মানুষের চিন্তাশক্তি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির নানা ঘটনা নিয়ে মানুষের নানা প্রশ্নের সূচনা। সেই প্রশ্নের কে কেন্দ্র করে মানুষ তার কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরী করেছে ইশ্বর, স্বর্গ, নরক। পরবর্তী সময়ে এসেছে নানা ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ। সেই ইশ্বর কল্পনা সম্পর্কে আশ্চর্য হতে হয়, যে ইশ্বরকে মানুষ তৈরী করেছে সেই ইশ্বরকে কেন্দ্র করে মানুষ কলুর বলদের মতো ঘুরপাক খায়। আর এই ইশ্বরের স্থানও মানুষ দিয়েছে মহাকাশের দিকে। যেটা এখনও একটা রহস্যজনক স্থান। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে সেই রহস্যজনক স্থানটি নিয়ে ইশ্বর চিন্তার বাইরে গিয়ে কল্পশক্তির হস্ত প্রসারিত হয়েছে অন্যগ্রহের প্রাণের খোঁজ নিয়ে।
আজকাল নানা নাটক সিনেমায় সেই কল্পিত প্রাণের অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া যায়। কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছিলাম ভারতের বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেল এবং ম্যাগাজিনে U.F.O নিয়ে বেশ আলোচনা। সেই U.F.O নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা। হ্যাঁ U.F.O মানে Unidentified Flying Object বাংলা করলে দাঁড়ায় অসনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বা অউব। অনেকের মতে এটি ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা বুদ্ধিমান জীবের যান যারা পৃথিবীর উপর পর্যবেক্ষণ করে। আর অনেকে তো আরও দশ হাত বেড়ে একে ইশ্বরের দূত বা দেবদুত গাবরিলের (জিব্রাইল) এর প্রতীক বলে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন, বিভিন্ন প্রাচীন পুস্তকে অউব এর কথা উল্লেখ আছে। নানা দেশের রূপকথায় বর্হিবিশ্বের প্রাণী ‘ইটি’ সম্পর্কে কল্পনা করা হয়েছে।
কিছু ঘটনা বলি – ১৯৫৩ সালের ২রা মে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর থেকে কমেট নামের একটি বিমান আকাশে পাড়ি দিল। টেক অফের মাত্র আধঘন্টা পরই ক্রু জানাল, তারা কিছু বিষ্ময়কর বস্তুর দেখা পেয়েছে যা তাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ছে।
• ১৪ই এপ্রিল ১৫৬১, জার্মানির নুরেম্বেরগ শহর যখন যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলো তখন তারা একটি রিপোর্ট লিখেছিল যে, তারা গোলক আকৃতির একটি বস্তু এবং গোলকের বাইরে অনেক নলাকার বস্তু পেয়েছে।
• ১২ই আগষ্ট ১৮৮৩, মেক্সিকান অধ্যাপক এবং জ্যোতিবিদ, জসেফ ইয়. বনিল্লা, তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে, সে দূরবীক্ষণ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করার সময় তার দূরবীক্ষণ এবং সূর্য মাঝে যাপাতেকাস এর কাছে দীর্ঘ এবং কিছু সংখ্যক রঙিন মণিরমত বস্তু দেখতে পেয়েছেন।
• জানুয়ারি ১৯২৬ তে, একটি বিমানচালক প্রতিবেদন করেছিল যে, সে ছয়টি “ম্যানহোলের ঢাকনা উড়চ্ছে” উইচিতা, কানসাস এবং কোলোরাড স্প্রিংস শহরের মাঝে উড়তে দেখছে।
• ২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৪২, আমেরিকার সৈন্যবাহিনী পর্যবেক্ষণের প্রতিবেদন করেছিল, লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের ওপর অসনাক্ত বিমান দৃশ্যমান হয়েছে এবং রাডারে ধরা পড়েছে। জাপানি বিমান মনে করে তারা এন্টিএয়ারক্রপ্ট মিসাইল নিক্ষেপণ করে। পরিষ্কার ব্যাখ্যা না দেওয়ায়, কিছু কর্মকর্তা নাকোচ দিয়েছে বিমানের প্রতিবেদনটি।
এইভাবে জুলাই ১৮৬৮সালে চিলিতে, ২৫শে জানুয়ারী ১৮৭৮ সালে আমেরিকার টেক্সাসে, ২৮শে ফেব্রয়ারী ১৯০৪ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে, ৩১শে জানুয়ারী ১৯১৬ সালে যুক্তরাজ্যে, ১৯৪৬ সালে ২০০০ এরও বেশী রিপোর্ট করা হয়েছে। এগুলোর বেশীর ভাগ সুইডিস সৈন্যবাহিনী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এইরকম বিভিন্ন সময় অউব সম্পর্কে খবর প্রকাশ পায়। কিন্তু সঠিক কোন প্রমান আজও পাওয়া যায় নি। আর মানুষের একটা স্বভাব আছে তিলকে তাল করে পরিবেশন করা যা ভ্রান্ত মানসিক ভাইরাসের আকারে ছড়িয়ে পড়ে মানুষ থেকে মানুষে, সমাজ থেকে সমাজে, দেশ থেকে দেশে।
এই অউব নিয়ে যারা বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেন তাদের উফোলজিষ্ট বলা হয়। অউবকে আধুনিক বিজ্ঞান জগতে একটি Pseudo science বা মিথ্যা বিজ্ঞান বা অবিজ্ঞান হিসাবে ধরা হয়।বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে যে, অউব সম্পর্কে যত গল্প ফাঁদা হয় তার ৯০% ই ভ্রান্ত। সাধারণত উজ্জল কোন গ্রহ কিংবা তারা, বিমান, পাখী, বেলুন, ঘুড়ি ডিম্বাকার আকৃতির মেঘ দেখে মানুষ অউব ভেবে ভূল করে।
১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে যতগুলো অউব দেখা গেছে তার জন্য ৫০% এর জন্য দায়ী Lockheed U-2A এবং Lockheed SR 71 নামের দুটি বিমান। আর কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা এখনও না পাওয়া গেলেও যত গবেষণা হচ্ছে ততোই অউব ভ্রান্ত বলেই প্রমান হচ্ছে। ভিন্নগ্রহে বুদ্ধিমান জীব আছে কি নেই তা এখনই স্পষ্ট না হলেও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে যা মনে হচ্ছে অউব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শুধুমাত্র একটা রূপ কথা হয়ে থাকবে।

তথ্য সুত্র :-
ভিন্নগ্রহের যান ইউ,এফ,ও – সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়
en.wikipedia.org/wiki/Unidentified_flying_object