মুক্তমনায় সম্প্রতি অভিজিৎদার বিবাহ বিষয়ক লেখাটা বেশ ভাল লাগলো। যাই হোক, বাজে ব্যাপার হল উনি নিজেই বিবাহিত, কোন কাজের কথা না! লেখায় সিনসিয়ারিটির অভাব আছে তার মানে। 😉

ভাবলাম, নিজের কাহিনী লিখি অল্প অল্প করে, কারণ বিয়ে বিষয়ে নিজের মতামত কখনো ফরমালি কোথাও লিখিনি। জিনিসটাকে বেশি সিরিয়াসলি না নেয়াই বোধকরি ভাল হবে, তবে একেবারে ফেলেও দিয়েন না যেন! 🙂 আপনাদের মন্তব্যের ভিত্তিতেই পরের পর্ব আসলে আসবে, যদিও আমি বড় ধরণের সিরিজখেলাপি। 🙂

একটু ব্যাকগ্রাউন্ড।

আমার বয়স আটাশ বছর এক মাস। প্রাক্তন কোন যৌন অভিজ্ঞতা নেই, সেল্ফ-এডমিনিস্টারড ছাড়া। আমার কোন মেয়েবন্ধু (গার্লফ্রেন্ড) ইত্যাদি নেই, ছিলও না। তবে ‘মেয়ে বন্ধু’ অর্থে মেয়েবন্ধু আছে, এবং একজন খুব সম্ভবত প্রায় বেস্ট ফ্রেন্ড পর্যায়ে।

বাংলাদেশে প্রচলিত অর্থে যে বিয়ে, সেটার কথা ভাবলেই আমার রিপালসিভ লাগে। বলছি না এর মধ্যেও ভাল জিনিস নেই। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে অনেক প্রথা আছে, যেটা আমার ধারনা আমার ব্যক্তিসত্ত্বার সাথে ঠিক যায় না। এই যে চার-পাঁচটা অনুষ্ঠান ইত্যাদি করে মানুষ বিয়ে করে, লাখ লাখ টাকা পয়সা খরচ করে, সেটা তো আমার চরম বিরক্তিকর লাগেই। তারপর যেটা হয়, বিয়েটা তো আসলে ছেলে আর মেয়ের মধ্যে হয় না কেবল, ছেলে আর মেয়ের পরিবারের মধ্যেও হয়। এই সব পরিবারের নানারকম ‘হাউস রুল’ মেনে চলা আরেক ঝামেলা। এরপর আছে বিয়ে-পরবর্তী সামাজিকতা।

বিয়ের আগে বিবেচ্য চলক হিসেবে আসছে এ্যারেঞ্জড ম্যারেজ বনাম প্রেম করে বিয়ে করা। এ্যারেঞ্জড ম্যারেজকে আগে একেবারে ‘এবহরেন্ট’ লাগতো। মাঝখানে গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছিল নানা কারণেই। এখন আবারও কিছুটা ‘ব্যাক টু এ্যাবহরেন্স’। তারপরও, প্রেম আর এ্যারেঞ্জড ম্যারেজ মিলিয়ে মিশিয়ে খারাপ জিনিস করা যায়, ভালই সফল হওয়া সম্ভব, মনে হয়।

যাই হোক, উপরের সেকশনের সবগুলো চলক ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সুন্দর করেই বিয়ে করা যায়। সমস্যা হল ‘আমি’।

ব্যক্তি হিসেবে আমি একেবারে ‘শিজয়েড’ পর্যায়ের অন্তর্মুখী না। মায়ার্স-ব্রিগস পার্সোনালিটি ধরন হল আইএনএফপি। সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া খারাপ না, ভালই পারি। কিছু কিছু মানুষের দ্বারা এনার্জাইজডও হই।

কিন্তু আমার *নিজের* বেশ বড় পর্যায়ের স্পেস লাগে। দিনশেষে আমাকে আমার মত থাকতে দিতে হবে। আমি খামাখাই ‘পাছে লোকে কি বলবে’ এ জন্য ড্রইংরুম গুছাতে বা নতুন গাড়ি কিনতে পারবো না। আমার ‘স্বাধীনতা থ্রেশোল্ড’ এখনো অনেক বেশি।

আমি এখনো এমন কোন ‘এভেইলেবল’ নারীর সাথে পরিচিত হইনি, যিনি কিনা এই থ্রেশোল্ড-এর থেকেও বেশি পুরষ্কৃত করেন।

বিবাহের বিরুদ্ধে আমার খুব যে বেশি কিছু আছে তা না। তবে আমি বিবর্তন-সংঘাতে ভুগি। আমি কি একটি ‘জন্তু’, না একটি বিবর্তিত মানুষ? ফ্রন্টাল কর্টেক্স থাকলে কি হবে, আমার যে একটি লিম্বিক ব্রেইনও আছে। যৌনভাবে আকৃষ্ট হওয়া তো আমার অস্তিত্বেরই অংশ!

তারপরও বিবর্তিত মানুষ হিসেবে নিজের এ ধরণের বিবর্তিত ইমপালসগুলো নিয়ে মাঝে মাঝেই লজ্জিত হই, যদিও রাশনাল মন বলে লজ্জিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

আমার ধারণা, আমরা এখন এমন এক সমাজে বসবাস করি, যেখানে ‘অস্বাভাবিক’ হওয়া খুব সহজেই সম্ভব। সুতরাং এখানে আমরা নিজেদের বিবর্তনের কিছু অংশ বাদ দিয়ে নিজের মত ‘সুখ’ অপটিমাইজ করাটা খুব ভুল কিছু না।

বিবাহবন্ধন সামাজিকভাবে বসবাসরত মানুষের জন্য যৌনাকাঙ্খার মত বিবর্তনগতভাবে শক্তিশালী ইমপালস মেটানোর দারুণ উপায়। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিকও বটে। আমাদের মস্তিষ্ক বিবর্তিত হয়েছেই সেভাবে। বিশালসংখ্যক মানুষের জন্য বিবাহপরবর্তী ‘পার্টনারশিপ’ জীবনযাপনেরও অত্যন্ত সহজ, আরামদায়ক এবং পুরষ্কারসমৃদ্ধ উপায়।

বিয়ের বদলে এখন যা চালু, লিভ-টুগেদার, ওপেন রিলেশনশিপ, এই একই মতামত সেসব ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিশাল এই যুগ্মতার সংজ্ঞাকে অস্বীকার করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি কখনোই বলতে পারি না আমি কোন রিলেশনশিপ-এ যাবো না। ইন ফ্যাক্ট, আমার জীবনের এখনো দারুন ফ্রুটফুল সম্পর্ক আছে।

কিন্তু ৫০ বছর ধরে পাশাপাশি দু’জন লোক বসবাস করছেন এ্যারেঞ্জড ম্যারেজের পর, ‘বিয়ে’ বললে এখন চোখের সামনে এই চিত্রটি যেটি মাথায় আসে, সেটিকে অসাড় মনে হয় তা বলতেই হবে।