মানণীয় অর্থমন্ত্রী আমি লেখাপড়া করেছি রসায়নশাস্ত্রে। চাকরী করছি নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগে। অর্থাৎ একাডেমিক লেখাপড়া আমার কোন কাজেই লাগেনি। হয়তো এটা এদেশেই সম্ভব। এখন আমার পেটে বোম মারলেও রসায়নের ‘র’ ও বেরুবে না। তবে চাকুরীর প্রয়োজনে আমাকে সামান্য কিছু হিসাব বিজ্ঞান শিক্ষতে হয়েছে,আর তার উপর ভিত্তি করেই কোন রকমে চাকরীটা করে যাচ্ছি। আর অর্থনীতিতে ‘ক’ অক্ষর গো-মাংস। সঙ্গত কারণেই অর্থনীতির উপর কোন মন্তব্য করার দূঃসাহস আমার নেই। নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগে চাকরী করার সুবাদে আমি দেখেছি অধিকাংশ চাকরীজীবিরাই তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে নির্ধারিত হার অপেক্ষা অনেক বেশী করে অর্থ জমা করত। কারণ ১.এখানে সুদের/মুনাফার হার অন্য যে কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের চেয়ে বেশী। ২.আপদ-বিপদ যেকোন সময়ে এখান থেকে সহজেই অর্থ উত্তোলন করা যায়। ৩.চাকরী শেষে একটা ভাল এমাউন্ট পাওয়া যায়,যা পরবর্তী সময়ে ব্যাংকে জমা রেখে অথবা সঞ্চয় পত্র কিনে তার মুনাফা দিয়ে সংসার চালানো বা শেষ জীবনটা অতিবাহিত করা যায়।

মানণীয় অর্থমন্ত্রী,আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়ে বলছি আপনার দূরদৃষ্টির কারণে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। আপনি ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাচ্ছেন। তারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বড় বড় ব্যবসা ফেঁদে বসছেন। অনেক লোককে চাকরী দিচ্ছেন। যদিও বেতন-ভাতা বলে তারা কিছু পায় কিনা কিংবা পেলেও তাদের সংসার চলে কিনা সেই প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই। ঋণের সুদের হার কমের কারণে ব্যবসায়ীদের উৎপাদিত পন্যের মূল্য কমে যাওয়ার কথা কিন্তু তারা আদৌ তা কমায়নি বরং দিনে দিনে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়েই চলেছে। বানিজ্য মন্ত্রী মহোদয় ধমক দিয়েও কাজ হাসিল করতে পারছে না। আবার ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর কারণে ব্যাংকগুলো আমানতের উপরও সুদের হার কমিয়েছে। ফলে সাধারন জনগণ যারা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত নয় তারা সঞ্চিত আমানতের উপর আগের চেয়ে কম হারে মুনাফা পাচ্ছে।এছাড়াও আপনি বিভিন্ন মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের মূনাফার হার কমিয়েছেন এবং সঞ্চয়পত্রের মূনাফার উপর উৎসে কর আরোপ করেছেন। ফলে অবসর প্রাপ্ত সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীর ও তাদের পরিবার পরিজন তিনবেলার বেলার স্থলে দুবেলা খাওয়া শুরু করেছে।এতে অবশ্য তাদের মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পেলেও সন্তানের লেখাপড়া বা তাদের উপযুক্ত করে মানুষ করা এবং লেখাপড়া শেষে একটা মোটা অংকের ঘুস দিয়ে চাকরী ধরিয়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথার্ত ঘুস খাওয়ার প্রবনতা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। অবশ্য ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোতে আপনার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসার বিস্তার ঘটাচ্ছেন। এদিকে ব্যাংকে টাকা রেখে যখন কোন লাভই পাওয়া যাচ্ছে না তখন অব্যবসায়ীরা ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ তুলে শেয়ার বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। যার যা সম্পদ ছিল,সব এখন শেয়ারের পিছনে খাটানো শুরু করেছে। ফলে দিনেদিনে শেয়ার বাজারের উর্ধগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাঝে মধ্যে শেয়ার বাজারে দরপতন ঘটলে হৈচৈ ও হচ্ছে। যেভাবে শেয়ার বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্চে তাতে ৯৬’এর মতো অবস্থা যদি কখনও হয়েই যায় তাহলে হতভাগা জনগনের কি হবে অর্থাৎ দেশের জনসংখ্যা অর্ধেক কমে যাবে কিনা তা এই অধমের মাথায় ঢুকে না।

কিন্তু মানণীয় অর্থমন্ত্রী আমার উদ্বেগ সেখানে নয়। যেহেতু আমি নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের চাকরীজীবি,তাই দেখতে পাচ্ছি, কি কর্মকর্তা,কি কর্মচারী সবাই প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা উঠানোর জন্য প্রতিযোগীতা শুরু করেছে। উদ্দেশ্য শেয়ার ক্রয়। শেয়ারে নাকি বেজায় লাভ। প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে হারে সুদ বা মূনাফা দেওয়া হয় তার চেয়ে নাকি অনেক অনেক বেশী লাভ শেয়ার ব্যবসায়। তা তারা নিজের জমানো টাকা নিজে তুলবেন,তুলে ব্যবসা করবেন,এতে আমার আপত্তি থাকবে কেন? না এতেও আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যখন দেখি অফিসে কাজকর্ম ছেড়ে সবাই মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপ নিয়ে শেয়ার বাজার অন্বেষণে ব্যস্ত, যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না,তারা মাঝে মাঝে ব্রোকার হাউজ বা ব্যাংকে গিয়ে আরাম কেদারায়বসে শেয়ার বাজার অবলোকন করছে, শেয়ার হোল্ডার সহকর্মীদের সাথে সারাক্ষণ শেয়ার বাজার নিয়ে আলাপ করতে করতে দিন পার করছে, তখন আমার মত জ্ঞানহীন ব্যক্তি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিঞ্চিৎ উদ্বিগ্ন তো হতেই পারে।