বিশ্বাসের ভাইরাস নামে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে। নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখে প্রায় ৫০ জন ফিদাইন জঙ্গী সবমিলিয়ে তাজ হোটেল সহ মুম্বাইয়ের ৫ টা বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক আক্রমন করে আখচার গোলাগুলি করে নিমেষ মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ঘটনাবহুল ছিলো দিনটি। আমার ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ প্রবন্ধটি ছিলো সেই ভয়াবহ দিনের ফলশ্রুতি। এর পর গঙ্গা যমুনার উপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, কিন্তু ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’-এর প্রাসঙ্গিকতা ক্ষূন্ন হয়নি একবিন্দুও। আমার আজকের লেখাটি আগের চিন্তারই আরো পরিবর্ধন বলা যেতে পারে। সে হিসেবে এটি বিশ্বাসের ভাইরাসের ২য় পর্ব

আসলে বিশ্বাসের ব্যাপারটি নিয়ে আমি অনেকদিন ধরেই চিন্তা করছি। বিশ্বাস কখনো একা একা পথ চলে না, বগলদাবা করে বয়ে নিয়ে বেড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে। তাই বিশ্বাসের কথা বলতে গেলে পাশাপাশি অবধারিতভাবে ধর্মের কথাও এসে পড়ে। বিশ্বাস এবং ধর্ম অনেকসময়ই খুব পরিপূরক, আমাদের সমাজে তো বটেই, পাশ্চাত্যেও। আর এ নিয়ে বহু খ্যাতনামা দার্শনিকই চিন্তাভাবনা করেছেন বিভিন্ন সময়ে। স্পিনোজা থেকে ভলতেয়ার, ফুয়েরবাক থেকে মার্ক্স পর্যন্ত অনেকেই ভেবেছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক মডেলও তুলে ধরা হয়েছে অনেক। বাংলা ভাষায়ও খুব বেশি না হলেও বেশ কিছু বই লেখা হয়েছে। আরজ আলী মাতুব্বর লিখেছেন, লিখেছেন হুমায়ূন আজাদ, লিখেছেন আহমদ শরীফ, লিখেছেন প্রবীর ঘোষ কিংবা ভবাণীপ্রসাদ সাহু। প্রাচ্য এবং প্রতীচ্যের দার্শনিকেরা বিভিন্নভাবে ধর্মবিশ্বাস এবং সমাজে এর প্রভাবকে বিশ্লেষণ করলেও রিচার্ড ডকিন্সের ‘ভাইরাসেস অব দ্য মাইণ্ড’ রচনাটির আগে জৈববৈজ্ঞানিকভাবে ধর্মের মডেলকে বোঝা যায়নি[1]। এই প্রবন্ধ থেকে অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যায় যে,ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রীতি নীতিগুলো অনেকটা ফ্লু-ভাইরাসের মতোই সংক্রমিত করে। সেজন্যই ধর্মের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে মানুষ বহুকিছুই করে ফেলে, যা সুস্থ মস্তিস্কে কল্পনাও করা যায় না। বিখ্যাত বিজ্ঞানের দার্শনিক ডেনিয়েল ডেনেট ডকিন্সের এই ধারণাকেই আরো সম্প্রসারিত করে একটি বই লিখেছেন সম্প্রতি ‘ব্রেকিং দ্য স্পেল’ শিরোনামে[2]। ডেরেল রে সম্প্রতি লিখেছেন ‘গড ভাইরাস[3]’। রিচার্ড ব্রডি লিখেছেন ‘ভাইরাস অব দ্য মাইণ্ড'[4] প্রভৃতি। ডকিন্স নিজেও ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারগুলোকে মিম তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন, এবং ‘সেলফিশ জিন’[5] এবং সাম্প্রতিক ‘গড ডিলুশন’[6] বইয়ে তার সে সমস্ত ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে।

আমি আমার বিভিন্ন লেখায় দেখিয়েছি যে, মানবমনে প্রোথিত বিশ্বাসগুলো আসলে অনেকটাই ভাইরাস কিংবা প্যারাসাইটের মতো কাজ করে। এদের আক্রমণে মস্তিস্কের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার বহু উদাহরণ আছে বিজ্ঞানীদের কাছে। যেমন,

-নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম নামে এক ফিতাকৃমি সদৃশ প্যারাসাইট ঘাস ফড়িং-এর মস্তিস্ককে সংক্রমিত করে ফেললে ঘাস ফড়িং পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, যার ফলশ্রুতিতে নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্মের প্রজননে সুবিধা হয়। অর্থাৎ নিজের প্রজননগত সুবিধা পেতে নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম বেচারা ঘাস ফড়িংকে আত্মহত্যায় পরিচালিত করে[7]।

-জলাতংক রোগের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। পাগলা কুকুর কামড়ালে আর উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে জলাতংক রোগের জীবাণু মস্তিস্ক অধিকার করে ফেলে। ফলে আক্রান্ত মস্তিস্কের আচরণও পাগলা কুকুরের মতোই হয়ে উঠে। আক্রান্ত ব্যক্তি অপরকেও কামড়াতে যায়। অর্থাৎ, ভাইরাসের সংক্রমণে মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

– ল্যাংসেট ফ্লুক নামে এক ধরনের প্যারাসাইটের সংক্রমণের ফলে পিঁপড়া কেবল ঘাস বা পাথরের গা বেয়ে উঠা নামা করে। কারণ এই প্যারাসাইটগুলো বংশবৃদ্ধি করতে পারে শুধুমাত্র তখনই যখন কোন গরু বা ছাগল একে ঘাসের সাথে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। ফলে প্যারাসাইট টা নিরাপদে সেই গরুর পেটে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে[8]।

নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম যেমনি ভাবে ঘাস ফড়িংকে আত্মহত্যায় পরিচালিত করে, ঠিক তেমনি ধর্মের বিভিন্ন বাণী এবং জিহাদী শিক্ষা মানব সমাজে অনেকসময়ই ভাইরাস কিংবা প্যারাসাইটের মত সংক্রমণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী করে তুলে। ফলে আক্রান্ত সন্ত্রাসী মনন বিমান নিয়ে আছড়ে পড়ে টুইন টাওয়ারের উপর, কখনো বা সিনেমা হলে, কখনোবা রমনার বটমূলে। নাইন ইলেভেনের বিমান হামলায় উনিশ জন ভাইরাস আক্রান্ত মনন ‘ঈশ্বরের কাজ করছি ‘ এই প্যারাসাইটিক ধারণা মাথায় নিয়ে হত্যা করেছিলো প্রায় তিন হাজার জন সাধারণ মানুষকে। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর অধ্যাপক ব্রুস লিংকন, তার বই “হলি টেররসঃ থিংকিং এবাউট রিলিজিয়ন আফটার সেপ্টেম্বর ইলেভেন” বইয়ে বিষয়টির উপর আলোকপাত করে বলেন, “ধর্মই, মুহাম্মদ আত্তা সহ আঠারোজনকে প্ররোচিত করেছিল এই বলে যে, সংগঠিত বিশাল হত্যাযজ্ঞ শুধুমাত্র তাদের কর্তব্য নয়, বরং স্বর্গ থেকে আগত পবিত্র দায়িত্ব”[9]। হিন্দু মৌলবাবাদীরাও একসময় ভারতে রামজন্মভূমি অতিকথনের ভাইরাস বুকে লালন করে ধ্বংস করেছে শতাব্দী প্রাচীন বাবড়ি মসজিদ। এধরণের অসংখ্য দৃষ্টান্ত ইতিহাস থেকে হাজির করা যাবে, ভাইরাস আক্রান্ত মনন কিভাবে কারণ হয়েছিল সভ্যতা ধ্বংসের।

paracite_9111

চিত্রঃ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম নামে এক প্যারাসাইটের সংক্রমণে ঘাস ফড়িং পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে (বামে), ঠিক একইভাবে বিশ্বাসের ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত আলকায়দার ১৯ জন সন্ত্রাসী যাত্রীবাহী বিমান নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো টুইন টাওয়ারের উপর ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর (ডানে)। বিশ্বাসের ভাইরাসের বাস্তব উদাহরণ।

১১ই সেপ্টেম্বরের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার পরে অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স ফ্রি এনকোয়েরি পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন ‘ Design for a Faith-Based Missile‘ নামে। তিনি সেই প্রবন্ধে আত্মঘাতী সন্ত্রাসীদের বিশ্বাস নির্ভর (ভাইরাসাক্রান্ত) বোমা হিসেবে অভিহিত করে লেখেন –

There is no doubt that the afterlife-obsessed suicidal brain really is a weapon of immense power and danger. It is comparable to a smart missile, and its guidance system is in many respects superior to the most sophisticated electronic brain that money can buy. Yet to a cynical government, organization, or priesthood, it is very very cheap.

ভাইরাস আক্রান্ত মনন : ইতিহাসে এবং সভ্যতায়

ভাইরাস আক্রান্ত বিধ্বংসি মননের উদাহরণ কেবল ৯-১১ এর ঘটনাই নয়, এর উদাহরণ রয়েছে বহু। ভাইরাস আক্রান্ত মননের চরম উদাহরণগুলো হাজির করলে বোঝা যাবে কিভাবে ধরণের মানসিকতাগুলো সমাজকে পঙ্গু করে দেয়, কিংবা কিভাবে সমাজের প্রগতিকে থামিয়ে দেয়। এর অজস্র উদাহরণ সাড়া পৃথিবী জুড়ে পাওয়া যাবে। কিছু প্রাচীণ সভ্যতার ইতিহাস থেকে জানা যায়, যখন কোন নতুন প্রাসাদ কিংবা ইমারত তৈরি করা হত, তার আগে সেই জায়গায় শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হত – এই ধারণা থেকে যে, এটি প্রাসদের ভিত্তি মজবুত করবে। অনেক আদিম সমাজেই বন্যা কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুমারী উৎসর্গ করার বিধান ছিল; কেউ কেউ সদ্যজন্মলাভ করা শিশুদের হত্যা করত, এমনকি খেয়েও ফেলত। কোন কোন সংস্কৃতিতে কোন বিখ্যাত মানুষ মারা গেলে অন্য মহিলা এবং পুরুষদেরও তার সাথে জীবন্ত কবর দেওয়া হত, যাতে তারা পরকালে গিয়ে পুরুষটির কাজে আসতে পারে। ফিজিতে ‘ভাকাতোকা’ নামে এক ধরনের বিভৎস রীতি প্রচলিত ছিল যেখানে একজনের হাত-পা কেটে ফেলে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সেই কর্তিত অংগগুলো খাওয়া হত। আফ্রিকার বহু জাতিতে হত্যার রীতি চালু আছে মৃত-পূর্বপুরুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্য। ভারতে সতীদাহের নামে হাজার হাজার মহিলাদের হত্যা করার কথা তো সবারই জানা। এগুলো সবই মানুষ করেছে ধর্মীয় রীতি-নীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, অদৃশ্য ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে গিয়ে। এধরনের ‘ধর্মীয় হত্যা’ সম্বন্ধে আরো বিস্তৃতভাবে জানবার জন্য ডেভিড নিগেলের ‘Human Sacrifice: In History And Today’ বইটি পড়া যেতে পারে[10]। এগুলো সবই সমাজে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামক প্যারাসাইটের চাষ ছাড়া আর কিছু নয়। ইতিহাসের পরতে পরতে অজস্র উদাহরণ লুকিয়ে আছে – কিভাবে বিশ্বাসের ভাইরাসগুলো আনবিক বোমার মতই মরণাস্ত্র হিসেবে কাজ করে লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ধর্মযুদ্ধগুলোই তো এর বাস্তব প্রমাণ। কিছু নমুনা দেখা যাক[11] –

* ইতিহাসের প্রথম ক্রুসেড সংগঠিত হয়েছিলো ১০৯৫ সালে। সে সময় ‘Deus Vult’ (ঈশ্বরের ইচ্ছা) ধ্বনি দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে জার্মানীর রাইন ভ্যালিতে হত্যা করা হয় এবং বাস্তুচ্যুত করা হয়। জেরুজালেমের প্রায় প্রতিটি অধিবাসীকে হত্যা করা হয় শহর ‘পবিত্র’ করার নামে।

* দ্বিতীয় ক্রুসেড পরিচালনার সময় সেন্ট বার্নার্ড ফতোয়া দেন, ‘প্যাগানদের হত্যার মাধ্যমেই খ্রীষ্টানদের গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব’।

* প্রাচীন আরবে ‘জামালের যুদ্ধে’ প্রায় দশ হাজার মুসলিম নিহত হয়েছিল, তাদের আপন জ্ঞাতিভাই- মুসলিমদের দ্বারাই। ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মুহম্মদ নিজেও বনি কুরাইজার ৭০০ বন্দিকে একসাথে হত্যা করেছিলেন বলে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে।

* বাইবেল থেকে (নাম্ব্বারস ৩১ : ১৬-১৮) জানা যায়, মুসা প্রায় এক লক্ষ লোক এবং আটষট্টি হাজার অসহায় রমনীকে হত্যা করেছিলেন।

* রামায়নে রাম তার তথাকথিত ‘রাম রাজ্যে’ শম্বুককে হত্যা করেছিলেন বেদ পাঠ করার অপরাধে।

* প্রাচীন মায়া সভ্যতায় নরবলি প্রথা প্রচলিত ছিলো। অদৃশ্য ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে মাথা কেটে ফেলে, হৃৎপিন্ড উপরে ফেলে, অন্ধকুপে ঠেলে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হত। ১৪৪৭ সালে গ্রেট পিরামিড অব টেনোখটিটলান তৈরির সময় চার দিনে প্রায় ৮০,৪০০ বন্দিকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা হয়েছিলো। শুধু মায়া সভ্যতাতে নয় – সারা পৃথিবীতেই এ ধরনের উদাহরণ আছে। পেরুতে প্রি-ইনকা উপজাতিরা ‘হাউজ অব দ্য মুন’ মন্দিরে শিশুদের হত্যা করতো। তিব্বতে বন শাহমানেরা ধর্মীয় রীতির কারনে মানুষ হত্যা করতো। বোর্নিওতে বাড়ির ইমারত বানানোর আগে প্রথম গাঁথুনিটা এক কুমারীর দেহ দিয়ে প্রবেশ করানো হত – ‘ভুমিদেবতা’কে তুষ্ট করার খাতিরে।

*প্রাচীন ভারতে দ্রাবিড়রা গ্রামের ঈশ্বরের নামে মানুষ উৎসর্গ করতো। কালিভক্তরা প্রতি শুক্রবারে শিশুবলি দিত।

* তৃতীয় ক্রুসেডে রিচার্ডের আদেশে তিন হাজার বন্দিকে – যাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী এবং শিশু – জবাই করে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় ক্রুসেডের সময় সেন্ট বার্ণাড ফতোয়া দিয়েছিলেন – ‘প্যাগানদের হত্যার মাধ্যমেই খ্রীষ্টানদের মাহাত্ম্য সূচিত হবে। আর যীশুখ্রীষ্ট নিজেও এতে মহিমান্বিত হবেন’।

* ইসমাইলী শিয়া মুসলিমদের একটি অংশ এক সময় লুকিয়ে ছাপিয়ে বিধর্মী প্রতিপক্ষদের হত্যা করতো। এগারো থেকে তের শতক পর্যন্ত আধুনিক ইরান, ইরাক এবং সিরিয়ায় বহু নেতা তাদের হাতে প্রাণ হারায়। শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের আরেক দস্যুদল মোঙ্গলদের হাতে তাদের উচ্ছেদ ঘটে – কিন্তু তাদের বিভৎস কীর্তি আজও অম্লান।

* কথিত আছে, এগারো শতকের শুরুর দিকে ইহুদীরা খ্রীষ্টান শিশুদের ধরে নিয়ে যেত, তারপর উৎসর্গ করে তাদের রক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতো। এই ‘রক্তের মহাকাব্য’ রচিত হয়েছে এমনি ধরণের শত সহস্র অমানবিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে।

* ১২০৯ সালে পোপ তৃতীয় ইনসেন্ট উত্তর ফ্রান্সের আলবীজেনসীয় খ্রিষ্টানদের উপর আক্ষরিক অর্থেই ক্রুসেড চালিয়েছিলেন। শহর দখল করার পর যখন সৈন্যরা উর্ধ্বতনদের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছিলো কিভাবে বন্দিদের মধ্যে থেকে বিশ্বাসী এবং অধার্মিকদের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে। পোপ তখন আদেশ দিয়েছিলেন – ‘সবাইকে হত্যা কর।’ পোপের আদেশে প্রায় বিশ হাজার বন্দিকে চোখ বন্ধ করে ঘোড়ার পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে ছ্যাচরাতে ছ্যাচরাতে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়।

* মুসলিমদের পবিত্র যুদ্ধ ‘জিহাদ’ উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে স্পেন পর্যন্ত রক্তাক্ত করে তোলে। তারপর এই জিহাদের মড়ক প্রবেশ করে ভারতে – আর তারপর চলে যায় বলকান (ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ান, অর্থডক্স সার্ব এবং মুসলিম বসনিয়ান এবং কসোভা) থেকে অস্ট্রিয়া পর্যন্ত।

* বার শতকের দিকে ইনকারা পেরুতে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, যে সাম্রাজ্যের পুরোধা ছিলেন একদল পুরোহিত। তারা ঈশ্বর কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ২০০ শিশুকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে।

* ১২১৫ সালের দিকে চতুর্থ ল্যাটেরিয়ান কাউন্সিল ঘোষণা করে তাদের বিস্কুটগুলো (host wafer) নাকি অলৌকিকভাবে যীশুর দেহে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। এর পর একটি গুজব রটিয়ে দেয়া হয় যে, ইহুদীরা নাকি সে সব পবিত্র বিস্কুট চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এই গুজবের উপর ভিত্তি করে ১২৪৩ সালের দিকে অসংখ্য ইহুদীদের জার্মানীতে হত্যা করা হয়। একটি রিপোর্টে দেখা যায় ছয় মাসে ১৪৬ জন ইহুদীকে হত্যা করা হয়েছিলো। এই ‘পবিত্র হত্যাযজ্ঞ’ চলতে থাকে প্রায় ১৮ শতক পর্যন্ত।

* বার শতকের দিকে সাড়া ইউরোপ জুড়ে আলবেজেনসীয় ধর্মদ্রোহীদের খুঁজে খুঁজে হত্যার রীতি চালু হয়। ধর্মদ্রোহীদের কখনো পুড়িয়ে, কখনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে কখনো বা শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। পোপ চতুর্থ ইনোসেন্ট এই সমস্ত হত্যায় প্রত্যক্ষ ইন্ধন জুগিয়েছিলেন। কথিত আছে ধর্মবিচরণ সভার সংবীক্ষক (Inquisitor) রবার্ট লী বোর্জে এক সপ্তাহে ১৮৩ জন ধর্মদ্রোহীকে হত্যার জন্য পাঠিয়েছিলেন।

* বহু লোক সে সময় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ধর্মত্যাগ করেন, কিন্তু সে সমস্ত ধর্মত্যাগীদের পুরোনো ধর্মের অবমাননার অজুহাতে হত্যার আদেশ দেয়া হয়। স্পেনে প্রায় ২০০০ ধর্মত্যাগীদের পুড়িয়ে মারা হয়। কেউ কেউ ধর্মত্যাগ না করলেও ধর্মের অবমাননার অজুহাতে পোড়ানো হয়। জিওর্দানো ব্রুনোর মত দার্শনিককে বাইবেল-বিরোধী কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব সমর্থন করার অপরাধে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয় সে সময়।

* ইতিহাস খ্যাত ‘ব্ল্যাক ডেথ’ যখন সাড়া ইউরোপে ১৩৪৮- ১৩৪৯ এ ছড়িয়ে পড়েছিলো, গুজব ছড়ানো হয়েছিল এই বলে যে, ইহুদীরা কুয়ার জল কিছু মিশিয়ে বিষাক্ত করে দেয়ায় এমনটি ঘটছে। বহু ইহুদীকে এ সময় সন্দেহের বশে জবাই করে হত্যা করা হয়। জার্মানীতে পোড়ানো দেহগুলোকে স্তুপ করে মদের বড় বড় বাক্সে ভরে ফেলা হয় এবং রাইন নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। উত্তর জার্মানীতে ইহুদীদের ছোট্ট কুঠুরীতে গাদাগাদি করে রাখা হয় যেন তারা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়, কখনোবা তাদের পিঠে চাবুক কষা হয়। থারিঞ্জিয়ার যুবরাজ জনসমক্ষে ঘোষণা করেন যে, তিনি তার ইহুদী ভৃত্যকে ঈশ্বরের নামে হত্যা করেছেন; অন্যদেরকেও তিনি একই কাজে উৎসাহিত করেন।

* তের শতকে এজটেক সভ্যতা যখন বিস্তার লাভ করেছিলো, নরবলি প্রথার বিভৎসতার তখন স্বর্ণযুগ। প্রতি বছর প্রায় বিশ হাজার লোককে ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করা হত। তাদের সূর্যদেবের নাকি দৈনিক ‘পুষ্টি’র জন্য মানব রক্তের খুব দরকার পড়তো। বন্দিদের কখনো শিরোচ্ছেদ করা হত, এমনকি কোন কোন অনুষ্ঠানে তাদের দেহ টুকরো টুকরো করে ভক্ষণ করা হত। কখনোবা পুড়িয়ে মারা হত, কিংবা উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দেয়া হত। বর্নিত আছে, তাদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এক অক্ষতযোনী কুমারীকে দিয়ে ২৪ ঘন্টা ধরে নাচানো হয়, তারপর তার গায়ের চামড়া তুলে ফেলে ফেলে পুরোহিত তা পরিধান করেন, তারপর আরো ২৪ ঘন্টা ধরে নাচতে থাকেন। রাজা আহুইতজোলের রাজাভিষেকে আশি হাজার বন্দিকে শিরোচ্ছেদ করে ঈশ্বরকে তুষ্ট করা হয়।

* ১৪০০ সালের দিকে ধর্মদ্রোহীদের থেকে চার্চের দৃষ্টি চলে যায় উইচক্রাফটের দিকে। চার্চের নির্দেশে হাজার হাজার রমনীকে ‘ডাইনী’ সাব্যস্ত করে পুড়িয়ে মারা শুরু হয়। এই ডাইনী পোড়ানো র রীতি এক ডজনেরও বেশি দেশে একেবারে গণহিস্টেরিয়ায় রূপ নেয়। সে সময় কতজনকে এরকম ডাইনী বানিয়ে পোড়ানো হয়েছে? সংখ্যাটা এক লক্ষ থেকে শুরু করে ২০ লক্ষ ছড়িয়ে যেতে পারে। ঠগ বাছতে গা উজাড়ের মতই ডাইনী বাছতে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয়া হয়েছে। সতের শতকের প্রথমার্ধে অ্যালজাস (Alsace) নামের ফরাসি প্রদেশে ৫০০০ ডাইনীকে হত্যা করা হয়, ব্যাম্বার্গের ব্যাভারিয়ান নগরীতে ৯০০ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। ডাইনী পোড়ানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ধর্মীয় উন্মত্ততা সে সময় অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ম্লান করে দেয়।

* সংখ্যালঘু প্রোটেস্টেন্ট হুগেনটস ১৫০০ সালের দিকে ফ্রান্সের ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের দ্বারা নির্মম নিপীড়নের শিকার হয়। ১৫৭২ সালে সেন্ট বার্থোলোমিও দিবসে ক্যাথেরিন দ্য মেদিসিস গোপনে তাদের ক্যাথলিক সৈন্য হুগেনটসের বসতিতে প্রেরণ করে আক্ষরিক অর্থেই তাদের কচুকাটা করে। প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে এই হত্যা যজ্ঞ চলতে থাকে আর এতে প্রাণ হারায় অন্ততঃ দশ হাজার হুগেনটস। হুগেনটসদের উপর সংখ্যাগুরু খ্রীষ্টানদের আক্রোস পরবর্তী দুই শতক ধরে অব্যাহত থাকে। ১৫৬৫ সালের দিকে একটি ঘটনায় হুগেনটসের একটি দল ফ্লোরিডা পালিয়ে যাবার সময় স্প্যানিস বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে – তাদের এলাকার সবাইকে ধরে ধরে হত্যা করা হয়।

* আবার ওদিকে পনর শতকে ভারতে কালিভক্ত কাপালিকের দল মা কালীকে তুষ্ট করতে গিয়ে অন্যদের শ্বাসরোধ আর জবাই করে হত্যা করত। এই কুৎসিৎ রীতির বলি হয়ে প্রাণ হারায় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। এখনও কিছু মন্দিরে বলি দেওয়ার রীতি চালু আছে – তবে আধুনিক রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনের গ্যাড়াকলে পড়ে ব্রাহ্মণ-পুরোহিতরা আর আগের মত মানুষকে বলি দিতে পারে না – সেই ঝাল ঝাড়া হয় নিরীহ পাঠার উপর দিয়ে। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েই আধুনিক যুগে এ ভাবে রক্তলোলুপ মা কালিকে তুষ্ট রাখা হয়।

* ১৫৮৩ সালে ভিয়েনায় ১৬ বছরের একটা মেয়ের পেট ব্যাথা শুরু হলে যীশুভক্তের দল তার উপর আট সপ্তাহ ধরে এক্সরসিজম বা ওঝাগিরি শুরু করে। এই যীশুভক্ত পাদ্রীর দল ঘোষণা করেন যে, তারা মেয়েটির দেহ থেকে ১২,৬৫২ টা শয়তান তাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। পাদ্রীর দল ঘোষণা করে যে, মেয়েটির দাদী কাঁচের জারে মাছির অবয়বে শয়তান পুষতেন। সেই শয়তানের কারনেই মেয়েটার পেটে ব্যাথা হত। দাদীকে ধরে নির্যাতন করতে করতে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় যে দাদী আসলে ডাইনী, শয়তানের সাথে নিয়মিত ‘সেক্স’ করেন তিনি। অতঃপর দাদীকে ডাইনী হিসেবে সাব্যস্ত করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। এটি তিন শতক ধরে ডাইনী পোড়ানোর নামে যে লক্ষ লক্ষ মহিলাকে পোড়ানো হয়েছিল, তার সামান্য একটি নমুনামাত্র।

* এনাব্যাপ্টিস্টরা এক সময় ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টেন্ট অথোরিটিদের দ্বারা স্রেফ কচুকাটা হয়েছিলেন। জার্মানির মুন্সটারে এনাব্যাপ্টিস্টরা এক সময় শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর ‘নতুন জিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করে ফেলে । ওদিকে আবার পাদ্রী মোল্লারা এনাব্যাপ্টিস্টদের বিরুদ্ধে সসস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলে এবং শহরেরে পতনের পর এনাব্যাপ্টিস্ট নেতাদের হত্যা করে চার্চের চূড়ায় লটকে রাখা হয়।

* প্রটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাকথলিকদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ১৬১৮ সালে শুরু হয়ে ত্রিশ বছর যাবৎ চলে। এ সময় পুরো মধ্য ইউরোপ পরিণত হয়েছিল বধ্য ভূমিতে। জাম্ম্রানীর জনসংখ্যা ১৮ মিলিয়ন থেকে ৪ মিলিয়নে নেমে আসে। আরেকটি হিসেব মতে, জনসংখ্যার প্রায় ত্রিশ ভাগ (এবং পুরুষদের পঞ্চাশ ভাগ) এ সময় নিহত হয়েছিলো।

* ইসলামের জিহাদের নামে গত বার শতক ধরে সাড়া পৃথিবীতে মিলিয়নের ওপর মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রথম বছরগুলোতে মুসলিম বাহিনী খুব দ্রুতগতিতে পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিম মরোক্ক পর্যন্ত আগ্রাসন চালায়। শুধু বিবর্মীদেরি হত্যা করেনি, নিজেদের মধ্যেও কোন্দল করে নানা দল উপদল তৈরি করেছিল। কারিজিরা যুদ্ধ শুরু করেছিলো সুন্নিদের বিরুদ্ধে। আজারিকিরা অন্য স্কল ‘পাপীদের’ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলো। ১৮০৪ সালে উসমান দান ফোডিও, সুদানের পবিত্র সত্ত্বা, গোবির সুলতানের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ শুরু করে। ১৮৫০ সালে আরেক সুদানীয় সুফি উমর-আল হজ্জ প্যাগান আফ্রিকান গোত্রের উপরে নৃশংস বর্বরতা চালায় – গনহত্যা এবং শিরোচ্ছেদ করে ৩০০ জন বন্দির উপর। ১৯৮০ সালে তৃতীয় সুদানীয় ‘হলি ম্যান’ মুহাম্মদ আহমেদ জিহাদ চালিয়ে ১০,০০০ মিশরীয় লোকজন হত্যা করে।

* ১৮০১ সালে রোমানিয়ার পাদ্রীরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে ১২৮ জন ইহুদীকে হত্যা করে।

* ভারতে ১৮১৫ থেকে ১৮২৮ সালের মধ্যে ৮১৩৫ নারীকে সতীদাহের নামে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় (প্রতিবছর হত্যা করা হয় গড়পরতা ৫০৭ থেকে ৫৬৭ জনকে)।

* ১৮৪৪ সালে পার্শিয়ায় বাহাই ধর্মপ্রচার শুরু হলে কট্টরপন্থি ইসলামিস্টরা এদের উপর চড়াও হয়। বাহাই ধর্মের প্রবর্তককে বন্দি এবং শেষপর্যন্ত হত্যা করা হয়। দুই বছরের মধ্যে সেখানকার মৌলবাদী সরকার ২০,০০০ বাহাইকে হত্যা করে। তেহেরানের রাস্তাঘাট আক্ষরিক অর্থেই রক্তের বন্যায় ভেসে যায়।

* বার্মায় ১৮৫০ সাল পর্যন্ত মানুষকে বলি দেয়ার রেওয়াজ ছিলো। যখন রাজধানী মান্দালায় সরিয়ে নেয়া হয়, তখন নগর রক্ষা করার জন্য ৫৬ জন ‘নিষ্কলুষ’ লোককে প্রাচীরের নীচে পুতে ফেলা হয়। রাজ জ্যোতিষীরা ফতোয়া দেয় যে নগর বাঁচাতে হলে আরো ৫০০ জন নারী, পুরুষ এবং শিশুকে বলি দিতে হবে। সেই ফতোয়া অনুযায়ী বলি দেয়া শুরু হয় এবং ১০০ জনকে বলি দেয়ার পর ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপে সেই বলিপ্রথা রদ করা হয়।

* ১৮৫৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে এনফিল্ড রাইফেলের কার্ট্রিজ, যেটাতে শুয়োর আর গরুর চর্বি লাগানো ছিলো বলে গুজব রটানো হয়, তাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা শুরু হয় এবং নির্বিচারে বহু লোককে হত্যা করা হয়।

* ১৯০০ সালে তুর্কী মুসলিমেরা খ্রীষ্টান আর্মেনিয়ানদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।

* ১৯২০ সালে ক্রিস্টেরো যুদ্ধে ৯০ হাজার মেক্সিকান মৃত্যুবরণ করে।

* ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগকে কেন্দ্র করে দাঙ্গায় প্রায় ১ মিলিয়ন লোক মারা যায়। এমনকি ‘মহাত্মা’ গান্ধীও দাঙ্গা রোধ করতে সফল হননি, এবং তাকেও অঘোরে হিন্দু ফ্যানাটিক নথুরাম গডসের হাতে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

* ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে খ্রীস্টান,এনিমিস্ট এবং মুসলিমদের মধ্যে পারষ্পরিক দ্বন্দ্বে ৫০০,০০০ লোক মারা যায়।

* ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানীরা পুর্বপাকিস্তানের বাঙ্গালীদের উপর গণহত্যা চালায়, নয় মাসে তারা প্রায় ৩ মিলিয়ন লোককে হত্যা করে, ধর্ষণ করে ২ লক্ষ নারীকে। যদিও এই যুদ্ধের পেছনে মদদ ছিলো রাজোনৈতিক, তারপরেও ধর্মীয় ব্যাপারটিও উপেক্ষনীয় নয়। পশ্চিমপাকিস্তানীদের বরাবরই অভিযোগ ছিলো যে, পূর্ব পকাস্তানীরা ‘ভাল মুসলমান’ নয়, এবং তারা ভারতের দালাল।

* ১৯৭৮ সালে গায়ানার জোন্সটাউনে রেভারেণ্ড জিম জোন্স সেখানে ভ্রমণরত কংগ্রেসম্যান এবং তিনজন সাংবাদিককে হত্যার পর ৯০০ জনকে নিয়ে আত্মহত্যা করে, যা সারা পৃথিবীকে স্তম্ভিত করে দেয়।

* ইসলামী আইন মোতাবেক চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কেটে ফেলার রেওয়াজ প্রচলিত আছে। সুদানে ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে প্রায় ৬৬ জনকে ধরে প্রকাশ্যে হাত কেটে ফেলা হয়। মডারেট মুসলিম নেতা মোহাম্মদ তাহাকে ফাঁসিতে লটকে মেরা ফেলা হয় -কারণ তিনি হাত কেটে ফেলার মত বর্বরতার প্রতিবাদ করেছিলেন।

* সৌদি আরবে ১৯৭৭ সালে কিশোরী প্রিন্সেস এবং তার প্রেমিককে ‘ব্যাভিচারের’ অপরাধে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানে ১৯৮৭ সালে এক কাঠুরিয়ার মেয়েকে ‘জেনা’ করার অপরাধে পাথর ছুড়ে হত্যার ফতোয়া দেয়া হয়। ১৯৮৪ সালে আরব আমীরাতে একটি বাড়ির গৃহভৃত্য এবং দাসীকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার ফতোয়া দেয়া হয়, অবৈধ মেলামেশার অপরাধে।

* নাইজেরিয়ায় ১৯৮২ সালে মাল্লাম মারোয়ার ফ্যানাটিক অনুসারীরা প্রতিপক্ষের শতাধিক লোকজনকে ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে হত্যা করে, আর তাদের রক্তপান করে।

* ১৯৮৩ সালে উত্তর আয়ারল্যাণ্ডে ক্যাথোলিক সন্ত্রাসীরা প্রোটেস্টেন্ট চার্চে ঢুকে গোলাগুলি করে প্রোটেস্টেন্ট অনুসারীদের হত্যা করে। দাঙ্গায় প্রায় ২৬০০ লোক মারা যায়।

* হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ভারতে নিত্য নৈমন্তিক ব্যাপার। ১৯৮৩ সালে আসামে এরকম একটি দাঙ্গায় ৩,০০০ জন মানুষ মারা যায়। ১৯৮৪ সালে এক হিন্দু নেতার ছবিতে কোন এক মুসলিম জুতার মালা পরিয়ে দিলে এ নিয়ে পুনরায় দাঙ্গা শুরু হয়, সেই দাঙ্গায় ২১৬ জন মারা যায়, ৭৫৬ জন আহত হয়, আর ১৩,০০০ উদ্বাস্তু হয়। কারাবন্দী হয় ৪১০০ জন।

* লেবাননে ১৯৭৫ সালের পর থেকে সুইসাইড বোম্বিং সহ নানা সন্ত্রাসবাদী ঘটনায় ১৩০,০০০ জন লোক মারা গেছে।

* ইরানের মৌলবাদী শিয়া সরকার ঘোষণা করে যে সমস্ত বাহাই ধর্মান্তরিত না হবে, তাদের হত্যা করা হবে। ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে প্রায় ২০০ জন ‘গোঁয়ার’ বাহাইকে হত্য করা হয়, প্রায় ৪০,০০০ বাহাই দেশ ছেড়ে পালায়।

* শ্রীলঙ্কা বিগত শতকের আশি আর নব্বইয়ের দশকে বৌদ্ধ সিংহলী আর হিন্দু তামিলদের লড়াইয়ে আক্ষরিক অর্থেই নরকে পরিণত হয়।

* ১৯৮৩ সালে জেরুজালেমের ধর্মীয় নেতা মুফতি শেখ সাদ ই-দীন এল আলামী ফতোয়া দেন এই বলে যে, কেউ যদি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আজাদকে হত্যা করতে পারে, তবে তার বেহেস্ত নিশ্চিত।

* ভারতে আশির দশকে শিখ জনগোষ্ঠি নিজেদের জন্য পাঞ্জাব এলাকায় আলাদা ধর্মীয় রাজ্য ‘খালিস্তান’ (Land of the Pure) তৈরির পায়তারা করে আর এর নেতৃত্ব দেয় শিখ চরমপন্থি নেতা জারনাইন ভিন্দ্রানওয়ালা, যিনি তার অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন যে, প্রতিপক্ষকে ‘নরকে পাঠানো’ তাদের পবিত্র দায়িত্ব। চোরাগোপ্তাভাবে পুরো আশির দশক জুড়েই বহু হিন্দুকে হত্যা করা হয়।

* ১৯৮৪ সালে শিখ দেহরক্ষীদের হাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হলে সাড়া ভারত জুড়ে শিখদের উপর বীভৎস তাণ্ডবলীলা চালানো হয়।তিন দিনের মধ্যে ৫০০০ শিখকে হত্যা করা হয়। শিখদের বাসা থেকে উঠিয়ে, বাস থেকে নামিয়ে, দকান থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়, কখনো জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়।

*  ১৯৮৯ সালে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ নামের উপন্যাস লেখার দায়ে সালমান রুশদিকে ফতোয়া দেয়া হয় ইরাণের ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেনীর পক্ষ থেকে। বইটি না পড়েই মুসলিম বিশ্বে রাতারাতি শুরু হয় জ্বালাও পোড়াও তাণ্ডব। ইসলামকে অবমাননা করে লেখার দায়ে এর আগেও মনসুর আল হাল্লাজ, আলী দাস্তি, আজিজ নেসিন, উইলিয়াম নেগার্ড, নাগিব মাহফুজ,তসলিমা নাসরিণ,ইউনুস শায়িখ, রবার্ট হুসেইন, হুমায়ুন আজাদ, আয়ান আরসি আলী সহ অনেকেই মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছেন। এদের মধ্যে অনেককেই মেরে ফেলা হয়েছে, কেউ বা হয়েছেন পলাতক।

* ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর রামজন্মভূমি মিথকে কেন্দ্র করে হিন্দু উগ্রপন্থিরা শত বছরের পুরোন বাবড়ি মসজিদ ধ্বংস করে। এর ফলশ্রুতিতে দাঙ্গায় ২০০০ মানুষ মারা যায়, এর প্রভাব পড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও।

*  ১৯৯৭ সালে  আমেরিকার ক্যালিফোর্ণিয়ায় স্বর্গের দ্বার (Heaven’s Gate) নামে এক ‘ইউএফও’ ধর্মীয় সংগঠনের ৩৯ জন সদস্য একযোগে আত্মহত্যা করে, জীবনের ‘পরবর্তী’ স্তরে যাবার লক্ষ্যে।

* বাংলাদেশে ১৯৪১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিলো শতকরা ২৮ ভাগ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরে তা শতকরা ২২ ভাগে এসে দাঁড়ায়। এরপর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার এবং নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ক্রমশঃ হিন্দুদের সংখ্যা কমতে থাকে। ১৯৬১ সালে ১৮.৫% , ১৯৭৪ সালে কমে দাঁড়ায় ১৩.৫%, ১৯৮১ সালে ১২.১%, এবং ১৯৯১ সালে ১০% এ এসে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে হিন্দুদের শতকরা হার কমে ৮ ভগের নীচে নেমে এসেছে বলে অনুমিত হয়।

* ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারের উপর আল কায়দা আত্মঘাতী বিমান হামলা চালায়, এই হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বসে পড়ে, মারা যায় ৩০০০ আমেরিকান নাগরিক।

* ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে দাঙ্গায় ২০০০ মানুষ মারা যায়, উদ্বাস্তু হয় প্রায় ১৫০,০০০ মানুষ । নারী নির্যাতন প্রকট আকার ধারণ করে। বহু মুসলিম কিশোরী এবং নারীকে উপর্যুপরি ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।

* ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বেছে বেছে হিন্দুবাড়ীগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়। পূর্ণিমা রানীর মত বহু কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার প্রথম ৯২ দিনের মধ্যে ২২৮টি ধর্ষণের ঘটনা, এবং পরবর্তী তিনমাসে প্রায় ১০০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ ছিলো হিন্দু কিংবা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত।

* বিএনপি জামাত কোয়ালিয়েশন সরকারের সময় বাংলা ভাই এর নেতৃত্বে জাগ্রত মুসলিম জনতার (জ়ে এম. জ়ে) উত্থান ঘটে। তারা পুলিশের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। একটি ঘটনায় একজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে গাছের সাথে উলটো করে বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ‘বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি’ বলে মিথ্যা প্রচারনা চালানো হয়।

* ২০০৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রথাভাঙ্গা লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা চালায় মৌলবাদী জ়েএম.বি। চাপাতি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলা হয় তার দেহ, যা পরে তাকে প্রলম্বিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

* ২০০৪ সালের ২রা নভেম্বর চিত্র পরিচালক থিও ভ্যান গগকে প্রকাশ্যে রাস্তায় গুলি এবং ছুরিকাহত করে হত্যা করে মুসলিম সন্ত্রাসী মোহাম্মদ বোয়েরি। সাবমিশন নামের দশ মিনিটের একটি ‘ইসলাম বিরোধী’ চলচিত্র বানানোর দায়ে তাকে নেদারল্যান্ডসের রাস্তায় প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একই ছবির সাথে জড়িত থাকার কারণে নারীবাদী লেখিকা আয়ান হারসি আলীকেও মৃত্যু পরোয়ানা দেয়া হয়।

* বাংলাদেশে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সামান্য ‘মোহাম্মদ বিড়াল’ নিয়ে কৌতুকের জের হিসেবে ২১ বছর বয়সী কার্টুনিস্ট আরিফকে জেলে ঢোকানো হয়, বায়তুল মোকারমের খতিবের কাছে গিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকের ক্ষমা প্রার্থনার নাটক প্রদর্শিত হয়।

ইত্যাদি। বলা নিষ্প্রয়োজন, উপরের লিস্টিটি কেবল বিগত শতকের কতিপয় বিশ্বাসের ভাইরাস সংক্রান্ত সহিংসতা আর নিপীড়ণের আলোকচ্ছটামাত্র, সিন্ধুর বুকে বিন্দুসম। ধর্মীয় সহিংসতার পুরো ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে গেলে তা নিঃসন্দেহে মহাভারতকেও ছাড়িয়ে যাবে।

বিশ্বাস এবং লো- আইকিউ

বহুদিন ধরেই এ ব্যাপারটা প্রচলিত যে, অবিশ্বাসীরা সাধারণতঃ বিশ্বাসীদের চেয়ে অধিকতর বুদ্ধিদীপ্ত এবং ‘স্মার্ট’ হয়ে থাকে। বাংলা ব্লগগুলোতে কেউ বিশ্বাসের সাফাই গাওয়া ‘তালগাছ মার্কা’ নিম্নমানের প্রবন্ধ লিখলে অবধারিত ভাবে ‘ছাগু’ খেতাব প্রাপ্ত হন, এবং তাকে ‘কাঁঠাল পাতা’ চিবানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এগুলো আমরা চোখের সামনেই দেখি। কিন্তু সেটার স্বপক্ষে কোন কারণ বা ব্যাখ্যা ছিলো না। সম্প্রতি বিভিন্ন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীদের চালান কিছু জরিপে চাঞ্চল্যকর কিছু ফলাফল এবং ব্যাখ্যা উঠে এসেছে। লণ্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী সাতোসি কানাজাওয়ার চালানো সাম্প্রতিক গবেষণা (Social Psychology Quarterly, Vol. 73, No. 1, 33–57 ) থেকে জানা গেছে নাস্তিক (Atheist) এবং উদারপন্থিরা (liberal) সাধারণতঃ ধার্মিক (theist) এবং রক্ষণশীলদের (conservative) চেয়ে অনেকবেশী বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকে। সোশাল সাইকোলজি কোয়ার্টারলি জার্নালে ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘Why Liberals and Atheists Are More Intelligent’ শীর্ষক গবেষনাপত্রে অধ্যাপক কানাজাওয়া দেখিয়েছেন যে, ধার্মিক হিসেবে দাবীদার ব্যক্তিদের চেয়ে নাস্তিকদের আইকিউ গড়পরতা অন্ততঃ ৬ পয়েন্ট বেশি থাকে, আর রক্ষণশীল গ্রুপের চেয়ে উদারপন্থি বা প্রগতিশীল গ্রুপের আইকিউ বেশি থাকে অন্ততঃ ১২ পয়েন্ট[12]।

religiosity_vs_atheism_iq

চিত্রঃ ধার্মিকতার প্রকোপ যত বাড়ে পাল্লা দিয়ে কমে আইকিউ। যেমন চরম নাস্তিকদের গড়পরতা আইকিউ পাওয়া গেছে ১০৩.০৯। আর চরম ধার্মিকদের আইকিউ ৯৭.১৪। কাজেই নাস্তিক হিসেবে দাবীদার ব্যক্তিদের চেয়ে আস্তিকদের আইকিউ গড়পরতা অন্ততঃ ৬ পয়েন্ট কম থাকে।

liberalism_conservative_iq

চিত্রঃ রক্ষণশীল গ্রুপের চেয়ে উদারপন্থি বা প্রগতিশীল গ্রুপের আইকিউ অন্ততঃ ১২ পয়েন্ট বেশি থাকে।

ব্যাপারটি অধ্যাপক কানাজাওয়া বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করেছেন তার প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এবং ব্লগে [13],[14]। তিনি তার ব্যাখ্যা বলেছেন, বিশ্বাস ব্যাপারটা একসময় টিকে থাকার ক্ষেত্রে বড় সড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিলো, সে জন্য যে কোন সংস্কৃতিতেই ধর্ম এবং বিশ্বাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, এবং যে কোন সমাজেই ধার্মিকদের সংখ্যাও নাস্তিকদের চেয়ে সাধারণতঃ বেশি (যদিও নাস্তিকদের সংখ্যা আধুনিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান)। আর আদিম ট্রাইবগুলোতে খুঁজলে দেখা যাবে সেখানে যাদু টোনা থেকে শুরু করে নরবলি, কুমারী নিধন সহ হাজারো অপবিশ্বাসের সমাহার। সে দিক থেকে চিন্তা করলে নাস্তিকতা, যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমস্কতা, লিবারেলিজম প্রভৃতি উপাদানগুলো বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে মানব সমাজের জন্য অপেক্ষাকৃত নতুন সংযোজন (evolutionarily novel phenomenon)। এবং যাদের মস্তিস্ক এই নতুন নতুন পরিবর্তনগুলো ধারণ করার জন্য বেশী নমনীয়, তারাই বুদ্ধিদীপ্ত হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। সেজন্যই নাস্তিকেরা যে কোন সমাজেই আস্তিকদের থেকে বেশি স্মার্ট হিসেবে আবির্ভুত হয়, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ‘সাভানা অনুকল্প’ অনুযায়ী এটা ঘটে বলে গবেষনাপত্রে দাবী করা হয়েছে। সেজন্যই একজন বিশ্বাসী সারা প্যালিন কিংবা অধুনা ‘উইচ’ হিসেবে খ্যাত ক্রিস্টিন ওডেনেলের চেয়ে বৌদ্ধিক মননে একজন রিচার্ড ডকিন্স কিংবা একজন বিল মার অনেক এগিয়ে থাকেন আজকের দুনিয়ায়।

palin_dawkins

maher_odonnell

চিত্রঃ একজন প্রথাগত রক্ষণশীল বিশ্বাসীর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকেন একজন সচেতন লিবারাল নাস্তিক – বৌদ্ধিক মনন, যুক্তি, বাস্তবতা এবং স্মার্টনেসে।

লেখাটা লিখতে গিয়ে একটা মজার বিষয় মনে পড়লো। আমেরিকার প্রচন্ড রক্ষণশীল ফক্স চ্যানেলের নিউজ হোস্ট শন হ্যানিটি আর বিল ও রাইলি প্রতিদিনই মার্কিন জনগণকে মনে করিয়ে দেন যে কিভাবে ‘লিবারেল মিডিয়া’ সবকিছু অধিকার করে মগজ ধোলাই করছে! কথাটা যে খুব বেশি মিথ্যা তা অবশ্য নয়। হলিউড সিনেমা থেকে শুরু করে (ফক্স বাদে) প্রায় প্রতিটি নিউজ চ্যানেলই মোটামোটি লিবারেলদের দখলে বলা যায়। পাশাপাশি শো বিজনেস, ক্রিয়েটিভ রাইটিং, এক্টিভিজম থেকে শুরু করে একাডেমিয়াও মোটামুটি লিবারেলরাই রাজত্ব করছে। আসলে এর কারণ খুব সহজ। মিডিয়া লিবারেলদের হাতে চলে যাচ্ছে কারণ তারা রক্ষণশীলদের চেয়ে তারা বেশি বুদ্ধিমান, চৌকষ, বুদ্ধিদীপ্ত এবং অধিকতর বেশি উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। বাংলাদেশেও কবি সাহিত্যিক সহ যারা শিল্পকলা এবং সংস্কৃতির সাথে জড়িত থাকেন তাদের মধ্যে উদারপন্থি লোকের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে, এবং তাদের মধ্যেই অবিশ্বাসী মুরতাদদের সংখ্যা বেশি পাওয়া যায়।

অবিশ্বাসীরা স্মার্ট শুধু নয়, গবেষণায় দেখা গেছে নৈতিক দিক দিয়েও অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের চেয়ে অনেক অগ্রগামী। নাস্তিক এবং প্রগতিশীল পরিবারে শিশু নির্যাতন কম হয়, তারা নারী নির্যাতন কম করে থাকে, তাদের পরিবারে বিবাহ বিচ্ছেদের হার কম, তারা একগামী সম্পর্কে আস্থাশীল থাকে, তারা পরিবেশ সচেতন থাকে ধার্মিকদের চেয়ে ঢের বেশি। সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিষ্ণুতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি সচেতনতাও বিশ্বাসীদের তুলনায় নাস্তিকদের মধ্যে অনেক বেশি[15]। এর কারণ, অবিশ্বাসীরা সাধারণতঃ বৈজ্ঞানিক যুক্তি, মানবতা এবং বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বিষয়গুলো বিবেচনা করেন, কোন অন্ধবিশ্বাসের বলে নয়।

বিশ্বাস ও দারিদ্র্য

বিশ্বাস শুধু মানসিক ভাবেই ব্যক্তিকে পঙ্গু এবং ভাইরাস আক্রান্ত করে ফেলে না, পাশাপাশি এর সার্বিক প্রভাব পড়ে একটি দেশের অর্থনীতিতেও। সাম্প্রতিক বহু গবেষণায়ই বেরিয়ে এসেছে যে দারিদ্রের সাথে ধর্মবিশ্বাসের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে। সম্প্রতি প্রকাশিত (অগাস্ট, ২০১০) গ্যালোপ জরিপ থেকে দেখা গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে হতদরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেই ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাব সর্বাধিক[16]। আপনার বিশ্বাস প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় কোন প্রভাব ফেলে কিনা, এর ভিত্তিতে ২০০৯ সালে যে জরিপ চালানো হয়, তাতে দেখা যায় পৃথিবীর সর্বাধিক দারিদ্রকিষ্ট দেশগুলো থেকেই ‘হ্যা বাচক’ উত্তর উঠে এসেছে। আর তালিকাতে প্রথমেই আছে বাংলাদেশের নাম।

galop_study_welth_vs_religiosity

চিত্র: গ্যালোপ জরিপ থেকে দেখা গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে হতদরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেই ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাব সর্বাধিক

সম্প্রতি উপরের এই গ্যালোপ জরিপের উপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বিশ্লেষণমূলক একটি সম্পাদকীয় প্রাকশিত হয়েছে[17]। কলামিস্ট চার্লস ব্লো সম্পাদকীয়টিতে বলেন,

একশতটি দেশের মধ্যে ২০০৯ সালে গ্যালোপ জরিপ চালানো হয়েছে এবং দেখা গেছে দারিদ্রের সাথে ধর্মবিশ্বাসের একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে। ধনী দেশগুলো কম ধর্মপ্রবণ, আর দরিদ্র দেশগুলোতেই ধর্মান্মোদনা বেশি দৃশ্যমান’।

নিউইয়র্ক টাইমসের উক্ত প্রবন্ধটিতে চমৎকার একটি গ্রাফও সংযুক্ত হয়েছে, যেটি নিজেই দারিদ্র্যের সাথে ধর্মবিশ্বাসের সম্বন্ধকে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট –

new_york_times_wealt_vs_religiusity

চিত্রঃ গ্যালোপ জরিপের উপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বিশ্লেষণমূলক একটি সম্পাদকীয় প্রাকশিত হয়েছিলো। গ্রাফটি সেই প্রবন্ধ হতে সংগৃহিত।

উপরে গ্রাফের গড়পরতা পয়েন্টগুলোর ট্রেণ্ড বিশ্লেষণে আনা যেতে পারে। যদি কেউ কোন দেশের ধর্মীয় প্রভাব এবং পার ক্যাপিটা গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্টের প্লট একটি বক্ররেখার মাধ্যমে তুলে ধরেন তবে রেখচিত্রটি দাঁড়াবে অনেকটা এরকম –

wealthvsreliogisity

চিত্রঃ দেশের ধর্মীয় প্রভাব বনাম পার ক্যাপিটা জিডিপির প্লট করলে দেখা যায় প্রায় সব দেশের ক্ষেত্রেই দেখা যায় ধর্মীয় প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক প্রাচুর্য কমছে।

এই গ্রাফটি নিয়ে আমরা মুক্তমনা ব্লগে আগেও অনেক আলোচনা করেছিলাম। এটি অধ্যাপক ভিক্টর স্টেঙ্গরের ‘নিউ এথিজম’ বইয়ে আছে। ইন্টারনেটেও অনেক সাইটে গ্রাফটি পাওয়া যাবে[18]।

গ্রাফটি লক্ষ্য করলেই পাঠকেরা দেখবেন যে, আমেরিকা এবং কুয়েতের মত দু’ একটি দেশ ছাড়া বাকী সব কমবেশী দেশই এই গ্রাফের কোরিলেশন সর্মথন করে। আমেরিকা অন্যতম স্বচ্ছল দেশ (গড়পরতা জিডিপি $৪৬,০০০) হওয়া সত্ত্বেও ধর্মের প্রভাব বেশি। ধনসম্পদে শীর্ষস্থানীয় দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশটির ধর্মীয় প্রভাবের পরিমাপ দারিদ্রক্লিষ্ট মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা কিংবা চিলির সারিতে রয়ে গেছে। কেন এই ব্যতিক্রম তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। একটি কারণ তো অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদী চেতনার বিকাশ। একটি দেশ যখন ক্ষমতার শীর্ষে উঠে যায়, সামরিকভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠে, তখন আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যগুলো হারাতে থাকে। গ্রীক এবং রোমান সভ্যতার শেষদিকেও একই ব্যাপার ঘটেছিলো। এর বাইরে, আরেকটি বড় কারণ, আমেরিকার পুঁজিবাদ ধর্ম জিনিসটাকেও আভ্যন্তরীণভাবে ‘ব্যবসা’র পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছে। এখানে চার্চকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়, তা আসলে ধর্মীয় পরিবৃত্তির বাইরে গিয়েও সাধারন জনগনকে আকৃষ্ট করে। সধারাণ বসন্ত উৎসব (ফল ফেস্টিভাল) থেকে শুরু করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ক্লাসিকাল পিয়ানো বাজনার বেশিরভাগই এখানে চার্চকেন্দ্রিক। এই ‘আমেরিকান এনোমালি’ আর অস্বাভাবিক উপায়ে অর্জিত তেল চুকচুকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের কথা বাদ দিলে ধর্ম এবং দারিদ্র্যের একটা স্পষ্ট সম্পর্কই পাওয়া যায়। নবায়নযোগ্য শক্তির বিকাশ এবং এ সংক্রান্ত প্রযুক্তির উত্থানের ফলে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে তেলের দাম পড়ে গেলে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও এভাবে ব্যতিক্রম হিসেবে থাকবে না বলাই বাহুল্য। এই দু একটি এনোমালি তথা ‘অস্বাভাবিকতা’ বাদ দিলে গ্রাফ থেকে ধর্ম এবং দারিদ্র্যের একটা স্পষ্ট সম্পর্কই কিন্তু পাওয়া যায়। গ্রাফ দেখলে যে কেউ বুঝবে – যে দেশে ধর্মীয় প্রভাব যত বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য, আর ধর্মীয় প্রভাব যেখানে কম মানুষের স্বচ্ছলতাও বেশী। ব্যাপার কী?

ব্যাপার তো সাদা চোখেই বোঝা যাবার কথা। যে সমস্ত দেশ যত দারিদ্রক্লিষ্ট, সে সব দেশেই ধর্ম নিয়ে বেশি নাচানাচি হয়, আর শাসকেরাও সে সব দেশে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। সেজন্যই দারিদ্র্যক্লিষ্ট তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ধর্ম খুব বড় একটা নিয়মক হয়ে কাজ করে সবসময়েই। কিংবা ব্যাপারটা উল্টোভাবেও দেখা যেতে পারে – ধর্মকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেয়া, কিংবা লম্ফ ঝম্ফ করা, কিংবা জাগতিক বিষয় আশয়ের চেয়ে ধর্মকে মাত্রাতিরিক্ত বেশি গুরুত্ব দেয়ার কারণেই সে সমস্ত দেশগুলো প্রযুক্তি, জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে, এবং সর্বোপরি দরিদ্র। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সরকার মোল্লাদের তোয়াজে রাখতে ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছিলো। যে দেশ জাগতিক বিষয় আশয়ের চেয়ে ঠুনকো বিশ্বাস নিয়েই মত্ত থাকে, সে দেশ অর্থ বৈভব জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত হয়ে যাবে – এটা কি আশা করা যায়? ধর্মের রশি আমাদের পেছনে টেনে রেখেছে অনেকটাই।বিশ্বাসের ভাইরাসের এর চেয়ে বড় কুফল আর কী হতে পারে!

বিশ্বাসে মিলায় দারিদ্র্য, আর অবিশ্বাসে বহুদূর!

তথ্যসূত্র

[1] Richard Dawkins, Viruses of the Mind, available online: http://cscs.umich.edu/~crshalizi/Dawkins/viruses-of-the-mind.html

[2] Daniel C. Dennett, Breaking the Spell: Religion as a Natural Phenomenon, Penguin, 2007

[3] Darrel W. Ray, The God Virus: How religion infects our lives and culture, IPC Press, 2009

[4] Richard Brodie, Virus of the Mind: The New Science of the Meme, Hay House; Reprint edition, 2009

[5] Richard Dawkins, The Selfish Gene, Oxford University Press, 1976

[6] Richard Dawkins, The God Delusion, Houghton Mifflin Harcourt, 2006

[7] Shaoni Bhattacharya, Parasites brainwash grasshoppers into death dive, New Scientists, August 2005

[8] Daniel C. Dennett, Breaking the Spell: Religion as a Natural Phenomenon, Penguin , 2007

[9] Bruce Lincoln, Holy Terrors: Thinking about Religion after September 11, University Of Chicago Press; 1 edition, 2003

[10] Nigel Davies, Human Sacrifice–In History and Today, William Morrow & Co; 1981

[11] বেশ কিছু উদাহরণ নেয়া হয়েছে Holy Horrors: An Illustrated History of Religious Murder and Madness, James A. Haught, Prometheus Books, 1990 থেকে, সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং মুক্তমনা সাইট থেকে।

[12] Satoshi Kanazawa, Why Liberals And Atheists Are More Intelligent, Social Psychology Quarterly, Vol. 73, No. 1, 33–57

[13] Satoshi Kanazawa, Why Liberals Are More Intelligent Than Conservatives, Psychology Today, March 21, 2010

[14] Satoshi Kanazawa, Why Atheists Are More Intelligent than the Religious, Psychology Today, April 11, 2010

[15] আমেরিকায় বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গিয়েছে নাস্তিকদের চাইতে পুনরুজ্জীবিত খ্রীষ্টানদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার বেশী (Barna Research Group, 1999 study দ্রঃ); এও দেখা গিয়েছে যে, যে পরিবারের পরিবেশ ধর্মীয়গতভাবে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল সে সমস্ত পরিবারেই বরং শিশুদের উপর পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের দ্বারা বেশী যৌণ নিপীড়ন হয় । ১৯৩৪ সালে আব্রাহাম ফ্রান্সব্লাউ তার গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন ধার্মিকতা এবং সততার মধ্যে বরং বৈরী সম্পর্কই বিদ্যমান। ১৯৫০ সালে মুরে রসের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, ধার্মিকদের তুলনায় নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীরাই বরং সমাজ এবং মানুষের প্রতি সংবেদনশীল থাকেন, তাদের উন্নয়নের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি ১৯৮৮ সালে ভারতের জেলখানায় দাগী আসামীদের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপের যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল, তা ছিল অবাক করার মত। দেখা গিয়েছে, আসামীদের শতকরা ১০০ জনই ঈশ্বর এবং কোন না কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসী । আমেরিকায়ও এরকম একটি জরিপ চালানো হয়েছিল ৫ ই মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে। সে জরিপে দেখা গেছে যে আমেরিকার জনসাধারণের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ (৮-১০%) ধর্মহীন হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কম (মাত্র ০.২১%), সে তুলনায় ধার্মিকদের মধ্যে শতকরা হিসেবে অপরাধপ্রবণতা অনেক বেশী । এ সংক্রান্ত বেশ কিছু পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে মাইকেল শারমারের The Science of Good and Evil: Why People Cheat, Gossip, Care, Share, and Follow the Golden Rule (Times Books; 1st edition (February 2, 2004) গ্রন্থে।

[16] Religiosity Highest in World’s Poorest Nations, Gallup’s global reports, August 31, 2010।

[17] Charles M. Blow, Religious Outlier, The Newyork Times, Published: September 3, 2010 [18] World Publics Welcome Global Trade — But Not Immigration, Summary of Findings, http://pewglobal.org/2007/10/04/world-publics-welcome-global-trade-but-not-immigration/

বি.দ্রঃ লেখাটির কিছু অংশে রায়হান আবীরের গুরুত্বপুর্ণ কিছু ইনপুট আছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।