ডাকাডাকি

বাবা যারে বাবা ডাকে, সেই তো আমার দাদা,
ব্যবহারটি খুবই ভাল, অন্তর ছিল সাদা।
দাদা যারে গিন্নি ডাকে, সেই তো আমার দাদী
জনম ধরে নাহি দেখি, তাই তো আমি কাঁদি।
দাদী যারে ছেলে ডাকে, তাকে বলি চাচা,
চুল পাকা, দাঁড়ি পাকা, গোঁফ তার কাঁচা।
বাবা যারে ভাবি ডাকে, সেই হয় চাচী,
নিদ্রায় চলে গেলে, হাফ ছেড়ে বাঁচি।
বাবা-চাচা বোন ডাকে, আমি ডাকি ফুপু,
আপা, বোন একই কথা, হয় বাবার বুবু।
মা যারে বাবা ডাকে, সেই তো আমার নানা,
দেশে তার নাম ডাক, কার নেই তা জানা?
মা যারে মা ডাকে, সেই তো আমার নানী,
দেখে এলাম জনম ধরে, চোখে যে তার পানি।
মা যারে বোন ডাকে, সে হয় খালা,
ব্যবহার নাহি পাই, অন্তরে জ্বালা।
খালা যারে পতি বলে, তাকে বলি খালু,
রাগ আছে, জিদ আছে, চোখে তার বালু।
মা যাকে ভাই ডাকে, ভাই হয় মামা,
ছোটবেলায় ভালোবেসে দিতেন কত জামা।
মায়ের ভাই বউ আনে, তারে ডাকি মামী,
চাল নেই, চুলো নেই, খাবার খায় দামী।
জন্ম নিলাম যারই ঘরে, তিনি আমার বাবা,
অনেক কথার শেষে বলেন, সময় মত খাবা।
বেহেস্ত আছে যারই তলে, সে-ই জননী মা,
হাজার বারও ডাকলে তারে প্রাণতো জুড়ায় না।
মায়ের ছেলে বড় ছেলে, সেই তো বড় ভাই,
গর্ব করে বলতে পারি, কোন চিন্তা নাই।
ভাইয়ের ছেলে আম্মা ডাকে, সেই হল মোর ভাবী,
সবাই তাকে মান্য করি, এই আমাদের দাবী।
মা ডাকেন মেয়ে বলে, সেই তো আমার বোন,
আদর করে বলব তারে, একটু কথা শোন।
বোনের স্বামী কি যে দামী, ডাকবো দুলা বলে,
ভাগনীরা সব লাফিয়ে উঠে কাফী মামার কোলে।

হিন্দুরা সব জ্যাঠা, পিসি, ডাকে দিদি মাসি,
কেমন ডাকা ডাকলি তোরা আমার আসে কাশি।
গায়ক ডাকে গান শুনতে, আদর ভরা চোখে,
কবি ডাকে কবির সুরে, হৃদয় জুড়ায় সুখে।
মাষ্টার ডাকে ক্লাসেতে, সংখ্যা গুনে গুনে,
ছাত্ররা সব জবাব দেয়, কানে শুনে শুনে।
পুলিশ ডাকে বাঁশি দিয়ে, ঐ দেখা যায় চোর,
হাতকড়া তাই পরিয়ে দিতাম, শক্তি কোথায় তোর?
নদীর ধারে হাঁসকে ডাকে, ঐ দেখা যায় তীরে,
মানুষ ডাকে আজান দিয়ে, নামাজ পড় ধীরে।
বিপদ ডাকে হঠাৎ করে, মরণ খেলা খেলে,
মাওলানারা আল্লাহ ডাকে, যদি কোথাও মেলে।
পিয়ন ডাকে চিঠি দিতে, হরেক রকম লেখা,
আজকে তুমি বিদায় দাও, আবার হবে দেখা।
প্রেমিক ডাকে হাতছানিতে, মিষ্টি হাসি দিয়ে,
নাচবো এবার, গাইবো আমি, সেই মেয়েটির বিয়ে।
বনের রানী সিংহী ডাকে, ডাকে ভালুক ভাই,
বোবারা সব ভেবেই মরে কথা কোথায় পাই।
ডাক যে আছে হরেক রকম, শেয়াল ডাকে হুঁয়া,
টিয়া ডাকে ময়না ডাকে, ডাকে কাকাতোয়া।
মোরগ ডাকে ভোর বেলাতে, পাখি ডাকে সাঁঝে,
ঝিঝি পোকার ডাক যেন তাই, বাঁশির সুরে বাজে।
মশা ডাকে, মাছি ডাকে, গদায় ডাকে নাক,
ছারপোকারাও ঘুমিয়ে পড়ে, আজকে না হয় থাক।
হাতি ডাকে সুঁড় উচিয়ে ডাকার মত ডাক,
নাচের তালে ময়ুর ডাকে, খাচ্ছে যে ঘুরপাক।
বিড়াল ডাকে ঘরের কোণে, খাদ্য পাবার আশায়,
ইঁদুর বেটা ভয়ে বলে, ফিরে যাই মোর বাসায়।
বিশ্রী স্বরে বেজায় জোরে, ডাকলো বেটা গাধা,
মাঘ মাসের ঐ শীতে মরি, জল খেয়ে নিই আদা।
বৈশাখেতে কোকিল ডাকে, এ ডাল ও ডাল ঘুরে,
বর্ষাকালে ব্যাঙরা ডাকে, হাজার মধুর সুরে।
আষাঢ় মাসে মেঘের ডাকে, কৃষক পেল ভয়,
মরণ এবার হবেই তাহার, আর কি বাকি রয়?
শ্বশান ঘাটে ভুতের ডাকে, ভয় পেয়েছে যারা,
গোরস্থানের সামনে দিয়ে, আর যাবে না তারা।
বাঘের ডাকে বন যে কাঁপে, কাঁপে নদীর পানি,
বানর ডাকে হরিণ আসে, সেই কথা কি জানি?
ঘড়ি ডাকে ঘন্টা দিয়ে, গীটার বাজে তারে,
লাঠি দিয়ে ঢোলক ডাকে, তাইতো ধরে মারে।
হাতের তালে তবলা ডাকে, ফুঁয়ে ডাকে বাঁশি,
ফাঁকা মাঠে ডাকতে গেলে, গলায় আসে কাঁশি।
ডাকাডাকি করছো কেন? ডাক দিয়েছে মরণ,
পাপের কাজটি ছেড়ে দিয়ে, তাঁকেই কর স্মরণ।