অনেক আশাহত অন্ধকার দিনগুলোর মধ্যেও কিছু কিছু খবর আসে, যা সত্যই আশাব্যাঞ্জক। আমাদের বড় বড় ধর্ম নিরপেক্ষ নেতারা যেভাবে “ধর্ম নিরেপেক্ষতার” নামে সংখ্যালঘু নারীদের অধিকার বিরোধি কিছু মৌলবাদি ভাঁড়ের পায়ে নিজেদের আত্মসমর্পন করেছেন-সেই শ্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বেঙ্গল ফোরাম ফর মুসলিম উইমেন্স রাইট এন্ড এম্পাওয়ারমেন্ট-খুব পরিস্কার ভাবেই মুসলিম মহিলাদের ওপর অত্যাচার রুখতে মুসলিম সমাজেও ধর্মনিরেপেক্ষ আইনের দাবী তুলেছেন। আইন হলেই যে অত্যাচার আটকায় তা না। ভারতে মহিলাদের প্রতি অত্যাচার সর্বাধিক এবং তা আইন দিয়ে কিছু মাত্রায় কম করা সম্ভব হলেও, প্রতি বছর আট হাজার বধূ হত্যা সর্বভারতীয় লজ্জা। ভারতীয় সমাজে মেয়েদের এই করুন অবস্থার জন্যে সনাতন হিন্দু ধর্মের দায় একশো ভাগ। তবুও সমাজসংস্কার এবং আইনের জন্যে, আস্তে আস্তে হলেও ভারতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। কিন্ত এই অধিকার থেকে বঞ্চিত মুসলিম মেয়েরা। শাহবানু মামলায় সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পরে, মুসলিম মেয়েদের সামনে শরিয়া আইন ছারা ধর্ম নিরেপেক্ষ পারিবারিক আইন খোলা নেই। বলা যায় তথাকথিত ধর্ম নিরেপেক্ষ রাজনীতির(?) শিকার ভারতের মুসলিম নারী-যাদের জন্যে মধ্যযুগীয় আইন প্রনয়ন হচ্ছে “ভারতীয় ধর্ম নিরেপেক্ষতা”। বাংলাদেশ, মালেশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াতে মুসলিম নারীদের যেটুকু অধিকার আছে-ভারতীয় মুসলিম নারীদের তার ছিঁটেফোটাও নেই। কারন ভারতে ধর্ম নিরেপেক্ষতার সংজ্ঞা হচ্ছে সংখ্যালঘু তোষন এবং
তার জন্যে মুসলিম মেয়েদের অধিকার জাহান্নামে গেলে যাক। মুসলিম মেয়েদের ওপর সামাজিক অত্যাচারের যজ্ঞে ঘৃতাহুতি দেওয়ার লাইনে রাজীব গান্ধী থেকে মানস ভুইজ্ঞা সবাই আছেন।

মানবসমাজ বিবর্তনের সর্বশক্তিমান প্রোডাক্টটির নাম ঈশ্বর। তিনি আবার পুরুষ-কেন না তা না হলে, সন্তান বেশী জন্মাত না। যাইহোক, এই পুরুষ ঈশ্বরটির হাতে সব ধর্মেই মেয়েদের অবস্থান নাকাল। হিন্দু ধর্মে তা গাভীবৎ-ইসলামে দাসীবৎ। সুতরাং ধার্মিক আইন প্রচলন করলে হিন্দুধর্মে মেয়েদের অবস্থান হবে গৃহপালিত গাভীর চেয়ে কিছু কম-আর শরিয়া আইনে চললে, মেয়েদের অবস্থান হবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকত্ব। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রথমটি আইন দিয়ে দূর করা সম্ভব হলেও, দ্বিতীয়টি বিদ্যমান। ফলে ধর্ম নিরেপেক্ষতার সার্কাস বজায় রেখে ধর্মীয় আইন চালু রাখার পক্ষে যারা-তাদের একটাই শ্রেনী- সুবিধাবাদি রাজনৈতিক ভাঁড়।

ইদানিং কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি মানস ভুইজ্ঞা এবং সইফুদ্দিন চৌধুরী মুসলিম ভোট পাবার আশায় যে পার্টির লেজ ধরেছেন তার নাম জামাত ই ইসলামি হিন্দ। সোজা কথায় ভারতের জামাত। যা বাংলাদেশ এবং পাকিস্থানের জামাতের পিতৃগৃহ ছিল স্বাধীনতার আগে। তাদের আমীর এই নারীবাদি সংগঠনের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে কারন তার মতে মুসলমান মেয়েদের শরিয়া মেনে চলতে হবে ( আনন্দবাজারে রহমত আলির বক্তব্য দ্রষ্টব্য)!!! এবার বুঝুন কংগ্রেস এবং পিডিএসের “ধর্ম নিরেপেক্ষ” জোটসঙ্গীতে কারা আছে। এবং ধর্মনিরেপেক্ষতা কারে কয়।

সমস্যা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদিরা মাথাচারা দিয়ে উঠছে। এর একটা বড় কারন এই ধরনের ভ্রান্ত ধর্ম নিরেপেক্ষতার সার্কাস। এই একবিংশ শতাব্দিতে এসে মুসলমানদের জন্যে আলাদা পারিবারিক শরিয়া আইন ভারতবর্ষের জন্যে লজ্জাত বটেই-মুসলিম মেয়েদের বিরুদ্ধে তা মুসলিম পুরুষদের শোষন এবং নিপীড়নের যন্ত্র। এবং মেয়েদের বিরুদ্ধে সেই শোষন অব্যাহত রাখার পেছনে জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকাও খুব উজ্জ্বল।

জেনেটিক্সের এই যুগে যখন আমরা জানি দুজন যেকোন মানুষের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য এক ভাগের একলক্ষ ভাগও না-এবং সেই সূত্রে খুব জোর দিয়েই বলা যায় হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে পার্থক্য অবৈজ্ঞানিক, কল্পনাপ্রসূত এবং ফালতু, তখন দেখা যাচ্ছে শুধু কিছু রাজনৈতিক সুবিধাবাদি নেতাদের মদতে এই পার্থক্য টেকানো হচ্ছে। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস-সব পার্টিই এই বিভাজনের তাস খেলে। তবে এতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভারতের মুসলিম মেয়েরা।