গত সপ্তাহের সংবাদ অনুযায়ী জ্যোতির্বিদরা পর্যবেক্ষিত বা অবলোকিত গ্যালাক্সীদের মধ্যে সবচেয়ে দূরতম গ্যালাক্সীটি খুঁজে পেয়েছেন। এই গ্যালাক্সীটি আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি মূহুর্ত বিগ ব্যাংএর মাত্র ৬০০ মিলিয়ন (৬০ কোটি) বছরের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। বিগ ব্যাংএ সৃষ্ট হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস থেকে ক্রমঃশীতল মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্ররা হয়তো এই গ্যালাক্সীর অধিবাসী। এই গ্যালাক্সী থেকে যে আলো আমরা এই বছর অবলোকন করছি তা প্রায় ১৩.১২ বিলিয়ন (বা এক হাজার তিন শো বারো কোটি) বছর আগে রওনা দিয়েছিল। [খেয়াল করবেন আমি এই আলোর উৎসদের ১৩ বিলিয়ন বা ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বলছি না, কারণ স্থানের (বা দেশের) প্রসারণের জন্য মহাকাশবিদ্যায় দূরবর্তী গ্যালাক্সীদের দূরত্ব নির্ধারণ করা তুলমামূলকভাবে জটিল।] গ্যালাক্সীটি যদি “আজও” বেঁচে থাকে, তবে তার বয়স মহাবিশ্বের কাছাকাছিই হবে, কিন্তু তাকে আমরা যে অবস্থায় দেখছি সেটা তার শিশু অবস্থায়, সে বোধহয় সবে জন্মগ্রহণ করেছে। মহাবিশ্বের বয়স যদি এখন হয় ১০০, তখন মহাবিশ্বের বয়স সবে ৪.৪ (বা বর্তমান বয়সের ৪.৪%)। তখন এই গ্যালাক্সী থেকে যে আলো বিকিরিত হয়েছিল আজ আমরা তা দেখতে পারছি। সেই সময় পৃথিবীর জন্মগ্রহণ হয় নি।

শক্তিশালী দূরবিন দিয়ে বিজ্ঞানীরা দেশ-কালের চরম প্রান্তে প্রথম নক্ষত্র বা প্রথম গ্যালাক্সীর খোঁজ করছেন। তাহলে আমরা কি মহাবিশ্বের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গেছি? আমরা কি তাহলে ঐ গ্যালাক্সীর থেকে দূরবর্তী কোন বস্তু এর আগে অবলোকন করি নি? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ! করেছি। প্রায় ৪৫ বছর আগে প্রথমবারের মত আমরা মহাবিশ্বের প্রায় শেষ প্রান্ত থেকে আগত আলো কিছুটা কাকতালীয় ভাবে হলেও প্রথম বারের মত পর্যবেক্ষণ করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। সেই আলো গ্যালাক্সীর মত কোন একক বস্তু থেকে আসছে না, সে আলো আসছে আমাদের চারপাশ ঘিরে মহাবিশ্বের যে সীমানা সেইখান থেকে। সেই আলো অবশ্য চোখে দেখা যায় না, তার তরঙ্গ দৈর্ঘ মাইক্রো-ওয়েভ এলাকায়। এই পর্যবেক্ষণের পর জ্যোতির্বিজ্ঞান পুরোপুরি বদলে গেছে।

১৯৬৫ সালে নিউ জার্সীতে বেল ল্যাবরেটরীর দুজন বিজ্ঞানী প্রায় হঠাৎ করেই একটা বড় রেডিও এন্টেনার মাধ্যমে এই মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের সন্ধান পেয়েছিলেন, যে তরঙ্গ মনে হল আকাশের সব দিক থেকেই আসছে, দিনে ও রাতে। তাকে বলা হল কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা সিএমবি (CMB)। উইকিপিডিয়ার বাঙ্গালীরা দেখলাম এটার নাম দিয়েছেন মহাবিশ্ব অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ। যাইহোক, সিএমবি দেখা গেল বহু কোটি বছর আগে ঘটিত বিগ ব্যাংএর বিস্ফোরণে সৃষ্ট শক্তির অবশেষ। সিএমবি আবিষ্কারকদের নোবেল পুরস্কার দেয়া হল, যদিও এই বিকিরণের ভাবীকথন অনেক তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা আগেই করেছিলেন। সেই আবিষ্কারের পর বহু দশক কেটে গেছে। ইতিমধ্যে সিএমবিকে কৃত্রিম উপগ্রহ ও বেলুনে বসানো যন্ত্র দিয়ে আরো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবলোকন করা হয়েছে। ১৯৯০এর দশকে COBE উপগ্রহ সিএমবির মধ্যে ঔজ্জ্বল্যের ওঠানামার ওপর ভিত্তি করে মহাজাগতিক বস্তুর আদি ঘনত্বের বিতরণকে কিছুটা নির্ধারণ করতে পারলো। তার জন্যেও আর একটি নোবেল পুরস্কার দেয়া হল। তার দশ বছর পর WMAP নামে আর একটি উপগ্রহ-যন্ত্র আরো যথার্থতা সহকারে সিএমবি মেপে দেখালো যে আমাদের মহাবিশ্বের স্থান (বা দেশের) মেট্রিক সমতল (বক্র নয়), অর্থাৎ একটি আলোর রেখা মহাবিশ্বে প্রায় সরলরেখায় ভ্রমণ করবে।

কিন্তু সিএমবি শুধুমাত্র বিগ ব্যাংএর অবশেষ নয়। আমাদের দ্বারা নিরূপিত প্রতিটি সিএমবি ফোটন মহাবিশ্বের একদম শেষ প্রান্ত থেকে আসছে। বিগ ব্যাংএর পরে বস্তুর ঘনত্ব ধীরে ধীরে হাল্কা হয়ে আসছিল। কিন্তু তার মধ্যেও আলোর কণিকা বা ফোটন ইলেকট্রনের মেঘের মধ্যে আটকে পড়েছিল। বিগ ব্যাংএ সৃষ্ট ফোটন কণাসমূহ ইলেকট্রনের সাথে ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা ঠাণ্ডা হয়ে আসলে ইলেকট্রন প্রোটনের কক্ষপথে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করল হাইড্রোজেন পরমাণুর, ফোটনের সাথে তার বিক্রিয়ার পরিমাণও সেই সাথে কমে গেল। বিগ ব্যাংএর প্রায় ৩৫০,০০০ বছর পরে ফোটন মুক্ত হল, সেই ফোটনই প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর পরে আজ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এর মধ্যে মহাবিশ্বের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে এই সিএমবি ফোটনের তাপমাত্রা তাদের আদি ৩০০০ কেলভিন (বা প্রায় ৩০০০ সেলসিয়াস) থেকে ২.৭ কেলভিনে নেমে এসেছে। বলা যায় সিএমবি’র প্রতিটি ফোটন মহাশূন্যের শেষ প্রান্ত থেকে এসেছে। কিন্তু তারা মুক্তি পেয়েছে বিগ ব্যাংএর ৩৫০,০০০ বছর পরে, তার মানে আমরা যাই করি না কেন আমরা সেই সাড়ে তিন লক্ষ বছরের দেয়াল পার হতে পারবো না, অর্থাৎ বিগ ব্যাংএর ৩৫০,০০০ বছরের মধ্যে কি হয়েছিল তার কোন সম্যক ছবি আমরা পাবো না (যদিও নিউট্রিনো পটভূমি বলে একটা জিনিস আছে যার সূত্রপাত হয়েছে বিগ ব্যাংএর প্রথম ১০ সেকেন্ডের মধ্যে, সেই আদি নিউট্রিনোর সন্ধান এখনও পাওয়া যায় নি)।

এই “দেয়াল”টা কি সত্যি একটা কিছু? এর উত্তরটা মহাজাগতিক অনেক কিছুর মতই একটু জটিল। এটা সবই নির্ভর করে সময়ের সাথে আমাদের অবস্থানের ওপর। আমরা সবাই জানি সারা মহাবিশ্বের জন্য কোন “এখনই” মূহুর্ত নেই। কিন্তু সারা বিশ্বের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়কে আমরা কেমন করে নির্ধারণ করবো? একটা খুব সহজ উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক। আমাদের সূর্য। সূর্যের যে ছবিটা আমরা পাই তার সৃষ্টি হয়েছে সূর্য পৃষ্ঠে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে। কাজেই আমাদের ও সূর্যের জন্য “এখনই” বলে একটা সময় আমরা সৃষ্টি করতে পারি যদি আমরা এই মূহুর্তে (সময় = ০) একটা পৃথিবী পৃষ্ঠেরর ছবি তুলি, তারপর ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড (সময় = ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড) অপেক্ষা করি এবং সূর্যের একটা ছবি তুলি। এই দুটো ছবি পাশাপাশি রেখে আমরা দাবী করতে পারি আমরা আমাদের সংলগ্ন পৃথিবী পৃষ্ঠের ও সূর্যের “এখনই” বলে একটা বাস্তবতার সৃষ্টি করেছি। এই যুক্তি অনুযায়ী, আমরা ৪.৩৬ বছর অপেক্ষা করে নিকট তারা আলফা সেন্টাউরির (সময় = ৪.৩৬ বছর) ছবি তুলে তাকে আমাদের তথাকথিত “এখনই” মূহুর্তের অন্তর্ভূক্ত করতে পারি। আমাদের ২.৫ মিলিয়ন (২৫ লক্ষ) বছর অপেক্ষা করতে হবে নিকটবর্তী বড় গ্যালাক্সী অ্যান্ড্রোমিডাকে “এখনই” মূহুর্তের অ্যালবামে ভর্তি করতে।

ওপরের এই নকশা অনুযায়ী আমাদের ১৪ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হবে আমাদের তথাকথিত সিএমবি দেয়ালকে “এখনই” মুহূর্তের সঙ্গী করতে। কিরকম হবে তখন সেই “এখনই” দেয়াল? ১৪ বিলিয়ন বছর পরে, আমরা (বা অন্য কোন বুদ্ধিমান প্রাণী) হয়তো দেখব সেই “দেয়ালের” অবস্থানে অবস্থিত আমাদের মতই এক মহাবিশ্ব, আমাদের চারপাশের সাধারণ যেরকম গ্যালাক্সী সেরকম গ্যালাক্সীতে ভরপূর। আর সেখানে যদি আমাদের মত “বুদ্ধিমান” প্রাণী থেকে থাকে, তারাও হ্য়তো দূরবিন লাগিয়ে আমাদের দেখছে, কিন্তু আমাদের গ্যালাক্সীর বদলে তারা দেখছে সেই সিএমবি “দেয়াল”। যতদিনে তারা জানবে “ছায়াপথ” গ্যালাক্সীর কথা, ততদিনে আরো ১৪ বিলিয়ন বছর চলে গেছে। এই নকশা অনুযায়ী, মহাবিশ্বে কোন বিশেষ অবস্থান নেই, প্রতিটি দর্শক তার নিজস্ব মহাবিশ্বের “কেন্দ্রে” দাঁড়িয়ে আছে। আর “সিএমবি” দেয়াল? সে কোথায় থাকবে তখন? এই গ্যালাক্সীতে তখন কোন বুদ্ধিমান প্রাণী বেঁচে থাকলে তার দেখবে এমন একটি “দেয়াল” যার ফোটনেরা প্রায় ২৮ (১৪ + ১৪) বিলিয়ন বছর আগে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল।

দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হচ্ছে আমাদের পর্যবেক্ষণের আওতাধীন মহাবিশ্ব, শুধুমাত্র গত ১৩ বা ১৪ বিলিয়ন বছরের মধ্যে যে আলো আমাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, সেই আলো অবলোকনের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সীমানা রচিত হয়। আমাদের পর্যবেক্ষণ একটা “দেয়াল” দ্বারা আবদ্ধ। আমরা যাই করি না কেন, যতই শক্তিশালী দূরবিন ব্যবহার করি না কেন, আমরা সেই “দেয়াল” ভেদ করতে পারব না। এই দৃশ্যমান মহাবিশ্ব সমগ্র মহাবিশ্বের একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ হতে পারে। সমগ্র মহাবিশ্ব কত বড় সেই সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই নেই।

ফিরে আসি আপাততঃ দূরতম গ্যালাক্সীর পর্যবেক্ষণে। জ্যোতির্বিদরা চিলির ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরীর VLT (ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ) দিয়ে ১৩.১২ বিলিয়ন বছর আগের এই গ্যালাক্সীটি দেখেছেন। তাদের এই নিরীক্ষণ ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে সৃষ্ট দূরতম একক মহাজাগতিক বস্তুর রেকর্ড ভেঙ্গে দিল। ঐ মাসে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করেছিলেন একটি গামা-রে বার্স্ট যা কিনা বিস্ফোরিত হয়েছিল ১৩.০৯ বিলিয়ন বছর আগে। এর আগের রেকর্ড ছিল একটি গ্যালাক্সী, যেখান থেকে আলো ১২.৯৩ বিলিয়ন বছর আগে রওনা দিয়েছিল। একটার পর একটা রেকর্ড ভাঙ্গছে, আমরা ধীরে ধীরে প্রথম সৃষ্ট গ্যালাক্সীটির সন্ধান করছি। দেখা যাচ্ছে বিগ ব্যাংএর কয়েকশো মিলিয়ন বছরের মধ্যেই প্রথম নক্ষত্র ও প্রথম গ্যালাক্সীগুলো তৈরি হয়েছিল। তাদের আলো চারপাশের হাইড্রোজেন গ্যাসকে আয়নিত করেছিল, এই নিউট্রাল হাইড্রোজেন দৃশ্যমান আলোকে আটকে রাখতো। বলা হয়ে থাকে বিগ ব্যাংএর পরে যে অন্ধকার যুগ শুরু হয়েছিল এই আয়নায়নের মাধ্যমে সে যুগের অবসান হল।

কিন্তু আমরা যখন সেই প্রথম গ্যালাক্সিটি আবিষ্কার করবো, তখন কি হবে? (এমনও হতে পারে আমরা প্রথম সৃষ্ট তারাটি আবিষ্কার করতে পারি যদি সেটি গামা-রে বার্স্ট হিসেবে বিস্ফোরিত হয়।) দূরতম গ্যালাক্সিটি যখন আবিষ্কার হবে, জ্যোতির্বিদরা তখন কি করবেন? তারা কি ডাকটিকিট সংগ্রহের মত দৃশ্যমান মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্যালাক্সীকে নথিবদ্ধ করবেন? অথবা খোঁজ করবেন আর একটি সৌর জগতের (এর মধ্যে এমনতর ৫০০টি সৌর মণ্ডলের সন্ধান পাওয়া গেছে)? অথবা আর একটি সুন্দর মহাকর্ষ লেন্স মাধ্যমে একটি গ্যালাক্সীর বহু প্রতিচ্ছায়া মাধ্যমে খোঁজ করবেন ডার্ক ম্যাটারের। আমরা এখন জানি মহাবিশ্বের বেশীর ভাগ বস্তুই আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয় (ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি)। কিন্তু যে সমস্ত জিনিস আমরা চোখে দেখি, যাদের অত্যাশ্চার্য ছবি আমাদের জ্যোতির্বিদ্যায় আকৃষ্ট করেছিল, তাদের ভাগ্য বোধহয় শুধুমাত্র বড় বড় ক্যাটালগে নথিভুক্ত হওয়া।

জ্যোতির্বিদ্যা নিশ্চয় প্রাচীনতম বিজ্ঞানসমূহের মধ্যে একটি। যদি আগুনের আবিষ্কার ও রন্ধনবিদ্যাকে রসায়ন শাস্ত্রের অন্তর্গত ধরা হয়, তবে রসায়ন একটি প্রাচীন বিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যাও নিশ্চয়ই সেই ধরণের প্রাচীনত্ব দাবী করতে পারে। প্রাচীন মানুষ, আফ্রিকার সাভানা থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সময় তাদের ক্যাম্পের আগুণের স্ফুলিঙ্গকে অনুসরণ করে নিশ্চয়ই নিচ্ছিদ্র কালো আকাশের স্ফটিকসম বিন্দুদের চরিত্র নিয়ে ভেবেছিল। তারা তখনকার পাঁচটি দৃশ্যমান গ্রহের পদচারণাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নিরীক্ষণ করেছিল, তাদের বলেছিল ভ্রমণকারী। তারা পৃথিবীর কিংবদন্তী কালো আকাশে স্থাপন করেছিল। তার হাজার হাজার বছর পরে, আজ আমরা বলছি মহাকাশকে আমরা যতটুকু দেখার তা প্রায় দেখে ফেলেছি। তবু আমাদের সংশয়বাদী বন্ধুরা বলবেন, আমরা এখানে এর আগেও ছিলাম। ঊণবিংশ শতাব্দীর শেষে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন প্রকৃতির সব রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে, এখন শুধু পৃথিবীর বা মহাবিশ্বের শ্রেণীবিন্যাস বাকি যা কিনা বোটানী বা ডাক-টিকিট সংগ্রাহকের অনুশীলনের মতই। এর কিছু পরেই আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব জগত সম্বন্ধে আমাদের বোধের আমূল পরিবর্তন করল। জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে আমরা কি আবার সেই জায়গায় ফিরে আসে নি? ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জী কি নতুন বিজ্ঞানের দিশা দিচ্ছে না? অবশ্যই। কিন্তু পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদ্যা (astronomy) ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার (astrophysics) মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পৃথিবীতে নতুন একটা দ্বীপ আবিষ্কার করা (যা কিনা এখন কার্যতঃ প্রায় অসম্ভব) এবং দ্বীপ গঠনের প্রক্রিয়াকে অধ্যয়ন করার মধ্যে যে পার্থক্য এই পার্থক্যটা মূলতঃ তাই। কসমিক স্ট্রিং বা ওয়ার্ম হোলের মত কুহেলিকাময় Holy Grailএর সন্ধানের আশা জ্যোতির্বিদ্যা হয়তো রাখতে পারে, কিন্তু মহাবিশ্বের স্বরূপ উদঘাটন একমাত্র জ্যোতির্পদার্থবিদ্যাই করতে পারে। মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে পৌঁছে পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদ্যার দিন হয়তো শেষ হয়ে আসছে।