১ম পর্ব / ২য় পর্ব / ৪র্থ পর্ব

ধারাবাহিক আলোচনার ৩য় পর্ব। এই ধারাবাহিক আলোচনায় একটি সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া প্রায় সম্ভব হচ্ছে না। সেটা হচ্ছে একটি বিষয় বার বার এসে যাচ্ছে। কারণ, কোরানে একই বিষয় এক সূরাতে আলোচিত হওয়া সত্তেও আবার ঐ বিষয়টিকে খুব সামান্যই বিকৃত করে আলোচিত হয়েছে অন্য জায়গায়। তারপরও চেষ্টা করেছি, এখানে একই বিষয় বার বার না টানার জন্য ।

ইসলামী সংগঠনের সাথে যারা জড়িত বা যারা তীব্রভাবে ইসলামের অনুসারী বলে পরিচিতি পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, তারা রক্ষণশীল বা কট্ররপন্থি বা প্রচন্ড প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানে থাকে। তারা কিন্তু, কোরানের কিছু কিছু আয়াতকে সরাসরি অনুসরণ করেই এই রকম অবস্থানে যাচ্ছে। সরাসরি কোরান কাউকে বলেনি যে, তুমি রক্ষণশীল বা কট্ররপন্থি বা প্রতিক্রিয়াশীল হও। অথবা বলেনি যে, সাম্প্রাদায়িক মনোভাব সব সময় পোষন করে রাখো। তারপরও কোরান অনুসারীরা অনিবার্যভাবে সেই অসামাজিক অবস্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। কারণ, নিচের আয়াতে আল্লাহ যে নির্দেশ দিয়েছেন তাতে একজন মুসলিমকে তা হতে বাধ্য করে, যদি সে এই আয়াতকে অনুসরণ করে।

(৩:২৮) মু’মিনগণ যেন মু’মিনগণ ব্যতীত কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেহ এইরূপ করিবে তাহার সঙ্গে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকিবে না; তবে ব্যতিত্রুম, যদি তোমরা তাহাদের নিকট হইতে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ্ তাঁহার নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করিতেছেন এবং আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন।

আমি জানি, আল্লাহর এই কথাটি কিছু কিছু মুসলমানদের কাছে পরিত্যক্ত। বাস্তবিক ক্ষেত্রে তারা আল্লাহর এই বাণীকে অনুসরণ করতে পারছে না। কিন্তু, এই আয়াত একজন মানুষকে কি শেখায়? সরাসরি নির্দেশ কাফিরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। আজকে জ্ঞান -বিজ্ঞান, অর্থনীতি, চিকিৎসা থেকে শুরু করে আয়েশ করার উপকরণ এমন কি একজন মুসলমান যে হজ্জ পালন করবে বা নামাজের জন্য পাক হবে বা নিজের সতর ঢাকবে সবই কাফিরদের হাতে। কাফির হত্যা করে শহীদ/গাজী হওয়ার জন্য বা জিহাদ করার জন্য যে অস্ত্রটা ব্যবহার হচ্ছে সেটাও এই কাফিরদের দ্বারা তৈরী। যে কাফির আপনাকে মু’মিন হতে সাহায্য করছে তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে নিষেধাজ্ঞা। ধরুন আপনি যেখানে বাস করেন, সেখানে প্রতিবেশি হিসেবে কোন মু’মিন নেই। সেক্ষেত্রে বিপদ আপদে কাফিরদের দ্বারস্থ হতে বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে আল্লাহর আপত্তি নেই। আল্লাহ্ কি এত বোকা যে, তার মু’মিনদের বিপদে রাখবেন? প্রয়োজনে তিনি ভন্ডামীকে জায়েজ করে দিয়ে মু’মিনদের রক্ষা করছেন। উপরে উপরে বন্ধুত্ব আর অন্তরে শত্রুতার শিক্ষা। নিশ্চয় তিনি ন্যায় পরায়ণ ও পরম দয়ালু।

ন্যয় পরায়ণতা বা ন্যয় বিচার কোরানে বার বার এসেছে। গত পর্বে ন্যয়ের কয়েকটি নমুনা দেখিয়েছি। সেরকম আর একটি বিচার দেখুনঃ

(৪:১৫) তোমাদের নারীদের মধ্যে যাহারা ব্যভিচার করে তাহাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হইতে চারজন সাক্ষী তলব করিবে। যদি তাহারা সাক্ষ্য দেয় তবে তাহাদেরকে গৃহে অবরুদ্ধ করিবে, যে পর্যন্ত না তাহাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ্ তাহাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন।

ন্যয় বিচারের জন্য বাদী ও বিবাদীর সমান সুযোগ থাকতে হবে স্বপক্ষে সাক্ষী বা যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের জন্য। এই আয়াতে দেখুন ন্যয় বিচারের প্রধান এই সুযোগটি বন্ধ করা হয়েছে। যে চারজন সাক্ষী তলব করতে বলা হয়েছে সে সাক্ষীগুলো বাদী পক্ষের বা পুরুষদের। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, একজন নারীকে ব্যভিচারী বা সমাজে হেয় করার জন্য কোন অভিযোগ আনা হলে, সেই অভিযোগকে ভুল প্রমানিত করার জন্য একজন নারী কোন সাক্ষি গ্রহণ করতে পারছেন না। পুরুষ বা অভিযোগকারী যে সাক্ষি তার বিরুদ্ধে দাঁড় করাবে সে সাক্ষিই তাকে মানতে হবে এবং মানতে বাধ্য। স্বাভাবিকভাবে বাদীর সাক্ষির সাক্ষ্য অবশ্যই তার বক্তব্যেরই প্রতিফলন। নিশ্চিতভাবে বিচার নারীর বিপক্ষে ফল দেবে। আর তার শাস্তি কি হবে? আমৃত্যু গৃহ অন্তরীণ। মৃত্যু নিশ্চিত না করে তাকে বদ্ধ ঘর হতে বের হতে দেয়া যাবে না। যে ঘরে তাকে বন্ধী করা হবে সে ঘর হতে সে জীবিত বের হয়ে আসতে পারবে না। বের হবে তার মৃত লাশ। নারী নিধন কি কোন বিচারের নাম?

ইসলামে স্ত্রী এবং দাসীর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে হলে একজন পুরুষ মুসলমানকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে, ঐ নারীকে মাহর বা মোহরানা বা অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এখানে ভালবাসা ও পারস্পরিক বুঝাপড়া নাথাকলেও চলবে। একজন দাসীকে অধিকারভূক্ত করতে হলে পুর্বের মালিককে দাসীর বিনিময়ে অর্থ বা অন্য কিছু বিনময় করতে হবে। অথবা কেউ স্বত্ত্ব ত্যাগ করে দাস-দাসী উপহার দেয়ার প্রচলনও বিদ্যমান ছিল। তবে ইসলামে স্ত্রী ও দাস-দাসী অধিকারভূক্ত করার জন্য অর্থের বিনিময়টা বেশী লক্ষ্যণীয়। ইসলামে একজন পুরুষের জন্য তার বিবাহিত স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত অন্য সকল নারীদের সাথে যৌনসর্ম্পক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেখুনঃ

(৪:২৪) এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমদের জন্য ইহা আল্লাহর বিধান। উল্লিখিত নারীগণ (এখানে ২:২৩ এ উল্লিখিত নারীদের কথা বলা হয়েছে) ব্যতীত অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হইল, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। —-(আংশিক)

কোরানে নারীর অধিকার। দাস প্রথা বর্তমান বিশ্বে নিষিদ্ধ। এটাকে মানবতা বিরুদ্ধ বলে পরিগনিত করা হয়। একজন দাসীকে যেকাজে ব্যবহার করা যাবে একজন স্ত্রীকেও সেকাজে ব্যবহার করা যাবে। কোরান নারীকে কোন পর্যায়ে নামিয়েছে? দাস প্রথার মত নিষিদ্ধ এবং ঘৃণিত প্রথার পর্যায়ে একজন স্ত্রীকে নামানো হয়নি? মুসলমানদের ঘরে নারী জন্ম একটি অভিশাপ। মুসলিম সমাজের ভারসাম্য যতটুকু টিকে আছে, আজকের মুসলমানেরা কোরান মানে না বলে। উপরের আয়াতটিতে বলা হয়েছে নারীদের মধ্যে অধিকারভূক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা নারী অর্থাৎ যাদের স্বামী জীবিত আছে তাদেরকে পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখানে সুনির্দিষ্টভাবে সধবা শব্দটি উল্লেখ করার কারণ কি? একজন পুরুষ একই সাথে বহু স্ত্রী গ্রহণ করা কোরান সিদ্ধ হলেও এই আয়াতে একজন নারীকে বহু স্বামী গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং পুরুষদেরকেও নিদের্শ দেয়া হয়েছে তারা যেন স্বামী জীবিত আছে এমন নারীকে বিয়ে না করে।

কোরান পুরুষের সুবিধা নিশ্চিত করতে গিয়ে কখনো নারীকে শষ্যক্ষেত্র বানিয়েছে, কখনো দাস প্রথার মত ঘৃণীত পর্যায়ে নামিয়েছে, কখনো সরাসরি নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, পুরুষ যে অধিকার ভোগ করবে নারীরা যেন সমাজে-পরিবারে বা ব্যক্তিগত জীবনে সে ধরনের অধিকার ভোগ করতে না পারে। এইভাবে নারীদের ব্যাপারে আল্লাহর মনোভাব কোরানে বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করেছেন। এসমস্ত বিষয়ের উপর মুক্তমনাতে পুর্বে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। তারপরও সূরা নিসা এর উপর আলোচনা করতে গিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছি। নারীদের ব্যাপারে আল্লাহর দৃষ্টিভঙ্গি কি রকম? ৪:৩৪ অনুযায়ী তিনি মনে করেন পুরুষ হচ্ছে নারীর কর্তা। নারীর উপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ্। একজনের উপর অন্যজনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গেলে কাউকে না কাউকে অবশ্যই অনুগত হতে হবে। কোন মুসলমান স্ত্রী যদি স্বামীদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করে বা পুরুষের অবাধ্য আচরণ করে তাহলে প্রহার পর্যন্ত করা যাবে। কোরানে আল্লাহ্ স্ত্রীদের প্রহার করার নির্দেশনা দিয়ে হলেও স্বামীদের প্রতি স্ত্রী দের আনুগত্য নিশ্চিত করেছেন আমাদের পুরুষ দরদী আল্লাহ্। দেখুনঃ

(৪:৩৪) পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ্ তাহাদের এক-কে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন এবং এই জন্য, পুরুষ তাহাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রী রা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ্ যাহা সংরক্ষিত করিয়াছেন, তাহা হিফাযত করে। স্ত্রী দের মধ্যে যাহাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাহাদের সদপুদেশ দাও, তারপর তাহাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাহাদেরকে প্রহার কর। যদি তাহাদের তোমাদের অনুগত হয় তবে তাহাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহান, শ্রেষ্ঠ।

স্ত্রীদের প্রহার করার জন্য তাদের অবাধ্যতার প্রমাণ পাওয়া লাগবে না, শুধুমাত্র আশংকা করলেই হবে। কোন মানুষকে প্রহার করাকে সাধারণতঃ আমরা অপমানের চরম পর্যায় বলে মনে করি। স্ত্রী জাতিটাকে আল্লাহ্ কি মনে করেন? এই জাতিটা কি কেবলই অপমানের বস্তু। আর আল্লাহ্ একটি বড় দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন নারীদের প্রতি। সেটা হচ্ছে, স্ত্রীদের গোপন অঙ্গগুলো আল্লাহ্ লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজেই সংরক্ষণ করে থাকেন। আর সেটাকে হিফাজত করে সতীত্ব বজায় রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নারীকেই। সাধ্বী স্ত্রী হতে হলে যৌনাঙ্গকে অক্ষত রাখতে হবে। একগুঁয়ে ও রক্ষণশীল একজন পুরুষ মানুষের দাম্ভিকতার সাথে মহৎ সত্ত্বা আল্লাহর এই বাণীগুলো এত মিলে যায় কি ভাবে?

মুসলমান পুরুষরা একসাথে বহুস্ত্রী গ্রহণ করলে স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে যে পারা যাবে না সেটা আল্লাহ্ ঘোষনা করে দিয়েছেন নিচের আয়াতেঃ

(৪:১২৯) আর তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রী দের প্রতি সমান ব্যবহার করিতে কখনই পারিবে না, তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকিয়া পড়িও না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রাখিও না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর ও সাবধান হও তবে নিশ্চিয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

এখানে স্বামীর ইচ্ছার কোন মূল্য থাকে না, যেখানে স্বয়ং আল্লাহ্ স্পষ্ট বলে দেন । বহুস্ত্রী গ্রহণের ব্যাপারে আমার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বলছি, আল্লাহ্ যদি বলত, তোমরা যে সব স্ত্রী গ্রহণ করেছ তাদের সাথে ইচ্ছা করলেও ব্যবহারে তারতম্য করতে পারবে না। তাহলে মু’মিন স্বামীরা একাধিক স্ত্রীদের প্রতি সমান আচরণ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখত। অথচ, আল্লাহ্ নিজেই সে পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে আল্লাহ্ এও বলেছেন যে, একজনের প্রতি একটু-আধ্টু ঝুঁকা যাবে সম্পূর্ণরুপে নয়। নারীদের প্রতি এইটুকু মেহেরবান দেখিয়েই কি আল্লাহ্ আয়াতের শেষে নিজেকে পরম দয়ালু দাবী করে বসলেন ?

এবার নারী প্রসঙ্গ তবে থাক, অন্য আলোচনা হোক।

(৪:৯২, ৯৩) কোন মুমিনকে হত্যা করা কোন মুমিনের কাজ নয়, তবে ভুলবশত করিলে উহা স্বতন্ত্র এবং কেহ কোন মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করিলে এক মুমিন দাস মুক্ত করা এবং তাহার পরিজনবর্গকে রক্ত পণ অর্পণ করা বিধেয়, যদি না তাহারা ক্ষমা করে । যদি সে তোমাদের শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং মুমিন হয় তবে এক মুমিন দাস মুক্ত করা বিধেয় । আর যদি সে এমন এক সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যাহার সঙ্গে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ তবে তাহার পরিজনবর্গকে রক্তপণ অর্পণ এবং মুমিন দাস মুক্ত করা বিধেয়, এবং যে সংগতিহীন সে একদিক্রমে দুই মাস সিয়াম পালন করিবে । তওবার জন্য ইহা আল্লাহর ব্যবস্থা এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় । কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করিলে তাহার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হইবে এবং আল্লাহ তাহার প্রতি রুষ্ট হইবেন, তাহাকে লা’নত করিবেন এবং তাহার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখিবেন ।

দেখলেন তো, হত্যা সংত্রুান্ত আল্লাহর ফয়সলা? ভুলবশতঃ কোন মু’মিনকে বা চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের লোককে হত্যা করা হয়, সেক্ষেত্রে হত্যার বিচার হচ্ছে- মু’মিন দাস মুক্ত করা, রক্তপণ অর্পন ইত্যাদি। ইচ্ছাকৃতভাবে মুমিন হত্যা করলে তার বিচার করবেন স্বয়ং আল্লাহ। পৃথিবীতে তার বিচার হওয়া জরুরী না। আর যদি একজন মুমিন ব্যক্তি , মুমিন নয় এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে তবে একদিক্রমে দুই মাস সিয়াম বা রোজা পালন করলে তার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে। হত্যাকে নিরুৎসাহিত করা তো দূরের কথা, আমি এই ভেবে আশ্চর্য হচ্ছি যে, আল্লাহর কাছে নন-মুমিনদের রক্তের দাম কত কম। কি সুন্দর ফয়সলা। ইচ্ছে করল হত্যা করলাম বিনিময়ে দাস মুক্ত করলাম বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ভরনপোষন দিলাম সালিশে যা র্ধায্য হয় বা দুই মাস রোজা রাখলাম। ক্ষমা পরায়ন আল্লাহ্ বলে কথা।

কোরানে পাক-পবিত্রতার ব্যাপারটা আমার মাথায় আসে না। নামাজ আদায় করতে হলে শরীর-স্থান-পোষাক ইত্যাদি পাক হতে হয়। সাধারণতঃ নারী সম্ভোগ বা মল-মূত্র-বায়ু ত্যাগ করলে শরীর নাপাক হয় বা অপবিত্র হয়। এসব কর্ম সম্পাদনের জন্য গোসল বা ওযু করতে হয় পাক হওয়ার জন্য। প্রশ্ন হলো মলদ্বার দিয়ে বায়ু ত্যাগ করার পর ওযু করলে পবিত্র হওয়া যায় কি করে? এখানে তো হাত-পা-মুখ এসবের কোন সম্পর্ক নেই? আর নারী সম্ভোগ বা মল-মূত্র ত্যাগ করার পর যদি পানি না পাওয়া যায় তাহলেও একজন মুসলমান গোসল বা অযু না করেও পবিত্র হতে পারবে। এই সুযোগটা পাওয়া যায় তায়াম্মুম করে। গোসলের কাজটা সেরে ফেলা যাচ্ছে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম অর্থাৎ হাত ও মুখমন্ডল মাসেহ্ করে। আয়াতটির আংশিক নিচে দেখুনঃ

(৪:৪৩)———- তোমাদের কেহ শৌচস্থান হইতে আসে অথবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করিবে এবং মাসেহ্ করিবে মুখমন্ডল ও হাত, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।