রাজনীতি বাংলাদেশী জনজীবনে একটি ব্যাপক বিস্তৃত অধ্যায়।মোটামুটি সবার জীবনে এর সূ বা কু-প্রভাব আছে।আমাদের আশেপাশের মানুষকে প্রশ্ন করলেই বোঝা যায় এটি।অনেকেই হয়তো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক আর বাকি সবাই পুরো রাজনৈতিক ব্যাবস্থার উপরেই বিরক্ত।এমন কাউকে খুজে পাওয়া মুশকিল যে কিনা রাজনৈতিক ব্যাপারগুলোতে একেবারেই উদাসিন। তো যেই দেশের জনগন এতটা রাজনীতি “সচেতন” সেই দেশে রাজনীতির এই দুরাবস্থা কেন? স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ি “সচেতন” জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার তো জনমতের চাহিদার বাস্তবায়ন করে আর সচেতন জনগন তো আর যাই চাহিদা করুক বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি চায় না!
প্রধান দুটি দলের মাঝেই সীমিত আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন কিন্তু এই দুটি দলের ভিত্তি কোথায়? সমাজে কাদের প্রতিনিধি এরা? নাকি পুরো দেশের প্রতিনিধিত্বকারী এই দুটি দল?
দুটি দলের ভিত্তি দেখতে গেলে প্রথমে পাই আওয়ামী লীগ কে,স্বাধীনতা পূর্ব মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মুখপাত্র এই দলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনাকারী। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের ভুমিকা ব্যাপক।চরম বাস্তবতা বর্জিত বাম দলগুলোর বাস্তবতা অনুধাবনের ব্যার্থতায় ও ডান দলগুলোর স্বাধীনতা বিরোধি অবস্থানের ফলে পুরো জাতিকে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেবার দায়িত্ব আসে এই দলটির ওপর আরো নিদৃষ্ট করে বললে শেখ মুজিবর রহমানের ওপর। এবং বাংলার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে আমরা পাই পৃথিবীর মানচিত্রে প্রথম বারের মত একটি বাংলাদেশ।
দেখুন,লক্ষ্যনীয় বিষয় যে,মধ্যবিত্তের মুখপাত্র আওয়ামী লীগ কালক্রমে হয়ে গেল দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধি।কিন্তু সফল বিদ্রোহি শেখ মুজিবর রহমানে যেখানে স্বাধীনতার প্রশ্নে পুরো জাতিকে এক করতে এবং দেশকে স্বাধীন করায় সফল ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি পুরো জাতিকে দেশের ভালর জন্য এক করতে পারেনি। এমনকি দেশের সরকার গঠনেও দলীয় রাজনীতিই প্রধান থেকেছে,দেশের উন্নয়নে সেরা মেধাগুলো কাজে না লাগিয়ে সংকীর্ন দলীয় রাজনৈতিক পরিচয়ে সরকার গঠন করা হয়েছে।এমনকি আমলা নিয়োগের ক্ষেত্রেও দলীয় পরিচয় ভুমিকা রেখেছে। ফলে আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে যারা দেশের জন্য যুদ্ধ এবং সংগ্রাম করেছিল তারা নিজেদের বন্চিত বোধ করলো আর কিছু নেতা ক্ষমতার লোভে নিজেদের নৈতিক চরিত্রের পতন উৎসাহিত করলো।ফলাফল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিভক্তি। আওয়ামী লীগ তাদের “এ” টিম তৈরী করে এবং দেশে শত্রুতার ভিত্তিতে “বি” টিমের জন্ম উৎসাহিত করে এবং পরবর্তীতে “বি” টিমের জন্ম হয় বি,এন,পি নামে।
বি,এন,পি দলটি আসলে কি?
এক কথায় বলা যায় যারা আওয়ামী লীগের অধীনে ক্ষমতার কোন ভাগ পায়নি তারাই বি,এন,পি।একধরনের সুবিধা বন্চিত আমলা নির্ভর দল,অথবা বলা যায়, সারা দেশের যেসকল মানুষ আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতো তারাই বি,এন,পি কেন্দ্র করে একত্রিত হল।
তাহলে কি বলা যায় যে, বাম-ডানের ব্যার্থতায় দেশের একক নেতৃত্ব পেয়ে যায় আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের ব্যার্থতায় গড়ে ওঠে বি,এন,পি?
তার মানে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দুটি দলই রাজনৈতিক “স্টান্ট”?? দুটো দলই আসলে “প্রতিদল”?
আরো খেয়াল করা যায় যে, দুটো দলই একক নেতৃত্ব নির্ভর। শেখ মুজিবর রহমানের দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব গুন এবং অবদান নিয়ে প্রশ্ন করা আমার মনে হয় নিজের ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তোলার মত। কিন্তু অবশেষে তিনিও মানুষ এবং ওনার বিদ্রোহি নেতৃত্ব যতটা নিখুত ছিল ততটাই খুত ছিল দেশকে স্বাধীনতা উত্তর কঠিন সময়টিতে দেয়া তার নেতৃত্বে।
বি,এন,পি’র নেতা জিয়াউর রহমান তার ব্যাক্তিত্ব এবং সমসাময়ীক প্রশাসনে গতি এনে দেয়ায় জন্য দেশবাসির প্রিয় হয়েছিলেন কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি যতটুকু নন্দিত, ঠিক ততটুকুই তিনি নিন্দিত রাষ্ট্রপ্রধান হবার পেছনের পদক্ষেপের জন্য।
তাহলে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগ বিরোধি প্লাটফর্ম বি,এন,পি’র জন্ম সুবিধাবন্চিত জনগন ও ক্ষমতাবন্চিত আমলাদের নিয়ে যাদের মুল ভিত্তি আওয়ামী লীগের ভুল।
তাহলে বি,এন,পি হল ক্ষমতালোভী,সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাবন্চিতদের দল,আর আওয়ামী লীগ হল, অপ্রস্তুত, নিজ কেন্দ্রীক,ও সুবিধাভোগির দল।
দুটি দলেরই মুল পুঁজি মাত্র দুজন জননন্দিত মৃত নেতা।
আমাদের একটি দেশ বাংলাদেশ,তার রাজনৈতিক দল মুলত দুটি এবং দুটি দলই ঘটনার প্রবাহে জন্ম নেয়া। ভিশন নিয়ে কারো জন্মই হয়নি।দুটি দলই মিশন নির্ভর।একটি দলের ভুল আরেকটি দলকে এগিয়ে দেয় কিন্তু কোন দলই নিজ ভিশন বা কাজের মাধ্যমে জনগনকে আকৃষ্ট করছে না।দল দুটির নেতা দুজন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জল দু-জন। একজনের জন্য আজ আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে পারছি আর আরেকজনের কিছু কাজ আমাদের সফল হবার সপ্ন দেখিয়েছিল।কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের যে ব্যাক্তিজীবনের মায়া আমাদের রাজনৈতিক জীবন কেও তাড়িয়ে ফেরে। ঘটনাক্রমে দুটি দলের দুজন নেতাই ঘাতকের হাতে প্রান দিয়েছেন এবং আবেগের দাস বাংলাদেশি জনগন আমৃত্যু তাদের সৃতির প্রতি সন্মান জানাতে ঐ নেতাদের পরিবারের কউকে না কাউকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ক্ষুদ্ধ জনগন নিজেদের বি,এন,পি সমর্থক করে তুলছে এবং পারিবারিক ঐতিহ্য বা বি,এন,পি’র প্রতি ঘৃণা থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হয়ে যাচ্ছে। বলবো না বলেও শেষ লাইনে এসে বলতে হয় যে,জনগনের অবিবেচনাও আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী।