লিঙ্কঃ হ্যাকারস’ ক্যাম্প (প্রথমার্ধ)

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় অ্যামেরিকায় এসে আমি কি দেখে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি; প্রথমত বলব, ডিস্যাবলদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। ডিস্যাবলরা হচ্ছে এখানে হুইল চেয়ারে বসে ঘুরে বেড়ানো ভিআইপি। ক্ষণিকের তরেও তাদেরকে বুঝতে দেয়া হয় না, তারা ডিস্যাবল, তাদের স্বাভাবিকভাবে চলবার ফিরবার ক্ষমতা নেই। আর দ্বিতীয়ত বলবো টাইমিং, সময়ানুবর্তিতা। যখন যেখানে যা শুরু হবার কথা তাই হবে, যখন শেষ হবার কথা ঠিক তখনই শেষ হবে। এসবই হচ্ছে সত্যিকারের অ্যামেরিকান বিউটি। অতএব, বিউটির ধারা অব্যাহত রেখে পূর্বঘোষিত সময়ানুযায়ী সকাল সাড়ে আটটায় ক্লাশ শুরু। চটুল চঞ্চল হাসি হাসি মুখে ইন্সট্রাক্টর শুরু বলতে শুরু করলো, প্লিজ ডোন্ট ড্যু এনিথিং ইল্লিগ্যাল ইন ইওর ক্যারিয়ার; বাট…(নীরবতা)…নাথিং আই উইল শো ইউ টুডে ইজ লিগ্যাল। তুমুল হাসির মধ্য দিয়ে ক্লাশের শুরু।

যেখানটাতে আমাদের ক্লাশ হয়, সেটা আসলে একটা কলেজ। ক্লাশের ফাঁকে দুই ঘন্টা পরপর ব্রেক দেয়া হয়। এ-সময়টাতে কলেজের স্টুডেন্টরা এসে আমাদের জিজ্ঞেস করছে, এই তামাম দুনিয়া এত ভালো ভালো কাজ থাকতে কেন আমরা হ্যাকার হবার মনোবাসনা পোষণ করলাম, ঠিক কিভাবে আমরা হ্যাক্‌ করি এবং আমাদের জীবন-যাপনইবা কেমন। ভাবখানা এমন যে আমরা অন্য কোনো গ্রহ থেকে এখানে উড়ে চলে এসেছি। প্রশ্নগুলোর জবাবে আমাদের দেয়া সাধারণ উত্তর শুনেও তারা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকানদের কাজই হচ্ছে কারণে-অকারণে বিস্মিত হয়ে যাওয়া, অবাক হয়ে যাওয়া। রাস্তায় দাঁড়িয়ে একদল সাধারণ অ্যামেরিকানকে যদি বলা হয় পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, সাথে সাথে দু’একজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে। তারপর অজ্ঞান অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞের মত বলবে, পৃথিবী অবশ্যই ঘোরে, না হলে শুধু শুধু আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাব কেন।

তবে ক্লাশ নয়, আসল মজাটা শুরু হয়, হোটেলে ফেরার পর। কেউ কাউকে আগে থেকে চেনে না। একজন আরেকজনকে দেখে শুধু ভাবছে, না-জানি কত বড় হ্যাকার, কত কি-না জানে। নদীর এপার-ওপার টাইপ ব্যাপার-স্যাপার। সে যাই হোক না কেন, সবিশেষ প্রয়োজনে হোটেলের ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে গেলেই দেখতে পাওয়া যায়, হোটেলের নেটওয়ার্কের নামে অনেকগুলো নেটওয়ার্ক, দু’একটা বর্ণ একটু এদিক-সেদিক করা। রাত বাড়ার সাথে সাথে কপাল দোষে কোনো রুমে গিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায়, বিডিআর বিএসএফ এর মত সতর্ক ভাব ধরে সব যন্ত্রপাতি আর ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে, নেটওয়ার্ক দিয়ে যাওয়া অন্যদের ম্যাসেজ ক্যাপচার করার জন্য, সম্ভব হলে পাসওয়ার্ড। বড়শি হাতে মৎস শিকারী যেমন বসে থাকে, এই বুঝি কোনো বোকা মাছ এসে তার টোপ গিলতে শুরু করলো, তেমন করে বসে আছে আধুনিক এই ডিজিটাল শিকারীর দল।

ওদিকে, চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে নিরপরাধ, দুঃখী হোটেলটার কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ফায়ার এলার্ম বেজে উঠে আহাজারি করতে করতে । নিয়মানুযায়ী এলার্ম বেজে উঠার সাথে সাথে সমস্ত হোটেল খালি করে ফেলা হয়। গোটা রাস্তায় তর্জন-গর্জন করতে করতে ফায়ার সার্ভিসের লালমুখো গাড়ী এসে উপস্থিত হোটেল চত্ত্বরে। ব্যাপক ভাব গাম্ভীর্য নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সবকিছু তন্ন তন্ন করে, অবশেষে এলার্ম বেজে উঠার কোনো কারণই খুঁজে পায়না। বীরের মত ত্রাণকর্তা হয়ে হোটেলে প্রবেশ করে, বিড়ালের মত মিউমিউ করে বেরিয়ে যায়। তাও একদিন নয়, দুইদিন নয়, দিন দিন-প্রতিদিন। শুধু হোটেলের আলোকিত চত্ত্বরের এককোণে জমে থাকা গাঢ় অন্ধকারে বীরত্বের ক্রুর হাসি হেসে যায় দু’চারটি তরুণ, সে হাসি দেখতে পায় না অন্য আরেকটি প্রাণীও। নিষিদ্ধ আনন্দই এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে বিকট আনন্দ।

পুরো সপ্তাহ ধরে নেটওয়ার্ক ড্যাটা অ্যানালাইসিস, অ্যাটাক্‌, ফরেনসিক, ম্যালওয়্যার ডিটেকশান বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ চললো। তবে সর্বশেষ দিনটি নির্ধারিত ছিলো কম্পিটিশান এর জন্য। ক্যাপচার দ্যা ফ্লাগ (সিটিএফ) কম্পিটিশান। পাঁচজন, পাঁচজন করে কম্পিটিশানের জন্য একেকটা গ্রুপ তৈরী করা হলো। কম্পিটিশানের নিয়ম হলো- সব গ্রুপগুলোকে অর্থাৎ সব কম্পিউটারগুলোকে একটা লোকাল নেটওয়ার্কের মধ্যে যুক্ত করে দেয়া হবে। সে একই নেটওয়ার্কে অনেকগুলো মেশিন-ও(সার্ভার) যুক্ত থাকবে। প্রতিযোগীদের কাজ হচ্ছে সেই মেশিনগুলোর সিকিউরিটি ব্রেক করে সেখানে নিজের ফ্ল্যাগ সেট করে আসা। ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলা যাক। ধরুন একটা সুরক্ষিত ঘর আছে, এই ঘরগুলো হচ্ছে একেকটা মেশিন(সার্ভার)। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে, কিভাবে এই ঘরের ভিতরে ঢুকা যায়, ঘরের কোন দরজা বা জানালাটি নড়বড়ে বা খোলা। সেটা খুঁজে ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে হবে। তারপর প্রবেশ যে করা হয়েছে সেটার প্রমাণ হিসেবে প্রবেশকারীর একটা পরিচয়(চিহ্ন) ঘরের মধ্যে রেখে আসতে হবে। প্রতিটা দলেরই একটা করে নাম বা পরিচয় প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই দিয়ে দেয়া হয়। তবে, ঘরে ঢুকে শুধু নিজের পরিচয় রেখে আসলেই চলবে না। বের হওয়ার সময় এমন ব্যবস্থা করে আসতে হবে, দরজা বা জানালাগুলোকে এমনভাবে শক্ত করে বন্ধ করে দিয়ে আসতে হবে, যাতে করে অন্য কেউ আর সেখানে ঢুকতে না পারে। এতে করে অন্যরা সেখানে ঢুকে তাদের চিহ্ন রেখে আসতে পারবে না, অর্থাৎ তাদের আর পয়েন্ট পাওয়ার উপায় থাকবে না। তার মানে, যার আগে যে ব্রেক করতে পারবে সে তত বেশি এগিয়ে যাবে এবং অন্যদের সম্ভাবনা ততই কমে যাবে। উল্লেখ্য, যে মেশিনগুলোর সিকিউরিটি ব্রেক করতে হবে তার অনেকগুলোই পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত। এর মধ্যে ভিসতা এবং এক্সপি মেশিনের পাসওয়ার্ড ব্রেক করা একেবারেই দুধ-ভাত।

প্রতিযোগিতার আগের দিন রাতে সে এক রণপ্রস্তুতি। এ যেন এক রণক্ষেত্র, পলাশী যুদ্ধের জন্য সবাই প্রস্তুত হতে যাচ্ছে। হোটেলের বিশাল হলরুমে প্রতিটা টিম রাত জেগে প্রত্যেকের কাজ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে, আয়োজকরা সরবরাহ করছে অফুরন্ত পিৎসা, মিউজিক আর ড্রিংক। প্রতিটি টিমের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অপরিহার্যভাবে প্রয়োজন ইন্টারনেট কানেকশান, অনেককেই ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে, নিদেনপক্ষে কিছু টিউটোরিয়াল দেখতে হবে। কিন্তু এর মধ্যেই কোনো এক সাধুপুরুষ হোটেলের ইন্টারনেট সিস্টেমের কন্ট্রোল নিয়ে নিলো। বেচারী হোটেলখানা যেন এক নিলামের ঘড়ি, যে যেমন করে পারছে বারোটা-একটা বাজিয়ে নিচ্ছে। সাধুপুরুষ কোনোভাবেই কাউকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিবে না। এদিকে অন্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কোথা থেকে ব্যাপারটা ঘটানো হচ্ছে সেটা উদ্‌ঘাটন করে আনার জন্য। এটা তাদের জন্য চরম মান সন্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরের উপর বাটপারিটুকু মেনে নেয়া যাচ্ছে না। ক্ল্যাশ অব টাইটানস্‌। এর মধ্যে সারাদিন আমাদের যিনি ইন্সট্রাকটর ছিলেন তিনি হলরুমে এলেন। কি করে যে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত একটা মানুষ টানা লেকচার দিয়ে গেলেন, প্র্যাক্টিক্যালি সব করে দেখালেন, সন্ধ্যাবেলায় ঠিক সকালবেলার মতই স্ট্যামিনা নিয়ে থাকলেন, সেটা নিয়ে যেই না উনার একটু প্রশংসা করতে যাবো যাবো, তখনি তিনি বিদায় নিয়ে বলেন, একটু পরেই উনাকে অনলাইলনে ক্লাশ নেয়ার জন্য তৈরী হতে হবে। রাত দিন বলে কিছু নাই না-কি এদের? আমিতো শুনেই টায়ার্ড হয়ে গেলাম। হিসেব করে বের করার চেষ্টা করলাম, কত ঘন্টায় এদের একদিন। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই দেখি আমাদের টিমের একজনের গার্লফ্রেন্ড তাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে, ডেফ কন-এ (হ্যাকারদের সবচেয়ে বড় সন্মেলন) কে একজন ঘোড়ার ডিম জাতীয় কিছু একটা তৈরী করে দেখিয়েছে, তাতে করে উৎসাহে সে আপ্লুত হয়ে পড়েছে। কোন দুনিয়ায় যাই? এর গার্লফ্রেন্ড খবর পাঠাচ্ছে দাঁতভাঙ্গা এক কনফারেন্সে কে কি করে তামাম দুনিয়া উদ্ধার করে ফেলেছে সেটার। মিনিটে মিনিটে টের পেতে শুরু করলাম, এ কাদের ভিতর এসে আমি উপস্থিত হয়েছি।

এদিকে অস্ট্রেলিয়া-ভারত ক্রিকেট ম্যাচ এর মত বিভিন্ন দল অন্য দলগুলোকে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ বলছে আধা ঘন্টার মধ্যে অন্য টিমদের নেটওয়ার্ক থেকে উড়িয়ে দেবে, কেউ বলছে ভালো চাইলে হার্ডডিস্ক বাসায় রেখে তারপর এসে কম্পিটিশানে যোগ দিতে, কেউ আবার বলছে এক স্ক্রিপ্ট দিয়ে সবার হার্ডডিস্ক খালি করে দেবে। যুদ্ধের এই সমস্ত হুমকি ধামকির মধ্যে বিপত্তি বাধালো আমার টিমের একজন, আমেরিকান এয়ারফোর্স এর অফিসার। তার দক্ষতার আভাস পেয়ে ভেবেছিলাম নির্ঘাৎ নবাবের সেনাপতি মীর মদন, কিন্তু যুদ্ধ শুরুর আগ মুহূর্তে তার এহেন আমতা আমতা ভাব দেখে মীর মদনের মদন পরিবর্তিত হয়ে জাফর দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবার শঙ্কা দেখা দিলো। সে না-কি সব কিছু করতে পারবে, কিন্তু কম্পিউটারে হাত দিতে পারবে না। বেটা বলে কি? যুদ্ধ করবে কিন্তু তলোয়ার হাতে নিবে না; ফুটবল খেলবে কিন্তু বলে লাথি মারবে না। মামার বাড়ীর আবদার না-কি। আমাদের টিমের আরেক সদস্য, যে প্রতি দশ মিনিট অন্তর অন্তর তার মেয়ের গুণগান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সে গর্বিত-পিতা ফুঁসে উঠলো। আমেরিকানদের সৌজন্যবোধ কোথায় নেমে গেছে, সেটা নিয়ে এই পিতৃহ্যাকার চিন্তিত হতে হতে কেঁদে ফেলার আগেই সবাই বুঝতে পারি মূল কাহিনীটা কোথায়। আমাদের এই মহান সেনাপতি মীর মদন একজন পুরোনো পাপী। তার ইতিমধ্যে ঘটানো কীর্তির খেসারতস্বরূপ কোর্ট থেকে কম্পিউটারে কাজ করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে। অতএব, শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কম্পিউটার ব্যবহার করে সরাসরি সে কম্পিটিশানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমি চকচক চোখে কচকচ করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, এবার আর মিনিট নয়, সেকেন্ডে সেকেন্ডে টের পেতে শুরু করলাম আমি কাদের মাঝে এসে উপস্থিত হয়েছি।

নির্দিষ্ট দিনে যথাসময়ে শুরু হলো কম্পিটিশান। সামনে বড় স্ক্রিনে সব টিমের পয়েন্ট দেখানো হচ্ছে। ভিসতা/এক্সপি’র পাসওয়ার্ড বের করতে আমার সময় লেগেছিলো দশ মিনিট। প্রসন্ন ভাব নিয়ে অন্যদেরকে সেটা বলতে গেলে তারা অবাক হয়ে গিয়েছিলো। কোনোভাবেই তারা এত বেশি সময় লাগার কারণ বুঝতে পারছে না। আমার প্রসন্ন মুখ বিষণ্ন হতে বেশি দেরি হলো না। বিভিন্ন দিকে তাকিয়ে দিকে দেখি কেউ চুল ছিঁড়ছে, কেউ লাফিয়ে উঠছে, কেউ দুইহাতে সমানে কি-বোর্ড চেপে যাচ্ছে। কিন্তু, ঘটার মধ্যে যাহা ঘটিলো, তাহার নাম আসল ঘটনা। একটা টিম বিচারকদের যে-মেশিনটা থেকে স্কোরবোর্ড দেখানো হচ্ছিলো, সেটা ব্রেক করে নিজেদের স্কোর সবার উপরে উঠিয়ে বসে থাকলো। অর্থাৎ কিছু না করেও তারাই ফার্স্ট হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। অতঃপর, যথাসময়ে তাদের কীর্তিকলাপ ধরা পড়লো এবং জরিমানা হিসেবে তাদের অতিরিক্ত পয়েন্ট তো কাটা হলোই, প্রাপ্য পয়েন্ট থেকেও কিছু পয়েন্ট কেটে নেয়া হলো। এ-জাতীয় কম্পিটিশান নিয়ে নীচে দেয়া সিএনএন এর বেশ কিছুদিন আগের ভিডিও আছে।

হ্যাকিং সম্পর্কিত কম্পিটিশান নিয়ে সিএনএন ভিডিও

যথাসময়ে প্রতিযোগিতা শেষ হলে বিজয়ী দলকে পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার দেয়া হলো। সমাপনী বক্তব্যে সিনেটরের রেকর্ড করা বক্তব্য দেখানো হলো। অন্যসব বক্তারা নিজদের কথা বললেন, কিছু স্কলারশিপ ঘোষণা করলেন। ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বেশ কিছু দামী ট্রেনিং কোর্স ফ্রি করে দিলেন। তবে, ঘুরে ফিরে সবার একটাই মূল বক্তব্য, ইউনাইটেড স্টেটস্‌ অব অ্যামেরিকা না-কি আমাদের এই প্রতিযোগীদের দিকে তাকিয়ে আছে, জাতিকে উদ্ধারের মহাদায়িত্ব না-কি আমাদের। যাই হোক, সবশেষে ভার্জিনিয়ার গভর্নর স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট নিয়ে, সবার ফটো তুলে, সবার থেকে বিদায় নিয়ে শেষ হলো অসাধারণ একটি ক্যাম্প।

এখানে একটা কথা বলে নিই, হ্যাকার কিন্তু অপরাধী না, যে অর্থে আমরা হ্যাকারদের অপরাধী হিসেবে ভুল করে থাকি, তারা আসলে হ্যাকার নয়, তাদেরকে বলা হয় ক্র্যাকার। কিন্তু শাব্দিক অর্থ যাই হোক না কেন, আধুনিক মিডিয়ায় হ্যাকার শব্দটি, নেগেটিভ অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমেরিকার অনেক জায়গাতেই আমাকে বিভিন্ন প্রয়োজনে টিমে কাজ করতে হয়েছে। সবখানে সবাইকে যথাসম্ভব হেল্প করতেই দেখেছি। এরা টিমমেট হিসেবে খুবই ভালো। কিন্তু এখানে এই হ্যাকার সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করতে গিয়ে মনে হলো, এরা একদমই অন্যরকম, সবার থেকে আলাদা। অপরকে হেল্প করা বা জানানো যেন এদের কাছে নেশার মত। এত আগ্রহ নিয়ে সবাই সবার সাথে সবকিছু শেয়ার করছে, দেখতেই ভালো লাগে। জানিনা হ্যাকারদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এতে প্রভাব রাখে কি-না। সোজা কথায়, ‘হ্যাকার হ্যাকার মাসতুতো ভাই’। এই শেয়ার-শেয়ার ভাবটা আমি ধূমপায়ীদের মধ্যেও দেখতে পাই। সিগারেটের এত এত দোষ, কিন্তু একটা গুণ তার মেনে নিতেই হবে। সিগারেট অবিসংবাদিতভাবে মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব বাড়ায়, মানুষকে সামাজিক করে। অচেনা-অজানা জায়গায়, অপরিচিত একজন লোক আরেকজন লোককে কি মায়াময় ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে, ভাই একটা সিগারেট হবে। আর অন্যজন, দ্বিগুণ উৎসাহে হাত বাড়িয়ে আকর্ণবিস্তৃত হাসি হেসে বলছে, আছে ভাই, আছে। কী অপূর্ব! ভাই একটা সিগারেট হবে-এক বাক্য দিয়েই বন্ধুত্বের শুরু। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, মালিবাগ মোড় হোক আর শিকাগোর কানাগলিই হোক ছিনতাইয়ের শুরুটাও হয়, ঠিক এই একই বাক্য দিয়ে।

[email protected]