নর হতে সৃষ্ট;
তাই আমরা নারী।
মহলে বন্দী
তাই আমরা মহিলা।
আমরা রমণীয়
তাই রমণী।
আমরা কমনীয়
তাই কামিনী।

পুরুষের একাকীত্ব ঘোচাতে
আমরা কেবল সঙ্গদানকারিনী।
আমরা অসূর্যস্পর্শা বন্দিনী,
আমরা নিষ্পেষিতা, নিপীড়িতা, জনম দুঃখিনী।

আমরা জড় পদার্থের মত
শুধু আঘাত সইতে জানি
প্রত্যাঘাত করতে জানিনা।
মনের দুঃখে শুধু কাঁদতে জানি
প্রতিবাদ করতে জানিনা।
আমরা নিষ্প্রাণ পাথরের মত
শত আঘাতেও মুখ থুবড়ে প’ড়ে থাকি।
আর অশ্রুর আড়ালে
জ্বলন্ত দুঃখ ঢাকি।

আমরা ক্রীত সামগ্রীর মত
প্রভুর (স্বামী) খেয়াল-খুশির খেলনা।
চারজনের একজন নেহাৎ ফেলনা।
আমরা আসবাবপত্রের ন্যায় অন্তঃপরবাসিনী।
আমরা হুরী, কিন্নরী, অপ্সরী।
আমরা নারী ও পুরুষের গর্ভধারিণী
তবুও কেন স্বর্গ ও মর্তে
পুরুষের মনোরঞ্জনকারিনী?

আমরা কখনো স্থাবর
কখনো অস্থাবর সম্পত্তি,
নির্যাতিত হতে আমাদের থাকেনা আপত্তি।

আমরা মৃত স্বামীর সহযাত্রী হয়েছি, পবিত্র নির্দেশে।
আমরা জীবন্ত পুড়ে
ভস্মীভূত হয়েছি পবিত্র নির্দেশে।
আমরা এখনো প্রহৃত হই পবিত্র নির্দেশে।
আমরা এখনো ভালবাসার অপরাধে
জনসমক্ষে দোররাঘাতে মূর্ছিত হই,
নিহত হই পবিত্র নির্দেশে।
আমরা এখনো পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে
বঞ্চিত হই পবিত্র নির্দেশে।
কখনোবা ছিটেফোঁটা কিছু পাই,
তাও পবিত্র নির্দেশে।

আমরা পরাশ্রয়ী লতার মত
সর্বদা কারো না কারো আশ্রয়ে বেঁচে রই।
কখনো বাবার, কখনো স্বামীর
কখনো ভাইয়ের, কখনো পুত্রের।
আমরা অতি তুচ্ছ কারণে
কিংবা নিতান্তই অকারণে
পদচ্যুত হই, গৃহচ্যুত হই।

আমরা ধর্ম, রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার হতে
লাঞ্ছিত হই, পদাঘাতে জর্জরিত হই।
নিঃসংকোচে, নির্দ্বিধায়, বিনা প্রশ্নে
আমাদের পাওনা ভেবে,
নিয়তির খেলা ভেবে
আমরা সকল লাঞ্ছনা গঞ্জনা
শিরে ধারণ ক’রে নিই।

এখনো আমরা অনেকেই ভাবতে জানিনা
এ কেমন জীবন মোদের!
ধর্ম ও সমাজের কর্ণধারদের কাছে
আজ আমাদের প্রশ্ন
“আমরা কি কেবলই নারী, মানুষ নই?”