“যে পুরুষ নাচতে জানেনা , তাকে কখনই তরবারী দিও না. ” – কনফুসিয়াস (৫৫১-৪৭৯ খ্রী:পূর্ব)

নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা- কথাটা সম্ভবত একজন নারীর এবং যার নাচার কথা তিনি একজন পুরুষ। একজন নারীর কথায় না নাচতে পারার খেসারত এতদিন অজানা ছিলো। না নাচাটাই বরং ছিলো অনেকের কাছে গর্বের বিষয়! এটা সেটা দিয়ে নারীদের মন পাওয়ার জন্যে কি করেনি পুরুষেরা ? ক্রেডিট কার্ডে লাল বাতি জ্বালিয়েছে , হাতের মুঠোয় প্রান নিয়ে দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বেঁধেছে , বিশ্ব সংসার তছনছ করে একজন কবি ১০৮ টা নীল পদ্ম পর্যন্ত তুলে এনেছেন । কিন্তু নাচতে চায়নি পুরুষেরা। নৃত্যে যে বসতি লক্ষী তা এতদিনে জানা ছিলো না। কিভাবে এখন তা জানলাম ? এবার কোমরে সীট বেল্ট বেঁধে শুনুন তাহলে।

সাম্প্রতিক গবেষণার* ফলাফলে দেখা গেছে যে , সুন্দর নাচতে পারাটা সুস্বাস্থ্য এবং উচ্চ প্রজনন ক্ষমতা নির্দেশ করে। এখানে নর্তক একজন পুরুষ এবং দর্শক একজন নারী। আপনি যখন কোন ডিস্কো বা নাইট ক্লাবে গিয়ে নাচেন বা হাত পা ছোরা ছুরি করেন , উপস্থিত নারীদের বুঝতে বাকী থাকে না যে আপনি একজন ভালো নর্তক না আপনার ডান্স ফ্লোর বাঁকা । এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে এটা আবার কিভাবে বিজ্ঞানীরা বের করলেন। বিষযটা যদিও খুবই জটিল কিন্তু তারপরেও সহজ করে বলা যাক।

প্রথম বারের মত এই ধরনের গবেষণায় বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হযেছে। এটার সাহায্যে খুব সূক্ষ ভাবে হিসাব করা যায় যে নাচের সময় কোন ধরনের এবং শরীরের কোন অংশের নড়াচড়া নারীরা খেয়াল করছেন। এই হিসাব পরে নারীদের দেয়া রেটিংয়ের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। পরীক্ষাগারে নাচবার জন্য পেশাদার নর্তকের বদলে সাধারন কিছু পুরুষদের সাধারন একটা ড্রামের তালে তালে নাচতে বলা হয় ১২টি ক্যামেরার সামনে। এই দৃশ্যগুলো পরে কম্পিউটারের সাহায্যে এনিমেডেট কার্টুন বা অবতারে [চিত্র-১] রূপান্তর করা হয়। এই অবতার গুলো দেখে নারীরা এক থেকে সাতের মধ্যে যেকোনা নাম্বার রেটিং দিতে পারেন। দেখা গেল যে , একজন পুরুষের ধর, গলা এবং মাথার দিকেই নারীরা বেশী নজর দিয়ে থাকেন। হাত -পার গুরুত্ব্ব তেমন নেই। নাচের গতির পাশাপাশি নাচের ধরন বদলানোটা এখানে গুরুত্বপূর্ন। সবচেয়ে কম রেটিং পেয়েছে ‘ড্যাডি ডান্স’ মার্কা নাচ।


চিত্র-১ : পরীক্ষায় ব্যবহ্নত অবতারগুলির একটিকে দেখা যাচ্ছে প্রথমে (ক) স্হির এবং পরে (খ) নৃত্যরত অবস্থায়।

গবেষণার মূখ্য উদ্দেশ্য ছিলো এটা দেখা যে , অন্যান্য প্রাণীদের মত মানুষও প্রেম নিবেদনের সময় নির্দিষ্ট ধরণের শারীরিক অঙ্গভঙ্গি করে কি না যা চার্লস ডারউইন ১৮৫৯ সালে তার On the origin of species by means of natural selection, or the preservation of favoured races in the struggle for life – এ উল্লেখ করেছিলেন। অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই সব অঙ্গভঙ্গি তাদের বয়স, স্বাস্থ্য , প্রজনন ক্ষমতা এবং হরমোনের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য নির্দেশ করে থাকে। পুরুষ প্রাণীদের এসব কসরৎ করতে শারীরিকভাবে যথেষ্ঠ সক্ষম হতে হয়। গবেষনায় যেসব নর্তক নারীদের কাছ থেকে উচ্চ রেটিং পেয়েছেন তাদের রক্তের বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে যে তাদের স্বাস্থ্যও অপেক্ষাকৃত উত্তম। অতএব , নারীর মন পেতে হলে অজুহাত ছেড়ে আজ থেকেই ভালো নাচার অভ্যেস করুন। দেখবেন যে, আপনার প্রিয়তমা আপানাকে কাছে ডেকে নিয়ে বলছে , আ যা নাচ লে !
 

* সম্পূর্ণ গবেষণা পত্র :
“Male dance moves that catch a woman’s eye”
Nick Neave, Kristofor McCarty, Jeanette Freynik, Nicholas Caplan, Johannes Hönekopp and
Bernhard Fink

The Royal Society Journal Biology Letters.
doi: 10.1098/rsbl.2010.0619