কে জানে মানুষ ব্যাপারটাই হয়ত আস্তে আস্তে লুপ্তপ্রায় প্রানী হয়ে উঠছে- যাদের দেখা পাওয়া যাবে শুধু জেল হাজতে। যেমনটা গান্ধী বলেছিলেন।

ভারতে ব্যাবসায়ী, রাজনীতি, পুলিশ বিচার ব্যাবস্থা-সব কিছুই তাদের দখলে! এই তাহাদের বিরুদ্ধে ছত্রিশগড়ে যে লোকটি গরীবদের ঘূরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাতো-তাদের চিকিৎসা করে গেল বিনা পয়সায়, ছত্রিশ গড়ের দুই মহামান্য ছাগল বিচারক, যারা সিস্টেমের কাছে সব কিছু বিকিয়ে দিয়েছন-তারা যাবজ্জীপন কারাদন্ড দিলেন বিশ্ববিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী এবং ইউনেস্কোর মেডিকেল মেডেল প্রাপ্ত ডাঃ বিনায়ক সেন কে।

তার বিরুদ্ধে মাওবাদিদের সাহায্য করার অভিযোগ।

এই রকম একটা গল্প ফেঁদে রাষ্ট্র, নাগরিক অধিকারের দাবীতে যারা আন্দোলন করেন, তাদের কাছে একটা বার্তা পাঠালো।

বার্তাটা সামান্য- ডঃ বিনায়ক সেনের মতন একজন আন্তর্জাতিক ভাবে বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মীকে আমরা জেলে পাঠানোর ক্ষমতা রাখি। তাই সাধু সাবধান। তোমরা ত চুনোপুঁটি।

কে এই ডঃ বিনায়ক সেন?

আগামী দিনে উনি যদি উনার আন্দোলনের জন্যে নোবেল প্রাইজ পান-সবাই জানবে। তার আগে কিছু জানিয়ে রাখি। উনি ভেলোর মেডিকেল কলেজের গোল্ড মেডেলিস্ট-কিন্ত দিল্লীতে ডাক্তারী করে টাকা কামাতে তার ভাল লাগল না। ২০ বছর আগে সস্ত্রীক চলে এলেন ছত্তিশগড়ের জঙ্গলে। আদিবাসিদের জন্যে হাসপাতাল খুললেন। তাদের উন্নত কৃষিকাজ শেখালেন। স্থানীয় আদিবাসিদের কাছে তিনি দেবতা। অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। তার কাজকে মডেল কাজ করতে চেয়েছে জাতি সংঘ। ফলে ২০০৪ সালে যখন তাকে প্রথম ধরা হল-পৃথিবীর শীর্ষ স্থানীয় সব মানবাধিকার কর্মী এবং নোবেল জয়ী ডাক্তাররা তার মুক্তির দাবীতে ভারতীয় সরকারের কাছে আবেদন করে। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশাল তার বিচারকে বিচার ব্যাবস্থার সর্বাধিক প্রহসন বলে উল্লেখ করেছে।

নিওলিবারালিজমের ঢেও যখন ভারতে লাগল-খনিজ সমৃদ্ধ ছত্রিশ গড়ে আসতে চাইল অসংখ্য মাইনিং কোম্পানী। বন ধ্বংশ করে তৈরী হবে খনি। আদিবাসীদের ত দলিল থাকে না-ওরা আদালত ও জানে না। ফলে গুন্ডা এবং পুলিশ দিয়ে আদিবাসি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে চত্রিশগড় সরকার।
সরকারী মদতে মাওবাদি ধ্বংশ করার নামে একটা গুন্ডা বাহিনী তৈরী হয়-যার নাম সালুয়া জুলুম। এদের আসল লক্ষ্য ছিল আদিবাসীদের তাড়ানো-মাইন তৈরী করার পথ প্রশস্ত করা। ডঃ সেন তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন। ব্যাস, রাষ্ট্র তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসাল। অদ্ভুত মামলা। যে লোকটি আদ্যপান্ত গান্ধীবাদি-তাকে মাওবাদি বানাল। তিনি নাকি এক মাওবাদি নেতার কুরিয়ারের কাজ করেছেন। মজা হচ্ছে পুলিশের অনুমতিক্রমেই তিনি জেলে সেই নেতার চিকিৎসার জন্যে যেতেন। হঠাৎ পুলিশ নাকি তিনটি চিঠি আবিস্কার করে যেগুলো সেন পাচার করেছেন! শুধু তাই না, তার ঘর থেকে নাকি মাও লেনিনের প্রচুর বই পাওয়া গেছে!

আর এই অপরাধে তার যাবজ্জীপন জেল! যদি মেনেও নেওয়া হয় সেই নকল অভিযোগ -কোনদিন কেও শূনেছে শুধু কুরিয়ারের কাজ করার জন্যে জীবনভোর জেল?

তেহেলকার এই লিঙ্ক দেখলেই বোঝা যাবে কোন অভিযোগের কোন প্রমাণ বা সারবত্তা নেই।
‘ তার বিরুদ্ধে আদালতে পেশ করা প্রমানগুলি এতই হাস্যকর যে এটা পরিস্কার বিচারকরা সম্পুর্ন একটি পক্ষপাতপূর্ন রায় দিয়েছেন।
http://www.tehelka.com/story_main37.asp?filename=Ne230208listofcharges.asp

মাওবাদি ইনসার্জেন্ট কেন -সেই প্রশ্নে রাষ্ট্রের রাজপুত্র এবং রাজমাতা একমত যে মানুষের বঞ্চনা এবং সবুজ ধ্বংশের বিরুদ্ধে ওরা বন্দুক ধরেছে। বন্দুক না ধরে, গান্ধীর পথে যারা গরীবদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনটা করতে চাইছিলেন সেই হিমাংশু এবং বিনায়ক সেনের যা অবস্থা করে রাখল ছত্রিশগড় পুলিশ এবার বন্দুক ধরা আটকাবে কি করে??

রাষ্ট্র একটি নিপীড়নের যন্ত্র-একটি নেসেসারী এভিল। যার সাথে আমাদের বাস করতে হয়। কিন্ত রাষ্ট্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যেকটি অহিংস গণতান্ত্রিক ব্যাক্তি দাঁড়িয়েছে, তাদের যদি প্রশাসন জেলে ভর্ত্তি করে-তাহলে বন্দুক তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তিটা কি পড়ে রইবে? এটাত পরিস্কার হল, রাষ্ট্রের প্রতিটা যন্ত্র যারা সবুজকে ধ্বংশ করে ওখানে মাইনিং করতে চাইছে –Binayak Sen তাদের পক্ষে। বিনায়ক সেনের মতন লোককে না আটকাতে পারলে, ওখানে যেসব হাজার হাজার কোটি টাকার মৌ সাক্ষরিত হয়েছে , তার থেকে সরকারী দালালরা টাকা লুঠবে কি করে? সেই বখরার টাকাযে মহামান্য বিচারপতি পান নি সেটাই বা কে নিশ্চিত ভাবে বলবে?

বিনায়ক সেনের কেসে রাষ্ট্র এবং তাদের দালালরা জিতে গেলে ভারতের মানুষের পরাজয় হবে। বিনায়ক সেনের ওপর এই আরোপিত দন্ড ভারতের আন্তর্জাতিক লজ্জা। এই রায়ে গোটা পৃথিবী জুরে ভারতের বিচার ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে ঝড় উঠেছে। ভারতের সুপ্রীম কোর্টের প্রাত্তন বিচারপতি এবং আটর্নি জেনারেল, সোরাবজি বলছেন, এই রায় তামাশা। বিচার ব্যাবস্থার প্রতি অপমান, ভারতের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আক্রমন চত্রিশগড়ের এই রায়।