সকল সময়ের গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্যাটি এখন আবারো নতুন মাত্রা নিয়ে আলোচনায় এসেছে তা হল “ইভ টিজিং”। ইভ টীজিং এতদিন ভুক্তভোগী মেয়ের জীবনে ও পরিবারে নারকীয় পরিবেশ তৈরি করে এসেছে এবং অনেকক্ষেত্রে মেয়েটিকে অনাকাংখিত বিয়ে বা অকালমৃত্যুর পথ দেখিয়েছে। কিন্তু আমাদের অবহেলা, নিস্তব্ধতা ও চোখ-কান বন্ধ করে দেখেও না দেখার মানসিকতা একে এতটাই শক্তিশালী করে তুলেছে যে তা আজ এক মা ও এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে- যাদের অপরাধ ছিল এ ঘৃণ্য ব্যাপারটার প্রতিবাদ করা। আমি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর কলেজের রসায়নের প্রভাষক মিজানুর রহমান এবং ফরিদপুরের মধুখালীর চাঁপা রাণী ভৌমিকের কথা বলছি। ইভ টীজিংএর প্রতিবাদ করার কারণে শিক্ষক মিজানুর রহমানকে এবং নিজের মেয়ের উত্যক্তের শিকার হওয়ার প্রতিকার চাওয়ায় মা চাঁপা রাণী ভৌমিককে মোটর সাইকেল চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হয়। এখন এ ব্যাপারটা নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। কিন্তু এ ব্যাপারটাকে আমরাই কিভাবে বাড়িয়ে তুলেছি তার দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করব এই লেখায়।

প্রথমত, ইভ টীজিং শব্দটিই এর ভয়াবহতা ও ভুক্তভোগী নারীর উপর এর যে প্রভাব পড়ে সে তুলনায় একটি খুবই হালকা শব্দ।পুলিশ বা অনেক মানুষ এ ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়না কারণ নামটিই এই অপরাধের যথাযথ গুরুত্ব প্রকাশ করতে অক্ষম। তাই অনেক সচেতন মানুষই এক্ষেত্রে “যৌন উৎপীড়ন” বা “যৌন হয়রানি” বা “লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন” এ শব্দগুলো বলার পক্ষপাতী। কারণ বখাটেদের মন্তব্য বা পিছু নেয়া বা উত্যক্ত করা একটি মেয়ের মনোজগতে কি ভয়ানক প্রভাব ফেলে তা আমরা যৌন উৎপীড়নের কারণে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার হার দেখেই বুঝতে পারি। আমি নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝতে পারি এটা কতটা কষ্ট দেয় মনে।একবার আমি জ্যামে রিক্সায় বসে ছিলাম তখন এক লোক রাস্তায় রিক্সার পেছন থেকে কুৎসিতভাবে আমার শরীরে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিল তখন আমার একই সাথে প্রচন্ড রাগ ও ঘৃণার অনুভূতি হচ্ছিল।আমার চিন্তা করছিলাম আমি এখন রিক্সা থেকে নেমে তার পেছনে স্যান্ডেল নিয়ে ধাওয়া করব কিনা। কিন্তু আমি এতটাই হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলাম যে তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়েই থাকতে পেরেছিলাম শুধু, নড়তে পারিনি। সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম যখন লোকটি এমন একটি অন্যায় করার পরও আমার কঠিন চোখের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যেন কিছুই হয়নি। আমি এখনো ব্যাপারটা ভুলতে পারিনি। এই ঘটনায়ই যদি আমার এই অবস্থা হয় তাহলে আমি বুঝতেই পারছি সে মেয়ের অবস্থা যাকে প্রতিদিন স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার পথে উত্যক্ত করা হয়, তার পিছু নেয়া হয়। অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয় যখন এ ঘটনার পর মন শক্ত করে প্রতিবাদ করতে শেখাতে তার পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেনা বরং তাদের তথাকথিত মান-সম্মান রক্ষার নামে বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তার পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়া হয় বা তাকে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়।মেয়েটির সামনে থাকে একটি অনিচ্ছার জীবন অথবা আত্মহত্যার পথ।

একে আমি “লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন” বলব কারণ এটা হয় এক ধরণের বিকৃত রুচির মানুষের কাজ যারা মেয়েদের প্রতি কোন সম্মান ধারণ করেনা মনে। এরা মেয়েদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করাকে নিজেদের পৌরুষ দেখানোর খুব ভাল উপায় বলে মনে করে। এর মূলে রয়েছে তাদের পরিবারে, সমাজে এমনকি গণমাধ্যমগুলোতেও নানাভাবে নারীর অবমূল্যায়ন।

শুধু আইন করে যে এ ব্যাপারটা ঠেকানো যাবেনা তা বলাই বাহুল্য। কারণ আইনের যথাযথ প্রয়োগও তো দরকার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুলিশ এধরণের মামলা নেয়না, মামলা নিলেও অপরাধীদের ধরার উদ্যোগ নেয়না আবার অপরাধীরা ধরা পড়লেও তারা সামান্য মুচলেকা দিয়ে বা নিজেদের প্রভাবের জোরে সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে।আর বেরিয়ে গিয়েই তারা মেয়েটির জীবন অতিষ্ট করে তোলে। মেয়ের মুখে এসিড নিক্ষেপ, মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া, মেয়ে ও তার আত্মীয়-স্বজনকে হুমকি দেয়া, তাদেরকে প্রহার বা খুন করার ঘটনাও ঘটে অনেক সময়। এবং এসব অপরাধ করেও তারা আগের মতই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারে। মেয়ের অভিভাবকেরা যে তাদের মেয়েদের পড়া বন্ধ করে তড়িঘড়ি করে বিয়ে দিয়ে দেন তার একটি প্রধান কারণ কিন্তু আইন-শৃংখলা বাহিনীর এহেন নিষ্ক্রিয়তা।এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন এখান থেকে এবং এখান থেকে।

তবে আশার বিষয় হল ভ্রাম্যমান আদালতকে ইভ টিজিং বা উত্ত্যক্ত করা বন্ধ করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এই ধারা প্রয়োগ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধীকে ঘটনাস্থলে বিচার করে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন। তবে অর্থদণ্ডের পরিমাণ উল্লেখ থাকছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সম্প্রতি দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় তাদের মতামতে বলেছে, সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯-এ দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইভ টিজিং বন্ধের জন্য পৃথক কোনো আইন করার প্রয়োজন হবে না। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বর্তমানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধির অধীনে ৯২টি আইনের প্রয়োগ করতে পারেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের মাধ্যমে তাঁরা এসব ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। তবে কোনো মামলা নিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে মামলা পাঠাতে হয়।

দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় ইভ টিজিং অর্থে বলা হয়েছে, ‘কোনো নারীর শালীনতার অমর্যাদার অভিপ্রায়ে কোনো মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি বা কোনো কাজকে বোঝাবে। কাজ অর্থ স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের রাস্তাঘাটে দেখে শিস দেওয়া, গান গাওয়া, চোখ বাঁকা করে তাকানো, নারীর শালীনতা অমর্যাদা করার অভিপ্রায়ে কোনো মন্তব্য, কোনো শব্দ, অঙ্গভঙ্গি বা বস্তু প্রদর্শন করা এবং অনুরূপ মন্তব্য, শব্দ নারী শুনতে পায় বা বস্তু দেখতে পায় কিংবা কোনো নারীর নির্জনবাসে অনধিকার প্রবেশকেও ৫০৯ ধারায় অভিযোগ হিসেবে গণ্য হবে।’
বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, কাউকে এই ধারায় অভিযুক্ত করতে হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে—কী মন্তব্য করা হয়েছে, কোন শব্দ করা হয়েছে, কী ধরনের অঙ্গভঙ্গি করা হয়েছে, কী বস্তু প্রদর্শন করা হয়েছে এবং কোনো নারীর নিভৃতবাসে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রবেশ করেছেন কি না অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতায় অমর্যাদা করতে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন কি না।
জানা যায়, ৫০৯ ধারায় প্রকাশ্য মাতাল ব্যক্তির অশোভন আচরণের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ.এস.এম শাহজাহান বেশ গুরুত্বপূর্ণ মত দিয়েছেন। তিনি ‘প্রথম আলো’কে বলেছেন,

ইভ টিজিং রোধে পুরোনো ধ্যানধারণা থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। উত্ত্যক্তকারীরা যৌন উৎপীড়ক, তারা হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তবু এখনো পুলিশের খাতায় দাগি আসামি বলতে বোঝায় সিঁধেল চোর-পকেটমারদের। কেন এখনো উত্ত্যক্তকারীদের নামে থানায় খাতা খোলা হচ্ছে না?
ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় শিক্ষক মিজানুর রহমানকে হত্যা করা হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যে বখাটেদের হামলায় চাঁপা রানী ভৌমিক নামের একজন মা নিহত হন। এখন প্রয়োজন আইন অনুযায়ী উত্ত্যক্তকারী পলাতক সন্ত্রাসীদের ধরতে ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করা।
আইন যথেষ্ট আছে, কিন্তু প্রয়োগ হচ্ছে না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ইত্যাদির আওতায় উত্ত্যক্তকারীদের সাজা দেওয়া যায়। কিন্তু উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছে যে মেয়েরা, তাদের পরিবারগুলো নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে থানা বা আদালতে যাচ্ছে না। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা নির্যাতিতদের সুরক্ষার জন্য কোনো আইন নেই। যাঁরা আইনের আশ্রয় নেন, তাঁরা আরও বেশি হেনস্তা হন।
তবে ইভ টিজিং রোধে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা স্থানীয় সরকারগুলো নিতে পারে। পাড়ায় পাড়ায় কারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে, সে সম্পর্কে স্থানীয় সরকার পুরোপুরি ওয়াকিবহাল থাকে। তাদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হলে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কার্যকরভাবে এদের প্রতিরোধ করা যাবে। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্ল্যাক রেজিস্ট্রার খুলতে হবে। উত্ত্যক্তকারীদের নাম এ তালিকায় থাকলে সে সরকারি চাকরি পাবে না, এমন বিধান রাখা উচিত।(১)

ইভ টীজিং এর কারণে মৃত্যুকে হত্যা ধরতে হবে কারণ বখাটেদের অত্যাচারের কারণে আত্মহত্যাকেও আমি এক ধরণের খুনই বলব। যদি সকল মহলের চাপ উপেক্ষা করে মিজানুর রহমান ও চাঁপা রাণী ভৌমিকের হত্যাকারীদের শাস্তি হয় এবং তা দ্রুত হয় তাহলে এ দৃষ্টান্ত এ অপরাধ রোধে অনেক সহায়তা করবে।

“যৌন হয়রানি” বন্ধ করার জন্য আসলে আক্ষরিক অর্থেই সমাজের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পারিবারিকভাবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভুক্তভোগী মেয়েটির পরিবারই পরোক্ষভাবে মেয়েটির হাতে বিষের পাত্র বা ফাঁসির দড়ি এগিয়ে দেন। তাকে বোঝাতে হবে, তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে যাতে তার মন দুর্বল হয়ে না পড়ে। খোঁজ নিতে হবে বাড়ির ছেলেটি কি করছে, কার সাথে মিশছে। বাড়িতে নারীদের প্রতি স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে যে নারী আর পুরুষ কারোরই কারো উপর এমন শ্রেষ্ঠত্ব নেই যার বলে একে অন্যকে নিপীড়ন করতে পারে।

নারী নেত্রী ও জাতিসংঘ সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন সালমা খান “প্রথম আলো” কে বলেন

ইভ টিজিং রোধে নতুন করে আর কোনো আইনের প্রয়োজন নেই। কারণ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটাও এগিয়ে নিতে হবে। সাধারণত যারা সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন, তারা নারী-পুরুষের সহজ সুন্দর সম্পর্কে আগ্রহী হয় না। তারা মেয়েদের নির্যাতন করে পৌরুষ দেখাতে পছন্দ করে।

সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে মেয়েরা স্কুলে কারাতে শিখছে, সাইকেল চালাচ্ছে। বাংলাদেশের মেয়েদের আরও বেশি করে গুটিয়ে থাকার শিক্ষা না দিয়ে আত্মবিশ্বাস কী করে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।(২)

আইনের অধীনে শাস্তি হোক আর না হোক সমাজের সবাই মিলে উত্যক্তকারীকে বয়কট করতে হবে। নিজের বন্ধুটি এ ধরণের কাজে জড়িত থাকলে তাকে বোঝাতে হবে। এ ব্যাপারটি নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করতে হবে। শুধু নিজে বিরত থাকলেই হবেনা, অন্যকে বিরত রাখতে হবে এবং সম্মিলিত প্রতিবাদ করতে হবে। আর যৌন হয়রানির শিকার বোন বা বান্ধবীটিকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করতে হবে। আর এ ধরণের চিন্তা ভাবনা ছাড়তে হবে যে মেয়েরা বোরকাবন্দি হয়ে থাকলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কারণ আরব দেশগুলোতে কিন্তু বোরকা পরা মেয়েরা এ জঘন্য ব্যাপারের শিকার হচ্ছে।এটা উত্যক্তের শিকার মেয়েদের পোষাকের ব্যাপার নয় বরং উত্যক্তকারীদের অসুস্থি রুচির এবং ভয়াবহ সামাজিক ও মানসিক অবক্ষয়ের পরিচয়। আর একটি গণতান্ত্রিক দেশে যদি একটি মেয়েকে উত্যক্তকারীদের ভয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বস্তাবন্দি বা গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হয় তাহলে আমার কাছে সে গণতন্ত্র মূল্যহীন।

যৌন হয়রানির বিপক্ষে পড়া কথাগুলো সকালের চা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সদ্য পঠিত পত্রিকাটির সাথে ট্রাশ বিনে ফেলে না দিয়ে তা নিয়ে মনে প্রাণে সচেতন হতে হবে, এ সম্পর্কে শোনা কথাগুলো যেন এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে না যায় সেজন্য এখনি কান ঠেসে ধরে কথাগুলো মাথায় ও বুকে অনুরণিত হতে দেয়া প্রয়োজন। এর শুরু হিসেবে আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি এ ব্যাপারে আমার পরিবারে ও বন্ধুমহলে সচেতনতা তৈরি করতে চেষ্টা করব এবং যথাসাধ্য প্রতিবাদ করার চেষ্টা করব। কিন্তু এ পথে আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে দরকার। প্রতিটি মানুষকে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হবে “যৌন হয়রানিকে ‘না’ বলব। বিরত থাকব, বিরত রাখব, সচেতন হব, সচেতনতা তৈরী করব এবং সম্মিলিত প্রতিবাদ করব।”

তথ্যসূত্রঃ
১। http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-10-29/news/105057

২। http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-10-29/news/105058