২০,২১ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি তিন দিনই কিন্তু লিটল ম্যাগাজিন প্রাঙ্গনের আশেপাশে আমরা কয়েকজন ছিলাম। ২০ তারিখে ওখানে যাওয়া লীনার বইমেলা সমাচারে উল্লেখিত “স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবস সংকলন” বইটি কিনতে। কিনে লীনাকে উপহার দিতেই সে আর মিথুন মিলে আবার আমাকে ও মামুনকে ঐ কপি একটি করে উপহার দিল। ছোটকে বড়রা উপহার দেয় বলেই এতদিন জানতাম। আজকে দেখি ছোটটিও বেশ বড়দের মত কান্ড কারখানায় ওস্তাদ। আমি ওই কপি একটু পরেই কিনতাম। এত আগে কিনলে ভারী ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। তাছাড়া ভিড়ের জন্য তো স্টলে ভিড়তেই পারি না। কাজেই মেলা ছাড়ার একটু আগে আমি কেনা কাটা করি। তবে লিটল ম্যাগাজিন প্রাঙ্গনে তুলনামূলকভাবে ভীড় কম।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে হাসান আবদুল্লার সাথে আমাদের দলের দেখা। নিজে যেচে পরিচিত হলাম মুক্ত –মনার নাম ব্যবহার করে। হাসান আবদুল্লার নিরুত্তাপ কন্ঠ। বুঝে গেছি বেশিক্ষণ জমবে না।
অদিতি ফাল্গুনী । লেখিকা। বাংলাদেশের সমকালীন গদ্য যারা পড়েন তারা জানেন তার ক্ষমতা। গাছের বেদিতে বসে আছে। দেখেই উঠে দাঁড়াল। কথা হল তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত গল্পটি নিয়ে। সাথে আরেকজন। নাম বদরুন নাহার। ফাঁকে মাহফুজ ছবিও নিল। টুকটাক কথা সারলাম। প্রশ্ন করতেই শুদ্ধস্বরের স্টল ঘুরে এসেছে বলে জানাল। কারণ তার বই শুদ্ধস্বরে আছে। ইতোমধ্যে মাহফুজ কিছু ছবি অন্য লেখার মন্তব্যে পোস্টিং দিয়েছেন।
রহিমা খাতুন কল্পনা। ছাত্রজীবনে আমার হল মেইট। জুনিয়র। শামসুন্নাহার হলের বাসিন্দা। একটা কবিতার বই এবারের মেলায় এসেছে আলপনা প্রকাশনী থেকে। হাইকু লিখে তিনি স্বনাম খ্যাত। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ৭২টি ছাপা হয়েছে। এবার ২৫০টি নিয়ে বই মেলায় প্রকাশের কথা থাকলেও প্রকাশক নান্নু রায়ের অসুস্থতার কারণে বইটি মেলায় আসেনি। বেশ কয়েক মাস আগে কোথায় যেন তার হাইকু নিয়ে পর্যালোচনা পড়েছিলাম। একটা হাইকু তো মগজে গেঁথে আছে —–
‘উজানী গাঙ/ কানে কানে বলে।
বসতি ভাঙ’
আজকে তাকে হাইকুটি মনে করিয়ে দিলাম। এ মনে করিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হল কথকতা। খুশিতে হাইকু নিয়ে অনেক কথা বলল। বয়ে চলল বেশ খানিকটা সময়।
আঁখি সিদ্দিকা। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে লীনার সহপাঠী। আমাকে দেখে বলল, চেনা চেনা লাগে। বই মেলায়ই হয়ত দেখেছেন। বাঙলায়ন থেকে কবিতার বই বেরিয়েছে। দুয়েক লাইন কথা বলেই বিদায় নিলেন ব্যস্ততার জন্য।
সকালে মোজাফফরের ফোন। রাজশাহী থেকে সে এখন ঢাকায়। বইমেলায় আমাদেরকে যেতেই হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের মেলায় যাবার পরিকল্পনা ছিল না। বিশেষ করে ভীড়ের কারণে। চারুকলার সামনে থেকে লাইন থাকে। কি আর করা। যথারীতি আমি, মামুন, আফরোজা আপা, লীনা, মিথুন ও মাহফুজ হাজির। লিটল ম্যাগাজিনের জগতে নামকরা ব্যাক্তিত্ব মোজাফফর হোসেনের ডাকে।

লিটল ম্যাগ জগতের নামকরা ব্যাক্তিত্ব মোজাফফর

সে যে লিটল ম্যাগাজিনের জগতে এত নামকরা তা আগে বুঝিনি। এবারের মেলায় তার সাথে আনোয়ারা সৈয়দ হকের দেখা হতেই উনি লিটল ম্যাগাজিনের প্রসঙ্গ তুলে মোজাফফরের প্রশংসা করলেন।

আনোয়ারা সৈয়দ হকের সাথে মোজাফফর


মোজাফফর তো তার সম্পাদনায় লোকসংস্কৃতি সংখ্যা ‘শাশ্বতিকী’ মুক্ত-মনার সবাইকে বিনামূল্যে বিতরণ করছে। আর আমরা অবশ্য তার ও রাতুল পালের গল্প গ্রন্থ ‘দ্বি ধা’ কিনেছি নির্দ্বিধায়।

মুক্ত-মনার সদস্যদের জন্য ফ্রি


আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘বইমেলা প্রতিদিন’ পত্রিকায় ২০১০ সালে প্রবন্ধে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় রায় ও খান সারওয়ার মুরশিদের উপরে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।

‘বইমেলা প্রতিদিন’ পত্রিকায় অধ্যাপক অজয় রায় ও খান সারওয়ার মুরশিদ


উল্লেখ্য যে, পত্রিকাটি বিএসবি- ক্যামব্রিয়ান কর্তৃক বই, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকাশক, সর্বোপরি বইমেলা ও একুশ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য প্রতিদিন প্রকাশ করে বিনামূল্যে বিতরণ করছে।
নিঃসঙ্গ বায়স তো কে কথা কয়রে দেখা দেয় না পর্যায়ে ছিল। সে নিজেই লীনার লেখায় মন্তব্য করেছে—-‘গীতা দিকে দেখি আড্ডা দিতে লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গনের আশেপাশে ( যেহেতু সরাসরি সাক্ষাত হয় নাই, অনুমান করি, তয় আমার অনুমান খুবই শক্তিশালী কিন্তুক’ ) কাজেই তাকে দেখতে মেলায় যাওয়া অব্যাহত থাকবে। দেখি দেখা দেয় কিনা।

আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি নিঃসঙ্গ বায়স দেখা দিলেন। ডাক নাম সংসদ। ভুল লিখিনি। দুইবার জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়েছি। খাতা কলমে আরেকটা নাম আছে। সে নামটা আর প্রকাশ করলাম না। তাকে বলতে ভুলিনি যে আমার ছবি তো মুক্ত- মনায় দেখেছেই। তবে আজ আমি সবার কাছে তার ছবি ধরিয়ে দিচ্ছি। আফরোজা আপার বাইরে থেকে কিনে আনা আলুর চপ ও সমুচা খাওয়ার সময় তোলা।

রাতুল পাল দাঁড়িয়ে আর নিঃসঙ্গ বায়স বসে

অসম বয়সী বন্ধুদের নিয়ে আমার ভালই কাটছে এবারের বই মেলা। তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি মামুনবিহীন মেলা যেন একটু কম জমেছে।