বাংলাদেশে একটা অদ্ভুত নিয়ম আছে। তা হলো কোন চাকরিতে দরখাস্ত করতে হলে প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তার প্রত্যয়ন কৃত চরিত্র সনদ পত্র দরখাস্তের সাথে জমা দেয়া। এখন প্রশ্ন হলো- আবেদনকারীকে কিসের ভিত্তিতে একজন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা চরিত্র সনদ পত্র দিতে পারে? সে কি আবেদন কারীকে চেনে ? জানে ? পরিচিত ? কোন কিছুই না । এভাবে সে একজন চোর ডাকাত খুনী যে কাউকেই অর্থের বিনিময়ে একটা চরিত্র সনদ পত্র দিতে পারে যাতে লেখা থাকবে- লোকটি আমার পরিচিত ও আমার জানা মতে তার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র। এর চাইতে হাস্যকর নিয়ম তামাম দুনিয়ায় আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। সবচাইতে বড় কথা হলো- যে অফিসারটি চরিত্র সনদ পত্র দিচ্ছে, তার চরিত্র কেমন ? সে কি ঘুষখোর , দুর্নীতিবাজ? যদি সে দুর্নীতি বাজ হয় মানে নিজের চরিত্র খারাপ হয় সে অন্যকে চরিত্র সনদ পত্র দেয় কিভাবে ? একজন দুর্নীতি বাজ অফিসার অন্য একজন ক্রিমিনালকে ভাল একটা চরিত্র সনদপত্র দিলেই কি ক্রিমিনালটির চরিত্র ভাল হয়ে গেল ? বিষয়টি অনেকটা শুড়ির সাক্ষী মাতালের মত। তার চাইতে গুরুত্ব পূর্ন প্রশ্ন- ভাল চরিত্রের সংজ্ঞা কি ?অত্যন্ত হাস্যকর হলেও নিয়মটি বহাল তবিয়তে বাংলাদেশে বিরাজমান। আরও একটা নিয়ম বিদ্যমান তা হলো- যে কোন চাকুরীর দরখাস্তের সময় বা কোথাও ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষাগত সনদপত্রের সত্যায়িত কপি জমাদান। কে সত্যায়ন করবে ? একজন প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তা। দেখা যায়, বিষয়টি আবেদন কারীর জন্য খুবই বিব্রতকর ও ভোগান্তির । কারন সাধারনত: কোন সরকারী কর্মকর্তাই এ ধরনের ফালতু কাজ করতে চায় না, তারা সোজা আবেদন কারীকে বিদায় দিয়ে দেয়। তাহলে আবেদন কারীরা কোথায় যাবে ? এর জন্য সহজ সরল একটা সমাধানও অবশ্য ভুক্তভোগী চাকুরী প্রার্থীরা আবিষ্কার করে ফেলেছে। তা হলো- একজন সরকারী অফিসার বা সরকারী কলেজের শিক্ষকের সীল নিজেই তৈরী করে নেয়া। অত:পর নিজেই সই দিয়ে তার নিচে সেই সীল পিটিয়ে দেয়া। অর্থাৎ আবেদন কারী নিজেই সত্যায়নের ভুমিকায় অবতীর্ন। এ ধরনের সত্যায়নের কোন পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার নেই, দরকার পড়েও না কোন কালে। কারন যখন আবেদনকারী চাকুরীতে যোগদান করতে যায় বা কোথাও ভর্তি হয় তখন কর্তৃপক্ষ আসল সনদ পত্র খুটিয়ে খুটিয়ে পরীক্ষা করে দেখে সত্যায়িত সনদ পত্রের সাথে। তার পরই তার চাকরী হয় বা ভর্তি হতে পারে। এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে আর সনদপত্রের ফটোকপিকে সত্যায়ন করার কি দরকার ? কিন্তু এতে করে একটা বিরাট সর্বনাশ ইতোমধ্যে ঘটে যায় । তা হলো- চাকুরী প্রার্থী চাকরীতে যোগদানের আগেই বা একজন ছাত্র কোথাও ভর্তি হওয়ার আগেই একটা অনিয়ম বা দুর্নীতি করে ফেলে। অত:পর তার কাছে ভবিষ্যতে আর কোন রকম দুর্নীতি করার পথে কোন নৈতিকতা বাধা হয়ে দাড়ায় না। অর্থাৎ দুর্নীতি দিয়েই তার কর্মজীবন বা ছাত্র জীবন শুরু হয়। বাংলাদেশে চাকুরীজীবিদের নৈতিক স্খলনের এটাও একটা অন্যতম কারন বলে আমার কাছে মনে হয়। অথচ এ নিয়মটি বাদ দিলে কোনই ক্ষতি নেই। অরিজিনাল সনদ পত্র দেখানো ছাড়া যখন চাকরীতে যোগদান বা কোথাও ভর্তি হওয়া সম্ভব নয় তাহলে এ ধরনের ভোগান্তির নিয়মের কি দরকার তা বোঝা দুস্কর। যদি প্রক্সি এড়ানোর জন্যই এ নিয়ম করা হয় , তাহলে তো তাও সম্ভব নয়। কারন , যারা প্রক্সি দেবে তারা অতি সহজেই সীল তৈরী করে ভূয়া সত্যায়িত সনদ পত্র জমা দিয়ে তা করতে পারে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে এ ধরনের নিয়মের আদৌ কোন দরকার নেই। বর্তমানে দেশে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আবেদন করার পদ্ধতি বের হয়েছে, যা কম্পিউটারের মাধ্যমে সহজেই চেক করা যায়। একজন ছাত্র/ছাত্রী তার এস এস সি বা এইচ এস সি পরীক্ষার রোল নম্বর ,বোর্ডের নাম ইত্যাদি তথ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে তার পর ভর্তির আবেদন করে। তার সব তথ্য ঠিক থাকলেই কেবল তার নামে কনফার্ম বার্তা আসে। কেউ ভুল তথ্য দিলে কনফার্ম বার্তা আসে না। সুতরাং এ ধরনের কোন পদ্ধতিতে সত্যায়িত সনদের কোনই দরকার নেই। আমার মনে হয় , এ ধরনের সত্যায়িত সনদ পত্র বা চরিত্র সনদ পত্রের বিধিটি এখন বাতিলের সময় হয়ে এসেছে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে এর কোনই উপযোগীতা নেই।