আমরা যারা সশরীরে যে কোন দিন যে কোন সময় মেলায় যাবার সুযোগ পাচ্ছি বইমেলা নিয়ে মুক্ত-মনার ঢাকার বাইরের পাঠকদের জানানোর একটা নৈতিক দায়িত্ব তাদের উপরে বর্তায়। এ দায়িত্ববোধ আমার চেয়ে যে অন্যান্যদের বেশি এর প্রমান আমরা পেয়ে গেছি। প্রথমদিন আমার মেলায় যাবার ইচ্ছে মোটেই ছিল না। দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ও অমর্ত্য সেনের মত ব্যক্তিদের জন্য যে নিরাপত্তা একটু কঠোর হবে তা আমার আন্দাজে ছিল। আমাদের পরিকল্পনার সময় এ কথা আমি এক ফাঁকে মামুন ও আফরোজা আপাকে ফোনে বলেও ছিলাম। পরে আবার গেলামও। তবে টি এস সি এর মোড়ে প্রথমে আটকালেও পরে আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের মানে আমি ও শকিলা হোসেন। যার উপন্যাস এবার শুদ্ধস্বর ছাপিয়েছে। অনায়াসে বাংলা একাডেমীর গেট পর্যন্ত চলে গেছি। পুলিশও বইপ্রেমীদের উপর সদয় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য কর্মসূচির মত কঠোর ছিল না। ইতোমধ্যে মোবাইলে যোগাযোগ করে মামুন ও আফরোজা আপার সাথে গেটে সাক্ষাৎ । কাজেই টুকটাক গল্প চলল।
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও গাড়িতে বসেছিলেন। কারণ কি বুঝতে পারিনি।
বুদ্ধিজীবীরা বাংলা একাডেমী কর্তৃক একুশ উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিন হাতে কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর আগেই বের হয়ে আসছিলেন। তাই বুঝতে পারছিলাম না প্রধানমন্ত্রী ভেতরে আছেন কি না। নিশ্চিত হলাম যখন ছাত্রলীগের কর্মীরা ঘন ঘন শেখ হাসিনা আর বঙ্গবন্ধুর নামে শ্লোগান দিচ্ছিল তখন। প্রধানমন্ত্রী ভেতরে আছে বলেই তো তার কর্মীরা জানান দিচ্ছে যে তার সৈনিকরা বাইরে প্রস্তুত। শ্লোগান শুনে মোবাইলে নিজের মেয়ের খোঁজ করলাম যেন তাদের আশেপাশে না থাকে ।
যাহোক, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্থানে আমাদের প্রবেশের সুযোগ ঘটল। তখন মোটামুটি সন্ধ্যা।
শুদ্ধস্বর এর ষ্টল খুঁজে পাবার কাহিনী আগেই বলেছি। প্রথমদিন নিয়ে মোটামুটি বলা হয়ে গেছে আগেই। আমি ঐদিন ব্যাগ থেকে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ কেনার টাকা খুলে আবার রেখে দিয়েছি একজন লেখকও নেই বলে। অন্ততপক্ষে রায়হানের হাতের লেখা ছাড়া বইটি মেলা থেকে আনি কি করে?
তবে পঞ্চমদিন সে সুযোগ হাত ছাড়া করিনি। মাঝখানে রায়হান শুদ্ধস্বরে আজিজ মার্কেটে গেছে দ্বিতীয় সংস্করনের ব্যবস্থা করতে। কাজেই অপেক্ষা করে বইটি নিয়েই যাব বলে মনে মনে ঠিক করে ফেললাম। কারণ প্রথম সংস্করণ প্রায় শেষ।

লেখক রায়হান ও প্রচ্ছদ শিল্পী সামিয়া যুগল বন্দী। বই ও প্রচ্ছদের মতই আষ্ঠেপিষ্ঠে বাঁধা হোক তাদের জীবন।

রায়হানের জীবনের প্রচ্ছদ পট সামিয়া

মেলার পঞ্চমদিন দেখা পেলাম লীনা রহমানের। অনেকক্ষণ একসাথে কাটালেও আমার মনে হয়েছে অল্পক্ষণ। বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এদিক ওদিক — বিভিন্ন চত্ত্বর ঘুরে জায়গা পেলাম বাংলা একাডেমীর ক্যান্টিনের সামনে। চত্ত্বরের নামগুলোঃ

টিউশনি করতে হবে বলে লীনার মেলা থেকে প্রস্থান। লীনা প্রাণ প্রাচুর্যে টই টুম্বুর। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী।ওজনে কম হলেও কলমে যে ধার আছে তাকে দেখলেই তা টের পাইয়ে দেয়।

বুঝলেন তো লীনা কোনটি?

রনদীপম বসু। শুদ্ধস্বর এর সামনে তার টুপি দেখে চিনে ফেললাম। আমি এবং উনি একসাথেই বললাম — আপনি রনদীপম। আপনি গীতাদি না? আপনিও চিনবেন।

রনদীপম বসুকে চেনা যায় কি?

রনদীপম, মামুন, আফরোজা আপা, রায়হান,লীনা একদিনে অনেক মুক্তমনের মানুষের সাক্ষাৎ। একটুর জন্য তানভীরুল ইসলামের দেখা পাইনি। রনদীপম বসুর প্রানখোলা হাসি এখনও কানে বাজে। ফাঁকে জেনে নিলাম তার ব্যাংকিং পেশা সম্পর্কে। কখন লেখেন? উত্তর রাতে। না পড়লে বা না লিখলে ঘুম আসে না।
শুদ্ধস্বর এর ষ্টলে খানিকক্ষণ বসলাম।

লেখক লেখক ভাব

টুটুল জানাল বই প্রকাশে তার ভাবনার কথা। নতুনদের বই না ছাপলে প্রতিষ্ঠিতদের পর একটা শুন্যতা সৃষ্টি হবে। এ শুন্যতাকে রোধতে হলে নতুনদের আনতে হবে। যা টুটুল করতে চায়। যেমন, এখন অভিজিৎ আর নতুন নয়। ৫ ফেব্রুয়ারির দৈনিক কালের কন্ঠে টুটুলের সাক্ষাৎকারের কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়ে প্রশংসা করলাম। আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল বলেছিল, ‘সর্বোচ্চসংখ্যক কথাসাহিত্যের বই, সর্বোচ্চসংখ্যক নারী লেখকের বই, সর্বোচ্চসংখ্যক তরুণ লেখকের বই, সর্বোচ্চসংখ্যক ব্লগারের বই এবারের মেলায় শুদ্ধস্বরের প্রধান আকর্ষণ। এ ছাড়া কবিতা, অনুবাদ, শিশুসাহিত্য এবং চিন্তামূলক বই প্রকাশেও শুদ্ধস্বর এবার অগ্রগণ্য।
আমরা পেশাদারি বজায় রেখে ভালোমানের বই প্রকাশ করছি এবং এই ধারা বজায় রাখতে আগ্রহী। আমরা এ দেশের প্রকাশনা শিল্পকে গুণে, মানে ও নান্দনিকতায় বিশ্বপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এখন বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। আমরা আমাদের প্রকাশিত বই সেসব পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’
মেলায় সরাসরি সম্প্রচারও চলছে। সাজুগুজু করা লোকজন ক্যামেরা ফেইজ করে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায়। তারা ভাল করেই জানে যে প্রচারেই প্রসার।

প্রসার পায় নি?

টুটুলের সাথে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন নিয়ে কোন কথা বলিনি। নিজের বই সম্পৃক্ত বলেই হয়তো পারিনি। মেলায় একটা স্থায়ী মঞ্চ করা আছে বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য।

মঞ্চটি কি মুক্ত-মনার মোড়ক উন্মোচনের অপেক্ষায় ?

প্রকাশক নির্বিশেষে মুক্ত-মনার লেখকদের সব বইয়ের মোড়ক উন্মোচন কি ওখানেই যৌথভাবে হতে পারে?