বসে আছি একলা-
দুপুরে সে সাধারণত এদিক দিয়ে যায় না
তবুও থাকি অপেক্ষায়…
যদি সে অকারণ এসে যায়।

লেজ কাটা কুকুরটা ইতি-উতি চায়
লজ্জা বোধহয় পায় সেও কিছুটা
ফুলের টবটা একটু বাতাসেই হুড়মুড়িয়ে পড়ে
তবুও থাকি প্রতিক্ষায়।

হকার ছুড়ে মারে প্রতিদিনের দায়িত্বটা
দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে আঁচড়ে পড়ে দৈনিকটা;
লাশ আর রক্ত মাড়াবো না আজ;- আমার এখন
অপেক্ষার সময়। পরক্ষণেই মনে পড়ে যায়,
গতকালের ছিন্ন-ভিন্ন লাশগুলো মাথা খোঁজা দরকার
মাথা বিহীন লাশ দাফন করা উচিৎ হবেনা নিশ্চয়!
কিন্তু সে যদি এসে যায়?
দেখে আমার হাত রক্তাক্ত, চোখে মুখে রক্তের নেশা!
তার সহজ সরল মনে এর চেয়ে বড় ধোকা
আর হবে না বোদহয়!

কাক কা-কা করে জানান দেয় তার অবস্থান
পিয়ন দু’তিনটে ছিঠি ছুড়ে ফেলে একসাথে
বুঝতে পারি সব ঠিকই আছে;-
আজ আর সে আসবে না এদিকটাই।
এখন লাশগুলোর পরিচয় খোঁজা দরকার-
খুঁটে খুঁটে দেখি প্রতিটা লাইন, কলাম…
কারো সাথে কারো মিল নেই; যদিও বা মেলে
বাধসাধে রক্তের গ্রুপে।
এখন চেনবার এটাই একমাত্র উপায়।

পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টায়-
পৃষ্ঠার বাড়িতে আমার নাক দিয়ে রক্ত ঝরে
মিশে যায় ঐ মোটা তাজা লাশটির সাথে
যেমনি রং তেমনি গ্রুপে!
তাহলে কি ওর মাথাটাই আমার কাছে?
নাকি ওই দেহটাই আমার?
আমি শির শির করে কাঁপতে থাকি
রক্ত বের হয় মুখ, চোখ, কান দিয়েও;
দুজনের পরিচয় এখন নতুন এক ফ্যাসাদ।

কারও পায়ের শব্দে যেন বাতাসটা থেমে যায়
থেমে যায় আমার অকারণ রক্তপাত
ভিতর থেকে বিড়ালটার মিউ মিউ শব্দও আর
শোনা যাচ্ছে না; দুধের হাড়িটা এতক্ষণে পেল বোধহয়।
দেখি দেয়ালের আড়াল থেকে তার পায়ের কিছুটা
এতক্ষণে এলে তুমি?- আমি অভিযোগের সুরে বলি।
কোন অজুহাত দেখায় না সে; বাড়িয়ে দেয় তার অন্য পা’টিও
আমি স্পষ্ট দেখতে পাই, লাল শাড়িটা সে পরেছে আজ।
নিশ্চয় লাল ব্লাউজটাও পরেছো তুমি?
তোমাকে না আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে- বলে ফেলি না দেখেই সবটা।

আস্তে আস্তে- দেয়াল ফুঁড়ে বের হয়ে আসে-
লম্বা লম্বা আঙ্গুল,উন্নত বুক, মসৃন কাধ, তারপর..?
তারপর আমাকে হতবাক করে
মাথা বিহীন আরো একাট লাশ!
আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি-
যতই দেখি ততই অচেনা মনে হয়;
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ি-
আগামীকালের পেপারের অপেক্ষায়
মাথা বিহীন লাশ দাফন করা উচিৎ হবে না নিশ্চয়?

সে লাল শাড়িটা পরেছিল বোধহয়!