আজ সকালে মুক্তমনায় অনেকদিন পর আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ জাহেদ ভাইয়ের একটা নতুন পোষ্ট দেখলাম। উনার লেখাটা পড়ার পর মনে হলো আমিও কিছু একটা লিখি। কিন্তু কি নিয়ে লিখি!? ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম গত সাপ্তাহে ইউটিউবে দেখা ‘Science Under Attack’ ডকুমেন্টারিটি সম্পর্কে লিখি। বিজ্ঞান মনস্ক মুক্তমনার পাঠকদের এই ডকুমেন্টারিটি ভাল লাগবে বলে আশা করি। পোষ্টের নীচের অংশে ডকুমেন্টারিটির লিংক দেয়া আছে।

নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী স্যার পল নার্স(Paul Nurse) বিবিসিতে প্রচারিত তার ‘Science Under Attack’ ডকুমেন্টারিটিতে বিজ্ঞান জগতে পরীক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন থিওরি নিয়ে কেনো আজও সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় বা অবিশ্বাস কাজ করছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন। বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষতার যুগে পৃথিবীর মানুষের এক বড় অংশ আজও বিশ্বাস কতে চায় না গ্লোবাল ওয়ার্মিংযের জন্যে দায়ী মানুষ নিজে, তারা মানতে কতে চায় না জেনেটিক মডিফাইড ফুড (GM food) ক্ষতিকারক নয় কিংবা অনেকেই আজও বিশ্বাস করে এইচ,আই,ভির কারণে এইডসের হয় না।পল নার্স তার ডকুমেন্টারিতে বিজ্ঞান জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত এই সব থিওরি মানুষ কেনো এখনো বিশ্বাস করেনা তার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে এসকল থিওরীর পক্ষে ও বিপক্ষে বিজ্ঞানি ও প্রচারকারিদের সাক্ষাতকার নেন।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পেছনে আসলেই মানুষ দায়ী কি না এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত থিওরী কতটুকু সত্য- এ বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে ডকুমেন্টারিটিতে নাসার বিজ্ঞানীর বিনসেডলারের(Robert Bindschadler) সাক্ষাতকার নেন।বৈশ্বিক উষ্ণতা অতীতের তুলনায় বর্তমানে খুব দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে যে মানুষ দায়ী এই ব্যপারটি বিনসেডলার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগ্রহিত আলোক চিত্র ও উপাত্তের মাধ্যমে খুব সহজভাবে তুলে ধরেন। বিনসেডলারের মতে বর্তমান বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পেছনে সোলার একটিভিটি প্রাথমিক কারণ নয় বরং মানুষ কর্তৃক ফসিল ওয়েল পুড়াবার ফলে জলবায়ুতে নির্গত বিপুল পরিমাণ কার্বণ ডাই অক্সাইডই মূল কারণ।স্যার পল নার্স শুধু মাত্র নাসার বিজ্ঞানীদের গবেষণার আলোকেই নয়, গত সাত দশকে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে দেখাতে চেয়েছন-‘‘পৃথিবীর উষ্ণতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এর জন্যে দায়ী মানুষ নিজে’’; আর এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত।

পল নার্স তার ডকুমেন্টারিতে সাংবাদিক জেমস ডেলিংপোলের ( James Delingpole) সাক্ষাতকার নেন। ‘‘climategate email scandal’’ এর ঘটনার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ে প্রচলিত সুপ্রতিষ্টিত বৈজ্ঞানিক থিউরিকে ভুল প্রমাণ করার অপপ্রচেষ্ঠায় খুবই বড় ভূমিকা ছিল এই জেমস ডেলিংপোলের। জেমস ডেলিংপোলের সাথে পল নার্সের সাক্ষাতকারে এ বিষয়টাই বের হয়ে আসে যে- জেমস ডেলিংপোলের বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ে সুষ্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ধারনা না থাকার পরও কিভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত সত্যের বিরোধীতা করেছেন।

পল নার্সের ‘Science Under Attack’ ডকুমেন্টারিটি থেকে এ বিষয়টি উঠে এসেছে যে- যারা বিভিন্ন সময় বৈজ্ঞানিক ভাবে সুপ্রতিষ্টিত বিভিন্ন থিওরির বিরোধিতা করেন তারা সাধারণত ঐ থিউরির সাইন্টিফিক পিয়ার রিভিউটি না পড়েই সমালোচনায় লিপ্ত হোন।এধরনের সমালোচনাকারীরা সামগ্রিক থিওরিটির পর্যালোচনা না করে প্রথমেই ঐ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌছান এবং তার পর নিজেদের মতের সপক্ষে যুক্তি প্রমাণার্থে ঐ থিওরির অংশ বিশেষ ব্যবহার করেন।

পল নার্স তাই তার তথ্যচিত্রের শেষে এসে এ মত ব্যক্ত করেছেন যে-সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্যে বিজ্ঞানীদের শুধু বিজ্ঞান আবিস্কারের দিকে গুরুত্ব দিলেই চলবে না, সেই সাথে সাথে মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের পরীক্ষার ফলাফল ও আবিস্কার সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে খোলা খুলি ভাবে জানাতে হবে। আর তা না হলে তাদের পরীক্ষার ফলাফল ও আবিস্কার সাধারণ মানুষের কাছে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করবে সেই সব ব্যক্তিরা যারা বিজ্ঞান সম্পর্কে জানে না কিংবা তারা যারা বিশেষ কোন রাজনীতি বা মতাদর্শ দ্বারা পরিচালিত।

নীচে একটি কমেন্টে আল্লাচালাইনা পল নার্স ও তার কাজকে হাইলাইট করেছেন খুব সুন্দর ভাবে, পাঠকেরা তাও পড়তে ভুলবেন না।

পল নার্সের ‘Science Under Attack’ ডকুমেন্টারিটির লিংক-

http://www.youtube.com/watch?v=V89AeCLCtJQ