অবিশ্বাসের দর্শনের ইবুক বিনামূল্যে ডাউনলোড করুন এখান থেকে

অবিশ্বাসের দর্শন
-অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীর
প্রচ্ছদ: সামিয়া হোসেন
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২০
মূদ্রিত মূল্য: ৫০০ টাকা

প্রকাশক: শুদ্ধস্বর, ফেব্রুয়ারি, ২০১১
৯১ আজিজ সুপার মার্কেট (৩য় তলা) শাহবাগ, ঢাকা।
ই-মেইল: shuddhashar AT gmail.com   ( বিস্তারিত তথ্য এখানে)

অবিশ্বাসের দর্শন

অভিজিৎদা’র নাম প্রথম শুনি ২০০৭ এর অক্টোবরের দিকে। সেকেণ্ড ইয়ার শেষ, হলে শুয়ে বসে তিনমাসের দীর্ঘ ছুটি উপভোগ করছি তখন। খান মুহাম্মদ (শিক্ষানবিস) একদিন আজিজ থেকে দুইটা বই কিনে আনলো। ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ এবং ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’। মুহাম্মদ ময়মনসিংহের এক লাইব্রেরিতে আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রীর সামান্য অংশ পড়ে অভিজিৎ রায়ের লেখনীর উপর বেশ মুগ্ধ হয়েছিলো, তাই আজিজ থেকে “আস্ত” দু’টি বই কিনে আনা।

গাজিপুর থেকে জ্যাম ঠেলে ঢাকা আসতে তিন ঘন্টা সময় লাগে। আমি তাই নেক্সট উইকএন্ডে আলো হাতে আঁধারের যাত্রীকে সঙ্গী করে জ্যাম হাতে বাস যাত্রী হলাম। বই ভূমিকা অংশ পড়েই মুগ্ধ। মুগ্ধতা বিষয়বস্তুর উপর। তারপর থেকেই লোকটার (চিন্তা নাই, একটু পরেই তাকে অমানুষ ডাকা শুরু হবে) ফ্যান।

সেকেন্ড ইয়ারের ছুটির সেই সময়ে বাংলা ব্লগের সাথে পরিচিত হলাম গুগলের কল্যাণে সচলায়তনের খোঁজ পেয়ে। নতুন নতুন হলে যা হয় আর কি, আপনারা এখন যেমন সারাদিন মুক্তমনায় বসে থেকে বিশাল বিশাল পোস্ট পড়ে ততোধিক বিশাল বিশাল মন্তব্য করেন, তখন আমিও তাই করতাম। এরমধ্যে সচলে ঢুকে দেখি অভিজিৎ দার লেখা। সচলায়তনের উপর সেদিন মুগ্ধতা আরও কয়েকগুন বেড়ে গেলো। অভিজিৎ দা ব্লগ লেখেন! তাও আমি যে ব্লগ ফলো করি সেখানে!

আমাদের সমাজ সদ্যজন্মজাত শিশুর ইহলৌকিক খেলার মাঠের মৌলিক চাহিদা পূরণে খুব একটা আগ্রহী না হলেও তার পরাকাল নিশ্চিত করতে সিদ্ধহস্ত। জন্মগ্রহণ করতে না করতেই সে একটি নির্দিষ্ট ধর্মভুক্ত হয়ে যায়, তারপর ধীরে ধীরে তাকে শেখানো হয় সে যে দলভুক্ত তারাই সেরা, একমাত্র সত্যপথের অনুসারী। অন্যান্যদের জন্য রয়েছে…… (কী রয়েছে সেটা দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করুন)।

আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ছোটবেলা থেকেই আশেপাশের সবার কাছে আমার ধর্মের মুজেযা শুনেছি, আর ভেবেছি “ওয়াও!!”। আমার বন্ধু-বান্ধব কেউ অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী ছিলো কিনা এখন মনে নেই, থাকলেও তার সাথে ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপারে আমার কথা হয়নি নিশ্চিত। হলে তখনই জানতে পারতাম, নিজ ধর্মকে অন্যদের চেয়ে সেরা প্রতিয়মান করার জন্য প্রত্যেক ধর্মই নানা ধরণের আকর্ষণীয় মুজেজা সংক্রান্ত গল্পের আশ্রয় নেয়। এই সহজ সত্যটা বোধহয় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই না জেনে ইন্তেকাল করেন।

আমিও হয়তো সে পথেই যাচ্ছিলাম। ক্যাডেট কলেজে কোনো এক শুক্রবার আমাদের মসজিদের ঈমাম আবেগঘন ওয়াজ করতে করতে এক গল্প শোনালেন। সে গল্পে ঈশ্বরের অসীম কুদরতে বিখ্যাত কোনো ব্যাক্তির পাতে থাকা ভাজা মাছ হঠাৎ করে অভাজা মাছ হয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে থর্পের মতো সাঁতার কেটে হারিয়ে যায় গভীর জলে।

পারিবারিক কারণে আমি সেই সময় সাচ্চা ধার্মিক ছিলাম। ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হতে পারলে “মান’ত” করেছিলাম সেখানে ছয় বছর এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ দেবো না। সেটা সবসময় সম্ভবপর না হলেও সম্ভব করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ছিলো। কোনো ভ্যাজালে পড়লে আর রহমান সুরা এগারো বার পড়ে ঈশ্বরের নিকট ঝামেলা মুক্তির আবেদন করতাম এ আশায় যে এগারো বার সুরা আর রহমান পড়লে যেকোনো ধরণের ঝামেলা থেকে প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টা একেবারেই অব্যর্থ। এছাড়া পাশের বাড়ির কোনো মেয়েকে ভালো লাগলেও আর রহমান এবং সুরা ইয়াসিনের আশ্রয় নিতাম কারণ সুরাগুলো যথাক্রমে এগারোবার ও তিন বার পড়লে মনোবাসনা পূরণ হতে বাধ্য। সুতরাং নিষ্ঠাবান ধার্মিক ছিলাম বলাই বাহুল্য। সেই আমিও হুজুরের বয়ানের পর বেঁকে বসলাম। মনে মনে ভাবলাম যদি সত্যিকার অর্থেই এখন ঘটনা কোরান হাদীসে থেকে থাকে আমি তবুও ভাজা মাছের অভাজা হয়ে যাওয়া বিশ্বাস করতে পারবোনা। ধন্যবাদ।

কিন্তু তাতে করে কোনো কিছুই বদলায় না। কোরান মহাসত্য গ্রন্থ এবং আল্লাহ এক এবং তিনি শুধু আমাদের দলে। এমন করে কেটে যেতে থাকা সময়ে একদিন কাঁটাবন মসজিদের লাইব্রেরীতে দুর্দান্ত এক বইয়ের সন্ধান পেলাম। ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ে আহমদ দিদাত এর লেখা। সে বইয়ে “মিরাকল নাইন্টিন” নিয়ে একটি অধ্যায় ছিলো- যা পড়ে আল্লাহ এবং বিশেষ করে কোরান যে অলৌকিক গ্রন্থ সে ব্যাপারে একেবারে নিঃসংশয় হয়ে গেলাম। “রাস্তা ঠিকাছে, এখন শুধু ঠিক ঠাক ড্রাইভ করে বেহেশতে পৌঁছাতে হবে, তারপরইইইই …”

তখন হালকা পাতলা বাংলা উইকিতে অবদান রাখি। বই পড়ার পর কোরানের সাংখ্যিক মাহাত্ম্য নিয়ে একটা নিবন্ধ খুলে ফেললাম। এই নিবন্ধই পরবর্তীতে জীবন বদলে দিয়েছিলো, কীভাবে, সেটাতেই আসছি।

সচলায়তনে অভিজিৎ দা বিজ্ঞানময় কিতাব নামে এক পোস্ট দিলেন। সহ ব্লগার এবং অতিপ্রিয় বড়ভাই তানভীরুল ইসলাম একদিন একটা বাক্য বলেছিলেন আমাকে “মোমেন্ট অফ এনলাইটমেন্ট”। এই বাক্যটাকে আমি নিজের মতো এভাবে বুঝে নিয়েছি যে, আসলে এইসব বই পত্র পড়ে মানুষ অবিশ্বাসী হয়না। অবিশ্বাসের সূচনা হয় বজ্রপাতের মতো ঝিলিক দেওয়া ঝলকানীতে। সেটা হতে পারে হঠাৎ কোনো কথা শুনে, কোনো বইয়ের শিরোনাম দেখে কিংবা নিজের মনেও কোনো সংশয় উদয় হলে। এখন বুঝি অভিদার “বিজ্ঞানময় কিতাব” শিরোনামটাই আমাকে আলোকিত করে দিয়েছিলো। এর আগ পর্যন্ত আমার ধারণাও ছিলো না অলৌকিক কিতাবের উপর কোনো ধরণের সংশয় প্রকাশের জায়গা আছে। মহাসত্য গ্রন্থে ভুল আছে বা অযৌক্তিক কথা আছে। তার পুরো লেখা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম।

কিন্তু বিজ্ঞানময় কিতাব সে লেখাতে অভিদা মিরাকল নাইন্টিনের উল্লেখ করেননি। আমি তখনও পুরোপুরি কনভিন্সড হইনি, কারণ আমার হাতে ছিলো আওয়ামীলীগের জলিলের মতো মিরাকল নাইন্টিন ট্রাম কার্ড। কোরানকে এভাবে ঊনিশ দিয়ে বাঁধা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, সুতরাং এটি মানুষ দ্বারা লিখিত হতেই পারেনা। আমি মন্তব্যের ঘরে ভদ্রভাবে ট্রাম কার্ড ফেললাম। অভিদা আমাকে কিছু লিংক যোগান দিলেন বিষয়টির উপর। আর কিছু বললেন না। তিনি ধর্ম নিয়ে বেহুদা তর্ক করার লোক নন। তার জন্য ইশারাই কাফি!

সেই থেকে শুরু। আমার ধর্ম সংক্রান্ত স্কেপটিক ইনকোয়ারি। যত গভীরে যেতে থাকলাম, যতো পড়তে থাকলাম, ততো দেখলাম শৈশব থেকে লালন করা সংস্কারগুলো তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাচ্ছে। হাজার বছর ধরে চলা ধর্মীয় ভণ্ডামি আর মিথ্যাচারের মুখোশ ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকলো আমার কাছে।

মুহাম্মদ তখন বিজ্ঞান এবং মাঝে মাঝে ধর্ম- বিজ্ঞান, সংশয়বাদ নিয়ে লিখে। আমি সেগুলো পড়ি, আর পড়ি মুক্তমনার বিশাল আর্কাইভ। নিজে ব্লগিং করলেও সেটা নিন্তান্ত, ভাত খেয়ে যাচ্ছি, খেয়ে এসে ঘুমাবো টাইপের কথা বার্তা। কিন্তু হঠাৎ একদিন মনে হলো, একটা পাপ মোচন করা দরকার। উইকিতে মিরাকল নাইন্টিন নিবন্ধের পাপ মোচন।

চিন্তা পর্যন্তই।

এরপর হঠাৎ একদিন ক্যাডেট কলেজ ব্লগে মিরাকল নাইন্টিন নিয়ে পোস্ট আসলো। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে কোরানের সব কিছুতে আছে মহান উনিশ। আল্লাহর অস্তিত্বের বাস্তব প্রমাণ একেবারে।  আমি গা ঝাড়া দিয়ে বসলাম। মিরাকল নাইন্টিনের ভণ্ডামি তুলে ধরে একটা ব্লগ লিখলাম। এই লেখা যেহেতু আমার পাপমোচন লেখা ছিলো তাই এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় আর কোনো লেখার আগ্রহ ছিলোনা। কয়েকমাস পরে, অভিদা আমাকে একটা মেইল দিলেন, মেইলের বিষয়বস্তু উনি নেট খুঁজে আমার মিরাকল নাইন্টিন লেখাটা পড়েছেন, আমি যেন মুক্তমনায় নিবন্ধন করে লেখাটা সেখানেও রাখি।

আরেকবার মুগ্ধ হবার পালা। কারণ তখন অভিদা, বন্যাপাকে মুক্তমনায় যাওয়া আসার সুবাধে চিনেছি ঠিকই কিন্তু এরা প্রত্যেকেই ছিলেন আমার কাছে বিশাল উচ্চতার একজন মানুষ। সেই অভিদা আমাকে মেইল করেছেন। তারপরই থেকেই মুক্তমনায় নিবন্ধন করে ধীরে ধীরে অতি আঁতেল সম্প্রদায়ের লেখা বিভিন্ন ব্লগে ভয়ে মন্তব্য করা শুরু করি।

শুরুর কথাই বিশাল হয়ে গেলো। এবার দ্রুত আসল প্রসঙ্গে চলে আসি। ২০০৯ এর ডিসেম্বরের দিকে অভিদা আর বন্যাপা ঢাকায় এসেছিলেন। সে সুবাদে এই দুই বিখ্যাত মানুষের সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছিলো। বন্যাপা (অভিদা কিন্ত না) সুটকেস ভর্তি বই এবং চকলেট নিয়ে আসছিলেন। আমরা নিজেদের বই ভাগাভাগি করে, সে বইয়ের গন্ধ শুকতে শুকতে আর চকলেট খেতে খেতে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনে তরুণদের ভূমিকা এবং করণীয় নামক বিষয় নিয়ে বিশাল জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করছিলাম। একেবারে শেষ মূহুর্তে অভিদা ভিক্টর স্টেংগরের “নিউ এইথিজম” বইটা কোন চিপা থেকে বের করে মুহাম্মদের হাতে দিয়ে বললেন, বইটা পড়তে। অনেক কিছু জানা যাবে।

মুহাম্মদের আগে সে বই আমি কব্জা করে পড়া শুরু করলাম। “অনেক কিছু জানার জন্য” না বরঞ্চ বইয়ের শুরুতে INGERSOLL’S VOW নামে ইঙ্গারসল সাহেবের একটি বক্তৃতার কিয়দংশ পড়ে মুগ্ধ হবার কারণে। তারপর পুরো বইটা অল্প দিনের কাছে মুখস্ত করে ফেলি। নাস্তিকতা নিয়ে বাজারে অনেক বই পাওয়া যায় কিন্তু নিউ এইথিসজের বিশেষত্ব ছিলো মুলত এর রেফারেন্স কালেকশন। বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে বিবর্তন, এস্ট্রোফিজিক্স, ধর্ম, ঈশ্বর হাইপোথিসিস সহ বিভিন্ন বিষয়ে বর্তমান সময়ে নাস্তিকতার পুরো দর্শনটাই ফুটে উঠেছিলো। সবকিছু ছুঁয়ে যাওয়া বইটা পড়ে এসব বিষয়ে আগ্রহ বোধ করলাম, এবং রেফারেন্স উল্লেখ থাকা বইগুলো নামিয়ে আরও ডিটেইল ‘জ্ঞান অর্জনে’ ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

কিন্তু এতো বই পড়ে কি হবে? সচলের মাহবুব লীলেনদা বলেছেন- বই পড়তে হয় না, লিখতে হয়। এই মূলমন্ত্রে উজ্জ্বীবিত হয়ে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঠিক করলাম বাংলা ভাষায় অবিশ্বাসের দর্শন নিয়ে একটা রিভিউ বই লিখে ফেলা যেতে পারে। নিজের মতো কচ্ছপ গতিতে লেখা শুরু করলাম। তারপরই বুঝলাম কতো বড়ো একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। চার লাইন লিখতে আমার সময় লাগে তিন ঘণ্টা (পাঠকরা চাইলে এই বিখ্যাত চার লাইন আমি বই বেরুলে চিহ্নিত করে দিবো)। বই নিয়ে যখন অথৈই সাগরে ঠিক সেই সময় অভিদা মেইল করে বললেন, এমন একটা বই দুইজন মিলে লেখা যায় কিনা। সেই থেকে শুরু। অমানুষ অভিদা বইয়ের কাজে যোগ দিলেন। সাথে এই আমি। আমি  আর অভিদা – আমাদের এই যুগপৎ প্রয়াসের  বিনীত উপস্থাপনাই  এবারের বই –অবিশ্বাসের দর্শন

 পোস্টের শেষে বইয়ের একটা প্রিভিউ পিডিএফ আপলোড করে দিচ্ছি। সেখান থেকে কিংবা মুক্তমনার বই পরিচিতি পাতায় রাখা ভূমিকা পড়লেই পাঠক বইটি কী নিয়ে লেখা সে সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন। তারপরও এখনে কিছু কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন।

বইটিকে মোটামুটি দু’টি ধাপে ভাগ করা যায়। প্রথম অংশ ঈশ্বর হাইপোথিসিসের বৈজ্ঞানিক খণ্ডন, দ্বিতীয় অংশ ধর্মালোচনা। এছাড়া বৈজ্ঞানিক ভাবে খণ্ডনে যাবার আগে প্রথম অধ্যায় “বিজ্ঞান এর গান” এ বিজ্ঞানের আসলেই ঈশ্বর নাম অতিপ্রাকৃতি, কাল্পনিক ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলার এখতিয়ার এবং ক্ষমতা আছে কিনা সেটা বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও বইয়ের একেবারে শেষ অধ্যায়ে রাখা হয়েছে নাস্তিকতার বর্তমান এবং ভবিষ্যতালোচনা।

বিজ্ঞানের ঈশ্বর সম্পর্কে কিছু বলার এখতিয়ার নেই বলে ধার্মিক এবং মডারেট ধার্মিকরা অনেক বাক্যাবলী ব্যবহার করলেও নিজেদের ক্ষেত্রে তারা সে ব্যাপারটুকু একেবারেই ভুলে যান। প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থকে বৈজ্ঞানিক প্রমানের জন্য বাজারে হাজার ধরণের বই পাওয়া যায়। আমরা আমাদের বইয়ে একেবারে প্রান্তিক বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলেও ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’ নামে একটি অধ্যায় সংযুক্তি করেছি ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান নামক বিষয়গুলোকে খণ্ডানোর জন্য। এখানে পাঠকের উদ্দেশ্যে আরও একটা কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন, এই বইয়ের বেশ কিছু অধ্যায়ের নামের সাথে আপনারা আগে থেকে পরিচিত থাকলেও ভেবে নেবেন না, জাস্ট সে লেখাগুলো ব্লগ থেকে কপি পেস্ট করা বইয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। ব্লগের লেখাগুলোর সাইজ তিন পাতা হলে বইয়ে অধ্যায়টি জায়গা দখল করেছে পঞ্চাশ পাতা। অসংখ্য নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে নাম আগের মতো রেখে। বইটি কিনে পড়লে ঠকবেননা আশা করি।

বইটি প্রকাশ করেছে ‘শুদ্ধস্বর’। সম্পূর্ণ বইটি কম্পোজ করা হয়েছে ইউনিকোডে। ছাপা হয়েছে ইউনিকোড ভিত্তিক সোলাইমানিলিপি ফন্টে। বইটির প্রুফ রীড করেছেন মুক্তমনার অন্যতম পরিচিত মুখ এবং যুক্তি পত্রিকার সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাশ। পাশাপাশি বইটির মানোন্নয়নের ব্যাপারে চমৎকার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আর অত্যন্ত চমৎকার প্রচ্ছদ করেছে সামিয়া হোসেন। শুরুতে আমার আর অভিদার ধারণা ছিলো বইটা আমি আর অভিদা ছাড়া আর কেউ কিনবেনা, কিন্তু ফেসবুকে এই বইটা নিয়ে একটা মামুলী পোস্টের সাথে সাথেই অসংখ্য ‘লাইকের’ তালিকা এবং সর্বোপরি এই দুর্ধষ প্রচ্ছদের কল্যাণে বইটা বেশ ভাল চলবে বলে ধারণা করছি আমরা। সামিয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এছাড়াও বই প্রকাশের বিশাল ঝক্কির সাথে বহু মানুষ জড়িত ছিলেন। এখানে তাদের সবার নাম উল্লেখ করা সম্ভব না হলেও বিশেষ কয়েকজনের নাম বইয়ের শেষে কৃতজ্ঞতা সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্বোধনের জন্য চন্দ্রবিন্দু জুড়ে দেয়ার রেওয়াজ আছে বাংলায়। কিন্তু আমরা এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছি। কেবল বয়সের কারণেই কারো মাথার উপর চন্দ্রবিন্দু আরোপের চেষ্টা আমরা করিনি। আসলে একাডেমির নিয়ম অনুসারে বইয়ে কোনো ব্যক্তি সম্মানিত না অসম্মানিত সেটা বিচার করা হয়নি বলে কেউই ‘তার’ এর উপর চন্দ্রবিন্দু পাননি, কিন্তু  তা বলে কারো প্রতি অযথা অশ্রদ্ধাও প্রকাশ করা হয়নি। বরং নির্মোহ ভাবে যুক্তির কথাই আমরা বলতে চেয়েছি ব্যক্তি বা বয়সকে দূরে সরিয়ে রেখে। বইটিতে বহু রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, কিন্তু ভাষা রাখার চেষ্টা করেছি যতদূর সম্ভব সাবলীল।  

আপাতত এইটুকুই। বইটি এক বসায় পড়ে ফেলার মতো হয়েছে কিনা জানিনা। তবে আমরা দুজনেই আশা করি বইটি, যারা ‘প্রশ্ন করেন এবং উত্তর খুঁজেন’ তাদের কিছুটা হলেও কাজে লাগবে।

ব্লগ শেষ, এখন মাটির হাড়ি ভেঙে কয়েন বের করে গোণা শুরু করেন। পাঁচশ (২০ পারসেন্ট ছাড়ে সেটা ৪০০ এবং ২৫ ছাড়ে ৩৭৫ হতে পারে) টাকা পকেটে ভরে বইমেলায় চলে আসবেন আশা করি। সাথে কলম আনা প্রয়োজন হবেনা, কারণ কলম আমার সাথে থাকবে, তবে কলমে কালি থাকবে কিনা বলতে পারি না :))

আমাদের জীবন দীপান্বিত হোক! মুক্তচিন্তার জয় হোক!

প্রয়োজনীয় লিংক

বই প্রিভিউ- 1.2 মেগাবাইট
মুক্তমনায় বইয়ের পাতা