১ম পর্ব / ৩য় পর্ব / ৪র্থ পর্ব

আমরা জানি সহনশীলতা প্রদর্শন একটি মানবিয় গুণ। আল্লাহ কোন মানুষ না হলেও তার কিন্তু সহনশীলতার এই গুণটি আছে। বলেছেন সুরা বাকারার ২৩৫ নম্বর আয়াতের শেষের দিকেঃ

সুতরাং তাঁহাকে ভয় কর এবং জানিয়া রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম সহনশীল।

আল্লাহর যে সহনশীলতার গুণটি আছে তা তিনি দাবী করলে কি হবে, কার্যক্ষেত্রে মোটেও সহনশীল নন বরং প্রতিশোধ পরায়ন এবং অধৈর্য্য। একথাটি বলার কারণ, মূসা নবীর সময় মূসার কথা যারা বিশ্বাস করতে চাইল না তাদের উপর আল্লাহ কঠিন কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেন দুনিয়াতেই। তাদের অপরাধ তারা আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করতে চাইনি। সেরকম একটি ঘটনা সুরা বাকারার ৫৫ নম্বর আয়াতে আছেঃ

যখন তোমরা বলিয়াছিলে, “হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করিব না’, তখন তোমরা বজ্রাহত হইয়াছিলে আর তোমরা নিজেরাই দেখিতেছিলে।

তারা বলেছিল আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত মূসাকে বিশ্বাস করবে না। আল্লাহ আর তথাকথিত শেষ বিচারদিন পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না। আল্লাহ এমন রাগ করলেন, কোন অপরাধীকে যে বিচারের মূখোমূখি না করে শাস্তি দেয়া যায় না তা তিনি সম্পূর্ণরুপে ভূলে গেলেন। সাথে সাথে তাদেরকে বজ্রাহত করলেন। তখন এই ক্ষমাপরায়ণ আল্লাহর পরম সহনশীলতা কোথায় গিয়েছিল? তেমনি ভাবে সুরা বাকারার ৫০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ স্বীকার করেছেন যে, তিনি সাগরকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফির’আওনী সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করেছিলেন। না হয় তারা আল্লাহর কাছে চরম অপরাধী। কিন্তু এভাবে বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা কেন? সম্প্রদায়ের পর সম্প্রদায়কে বজ্রাহত করে, সাগরে ডুবিয়ে মেরে ফেলে দ্বীধাহীনভাবে স্বীকার করে বেড়ান এই পরম সহনশীল আল্লাহ। ইহুদী নিদনের জন্য হিটলারকে যদি ইতিহাসের খলনায়ক হিসাবে আখ্যায়িত করা যায় তাহলে, এই পরম সহনশীল আল্লাহকে কোন উপাধি দ্বারা ভূষিত করবেন?

আল্লাহ নিজে এত মানুষ হত্যা করেও আশ মেটেনি আবার যুদ্ধ করার বিধান রেখেছেন। যাতে মানুষে মানুষে হানাহানি, রক্তপাত লেগেই থাকে। যুদ্ধ যে মানুষের কাছে প্রিয় না সেটা আল্লাহও স্বীকার করেছেন।

সুরা বাকারাঃ ২১৬ তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হইল যদিও তোমাদের নিকট ইহা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যাহা অপছন্দ কর সম্ভবত তাহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যাহা ভালবাস সম্ভবত তাহা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না। শুধু তাই নয় তিনি ১৯১ নম্বর আয়াতে বলেছেন, যেখানে তাহাদেরকে পাইবে হত্যা করিবে—-

ঈমানদার হোক আর বেঈমান হোক এই যুদ্ধের বিধানে যারা হত্যা হবে বা হয়েছে, তারা অবশ্যই কারো না কারো পরম ভরষাময় বাবা, প্রিয়তম স্বামী, কলিজার টুকরো সন্তান। যে সন্তান তার বাবাকে হারাল, যে স্ত্রী তার স্বামীকে হারাল, যে মা তার সন্তানকে হারাল ভেবে দেখুন প্রিয়জন হারানোর নিদারুন যন্ত্রনায় কতটুকু কাতর হয়েছিল তারা। তাদের স্বাবাভিক জীবন যাপনকে কতটুকু ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল। স্বয়ং আল্লাহ্র নিকট হতে কোন ধর্মপ্রিয় মুসলমান যদি, “কাফির-মুশরিকদের যেখানে পাবে হত্যা করবে ” এরকম আদেশ পায় তাহলে শান্তির ধর্ম ইসলাম কি অশান্তির মূল কারণ নয়? আজকের আর্ন্তজাতিক ইসলামী জঙ্গীবাদ সংঘটনগুলো আল্লাহর নামে যে দেশে দেশে হামলা চালাচ্ছে তা কি ইসলামী মূল্যবোধ থেকে আলাদা করা যাচ্ছে? বরং মনে হয়, মূল ইসলামকে তারাই সঠিকভাবে অনুসরণ করছে। যারা এই হামলাগুলো চালায় এই আয়াতের স্বপক্ষে তাদের অবস্থানটি পরিস্কার। যে সমস্ত মুসলমান এই আয়াতগুলো অনুসরণ করেন না, তারা কিন্তু নিরব সমর্থকের ভূমিকা পালন করছে। এই দেশের মুসলমানেরা যে ভাল করে কোরানের অর্থ পড়েন না বা পড়লেও মানে না, তার জন্যই বুঝি অমুসলিম সম্প্রদায় এখনো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।

এবার আসি আল্লাহর লিঙ্গবৈশম্য নিয়ে কিছু কথায়। শারীরিক গঠনে নারী এবং পুরুষ ঠিক একই রকম নয়। খাদ্যগ্রহণ, মল-মূত্র ত্যাগ করাসহ কিছু কিছু বাধ্যগত ক্রীয়া নারী-পুরুষ উভয়ই করে থাকে। নারী বলেই তাদের কিছু বাধ্যগত ক্রীয়া পুরুষদের সাথে মেলে না। রজঃস্রাব, সন্তান প্রসব ইত্যাদি। এই বৈশিষ্টগুলোর জন্য কেউ ব্যক্তিগতভাবে দায়ী নয়। খাদ্যগ্রহণ, মল-মূত্র ত্যাগ, রজঃস্রাব, সন্তান প্রসব ইত্যাদি মানুষের বেচে থাকার স্বাভাবিক প্রক্রীয়াগত কারণ। এগুলোর জন্য আমরা কাউকেই নেতিবাচক বিশেষণে ভূষিত করতে পারি না, আমাদের কমনসেন্স থেকে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিক্রীয়া প্রায় শূন্যের কোটায় হলেও আল্লাহ কিন্তু তার প্রতিক্রীয়াটা ঠিকই জানিয়েছেন সুরা বাকারার ২২২ নম্বর আয়াতেঃ

লোকে তোমাকে রজঃস্রাব সম্পন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বল, “উহা অশুচি’। সুতরাং তোমারা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করিবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী-সংগম করিবে না। অতঃপর তাহারা যখন উত্তমরুপে পরিশুদ্ধ হইবে তখন তাহাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন করিবে যেভাবে আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন।

স্বয়ং আল্লাহ্ যদি রজঃস্রাবকে অশুচি হিসাবে চিহ্নিত করেন এই নারীরা যাবে কোথায়? আপনি ভাবছেন রজঃস্রাব কালে সংগম না করতে বলে আল্লাহ তো ভাল কথাই বলেছেন। উপরের আয়াতটি একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, রজঃস্রাবকালে শারীরিক অসুস্থতার জন্য কিন্তু সংগম নিষিদ্ধ করেননি। আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন রজঃস্রাব হলে নারীদের দেহ অপবিত্র হয়ে যায় বলে। স্ত্রী সুস্থ্য হোক বা না হোক সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে স্ত্রী উত্তমরুপে পরিশুদ্ধ হলো কিনা। তাও আবার আল্লাহর নির্দেশ মত স্ত্রীর বিছানায় যেতে হবে। কতবড় মেহেরবান স্ত্রীর সাথে সংগমের জন্য গমনের নির্দেশটাও আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন। কিভাবে গমন করবেন? মালিকানাধীন শস্যক্ষেত্রে যেমন যেভাবে ইচ্ছা গমন করা যায়, ঠিক তেমনি ভাবে।

নারীদের রজঃস্রাবকে আল্লাহর অশুচি ঘোষনাকে তাদের অপমান করা হয়েছে বলে মেনে নিচ্ছেন তাই না? কিন্তু একজন স্ত্রীকে স্বয়ং আল্লাহ যখন শস্যক্ষেত্রের সাথে তুলনা করেন তখন নারীদের মান-মর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? দেখুন নীচের ২২৩ নম্বর আয়াত (আংশিক)ঃ

তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করিতে পার।

নারীদেরকে আল্লাহ সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্র ছাড়া আর কিছু ভাবেন না। একটা শস্যক্ষেত্রের কি আর স্বাদ-আহ্লাদ থাকতে পারে? যুগ যুগ ধরে পুরুষতান্ত্রীক সমাজের বর্বর পুরুষেরা নারীদেরকে শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ, আনন্দের উপকরণ, যৌন-ক্ষুদা মেটানোর উপযুক্ত স্থান, সন্তান উৎপাদানের ক্ষেত্র ইত্যাদি হিসাবেই ভেবে আসছে। তুমি সৃষ্টিকর্তা সেই বর্বর প্রহসনটাকে বিধান করে অনুমোদন দিয়ে দিলা? একজন নারী কি কেবলই সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্র? কেন শুধু নারীদের উপর একটার পর একটা খড়গ চাপিয়ে দিচ্ছেন?

তেমন একটা খড়গের নাম ইদ্দত। পুরুষের ইচ্ছা হলো বিয়ে করল আর ভাল লাগল না ছেড়ে দিল অথবা স্ত্রী মারা গেল আর একটা বিয়ে করে ফেলল, কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু স্ত্রীরা? এই সুবিধা কি তাদের কপালে সয় বলুন?

সুরা বাকারা ২৩৪ নম্বর আয়াতঃ তোমাদের মধ্যে যাহারা স্ত্রী রাখিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয় তাহাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় থাকিবে। যখন তাহারা তাহাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করিবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যাহা করিবে তাহাতে তোমাদের কোন গুনাহ নাই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।

অর্থাৎ স্বামীরা যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে চারমাস দশ দিন ইদ্দতকাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিধবা স্ত্রীরা অন্য কোথাও বিয়ে করতে পারবে না। কোন নারী যদি এর ব্যতিক্রম করেন তাহলে গুনাহগার হবেন। স্ত্রীদেরকে আল্লাহ চারমাস দশদিন প্রতীক্ষায় থাকতে বলেছেন। কিসের জন্য প্রতীক্ষা? হয়ত বা আল্লাহ্ মনে করেছেন যে, আজকে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীরা কালকে বিয়ের পিড়িতে বসে গেলে মৃতের জন্য যথাযথ শোক জানানো হয় না। এতে সাধারণ কান্ডজ্ঞানবোধের প্রশ্ন আসতে পারে। এটি একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু একান্ত ব্যক্তিগত। এই বিধানের মাধ্যমে আল্লাহ স্ত্রীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ কি আশঙ্খা করেছেন, স্ত্রীরা এইরকম কান্ডজ্ঞানহীন হবেন? কিন্তু পুরুষরা কতদিন ইদ্দতকাল পালন করবেন তা আল্লাহ্ বিধান করে দেবার প্রয়োজন মনে করলেন না কেন? এরকম নারী বিদ্বেষী আয়াত কোরানের আরো অনেক সুরায় আছে যা, ধারাবাহিকভাবে আলোচিত হবে (আমি মুলতঃ সুরা বাকারার বাইরে যেতে চাচ্ছি না)।

আল্লাহ্ মানুষকে সৎ পথে পরিচালনার জন্য আসমানি কিতাব ও নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। আল্লাহর উদ্দেশ্য মানুষকে সৎ পথে পরিচালিত করা। কিন্তু আল্লাহর এই উদ্দেশ্যকে ব্যাঘাত ঘটায় ইবলীস বা শয়তান। কে এই ইবলীস বা শয়তান? (সুরা বাকারার ৩০ হতে ৩৬ দ্রষ্টব্য) আল্লাহ্ যখন আদমকে সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছিলেন, তখন ফিরিস্তারা তেমন একটা রাজি ছিলনা। ফিরিস্তাদের এই বিনিত অনুযোগ আল্লাহ্ ভাল চোখে দেখননি। অতপরঃ আল্লাহ্ আদমকে সৃষ্টি করলেন। ফিরিস্তা এবং আদমের মধ্যে আল্লাহ্ একটি পরীক্ষা নেবার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু পরীক্ষক হয়ে আল্লাহ্ প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিলেন আদমের কাছে। ঘটনা যা হবার তাই হল, আদম পরীক্ষায় কৃতকার্য আর ফিরিস্তারা সবাই ডাববা মারলেন। আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে সিজ্দা করার নিয়ম না থাকলেও স্বয়ং আল্লাহ্ই নির্দেশ দিলেন আদমকে সিজ্দা করতে। সব ফিরিস্তারা আদমকে সিজ্দা করল। কিন্তু ইবলীস সিজ্দা করতে অপারগতা প্রকাশ করায় আল্লাহ তাকে কাফিরদের অর্ন্তভূক্ত করে দিলেন। আদম ও তার স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিলেন জান্নাতে। শয়তান আল্লাহর কাজে প্রথম বাঁধা দান করতে সক্ষম হন, আদম ও তার স্ত্রীকে জান্নাত হতে পদস্খলন ঘটিয়ে আল্লাহ্ বাধ্য করালেন আদম-দের বহিস্কারাদেশ কার্যকরী করবার।

আমার মনে হয়, আল্লাহর চেয়ে শয়তানের ক্ষমতা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি। কেন বলছি এই কথা? আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর কর্তৃক নির্ধারিত পথে পরিচালনা করবার জন্য কত নবী, কত রাসুল আর কত কিতাব পাঠালেন। কিন্তু আল্লাহ ১০০% সফল হতে পারলেন না। সেটা আল্লাহর ইচ্ছায় হোক আর শয়তানের ইচ্ছায় হোক। অথচ শয়তান কোন নবীও পাঠায় না কিতাবও না। শয়তান নবী, কিতাবে বিশ্বাসী না, সে কাজে বিশ্বাসী। সে নিজে কাজ করেই সফল। আর একটা ব্যাপারে শয়তানের প্রসংশা না করে পারছি না। সেটা হচ্ছে তার ধৈর্য্য। তার বিরুদ্ধে আল্লাহ্ এতকিছু বলেন অথচ সে টু-শব্দটি পর্যন্ত করে না। কোন প্রমাণ ছাড়া আল্লাহ শয়তানের নামে কি বদনামটাই না করলেন ১৬৮ ও ১৬৯ নম্বর আয়াতেঃ

——–শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে তোমরা যাহা জান না এমন সব বিষয় বলার নির্দেশ দেয়।

কেউ কি বলতে পারবেন শয়তান আপনাকে কানে কানে মন্দ ও অশ্লীল কাজের কথা বলেছে? শয়তান কি মানুষকে তার পথ অনুসরণ করবার জন্য কোন হেদায়েত গ্রন্থ বা প্রতিনিধি পাঠিয়েছে? কিসের উপর ভিত্তি করে আল্লাহ্ শয়তানের নামে এসব প্রপাগান্ডা করেন? হয়ত আপনি সুরা বাকারার ২৮৪ নম্বর আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে বলতে পারেন, আল্লাহর এইসব ভিত্তি-টিত্তি লাগে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এই আয়াতেই আল্লাহর স্বৈরতান্ত্রীক মনোভাব প্রকাশ পায়ঃ তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, অতপরঃ যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করিবেন এবং যাহাকে খুশি শাস্তি দিবেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান (২ঃ২৮৪)।

রং মেখে ঢং সাজে। রং বিষয়ে পাঠকদের এবার একটি কুইজ জিজ্ঞাসা করছি। কিছু মনে করবেন না। বলুন তো রঙে সবচেয়ে কি সুন্দর? যদি বলেন রং মেখে ঢং সাজলে সুন্দর লাগে অথবা রং এর তুলিতে আঁকা শিল্পীর ছবি। তাহলে উত্তর হবে সম্পূর্ণ ভূল। কে বলেছে কোরানে সব কিছুর সমাধান নেই? রং সম্পর্কে এই জঠিল প্রশ্নটির উত্তর নীচে দেখুন সুরা বাকারার ১৩৮ নম্বর আয়াতেঃ

আমরা গ্রহণ করিলাম আল্লাহর রং, রঙে আল্লাহ্ অপেক্ষা কে অধিকতর সুন্দর? এবং আমরা তাঁহারই “ইবাদতকারী।

অনেকেই বলতে পারেন আল্লাহর সাথে তামাশা? কিন্তু খেয়াল করে দেখুন তামাশাতে আল্লাহও কম যান না। কাফিররা ঠাট্রা-তামাশা করেছিলেন বলে আল্লাহ্ কি ছেড়ে দেবার পাত্র? দেখুন সূরা বাকারার ১৫ নম্বর আয়াত আংশিকঃ আল্লাহ্ তাহাদের সঙ্গে তামাশা করেন—-
আপনারা দেখে থাকবেন, ছোট ছোট বাচ্চারা একজন আর একজনকে চিমটি বা খোঁচা দিলে যে খোঁচা খেল সে কিন্তু উল্টা খোঁচা না দিতে পারা পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারে না। যে কোন উপায়ে দিয়েই ছাড়বে। বলুন, প্রতিশোধ পরায়ণ অবুঝ বাচ্চাদের কাজের সাথে সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী আল্লাহর (২ঃ৩২) কাজে কি কোন পার্থক্য দেখতে পেলেন? বিনোদন আর বিনোদন।

আল্লাহ্ কোরানের বিভিন্ন জায়গায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন, সেটা মোটামুটি সবারই জানা। অহংকারী মনোভাব, হুমকি-ধামকি, ভয়-ভিতি, আল্লাহর নিজ গুণের জাহির ইত্যাদি কোরানে বার বার এসেছে। শুধুমাত্র সুরা বাকারার মধ্য থেকেই তেমনি কয়েটি পরিসংখ্যান দেখাচ্ছিঃ

ক) আল্লাহকে ভয় করতে বলা হয়েছে কমপক্ষে ১২ বার (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ৪০, ৪১, ১৫০, ১৯৪, ১৯৭, ২০৩, ২২৩, ২৩১, ২৩৩, ২৩৫, ২৮২)।

খ) নিজেকে সর্বশক্তিমান দাবী করেছেন কমপক্ষে ০৬ বার (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২০, ১০৬, ১০৯, ১৪৮, ২৫৯, ২৮৪)।

গ) শাস্তি/মহাশাস্তি প্রদানের কথা বলেছেন কমপক্ষে ১২ বার (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ৭, ৩৯, ৮৬, ৯০, ১০৪, ১১৪, ১২৬, ১৬২, ১৬৫, ১৭৮, ১৯৬, ২১১)।

ঘ) নিজেকে ক্ষমাপরায়ণ/ক্ষমাশীল দাবী করেছেন কমপক্ষে ১০ বার (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ৩৭, ৫৪, ১২৮, ১৭৩, ১৮২, ১৯৯, ২১৮, ২২৫, ২২৬, ২৩৫)।

ঙ) নিজেকে পরম দয়ালু দাবী করেছেন কমপক্ষে ১২ বার (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ৩৭, ৫৪, ১২৮, ১৪৩, ১৬০, ১৬৩, ১৭৩, ১৮২, ১৯৯, ২০৭, ২১৮, ২২৬)।

চ) নিজেকে সর্বজ্ঞ বা সবজান্তা দাবী করেছেন কমপক্ষে ১৪ বার (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২৯, ১১৫, ১২৭, ১৩৭, ১৫৮, ২৮১, ২২৪, ২২৭, ২৩১, ২৪৩, ২৬১, ২৬৮, ২৮২, ২৮৩)।

ছ) নিজেকে প্রজ্ঞাময় বলেছেন কমপক্ষে ০৮ বার (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ৩২, ১২৯, ২২০, ২২৮, ২৪০, ২৪৭, ২৫৫, ২৬০)।

চলবে–