ওসামা মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এত গরম-ভাবলাম এই মহামৃত্যুতে নিশ্চিত ভাবেই বিরাট কিছু একটা পরিবর্তন হবে। কিন্ত যতই যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি, ততই দেখছি, যুক্তিতে আবেগের রেশ টানা যাচ্ছে না। সত্যিই কি ওসামার মৃত্যুতে বিরাট কিছু বদলাবার সম্ভবনা আছে? না ওসামা রাবণের অনেক মুখের একটি-যতই কাট ততই গজাবে?

২০০১ এর ১১ ই সেপেটম্বর আমি নিউয়ার্কের পথেই ছিলাম। টুইন টাওয়ার ধ্বসের ছাই এবং ধোঁয়া এখনো আমার স্মৃতিতে অম্লান। সেই আতঙ্কের দিনের ভয়াবহ স্মৃতিতে খুশী হওয়ারই কথা- পয়লা মে যখন হোয়াইট হাউসের সামনে জনোৎসব শুরু হয়েছে-তখন একবার ভাবলাম, ওদের ভীরে সামিল হই। কিন্ত কোথাও সুরটা কেটে গেল। অনেক প্রশ্নের জবাব নেই!

(১) ৯/১১ এর পরেও অনেক অনেক ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ পৃথিবী দেখেছে। বালি মুম্বাই মাদ্রিদ লন্ডন-অক্টোপাসের সকল শুঁড় পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। এর মধ্যে একটি বাদ দিলে, বাকীগুলিতে ওসামার কোন ভূমিকা নেই। তাহলে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুতে কি যায় আসে? বরং হামিদ মীরের ভাস্য অনুযায়ী ওসামা তার অনুগামীদের কাছে কথা রেখেছেন। জ্যান্ত ধরা দেন নি। শহীদ হওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন।

(২) বলা হচ্ছে তিনি ইসলামিক সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের আইকন! তার মৃত্যুতে তার সাঙ্গপাঙ্গরা মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়বে!
ব্যাপারটা তাই কি? সবাই জানত আজ না হলে, কাল, ওসামা শহীদ হবে। বরং তার মৃত্যু বা আত্মত্যাগ অনুপ্রেরণার জন্ম দেবে আরো বেশী। আত্মত্যাগী শহিদরা জনমানসে হিরো-এটা আমাদের বিবর্তন সঞ্জাত মননের গভীরে প্রেথিত। একটা দলের জন্যে যে প্রাণ দেয়, তাদের প্রতি বাকীদের শ্রদ্ধা একটা সমাজের সারভাইভ্যাল স্ট্রাটেজির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আর যদি আইকন মেরেই সব কিছু করা যেত, মক্কা মদিনাতে একটা হাইড্রোজেন বোম ফেললেই ইসলামি ফ্যানাটিসিজম খতম হওয়ার কথা। ব্যাপার স্যাপার কি অতই সহজ না কি?

(৩) সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের তিনটি পিলার-আদর্শবাদ,টাকা এবং অস্ত্র। ওসামার মৃত্যুতে কোনটা কমল? পাকিস্তানের মাদ্রাসাতে এই সন্ত্রাসী আদর্শের চাষাবাদ হয়-টাকা আসে আরবের দেশগুলোর ইসলামিক সহমর্মীদের কাছ থেকে-আর অস্ত্র এবং প্রশিক্ষনের জন্যে আই এস আই ত আছেই। নইলে মিলিটারীর নাকের ডগায় ওসামা পাঁচ বছর নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিল?

ঘুরে ফিরে দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদের পেছনে আসল নাটের গুরু পাকিস্তান নামে একটি ব্যার্থ রাষ্ট্র। তাদের কব্জা না করতে পারলে-এই সন্ত্রাসবাদ শেষ করা অসম্ভব। আরো অসংখ্য ওসামার জন্ম দিতে পারে তারা। আমেরিকা তাদের সন্ত্রাস দমনে যে টাকা দিচ্ছে, হয়ত সেটাই সন্ত্রাসবাদিদের কাছে যাচ্ছে! হতেই পারে। আমেরিকান সেনেটররাই আজ এই প্রশ্ন তুলছেন। পাকিস্তানের অবস্থা এতই বাজে সন্ত্রাসবাদিরা যেকোন দিন যেকোন মন্ত্রীকে মারার ক্ষমতা রাখে কারন রাষ্ট্রর যন্ত্রের মধ্যেই হাজার হাজার সন্ত্রাসবাদি ঢুকে বসে আছে।

যারা ইসলামি শাসন ব্যাবস্থা বা শরিয়া রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর-তাদের তাকানো উচিত পাকিস্তানের দিকে। মধ্যযুগীয় কোন চিন্তাধারার ( শরিয়া) ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র চালাতে গেলে, কি হাল হবে, তার উজ্জ্বল উদাহরন পাকিস্তান। ভারতেও জাতিদাঙ্গা এবং ধর্মীয় টেনশনের পেছনে বড় কারন, মুসলিমদের অতীতকে ( শরিয়া) আঁকরে থাকার প্রবণতা। এরা বিজ্ঞান বলতে কোরানে অপবিজ্ঞানের সন্ধান করে। ফলে সমগ্র ইসলামিক বিশ্বে শুধু সন্তানেরই উৎপাদন হয়-কোন উন্নত প্রযুক্তি-বা উন্নত উৎপাদন কাঠামোর জন্ম সেখানে হয় না। তরুন সমাজ বেকার। তীব্র খাদ্য সংকট। ফলে আজ গণতন্ত্রের জন্যে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য। ইসলামিক বিশ্বে জনসংখ্যার বিস্ফোরন এবং সেই আগত নবীন সমাজকে খেতে না দিতে পারা-গোটা বিশ্বের সংকট হয়ে দাঁড়াবে।

সেটাই সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর। উৎপাদন কাঠামোর আধুনিকরন নেই-উৎপাদন বৃদ্ধি নেই-অথচ জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিল চক্রাকারে। বিন লাদেনের বাবা মহম্মদ লাদেনের ২২ স্ত্রী, ৫৪ সন্তান। একজন স্ত্রীর একটু বয়স হলেই, তিনি তাকে ডীভোর্স করে নতুন স্ত্রী নিতেন। ইনি নাকি আবার খুব ধর্মপ্রান মুসলিম বলে সমগ্র আরব বিশ্বে সমাদৃত। এই যখন একটা ধর্মের লোকেদের অবস্থা যারা আধুনিক চিন্তাধারাকে সম্পূর্ন বর্জন করে ঘরির কাঁটা উলটো দিকে ঘোরাতে চাইছে-তখন সন্ত্রাসবাদ কমার লক্ষ্ণন দেখছি না।

আর আমেরিকাতেও যুদ্ধ ব্যাবসায়ীর অভাব নেই। জাপান, জার্মানীর সাথে এখন যুদ্ধ সম্ভব না। এখন যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সম্ভব কারন সেখানে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো এখনো আছে। সেখানে লোকে জাতি, ধর্মে বিশ্বাস রাখে বেশী। আধুনিকতায় বিশ্বাস নেই ইসলামিক সমাজে। যুদ্ধ ব্যাবসার জন্যে সেটা আদর্শ। সেই জন্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্বের সাথে বলতে পারেন-এত রাখঢাক করে কি হবে? ওখানে যুদ্ধ ব্যাবসা করেই লাভ করা উচিত! মুসলিমদের এই মধ্যযুগীয় মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসা করার জন্যে আমেরিকা, ইংল্যান্ডে অনেক লোক আছে।

ওসামা একটা ক্যান্সারের সামান্য লক্ষণ। পচন অনেক গভীরে-পাকিস্তানে। সেই রাষ্ট্রটা ঠিক না হলে-এই ক্যান্সার শুধুই ছড়াবে।