বাবাই ছিল আমার একমাত্র আপন জন
যদিও দুজনের বাস ছিল দু’ঘরে।
রাত জেগে কখনো কথা হয়নি আমাদের
মাঝে মধ্যে বাবা বলতেন, আমি শুনতাম;
আমি বলতাম, বাবা শুনতেন-না এমনটি
ঘটেনি কখনো। সে ছিল বড় ব্যস্ত।
পুরোনো ছবিগুলো চশমার ফ্রেমে গেঁথে
কি যেন ভাবতেন, আমি বুঝতাম না কিছুই
ধবধবে সাদা দেয়ালে চক দিয়ে জীবনের
মানচিত্র আঁকতেন, আমি বুঝতাম না কিছুই।
বারান্দায় বাঁধানো দাঁতগুলো খুলে রেখে
গুনগুন করে গাইতেন, আমি বুঝতাম না কিছুই
কখন বাথরুমে যেতেন, কখন হাসতেন
কখন কাঁদতেন, আমি বুঝতাম না কিছুই।
দুজনের বাস ছিল দু’ঘরে।

আমাদের আপনজন বলতে আমরাই
তবুও ছিলাম সম্পূর্ন একা, বাবাও
ছিলেন তাই। চলছিল বেশ।
সাদে বসে একদিন অন্ধকার দেখছিলাম
বাবাও দেখছিলেন-উল্টো দিকে মুখ করে।
সচরাচর এমনটি হয় না- এক সাথে এক জিনিস দেখা।
সেদিন হয়েছিল: অন্ধকার রাতে অন্ধকার দেখা!

আচ্ছা খোকা, কদম, জাম, হাসনাহেনা
এদেরকে দেখেছো কখনো?- বাবা বললেন।
(বাবা আমাকে খোকা বলেই ডাকতেন।)
দেখবো না আবার! হাসনাহেনাতো আমাদের
বাগানেই আছে, আর জাম, কদম রাস্তার
ধারে কত দেখলাম! তবুও আমি নিরব থাকি।
কদম হচ্ছে হতভাগা নারী যে অশ্রুতে ভিজে
আনন্দ পায় আর জাম হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ
যে অশ্রুর কাছে পূর্ণতা পায় এবং হাসনাহেনা হচ্ছে
রহস্যময়ী দেবী যে কিনা প্রতিদিনই জন্ম দেয় সুখকে।
বাবার কথা শুনে আমার আকাশ ভেঙ্গে চুরমার।
তবে যে লোকে বলে এসব…?
শোনা কথা ভুল হতেই পারে! মনকে বুঝিয়ে
ভাঙ্গা আকাশ জোড়া দিতে বসেছি তৎক্ষনাৎ।
বাবা আবারো বললেন, সাদা আকাশ
দেখেছো কখনো, সবুজ বৃষ্টি…?
যাহ আকাশ আবার সাদা হয় নাকি!
আর বৃষ্টি সবুজ হবে কেন? বৃষ্টি তো জলের মতন।
বাবাকে বোঝাতে পারিনি কিছুই।
বাবা শুধু একতরফা আমাকে বুঝিয়েছেন।
আমি নিরবে বুঝেছি সব।

আজ বাবা নেই, আমাকেও বোঝাইনা কেউ
আমার যে ভাবে ইচ্ছা সে ভাবেই বুঝি সব।
এখন মাঝে মাঝে কথা হয় রাতের তারকাদের সাথে
তখন বাবা বলতেন, আমি শুনতাম
এখন আমি বলি, ওরা শোনে।
এছাড়া বড় একটা পরিবর্তন হয়নি আমাদের-
না বাবার, না আমার!
একা ছিলাম, একাই আছি।