মোল্লা মামা
উত্তর পুরুষ
(প্রবন্ধটির শুরু হয়তো আপনার মনে হতে পারে সেই পুরানো গান, না আসলে তা নয়। সামান্য ধৈর্য ধরে পাঠ করুন অচিরেই পেয়ে যাবেন আপনার মনের প্রকৃত খোরাক, যা আপনি মনে মনে চাইছেন)
************************************************************
যারা বলেন ইসলাম ধর্মের গ্রন্থ একটি মাত্র “কোরাআন” আমি তাঁদের সাথে সম্পূর্ণ একমত নই। আমার মতে ইসলাম ধর্মে গ্রন্থ দুইটি। একটি লিখিত এবং অপরটি অলিখিত। লিখিত গ্রন্থটি “কোরাআন” আর অলিখিত গ্রন্থটি রাসূলের জীবনাদর্শ তথা সুন্নাহ। যা পরবর্তী কালে ইসলামী বিবেকের মশল্লা দিয়ে হাদীছ নামে রচিত হয়েছে। কোরআনের কোন একটি ছুরার আয়াতে “প্রচলিত প্রথার অনুসরণকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে” (আমি নিজের চোখে দেখেছি ও পড়েছি কিন্তু দাগ দিয়ে রাখিনি বলে সেটা আরেকবার খূঁজাবার মত সময় পাচ্ছি না) হোক সেটা যে কোন ধরনের প্রথা, যা আল্লাহর ক্ষমতা ও সৃষ্টি বিরোধী নয়। অর্থাৎ ঐ বাক্য দিয়ে সমসাময়িক যুগ ও কালকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ধর্ম তাই যুগউপযোগী, তা না হলে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা কেন বার বার মহাপুরুষ পাঠিয়ে আগের গুলো বাতিল করে পরেরটায় গুরুত্ব বেশী দেবেন। আমাদের মুল্লা মামারা বলেন “সেটা আল্লার ইচ্ছে, সে ইচ্ছের কোন ব্যাখ্যা নেই। এমন কি বিবেক দিয়েও কিছু বলতে গেলে উনাদের রক্ত চুক্ষু আরও লাল হয়। আগামীকল্য যুগ ও সমাজ পরিবর্তনের সাথে নিয়মগুলো কি হবে বা হতে পারে সে দায়িত্ব আল্লার উপর ছেড়ে দিয়ে উনারা নিশ্চিন্ত। অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে দেখি কোরানের ছুরা বাকারার প্রথম আয়াত “আলীফ-লাম-মীম” এর কোন ব্যাখ্যা নেই, ভাবার্থ নেই। অথচ বাংলা একখানি পবিত্র গ্রন্থে এর ব্যাখ্যা দেখতে পাই। গ্রন্থ খানির নাম আলোছায়া। সেখানে লিখা আছে “আলীফ” দ্বারা আল্লাহ, “লাম” দ্বারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, “মীম” দ্বারা মোহাম্মদার রাসুলুল্লাহ বুঝানো হচ্ছে, এটা বিবেক দিয়েই ধরা যায়। যার বাংলা অর্থ অবশ্যই কোন বিরোধীতা নয়। কিন্তু মুল্লা মামারা বলছেন ‘ খবরদার; তোমার মাটির বিবেক যেখানে সেখানে প্রয়োগ করতে যেওনা। আর এভাবেই উনারা বিবেকের সমস্ত টুটি চেপে ধরে ইসলাম কায়েম করতে চান। ধর্মকে মার্জিত এবং নিষ্কলুষ রাখাই ধর্মবিদদের পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দুনিয়ার বিভিন্ন ধর্মের হর্তা কর্তারা ধর্মের নামে মানুষকে একদিকে অধিকার দিলেও অন্যদিকে করেছে অধিকারহীন ও শোষণ। মানুষের মধ্যে তৈরি করেছে উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, স্পৃস্য-অস্পৃস্য। বিশ্বাসী অবিশ্বাসী, গুরু ও শিষ্য ইত্যাদি। তাই মানুষ শব্দটিতে চলে এসেছে দলাদলি। আত্ন অধিকার ও আত্ন কর্তব্যতে এসেছে নানা কৌশল ও আইন কানুন। এজন্য মানুষ যখনই মানবতাবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে তখনই মানুষ ধর্মকে টেরা চোখে দেখতে শুরু করেছে। ধর্মকে তাই হৃদয় দিয়ে গ্রহণ না করে সে নিরবে এড়িয়ে চলেছে। এজন্য দায়ী কি ? বা কে ? দায়ী সমকালের সঙ্গে কিয়াছ বা বিবেককে যুগ-উপযোগী ভাবে মার্জিত না করার অভাব। অর্থাৎ রক্ষণশীলতাকে অন্ধ ভাবে আকড়ে থাকা। অথচ উচিৎ প্রত্যেক মানুষ তাঁর নিজ বিশ্বাসে নিজেকে নিয়ে চলা। যদি সে বিশ্বাসটুকু কারো স্বাধীনতায় বিঘ্ন না ঘটায়।
ট্রাফিক আইন বা যানজট নিয়ম কোন ধর্মের লিখিত আইন নয়। সেটা সম্পূর্ণই মানুষের বিবেকের তৈরি আইন। এখন কেউ যদি বলে এটা কোরান, হাদীছের আইন নয় এটা মানিনা, এমন কি এটা বাইবেল, বা বেদেরও আইন নয় কাজেই এটা মানা যায় না- তাহালে তো সমাজ চলবে না। আমাদের যুক্তি একটাই “রিজেকের মালিক আল্লাহ” সেটাতো ধর্মে অবিশ্বাসীরাও বুঝে কিন্তু রিজেকের উপায় ও অবলম্বন কি ? সেটা উনারা বুঝতে রাজী নন। মানুষ শিক্ষিত ও সমাজসচেতন হলে আপনা থেকেই নানা বিবেক ও সংযমের ফলে সন্তান কম উৎপাদন হতে বাধ্য। মানুষ শিক্ষিত ও সমাজ সচেতন হওয়া মানে আধুনিক শিক্ষায় জ্ঞান লাভ করা। যে শিক্ষায় সমাজ, রাষ্ট্র, উৎপাদন, লোক সংখ্যা, বিশ্ব খাদ্য, বিশ্ব বাণিজ্য ইত্যাদি সম্বন্ধে সমক্য জ্ঞান লাভ করা যায়।

দুঃখে, হতাশায়, আনন্দে প্রেমাবেগে মানুষ মনকে হালকা করতে চায়। মানুষ একটু গলা ছেড়ে গান গেতে চায়। আবেগের বহিপ্রকাশ ঘটাবে এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিংবা সৃষ্টি কর্তার নামে তাঁর সৃষ্ট নিখিল বিশ্বের ও সমাজের সাথে সমন্ধযুক্ত ভাবাবেগের বহিঃপ্রকাশ বাদ্যযন্ত্রের সহায়তায় গান কিংবা সঙ্গীত দিয়ে, না হয় কবিতা দিয়ে প্রকাশ করবে। কিন্তু না, এখানেও মুল্লা মামাদের চরম আপত্তি, এতে ইসলামের অবমাননা হয়। উহাকে প্রতিহত না করলে ঈমানদারের নাকি ঈমান থাকে না। ঈমান এমনি ঠুনকো এবং এমনি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে মুল্লা মামাদের কেবল হাদীছের জোরে। এখনও অনেক ধর্মে অনেক কানুন আছে যেগুলো সহজ ও সাধারণ বিবেক দিয়ে গ্রহণ করতে কষ্ট হয়। কোন কোন সময় তা সমাজের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। অথচ ধর্ম গুরুরা এটাকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন যে, “এটা আল্লাহ বা ইশ্বরের দেয়া আইন কাজেই উনার এক আইন মানবে অন্য আইন মানবেনা তাহলে তো হয় না। তাহলে তুমি খাটি বিশ্বাসী বা ঈমানদার নও। আর যখন ঈমান বা বিশ্বাস নেই তখন তুমার কিছুই নেই। তোমার সব কৃতকর্ম নিষ্ফল যাকে বলা হয় জিরো। এভাবেই নানাবিদ ফতোয়া দ্বারা তারা মানুষকে উদ্দীপনাহীন করে তুলেন। অতএব, আল্লাহর আইনে তর্ক করা চলেনা। ইচ্ছে হয় মানো। কারণ আল্লাহ তোমার প্রার্থণার কাঙ্গাল নন। প্রশ্ন থেকে যায় যদি কাঙ্গাল না হবেন তাহলে শাস্তি দেবেন কেন ? আমি মনে করি তার চেয়ে এ বলা ভাল যে, আল্লাহ প্রার্থণা ভালবাসেন, আর ভালবাসেন বলেই তিনি তাঁর সৃষ্ট মানুষকে দিয়ে তাই করাতে ভালবাসেন।
একবার এক মুল্লা হুজুর তালাকের উদাহরণ দিতে গিয়ে বললেন যে, এক দুষ্ট ছেলেকে তার মা-বাবা বিয়ে দিতে রাজী করালেন- কিন্তু বিয়ের পর পরই সে ঘোষণা দিল যে ‘বিয়ে করেছি মা-বাবার কথা রেখেছি” এখন বউ যদি চাঁদের মত সুন্দরী না হয় তাহলে সে বউ তালাক হবে। ইসলামী দৃষ্টি ভঙ্গীতে কথাটা খুব’ই মারাত্বক। বউ চাঁদের মত সুন্দর কি অসুন্দর এ সিদ্ধান্ত কে দেবে ? কেউ এ সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। শেষ অবধি এক বিজ্ঞ মসজিদের ঈমাম সাবের উপর সে দায়িত্ব পড়লো- তিনি ঘটনা শুনে কিছুই বললেন না। বললেন নামাজ পরে দেখা যাবে। তিনি নামাজ আদায় করলেন, তন্মধ্যে অর্থাৎ নামাজের মধ্যে কোরানের ১টি ছুরা পড়েছিলেন। ছুরাটির নাম “ত্বীন”। কোরানের ৯৫ নং ছুরা। তারপর ইমাম সাহেব নামাজ শেষে বাড়ী রওয়ানা হচ্ছিলেন। সবাই ঘিরে ধরলো কি ব্যাপার ? আপনি সমস্যার সমাধান না দিয়েই চলে যাচ্ছেন যে। ইমাম সাহেব সহাস্য বদনে বললেন- আমি তো নামাজের ছুরা পাঠকালেই সে সমাধান দিয়েছি। ঐ ছুরার ৪নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন “তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শ্রেষ্টতম অবয়বে” অর্থাৎ মানুষের চাইতে সুন্দর ও শ্রেষ্ট পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। অতএব, চাঁদ বা তারকা এসব কিছুই মানুষের চেয়ে সুন্দর নয়। অতএব, দুষ্টু ছেলের তালাক কার্যকারী হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠেনা।
আরেক খ্যাতনামা খলীফা উনার স্ত্রী ঝগড়ার সুত্রপাতে বলেছিলেন “তুমি দোজখী” অর্থাৎ নরকবাসী। প্রত্যুত্তরে খলীফা উনার স্ত্রীকে বলেছিলেন “আমি যদি দোজখী হই তাহলে তুমি তালাক”। তালগোল পেকে গেল- এ সমস্যার সমাধান হয় কি ভাবে ? একজন মানুষ কিভাবে জানবে সে স্বর্গবাসী না নরকবাসী ? অথচ মৃত্যু ও হয়নি। বিড়ম্বনা, মহাবিড়ম্বনা, কি করা যায় ? বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়ে কথা; এটাতো খেলা নয়। কিছুতেই এটার সমাধান হচ্ছিলনা। সব হাদীছ বিশেষজ্ঞরা ও দুশ্চিন্তিত। শেষ অবধি ১৭/১৮ বৎসরের একছাত্র খলীফাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হুজুর আপনি যদি একটি “সত্য কথা” বলতে পারেন তাহলে হয়তো এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। খলীফা আগ্রহের সঙ্গে বললেন আমি কথা দিচ্ছি সত্যি বলবো। তখন সেই হাদীছ অধ্যয়নকারী ছাত্রটি বললেন, “আপনি কি জীবনে এমন কোন দুষ্ট বা নাফরমান মানুষকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আল্লাহর ভয়ে তা করেননি- বিরত থেকেছেন। খলীফা নাকে আঙ্গুল রেখে দু\’চোখ বুজে স্পষ্টই স্মরন করতে পারলেন যে, কোন এক ঘটনা বা দাঙ্গায় তিনি তরবারী উত্তোলন করেও একটি লোককে খোদার ভয়ে কোপ বসাতে যাননি। তিনি ছাত্রকে সে ঘটনার কথা বললেন। ছাত্রটি সঙ্গে সঙ্গে একটি হাদীছ এবং কোরানের একটি আয়াত উল্লেখ করে বললেন “এ রকম যারা ধৈর্য্য এবং ক্ষমার পরিচয় দিয়েছে ও আল্লাহকে ভয় করেছে সে নিশ্চয়ই জান্নাতের অর্থাৎ স্বর্গের অধিবাসী। অতএব আপনি দোজখী নন এবং আপনার স্ত্রীও তালাকের বিচ্ছেদে আপতিত হননি।
এখানে যা বললাম তা প্রচুর মাদ্রাসার ছাত্ররা তা জানেন। তথ্য সুত্র না উল্লেখ করলেও চলে, কারণ উল্লেখিত ঘটনাগুলোতে কোন বিরোধীতা বা মিথ্যাচারীতার প্রশ্রয় নেয়া হয়নি। আমার বক্তব্য হল নারীকে এত নগন্য চিজ ভেবে তালাক নিয়ে এত খেলা কেন ? যে ব্যক্তি স্ত্রী-কে আল্লাহ রাছুলের নামে স্বাক্ষীদের সামনে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিল- সে স্ত্রীকে তালাক দিতে হলে মসজিদে বা বিচারে দু’চারজন স্বাক্ষীর সামনে বা লিখিত ভাবে দোষ উল্লেখ করে তালাক দিতে হবে। অন্য কোন ভাবে তালাক কার্যকারী হবে না। এ নিয়মটা বহাল করলে সব ল্যাঠা চুকে যায়। ঐসব চাঁদ সুরুজ, বেহেশত, দোজখ আর গলাবাজী ও মৌখিক বাড়াবাড়ির ঝামেলায় পড়তে হয়না। তাইতো ইসলামের প্রচুর কালাকানুন রক্ষণশীল পুরষের স্বার্থ রক্ষক হিসেবে টিকে আছে কেবলমাত্র বিবেকের অভাবে।
আরেক মৌলানা নছীহত করছিলেন যে খরা ও দুর্ভিক্ষের কারণ পাপ। কাজেই আল্লার দরবারে “তওবা বা অনুশোচনা করলেই বৃষ্টি আসবে”। তিনি এভাবেই মানুষকে অদৃষ্টবাদী করে তুলছিলেন। বুঝলাম অনুশোচনা একটি ভাল উপদেশ, কিন্তু নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হচ্ছে। গাছপালা উজাড় করে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে, সেকারণে পানির অভাবে কৃষিকাজে হচ্ছে না। এ ছাড়া বিশ্বের বায়ু প্রবাহ ও সকল বৎসর সমান হয় না। কাজেই মানুষ সৃষ্ট সমস্যাকে চিহ্নিত না করে, এসবের কোন গুরুত্ব না দিয়ে কেবল মানুষকে কারণে অকারণে অদৃষ্টবাদী করে তুলার কি অর্থ হতে পারে ?
এক্ষেত্রে আধুনিক শিক্ষা যে কত প্রয়োজনীয় তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। শুধু কি তাই ? আজকাল অপরিকল্পিত ভাবে রাসায়নিক সারের অপ-প্রয়োগ এবং অনেক সময় মাটির উৎপাদনী শক্তির লোপ সম্বন্ধে যদি মুল্লা মামাদের জ্ঞান থাকতো তবে নিশ্চয়ই তাঁরা অদৃষ্টবাদীতার প্রয়োগ করতেন না। বিপদ আপদ ছাড়াই শুধু আত্মার শুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ও মাঝে মধ্যে তওবা করার উপদেশ দান করলে নিশ্চয়ই ভাল শুনাতো। আমরা জানি বিপদ সংকেত আল্লাহর কাছ থেকে কোন মুল্লা মুলভীদের কাছে ফ্যাক্স বা টেলেক্স যোগে আসে না। আসে ঘুমের ঘোরে, মনে জমানো কল্পনার বিকল্প প্রতিবিম্ব হিসেবে। আর আসে সৎ লোকদের ছোট খাটো আগাম বিপদ সংকেতের মাধ্যমে। আর বর্তমান যুগে আসে মহাবিশ্বের সঙ্গে সৌর-জগতের বহুবিদ সম্পর্কের কারণে। বিজ্ঞানচর্চা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার দ্বারা এসব অনেক অনুদঘাটিত রহস্য উদঘাটন হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। ভূমিকম্প-গবেষণা বিভাগ, আবহাওয়া বিভাগ, মহাশূন্য পর্যবেক্ষক বিভাগ এবং পরিবেশ দূষণ জনিত বিভাগগুলি নিজ নিজ গবেষণা অনুযায়ী এসবের আগাম তথ্য এবং সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছে।
ধর্ম সম্পূর্ণই মানুষের মনের বিশ্বাসের ব্যাপার। জোর পূর্বক চাপিয়ে দেয়ার মত কিছু নয়। যারা আত্না, পরকাল এবং সৃষ্টির বৈচিত্রকে বুঝতে পারে যাদের ভেতর রয়েছে মানবতাবোধ ও শাস্তি পাওয়ার নিখাদ ভয় তাঁদের দ্বারা সমাজের কোন ক্ষতি হতে পারে না। ব্রাহ্মণদের সৃষ্ট, ধর্মীয় নামের আইনের উদ্ভট উদগীরন থেকে মানুষ আজো যে শোষিত তার প্রমাণ ভারত। যেমন- ১৯৮৪ সালের ১লা জানুয়ারিতে উপজাতি ও নিম্নবর্ণের জন্য সংরক্ষিত চাকুরী ছিল শতকরা ২২.৫ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে শতকরা ১.৩৪ ভাগ উচ্চ পদে চাকুরী পান। এবং শতকরা ২.৯৫ ভাগ ব্যাংক বা অন্যত্র করণিকের চাকুরী পান। নীচু মানের কাজে পর্যন্ত তাঁদের সংখ্যা শতকরা ৪ জন। ১৯৮৭ সালেও অবস্থার তেমন কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। এ তথ্যটি ভারতের সাংবাদিক হামদি বে কর্তৃক লিখিত পুস্তক “বে অফ বেঙ্গল” বইয়ের ১৩০ পৃষ্ঠা থেকে সংগৃহীত। বইটি প্রকাশ করেছে কলকাতার আজকাল পাবলিশার্স লিমিটেড। একটি দেশের সরকারী অবস্থার মধ্যে যদি এরকম বর্ণবৈষম্য নিহিত থাকে তবে সামাজিক অবস্থা কি হতে পারে তা নিশ্চয়ই ভেবে দেখার বিষয়। অতি-ধর্মের নামে লুকানো ভন্ডামী যেমন ক্ষতিকর তেমনি অতি আধুনিকতার নামে উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চয়ই ক্ষতিকর। কয়েক শতাব্দির পর হয়তো ধর্ম নামে কিছু একটা বড় বিশেষ থাকবে না্ তখন মানুষ দারিদ্রের দোহাই দিয়ে এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে এমন এক উচ্ছৃঙ্খল সোপানে পৌছবে যেখান থেকে তাঁর ফেরা সম্ভব নয়। তারা তিলে তিলে সময়ের প্রবাহে নিশ্চিন্ন হতে থাকবে অত্যন্ত অসহায় ভাবে। আর তার চারপাশে পড়ে থাকবে অজস্র প্রযুক্তি এবং সেসব তার কাছে মনে হবে অঁকেজো শিশু খেলনা মাত্র।

অমরত্ব
উত্তর পুরুষ
বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যবাসী কিংবা তাদের সমর্থনকারী রাষ্ট্রের অধিবাসীরা ধর্মের বড়াই করলে কি হবে ? যাদের ধর্ম নেই কিংবা ধর্ম পরিবর্তন করেছে, বা ধর্মীয় কিতাব পরিবর্তন করেছ বলে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো কিংবা এখনও করছে। সেই খৃষ্টান ও ইহুদি জাতির বুদ্ধিতে ওরা আজ চলছে, রাষ্ট্র চালাচ্ছে, এবং মাটির নিচ থেকে তৈল, সোনা ও পানি উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সুতরাং নিজ ধর্মের আবর্তে খাওয়া পরার নুন্যতম চাহিদাটুকু ওরা মিটাতে না পেরে যখন বিধর্মীদের বিবেক বুদ্ধিতে সুখী সমৃদ্ধ জীবন চালাচ্ছে, সেখানে নিজের ধর্মের এত ঢাকঢোল পেটানোর কি এমন প্রয়োজন আছে ? আজকে সারা দুনিয়া জুড়ে যেমন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা দুনিয়ার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তেমনি আজ থেকে বারোশত বৎসর আগে শিক্ষা দীক্ষাহীন জাতিদের কাছে সাহাবা নামের এক শ্রেণীর মানুষ তাদের ধর্মীয় কারখানার বাজার ছড়িয়ে দিয়েছিল। এবং তাদেরকে সহযোগিতা করেছিল হাদীছ সংগ্রহকারী একদল অন্ধ সমর্থনকারী লোক। তাদের ইচ্ছে ছিল এটাই যে ‘পৃথিবীর ইতিহাসে তাদের নাম “অমর” হয়ে থাকবে’। তারা ধন সম্পত্তি চায়না, তারা চেয়েছে মানুষের মনে নিজেদের অমরত্বের নিশ্চয়তা। এবং তারা কৃতকার্য হয়েছে “মৃত্যুর পর কি হবে” ? এই শব্দগুলোর দ্বারা তৈরি হাজার হাজার ভয় ও শাস্তির পলিটিক্স করে।