এটা গল্প নয়, দুর্ঘটনা ।

পত্রিকা খুললেই হাজারো খবরের মাঝে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, গাড়ি দুর্ঘটনা, লঞ্চ ডুবি এ সব থাকবেই। এ সব এখন দুবেলা খাবার মতই স্বাভাবিক। এ সব না থাকলে আমরা পড়ার মতো কি পাব? আমরা না পড়লে পত্রিকার কি হবে? মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের বিনোদনের জন্যই বুঝি এমনটা পত্রিকায় ছাপায়, পত্রিকায় ছাপাবার জন্যই রাষ্ট্র এমন ঘটনা  ঘটতে দেয়। আমরা অলস ভরা কন্ঠে বলি এ সব হচ্ছে ইয়েমনে..ইয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ সব তো দুর্ঘটনা। এ সব নিয়ে মাথা ঘামালে কি চলে? সত্যি তো আমরা কি এ সব নিয়ে মাথা ঘামাই? ঘামাবই কেন? এ সব তো দুর্ঘটনা।

এ সব কি দুর্ঘটনা? আমরা তো জানতাম দুর্ঘটনা হচ্ছে যা সচরাচর ঘটে না। আপনারাও নিশ্চয় এমনটাই জানতেন? কিন্তু এ সব ঘটনা সত্যি সত্যি সচরাচর ঘটেনা, প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। আমাদের তাহলে কি প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটেঘটে এবং আমারা এ সব নিয়েই খুব ভাল দিন কাটাচ্ছি। বিশ্বাস হচ্ছে না??? তাহলে বলি?

১ বৈশাখ:

মৌলভীবাজার জেলার  বড়লেখা উপজেলায়। নববর্ষ উপলক্ষে স্কুল পড়ুয়া ছেলেরা আয়োজন করে ক্রিকেট ম্যাচের। খেলায় কোন এক কারণে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এর এক পর্যায়ে ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে সানোয়ার হোসেন(১৫) নামের এক বালককে।

২ বৈশাখ:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। সন্ধায় মেলায় কোন এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু দল টিনএজের মাঝে হাতাহাতি হয়, রাতে তাদের একজন ছুরি দিয়ে আঘাত করে এমনই এক টিনএজারকে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সদ্য কলেজে যাওয়া পুলক পাল (১৮)

৫ বৈশাখ:

মৌলভীবাজার সদর, একটি নামকরা স্কুলের প্রথম টার্মের পরীক্ষা দিয়ে সবাই স্কুলগেট থেকে বের হচ্ছে। গেটের কাছেই ৭ম শ্রেনীর দুটি ছেলে ঝগড়া করছে। এগিয়ে যায় ১০ শ্রেনীতে পড়ুয়া ভিক্টর প্রেন্টিস উচ্ছ্বাস। ঝগড়া থামানো তার হয়তো নৈতিক দ্বায়িত্ব মনে করেছে। ৭ম শ্রেনীর এক বালকের ধারালো ছুরি (এন্টি কাটার) দিয়ে তার মুখ ক্ষত বিক্ষত করে। উচ্ছ্বাস এখন ঢাকা মেডিলেক কলেজে শয্যাশায়ী।

কেমন লাগল? চমৎকার না? প্রতিদিন সকাল বেলায় এমন খবরের জন্যই অপেক্ষায় থাকি? চায়ের কাপের সাথে বেশ জমে যায়। জমিয়ে পড়াও যায় খানিকটা সময়। জমজমাট শুরু করতে পারলে দিনটা নিশ্চয় খারাপ যাবার কথা নয়? হয়তো যায়ও না ।

আপনি কি প্রশ্ন করতে চান, কেন এমন হচ্ছে? একটা কিশোর বয়সে কেন সে এত ক্রদ্ধ হয়ে উঠছে? কি এমন ক্ষোভ তাকে নিশ্চেতন করে দিচ্ছে? এ সব আরো সহস্র প্রশ্ন? করতে থাকুন, আর নিজেই উত্তর খুঁজতে থাকুন।

এ সবের মধ্যে একটি মজার বিশ্লেষণ না হলে কি জমে। আমাদের ক্রিকেট টিমের সদস্য প্রায় সবার বয়স কম। সবচেয়ে কম বয়সের প্লেয়ার খেলে আমাদের দলে । গর্বে আমাদের বুক ফুলে উঠে (কেমন খেলেছে সেটা অন্যদিন আলাপ করা যাবে)। শিশু শ্রম নিয়েও আমাদের এনজিও গুলো ভাল আয়েশ করেই কাজ করে যাচ্ছে। শিশু শ্রমের উপর গবেষণাতেও নিশ্চয় আমরা ভাল করবো। এবার মনে হয় আমরা আর একটা রেকর্ড করতে যাচ্ছি সেটা হচ্ছে শিশু খুনিতে আমার বিশ্বের মাঝে চ্যাম্পিয়ান হবো (আলহামদুলিল্লাহ)। আনন্দের সংবাদ। খুশির সংবাদ। যে ভাবেই হোক আমাদের একটা শিরোপা এলেই হল। দেখতে হবে শিরোপাটা আমরা পেলাম কিনা(বুদ্ধিজিবী উদ্ধৃতি)। আমরা এ কথা বলে গর্ব করতে পারবো।

যে বৃদ্ধ জানালার ভাঙ্গা গ্লাসের দিকে না তাকিয়ে ক্রিকেট বলটা ফিরিয়ে দিত কিশোরদের করুন চোখের দিকে তাকিয়ে। আজও কি বৃদ্ধ বল ফিরিয়ে দিবে রক্তিম চোখের ভয়ে? আমাদের রাষ্ট্র সমাজ কিশোরদের এমন ভাবে বড় করছে যাতে তারা বড় হলে নিশ্চয় আমাদের আর ভয়ে থাকতে হবেনা, হয়তো তারাই হবে পৃথিবী খ্যাত সোমালিয়ার দস্যুদের সর্দার। হয়তো জন্ম দেবে কোন এক তালেবান গোষ্ঠী।

এভাবেই তৈরি করে যাচ্ছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। এ ক্ষতি কি একান্ত ব্যক্তিগত? এ দায় কি কেবল খুনি ছেলের বাবা মা এর? এ দায় কি রাষ্ট্রের কাধে চড়ে বসে না? আমরা কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমনই পৃথিবী রেখে যাচ্ছি?

তবু প্রশ্ন জাগে মনে……………………………………………কেন এমন হচ্ছে?