লিখেছেনঃ মঙ্গল কুমার চাকমা

‘আদিবাসী’ বিষয়ে বর্তমান সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে বর্তমান জোট সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণি বেশ ঘটা করে বিদেশী কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগী গোষ্ঠী এবং দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের পৃথক পৃথকভাবে ব্রিফিং করেছেন গত ২৬ জুলাই ২০১১। ব্রিফিং-এ তিনি দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসমূহকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে অভিহিত করতে বারণ করেছেন এবং পক্ষান্তরে তাদেরকে ‘জাতিগত সংখ্যালঘু’ বা ‘উপজাতি’ (ট্রাইবাল) আখ্যায় আখ্যায়িত করতে পরামর্শ দিয়েছেন।

এই ব্রিফিং-এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ও বর্তমান সরকারের, এমনকি স্বয়ং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণি’র আদিবাসী বিষয়ে নীতিগত অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত প্রতিফলিত হয়েছে। অন্তত: কাগজে-কলমে হলেও অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনার অনুসারী একটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নীতিগত অবস্থানের পরিবর্তন এই অর্থে বলা যায় যে, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইএলও’র আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী বিষয়ক ১০৭ নং কনভেনশন অনুস্বাক্ষরের মাধ্যমে কার্যত: একাধারে আদিবাসী ও ট্রাইবাল (বাংলায় যাকে বলা হচ্ছে ‘উপজাতি’) উভয় জনগোষ্ঠীর অধিকার স্বীকার করে নিয়েছিলেন। সেসময় তিনি ‘আদিবাসী’ শব্দটির আপত্তি জানিয়ে কনভেনশনটি অনুস্বাক্ষর করেছিলেন বলে জানা যায়নি। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এই ব্রিফিং-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কার্যত: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতিগত অবস্থানের বিরুদ্ধে চলে গেলেন। দ্বিতীয়ত: আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্টভাবে ‘আদিবাসী’ শব্দটি উল্লেখ আছে। সর্বোপরি ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইসতেহারেও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ‘আদিবাসী’ উল্লেখ করে তাদের উপর চলমান বৈষম্য ও বঞ্চনা অবসানের অঙ্গীকার করেছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আড়াই বছরের মাথায় এসে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার ‘আদিবাসী’ প্রসঙ্গে স্ববিরোধী অবস্থানের ঘোষণা করলো। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর উগ্র সাম্প্রদায়িক ও জাত্যাভিমান তথা রাজনৈতিক ডিগবাজীর মুখোশ আরেকবার উন্মোচিত হলো।

সবচেয়ে দু:খ হয় মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণি’র জন্য। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে একসময় তিনি ছিলেন আদিবাসী বিষয়ে এক অকৃত্রিম বন্ধু(?)। বিশেষ করে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে আদিবাসী অধিকারের জন্য যে আবেগ-আপ্লুত বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং সমাবেশের শেষে আয়োজিত র‍্যালীতে তিনি যেভাবে মিছিলের অগ্রভাগে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অধিকারহারা আদিবাসীদের সাথে সামিল হয়েছিলেন আজ তাঁকেই অনন্যোপায় হয়ে অত্যন্ত অসহায়ভাবে আদিবাসী বিপক্ষে বিদেশী কূটনীতিক ও দেশের সম্পাদকদের নিকট বক্তব্য দিতে হলো। বর্তমান সরকারের শুধু ডা. দীপু মণি নন, আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদও ছিলেন আদিবাসী অধিকারের পক্ষে এক বলিষ্ঠ সুধীজন। কিন্তু তিনি ভোল পাল্টান যখন একটি গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা তিনিসহ চারজন সিনিয়র মন্ত্রীর দফতরে গিয়ে ল্যাপটপের মাধ্যমে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলে কি ধরনের ‘উদ্বেগজনক সার্বিক পরিস্থিতি’ সৃষ্টি হবে (যুগান্তর, ৭ জুন ২০১১) তা তুলে ধরার পর থেকেই। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে উভয় অবস্থান থেকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের প্রকাশিত ‘সংহতি’ সংকলনে দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসমূহকে আদিবাসী হিসেবে শুভেচ্ছা জানিয়ে একাধিকবার বাণী দিয়েছিলেন এবং এক বাণীতে বাংলাদেশে বিশ লাখ আদিবাসী রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ষোড়শ ও উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে বাংলার মোঘল শাসনামলে প্রতিবেশী দেশ ও মঙ্গোলীয় জাতিগুলো থেকে প্রধানত: রাজনৈতিক আশ্রয় ও অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘উপজাতি’রা এদেশে এসেছে এবং পক্ষান্তরে বাঙালীরা এদেশে ৪০০০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে বলে উল্লেখ করেন। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মরা বাঙালীদের পরে এদেশে এসেছে বলে তিনি অভিমত তুলে ধরেন। তাঁর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর চরম অজ্ঞতারই বহিপ্রকাশ ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়। বস্তুত: প্রাক-উপনিবেশিক আমলে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা তৎকালীন চাকমা রাজ্য বাংলারই কোন অংশ ছিল না। সেসময় বর্তমান চট্টগ্রামের অধিকাংশ অঞ্চলসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ছিল একটি স্বাধীন সামন্ত রাজ্য। ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে Joa de Barros নামের এক পর্তুগীজ মানচিত্রকরের আঁকা একটি মানচিত্র থেকে তৎকালীন ‘চাকোমাস’ বা চাকমা রাজ্যের সুস্পষ্ট অবস্থান সম্পর্কে প্রমাণ মিলে। এ মানচিত্রে চাকমা রাজ্যের সীমানা সুস্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে- উত্তরে ফেনী নদী, দক্ষিণে নাম্রে বা নাফ নদী, পূর্বে লুসাই হিলস এবং পশ্চিমে সমুদ্র।

১৭৬৩ সনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দ্বারা নিযুক্ত চট্টগ্রাম কাউন্সিলের প্রথম প্রধান কর্মকর্তা Mr Henry Verelst সরকারীভাবে ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকার করেন যে, চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁর আমলে চাকমা রাজ্যের সীমানা ছিল ফেনী থেকে সাঙ্গু নদী এবং নিজামপুর রোড থেকে কুকি রাজ্য পর্যন্ত। মোঘল ও নবাবী আমলে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামসহ রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও ফটিকছড়িসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল কার্পাস বা কাপাস বা তুলা মহল হিসেবে পরিচিত ছিল। পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলার ব্যবসায়ীদের সাথে পার্বত্য এলাকার আদিবাসী জুম্মদের পণ্য বিনিময় ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে চাকমা রাজারা সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কার্পাস বা তুলা চট্টগ্রামের মোঘল রাজপ্রতিনিধিকে প্রদান করতেন। এ “কার্পাস শুল্ক” কোন করদরাজ্যের মতো কর ছিল না। ভারত বিভক্তির সময় বাঙালীদের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১.৫% যারা মুলত: চাকুরী ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সেখানে সাময়িকভাবে বসবাস করতো। এসব তথ্যই প্রমাণ করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগোষ্ঠীর তুলনায় বাঙালীদের বসতি অতি সাম্প্রতিক কালের। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাক সরকার ভারত থেকে আগত মুসলমান পরিবারগুলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বসতি প্রদানের অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিণত করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। আর ১৯৭৯ সালে সরকারী উদ্যোগে অবৈধভাবে প্রায় পাঁচ লক্ষ বাঙালী বসতি প্রদানের মধ্য দিয়ে পাক শাসকগোষ্ঠীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার কাজে হাত দেন এদেশের শাসকগোষ্ঠী। আদিবাসী জুম্মদের সংখ্যালঘুকরণের এসব ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম আজ সকলের নিকট দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

অপরদিকে প্রাক-উপনিবেশিক আমলে বৃহত্তর কুমিল্লা (কমলাঙ্ক) সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল। কথিত আছে, ‘তোয়প্রা’ থেকে ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি। ‘তোয়’ মানে পানি বা নদী আর ‘প্রা’ মানে সঙ্গমস্থল বা মোহনা। ব্রম্মপুত্র, শীতলক্ষা ও ধলেশ্বরী নদীর মোহনায় এক সময় ত্রিপুরারা বসবাস করেছিল এবং রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই তিন নদীর মোহনা বা ‘তোয়প্রা’ শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে পরবর্তীতে ‘ত্রিপুরা’ নামটি জাতির নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। ত্রিপুরা রাজণ্যবর্গের ইতিহাস গ্রন্থ ‘রাজমালা’তেও এর উল্লেখ আছে। কুমিল্লার রাণী কুটির, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোগড়া গ্রামের নিকটে ‘গঙ্গাসাগর’ নামে দীঘি এখনো ত্রিপুরা মহারাজার সাক্ষ্য বহন করে।

বস্তুত: হিমালয় থেকে দক্ষিণ প্রসারী উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম, আরাকান রাজ্য পর্যন্ত যে পাহাড়-পর্বতময় ভূ-ভাগ রয়েছে সেটি মূলত: মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত জাতিগুলোর আবাস ভূমি। প্রাক-উপনিবেশিক আমলে এসব ভৌগোলিক অংশে অমঙ্গোলীয় বাঙালী নৃগোষ্ঠীর কোন পদচিহ্ন ছিল বলে ইতিহাস তেমন কোন বলিষ্ঠ সাক্ষ্য দেয় না।

আইএলও’র আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী বিষয়ক ১৬৯ নং কনভেনশনের উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন যে, “স্বাধীন দেশসমূহের জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনের কালে অথবা বর্তমান রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের কালে যে দেশে কিংবা যে ভৌগোলিক ভূখণ্ডে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীর বংশধররাই আদিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়”। আইএলও কনভেনশনের এসব বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মরা আদিবাসী হিসেবে গণ্য হতে পারে না বলে তিনি উল্লেখ করেন যা যথাযথ নয়। কেননা উপরেল্লেখিত পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দাবীকে সুস্পষ্টভাবে অসার প্রমাণ করে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে অস্বীকার করতে গিয়ে এযাবৎ বলে আসছেন যে, “বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই”। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামেও সরকারের প্রতিনিধি একই বক্তব্য প্রদান করেছেন। কিন্তু এবারই বোধ হয় উপলব্ধি হয়েছে যে, সেটা বলতে গিয়ে বাঙালীরাও নিজেরাই অআদিবাসী হয়ে যাচ্ছে। তাই এবারে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বললেন, ‘বাঙালীরাই এদেশের প্রকৃত আদিবাসী।’ তিনি আরো বলেছেন যে, এসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী আদিবাসী হিসেবে অভিহিত করায় বাঙালী জাতি বৈশ্বিক অপপ্রচার ও ভূল উপস্থাপনার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের ৯৮.৮% বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অবহেলা করে ১.২% ক্ষুদ্র অংশটিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রয়াস কোনভাবেই দেশের স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে পারে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এটা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ায় ‘প্রথম বা আদি অধিবাসী’ অর্থে যেভাবে আদিবাসী বুঝানো হয়ে থাকে, এশিয়ার ক্ষেত্রে তার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এশিয়ার ক্ষেত্রে ‘প্রথম বা আদি অধিবাসী’ বৈশিষ্ট্যের চেয়ে যাদের সমাজব্যবস্থা, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেশের মূলস্রোতধারার জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি হতে পৃথক, যারা রাষ্ট্রীয় আইনের চেয়ে প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে পারিবারিক আইন পরিচালনা ও আভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি করে, ভূমির সাথে যাদের নিবিড় সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে এবং যারা সাধারণভাবে মূলস্রোতধারার জনগোষ্ঠীর চেয়ে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে সেই অর্থেই আদিবাসী হিসেবে বুঝানো হয়ে থাকে। উক্ত বৈশিষ্ট্যের আলোকে বাংলাদেশের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশে যেমন- নেপাল, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশেও এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের “আদিবাসী” হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।

বলাবাহুল্য আদিবাসী শব্দের অর্থ নিয়ে অন্যরকম ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে এসব বিভ্রান্তিকর বক্তব্য উঠে আসছে বলে প্রতীয়মান হয়। অথচ সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলে আদিবাসী জাতিসমূহকে তাদের প্রান্তিক, অবহেলিত ও উপেক্ষিত স্থান থেকে জাতীয় মূলস্রোতধারায় নিয়ে আসার একটা আইনী ও নৈতিক ভিত্তি রচিত হবে মাত্র। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাঙালীদের চেয়ে আদিবাসীদের বিশেষ মর্যাদা প্রদানের যুক্তি সম্পূর্ণভাবে অবান্তর, অন্যদিক বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠী অবহেলিত জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হবে বা অআদিবাসী বা বহিরাগত হয়ে যাবে এমন তো কোন বিষয় ভাববার অবকাশ নেই। এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন- নেপাল, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়ায় এসব জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ফলে সেদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অবহেলিত জাতিতে পরিণত হয়ে যায়নি বা ‘একধরনের বৈশ্বিক ভুল ধারনার’ শিকার হয়নি। বরঞ্চ আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে সেদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা ও নৃতাত্ত্বিক বহুমাত্রিকতা অধিকতর সমৃদ্ধশালী হয়েছে এবং জাতীয় সংহতি ও অখণ্ডতা অধিকতর সুদৃঢ় হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি সেদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী হয়েছে।

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন যে, অতি সম্প্রতি সংবিধানে তাদেরকে কেবলমাত্র ‘উপজাতি’ হিসেবে নয়, ‘জাতিগত সংখ্যালঘু’ (ethnic minorities) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর এই বক্তব্য সর্বাংশে সঠিক নয়। কারণ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে “উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়” ইত্যাদি অনেকগুলো বিভ্রান্তিকর অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যকে মেনে নিয়ে যদি ‘আদিবাসী’ প্রত্যয়টি বাদই দেয়া হয়, তা সত্ত্বেও কি সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আদিবাসীদের মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছে বলা যায়? উক্ত পঞ্চদশ সংশোধনীতে কেবলমাত্র এসব জনগোষ্ঠীর “অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা” গ্রহণের বিধান করা হয়েছে। আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ভূমি সংক্রান্ত মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি ব্যতীত কেবলমাত্র সংস্কৃতি সংক্রান্ত একটি নামমাত্র অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে অর্থবহ ও পূর্ণাঙ্গ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি হতে পারে না। এরূপ বিধান সম্পূর্ণভাবে অর্থহীন ও বিভ্রান্তিকর। আদিবাসী, উপজাতি, জনজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভূমি অধিকার স্বীকৃতি যা প্রতিবেশী নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধানে স্বীকৃতি প্রদানের উদাহরণ রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির উদাহরণ টেনে তিনি ‘উপজাতি’ শব্দটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মরা মেনে নিয়েছেন বলে তিনি দাবী করেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ও ১৯৯৫ সালের অর্থ আইনে ‘indigenous hillmen’ এবং দারিদ্র বিমোচন কৌশলপত্র ও আদালতের বিভিন্ন দলিলে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহারের কথা বলেননি। এটা মনে রাখা দরকার যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তার মূল ও সংশোধিত পাঁচদফা দাবীনামায় ‘জুম্ম’ অথবা ‘পাহাড়ী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবী করেছিল। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তা মেনে নিতে অস্বীকার করে। পরে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জনসংহতি সমিতি ১৯৮৯ সালে প্রণীত পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনে উল্লেখিত ‘উপজাতি’ শব্দটি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ‘জুম্ম’ অথবা ‘পাহাড়ী’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের দাবী থেকে সরে এসেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বেশ ঘটা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির উদাহরণ তুলে ধরলেও এ চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে যে গড়িমসি ও কালক্ষেপণ করে চলছে সে বিষয়টি তিনি উদ্বেগজনকভাবে বেমালুম এড়িয়ে গেলেন। পক্ষান্তরে তিনি বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকাটি কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবে এই অঞ্চলে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা পার্বত্য শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে (সমকাল, ২৭ জুলাই ২০১১) বলে তিনি চুক্তি বাস্তবায়নের ইস্যুটাকে ভিন্নভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বস্তুত: আদিবাসী ইস্যুর কারণে নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তা আজ সকলের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এ সরকারই চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা আজ নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী আদিবাসী হিসেবে সংবিধানিক স্বীকৃতির বিরুদ্ধে নানা সাফাই গাইলেও সংবিধানে জাতি হিসেবে এসব ভিন্ন জাতিসত্তার অধিকারী আদিবাসী জাতিসমূহকে ‘বাঙালী’ হিসেবে পরিচিতি প্রদানের কথা ঘুর্ণাক্ষরেও উচ্চারন করেননি। ভিন্ন ভাষাভাষি অর্ধ শতাধিক আদিবাসী জাতিসমূহকে এক কলমের খোঁচায় ‘বাঙালী’ পরিচিতি প্রদান কত বড় অগণতান্ত্রিক, উগ্র জাত্যাভিমানী ও জাতি-আগ্রাসী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আদিবাসী জাতিসমূহ নাগরিক হিসেবে ‘বাংলাদেশী’ তাতে কোন দ্বিমত নেই, কিন্তু জাতি হিসেবে কখনোই বাঙালী নয়; যেটি ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিসবাদিত নেতা তৎকালীন গণপরিষদের সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্পষ্ট ভাষায় সংসদের ভেতরে ও বাইরে তুলে ধরেন। মীমাংসিত একটা বিষয়কে নতুন করে অহেতুকভাবে তুলে এনে বর্তমান মহাজোট সরকার যে বিতর্ক ও সংঘাতের ক্ষেত্র জন্ম দিয়েছে তার দায়ভার এ সরকারকেই বহন করতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন যে, “স্বার্থান্বেষী কিছু মহল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও জাতিসংঘের বিভিন্ন আলোচনায় বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী অভিহিত করার মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দেয়ার অপপ্রয়াস হিসেবে আদিবাসী ইস্যুকে উসকে দিচ্ছে।” মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় নিশ্চয় জানেন যে, আইএলও কনভেনশনে আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক পৃথক অধিকারের কথা বলা হয়নি। বরঞ্চ উভয় জনগোষ্ঠীর জন্য একই অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তাই আইএলও কনভেনশনে স্বীকৃত অধিকার উপভোগের ক্ষেত্রে আদিবাসী ও ট্রাইবালদের মধ্যে পৃথক করার কোন অবকাশ নেই। আর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আদিবাসী বলতে বিভিন্ন দেশে যাদেরকে আদিবাসী, উপজাতি, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, জনজাতি, পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠী ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করা হয় সেই সকল জনগোষ্ঠীকে সাধারণভাবে আদিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুতরাং মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রাকারন্তরে যে ভয়- ‘আদিবাসী’ হিসেবে অভিহিত করলে বেশী অধিকার দিতে হবে; আর পক্ষান্তরে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ বললে কম অধিকার বা সুবিধা দিতে হবে- এমন ভাববার কোন অবকাশ নেই।

বস্তুত: বিশেষ সুবিধা লাভের অপপ্রয়াস হিসেবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি লাভের দাবী তোলা হচ্ছে বলে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী যা বলছেন তা সর্ম্পণূভাবে অবান্তর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। ঐতিহাসিক কাল থেকে যাদের উপর চরম বৈষম্য ও বঞ্চনা চলে আসছে তাদের সেই বিশেষ প্রেক্ষাপটকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রদানের জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশে সেসব অবহেলিত ও উপেক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার নীতি অনুসৃত হয়ে আসছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানেও “নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ” এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান স্বীকৃত হয়েছে; যেখানে আদিবাসী জাতিসমূহকে সেই অনগ্রসর অংশের মধ্যে বিবেচনায় নিয়ে সরকার এযাবৎ নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। কিন্তু যেহেতু “নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ” প্রত্যয়টি অত্যন্ত অস্পষ্ট এবং এর মাধ্যমে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি পরিপূরণ হয় না, সেহেতু আদিবাসীদের জাতিগত পরিচয়সহ তাদের মৌলিক অধিকারের সরাসরি সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীটি জোরালো রূপ ধারণ করেছে।

বস্তুত: এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বোধগম্য হওয়ারও কথা যে, উসকে দিয়ে কোন ইস্যুকে আন্দোলনে রূপ দেয়া যায় না যদি তার মধ্যে কোন বাস্তব উপাদান না থাকে। আমদানী বা রফাতানী করে কিংবা উসকে দিয়ে কোন আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠিত করা যায় না। আন্দোলন-সংগ্রামের নির্ধায়ক শক্তি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী ও সেই অঞ্চলের বাস্তব অবস্থার আভ্যন্তরীণ ভিত্তি। আভ্যন্তরীণ ভিত্তির যদি বস্তুগত অনুকূল উপাদান সক্রিয় থাকে তাহলে সেখানে আন্দোলন গড়ে উঠবেই। সেরূপ বস্তুগত উপাদান সক্রিয় ছিল বলেই ১৯৭১ সালে এদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। প্রতিবেশী ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কেবল সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আদিবাসী জনগণকে যদি শোষণ ও বঞ্চনার মধ্যে রাখা হয়, তাদের মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থেকে যদি তাদেরকে বঞ্চিত রাখা হয়, তাদের আত্মপরিচয়ের অধিকারকে খর্ব করে অসম্মানজনক ও বিভ্রান্তিকর পরিচিতি যদি জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়, তাদের অনিচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে জাতি হিসেবে ‘বাঙালী’ পরিচয় যদি প্রদান করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে যদি শুধু প্রতিশ্র“তির ফুলঝুড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়, তাদের চিরায়ত ভূমি জবরদখলে রাষ্ট্র যদি বরাবরই পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে, সেক্ষেত্রে মানুষ সহজাতভাবেই বিক্ষুব্দ হবেই এবং তা প্রতিরোধ করতে সংঘবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবেই। সেখানে “স্বার্থান্বেষী কিছু মহল কর্তৃক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও জাতিসংঘের বিভিন্ন আলোচনায় উসকে দেয়ার” যোগসূত্র খুঁজে কোন জনগোষ্ঠীকে হয়তো সাময়িক দমিয়ে রাখা যেতে পারে, কিন্তু স্থায়ীভাবে দমিয়ে রাখা কখনোই সম্ভব হতে পারে না। বস্তুত: মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এই “স্বার্থান্বেষী কিছু মহল কর্তৃক উসকে দেয়ার” অজুহাত সম্পূর্ণভাবে অগণতান্ত্রিক, উপনিবেশিক ও দমনমূলক নীতিরই বহিপ্রকাশ। এটি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীকে তাদের ন্যায্য ও সহজাত অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার অপকৌশল বৈ কিছু নয়। বহু শতাব্দী ব্যাপী উপেক্ষিত আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এই উপনিবেশিক, অগণতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীল নীতি কখনোই কোন ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে না; পক্ষান্তরে তা সমস্যাকে বরাবরই আরো জটিলতর করে তুলতে পারে।

বর্তমানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আদিবাসী ইস্যু নিয়ে যে বিশ্বব্যাপী তোরজোর চলছে তার অন্যতম লক্ষ্য হলো আদিবাসীদের উপর শতাব্দী ব্যাপী বঞ্চনা ও নিপীড়নের ইতিহাস এবং বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় তাদের উপেক্ষিত অবস্থানের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং তৎপ্রেক্ষিতে তাদের মানবাধিকার, পরিবেশ, উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, ভূমি অধিকারসহ আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই প্রয়াসের মূল ভিত্তিই হলো বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে তাদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। দেশে দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু, আদিবাসী যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এসব জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। বস্তুত: বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইসতেহার, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে আদিবাসী সমস্যার সমাধানে কিছুটা চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও এটা উদ্বেগজনক যে, মহাজোট সরকার বর্তমানে তার উল্টো পথেই হাঁটা শুরু করেছে যা দেশের আদিবাসী জাতিসমূহ সহ আপামর দেশবাসী কখনোই আশা করেনি।

তারিখ : ২৯ জুলাই ২০১১