সুযোগ পেলেই আমি মেড ইন বাংলাদেশ শার্ট কিনি  আমেরিকার বড় বড় দোকানগুলোতে বাংলাদেশে তৈরি জামাকাপড় দেখলে গর্বে বুকটা ভরে যায় মেড ইন ইন্ডিয়া, মেড ইন পাকিস্তান, মেড ইন থাইল্যান্ড, এমন আরো আরো সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে আশ্বস্ত হই আমরা পিছিয়ে নেই দেশপ্রেমের ঢেউ জাগে মনে।  

কিনে মনে হয় বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের উপকার করছি আমরা কিনি বলেইতো ওদের রোজগারের ব্যবস্থা হচ্ছে এরকম অগভীর একটা যুক্তিতে মনটাকে আচ্ছন্ন করে রাখি   

 

 

আজ আমার প্রিয় মেড ইন বাংলাদেশ শার্টটা পরতে ইচ্ছে হলো না আগের যুক্তিটা যে শুধু অগভীর নয়, কপটতায় ভরা, এই সত্যটা নতুন করে উপলদ্ধি করলাম বেশ্যাবাড়ি না গেলে বেশ্যারাওতো বেকার হয়ে যাবে এমনই অশ্লীল মনে হলো যুক্তিটাকে

গার্মেন্টস শ্রমিকরা মার খাচ্ছে  মার খেতে খেতে মরে যাচ্ছে  চট্টগ্রামে মরেছে, ঢাকায় মরেছে  শুধু যে গত কদিনেই মরেছে তা নয়, অনেকদিন থেকেই মরছে

আগুনে পুড়ে মরছে, গুলি খেয়ে মরছে

এ আর নতুন কি? শ্রমিকদের শোষন না করে কোন মালিক কবে বড়লোক হয়েছে?  বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতাইতো অর্থনীতির চালিকা শক্তি!  তাইতো দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র সবসময় বড়লোকদের রক্ষার মহান দায়িত্বে নিয়োজিত!

আরে বাবা, এই বড়লোক মালিকরা আছে বলেই তো কিছু করে খেতে পাচ্ছ, এরা না থাকলে তো না খেয়ে মরতে!

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানীখাত গার্মেন্টস সেক্টর অর্থনীতিতে গার্মেন্টস সেক্টরের অবদান তর্কাতীত মোট রপ্তানীর শতকরা আশি ভাগ আসে এই সেক্টর থেকে জিডিপির প্রায় শতকরা চোদ্দ ভাগ (২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট আয় ডলারের হিসেবে প্রায় তেরো বিলিয়ন ডলার)(১)

এই অবদানের পেছনে আছে শ্রমিকের ঘাম, অশ্রু আর রক্ত বিনিময়ে শ্রমিক কী পায়? সামান্য কয়েকটা টাকা, মাসে তিনহাজারের (চল্লিশ মার্কিন ডলারের সমমান) মতো গত চার বছর ধরে ছিল আরো কম, মাত্র ষোলশ বাষট্টি টাকা  এই বছর আন্দোলনের মুখে সরকার তিনহাজার নির্ধারণ করে দেয়

এত কম মাইনেতে চলে কি করে? বাঁচে কি করে?

চলে না, বাঁচেও না আগুন না লাগলেও তারা ধুঁকে ধুঁকে মরে  গুলি না খেলেও তারা কঁকিয়ে কঁকিয়ে মরে  কুকুরের মতো, বেড়ালের মতো  আমরা দেখি না, আমরা শুনি না 

শুধু শুনি যখন আগুন লাগে, যখন  তিরিশ-চল্লিশ জন বা তারও বেশি একসাথে মরে শুধু খবরে আসে যখন রাস্তায় র‍্যাব নামে, পুলিশ নামে, গুলি চালায়, রক্ত ঝরে, হঠাত করে যখন একসাথে অনেকগুলো মরে

শুনি না, দেখি না, জানি না – তাদের অশ্রু ঝরে, মাথার ঘাম পায়ে পড়ে, অমানুষিক পরিশ্রমে তাদের রক্ত জল হয়  তারা কাজ করতে করতে মরে, মরতে মরতে কাজ করে 

আজ ষোলই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী দেশে আজ বিজয় দিবস

কার মুক্তি? কার বিজয়?

নিশ্চয়ই গার্মেন্ট শ্রমিকদের নয়

_________________________________

(১) M. Mizanur Rahman and Hammunul Islam, “When Workers are Enraged,” The Daily Star, Dec. 16, 2010, Dhaka.  http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=166192