খাগড়াছড়িতে মানব বন্ধন

কোন জাতি সেই ছোট হোক আর বড় হোক কোনরকম অন্যায়-অবিচারকে নিশ্চুপভাবে মেনে নিতে পারে না । ৫২’র ভাষা আন্দোলন বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, ছাত্রসমাজকে শেখিয়েছিল ভাষার প্রতি মানুষের কতটা মমত্ববোধ-ভালোবাসা থাকলে সালাম- বরকত রা বুলেটের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে ! শক্তি সঞ্চার হয়েছিল সেদিন ৫২’তে । ৭২’র সালে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা মেনে নেননি বাঙালী জাতীয়তাবাদ, গঠন করেছিলেন শান্তিবাহিনী‘ । সেই পুরানো ৭২’র পুনরাবৃত্তি ঘটালেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । বাঙালী জাতীয়তাবাদকে চাপিয়ে দেয়া হলো সকল সংখ্যালঘুদের উপর । ভিন্ন ভাষা-ভাষি, আলাদা সংষ্কৃতিসম্পন্ন সংখ্যালঘু জাতিস্বত্তাদের বানানো হলো বাঙালী । এই যেন চেঙ্গী-মাইনি-শংক নদীর পানি মিশে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরে, যেন চেঙ্গী-মাইনি-শংক নদীগুলো নিজেদের অস্তিত্ব হারালো মহাসমুদ্রে । আজ সরকারের দালালেরা সই করলো বাংলাদেশের সবাই বাঙালী শ্লোগানে । ভিন্ন ভাষাভাষি জাতিস্বত্তাদের উপর এহেন অবিচার কি মানা সম্ভব ? না ! কখনো সম্ভব নয় । শূণ্য মস্তিস্কের মানুষ ও মানবে না তাকে মাতৃভালোবাসাকে ভুলে যেতে বাধ্য করালে । তাই পাহাড়ে আজ বইছে প্রতিবাদী শ্লোগান । ফিরছে মরার -বাঁচারের লড়াই । ভবিষ্যতে আরেক শান্তিবাহিনীর মতো সশস্ত্র দল হলে কি সন্ত্রাসী টকমা লাগানো হবে তখন ?

আমাদের জাতিগত পরিচয় মুছে দেয়ার আইন মানব না

আজ ছোট্র-ছোট্র ছেলে মেয়েরা ও মানতে নারাজ । নিজেদের জাতিস্বত্তার পরিচয় কোনমতে পদদলিত করা যাবে না । বাঙালী জাতীয়তাবাদকে মেনে নিতে অপ্রস্তুত সেই অধিকার বঞ্চিত শিশু-কিশোররা । তাই প্রতিবাদের শ্লোগানে আজ পাহাড় যেন সেই ৮৯-৯০’র ছাত্র আন্দোলনের দিনগুলো খুঁজে পেতে চলেছে । ‘খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবন‘ মিলে যে পার্বত্য চট্রগ্রাম; সেই পার্বত্য চট্রগ্রামে আজ অসন্তোষের দাবানল । অহিংসা বাণী আর মানাই না; যখন অমানবিকভাবে অধিকারহারা মানুষদের আরো বেশি করা হচ্ছে অধিকার বঞ্চিত । করা হচ্ছে বিতাড়িত-লাঞ্জিত । এই লাঞ্জনা- বঞ্চনার পরিণতিতে পাহাড় জ্বলে উঠবে আরেকবার । ৯ বছরের ছোট হিমেল চাকমা ও আজ আন্দোলনের পথে যখন সে শুনেছে তাকে বাঙালী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে । সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়ে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ীদের গণ-মানববন্ধনঃ

দীর্ঘ মানবন্ধন কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন ৯ বছর বয়সের হিমেল চাকমা। সাপমারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানান, পত্রিকায় দেখেছি-সরকার আমাদেরকে সংবিধানে অস্বীকার করেছে, আমাদের বাঙ্গালী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এজন্যই আমি এই মানবন্ধনে দাঁড়িয়েছি।

আমরা বাঙালী জাতীয়তাবাদ মানি না, মানবো না

এই ছেলেদের কাছ থেকে যদি বাঙালী জাতির প্রতি প্রত্যাশাময়ী -আশাবাদী হতে আশাকরা হয়, তা কি খুব সহজ হবে ? মানুষের মনন আছে । মানুষ পাথর সদৃশ মূর্তিমীয় প্রতিকৃতি হতে পারে না । মনষ্তাত্তিকভাবে কোন শিশুকে অত্যাচার করলে তার ভবিষ্যত নির্ভর করে বেড়ে উঠার পারিপার্শ্বিকতার উপর । নিজের মা-বাবার আদর ভুলে কোন অপরাধে তাদেরকে বাঙালী পরিচয় দিতে হবে ? বাঙালী জাতিয়তাবাদকে মেনে নেয়া মানে কি নিজের মায়ের ভালোবাসাকে অস্বীকার করা নয় ? মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্তও ভুলতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নি । মহাকবি চেয়েছিলেন নিজের ইচ্ছায়, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার চাপাতে চাচ্ছে জোড়ের উপর’ অন্যের অনিচ্ছায় । ভবিষ্যত কোনদিকে ?

জাতিগত পরিচয় দিয়ে বাচঁতে চাই - উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদ মানি না, মানবো না

হ্যাঁ, জাতিগত পরিচয়কে কেড়ে নেয়ার সাধ্য কারোর নেই ! ইতিহাস তাই শিক্ষা দেই । মাতৃ ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তির জয় হয়েছে, এবং হবে । যে মানুষ মা’কে ভালোবাসতে জানে সে কোনদিন অমানুষ হতে পারে না । এরশাদ শিকদারের মতো কুখ্যাত সন্ত্রাসী জন্মানোর পিছনে সমাজকে দ্বায়ী করা চলে । শিশু বয়সে তাকে তার মায়ের অপদস্ত হওয়ার অনেক ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে হয়েছিল । সেই থেকে আস্তে-আস্তে ক্ষোপের সঞ্চার হয়েছিল; যার পরিণতিতে তাকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী হতে বাধ্য করা হয় । কিন্তু আমরা এসব ঘটনাগুলো থেকে ভালো কিছু শিখতে পারি না, বরং আরো বেশি এরশাদ শিকদার হতে বাধ্য করি ।

রাঙামাটিতে সমাবেশ

রাঙামাটিতে জেএসএস মহা সমাবেশ করে পরিচয় দিয়েছিল জাতির প্রতি ভালোবাসার টান তাদেরও কমতি নেই, যেমন করে ইউপিডিএফ প্রমাণ করলো গণ-মানব বন্ধনের আয়োজনে । হাজার-হাজার মানুষ সামিল হয়েছিল এই গণ-সমাবেশ এবং গণ -মানব বন্ধনে । দলমত নির্বিশেষে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করে না সেই পাহাড়ের বীর কন্যা-সন্তানেরা । বীরদর্পে তাদের আওয়াজে পাহাড় আজো নড়তে বাধ্য । শক্তির সঞ্চার হচ্ছে, হবে । অন্যায় -অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের হাত মুষ্ঠিবদ্ধ এবং সংগ্রামী । তবু ও “বাঙালীর জাতীয়তাবাদ” কোনভাবেই মানা যাবে না যতদিন জটিল শরীরে রক্ত সঞ্চালন বইবে ।

একজন বাঙালী যেভাবে কখনো কোনভাবে একজন পাকিস্তানি হতে পারে না, ঠিক একইভাবে এক চাকমা কখনো এক বাঙালী হতে পারে না । কোন ত্রিপুরা কখনো চাকমা যেভাবে হতে পারে না, ঠিক সেভাবে কোন মারমা, তঞ্চগ্যা, চাক, ম্রো, খিয়াং, খুমী, লুসাই ও কোন বাঙালী অথবা চাকমা হতে পারে না । মানুষের নিজস্ব পরিচয় নিজের দ্বারা নির্ধারিত । সরকারের এহেন অবিচার কখনো মানা সম্ভব নয় ।

একজন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা….কখনো একজন বাঙালী হতে পারে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ

খ্যা প্রু চিং মারমা

করিসটুফার সজিব বিজাস

জুনো পহর

হরিকিশোর চাকমা

আমাদের আঞ্চলিক রাজনীতিকবিদদের শুভবুদ্ধির উদয় হউক; যাতে করে আর যেন ভ্রাতৃঘাতে একবিন্দু রক্ত ও মাটিতে ঝরে না পড়ে । অধিকারের জন্য যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে । তখনিই অধিকার নিশ্চিত হবে ।