ইসলাম নিয়ে কথা বলতে গেলে মুসলমানরা ইদানিং একটা কথা প্রায়ই বলে- শুধু ইসলামে নয়, সকল ধর্মেই হিংসাত্মক কথা বার্তা আছে। এ কথাগুলো যে তারা বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সেটা বলে অন্য ধর্মের কিতাবাদি না পড়েই। সেটা তারা মূলত বলে- তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতদের দেয়া বক্তৃতা বা ভাষণে যা তারা শোনে টিভি বা অন্য কোথাও। তার মানে অন্য ধর্মে যেহেতু কিছু না কিছু হিংসাত্মক বানী আছে তাই ইসলামের কোরান বর্নিত হিংসাত্মক বানীও জায়েজ হয়ে গেল। এটা যে এক প্রচন্ড স্ববিরোধি বক্তব্য তা কিন্তু তারা বোঝে না বা বুঝলেও না বোঝার ভান করে থাকে।

প্রথমত: ইসলাম একমাত্র ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মকে বিশ্বাস তো দুরের কথা, স্বীকারও করে না। তারা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম, সুতরাং বলা বাহুল্য অন্য ধর্মগুলো সব অসত্য অথবা গাজাখুরী। এখন কোন অসত্য বা গাজাখুরী ধর্মের সাথে একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের যে তুলনা করা যেতে পারে না, ইসলামী পন্ডিতরা সেটা বেমালুম ভুলে যায়, অথবা তুলনা করাটা যে একটা মহা গাধামী এটা তাদের মোটা মাথাতেই ঢোকে না। অথবা তাদের লক্ষ্য থাকে- তাদের বানোয়াট আর বোগাস কথা বার্তা শুনে যারা পুলকিত হয় তাদেরকে মহা গাধাতে পরিনত করা।

দ্বিতীয়ত: তারা অনেক সময় যুক্তিতে পেরে না উঠলে অত্যন্ত আস্থার সাথে বলে- ইসলাম বলেছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। তারা আরও বলে যে- ইসলাম কখনই হত্যা বা খুন করতে বলেনি যদি বলেও থাকে তা বলেছে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ও আত্মরক্ষার জন্যে। তারা অভিযোগ করে- বর্তমানে ইসলামের নামে যারা নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত তারা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নয়। তারা ইসলামের ক্ষতি করছে। কিছু কিছু শিক্ষিত লোক আরও আগ বাড়িয়ে বলে- সে সব সন্ত্রাসীরা আমেরিকার দালাল, আমেরিকার কাছ থেকে টাকা খেয়ে তারা ইসলামের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাস করছে আর এভাবেই ইসলামের ক্ষতি করছে। আর তা প্রমান করতে গিয়ে তারা কোরানের সেই বিশেষ আয়াতটি উল্লখ করতে কখনই ভুল করে না যেটা হলো-

দ্বীনের ব্যপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই ।২: ২৫৬

ঠিক সে মুহুর্তেই যদি নিম্নের সূরাটি উল্লেখ করা হয়-

তারা চায় যে তারা যেমন কাফের তোমরা তেমনি কাফের হয়ে যাও যাতে তোমরা ও তারা সমান হয়ে যাও। অতএব তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে না আসে। অত:পর তারা যদি বিমুখ হয় তাদেরকে পাকড়াও কর. এবং যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরুপে গ্রহন করো না, এবং সাহায্যকারীও বানিও না। ৪:৮৯

তখন যে মজার বক্তব্যটি পাওয়া যাবে তা হলো- উক্ত সূরা বিশেষ কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে অবতীর্ন হয়েছিল তা ভালভাবে জানতে হবে তথা কোরান তফসির সহকারে পড়তে হবে। বলা বাহুল্য উক্ত দুটি আয়াতের তফসির আমরা এখন সবাই জানি। আর সেটা কি? সেটা হলো- মোহাম্মদ যখন দুর্বল ও অসহায় ছিল তখন তার মুখ দিয়ে ২: ২৫৬ আয়াত বেরিয়েছিল, আর যখন সে প্রচন্ড শক্তিশালী এক গোষ্ঠি নেতা তখন তার মুখ থেকে ৪:৮৯ আয়াত বেরিয়েছিল। আসলে এখানে যে চালাকিটা করতে চাওয়া হয় তা হলো- তারা নিজেরা যেমন তাদের কিতাব ভালমতো না পড়ে শোনা কথা তোতা পাখির বুলির মত আউড়ে যায়, তারা ভাবে অন্যেরাও বোধ না কোন কিছু না জেনে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করছে। তার মানে নিজে যেমন বোকা , অন্যদেরকেও ঠিক তেমনি বোকা মনে করে।

সাধারন মুসলমানরা কিন্তু তাদের এসব কথাবার্তা দারুন ভাবে বিশ্বাস করে ও মনে করে সত্যি সত্যি ইসলামী সন্ত্রাসীরা ভুল পথে চলছে ও ইসলামের ক্ষতি করছে। এ ব্যপারে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের সন্ত্রাসী আক্রমনের উদাহরন টানা যায়। সেদিন ইসলামী টিভি এর এক অনুষ্ঠানে দেখলাম ইসলামের বিশাল পন্ডিত ডাক্তার জাকির নায়েক খুব দৃঢ়তার সাথে বলছে- টুইন টাওয়ারের ঘটনা যে মুসলিম সন্ত্রাসীরা ঘটিয়েছে এর নাকি কোন নিশ্চিত প্রমান নেই। এর পেছনে আল কায়েদা বা ওসামা বিন লাদেন আছে তার কোন অকাট্য প্রমান নেই। পক্ষান্তরে মার্কিনী ও পাশ্চাত্যরা যে মুসলিম বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে তার অকাট্য প্রমান- আফগানিস্তান ও ইরাকে তাদের আগ্রাসন। জাকির নায়েক আরও আগ বাড়িয়ে খুব উচ্চৈস্বরে বলছে- ছিনতাইকৃত বিমানগুলো যখন টুইন টাওয়ারে আঘাত করার মুহুর্তে ছিল , আঘাত করার ঠিক আগ মুহুর্তে নাকি বিমান থেকে ক্ষেপনাস্ত্র জাতীয় কিছু বের হয়ে টুইন টাওয়ারে আঘাত হেনেছিল যে কারনে ১২/১৩ শ’ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়েছিল যার ফলে টুইন টাওয়ারের লোহার শক্ত কাঠামো গলে গিয়ে গোটা টাওয়ার দুটি ধ্বসে পড়ে। সে দেখলাম আরও উল্লেখ করল- ঘটনা ঘটনার কিছু পরেই কোন এক বিশেষজ্ঞ নাকি বলেছিল শুধুমাত্র বিমানের আঘাতের ফলে বিমানের জ্বালানী জেট ফুয়েল জ্বলে উঠলে যে তাপমাত্রার সৃষ্টি হবে তা নাকি লোহার কাঠামো গলানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তার মানে বিমান ভর্তি কোন ধরনের অতি উচ্চ শ্রেনীর বিস্ফোরক ছিল যা বিস্ফোরিত হয়েই নাকি অবশেষে টুইন টাওয়ারকে ধ্বসিয়ে দিয়েছে। তার মানে তার বক্তব্য হলো- আমেরিকানরা নিজেরাই ষড়যন্ত্র করে টুইন টাওয়ার ধ্বসিয়ে দিয়েছে যাতে এ উছিলায় তারা আফগানিস্তান ও ইরাক আক্রমন করতে পারে। বলা বাহুল্য, তার এ তত্ত্ব অন্য আরও অনেক বোগাস তত্ত্বের মত কিন্তু ভীষণ জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য মুসলিম দুনিয়াতে। তখন মনে মনে ভাবছিলাম- এই লিকলিকে লোকটি সত্যি সত্যি মুসলমানদের বারোটা বাজানোর জন্য দুনিয়াতে আবির্ভুত হয়েছে। সে নিজেকে একজন ইসলামী পন্ডিত মনে করে অথচ পোশাক আশাকে পশ্চিমা ফ্যাশন। কিন্তু কথাবার্তা গুলো আবার আধুনিক না, একেবারে সেই মধ্য যুগীয়। তার পোশাক এরকম হবার কারন বোধ হয় তার বাড়ী হলো ভারতে আর ভারতীয়দেরকে ধোকা দেয়ার জন্যই তার এ পশ্চিমা ফ্যাশনের পোশাক আশাক।

টুইন টাওয়ারের ঘটনা ভালমতো বোঝার জন্য আমি এ ব্যপারে একটু খোজ খবর নিলাম। দেখলাম টাওয়ার দুটির উভয়টাতেই আঘাত হেনেছিল আমেরিকান এয়ারলাইনস ও ইউনাইটেড এয়ার লাইনস এর দুটি বোয়িং- ৭৬৭-২০০ বিমান। সবার বোঝার স্বার্থে আমি বিমানের পুরো স্পেসিফিকেশন নিচে তুলে ধরলাম:

767-200
Cockpit crew Two
Passengers 181 (3 class)224 (2 class)255 optional 290 (1 class)
Cargo 2,875 ft³ (81.4 m³)22 LD2s

Length 159 ft 2 in(48.5 m)
Wingspan 156 ft 1 in
(47.6 m)
Wing area 3,050 ft² (283.3 m²)
Fuselage height 17 ft 9 in (5.41 m)
Fuselage width 16 ft 6 in (5.03 m)
Cabin width (interior) 15 ft 6 in (4.72 m)
Maximum Fuel Capacity 23,980 U.S. gal (90,770 L)
Empty Weight,
operating 176,650 lb(80,130 kg)

Maximum take-off weight 315,000 lb(142,880 kg)
Maximum Range
at MTOW
3,950 nmi(7,300 km)transatlantic

Cruise speed Mach 0.80 (470 knots, 530 mph, 851 km/h at 35,000 ft cruise altitude)

উপরের বিবরন থেকে বোঝা যাচ্ছে, এটা কোন ছোট খাট বিমান নয়, বিরাট জাম্বো সাইজের বিমান যার ফুয়েল ক্যপাসিটি হচ্ছে- ৯০,৭৭০ লিটার। বিমানগুলি আঘাতের সময় এত জ্বালানী বিমানে ছিল না তবে তার পরিমান ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ লিটারের ( কিছু জ্বালানী উড্ডয়নে ব্যয় হয়েছিল) কম ছিল না কারন, যে কোন বিমানই আকাশে উড্ডয়ন করে তার ট্যংক পূর্ন করেই যে কোন রকম আপদ কালীন কথা চিন্তা করে। ভিডিও চিত্রে দেখা যায় , এত বিশাল আকৃতির বিমান টাওয়ারে আঘাত করার পর পুরোটাই টাওয়ারের ভিতর ঢুকে গেছে আর তা হওয়ারও কথা।ভিতরে ঢুকে গিয়ে তার জ্বালানী পুরোটাই ভিতরে জ্বলতে শুরু করে। যদিও শুধুমাত্র জেট ফুয়েলকে মুক্ত বাতাসে জ্বালালে তার তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের বেশী উঠে না, কিন্তু একত্রে বিপুল পরিমান জেট ফুয়েল একটা আবদ্ধ জায়গাতে জ্বলে ওঠায় তার তাপমাত্রা দাড়ায় ১০০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মত বা তারও কিছু বেশী। এ তাপমাত্রায় স্টীলের লোহার বীম গলে যায় না ঠিকই কিন্তু তা যথেষ্ট নরম হয়ে যায়, যে কারনে তার উপরিভাগে অবস্থিত ২০-২৫ তলার সমস্ত ভার সইতে না পেরে তা ধ্বসে পড়ে, অত:পর উপরের ধ্বসে পড়া তলাগুলির ভার সইতে না পেরে নিচের তলাগুলি ক্রমশ: ধ্বসে পড়ে। কিন্তু আগে এ ভার সইত কেমনে ? বিষয়টা হলো উপরের ২০-২৫ তলার ভার যখন হঠাৎ এক সাথে ধ্বসে পড়ে তখন যে বিপুল ভরবেগের সৃষ্টি হয় তা পরবর্তীতে নীচের তলাগুলি সইতে পারে নি। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় তো এ ধরনের কোন বিপুল ভরবেগের ধাক্কা কোন তলাকে সইতে হয়নি। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় তার ধ্বসেও পড়বে না। এটা অনেকটা একটা ১০ কেজি পাথর খন্ডকে কোন লোকের পেটে রাখার মত। স্বাভাবিক অবস্থাতে যে কেউ ১০ কেজি কেন ২০ কেজি একটি পাথর খন্ড নিজের পেটের ওপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে পারবে, তেমন কোন কষ্ট হবে না। কিন্তু ওই পাথরখন্ডকে যদি ২০ ফুট ওপর থেকে ছেড়ে দেয়া হয় তখন লোকটির পেট ও পিঠ চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। এর কারন পাথর খন্ডটি তখন ভর-বেগ অর্জন করবে, যার পরিমান হলো- বস্তুটির ভর ও বস্তুটির বেগের গুনফল। এটা পদার্থ বিজ্ঞানের তত্ত্বের বিষয়। ঠিক একারনেই টুইন টাওয়ার ধ্বসে পড়ে। টুইন টাওয়ার কেন পৃথিবীর কোন দালানই এ ধরনের ভর-বেগের আঘাত সহ্য করে টিকে থাকার প্রযু্ক্তি দিয়ে তৈরী করা হয় না। কারন, এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম ও অভূতপূর্ব। অথচ ইসলামী পন্ডিত বলছে- এটা ছিল আমেরিকার অন্তর্ঘাত মূলক কার্যকলাপ। অন্তর্ঘাত মূলক কাজ হলে একটা বিমান পেন্টাগনে আঘাত হানে কিভাবে ? পেন্টাগন হলো আমেরিকার সামরিক দপ্তর, তার মানে আমেরিকা তার সামরিক দপ্তরকে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। এ ধরনের গাজাখুরী আর উন্মাদের মত কথাবার্তা একমাত্র বিকৃত মস্তিষ্কদেরকেই মানায়। তা ছাড়া আমেরিকা যদি মুসলিম দেশসমূহে আক্রমনের অজুহাত তৈরীর জন্য নিজেরাই কোন অন্তর্ঘাত মূলক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানোর দুরভিসন্ধি করত তাহলে তারা টুইন টাওয়ারের মত অত গুরুত্বপূর্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত না হেনে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানত , তা করতে একটা মাত্র বিমান ছিনতাই করাই যথেষ্ট ছিল চার চারটে বিমান ছিনতাই এর দরকার ছিল না। আর তা করেই তারা তাদের প্রয়োজনীয় অজুহাত পেয়ে যেত। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো – ইসলামী দুনিয়াতে কিন্তু এসব কথাবার্তা বিশ্বাস করার লোকের অভাব নেই। এর কারন হলো মানস পট। মানস পটটা তৈরীই হয়ে আছে এসব গাজাখুরি কথা বার্তা বিশ্বাস করার জন্য। এর পর লাদেন তার ভাষণে কতবার এ ঘটনার দায় দায়িত্ব স্বীকার করল তাও তাদের কাছে বিশ্বাস যোগ্য হয় নি। অথচ, ঘটনা ঘটার পর মুসলিম বিশ্বে এটা নিয়ে উল্লাস প্রকাশে কোন ঘাটতি দেখা যায় নি। প্যালেস্টাইনি রা তো রীতি মতো আকাশে ফাকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করেছে। বড়ই তাজ্জব ব্যপার।

এবারে দেখা যাক্, যারা উগ্রপন্থি ইসলামি জঙ্গী যথা আল কায়েদা, তালেবান, জে এম বি ইত্যাদি এরা সত্যিকার মুসলমান, নাকি যারা এদেরকে মনে করে এরা মুসলমান নামের কলংক ও এরা ইসলামকে বিকৃত করছে তারাই সত্যিকার মুসলমান। এসব ইসলামী জঙ্গী কি চায় ? তারা দেশে শরিয়া আইন চালু করতে চায়। ইসলামী দৃষ্টিতে এটা কি বেঠিক ? মোটেই না। প্রতিটি মুসলমান মনে করে- ইসলাম হলো একটা সম্পূর্ন জীবন বিধান যার মধ্যে রাজনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান, অর্থনীতি সব আছে। স্বয়ং মোহাম্মদ মক্কা মদিনাতে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে দেখিয়ে দিয়ে গেছে কিভাবে শরিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। কোরান হাদিসে তার পূর্ন নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যকীয় হলো মোহাম্মদের জীবনের কর্মকান্ড, নীতি ও উপদেশ অনুসরন করা। তাহলে যারা শরিয়া আইন চালু করতে চায় তারা যথার্থ মুসলমান নাকি যারা গনতান্ত্রিক পদ্ধতি কায়েম করতে চায় তারা সত্যিকার মুসলমান ?

শরিয়া আইন কি? শরিয়া আইন হচ্ছে আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধান কখনো ভূল হয় না , তাই শরিয়া আইন হলো নির্ভুল আইন। যাহোক শরিয়া আইনের কতিপয় প্রধান বিধানগুলো হলো এরকম যা কোরান ও হাদিস থেকে প্রনয়ন করা হয়েছে, যেমন- চুরির শাস্তি হাত কেটে দেয়া, মেয়েদেরকে আপাদমস্তক বোরখা মুড়ি দিয়ে চলতে বাধ্য করা, তাদেরকে একা রাস্তায় বের হতে না দেয়া, লেখাপড়া শিখতে না দেয়া, চাকরী করতে না দেয়া, গান-বাজনা শুনতে না দেয়া, ইসলামী বই পুস্তক ছাড়া অন্য কোন বই পুস্তক পড়তে না দেয়া এসব, যা কিন্তু পুরোই কোরান হাদিস অনুমোদিত ও সমর্থিত। তো আফগানিস্তানে তালেবানরা সেটারই প্রচলন করেছিল তাহলে তারা ইসলাম নিয়ে কি বাড়াবাড়ি করল ? আসলে তারাই বলে যে তালেবানরা ইসলাম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল যারা আসলে ইসলাম জানে না।তারা কোরান হাদিস পড়েনি আর তাই তারা মনগড়া কথা বার্তা বলে।

অনেকে বলে ইসলাম তো নারীদেরকে শিক্ষা গ্রহনে বা চাকরী করতে নিষেধ করেনি। কিন্তু ইসলাম নারীদেরকে শিক্ষা গ্রহনে উৎসাহিতও করেনি, কোন ব্যবস্থা খোলাও রাখেনি। ইসলাম নারীদের জন্য এমন সব ব্যবস্থার নিদান দিয়েছে যা পালন করে কোন নারী উচ্চ শিক্ষা তো দুরের কথা , প্রাইমারী শিক্ষাও গ্রহন করতে পারে না। কোরান হাদিস নিদান দিয়েছে-একজন নারী বাইরে যেতে চাইলে তাকে নিকটাত্মীয় যার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না এমন কেউ সাথে যেতে হবে, নারী একা বাইরে যেতে পারবে না, তাকে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকতে হবে, পর্দা দিয়ে পুরো শরীর মুড়ে রাখতে হবে যাতে কেউ তার পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত দেখতে না পায়। এমন ধরনের শর্ত মেনে কোন নারী উচ্চ শিক্ষা বা চাকরী করতে পারে ? বিষয়টা অনেকটা হাত পা বেধে একটা লোককে নদীর মাঝখানে ফেলে দিয়ে সাঁতরে নদী পার হয়ে তীরে যেতে বলার মত।

আল-কায়েদা, তালেবান, জে এম বি এসব উগ্র ইসলামী গোষ্ঠি নানারকম সুইসাইডাল আক্রমন করে সাধারন নিরীহ মানুষ মারে। তাদের ভাষায় তারা জিহাদে শরীক হয়ে আত্মদান করে শহীদ হয়। জিহাদ কি জিনিস? জিহাদ হলো- যারা ইসলাম গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানাবে তাদেরকে জোর করে প্রয়োজনে যুদ্ধের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলাম গ্রহন করতে বাধ্য করা না হলে তাদেরকে হত্যা করা। এ ধরনের জেহাদে যদি কোন জেহাদী মারা যায় সে শহিদ আর জিতে গেলে হবে গাজী। মারা যাক বা জিতে যাক উভয়টাতেই বিপুল লাভ। শহিদ হলে বেহেস্তে গিয়ে হুর নিয়ে অনন্তকাল ফুর্তি করতে পারবে, জিতে গেলে এ জগতেই দখলকৃত যুবতী নারীকে গনিমতের মাল হিসাবে ভোগ করতে পারবে। আর এর প্রত্যেকটাই কোরান ও হাদিস সমর্থিত। কোরানে বার বার মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করা হয়েছে জেহাদে যোগদান করতে। আর ঠিক একাজটাই করে সেই সব উগ্র পন্থি ইসলামী গ্রুপ আর তারা তা করে পূর্ন কোরান হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক। তাহলে তারা বিপথগামী হয় কি করে ? যারা ইসলাম জানে না , কোরান হাদিস পড়ে নি , শুনে মুসলমান একমাত্র তারাই এদেরকে বলতে পারে বিপথগামী মুসলমান। জেহাদের বিষয়ে কোরান কি বলছে দেখুন-

হে নবী, আপনি মুসলমানদেরকে জেহাদের প্রতি উৎসাহিত করুন। ০৮:৬৫
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ওই লোকদের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ বিচার দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে না। আল্লাহ ও তার রসুল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহন করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষন তারা করজোড়ে জিজিয়া কর প্রদান না করে। ০৯:২৯
হে ইমানদারগন, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও, এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক, আর জেনে রাখ আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। ০৯:১২৩
হে ইমানদারগন , নিজেদের অস্ত্র তুলে নাও এবং পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেত ভাবে বেরিয়ে পড়। ০৪: ৭১

এছাড়া ৪:৮৯ আয়াত তো আছেই। কোরান হাদিস অনুযায়ী তারাই কাফের যারা আল্লাহ ও তার রসুলের ওপর বিশ্বাস আনে না আর তাদেরকে আক্রমন করা ও অত:পর হত্যা করতে বার বার কোরান উৎসাহিত করছে। আর মুসলমান নামধারী যারা শরিয়া বিরোধী কাজ করবে, অর্থাৎ গান-বাজনা শুনবে ও করবে, পশ্চিমা গনতন্ত্রে বিশ্বাস করবে(কারন শরিয়া আইনে গনতন্ত্রের কোন স্থান নেই), পশ্চিমা গনতন্ত্রের ধাচে দেশ শাসন করবে, বিচার কার্য পরিচালনা করবে, তারাও কাফেরদের মত সম দোষী ও মুনাফেক আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ও তাদেরকে হত্যা করতে কোরানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর সেকারনেই সত্যিকার মুসলমানরা এদেরকে নানা রকম সন্ত্রাসী আক্রমন দ্বারা হত্যা করার কাজে ব্যস্ত আছে। তাহলে এরা বিপথগামী মুসলমান হয় কেমনে ?

জেহাদের বিষয়টা যে কোন মানষিক হিংসা, বিদ্বেষ, স্বার্থ বা সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয় যা সাধারনত: সুফী ধাচের মুসলমানরা ব্যখ্যা করে থাকে ও যা অবশ্যই ভুল ব্যাখ্যা, এটা যে সত্যি সত্যি অমুসলিমদের বিরুদ্ধে সব সময় চলমান সর্বাত্মক যুদ্ধ ,একেবারে বাস্তব যুদ্ধ, খুন, খারাবি আর লুট তরাজের যুদ্ধ তার বড় প্রমান, নিচের আয়াত-

গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান যাদের সঙ্গত কোন ওজর নেই, এবং ঐ মুসলমান যারা জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করে- সমান নয়। যারা জান মাল দিয়ে জেহাদ করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথে আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদিনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ট করেছেন। ০৪: ৯৫

বর্তমানে অনেক ইসলামী পন্ডিত জেহাদ বলতে বুঝায়- অসত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। কথাটি বেশ আকর্ষণীয় ও মুখরোচক। অনেক সময় সাধারন মানুষ এর ভেতরকার নিহিতার্থ বুঝতে পারে না ফলে তারা বিভ্রান্ত হয়। কিন্তু ইসলামী বিধানে অসত্য কি ? আর সত্য কি ? আমাদের ভাল মতো জানতে হবে- ইসলামী সত্য আর অসত্য এবং আমাদের প্রচলিত সত্য ও অসত্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। ইসলামী সত্য হলো-আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি প্রশ্নাতীত বিশ্বাস স্থাপন। অত:পর কোরান বর্নিত সকল বিষয় সত্য আর জীবনাচরনে রসুলের সমস্ত কার্যাবলী ও উপদেশ সত্য। এ ব্যপারে ন্যুনতম প্রশ্ন বা সন্দেহ করা অসত্য ও ধর্মদ্রোহীতার সামিল। কোরানে বার বার বলা হয়েছে যারা আল্লাহ ও তার রসুলের ওপর বিশ্বাস আনবে না তাদেরকে আক্রমন করতে হবে , পাকড়াও করতে হবে, যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করতে হবে। তার পর তাদের মালামাল গনিমতের মাল হিসাবে ভাগ বন্টন করে নিতে হবে। আর এটাই সত্য আর এ সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে যুদ্ধ সেটা হলো জিহাদ। অসত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলতে যে জিহাদ বুঝানো হচ্ছে তার প্রকৃত স্বরূপ এটাই। ইসলামে গনতন্ত্রের কোন স্থান নেই, বাক স্বাধীনতার কোন স্থান নেই কারন এগুলো মানুষকে আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি সন্দেহ প্রবন করে তোলে আর যা চুড়ান্ত রকম অসত্য। তাই গনতন্ত্রের ও বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধও জিহাদ। সুতরাং যারা ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে জিহাদ বলে প্রচার করে তারা মুলত আকর্ষণীয় কথা বলে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করার দুরভিন্ধিতে লিপ্ত। ইসলামী জিহাদ আর সমাজের প্রচলিত অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মোটেও এক কথা নয়। ইসলামী জিহাদ হলো এক সর্বাত্মক যুদ্ধ যা গোটা মানব সমাজকে ইসলামের পতাকা তলে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত শেষ হবে না আর সে যুদ্ধে নিরীহ জনপদে আতর্কিত আক্রমন, তাদেরকে গন হারে হত্যা করা, তাদের মা বোনদেরকে গনিমতের মাল হিসাবে ভোগ করা, তাদের সম্পদ ভাগ বন্টন করে নেয়া ইত্যাদি আমাদের বর্তমান সমাজে প্রচলিত যাবতীয় মানবতাবিরোধী কাজ কারবার সব বৈধ তথা সত্য।

এত কিছুর পরেও যদি কেউ জিহাদে যেতে ইচ্ছুক না হতো তাদেরকে কিভাবে জোরাজুরি করা হচ্ছে তা দেখা যায় নীচের আয়াতে-

আর তোমাদের কি হলো যে তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না , দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে। ০৪:৭৫

এখানে তাদেরকে তিরস্কার করা হচ্ছে কাপুরুষ হিসাবে। অর্থাৎ যারা জিহাদ করবে না তারা তাদের নারী ও শিশুদের জন্য দুর্বল তথা কাপুরুষ। তার মানে অসভ্য আরব দেরকে মোহাম্মদ আতেঁ ঘা দিয়ে উত্তেজিত করে তাদেরকে জিহাদে প্ররোচিত করছে। মুসলমান পন্ডিতরা এ আয়াতের অর্থ করে যে মোহাম্মদ নারী ও শিশুদের রক্ষা করার জন্য জিহাদের ডাক দিচ্ছে। কিন্তু বিষয়টা বাস্তবতা বর্জিত। কারন সেই মোহাম্মদের কালেও আরবে অসভ্য লোকগুলো একটা নীতি মেনে চলত আর তা হলো তারা কখনই নারী ও শিশুদের আক্রমন করত না। এ ধরনের কাজকে তারা জঘন্য কাপুরুষতা মনে করত ও তাই এ ধরনের কাজকে তারা ঘৃণা করত। তাহলে মোহাম্মদ এ ধরনের আয়াত কেন নাজিল করল? এর কারন মোহাম্মদ নিজেই আসলে নিরীহ জনপদে আক্রমন করে অনেক সময় নারী ও শিশুদের বন্দী করত যেমন করেছিল খায়বারো। তাই তার আশংকা ছিল কাফেররাও কোন না কোন সময় সে কাজটা করবে। এ আগাম আশংকায় তার এ ধরনের উক্তি। অর্থাত নিজেই এ ধরনর অপরাধ করে আবার সেই ধরনের ঘটনার আশংকায় সে আরবদেরকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে এ আয়াতের মাধ্যমে। আশা করি এতক্ষনে জিহাদ যে কি জিনিস তা বোঝা গেছে ভাল মতই।

একবার এক টিভি অনুষ্ঠানে দেখলাম জাকির নায়েক বলছে- আমিও একজন জিহাদী কারন আমি অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি। দেখলাম দর্শকরা বেশ হর্ষধ্বনি করে উঠল। কিন্তু জাকির নায়েকের কাছে সত্য কি আর অসত্য কি ? একজন মুসলমানের কাছে সত্য হলো ইসলাম আর ইসলামের জন্য জিহাদ। আর বাকী সব অসত্য।বিষয়টা দাড়াল খুব সুকৌশলে জাকির নায়েক সেই সব মুসলমানদেরকেই সমর্থন করছে যারা ইসলামের জন্য নানা রকম সন্ত্রাসী কান্ড করছে, নিরীহ মানুষ খুন করছে, কারন ইসলাম অনুযায়ী তারাই অসত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে আর সে নিজেও ঠিক সেরকম মন মানসিকার একজন লোক যে নাকি যুদ্ধ করছে ভিন্ন ফ্রন্টে। আর ইসলামের কোরান ও হাদিস তা অনুমোদনও করে। জাকির নায়েক যে খুব সুকৌশলে আসল কথাটি প্রকাশ করল তা কিন্তু পাবলিক বুঝতে পারল না। তারা বুঝতেও পারল না কোন অসত্যের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ করছে। অথচ মূর্খ পাবলিক না বুঝেই হর্ষধ্বনি দিয়ে তাকে উৎসাহ জোগাল।

এক শিক্ষিত ভদ্রলোকের সাথে আলাপ করছিলাম যিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, ত্রিশটা রোজা রাখেন নিয়মিত। জিজ্ঞাসা করলাম- কোরান পড়েছেন?
-পড়েছি। গোটা রমজান মাসেই তো কোরান পড়ি।
– পড়ে কিছু বুঝেছেন ?
– কেমনে বুঝব, পড়ি তো আরবী কোরান।
আমি বলি- তাহলে কোরানে ভাল কথা লেখা আছে নাকি খারাপ কথা লেখা আছে তা বুঝলেন কিভাবে ?
তিনি নিরুত্তর রইলেন।
তখন আমি তাকে একটা বাংলা কোরান বের করে কিছু অংশ পড়ে শুনালাম। শুরু করলাম সুরা ফাতিহা দিয়ে-

শুরু করছি আল্লাহর নামে,যিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু। ০১:০১

জিজ্ঞেস করলাম- উক্ত আয়াত কার বানী ?
-আল্লাহর বানী।
তখন জিজ্ঞেস করলাম- আল্লাহ কি নিজের নামে নিজেই শুরু করবেন নাকি ?
তখন সে একটু ধাধায় পড়ে গেল এ ধরনের প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না। কি উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে চিন্তা করতে লাগল।

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ০১:০৫

জিজ্ঞেস করলাম- আল্লাহ কি নিজেই নিজের ইবাদত করেন নাকি ? নিজের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন নাকি ?
এবার সত্যি সত্যি সে বিপদে পড়ে গেল। কারন সে কোনদিন বিষয়টাকে এভাবে চিন্তা করেনি। কিন্তু তার পরও খুব দৃঢ়তার সাথে বলতে চেষ্টা করল- বাংলা অনুবাদ এরকম শোনালেও আরবী ভাষায় সব কিছু ঠিক আছে।
আমি তাকে এবার খুব আন্তরিকতার সাথে জিজ্ঞেস করলাম- উক্ত আয়াত যে আল্লাহ বলেছে এরকম কি সত্যিই শুনায়?
এবার সে কোন উপায় না দেখে বলল- না শুনায় না। মনে হচ্ছে জিব্রাইল আল্লাহর কথা নিজের মত করে নবীর কাছে শোনাচ্ছে।
তখন আমি বললাম- কিন্তু কোরান হলো আল্লাহর প্রত্যক্ষ বানী। আর আল্লাহ জিব্রাইলকে নিজের মত করে কোন কিছু মোহাম্মদকে বলার জন্য বলে দেন নি। এখানে জিব্রাইল শুধুমাত্র বাহক। কোরানকে একটা পত্র হিসাবে ধরা যায় যা আল্লাহ লিখেছেন মোহাম্মদের কাছে। জিব্রাইল ডাক পিয়নের মত খালি মোহাম্মদের কাছে বহন করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন ছাড়া তার এখানে কোরানের বানী নিজের মত করে বলার কোন সুযোগ নেই।

এবার আমি আরও অনেক আয়াত পড়ে শুনালাম যেমন-

এতে সন্দেহ নেই যে যারা আমার নিদর্শন সমূহের প্রতি যে সব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে পুড়ে যাবে, তখন আমি আবার তা পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী ও হেকমত কারী। ০৪:৫৬

তাকে জিজ্ঞেস করলাম এ আয়াত কি আল্লাহর মনে হয় ?
-হ্যা এটাকে আল্লাহর মনে হয়।
-কেন মনে হয় ?
-কারন এখানে আল্লাহ নিজেকে আমি এ সর্বনামে উল্লেখ করেছেন । ব্যকরনগত ভাবে সেটাই সঠিক।
-কিন্তু- নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী ও হেকমত কারী- এ টুকুকে কি আল্লাহর বানী মনে হয়?
– না মনে হয় না । মনে হয় এটা অন্য কেউ বলছে।
-আল্লাহ বললে বাক্যটি কেমন হতো ?
– আল্লাহ বললে বাক্যটি হতো- নিশ্চয়ই আমি মহা পরাক্রমশালী ও হেকমতকারী, কারন একই বাক্যে এর আগে আল্লাহ নিজেকে আমি বলে উল্লেখ করেছেন।
-তাহলে আপনার কি মনে হয়, কোরান আল্লাহর বানী ?

অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ইমানদার হবে না যতক্ষন না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে তোমাকে ন্যয়বিচারক বলে মনে না করে। ০৪:৬৫

এবার জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহ কি নিজেই নিজের নামে কসম কাটেন নাকি ? আর এ কোন ধরনের আল্লাহ যে তার কথা বিশ্বাস করাতে তাকে কসম কাটতে হয় ?

পরিশেষে আমি সর্বপ্রথম সূরা আলাক নিয়ে পড়লাম।

পাঠ করুন, আপনার পালন কর্তার নামে ——-৯৬:০১

-এখানে পাঠ করুন এটা নিশ্চয়ই আল্লাহর কথা না। কারন কোন কিতাবের প্রথমেই লেখা থাকে না পাঠ করুন। এমনকি আপনার পালনকর্তার নামে এটাও আল্লাহর কথা না। এটা সম্পূর্নই জিব্রাইলের কথা আর জিব্রাইল যদি মিথ্যা হয় তাহলে এটা সম্পূর্নই মোহাম্মদের নিজের কথা । জিব্রাইল যদি কোন ওহি নিয়েও আসে তা শুরুর আগে সে মোহাম্মদকে একটা প্রারম্ভিক ভূমিকা স্বরূপ একথা বলছে যে , পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে —- অর্থাৎ এটা জিব্রাইলের নিজের বানী , আল্লাহর না। কি বলেন ?

এবারে সে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে লাগলেন আরবী ভাষার সাথে বাংলা বা ইংরেজী ভাষার প্রকাশ ভঙ্গির তফাৎ আছে, হয়ত বা অনুবাদক ঠিক মতো অনুবাদ করেন নি ইত্যাদি। আমি বললাম যারা কোরানের বাংলা বা ইংরেজী অনুবাদ করেছে তারা তো আপনার আমার মত চুনোপুঠি না, তারা ভালভাবে আরবী ভাষা না জেনে এটা করেন নি। কিন্তু কে শোনে কার কথা , লোকটি তার বক্তব্যে অটল থেকে বললেন নিশ্চয়ই অন্য কোন কারন আছে যা আমরা বুঝি না। অগত্যা আমি রণে ভঙ্গ দিলাম।