এই লেখায় সাইফুল ভাইয়ের মন্তব্যের জবাব লিখতে লিখতে লেখা পোষ্টের আকার হয়ে যাওয়ায় লেখাটি পোষ্ট আকারেই দিলাম। তাছাড়া এই বিষয়ে সকল সদস্যের আলোচনার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। আশা করি সকলের আলোচনার মধ্য দিয়ে মুক্তমনারই উপকার হবে। মুক্তমনায় সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্যেও এই আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

সাইফুল ভাইয়ের মন্তব্যের ক্ষুদ্র অংশ যেটির প্রতিমন্তব্য লিখছিলাম তা হলঃ

এখন তো দেখা যাইতেছে কেউই কিছু বলতেছে না।

কিছু বলার ইচ্ছে থাকে তখনই যখন জানবেন বলে কোন কাজ হচ্ছে। আমি একটি কথা মেনে চলি যে পূর্ণবয়ষ্ক একজন ব্যক্তিকে আপনি মানাতে পারবেন না যদি না তিনি নিজে থেকে বুঝতে সক্ষম হোন। এই ক্ষেত্রে আপনি যতই যুক্তি দিন না কেন, তিনি নিজস্ব বিশ্বাসেই অটল থাকেন। এই ক্ষেত্রে একজন আস্তিক যেমন অটল থাকেন তার বিশ্বাসে তেমনি সেই বিদ্বেষী অটল থাকেন তার বিশ্বাসে যে মুসলিম মাত্রেই ধরে ঠেঙ্গাও, বিশ্বাসী মাত্রেই উম্মাদ, অসুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী, আর কেউ বাল্যবিবাহ করলে সেটা মুহাম্মদকে অনুসরণ করেই করেছেন। হিন্দুধর্মে কত শত বাল্যবিবাহ রয়েছে সেটা তখন চোখে পড়ে না (অবশ্য তারাও যদি মুহাম্মদে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা :-Y )। এর বাহিরে আর কোন যুক্তি হতে পারে না। তো এদের সাথে কথা বলে কোন লাভ আছে? তাই অনেক বলেছি, আর কথা বলে জনে জনে শত্রু হয়ে লাভ নেই। তবে স্বীকার করি কেউ কিছু না বলাটা এলার্মিং।

আমার যা বলার এখানে একেবারে বলে দিচ্ছি। বারংবার একই কথা বলে সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। যদিও একই কথা আমি এর মাঝেই নানান মন্তব্যেই বলেছি। আমি মনে করি না কারো প্রতি কোন প্রকার বিদ্বেষ পুঁষে তার কোন প্রকার উন্নতি করা সম্ভব। যদি ধর্ম সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত হয় তবে ধর্মে বিশ্বাসীদেরকে সে পথ হতে ফেরানোর জন্য তাঁদের কাছ পর্যন্ত আগে যেতে হবে। আপনার কথা তার কানে আগে পৌছাতে হবে। যদি আপনার কথা তার কানে পৌছানোর আগেই পৌছান বিদ্বেষের বানী তবে সেই বানী দিয়ে তার সাথে তর্ক করতে পারেন, তাকে তর্কে হারিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু তার মন জয় করতে পারবেন না। তাকে তার পথ হতে সরানোর জন্য তার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।

আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি আপনার লেখা/যুক্তি ব্লগে লিখে রাখছেন, যে কেউ পড়লেই বুঝতে পারবে আপনার কথা। কথা ঠিক নয়। লেখা থাকলেই লেখা পড়ে না কেউ। আবার পড়লেও আপনার যুক্তি মেনে নিবে সেটাও নয়। এ রকম হাজার লেখা পড়ে আছে, হাজার বই পড়ে আছে। কয়জন সেটা খুঁজে খুঁজে বের করে পড়ে আর নিজে থেকে বিশ্বাসের পথ হতে সরে আসে। তাই আপনাকেই যেতে হবে আপনার যুক্তি, বানী, লেখা নিয়ে তাঁদের মস্তিষ্ক পর্যন্ত। আপনার লেখায় এমন কিছু থাকতে হবে যেন তিনি সেটা পড়তে আগ্রহী হোন। লেখার মাঝে হাজার যুক্তি থাকলেও যদি একটিও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য থাকে তবে সেই পাঠক আপনার লেখা পড়লেও আপানার যুক্তির ক্রেডিটিবিলিটি তার কাছে থাকবে না। এই সহজ বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হলে আমার তাঁর জন্য বলার কিছু নেই। ধর্মকে কেন মানুষ আঁকড়ে ধরে সেই সহজ সত্যটি সর্বাগ্রে অনুধাবণ করতে হবে। তার পর আসবে এখন কি করণীয় সেটা নির্ধারণে।

মুক্তমনা এডমিনদের আরেকটু ভাবতে হবে কিভাবে ঢালাও বিদ্বেষ্পূর্ণ মন্তব্য বন্ধ করা যায়। একটি কার্যত পন্থা অবলম্বন করা উচিত। এভাবে বার বার কিছু মন্তব্য আসবে, সেখানে কিছু মানুষ সময় নষ্ট করবে একই কথা বলে, সেটা নিয়ে তর্ক চলতে থাকবে, দু’পক্ষ ভাগ হয়ে যাবে এক পর্যায়ে, এগুলো ফোরামের জন্য ভাল নয়। লং রানে বিভক্তি সৃষ্টি করে। তাই নীচে কয়েকটি মতামত দিচ্ছি যা এডমিনেরা ভেবে দেখতে পারেন, এবং অন্যান্য সদস্যরাও এই ব্যাপারে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন।

১। কোন মন্তব্য কারোর কাছে আপত্তিকর মনে হলে এডমিন বরাবর ইমেইল করবেন। এডমিনের পক্ষে সকল মন্তব্য পড়া বা ফলো করা সম্ভব নয়। তাই এটা সদস্যদের দায়িত্ব হওয়া উচিত ইমেইল করে জানানো। জনে জনে আর মন্তব্য করতে পারবো না, তর্কের পর তর্ক করতে পারবো না। সবারই সময় একটি বড় সমস্যা।

২। যদি সম্ভব হয় শাফায়েতকে অনুরোধ করবো, প্রতিটি মন্তব্যের নীচে একটি বাটন “আপত্তি জানান”, কিংবা “এডমিনকে বার্তা পাঠান” দেওয়া যায় কিনা একটু ঘেঁটে দেখতে। কেউ আপত্তি জানালে সেটা যেন এডমিন বরাবর অটোমেটিক ইমেইলে চলে যায় সেটাও নিশ্চিত করতে।

৩। এভাবে তিনজন/পাঁচজন (পাঁচ বেশি হয়ে যায় মনে হয়) যদি কোন মন্তব্যে আপত্তি জানায় অথবা এডমিন বরাবর ইমেইল করে তবে কর্তৃপক্ষ নিজেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা জানাবে। তাই সকল সদস্যের অংশগ্রহন এখানে প্রয়োজন। আপনি যদি বসে থাকেন অন্য কেউ কাজটি করবে সেটা ঠিক হবে না। আপনাকে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে সর্বাগ্রে। এখন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মন্তব্যকারীর পক্ষেও হতে পারে, অথবা আপত্তিকারীদের পক্ষেও হতে পারে।

৪। যে কোন এক পক্ষ যদি সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেন তবে সকল সদস্যের ভোটে প্রাপ্ত মতামত হবে শেষ মতামত। সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যের মতামত মেনে নেওয়ার মানসিকতা সকলের থাকতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। এই চার নম্বর ধাপটি অপশানাল। কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন যে সদস্যদের মতামত গ্রহন করা হলে নিজেরা ভারমুক্ত হবেন তবে তা করতে পারেন। সকল ক্ষেত্রেই বারংবার সদস্যদের ইনভলব করাটা সময় সাপেক্ষ। আমি মনে করি হয়তো কখনই এর প্রয়োজন হবে না। কিন্তু তারপরেও আমি এই পার্টটুকু রাখতে চাইবো যেন কোন কারণে কর্তৃপক্ষ, যারা তাঁদের মূল্যবান সময়, অর্থ, মেধা ব্যয় করে এরকম একটি সাইট বানিয়েছেন, যেন বিতর্কিত না হোন। উনারা যদি মনে করেন যে সদস্যদের মতামত পেলে ভাল হবে সে ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের উপর যেন সকলে আস্থা রাখতে পারেন তাই এই ব্যবস্থা।

৫। যে ব্যক্তির মন্তব্যে আপত্তি এসেছে তার মন্তব্য যদি এডমিনেরা আপত্তিকর মনে করেন তবে প্রথমবার সতর্ক করা হবে। দ্বিতীয়বার যদি একই ব্যক্তি একই রকমের মন্তব্য করেন তবে তাহাকে আবারো সতর্ক করা হবে। তবে এই বার উনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হোক যে তৃতীয়বার একই কর্ম করিলে সরাসরি সদস্য পদ বাতিল করা হবে, অথবা দ্বিতীয়বারেই এক সপ্তাহের জন্য মডারেশনের আওয়তায় আনা হোক। কিন্তু তৃতীয়বারে কোন মাফ নেই। লেখা মডারেশন অথবা মন্তব্য বন্ধ করা কোন কার্যকর শাস্তি নয়। উক্ত ব্যক্তি মডারেশনের মাধ্যমে একজন সাধারণ পাঠকের মত লেখা দিতে পারবেন এবং মন্তব্য করতে পারবেন। কিন্তু যদি তাহার পরেও সেই ব্যক্তি একই রকম বিদ্বষপূর্ণ কথা চালিয়ে যেতে থাকেন তবে আফসোস তাহার আইপি ব্যান করা ছাড়া তিনি আরো কোন পথ খোলা রাখেননি। এটা আমার কাছে মৃত্যুদন্ডের চেয়ে কষ্টকর। কিন্তু কেউ যদি পরিণতি যেনেও একই কাজ বারংবার করতে থাকেন তাহলে এছাড়া আর কোন উপায় আমার জানা নেই।

মানুষের সাইকোলজি নিয়ে নাড়াচড়া করতে গিয়ে আমার উপলব্ধি হচ্ছে মানুষ শক্তের ভক্ত নরমের যম, যদিও এটা বহু পুরোনো কথাই। যদি কঠিন শাস্তির ভয় না থাকে তবে কেউ কথা শুনতে চায় না। এ কারণেই বুঝতে পারেন কেন ধর্মে ভাল কথার চেয়ে বেশি আছে অন্যায় করলে কি কি কঠিন শাস্তি রয়েছে তা। জগতের সবচেয়ে বিভৎসতম শাস্তিগুলোর বর্ণনা ধর্মগ্রন্থেই রয়েছে। আমার ছোটবাচ্চা সেও ঠিক গলার স্বর বুঝে। নরম গলায় বললে কোন কাজই হয় না। গলা উচু হলে বুঝে যে না এবার বাবা সত্যিই রেঁগেছে। তাই বারংবার সতর্ক করা হলে কোন কাজই হবে না, যদি না এর শেষ কি হবে সেটা না বলা থাকে। পাশ্চাত্যে সবাই ঠিক পথে আছে কারণ সবাই উন্নত নৈতিকতার অধিকারী তা নয়। কারণ এখানকার শাস্তির মাত্রা অনেক বেশি। আপনি দশদিন অন্যায় করে একদিন ধরা খেলে একশত দিনের অন্যায়ের শাস্তি পেয়ে যাবেন। তাই এখানকার মানুষ নিয়ম মেনে চলে। একবার যদি ভুলেও ভুল করে ফেলে, দ্বিতীয়বার করার আগে দশবার ভাববে। আর আমাদের দেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। জাল সার্টিফিকেট নিয়ে ডাক্তারী করে কোটি টাকা কামানোর পর, কমপক্ষে কয়েক ডজন লোকের ক্ষতি করার পরে শাস্তি দেড় লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিনমাসের জেল। হাজার টাকার দুর্নীতির শাস্তি চাকুরী হতে বরখাস্ত। ভেজাল খাবারের দোকানের শাস্তি নাম মাত্র জরিমানা। তাহলে আপনি দুর্নীতি করবেন না কেন? দশদিন অন্যায় করে যদি একদিনের জরিমানা দিয়ে পার পেতে পারেন তবে তো মানুষ দুর্নীতি করবেই। যে দুর্নীতি করবে না সেই পরিবেশে তিনিই হেরে যাবেন টিকে থাকার খেলায়।

নৈতিকতা ধর্মের বানী দিয়ে সম্ভব নয়। প্রয়োজন মানুষের সাইকোলজি বুঝে সে রকম নীতিমালা এবং সেটার প্রয়োগ। যদি নীতিমালার প্রয়োগ সঠিক ভাবে করতে না পারেন তবেও আপনি আবার অনৈতিকতাকে উৎসাহ দিবেন। যাদের বাচ্চা আছে তিনি এটার ব্যাখ্যা ভাল বুঝতে পারবেন। আপনি যদি তাঁকে একেকবার একেক নীতি দেখান, নীতির প্রয়োগ একেক সময়ে একেক করেন তবে সেও সেই নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। আপনার শাসনের বিরুদ্ধাচারণ করার সাহস দেখায়। তাই সুশাসনের জন্য কনসিস্টেন্সি একটি বড় বিষয়। একজন বাচ্চা যেমন, একজন পূর্ণবয়ষ্ক মানুষও তেমন। খুব বেশি পার্থক্য নেই। কনসিস্টেন্ট নীতির প্রয়োগ যদি কেউ দেখে তবে মস্তিষ্কে অবচেতনেই ঢুকে যায় নীয়ম ভাঙ্গার ফলাফল কি হতে পারে। তাই নীতিমালার যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সেটার কনসিস্টেন্ট প্রয়োগ। এই দু’টো যদি মেনে চলা যায় তবে গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। এই কথাটি শুধু ব্লগের মত ক্ষুদ্র পরিসরের জন্যেই প্রযোজ্য তা নয়। পরিবার, সমাজ, কিংবা রাষ্ট্রের মত বৃহৎ পরিসরেও কার্যকর। গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যক্তি মানুষের সাইকোলজি বুঝা খুব প্রয়োজনীয়। আর এ ক্ষেত্রে বিবর্তনীয় মনোবিদ্যাই দেয় সবচেয়ে ভাল বিশ্লেষণ। বুঝতেই পারছেন বিবর্তন কেন গুরুত্বপূর্ণ।