লিখেছেন – সৌহার্দ্য ইকবাল

১.
মাসখানেক আগে ফেসবুকে কোন একটা আলোচনায় ধর্মের নিয়ম-কানুন নিয়ে খুব কথা হচ্ছিল । আমি সেখানে বোকার মত কয়েকজন অপরিচিত মানুষকে লক্ষ্য করে কমেন্ট করেছিলাম এবং পাটকেলও খেয়েছিলাম বেশ । আমার মনে আছে কেউ একজন খুব সুন্দরভাবে সমাজে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছিলেন…।আমি এর পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে হুট করে ব্যাপারটার মূলে চলে গেলাম।আসলে সমাজের প্রয়োজনে ধর্ম নাকি ধর্মের প্রয়জনে সমাজ!
ধর্মের বিভিন্ন নিয়ম আছে যেগুলির চর্চা হয় সমাজে ভালভাবেই এবং সংস্কৃতির একটা বড় অংশ কিন্তু ধর্ম।ধর্ম হল একগুচ্ছ “রীতি” যা মানুষকে যে শুধু পরিচালিত করে তাই না, মানুষকে তার লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য সম্পর্কেও একটা ভাল রকমের দিকনির্দেশনা দিয়ে দেয় । সবচেয়ে বড় কথা হল সব ধর্মেই ঈশ্বর সুপারন্যাচারাল পাওয়ার নিয়ে চলেন আর সব ধর্মের মূল কথাও আসলে এক। পৃথিবীর প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ এই ধর্মকে কেন্দ্র করে যে শুধু বেঁচে থাকে তাই না- পুরো জীবদ্দশায় সে ধর্মকে পুঁজি করে অন্য মানুষের ক্ষতি করে না এবং নৈতিকতা বজায় রাখে। সমাজে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের পিছনেও ধর্ম কার্যকর ভূমিকা পালন করে। উদাহরন হিসেবে “যাকাত”এর কথা বলা যায় । ঢাকা শহরের কিছু অত্যন্ত কুটিল,অত্যন্ত দুরনিতিবাজ, নৈতিকতা বর্জিত , রিয়েল–স্টেট\ গারমেন্ট ফ্যাক্টরির সাথে জড়িত মধ্যবয়সী বা আরও বয়স্ক লোকেরাও কিছু “নেকি”র জন্য হজ্জ-যাকাত করে থাকে। অনেক মানুষ আছে যারা ধর্মের জন্য যত্র তত্র নারী ভোগ করতে পারে না।অনেক মানুষ তার নৈতিক আদর্শ ধরে রাখে শুধু ধর্মের কথা মাথায় রেখে । তাই এটা বলে দেয়া যায় যে ধর্মের একটা বড় ধরণের ভূমিকা আছে সমাজের বিভিন্ন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে- সেই সাথে আছে আত্মনিয়ন্ত্রণের ভুমিকাও ।
২.
ধর্মপ্রেমিক মানুষদের আরেকটা প্রিয় ব্যাপার হল ধর্মের তুলনামূলক আলোচনা । সবার কাছেই নিজের ধর্ম সেরা। সংখ্যালঘুরা ধর্মান্তরিত কিছুটা সহজে তাছাড়া খুব বেশি মানুষ ধর্মান্তরিত হয় না- ছোটবেলার সেই বিশ্বাস সে আগলে রাখে সারাটা জীবন।
আমাদের দেশের ধার্মিক মানুষরা খুব সহজে অন্য ধর্মকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়। এটা কি রকম হতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে সবারই । আমি শুধু একটা পয়েন্ট বলব –তা হল ধর্মগ্রন্থের রূপক ভাষা । আমরা কোরআন শরীফকে রূপক বলি – কিন্তু হিন্দুদের গীতা বা তাদের পূজা বা মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে বেশির ভাগ মানুষই ভুল ধারণা নিয়ে থাকি । এর কারন হল অন্য ধর্মকে খাটো করে দেখার প্রবণতা । একইভাবে অন্য ধর্মের মানুষও ইসলামকে সরাসরি ভোগের ধর্ম মনে করে। ধর্মের এই তুলনামূলক আলচনার এক পর্যায়ে – আমরা সামাজিক কাঠামোর সাথে কোন ধর্ম বেশি সঙ্গতিপূর্ণ এটা নিয়েও খুব আলোচনা করতে থাকি অহরহ ।

এইখানেই সবচেয়ে বড় ভুলটা করে ফেলে অধিকাংশ ধর্মপালনকারী মানুষগুলো । ধর্মের মূলকথা হল বিশ্বাস । ধর্মগ্রন্থে যা আছে তা চোখ বুজে বিশ্বাস করতে হবে – সেখানে যাই-ই লেখা থাক না অথবা রূপক অর্থে যা বোঝান হয় । যেমন ইসলামে পর্দা খুব সেনসিটিভ একটা বিষয়। এই বিষয়টিকে মানিয়ে নেয়ার জন্য আমরা নানা তত্ত্ব প্রয়োগ করি । কেউ বলি পর্দা মানে শুধু লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা কেউ বলি যে শালীনতার ব্যাপার এটা । অথচ ইসলামে খুব স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে এবং হাদিসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়ে দেয়া হয়েছে যে পর্দা বলতে আসলে “বোরখা” র মত সজ্জাকেই বুঝায়। ইসলামে খুব প্রয়োজন ছাড়া নারীর সাথে কথা বলা কিংবা বন্ধুত্ব পুরপুরি নিষেধ ।ইসলাম বাল্যবিবাহ পরোক্ষভাবে সমর্থন করে। আমরা কিন্তু এখন আর এভাবে এসব মানি না- শুধু তাই নয় , ইসলামকে যুগোপযোগী করার কথাও বলে ফেলি । এখানে একটা দারুন ভুল হল যে ধর্ম চিরায়ত এবং অবশ্যই তা মেনে নিতে হবে সর্বাবস্থায়। আর ঈশ্বরের দেয়া বিধি কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার । অথচ আমরা নির্বিকারভাবে মুখে বলি আস্তিকতার কথা অথচ একবারও ভাবি না যে ধর্মের অবস্থান আমাদের সমাজে কতটা প্রভাব ফেলছে । আমরা নিজেরা ধর্ম মানি না কারন খুব সহজ – ধর্ম থেকে আধুনিক সমাজ,দর্শন অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন এবং বিজ্ঞান ক্রমেই হয়ে উঠছে মানুষের ভরসাস্থল –এক সময় যা ছিল ধর্মের বন্ধনে । মানুষ এখন বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভাগ্যকে ব্যাখ্যা করে । এখানে ভাগ্য বলতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ব্যবহার করে যে শব্দ তা হল “সম্ভাব্যতা” ।বিজ্ঞানের অন্যতম রহস্যময় আর আজব সব ধারণা দেয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ।নিলস বোর বলেছিলেন -If quantum mechanics hasn’t profoundly shocked you, you haven’t understood it yet.

৩.
ঈশ্বর থাকা বা না থাকা কিন্তু খুব বড় একটা ব্যাপার পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের জন্য। কিন্তু বাস্তবতা হল ঈশ্বর \ ধর্ম আছে কি না এইটা নিয়ে আলোচনা আসলে অর্থহীন।প্রথমত – এই আলোচনার জন্য উপলব্ধি জিনিশটা মুখ্য যেটা আসলে পুরোপুরি ব্যক্তিনির্ভর। যেমন – ক্লোনিং এর সাফল্য বলে দেয় মানুষের প্রাণসৃষ্টির সাফল্য অথচ বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু বলবে যে এইটা যেহেতু মৌলিক(?) না – তাই মানুষের এখানে তেমন সাফল্য নেই ! দ্বিতীয়ত- আসলে ঈশ্বর থাকা না থাকা দুটোই সমানভাবে অর্থহীন । দেখা যাক কিভাবে –

প্রথমত ধরে নেয়া যাক ঈশ্বর নেই। তাহলে আমাদের জীবনে কোন “তথাকথিত” লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য নেই। নেই “তথাকথিত” নৈতিকতার বালাইও। নেই পাপপুণ্য কিংবা কোন জবাবদিহিতার ব্যাপারও। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে – একটা স্বাধীন অস্তিত্ব যেখানে কোন প্রকার “বাঁধন” নেই, কিংবা কোন প্রকার ধর্মীয় আবেগও নেই। আরেকটা বড় ব্যাপার হল এখানে জীবনের শেষ আছে এবং একটাই জীবন। তাই ধরে নেয়া যায় অস্তিত্ব এখানেই (পৃথিবীতে) অমূল্য। এই রকম পরিস্থিতিতে যদি একজন ধার্মিক মানুষ হুট করে পরে তাহলে ব্যাপারটা অনেকটা দাঁড়াবে রাস্তার ফকিরকে বিল গেটস এর সমান করে দেয়ার মত । তার কাছে নিষিদ্ধ সবকিছুই মনে হবে প্রথমে অতি মূল্যবান। আমি নিজে এক খুব ভাল মনের ধার্মিক মানুষকে একদিন বলেছিলাম ব্যাপারটা কল্পনায় আনতে। বেচারা খুব সুবিধা করতে পারে নাই। সে শুধু বলেছিল এটাই যে যা কিছুতে আনন্দ পাওয়া যায় সে তাই-ই করবে। আমি প্রশ্ন করলাম – মানুষকে মিথ্যে বলতে কেমন লাগবে ? সে বলেছিল তেমন খারাপ না কিন্তু কারও ক্ষতি হয় এমন মিথ্যা সে বলবে না। কারন এটা করতে তাঁর রুচিতে বাঁধবে ।এই কথা কিন্তু অনেক কট্টরপন্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । দেখা যাবে তারা কোন দ্বিধা ছাড়াই পাপ কাজ করে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু যে মানুষগুলো আগে থেকেই সৃজনশীলভাবে এবং “মানবিক”ভাবে ভাবতে সক্ষম তারা কিন্তু এমন করবে না। তাদের কাছে কিন্তু ঈশ্বর “না” হয়ে গেলেও তারা তাদের মূল্যবোধ দিয়ে ন্যায়-অন্যায় বিচার করবে। মূলত পার্থক্যটা এই জায়গাতেই- একটা দল নৈতিকতা\মানবিকতা বিবেচনা করছে পরজীবনের লোভে আরেকটা দল নৈতিকতা বজায় রাখছে শুধুমাত্র “মানবিক” কারনে। তাই যখন ধর্ম অন্ধত্ব কায়েম করে তখন প্রথম দলটা নির্দ্বিধায় মেনে নেয় কিন্তু দ্বিতীয় দলটি কিন্তু যৌক্তিকভাবেই চিন্তা করে এগিয়ে যায়।
“Religion is an insult to human dignity. With or without it, you’d have good people doing good things and evil people doing bad things, but for good people to do bad things, it takes religion.”
Steven Weinberg.
যেমন ইসলামে বাল্যবিবাহ পরোক্ষভাবে সমর্থন করা হয় কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এটার অপকারিতা বুঝে এবং এই ধারণা পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু অনেক ধর্মান্ধ মানুষ কিন্তু এটা এখনও সমর্থন করে এবং কিছু মেয়েরা এখনও এসবে বলি হয়।মজার ব্যাপার হল যে ধর্মের কিছু অসঙ্গতি ( আধুনিকতার সাথে) আমরা ব্যাখ্যা করি রুপকতার অজুহাত দিয়ে এবং আগেই এই নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ঈশ্বর নেই তাহলে জীবনের মানে কি ? জীবনটা কি তাহলে একদিক থেকে অর্থহীন নয় ? আর এত কষ্টই বা করছি কেন যদি একটা পরকাল না থাকে ! তাহলে দেখা যাচ্ছে ঈশ্বর না থাকার কারনে আমাদের মনে হচ্ছে আমাদের জীবন অর্থহীন!আমরা পরবর্তীতে এ নিয়ে কথা বলব।

এবার দ্বিতীয় অপশনটার কথা চিন্তা করা যাক। মনে করা যাক এমন একটা সিস্টেম যেখানে ঈশ্বর আছেন । ব্যাপারটা কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক জটিল। ঈশ্বর আছেন এবং নিজেকে প্রকাশ করেছেন ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে। এখানে ব্যাপক দিকনির্দেশনা দেয়া আছে এবং নিজেকে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মানুষকে তিনি পরীক্ষা করছেন এবং স্বর্গ\নরক বরাদ্দ করে রেখেছেন। ঈশ্বর যা চান তাইই করতে পারেন এবং তুলনাহীন , আমরা তাঁর সম্পর্কে কল্পনাও করতে পারব না( ইসলামে এই ধরনের কথা প্রচলিত আছে)। মানুষের সকল না-পাওয়া আর ব্যাখ্যা বহির্ভূত যেকোনো ব্যাপার আমরা তাঁর হাতে ছেড়ে দেই। কিছু মানুষ অবশ্য ছাড়ে নি- যার কারনে আজকের এই সভ্যতার অগ্রগতি।

সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত এমন একটা ধারণা প্রচলিত হলেও এই তত্ত্বতে বিশ্বাসী মানুষ চেষ্টা করে যায় কারন বলা হয়ে থাকে যে “বান্দার চেষ্টার মূল্য আল্লাহ রাখেন”। এই রকম একটা স্ববিরোধী ব্যাপারে একটা ব্যাখ্যা দেয়া হয় এমন- যা আমাদের হাতে নেই, তা হল ভাগ্য বাকিটা হল কর্মফল। তারপরেও একটা কথা বলা হয়ে থাকে এমন যে “আল্লাহ চান নি”।
যাই হোক ঈশ্বর থাকা একটা অনেক বড় ব্যাপার। যারা প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস করেন তাদের এটা ১০০ ভাগ মেনে চলা উচিত। কারন এখানে পরকাল আর হিসেবের বিষয়াবলী বিদ্যমান। অনন্তকাল সুখ-শান্তি নিঃসন্দেহে একটা বিরাট ব্যাপার। তবু মানুষ ঈশ্বরের দেয়া নিয়ম ৫০ ভাগও পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়!

এই প্রকল্প বা ধারণার একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এখানে মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। একটা মহান শক্তি আছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে- তাহলে আমাদের অস্তিত্ব-এর মূল্য কি ! তিনি (ঈশ্বর) ভাল-খারাপের নিশ্চয়ই ধার ধারেন না,তাহলে কেন তিনি আমাদের পুরস্কৃত করছেন আর কেনইবা কষ্ট দিবেন তাঁর কথামত না চললে- আর এসবে তার লাভই বা কি !! তারচেয়ে বড় কথা হল একটা স্বাধীন সত্তাও কিন্তু আমাদের নেই এখানে সুতরাং ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তাহলে দেখা যাচ্ছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব কতটা অসহায়ত্ব এবং দুর্ভাগ্যজনক একটা ব্যাপার !

আরেকটা দল আছেন যারা প্রচলিত ধর্ম মানেন না কিন্তু ঈশ্বর যে কেউ একজন আছেন তা বিশ্বাস করেন। বলা বাহুল্য এটাও একটা অপ্রমানিত প্রকল্পের মত ব্যাপার…।
একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল ঈশ্বর থাকা না থাকা সবই একই রকম উপসংহার দেয়। আমরা দেখেছি যে ঈশ্বর থাকা না থাকা সবই মূল্যহীন আমাদের জন্য একভাবে! তাহলে আমরা বেঁচে আছি কি জন্য ? শুধুমাত্র ভালবাসা নামের একটা অনুভূতির মাধ্যমে- যা আমাদের টিকিয়ে রেখছে সেই আদিকাল থেকে।একটা অবস্থা চিন্তা করুন- সবাইকে মেরে ফেললে আপনার জীবনেরও কোন মানে পাবেন না! মানুষ আসলে তাই বাঁচে অন্যের জন্যই। কোন মানুষ যদি ভাবে যে সে নিজের জন্য শুধু বাঁচে, সে নিজেও জানে না যে আসলে সে পরোক্ষভাবে অন্যকে অবলম্বন দিয়ে এবং নিয়ে বেঁচে আছে।

৪.
আমরা এই কথাগুলো, যারা মোটামুটি সুশিক্ষিত সবাই বিশ্বাস করি এবং তারপরেও আমাদের অনুচিত কাজগুলো করে ফেলি। আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব নিয়ে চূড়ান্ত ঝগড়া করি অথচ দশ বছরের রিকশাওয়ালাকে পারলে দুই টাকা কম দেই। গরিব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন নিয়ে বিস্তর কথা লিখি কিন্তু পারলে তাদের ঠকাই। আমাদের দেশে সিস্টেম নেই\মানুষ খারাপ অনেক কথাই বলি। নতুন প্রজন্মের বাচ্চাগুলিকে আমরা এদেশে স্বপ্ন দেখাতে ভয় পাই। তাই তাদের পড়াতে পাঠাই ইংলিশ মিডিয়ামে। পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি হই জিআরই করার জন্য।উন্নত বিশ্ব-এর সাথে তুলনা করি এদেশের বিজ্ঞান আর মানসিকতা। তুলনা করে মাথা হেঁট করে আবার ইংরেজি ওয়ার্ড মুখস্থ করি। দেশ,কাল আর পাত্রভেদে এগুলি আসলে যৌক্তিক এবং আসলে কিছুটা আপেক্ষিকও। কিন্তু আমরা যেহেতু মানুষ আমাদের আচরণে “মানবিকতা” আনাটা অনেক জরুরী।সেটাই বলে দিবে আমাদের সবার কি করণীয়।এটা ব্যাক্তিনির্ভর ধারনা। ছোট জিনিসের দেবতাদের(সরকারি-বিরোধীদল) মাঝে এই জিনিসের দারুন অভাব।আবার মানবিকতার ব্যাপারটা অনেকক্ষেত্রে একটু আপেক্ষিকও ।নিজের একটা ছোট উদাহারন দেই। আমার ছোটবেলার এক বন্ধু ছিল যাকে আমি আমার পরিবারের পরে সবচেয়ে বেশি অনুভব করতাম। আমার এই বন্ধু এক মেয়ের প্রেমে পড়ে এবং খুব নির্মমভাবে ছ্যাঁক খেল ! আমার এই বন্ধু বা ওই মেয়ে দুজনই ভাল- আমি যতদূর বুঝি বা জানি।এখানে মানবিক আচরণই মেয়েটি করেছে কারন ছেলেটিকে তাঁর ভাল লাগেনি। সে কিন্তু মেয়েটির আচরণ অমানবিক মনে করতে পারে অথচ এটা স্বাভাবিক এবং হতেই পারে। এরপরে আমার বন্ধুটি যা করল তা হল বন্ধুদের সাথে মেশাও বন্ধ করে দিল এবং শুধু তাই না -সে আমার সাথেও যোগাযোগ করল না আর। ব্যাপারটা আমার জন্য দুঃখজনক ছিল কারন সে ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।আমি সত্যিই দীর্ঘদিন ব্যাপারটা নিয়ে কষ্ট পেয়েছি এবং আমার এই বন্ধুটির ব্যবহার আমার কাছে মনে হয়েছে অমানবিক।

এই পৃথিবীতে জীবনের মানে একটাই । তা হল মস্তিষ্কে সুখের অনুভূতি নিয়ে আনা। এজন্য আমরা কত কি করি ! সবচেয়ে উৎকৃষ্ট আনন্দ হল লোভ ছাড়া মানুষের সঙ্গে চলা এবং সবসময় মানুষের জন্য কিছু করা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে। সেই মানুষ হতে পারে আপনার সবচেয়ে প্রিয়জন থেকে শুরু করে রাস্তার ফকিরটা পর্যন্ত। এই আনন্দ পাওয়ার জন্য যে যোগ্যতা লাগে সেটা আমাদের আসলে আর নেই বললেই চলে। তাই আমরা আজো ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাল কাজ করি পরকালে লাভের আশায় আর বিপরীতক্রমে আমরা অন্নায়কে “জায়েজ”ও বানাই স্বার্থের জন্য।
মানুষ যেদিন ধর্ম ছাড়া মানবিকতা পুরোপুরি আনতে পারবে নিজের মাঝে সেদিন কেমন হবে? আমার ধারনা সেদিন আমরা সত্যিই “মানুষ” হয়ে উঠবো। আমাদের কাল্পনিক কোন অবলম্বন তখন আর দরকার পরবে না।