বইমেলা নিয়ে লাইভ আপডেট টাইপ ব্যাপার করার দাবি এসেছে এই লেখায়। তাই ভাবলাম লাইভ না হোক, দেরিতে হলেও বইমেলার ১ম ও ২য় দিনের আমার কাহিনি লিখে ফেলা যাক।
ফেব্রুয়ারি মাস আমার ঈদের মাস, বাংলা একাডেমি আমার তীর্থ আর বই আমার স্বর্গসুখ। সারাটি বছর আগ্রহভরে অপেক্ষা করে থাকি বইমেলার জন্য। ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা এলে হালে একটু পানি পাই দুটো কারণে, প্রথমত এটা একটা বইমেলা আর দ্বিতীয়ত, এটা মনে করিয়ে দেয় ফেব্রুয়ারির আর দেরি নেই।(তবে অপেক্ষার পালা যত শেষ হয়ে আসে ততই বেশি অধৈর্য লাগে!!)
৩১শে জানুয়ারি থেকেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়, আগে যেটা হত ঈদের আগের দিন। বইমেলা এসে গেছে। প্রতিবারের মত এবারো সেই অনুভূতির মধ্য দিয়ে পেলাম ১লা ফেব্রুয়ারিকে। সন্ধ্যায় টিউশনির মত বিচ্ছিরি কাজ ছিল সন্ধ্যায় তাই ক্লাস ফাঁকি দিয়েই ছুটলাম মেলায়, খুশিতে আত্মহারা হয়ে। প্রধানমন্ত্রীকে ভালয় ভালয় পার হতে দেবার জন্য একটু দেরি করে গেলাম মেলায়,কিন্তু ৪.৩০ এ মেলার গেটে গিয়ে দেখি আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী স্বভাবতই দেরি করে এসেছেন,তাই উদ্বোধন দেরিতে হয়েছে এবং উনি তখনো ভেতরে ছিলেন বলে আমরা ঢুকতে পারলামনা। এত মেজাজ গরম হল!মেলা তো আমাদের উ্দ্বোধন করা উচিত, যারা জান দেই মেলার জন্য, কিন্তু উদ্বোধন তারা করে যারা কেয়ারই করেনা এখানে সময়মত আসার জন্য! আসলে আমি এটা সহ্যই করতে পারছিলামনা যে এতদিনের অপেক্ষার পর প্রথম দিন মিস করলাম। সারাদিন মন খারাপ ছিল এরপর। আরো মন খারাপ হল যখন শুনলাম মামুন ভাই, আফরোজা আপু এবং গীতা দি এত অপেক্ষার পরও মেলায় গিয়ে ভাল আড্ডা জমিয়েছিলেন। এই গেল প্রথম দিন মেলা ও আড্ডা মিস করার গল্প।
দ্বিতীয় দিন গেলাম মেলায়। এত খুশি লাগছিল যে কি বলব। প্রথমেই কিনে ফেললাম রাহুল সাংকৃত্যায়নের “ভোলগা থেকে গঙ্গা” বইটি। বাংলা একাডেমির ভেতরে তখনো ঢুকিনি, তবু বাইরে থেকেই এত বই দেখে আনন্দে নেচে উঠলাম। মেলায় এটাই ভাল লাগে…এত বই, এত্ত বই…
প্রথম দিকে মেলা আরো একটা কারণে বেশি ভাল লাগে। তখন মানুষ কম থাকে এবং মোটামুটি বই অনুরাগীরাই আসে তখন মেলায়। অবাঞ্ছিতদের দিয়ে মেলা প্রাঙ্গন ভারাক্রান্ত হয়না। এবার মেলার ভেতরে বাইরে সাজানো খুব সুন্দর হয়েছে। যারা এখনো যাননি মেলায় বা দেশের বাইরে আছেন তাদের জন্য কিছু ছবি সংযুক্ত করে দেয়া হল।

মেলার ২য় প্রবেশপথ


নজরুল মঞ্চ


একটু মজা…


আমার খুব পছন্দের একটা ছবি, পরাজায়নামায় স্বাক্ষর করছে পাকিস্তানি বাহিনী

মেলা প্রাঙ্গনে ঢুকে নজরুল মঞ্চ দেখে আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠলাম। কেন যেন নজরুল মঞ্চ আমার খুব ভাল লাগে দেখতে। বাইরের স্টল থেকেই শুরু করেছিলাম বইগুলো দেখে লিস্ট করা কি কি বই কিনব…
এত্ত এত্ত নতুন বই দেখা, হাতে নেয়া…অনুভূতিটাই অন্যরকম। সারাটি বছর এই অনুভূতির জন্যই হাহাকার করি। প্রতি মাসেই বই কিনি, কিন্তু বইমেলায় গিয়ে বই দেখা ও কেনার অনুভূতি আপনারা সবাই জানেন এবং কেউই সে অনুভুতি পুরোপুরি বোঝাতে পারবেননা, শুধু অনুভব করতে পারবেন।
মেলায় গিয়ে শুদ্ধস্বরের স্টলের খোঁজ করলাম। সেখানে গিয়ে ফর্সামতন একজন আপুকে জিজ্ঞেস করলাম রায়হান ভাই আছেন কিনা। উনি বললেন একটু পরেই আসবেন। এরপরই “অবিশ্বাসের দর্শন” বইয়ের লেখক মহাশয়ের সাথে দেখা হল, ফটোও খিচলাম :)) আমার কপিটা তখন সাথে ছিলনা, নইলে অটোগ্রাফ নিয়ে নেয়া যেত সেই চান্সে, কয়দিন পর উনি চেনে কিনা আমাগরে কে জানে 😉
এরপর সেই আপুর নাম জিজ্ঞাসা করলাম, শুনলাম “সামিয়া”। জ্বি হ্যা আমাদের সবার প্রিয় সামিয়া আপু, যার করা ব্যানার আমরা দেখেছি, প্রচ্ছদ আমরা দেখেছি, এবার দেখলাম তার করা শুদ্ধস্বরের স্টলের ডিজাইন। অ-সা-ধা-র-ণ।
এরপর চলল আরো কিছুক্ষণ বই দেখা ও লিস্ট করা। পা ব্যাথা করছিল এতক্ষন হেঁটে তবু ফিরতে ইচ্ছে করছিলনা! তবু বের হলাম আর বেরিয়েই হামলে পড়লাম উন্মাদের স্টলে। স্বাভাবিকভাবেই কিছু পোস্টার আর স্টিকার বগলদাবা করে বের হলাম। এরপর ফুচকা পার্টি দিয়ে শেষ হল দ্বিতীয় দিনের বইমেলা ভ্রমণ!
আজ গেল তৃতীয় দিন। মেলায় যাওয়া হলনা ;-(

চলবে…