কবি নজরুল
করিয়াছ ভুল।
দাড়ি ফেলিয়া
রাখিয়াছ চুল।।

এটি নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন বা লিখেছিলেন। ভাষ্যটি আমার অফিসের এক ড্রাইভার সাহেবের। তাছাড়া তার ভাষ্য হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুসলমানদের দাড়ি রাখার গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝেছিলেন বলেই তিনি নিজে দাড়ি রেখেছিলেন। আর কাজী নজরুল ইসলাম মুসলমান হয়ে শুধু একজন হিন্দু নারীকে বিয়েই করেননি, অর্ধেক হিন্দু হয়ে গিয়েছিলেন। ড্রাইভার সাহেবের কাজী নজরুল ইসলামকে অর্ধেক হিন্দু আর অর্ধেক মুসলিম বানানোর থাকার ধারণাটি উপভোগ্যই বটে । সে নজরুলকে পুরোপুরি হিন্দু বানাতে চান না। তাহলে মুসলিম হিসেবে জন্ম নেওয়া একজন মুসলিম কবি কমে যাবে এবং পুরোপুরি হিন্দু হয়ে গেলে তার প্রতি দাবি বা তাকে আলোচনার বিষয়বস্তুও করার আর কোন মানে হয় না।

রবীন্দ্র সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে তার ধারণা শূন্য এবং নজরুলের সাহিত্য কর্ম সম্পর্কেও দুই শূন্য। অর্থাৎ দুই কবি সম্পর্কেই তার ধারণা ঘোড়ার ডিম। সে তাদের বেশভূষা ও তার সমগোত্রীয়দের সাথে আলাপ আলোচনার সারমর্মই শুধু আমার সাথে মত বিনিময় করেছেন। ড্রাইভার সাহেবের মতে, শুধু কবিদের নয়, মানুষ মাত্রই জন্মসূত্রীয় পরিচয় তাঁদের ধর্ম, যা হওয়া উচিত তাদের সম্পূর্ণ পরিচয়। আর বেশভূষা ও আচার আচরণ দিয়ে তার অর্ধেক খুইয়ে ফেলেছেন, যেজন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সে নজরুলের চেয়ে একাত্ম অনুভব করেন রবীন্দ্র নাথের দাড়ির কারণে। বাহঃ!
কবিদের আসল পরিচয় যে তার কবিত্বে, মানবিকবোধে, জীবনাচরণে, তার শ্রুশুষাবিহীন মুখমন্ডল নয়। আর ড্রাইভার সাহেবের মত অগণিত সামাজিক ড্রাইভারদের এমন মনোভাব কীভাবে এবং কে কাটাবে!!!

বঙ্গাব্দ, খৃস্টাব্দ, শকাব্দ, গৌরাব্দ, হিজরি,ভাস্করাব্দ । কোনটা মানবো? অনেকেই প্রস্তাব করেছেন মুক্তিসন বা স্বাধীনতাসন (বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধ থেকে যে সন ধরা হয়), অনেকে তা ব্যবহারও করে থাকেন। যেমন। মুক্ত- মনায়ই হাসান মাহমুদ (ফতেমোল্লা নামে) ইংরেজী সনের সাথে মুক্তিসন ব্যবহার করেন।

ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দররের নাম আগে আরবীতে লেখা। পরে বাংলা ও ইংরেজী। এতে সরকারের কোন দ্বিধা নেই। কিন্তু আমি দ্বিধাগ্রস্থ। সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে কি ক্ষমতাবলে বর্হিবিশ্বে আমাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দররের নাম আগে আরবীতে লিখে পরিচিত হতে হবে?
সংবিধানে যেখানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়েছে সেখানে এ আরবী ভাষা কেন? এটা কি সংবিধান লংঘন নয়? (বাংলাদেশের অন্যান্য ভাষাভাষীদের ভাষা অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সাংবিধানিক অবস্থানের কারণে আমার এ যুক্তি) ।
গৌরাব্দ শব্দটি নতুন শুনলাম। জন্মসূত্রে হিন্দু হলেও সনাতন এ ধর্মটি নিয়ে পারিবারিকভাবে গভীর কোন চর্চা নেই বলেই হয়তো শব্দটি আমার বা ধারণাটি আমার কাছে নতুন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেকের সাথে কথা বলে দেখি,আমি নিজেই শুধু না, যারা অ্ষ্টপ্রহর, চৌষট্টি প্রহর কীর্তনের আয়োজন করেন তারাও জানে না। চমৎকার রঙিন নিমন্ত্রণ পত্র ছাপান। অনুষ্ঠানের তারিখ জানাতে তিনটা অব্দ লিখেন। বঙ্গাব্দ, খৃস্টাব্দ ও গৌরাব্দ। সবাই হুইন্যা মুসলমান। সনাতন ধর্মাবলম্বী। আমাদের এখন তো কীর্তন কমিটি গ্রামে গ্রামে। পুরো শীতকাল শুধু কীর্তনে কীর্তনে মুখরিত। আমার ছোটভাই ঠাট্টা করে বলে, নবদ্বীপ বানিয়ে ফেলেছে।
গৌরাব্দ জানি না বলে ভেবেছিলাম আমি একলাই আহম্মক। আমার প্রশ্ন শুনে অন্যদের মুখাবয়বও আহম্মকের মত। ফোন করলাম আমার এক কাকা শ্বশুরকে, যিনি ঢাকার একটি কলেজের অংকের শিক্ষক হয়েও গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনিও জানেন না গৌরাব্দ কি গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর জন্ম না প্রয়াণ উপলক্ষ্যে। আহাম্মক বনে গেলাম? পরে উনি কয়েকজনকে ফোন করে জেনে আমাকে জানালেন যে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর আবির্ভাব থেকেই গৌরাব্দ ধরা হয়।
না, আহম্মক হইনি। সপ্রতিভুই আছি এবং থাকতে চাই। সবাই হুজুকে চলে। তাবলিকের সাথে পাল্লা দিয়ে কীর্তন। প্রচারেই প্রসার। হিন্দুদের মধ্যে ধর্মীয় ভাব জাগ্রত করার মহান ব্রতে ব্রতী সব ধর্মপ্রাণ হিন্দু।
আর হিজরি বা গৌরাব্দ নয়। বঙ্গাব্দ, খৃস্টাব্দ আর মুক্তাব্দ বা স্বাধীনতাব্দ। আমি অব্দ ঠিক রেখে মুক্তাব্দ বা স্বাধীনতাব্দ রাখার প্রস্তাব করছি। সারা বিশ্বের মানচিত্রে জনসংখ্যার অনুপাতে, ভৌগোলিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আমরা সংখ্যালঘু। কোন ধর্মীয় হিজরি বা গৌরাব্দ নয়। খৃস্ট্রাব্দ মানতে হবে সংখ্যাগুরুদের প্রতাপ ও প্রভাব মুক্ত হতে পারব না বলে। কাজেই বাংলা সনের
পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব অব্দ হোক মুক্তাব্দ বা স্বাধীনতাব্দ। এখন, আজকে থেকে—৪১ মুক্তাব্দ বা স্বাধীনতাব্দ থেকে এবং মুক্ত-মনা থেকেই শুরু হোক এ যাত্রা।
আমার প্রস্তাবে একমত হলে মুক্ত-মনা এডমিনকে অনুরোধ করব মুক্তাব্দ বা স্বাধীনতাব্দ বিষয়টি যোগ করতে আর মাসের নাম নিয়ে সবাই মিলে চিন্তা করতে।
৪০ মুক্তাব্দ বা স্বাধীনতাব্দ ২৫ মার্চ ২০১১ (আগামীকাল থেকে শুরু হবে ৪১ মুক্তাব্দ বা স্বাধীনতাব্দ )