজে পীর দরবেশ তথা সাধু সন্নাসীদের অলৌকিক কল্প কাহিনী চোখে পড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে যাহা দেখানো হয় তাহা শুধু মাত্র প্রতারণা। ভুত,প্রেত, দৈত্য, দানব  ও জীন পরীতে মানুষের আজ ভয় নেই,বিশ্বাস ও নেই। মানুষ যুক্তিবাদী হচ্ছে এবং তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার আলোকে মানুষ আলোকিত হবে। সকল ধমার্ন্ধতা গোড়ামী দুর হবে। মানুষ হবে কু-সংস্কার মুক্ত,সত্যের আলোকে আলোকিত।

ভাববাদীর অনুসারীগনকে  দলীয় গুন্ডা হিসাবে ব্যবহারের নিমিক্তে প্রয়োজনীয় রসদ সংমিশ্রন করা হয়েছে, যাহা সংক্রিয় বলা যায়। এই সমাজে ভাব বাদের আচার আচরনের বিরুদ্ধে কথা বললে রক্ষা নেই। সাধারন যে সকল মানুষ ভাববাদের আচার আচরন প্রতিপালন করে না শুধু মাত্র মুখে বিশ্বাস করে,তাদের কাছেও আপনি ছাড় পাবেন না।তারাও অতিমাত্রায় ভাববাদী গুন্ডায় পরিনত।  ভাববাদের আচার আচরনে অনুসারীগন কল্পিত স্বর্গের গন্ধ পায়। যাহা  প্রত্যেক ভাববাদী গ্রন্থে লক্ষনীয়। বর্তমান সমাজে মুক্তমনের মানুষের মুক্ত ভাবে মত প্রকাশের সুযোগ একেবারেই নেই। এই সমাজ ভাববাদের অন্ধকারে নিমর্জ্জিত। আলোর একান্ত অভাব। শুধু নক্ষত্রের আলোয় পৃথিবী আলোকিত হয় না,জ্ঞানের আলোরও প্রয়োজন আছে। যাই হোক,একটি ছড়া-

জয় হোক মানবতার সকল বিভেদ ভুলে,

জয় হোক সত্যের বন্ধ দুয়ার খুলে।

বাতাসে চলুক নৌকা সত্যের পাল তুলে,

মুক্ত বুলবুল গেয়ে উঠুক পত্র শোভিত বট মুলে।

ধন্যবাদ পঞ্চম পর্ব লেখার আশায় রইলাম।

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ- বাংলার কীর্তিমান দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর।

বিঃদ্রঃ মুক্তমনা’র অনেক শ্রদ্ধেয় লেখক কোরানের বিভিন্ন সূরায় অনেক আয়াত নিয়ে তাঁদের মুল্যবান অভিমত ব্যক্ত করেছেন,এক্ষেত্র যদি কারো মতামতের সাথে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের মতামত আংশিক কিংবা অনেক অংশে মিলে যায়,তবে আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা রাখি।