৬ জুলাই ২০১০ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১৩ বছর বয়সী শিশু গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে স্বামী রূমা ওভারসিজ লিমিটেড নামের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ২ জুলাই মতিঝিল থানায় মামলা করেছেন তার স্ত্রী নাজমা। নাজমা জানান, রেজাউল আগেও একাধিকবার এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছে, তবে সম্মানের ভয়ে এতদিন সবাই মুখ বুঝেছিল।

ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর শান্তিবাগের নভেলটি মঞ্জিলে ১ জুলাই সকাল সাতটায় যখন নাজমা বাসায় ছিল না। খবরে প্রকাশ ডাক্তারি পরীক্ষা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, তবে রিপোর্ট তখনও পাওয়া যায়নি।
স্বামী কর্তৃক শিশুকে ধর্ষণ নিয়ে স্ত্রীর ধর্ষণের শিকার শিশুর পক্ষে করা মামলাটিকে পাঠক কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
স্বামীদের এমন অপকর্মের কথা তথ্য প্রমাণসহ জানলেও স্রীরা তা হজম করে নেন। নিতে বাধ্য হন। এ বাধ্যবাধকতা সংসারটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য।
আমি এমন হালিখানেক মহিলাকে জানি যারা চাকরিজীবী এবং স্বামীর লাম্পট্যের নীরব সাক্ষী। যাদের কথা জানি তাদের নিজের হাঁটুতে শক্তি আছে বলে আমার বিশ্বাস ছিল। আমার সাথে নিজেই স্বামীর অপকর্মের কথা বলেছেন। তবে ক্ষোভ নিয়ে বলেননি, বলেছেন অসহায় হিসেবে। এর জন্য প্রতিবাদ, প্রতিকার বা প্রতিরোধ কোন কিছুতেই যেতে চান না। না যাওয়ার কারণগুলোও বেশ উল্লেখযোগ্য। একজন যেতে চান না তার ছোটো বোনের বিয়ে বাকী। সে এখন স্বামীকে ছেড়ে গেলে তার সে বোনের বিয়ে দিতে সমস্যা হবে।
অন্যজন তার মা বাবার দিকে তাকিয়ে। এ বুড়ো বয়সে কষ্ট পাবেন মেয়ের ঘর ভাঙ্গা দেখলে। আরেকজন তার জন্য তার ভাই বোনের সংসারে তাকে নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি হবে। ভাইয়ের স্ত্রীরা ভাই কে অনুযোগ দিবে, বোনের স্বামী উঠতে বসতে শুতে বোনকে কথা শুনাবে—শাসাবে। অর্থাৎ নারীটির পুরো পরিবারটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভাইবোন অনুযোগ শুনবে বোনের জন্য।
আমি একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার হাজব্যান্ডের ভাইবোনের বেলায় ও তো একই ভাবে তা প্রযোজ্য হবে। তা নয় কি?
ঐ নারীটির তাৎক্ষণিক উত্তর, না, হবে না। ও তো পুরুষ মানুষ।
উপরের খবরটিতে প্রকাশ, সম্মানের ভয়ে এতদিন সবাই মুখ বুঝেছিল। আমার প্রশ্ন এ ‘সম্মানের ভয়ে’ বিষয়টিকে নিয়ে।এ সম্মান কে নির্ধারণ করে? আর তা নির্ধারণের মাপকাঠি কি? স্বামী লম্পট হলে কার সম্মান যায়?
নারী প্রচলিত প্রথার বাইরে প্রেম বা কোন সম্পর্ক করলে নারীটির সম্মান যায়। স্বামী করলেও স্ত্রী নামক নারীটিসহ তার পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই পরিবার প্রথার জন্য কি নারীরাই শুধু খেসারত দিবে?
হায়রে আমার পরিবার প্রথা!
প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী খুন, হত্যা, স্বামীর অত্যাচারে স্ত্রীর আত্মহত্যা, যৌতুকের বলি গৃহবধূ। উদাহরণ দিচ্ছি না। কারণ কয়টা দেব ? তাছাড়া যে কেউ যে কোন দিনের যে কোন দৈনিক পত্রিকা নিলেই তা দেখতে পাবেন। কাজেই আমি তা উল্লেখ করে প্রমাণ করলাম না। সব জেনেও, লাখো নারী স্বামীর হাতে প্রতিদিন মার খেয়েও ঘর করছে। ‘পারিবারিক সহিংসতা ( প্রতিরোধ ও সুরক্ষা ) আইন ২০১০’ও পারছে না নারীর শরীরকে মারধোর হতে রক্ষা করতে। স্বামীর অপকর্মের প্রতিবাদ করতে। প্রথমত, স্বামীর নামে অভিযোগ দিয়ে স্বামীর ঘর ছাড়লে থাকবে কোথায়? খাবে কি? বাচ্চাগুলো কীভাবে বড় করবে?

অনেক ধর্মান্ধ ব্যক্তি নারীকে ঘর থেকে বের হতে বারণ করেন। নারীর যত্রতত্র বাইরে বিচরণই নাকি নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ। কিন্তু ২০০১ সালে দশটি দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক একটি গবেষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে আই সি ডি ডি আর বি এর সাথে নারীপক্ষ যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছিল। এতে দেখা গেছে, সহিংসতার শিকার ৬৩%নারী তাদের নিজ পরিবারে সহিংসতার শিকার এবং সহিংসতার স্থানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে ১৮% ছিল অন্য কারো বাড়ি। ১৫% ঘটনা ঘটেছিল জনসমাগমস্থলে এবং মাত্র ৮% কর্মস্থলে।
কাজেই সহজে অনুমান করা যায়, নারীর জন্য নিজের ঘরও সব সময় নিরাপদ নয়।

আর তাইতো নারীবাদীরা স্লোগান দেয় —-

‘কিসের ঘর কিসের বর,
ঘর যদি হয় মারধোর।’

তবে এ স্লোগান সজাগ নারীর জন্য। সাহসী ও সক্ষম নারীর জন্য। কিন্তু শতকরা কতজন নারী সজাগ,সাহসী ও সক্ষম? কাজেই
নারীকে এ স্লোগানের যোগ্য করে তুলতে হবে।