বইমেলা মানেই যেন আবেগ, দেশপ্রেম, ভাষাপ্রেম এবং এবার সাথে যোগ হয়েছে ক্রিকেট প্রেমও । এ ক্রিকেট প্রেমের উন্মত্ততাও দেশপ্রেম থেকে উৎসারিত। মেলায় ঢোকার আগেই দেখি মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বেলিত করা অনেক আয়োজন। এমনি একটিঃ

বইমেলায় শুধু বই কিনে নয় —- ঘুরে ঘুরে দেখায়ও যেন আনন্দ। মেলার ভেতরে ঘুরাঘুরি। ক্রিকেট। বইমেলা একাকার। অবশ্য পাঠকের চেয়ে দর্শক বেশি। অনেকেই আনন্দ পায় হাতে পতাকা নিয়ে ঘুরিয়ে, সুখ অনুভব করে নিজের গালে পতাকা এঁকে, ICC লিখে। মাথায় শহীদ মিনার বেঁধে ঘুরায়ও যেন কত পুলকিত।

স্টল সাজানোতেও আছে বৈচিত্র্য। এ যে শুধু দোকান নয়। বই বেচাই শুধু উদ্দেশ্য নয়— নান্দনিকতার ছোঁয়া চাই স্টলের প্রদর্শনীতে। শুদ্ধস্বর তো স্টলের ভেতরে লিখেই রেখেছে—মন জোগাতে নয়, মন জাগাতে। ব্রিটিশ কাউন্সিল এক কোনায় নিরিবিলি আটপৌঢ়ে সাজে দাঁড়িয়ে আছে। তক্ষশীলায় বই কম, ভীড়ও কম।(যদিও আজিজ মার্কেটে তাদের দোকানটিকে আমার খুব সমৃদ্ধ মনে হয় ভারতীয় অনেক দুষ্প্রাপ্য বই পাওয়া যায়)মেলায় ঐতিহাসিক চিত্র নিয়ে অনড়। তক্ষশীলার পাশে বাঙলায়ন চুপচাপ বসে আছে। একটি স্টল শুধুমাত্র একজন লেখকের বই নিয়ে দেশি বাঁশ দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে রেখেছে। স্টলের নাম ভোরের শিশির। লেখক ধ্রুপদ। ইত্যাদিতে বই প্রচুর, লোক প্রচুর, বিক্রিও হচ্ছে বলে মনে হল। সাজিয়েছে শীতল পাটি দিয়ে। অন্য প্রকাশ। রাজকীয় সাজসজ্জা। হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশক। সারাক্ষণই মানুষের ঢল। মিজান পাবলিশার্স সাদা সাজে যেন পুত পবিত্র হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনন্যা ব্যস্ত ইমদাদুল হক মিলনেকে নিয়ে। একটু অন্য রকম সাজে সজ্জিত কয়েকটি স্টলের ছবি।

আর মুক্ত-মনার সদস্য ও পাঠকদের শুদ্ধস্বর এর সামনে এক চক্কর না দিলে তো মেলায় ঢোকাই যেন বৃথা।
তবে শাফায়েত ও লীনা কথা রাখেনি। আমার লেখা বইমেলার কথাচিত্র ২০১১ (ঘ)তে দুইজনের মন্তব্যের প্রতিশ্রুতি মত কারোই ২৬ ফেব্রুয়ারি মেলায় দেখা পাইনি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে মনে পড়ল। ‘কেউ কথা রাখেনি’।
লীনা বলেছিল, আমি কালকে ৪টা থেকে মেলায় থাকব দুনিয়া একান্তই উলটে না গেলে… যেই যাবা আমাকে একটা কল দিয়ো।
শাফায়েত বলেছিল, কাল সকালে একবার মেলায় যাব, আপনারা কেও গেলে জানাবেন। শনি-রবিবার বিকালেও যাবার ইচ্ছা আছে।
মামুন সুইডেন ফিরে গেছে। মোজাফফর রাজশাহী। আফরোজা আপা ব্যস্ত সাংসারিক দায়িত্ব নিয়ে। আর আমি একটা জরুরী কাজ অসমাপ্ত রেখে মেলায়।রায়হান শুদ্ধস্বরের স্টলে বই বেচায় ব্যস্ত। কল্যাণ ও অনন্তকে আগেই ফোন দিয়েছিলাম। এখনও পৌঁছেনি। কাজেই কতক্ষণ ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ আস্থা রেখে লাভই হল। নিরিবিলি কিছু বই দেখার ও কেনার সুযোগ কাজে লাগালাম।
যাহোক কারও জন্য কিছু আটকে থাকে না। পরে মেলা জমল। দেখুন না একঝাঁক মুক্ত-মনের সদস্যকে।

বাম দিক থেকে অনন্ত, সন্ন্যাসী,(ব্যাংকার এবং ভাল নাম বলেছে তবে প্রকাশে মানা) আসিফ মহিউদ্দিন, নিঃসঙ্গ বায়স ও মাহফুজ।
কল্যাণ একটু পরে যোগ দিয়েছে।তবে লিটল ম্যাগাজিনের চত্বর যেন বিশ্রাম আর সিগারেট ফুঁকার জায়গা। সিগারেটের ধুঁয়ার জন্য বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর।

মেলা থেকে বের হলেই বাম দিকে লাইন করে আওয়ামী বইয়ের স্টল। বি এন পি আমলে বি এন পি। এবারের কয়েকটি সাইনবোর্ড।

একদিন লিটল ম্যাগাজিনের চত্বরে দাঁড়িয়ে আছি।(ইচ্ছে করে এবং সচেতনভাবেই তারিখ, সময় ও ব্যক্তিদের নাম বলছি না) আসলেন স্বনাম ধন্য একজন কবি, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক।পাশে প্রবাসী আরেক লেখকের সাথে গল্প চলাকালে প্রবাসী লেখক স্বনাম ধন্য ব্যক্তিটিকে একটি বই উপহার দিতেই প্রশ্ন করলেন, আপনার বই? কোন প্রকাশনী থেকে ?
টুপি পরিহিত, সন্ধ্যায়ও চোখে কালো চশমা পরিহিত প্রবাসী লেখক উত্তর দিলেন, পারিজাত।
পারিজাত না বলে, বলেন নারীজাত। আপনি আর কোন প্রকাশনী খুঁজে পেলেন না?
আমি পাশে দাঁড়ানো। স্বতঃস্ফূর্ত স্বর বেরিয়ে গেল, পারিজাতকে নারীজাত বলে ব্যঙ্গ করার কারণ ?
আরে আর বইলেন না, নিজের টাকায় অখাদ্য সব ছাপাতে অনেক নারীরা পারিজাত প্রকাশনীর স্মরনাপন্ন হয়।
ইচ্ছে করেই বিতর্কে গেলাম না। বিকেলটা মাটি হবে। সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।
এজন্য জিজ্ঞেস করা হয়নি — পুরুষরা কি কোন কুখাদ্য বই মেলায় দেয়নি?
উনি যার বইটি একটু আগে হাতে নিলেন তাকে আমি বিশ বছর আগে থেকেই চিনি। উনারটাও যে নিজের টাকায়। আর আগের বই চেখে দেখেছি। ঐটার স্বাদও সুখাদ্য ছিল না।
চিরাচরিত দৃশ্যপট। সুযোগ পেলে নারীদের কেউ ছাড় দেয় না। এজন্যই তো শ্লোগান দিতে হয়, ‘আমি নারী, সারা পৃথিবী আমার যুদ্ধক্ষেত্র।’
একটু আগে ইন্টারনেটে দেখলাম বাংলাদেশের পরাষ্ট্রসচিব মোঃ মিজারুল কায়েস জানিয়েছেন ১,১০০ বাংলাদেশী লিবিয়া ছেড়েছে এবং আরও ৬,০০০ বাংলাদেশীকে দুয়েকদিনের মধ্যেই লিবিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। অথচ এ মিজারুল কায়েস গত সপ্তাহে ব্যস্ত ছিলেন বাংলা একাডেমীর মঞ্চে রবীন্দ্র আলোচনায়।একজন ব্যক্তির কী বৈচিত্র্যময় প্রতিভা!

প্রবাসী মুক্ত-মনার সদস্যদের জন্য উৎসর্গকৃত আমার বইমেলা নিয়ে লেখা এটাই শেষ পর্ব। আর বিরক্ত করার ইচ্ছে নেই, যদিও ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ দিন আবার মেলায় যাবার ইচ্ছে আছে। কারণ ঢাকার যানজটের জন্য বাংলা বাজার বহুদূর। কাজেই বাংলা বাজারের পছন্দের বইগুলো মেলায় সহজলভ্য।
(ব্যঙের ছবি মন্তব্যে সংযোজন না করার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল)