ঘুম থেকে উঠে চায়ের সাথে পত্রিকায় চোখ বুলানো বলতে পারেন একটা প্রাত্যাহিক অভ্যাস। মন প্রফুল্ল থাকে, ভালো ঘুম হলে শরীরটাও তাজা থাকে। আমার অনেগুলো খারাপ অসুখের মাঝে একটা হচ্ছে অনিদ্রা। তাই ঘুম আমার শরীরের কারনে প্রয়োজনীয় বিষয় বটে।

গত কয়েকদিন যাবত শরীয়তপুরবাসী কিশোরী হেনা আক্তারের করুণ মৃত্যুর খবর কারও অজানা নয়।
খবরগুলো এমন হয়ে গিয়েছে যে, সকল আলোচনা সমালোচনার উর্ধে গিয়ে আমার মস্তিস্কের উপরে অবস্থান করছে। বিবেক’কে মন’কে চোখ রাঙ্গাই, মনকে অন্যমনস্ক করতে টিভি চ্যানেলগুলোর দারস্থ হই।

ডাক্তার বলেছেন, উত্তেজনা আমার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলশ্রুতিতে শরীরে যে সব অসুখ অবস্থান করছে সেগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। আমি অসুস্থ মানে পরিবারের ছন্দপতন, কার্যপতন।
অনেকটা যেন শেয়ার বাজারের দরপতনের মত অস্থিতিশীল পরিবেশ ঘটে যাবে অনিবার্যভাবে।

যাই হোক,

আজ ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১১ ২৬ মাঘ ১৪১৭ ‘দৈনিক প্রথম আলো” পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় চোখ আটকে গেল। অনেক চেষ্টা করলাম না কিছু লিখবনা। অনেক জ্ঞ্যানী বোদ্ধা আছেন। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ আমার কথা বলা ঠিক হবে না। তবু, নিজকে আটকে না রেখে কলমটা আঁকড়ে ধরলাম। এটাও জানি এই সব কথায় কিছুই হবেনা। কারো কোনো বিন্দু মাত্র আসবে যাবে না। তবু মন নাছোড়বান্দা।

পাশাপাশি দুটো খবর।

১। হেনার লাশ পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ।
২। কী যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে শিশুটিকে।
এক নং খবরের রেশ শেষ হতে না হতেই অপর খবর। খবরের পর খবর। পত্রিকার কাটতিও কম যায় না। ব্যাবসাও কম হয় না। ধর্ষণের পর মৃত্যু, ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা।
কী ব্যাপার? আবার কেন ময়না তদন্ত? কেন হেনার মৃতদেহের এই টানাহেঁচড়া? ধর্ষণের পর শাস্তি “দোররা” মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করা। তারপরে দেহ নিয়ে কাটাচেঁড়া ময়নাতদন্ত। অবশেষে রিপোর্ট।
তবে আবার কী হল?
লেখা দেখলাম,

আদালত সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করেন, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। পুলিশ ও চিকিৎসকদের মাঝে মিথ্যে সুরতহাল দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। নতুবা ফতোয়া বন্ধের দৃঢ় সংকল্প ব্যাহত হবে।
দৈনিক ‘ডেইলি স্টার” এ একটা এইধরণের খবরে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এইটা আদালতের নজরে এলে আদালত তা পর্যালোচনা করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন।‘
বিস্তারিত পাঠকবৃন্দ নিশ্চয় পড়ে ফেলেছেন ইতোমধ্যে।

তার মানে বুঝাই যাচ্ছে ‘সরিষায় ভূত”। এ এমন নতুন খবর নয় আমাদের জন্য। আসলেই নতুন কিছু না। সাধারণ আপামর জনসাধারণ এতো সচেতন তারা সব ফলাফল, কলাকৌশল আগে থেকেই জানে যেন। তাই আমরাও আশ্চর্য হইনা বৈকী।

২ নং খবর,
‘কী যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে শিশূটিকে”

মাদ্রাসার প্রবীণ শিক্ষক(৬০) দ্বারা ধর্ষণ, ফলশ্রুতিতে ১১ বছরের শিশুটির অন্তস্বত্ত্বা হয়ে পড়া। অধ্যক্ষ ও গভর্ণিং বডির সদস্য ভয় ভীতি দেখাচ্ছে ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য।
শিশুটির বাবা নিরুপায় হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত-১-এ এজাহার করেন।
এলাকাবাসী,পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার আরবি শিক্ষক আবদুল জলিল একব্যাক্তির কাচারি ঘরে তিনি প্রাইভেট পড়াতেন। গত বছরের ৩ আগষ্ট অন্য ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেনীর ওই ছাত্রীকে বসিয়ে রাখেন। সবাই চলে গেলে জলিল ছাত্রীর মুখ চেপে ধর্ষণ করেন।

জানা যায় শিশুটি এই ঘটনা পরিবারের কাউকে জানায়নি। আর ওখানে আর পড়তেও যায়নি।
তার শারিরীক সমস্যা দেখা দেয়ায় চাঁদপুরে চিকিৎসক পরীক্ষা, নিরিক্ষা করে জানান, সে অন্তস্বত্বা।
এই হচ্ছে মূল খবর। বিচার সালিশী তো পরে। তবে এই রকম ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রতি নিয়ত অহরহ। কিছু পত্রিকায় আসে কিছু সংবাদ মাধ্যমেও টাকা পয়সা খেয়ে মুখ বন্ধ রাখেন। যেন খবরটা ছাপা না হয়। সাংবাদিক মহাশয়রাও বেমালুম চেপে যান সে সব খবর।

অবাক হইনা কেননা সব সম্ভবের দেশ এই দেশ। আমরা অপকর্ম করা ব্যাক্তিকে বাদ দিয়ে দেশকে গালাগাল দেই। যে দেশে প্রধান মন্ত্রী নারী, স্বরাস্ট্র মন্ত্রী নারী, সব জায়গায় নারী আর নারী। আমরা জোর গলায় দাবী করে চলেছি আমাদের মানে নারীদের অধিকার আদায় হতে চলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফেব্রুয়ারী মাস, ভাষা আন্দোলনের মাস, স্বাধীনতার বীজ বপনের মাস। যখন এই সময় অনেকেই ভাষার কথা, নারী আন্দোলন, নারীবাদী ইত্যাদি করে কথা বলছেন, তাঁদের উদ্যেশ্যে বিনীত অনূরোধ,
এই সব শিশুদের অন্ততঃ জীবন রক্ষার ব্যাবস্থা করুন। তারাও যেন এই সুন্দর পৃথিবীর আলোহাওয়া বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পায় সেই ব্যাবস্থা করুন দয়া করে।

একটা ব্যাপার উল্লেখ না করে পারা যাচ্ছেনা। এই সব মাদ্রাসা, বা ধর্মীয় শিক্ষা যেখানে দেয়া হয় সেই সব স্থানেই এমন ঘটনা বেশী ঘটে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেনা এমন হলফ করে বলছিনা।
তবে নাবালিকা ধর্ষণের মাঝে আসলে কি ধর্মীয় কোন বিষয় কাজ করে কীনা জানতে ইচ্ছে করছে।
কেননা আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ (দঃ) বিবি আয়েশাকে বিবাহ করেছিলেন তখন নাকী তিনি নাবালিকা ছিলেন।
এই ধর্মীয় ব্যাপারে অজ্ঞতার কারনে আমি আমাদের শ্রদ্ধেয় কাশেম ভাই, বা আকাশ মালিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আসলেই কী তেমন কিছু জড়িত? যার কারণে এই সব নাবালিকা ধর্ষণের মত মহৎ কাজ করে তথাকথিত হুজুররা ধর্মের নামে অন্য কিছু বা ব্যাভিচারের পদাংক অনুসরণ করছেন?
আমাদের মত অজ্ঞ পাঠক’রা তাই জানতে চাই।