কল্পনার সত্য মিথ্যা (১)
{সত্য-সন্ধানী পাঠকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ প্রবন্ধ। একজন লেখকের বইয়ের আলোচনা করতে গিয়ে আমাকে অশ্বারোহী হতে হয়েছে ধর্মের বহুমুখি অলিগলিতে। দাপিয়ে বেড়াতে হয়েছে কোরআনের পাতায় পাতায়। এতে করে প্রশ্ন এসেছে অবারিত ভাবে, ব্যাখ্যা এবং বিপুল তথ্যাদি এসেছে সত্যের চাহিদায়। যা প্রত্যেক মানুষের জানা প্রয়োজন। যারা অলসতা বশত এটা পাঠ করবেন না, তারা কখনও একজন লেখককে সত্যি করে চিনতেও পারবেন না। আমি অনুরোধ করবো মুক্তমনার প্রত্যেক পাঠকই যেন দয়া করে এ প্রবন্ধটি পাঠ করেন}
উত্তর পুরুষ
প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুল আলমকে জানাই শুভেচ্ছা। আপনি আপনার বইয়ের নাম দিয়েছেন “সৃষ্টি-মহাপ্রলয়তত্ত্বে ব্ল্যাকহোল ও কোরান-হাদিস” প্রকাশক, মুস্তাফিজুর রহমান, সার্ভিস পাবলিশার্স, বগুড়া থেকে ২০০৫ সালে বইটি প্রকাশিত। গ্রন্থ পরিচিতি ও লেখকের কথা কলামের ছয় পৃষ্টায় আপনি পাঠকদের মতামত লিখে জানাবার অনুরোধ করেছেন। সেজন্য ধন্যবাদ। আমি এখানে আমার সুচিন্তিত মতামত প্রবন্ধ হিসেবে উপস্থাপনা করছি।

আপনার অতি ধর্মপ্রিয়তার আবেগে হোক, কিংবা জ্ঞানের অপর্যাপ্ততার কারণেই হোক, কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা গুলোতে আপনার অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে । সেজন্য আমার নিকট থেকে হয়তো আপনি অনুকুল মন্তব্য পাবেননা। ভুল ত্রুটি সবার দৃষ্টিতে সমান ভাবে ধরা পড়েনা এবং এর ব্যাখ্যাও সকলে সমান ভাবে উপস্থাপনা করতে পারেনা। আমি মনে করি পুরো ইসলামি সমাজের কল্পনায় বিশ্বাসী প্রচুর মানুষ আপনার পুস্তকের প্রতি সমর্থন দেবে। কারণ ধর্মের অনুকুলে আপনি যাই বলেন, তা’তেই তারা পুণ্যের আশায় জী-হুজুর বলে যাবেন । আমি সু্ক্ষ্ণ বিবেক প্রয়োগে ও যুক্তিতর্কে বিশ্বাসী লোক। মহান সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করি এতই গভীর অনুভুতি দিয়ে যা আপনাকে আমি বুঝাতে পারবোনা, এবং এই বিশ্বাস এতই দৃঢ় যে এটাকে টলানোর মত কোন শক্তি পৃথিবীতে নেই। কিন্তু কথাবার্তা ও লেখালেখি দেখলে মনে হবে আমি যেন সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী। কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলে রাখি ধর্মে বিশ্বাস না করার অর্থ এই নয় যে ইশ্বর তথা সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাস করা। আপনারা ধর্মের লেজুড় ধরে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন আর আমি বিশ্বাস করি ঐ লেজুড় না ধরে। ব্যববধান এইটুকু। আমি ইশ্বরকে যে ভাবে দেখি এবং যে ভাবে তাঁর ব্যাপ্তি ও সৃষ্টিকর্মকে দেখি তা আপনারা সেভাবে কখনও দেখতে পারবেন না। কারণ আমার পথটাই আলাদা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে এত প্রচ- বিশ্বাসের মধ্যে ও আমি মনে করি পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম মানুষের ব্রেইন-বুদ্ধি থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এখানে আল্লাহ বা ইশ্বরের সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। কারণ সৃষ্টিকর্তা যেহেতু মানুষকে ব্রেইন ও বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, সেজন্য মানুষ’ই নিজ বুদ্ধিমত্তার বলে সৃষ্টিকর্তা বা ইশ্বরকে আবিষ্কার করেছে। (যেমন করে মানুষ জাতি কয়েক শতাব্দি থেকে সৃষ্টির অনেক তথ্য এবং অনেক রহস্যময় বিষয়বস্তুর আবিষ্কার করেছে।)

মানুষ যখন আদিম অবস্থায় ছিল সে তখন ইশ্বরকে আবিষ্কার করতে পারেনি। সে সুর্যকে ভেবেছে ইশ্বর, ঝড়কে, আগুনকে, পাহাড়কে, সাগরকে ভেবেছে ইশ্বর, ইত্যাদি শত রকমের প্রমাণ আমরা পাই। একজন বৈজ্ঞানিক যেমন কোন কিছু আবিষ্কারের আগে সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন । তারপর সেই সুত্র ধরে তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যান। তারপর কাজ সমাধা না করে তিনি হয়তো মৃত্যু মুখে পতিত হন। পরবর্তীতে অন্য একজন বৈজ্ঞানিক সেই সুত্র ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি হয়তো ৬০ ভাগ কার্য সমাধা করে তিনিও মৃত্যুমুখে পতিত হন। হয়তো আরও বেশ কয়েক বৎসর পর অন্য আরেকজন বৈজ্ঞানিক ঐ পুরানো দু’জন বৈজ্ঞানিকের সুত্র ধরেই গবেষণা চালালেন। তারপর একদিন বিশ্ববাসীকে চমক দিলেন। একটি প্রাকৃতিক পদার্থের তথ্য কিংবা ঐরকম কোন রহস্যের উদঘাটন করলেন। বা রোগ নির্মূলের প্যাটেন্ট আবিষ্কার করলেন। তারপর স্বীকৃতি হিসেবে পেলেন ‘নোবেল পুরষ্কার’। এই গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিকরা শুধু সুত্রের উপর নির্ভরশীল থাকেন না। তারা নিজেদের বুদ্ধি, বিবেচনা ও মেধাকে নিজের মত করে কাজে লাগান, নিজের মনে উদয় হয় যে সব প্রশ্ন , মনের মধ্যে তৈরি হয় যে দর্শন, সেটার শেষ কি ? তাই দেখার জন্য তারা চরম আত্মবিশ্বাসী ও চরম অধ্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। এসব করতে গিয়ে তারা যে কতকিছু উল্টা পাল্টা করেন তার যেন শেষ নেই। এই উল্টাপাল্টা বা ভুল থেকে তাদের অনেক অভিজ্ঞতা হয়। কারণ ‘ভুল অতিক্রম করা না হলে সত্যের সন্ধান মিলেনা’। এমনও দেখা গেছে দিনের পর দিন সাধনা করে কয়েক শো পৃষ্টার রিপোর্ট লিখেও সেটাকে শেষ অবধি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে হয়েছে। এই ভুল গুলোর খবর আমরা সাধারণ মানুষ খুব’ই কম জানি। এগুলো তারাই জানেন যারা ঐ বৈজ্ঞানিকদের জীবন নিয়ে গবেষণা করেন। কিন্তু পৃথিবীতে যদি এমন আইন থাকতো যে, “ বৈজ্ঞানিকদের ভুল-ত্রুটি নিয়ে খুঁজাখোঁজি করা রাষ্ট্রীয় আইনে অপরাধ এবং ধর্মীয় দৃষ্টিতে চরম পাপ। কেউ যদি তা করে তাহলে সরকারি ভাবে শাস্তি হবে পাঁচ বৎসরের জেল। আর পরকালে হতে হবে নরকবাসী ”। তাতে ফল কি হত ? আমরা বৈজ্ঞানিকদের কোন ত্রুটি দেখতে পেতামনা। তারা সত্য বা রহস্যের উদঘাটন করতে গিয়ে যে অনেক রকম ভুল তথ্যের আমদানি করেছিলেন তা ঢাকা পড়ে যেতো।
তদ্রূপ অতীতের বিভিন্ন ধর্মের ইতিহাস যদি আমরা পাঠ করি তাহলে দেখতে পাবো প্রত্যেক ধর্মাবতারগণ বিরুধীদের কাছে সন্তুষজনক কোন প্রমাণ রেখে যেতে পারেন নি। কিন্তু তাদের সমর্থকরা আজীবন তাদের সব কাজের তারিফ ও সমর্থন দিয়ে তাঁদেরকে জিইয়ে রেখেছেন সব সময়। তা সত্বেও ত্রুটিগুলোও মানুষের বিবেক বিবেচনায় ধরা পড়ে এবং এগুলো নিয়ে সমালোচনা করলে পাপ হবে, সমাজের মানুষ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে. পরকালে সুপারিশকারী হিসেবে কেউ থাকবেনা ঐরকম মানসিক ভয়ে চরম ধর্মবিশ্বাসী মানুষেরা চুপ করে থাকে।
ধর্মীয় অবতারগণ তৎকালের বঞ্চিত ও “ নিপীড়িত শ্রমিক তথা দাসদের ” দুঃখ কষ্টকে অনুভব করতে পেরেছিলেন মানবিক উত্তম গুণাবলীর কারণে। যা অনেক মানুষেরই থাকে, কিন্তু সবার বোধশক্তি প্রচণ্ড হয় না। উহা হয় সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রাকৃতিক ভাবে। যেমন করে তিনি জ্ঞান দেন কিছু মানুষদের কিংবা কিছু বৈজ্ঞানিকদের। যেমন আপনি নিজেই আপনার বইয়ের গ্রন্থ পরিচিতি কলামের তৃতীয় পৃষ্টায় লিখেছেন,
“কানাডার ম্যাকমাষ্টার বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীগন আইনস্টাইনের সংরক্ষিত মগজের উপর দীর্ঘদিন এক গবেষণায় দেখতে পান তার ইনফিরাইর প্যারাইটল লোব অংশটুকু স্বাভাবিক মানুষের মগজের চেয়ে শতকরা ১৫ ভাগ প্রশস্ত। মগজের এই অংশটুকু গণিত শাস্ত্র, গতিবিদ্যা, স্থান-সংক্রান্ত মানসচিত্র ইত্যাদির বোধ শক্তি প্রবলভাবে নির্ভরশীল। আইনস্টাইনের প্রভাবশালী দূরদৃষ্টি প্রথমে কল্পনার প্রতিমূর্তির স্বজ্ঞাত হন এবং পরে তা
গণিতের ভাষায় রূপ দেন। এছাড়া তার মগজের অবয়রে ফাটলগুলি (সিলভিয়ান ফিশ্যার) স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট। খাঁজগুলি না থাকায় মগজের কোষগুলি খুবই সন্নিকটবর্তী । ফলে, দূরদৃষ্টি সম্পূর্ন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য ধারণের জন্য পারস্পরিক আন্তসংযোগ সহজে হয়। সৃষ্টির নিদর্শন সমুহ মানুষকে অবহিত করবেন বলেই হয়তো আল্লাহ ‘আইনস্টাইনের’ ব্রেইনের ব্যতিক্রম হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অবিশ্বাসী এবং বিধর্মীদের কাছে ইহুদী আইনস্টাইনের তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা সহজে হবে বলেই হয়তো সর্বজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা আইনস্টাইনকে এই যোগ্যতা দিয়েছেন “।
আপনার এই বক্তব্যের আলোকে আমি যদি বলি হযরত মোহাম্মদকে ও আল্লাহ আইনস্টাইনের চেয়ে কয়েকগুণ অধিক গুণ সম্পন্ন ব্রেইন দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন তাহলে কি সেটা গ্রহণ যোগ্য হবেনা ? আমরা তো ভালই জানি যে মোহাম্মদকে মহামানবে যারা পরিণত করেছে তারা হলো মোহাম্মদের প্রতি অন্ধভক্তির সেই সব আত্মীয়-স্বজন তথা ছাহাবার দল এবং পরবর্তী কালের হাদিস লেখকগণ।
বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও বিবেকের দৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাই ধর্মীয় অবতারগণ নিজেদের দোষ ত্রুটি ঢাকার জন্য নানাবিধ কৌশলি বাক্য প্রয়োগ করেন এবং মানুষের বিশ্বাসের উপর এর ভার ছেড়ে দেন। মানুষ মনে করে একজন ধর্মীয় মহামানবের দশটা কথাই যখন বিশ্বাসযোগ্য তখন দু একটা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এর একটা গুঢ়ো রহস্য আছে যা সাধারণ জ্ঞান দিয়ে বুঝা যাবেনা। এবং সে জ্ঞান পেতে হলে ধর্মীয় আম্বিয়াদের মত সৎ চরিত্রবান হতে হবে, নিস্পাপ হতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ধর্মীয় অবতারগণ নিজেদের ভুল ত্রুটি ঢাকার জন্য কি ভাবে ভাষার কৌশল ব্যবহার করেন তার প্রমাণ পাওয়া যাবে নিম্ন লিখিত বাক্যগুলোতে
যেমন:- ” তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কিছু আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন, এগুলো কিতাবের মূল অংশ: আর অন্যগুলো রুপক, যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফেতনা সৃষ্টি ও ভূল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রুপক তার অনুসরণ করে। বস্তুত আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানেনা, এবং যারা সুবিজ্ঞ তারা বলে আমরা এ বিশ্বাস করি। সমস্তই আমাদের প্রতি পালকের নিকট থেকে আগত। বস্তুত বুদ্ধিমান লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে”। তিন নং ছুরা আল-এমরান, এর সাত আয়াতে এই বাক্যগুলোর উল্লেখ আছে। প্রিয় পাঠক! এই বাক্যগুলোর সারমর্ম কি ? একটু ভেবে দেখুন। এটার সারর্মম হলো কোরআনের কোন আয়াত যদি কারো কাছে ভুল হিসেবে বিবেচিত হয় তাহলে সেটাকে রুপকের আশ্রয়ে আশ্রয় দিয়ে কোরআনের ইজ্জতকে বাঁচাতে হবে। আর যদি কোন আয়াতই অর্থবোধক না হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে ব্যাখ্য চাইতে হবে। কেউ কি আল্লাহর কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে ব্যাখ্যা পাবে ? এটা সম্ভব ?
তদ্রূপ অন্য আরেকটি আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করুন ” আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং বিশ্বাসীদের পথ ভিন্ন অন্যপথ অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করবো আর তা কত মন্দ আবাস”। এটি হচ্ছে চার নং ছুরা নিসা’র ১১৫নং আয়াত। এভাবে ছুরা মায়েদার ৪৮ আয়াত এবং ছুরা আনআম এর সাত এবং নয় নম্বর আয়াত সমুহে বাক-কৌশলের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। ৬৯নং ছুরা ‘হাক্কাহ’ এর কতকগুলি আয়াত লক্ষ্য করুন (৪০) নিশ্চয়ই এ কোরান এক সম্মানিত বার্তা বাহকের মাধ্যমে প্রেরিত, (৪১) এ কবির রচনা নয়, তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর (৪২) এ কোন বাক-চাতুর কথিত কাহিনী ও নয়, তোমরা অল্পই অনুধাবন কর। (৪৩) এ বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ (৪৪) সে (মুহম্মদ) যদি কিছু রচনা করে আমার নামে চালাতে চেষ্টা করতো (৪৫) আমি তাকে কঠোর হস্তে দমন করতাম। (৪৬) এবং তার কন্ঠনালী কেটে দিতাম (৪৭) তোমাদের কেউই তাকে রক্ষা করতে পারতনা। (৪৮) এ সাবধানীদের জন্য অবশ্যই এক উপদেশ।
কোরআনকে বিশ্বাস করার জন্য নানাভাবে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে এরকম কতকগুলি আয়াত হচ্ছে ছুরা আল-হাজ্জ এর ৭২ আয়াত, ছুরা জাসিআ এর ৮ এবং ৩৫ আয়াত, ছুরা আহকাফ এর ১০ আয়াত। অথচ কোরআনের বহু বাক্যে বার বার বলা হয়েছে “কোরআন উপদেশের কিতাব মাত্র” ফরজ বা অত্যাবশ্যক হিসেবে বলা হয়নি।
ধর্মীয় অবতারগণ এভাবেই নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাক-চতুরতা কৌশলের আশ্রয় নেন। আপনারা জীবন অভিজ্ঞতা থেকে দেখবেন যারা মিথ্যাকে ঢাকতে চায়, তারা সাধারণত কথায় কথায় কসম খায়। বাংলাদেশ থেকে যতই পশ্চিম দিকে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের দিকে এগুবেন ততই প্রমাণ পাবেন এই কসম খাওয়ার প্রথাটিকে। জ্ঞানী গুণী উর্দূ ভাষীরা প্রায়ই বলে “খোদা কি কসম একীন কিযিয়ে মেরে বাত”। খোদার নামে কসম করে বলছি আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করুন। কোরানের ৬৮,৭৫, ৭৭, ৭৯, ৮৫, ৮৬, ৮৯, ৯০, ৯১ ,৯২, ৯৩, ৯৫ ও ১০০ নং ছুরা গুলোর প্রারম্ভে দেখতে পাওয়া যায় নানাবিধ কসমের বন্যা । কসম খাওয়ার কি এমন প্রয়োজন ছিল ? স্বাভাবিক ভাবেই জবাব আসে “এটাতো আল্লাহর হুকুমেই নবী মোহাম্মদ (সঃ) বলে গেছেন এতে উনার কোন দোষ নেই “।
অনেক সময় কিছু কিছু প্রশ্নের বানানো জবাব থাকে, এটাও এরকম একটা বানানো জবাব। কিন্তু আমরা ভালই বুঝি যে কসম খেলে লোকে প্রগাড় ভাবে যে কোন কথা বিশ্বাস করবে, এই ধারণার বশবর্তী হয়েই নবী মুহম্মদ বার বার কসম খেয়ে মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েছেন। এতবড় একজন নবী, এত আদর্শবান, এত সৎ চরিত্রের অধিকারী সুতরাং উনি নিজ থেকে কখনও কসম খেতে পারেননা, স্বয়ং আল্লাহই ছুরাগুলোর মধ্যে কসম খাচ্ছেন ; এই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে তিনি তার ধর্ম প্রতিষ্ঠার কাজে সফল পেয়েছেন। আরেকটি কথা ভেবে দেখুন; সে যুগে চীন মিশর গ্রীস এবং রোমের শহরাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকা ব্যতীত ভাষা শেখার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান ছিলনা, কেবল ধনী, প্রতাপশালী এবং রাজ পরিবারের লোকরা গৃহ শিক্ষক নিয়োগ করে তাদের
সন্তানদের শিক্ষা দিতেন। সে যুগে মায়ের ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষাই ছিল সকল সাহিত্যের মুল, রচনার মুল। সুতরাং নবী মুহম্মদ প্রাকৃতিক ভাবেই মাতৃভাষা যে ভাবে আয়ত্ব করেছিলেন সেই ভাষাতেই তিনি ওহীর কথা বলতেন। সুতরাং তিনি অশিক্ষিত ছিলেন তিনি কোরআনের ভাষা কোথায় পেলেন ? এজাতীয় কথাবার্তা নিছক অর্থহীন। পৃথিবীতে যারা শিক্ষিত হয়নি তারা কি মাতৃভাষায় সুন্দর করে কথা বলতে পারেনা ? বাস্তবে দেখা গেছে কোন কোন অশিক্ষিত লোকেরা নিজেদের মাতৃভাষা তথা স্থানীয় ভাষায় কথা বলার সুর, ছন্দে, বাকপটুতায় শিক্ষিতদের চেয়ে ও অনেক অগ্রগামী। তারা কথায় কথায় ছন্দ মিলিয়ে নিপুণ বাক্য প্রয়োগ করতে পারে। ছন্দ মিলিয়ে অপরুপ ছড়া কাটতে পারে। বিভিন্ন রকমের কেচ্ছা কাহিনীকে ছন্দের মিল দিয়ে অনর্গল বলে যেতে পারে। সুতরাং কোরআনের ভাষা সীমাহীন সুন্দর, কোরআনের ভাষা স্বর্গীয়, কোরআনের ভাষা তুলনাহীন ইত্যাদি মন্তব্য মানেই হচ্ছে একটি ধর্মকে অতিরিক্ত বিশেষত্ত্ব আরোপ করে তা গ্রহণযোগ্য করে তোলা। লোকে বিশেষত্ত্ব আরোপ করে এই জন্য যে, তারা মনে করে দুই কাঁধের নেকী বদী ফিরিশতাদ্বয়ের মধ্যে নেকী লিখক ফিরিশতা এসব মন্তব্য ও বিশেষত্ত্ব আরোপের জন্য তাদের আমলনামায় অবিরত পুণ্য বা ছওয়াব লিখে যাবেন।

মক্কা, মদীনার লোকেরা আগে থেকেই আরবী ভাষা বুঝতো। এই ভাষার অক্ষরগুলো এসেছে ইহুদীদের “হিবরো” ভাষা থেকে। সুতরাং কোরআনের বাক্য সমুহ প্রকাশ হওয়ার পর ওটা তুলনাহীন, স্বর্গীয় ভাষা হয়ে গেল কি ভাবে ? কোরআন নাজিল হওয়ার আগে ঐ ভাষা লোকে যে ভাবে বুঝতো বা প্রয়োগ করতো, কোরআন নাজিল হওয়ার পরে ও ঐ ভাষা লোকে একই ভাবে প্রয়োগ করতো এবং বুঝতো । সুতরাং মাঝখান থেকে (অর্থাৎ কোরআনের বাক্য প্রকাশ হওয়ার পরে) উহা হঠাৎ কি ভাবে স্বর্গীয় হয়ে গেল তা কোন বিবেকবান মানুষের জ্ঞানে ধরা পড়েনা। যদি হযরত মোহাম্মদ নিজ মাতৃভাষা “আরবীতে” কোরআনের বাক্যকে নাজিল (কিংবা আবৃত্তি) না করিয়ে মোজেজা দেখানোর জন্য আল্লাহর নিকট থেকে অনুরোধ করে চায়নীজ কিংবা ফ্রেঞ্চ ভাষাতে নাজিল করাতেন এবং আল্লাহর দেয়া কুদরতী থেকে তিনি তা আরবী ভাষাতে অনুবাদ করে নিজ সম্প্রদায়কে তা বলতেন কিংবা বিলিয়ে দিতেন তা হলে আমরা নিঃসন্দেহে বুঝতাম যে কোরআন ঐশ্বরিক। কেননা সবাই সাধারণ জ্ঞানে ও বুঝতে পারতো আরবী ভাষাভাষি জাতির মাঝখানে নবী মোহাম্মদ (সঃ) অন্য একটি ভাষায় কোরান নাজিল করিয়েছেন সুতরাং এখানে তাঁর কোন বাক-চাতুরতার সুযোগ বা চালাকিত্ব নেই।
জিব্রাইল ফেরেশতা পাহাড়ের গুহায় এসে নবী মোহাম্মদকে বল্লেন “পড় তোমার প্রভূর নামে, তিনি বলিলেন আমি তো পড়তে জানিনা” জিব্রাইল ফিরিশতা তখন তাঁহাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন, কয়েক বার, এতেই তার আরবী ভাষার জ্ঞান উন্মেষ হয়ে গেল, তিনি সাথে সাথে পড়তে লাগলেন। এসমস্ত কথা বার্তা হচ্ছে তাঁর নিজের ধ্যান-বাস্তবের কারিগরি কথা। যে ব্যক্তি মনে মনে আল্লাহর ধ্যান করতেন এবং সেই অদৃশ্য শক্তির সঙ্গ পাওয়ার জন্য যিনি মনে মনে বিভোর থাকতেন, সেই রকম মতি গতি বিশিষ্ট মানুষের মনের কাল্পনিক জগতের কেন্দ্রে সৃষ্টি হয় এক শৃঙ্খলাময় উৎপাদনশীল ভাবসত্ত্বা। যা মনোবিজ্ঞানীদের বর্ণনা করা সিজোফ্রেনিয়া, (Schizophrenia) সংজ্ঞার সাথে মিলে যায় । সেই উৎপাদনশীল ভাবসত্ত্বার গভীর কেন্দ্রে যারা নিজেদের মনকে সর্বদাই চাপা দিয়ে ঘুরপাক খাওয়াতে পারে, তাঁরা হয়ে যান দুই পৃথক ভাবসত্ত্বার ধ্যানী পুরুষ। বাইরের জগতে তারা সকল সামাজিকতা, ন্যায় অন্যায়, আদর্শকে যেমন বাস্তব হিসেবে দেখতে পান, তদ্রূপ ভেতরের মনো-জগতে তাঁরা তৈরি করতে পারেন নানাবিধ সমস্যা সমাধানের উপকরণ। নিজ কল্পনায় দেখতে পান সৃষ্টিকর্তা নামের মহাশক্তির এক বিমূর্ত রূপ। হযরত মুহম্মদ ছিলেন সেই চরিত্রের অধিকারী একজন মানুষ। আজকাল বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনী নামে (সাইন্সফিকশন) যে উপাদেয় কেচ্ছাপ্রধান সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে। হযরত মুহাম্মদও সে রকম একজন বিশিষ্ট গল্পকার। কারণ তাঁর কথা বলার যে ভঙ্গী ও ভাষা অর্থাৎ “হাদীস” সেটার সাথে কোরাআনের ভাষার চৌদ্দ আনাই মিল পাওয়া যায়। হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় হযরত মোহাম্মদ তৎকালের একজন শ্রেষ্ঠ সাইন্সফিকশন গল্পের জন্মদাতা।
যাইহোক সেই বিশাল শক্তিমান সৃষ্টিকর্তা স্বর্গের আরশ থেকে সাধারণ পৃথিবীতে নেমে এলে, পৃথিবী সেই ওজন সহ্য করতে পারবেনা। কিংবা সৃষ্টিকর্তার আলোর ঝলকানিতে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে পৃথিবী । (যেমন করে তিনি গল্প শুনে ছিলেন মুসা নবী আল্লাহর সাক্ষাত করেছিলেন যার ফলশ্রুতিতে ছাই হয়েছিল তুর পাহাড়) সুতরাং এজন্য প্রয়োজন একজন দূতের (যেমন করে পৃথিবীতে রাজা বাদশাহদের দূত থাকে) হযরত মুহম্মদ ঈসা নবীর ইনজিল কিতাব সম্বন্ধেও খবর জানতেন। ইংরেজীতে ফেরেশতাদের “এঞ্জেল” বলা হয়। এই এঞ্জেলদের মারফতে যে বাইবেল কিতাব এসেছে তার নাম তিনি দিয়েছেন ইঞ্জিল কিতাব। ঐসব এঞ্জেলদের ইস্রায়েল, এস্রাফিল, মিকায়েল, গাব্রিয়েল, এজ্রাইল সহ আরও অনেক (এঞ্জেলদের) নাম বাইবেল বিশ্বাসীদের কন্ঠস্থ ছিল। হযরত মোহাম্মদ সেই অনুকরণেই কোরআনকে আসমানী কিতাবে পরিণত করার জন্য তাঁর কল্পনায় সৃষ্টি করেছিলেন জিব্রাইল নামের একজন দূত। সেই দূত এলেন হেরা গুহায়। এই ধ্যান কল্পনা ছিল এতই গভীর যে অন্যের কাছে ইহা অদৃশ্য অবাস্তব হলেও হযরত মুহাম্মদের সেই শৃঙ্খলাময় উৎপাদনশীল ভাবসত্ত্বায় উহা ছিল বাস্তব। তিনি ভয়ে গলদ ঘর্ম হয়েছিলেন এবং নিজ থেকে পাঠ ও করেছিলেন। আবার হেরা গুহা থেকে বাস্তব জগতে ফিরে এসে সেই ধ্যান-কল্পনার বাস্তব ঘটনাটি ও নিজে প্রকাশ করেছিলেন নিজ স্ত্রীর কাছে। কিন্তু কোন দিনও স্ত্রীকে কিংবা বিশ্বাসী কোন ছাহাবীকে তিনি পাহাড়ের গুহায় নিয়ে যাননি জিব্রাইল দর্শনের জন্য। কারণ তিনি জানতেন এটা কাউকে দেখানো সম্ভব নয়, এটা উৎপাদন হয় তার ধ্যান থেকে এবং প্রয়োগ হয় বাস্তবেরর মত কেবল নিজের মনে ও বোধের জ্ঞানে।
ধর্মে অগাধ বিশ্বাসী কোন কোন লেখকদের বই পুস্তকে দেখা যায় (বিশ্ব নবীর মেরাজ গমন পুস্তকেও তার উল্লেখ আছে) জিব্রাইল ফেরেশতা শারীরিক অবয়বে এতই বিশাল যে, পৃথিবীর সমস্ত সাগরের পানি যদি জিব্রাইলের মাথায় ঢালা হয় তাহলে সেই পানি কোমর পর্যন্ত পৌছার আগেই শেষ হয়ে যাবে। এত বিশাল যদি জিব্রাইল ফিরিশতার আকার হয় তাহলে ছোট হেরার গুহায় তিনি কি ভাবে নিজের যায়গা করে নিলেন তা ভাবতে বিস্ময় লাগে। এজন্য কোন কোন সাহাবীদের নাম উল্লেখ করে কোন কোন লেখক বলেন হেরার গুহায় জিব্রাইল ফেরেশতা আসেননি। এসেছিলেন জিব্রাইল ফেরেশতার পক্ষ থেকে অন্য একজন ছোট ফেরেশতা। কেউ কেউ এ ও বলেন যে, জিব্রাইল ফেরেশতা আল্লাহর হুকুমে যে কোন রূপ এবং যে কোন আকার ধারণ করতে পারেন। সুতরাং এতে জিব্রাইল ফেরেশতা বাতাসের রূপ ধারণ করে, কিংবা মানুষের রূপ ধারণ করে আসতে পারেন, এমন কি মৌমাছির রূপ ধারন ও করতে পারেন। আবার তিনি এমন ও রূপ ধারণ করতে পারেন যা কেবল আল্লাহর পেয়ারা দোস্ত হযরত মোহাম্মদ নিজেই দেখতে পারেন অন্য কেউ দেখতে পায়না। এই ভাবে ছেলে ভুলানো গল্প (বা সাইন্সফিকশন) দিয়েই ধর্মের কাহিনীকে মজবুত করে রাখা হয়েছে।
এবারে আর কিছু কথা না লিখে পারছিনা। আপনি আপনার সাধারণ বিবেক প্রয়োগ করে এর একটা জবাব নিজ থেকে পাবেন। একজন মানুষ পৃথিবীতে গড়পড়তা ৭০ থেকে ৯০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এই জীবনের মধ্যে সে যদি অনেক অনেক পাপ করে তবে সেই মানুষকে যদি আরও ৯০ বছর শাস্তি দেয়া হয় তবে কি সেটা যথেষ্ট হয়না ? আচ্ছা বুঝলাম একজন মানুষ অত্যাচারী ছিল, নিমকহারাম ছিল সেজন্য তাকে যদি দ্বিগুণ শাস্তি অর্থাত ৯০ + ৯০ = ১৮০ বছর শাস্তি দেয়া হয় তবু কি সেই শাস্তি যথেষ্ট নয় ? কিন্তু ধর্মীয় বই পুস্তক ও ভিন্ন ভিন্ন হাদিছে এমনকি কোরআনেও বলা হয় অনন্তকাল সে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। আপনি নিজেই বিবেচনা করুন ৯০ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করে মৃত্যুর পর পাপের জন্য আর ও ৯০ কিংবা ১৮০ বছর কিংবা ৩৬০ বছর ও যদি শাস্তি দেয়া হয় তবুও কি আল্লাহর গোস্বা কমবেনা ? অনন্তকাল পুড়তে হবে এ কেমন যুক্তির কথা ? এতে কি এটা প্রমাণ হয়না যে আল্লাহ অবিবেচক ? তারপরও কথার শেষ নয় । কোরানের প্রচুর আয়াতে আছে : (যেমন; ছুরা বাকারা আয়াত ২৭২) আল্লাহ যাকে সৎ পথ দেখান্ না, সে কিছুতেই সৎ পথ প্রাপ্ত হয়না, অথবা আমি যাকে সৎ পথ দেখাইনা তুমি (হে মুহম্মদ) যতই সৎ পথ দেখাও সে কিছুতেই সৎ পথ প্রাপ্ত হবেনা। তারপর ও আল্লাহ মানুষের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন শয়তান নামের এক কুচক্রীকে, আবার এও বলে দিয়েছেন তোমরা শয়তান থেকে সাবধান থেকো। আল্লাহর এই যে দুমুখি কথাবার্তা তা থেকে বিশ্বাস হয়না এত মহাজ্ঞানী একজন আল্লাহ এত অবিবেচক হতে পারেন, এত খল নায়কের চরিত্রের মতো হতে পারেন। এবং হালকা-মনা চঞ্চল শিশুদের মতই তিনি মানুষকে নিয়ে এভাবে তামাশা করবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এগুলো ধর্মীয় অবতারগণের দুর্বলতার পরিচয়। সব সময় যারা দূরদর্শীতার পরিচয় দেয় তারা এভাবেই মাঝে মধ্যে কোন না কোন ভাবে নিজেদের অদূরদর্শীতার সাক্ষর ও রেখে যায়। এটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম। কথায় বলে হাতীর ও পা পিছলে, ঘোড়া ও হোঁচট খায়। যাহোক আমি আর অধিক কিছু বলতে যাচ্ছিনা। দ্বিতীয় প্রবন্ধে আপনার পুস্তকের বিষয়ে আরও কিছু বিস্তারিত মন্ততব্য, কিছু আলোচনা শেষ করে বিদায় নেবো।

*****************************************************************************
কল্পনার সত্য মিথ্যা (২) কোরআন হাদীসের জন্ম
উত্তর পুরুষ
প্রিয় পাঠক! আপনারা নিশ্চয়ই “সৃষ্টি-মহাপ্রলয়তত্ত্বে ব্ল্যাকহোল ও কোরান-হাদিস” বইয়ের প্রথম মতামতটি পাঠ করেছেন । এবারে আমি সকল প্রকার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমার বিবেকের দৃষ্টিতে যা সত্য হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে আমি তা নিঃসঙ্কোচে লিখে দিলাম। গ্রন্থ পরিচিতি ও লেখকের কথা কলামের তৃতীয় পৃষ্টায় মাহবুবুল আলম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা কোরানের আয়াতের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। যেমন: “আমি ওদের (অবিশ্বাসীদের) জন্য আমার নিদর্শনাবলী বিশ্ব জগতে ব্যক্ত করবো এবং ওদের নিজেদের মধ্যে, ফলে ওদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে এই কোরআন সত্য। একি যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ে অবহিত।” (সুরা নং ৪১, হা-মীম আস-সিজদা : ৫৩ আয়াত) এই উক্তি দ্বারা আপনি কিভাবে বুঝলেন যে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে ? কিসের নিদর্শনাবলী তার কোন উল্লেখ নেই। এই শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট কোন কিছুকে উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং এই বাক্য দ্বারা অনেক কিছু বুঝানো হতে পারে। কোরআনে উল্লিখিত এই জাতীয় বাক্যতে রয়েছে একটা বিশেষ চালাকি । অর্থাৎ কথা আমি এমন ভাবে বলবো, যাতে সবকিছুর জবাব হয়ে যায়। অপরদিকে জবাবটি বা কথার তথ্যটি, সত্য না হলেও কাউকে দায়ী করা যাবেনা। এগুলোকে বলা হয় বাক-চাতুরতা। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অনেক আবিষ্কার আজ কাল হয়েছে বলেই এর সত্যতা হয়তো পেলেন। যদি আবিষ্কার না হত তাহলে এই আয়াত কি ভাবে কাজে লাগাতেন ? কোরআন তো বলে যায়নি অমুক বৈজ্ঞানিক, কিংবা অমুক এলাকার বৈজ্ঞানিক এত সালে কিংবা এত সালের কাছাকাছি ঐ তথ্যটি আবিষ্কার করবেন। সুরা আল-ইমরান এর সাত নং আয়াতটি তদ্রুপ একটি দ্বৈত চরিত্রের আয়াত । এই আয়াতের অর্থ হলো যখন যেটা বুঝা যাবে সেটা ঠিকই আল্লাহর আয়াত, যখন সেটা বুঝতে পারবোনা সেটা ও আল্লাহর আয়াত। অর্থাৎ কোরানে এমন সব অস্পষ্ট আয়াতাদি আছে যে গুলোকে যে কোন দিকেই নিয়ে কাজে লাগানো যায়। সেই আয়াত গুলির কথা প্রথম প্রবন্ধের মধ্যে উল্লেখ করেছি। (ছুরা নং ৩ আল-ইমরান, আয়াত নম্বর সাত এবং চার। তদ্রূপ আয়াত নং ৭৯ ) তারপর (ছুরা নং ৪ নিসা, আয়াত ১১৫) এরপর (ছুরা নং ৬৯ হাক্কাহ, আয়াত ৪০ থেকে ৪৮) এই যে বহুমুখি আয়াত, এগুলো মানুষকে বিশ্বাসী হয়ে যাওয়ার জন্য একটি সুদুর প্রসারী সুন্দর কৌশল মাত্র। কোরআনের এই জাতীয় আয়াত প্রকাশ হওয়ার পর কোন প্রমাণ হাজির করার প্রয়োজন পড়েনা।

বিজ্ঞানীরা যা আবিষ্কার করেন তা কোরআনে আছে এরকম একটা মনোবৃত্তি নিয়ে আপনি আপনার বই লিখেছেন। কোরআনের মহাত্ম্য বেশী করে প্রকাশ হলে অসংখ্য পূণ্য হবে কিংবা ধর্মের প্রতি আপনার রয়েছে অগাধ ভালবাসা এরকম একটি প্রবল ইচ্ছা শক্তি আপনাকে এভাবে লিখতে উদ্বোদ্ধ করেছে। সে জন্য উচিৎ পরম সত্যকে প্রকাশ। কিন্তু ভুল ব্যাখ্যা, অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে মানুষকে সত্যের দিক নির্দেশ দেয়া যায়না। এখন আমি যদি বলি পৃথিবী থেকে মহাকাশে তিন লক্ষ আলোকবর্ষ দুরে আরেকটি সৌর জগৎ আছে এবং সেখানে পৃথিবীর মত আরেকটি পৃথিবী আছে। সেখানেও মানুষ আমাদের এই পৃথিবীর মত বসবাস করছে। এক হাজার বৎসর পর যদি বৈজ্ঞানিকরা সত্যি সত্যি সেরকম আরেকটি সৌর জগৎ এবং গ্রহ আবিষ্কার করেন, তাহলে কি ধরে নিতে হবে আমার বাণী ঐশ্বরিক ? এভাবে আমি শত শত বাক্য অনুমান করে লিখে গেলাম এবং আগামী দুই শতাব্দির মধ্যে এর ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ সত্য হিসেবে প্রমাণ পাওয়া গেল, এতে করে আমার লিখার মুল্যায়ন কোন ধর্মীয় দৃষ্টিতে দেখবেন ?
আসলে ধর্ম হচ্ছে একটি অনুমান বিজ্ঞান। এখানে অনুমান করে অনেক কিছু বলা হবে। যেটা সত্য হবে সেটা হয়ে যাবে আল্লাহর বাণী, যেটা সত্য হবেনা সেটা হয়ে যাবে রুপক কিংবা ‘এর প্রকৃত ব্যাখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা’ এজ্ঞান কেবল আল্লাহর আছে’ এজাতীয় কিছু কথা বলে লেফাফা দুরস্ত সমাধান দেয়া।
কোরআনে প্রচুর আয়াত আছে এরকম (যেমন: ছুরা মায়িদাহ আয়াত ১৭, ১৮ এবং ১২০)‍‍ “ আকাশ ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে সব আল্লাহর ”, কিংবা “ মহাশুণ্য ও পৃথিবীতে এবং এতদ উভয়ের মধ্যে দৃশ্য অদৃশ্য যা কিছু আছে সবই আল্লাহর এবং তিনি তা সৃষ্টি করেছেন বিশেষ উদ্দেশ্যে”। এই জাতীয় আয়াত দ্বারা অর্থাৎ অনুমান বাক্য দ্বারা সবকিছুকে একটা গড়পড়তা হাঁ বাচক অনুকুলের আয়ত্বে আনা হয়। আকাশ ও ভূমন্ডলের মধ্যে যা কিছু বলতে মেঘ, জলীয়বাস্প,বাতাস, ধুলিকণা, যেমন বুঝাবে, তেমনি অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, মিথেন গ্যাস ইত্যাদি ও বুঝাবে। তারপর বৈজ্ঞানিকদের নব আবিষ্কার গামা রশ্মি , কসমিক রশ্মি , অতিবেগুনী রশ্মি , ইত্যাদিও চলে আসবে। এমনকি ভবিষ্যৎে যদি আকাশ ও ভূমন্ডলীর মধ্যে তিন পা বিশিষ্ট মানুষ কিংবা খাড়া শিংযুক্ত সাপ, শিয়াল, দেখতে পাওয়া যায় তাহলে সেটাও এই বাক্যের আওতায় চিরন্তন সত্য হিসেবে চলে আসবে। বাক্যগুলোর নমুনা দেখে মনে হবে যেন বিশ্বের কোন রাজা বাদশাহ আকাশ ও ভূমন্ডলের আওতায় যা কিছু আছে সব কিছুকে পৈতৃক সম্পত্তির মত দাবী করে বসেছে। যেন এই বাক্যগুলো না বললে অন্য কেউ এগুলো কেড়ে নেবে। এসমস্ত বাক্য দ্বারা বুঝানো হচ্ছে এগুলোর মালিক বা সত্ত্বাধিকারী আল্লাহ এবং এই ঘোষণা না দিলে যেন আল্লাহর অস্তিত্ব টিকানো যাচ্ছেনা ভাবখানা এরকম। কিন্তু ভাবনার বিষয় এইযে, কোরআনের বাক্যের লেখক যা কিছু আছে এই শব্দটির স্থানে যদি বলতেন অদৃশ্য বায়ুতে প্রায় এতটি (সংখ্যা উল্লেখ করে) বায়বীয় উপাদান রয়েছে। মেঘের কণায় বিদ্যুতের অনু পরমানু রয়েছে, কিংবা সুর্যের আলোতে উপকারী এবং অপকারী তেজষক্রিয় রশ্মি রয়েছে তাহলে বুঝতাম ওটা অনুমান নয় বরং ঐশ্বরিক।
তদ্রুপ অনুমানের আওতায় কোরানের ছুরা যুখরুফ এর ১২ আয়াতে এবং ছুরা জারিয়াত এর ৪৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। কারণ আমরা এই পৃথিবীতে দেখতে পাই সকল প্রকার জীব জানোয়ার, পাখি, পোকা মাকড়, কীট পতঙ্গ ইত্যাদির জোড়া আছে। সুতরাং এই জ্ঞান থেকে সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে বল্লে সেটা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে গণ্য করা যায়। প্রাণী দেহের কোষ বিভাজনে কিংবা পদার্থের মৌল কণা ইলেকট্রন, নিউট্রন, প্রোটন গুলোর অস্তিত্বের কোন ইঙিত কোরআনের কোথাও নেই অথচ ঐ তথ্য গুলো আবিষ্কারের পর সেটা ও কোরআনে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে বলে গলাবাজি করা অর্থহীন। জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে এই সাধারণ বাক্য দিয়ে বৈজ্ঞানিকদের আবিষ্কারকে তুচ্ছ জ্ঞান মনে করে কোরআনকে বিজ্ঞান হিসাবে উত্তীর্ণ করার প্রয়াস একটা বাতুলতা ও চাতুরতা মাত্র। আপনি আপনার সৃষ্টি-মহাপ্রলয় তত্ত্ব ও ব্ল্যাকহোল বইয়ের ১২ পৃষ্টায় উল্লেখ করেছেন পশ্চাদ অপসরন এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ একটি যুগান্তকারি আবিষ্কার । বৈজ্ঞানিকরা এই তথ্য আবিষ্কার করার জন্য কোরআন থেকে কোন ফর্মুলা ধার করেননি। কিন্তু তাদের আবিষ্কারকে তুচ্ছ জ্ঞানার্থে কোরআনে উল্লেখিত অনুমান ভিত্তিক আয়াতকে সেখানে প্রতিস্থাপন করেছেন সম্পূর্ণ ভাবে আপনার ইচ্ছায়। ৫১নং ছুরা যারিয়াতের ৪৭ আয়াতে মহাবিশ্বকে সম্প্রসারিত করার কোন উল্লেখ নেই। ওটা আপনার একটা ভুল উপলব্দি না হয় “ বাইবেল কোরান ও বিজ্ঞান”, ডঃ মরিস বোখাইলীর পুস্তকের বাংলা অনুবাদকারী আখতার-উল-আলমের ভুল অনুবাদের অপব্যাখা থেকে ধার করা। (এবিষয়ে জানতে চাইলে বলবেন তথ্য পাঠাবো) ঐ আয়াতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে “আমি আমার ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই মহাক্ষমতাশালী”। অন্য এক অনুবাদে বলা হয়েছে “আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশীল”। সম্প্রসারিত কথাটির মানে হচ্ছে বিস্তারিত করা, ব্যাপ্তি ঘটানো, বহুদুরে (এক্ষেত্রে অসীম) পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া। অতএব স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে আপনার পুস্তকে এবং আখতারুল আলমের পুস্তকে সম্প্রসারিত করেছি শব্দটি আপনাদের মনগড়া কারসাজি। আপনারা এভাবে কোরআনের শব্দের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে ভুলবিদ্যা শেখাতে পারেননা।

আপনার পুস্তকের ১৩ পৃষ্টায় উল্লেখ করেছেন “ফালাক” শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আকাশ, মহাশুন্য, কক্ষপথ, নক্ষত্র ইত্যাদি। অর্থ তো এভাবেই হবে। কারণ কোরআনে এভাবেই সব কুল রক্ষা করার জন্য বহুমুখি অর্থের শব্দগুলো ব্যবহার হয়েছে। আগেই তো বলেছি এগুলো বাক-চাতুরতার উজ্জ্বল প্রমাণ। আল্লাহর কাছে কি বহুমুখি অর্থ ব্যতীত নির্দিষ্ট অর্থ বুঝায়, বা একক অর্থ বুঝায় এরকম শব্দের ভান্ডার ছিলনা ? আপনার পুস্তকের ১৪ পৃষ্টায় বলা হয়েছে বৈজ্ঞানিকরা উজ্জ্বল তারকা সমতুল্য বস্তু কোয়াসার সন্ধান পেয়েছেন। এগুলো অকল্পনীয় গতিতে আমাদের মহাবিশ্ব থেকে পশ্চাদ অপসারন করে অসীমে হারিয়ে যাচ্ছে। কোরআনের ৮১ নং ছুরা তাকভীর এর ১৫ এবং ১৬ আয়াত কি এই গুলো ইঙ্গিত করছে ? “আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়, চলমান হয় ও অদৃশ্য হয়”। দেখুন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা কিংবা জ্যোতিপদার্থবিদরা পৃথিবীর মহাশুণ্য গবেষণা কেন্দ্র থেকে কিংবা পৃথিবীর কক্ষপথে শক্তিশালী টেলিস্কোপ বসিয়ে কোটি কোটি আলোক বর্ষ দুরের যে চিত্র আমাদের দেন তা চিত্রের সাথে অনুমানের মিশ্রণ মাত্র। আলো ও রশ্মির যে গাণিতিক ও বিশ্লেষণ তথ্য তারা পান, এতে বহু ত্রুটি থাকে। কোটি কোটি আলোক বর্ষ দূর থেকে ভেসে আসা, এইসব আলো ও মহাজাগতিক রশ্মি সমুহের স্পুরণ, গতি, অবক্ষয়, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংমিশ্রণ, মহাকর্ষ বলের শক্তি-অনুপাত ইত্যাদির অনেক গরমিল থাকে। তাদের বিশ্লেষণটা একটা গড় হিসাব মাত্র। সুতরাং ওগুলো পশ্চাদ অপসরণ করছে, না ভাসমান অবস্থায় অসীম দুরত্ব নিয়ে চক্রাকারে আবর্তন করছে তা তারা ১০০% নিশ্চিত নন। আপনি নিশ্চয়ই জীবনে রেলগাড়ীতে ভ্রমন করেছেন। রেলগাড়ী যখন ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে কিংবা গাছপালা সম্বলিত গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে তখন কোথাও ঝোপঝাড়ের ফাঁকে দুর পাহাড়ের দিকে তাকালে মনে হয় পাহাড় উল্টো দিকে দৌড়াচ্ছে এবং হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে কি তাই ঘটছে কে জানে ? একটা অতি সাধারণ উদাহরণ দিলাম। সুতরাং মহাবিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় তারকারাজি পশ্চাদ অপসারণ করছে, নাকি অন্য একটা অদ্ভূত রহস্যের খেলা সেখানে চলছে তা কেউ জানেনা। সুতরাং চৌদ্দশত বৎসর আগে এবং বর্তমানেও আমরা সন্ধ্যা বেলায় খালি চোখে যে তারকাগুলো দেখি, মধ্যরাতে সে তারকাগুলোকে আমরা দেখি অনেক পশ্চিমে সরে গেছে। কেন এমন হয় ? তা হয় পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য, তারপর মহাকাশের তারকাদের নিজেদের আহ্নিক অথবা বার্ষিক গতির রয়েছে একটা হিসেব। ঐ তারকাগুলো আমরা দিনের প্রখর সুর্যের আলোর জন্য দেখতে পাইনা বলেই আমরা মনে করি মিলিয়ে গেছে বা অদৃশ্য হয়ে গেছে। কিন্তু পরদিন আবার সেই তারকাগুলো দেখা যায়। এই যে দিন রাত্রির তফাৎে তারকার আগমন এবং প্রস্থান এটাকেই ছুরা তাকভীর এর ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে । এটা অতি স্পষ্ট ব্যাপার, আপনি এই স্পষ্ট এবং সুন্দর বাক্যগুলোকে অযথা বৈজ্ঞানিকদের সম্ভাব্য আবিষ্কার কোয়াসার এর সাথে বেহুদা জোড়া তালি দিবেননা।

কোরআনে চন্দ্র ও সুর্যের নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ বা পরিভ্রমণ ইত্যাদির কথা সুন্দর ভাবে উল্লেখ হয়েছে এতে আমার কোন দ্বিমত নেই। চৌদ্দশত বৎসর আগে কোরআনে উল্লিখিত চন্দ্র ও সুর্যের কক্ষপথের পরিভ্রমণ কথাটি চরম সত্য হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর কোন মুসলিম বিজ্ঞানী সেটাকে প্রমাণ করতে পারেননি। সেটা প্রমাণ করে দেখালো ইউরোপের বৈজ্ঞানিকগণ। তারপর যে পৃথিবীতে বসবাস করে “নবী” হিসেবে হযরত মোহাম্মদ নিজেকে ঘোষণা দিলেন, সেই পৃথিবী ও যে নিজ কক্ষপথে ঘুরছে আবার নিজ অক্ষের উপরে ২৪ ঘন্টায় একবার করে পাক খাচ্ছে, কিংবা আমাদের পৃথিবীটা যে গোলাকার, এই খবরটিও তিনি বিশ্ববাসীকে জানাতে পারেননি। ধর্মগ্রন্থে এ্ভাবে কিছু তথ্যাদি সত্য হলেও মাঝে মধ্যে অনেক তথ্যের সত্যতা মিলেনা। এথেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় ধর্মগ্রন্থ গুলো বহুল অনুমান নির্ভর। কোরআন এমন কোন পুস্তক নয়, যা দিয়ে আপনি জীবনের বহুমুখি অংকবিদ্যা কিংবা জ্যামিতির পরিমাপ বিদ্যা শিখতে পারবেন। কোরআন এমন কোন পুস্তক নয়, যা দিয়ে আপনি বস্ত্র বুনন কাজটি শিখতে পারবেন। কিংবা পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা ও চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়ণ করে তার উপকার দিয়ে সমাজ ও মানুষের সেবা করবেন। কোরআন এমন কোন পুস্তক নয়, যা দিয়ে কোরআন লেখার মত কালি ও কলম কিংবা কাগজ তৈরীর ফর্মুলা শিখতে পাবেন কিংবা বাসস্থান তৈরীর প্রকৌশল জ্ঞান অথবা ব্যবসা বানিজ্যের সফল কৌশল জানতে পারবেন। কোরআন অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের অনুকরণে কল্পনার মিশ্রণে একখানা বহুমুখী সমাজ-বিজ্ঞান এবং লোকমুখে প্রচলিত গল্পের কিছু কিছু সমাবেশ। এই সমাজ বিজ্ঞান আপনার জীবনকে প্রার্থনার ভিতর দিয়ে ব্যস্ত রাখবে। সামাজিক ও পারিবারিক মুল্যবোধ শেখাবে। এগুলো শিখতে ও জানতে গিয়ে সর্বোপরি আপনার স্বাধীনতাকে কম হলে ও চল্লিশ হাজার হাদীছের অনুশাসনে শৃঙ্খলিত করবে। তারপর পরকালের বাকী-প্রাপ্য, স্বর্গের সম্ভাবনাময় নিশ্চয়তা দিবে।
বিগব্যঙ্গ তথ্যাদি নিয়ে আপনি কোরআনের আয়াত সমুহকে ধার-কর্জ করে যে ভাবে কাজে লাগাতে চেয়েছেন তা সেভাবে কাজে লাগেনি। ছুরা হুদ এর সাত নং আয়াত (১১ ঃ ৭) দ্বারা ঐসব বিগব্যঙ্গ তথ্য নাকচ হয়ে যায়। এই আয়াত থেকে জানা যায় মহাশুণ্য ও পৃথিবী সৃষ্টির আগে আল্লাহর আরশ বা সিংহাসন এর অস্তিত্বকে সচল রাখার জন্য তিনি আরেকটি পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিলেন। যা শুন্য জল কণার উপরে বা হাইড্রোজেন গ্যাসের উপরে ভাসমান ছিল। সহজ কথায় কোরআনের মত বলতে পারি “আল্লাহর আরশ পানির উপরে ভাসমান ছিল”। কোরআনে যে ছয় দিনে আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন (ছুরা আরাফ আয়াত ৫৪ এবং ছুরা ইউনুস আয়াত ৩ ) তার সাথে বিগ-ব্যঙ্গের ছয়টি সময়ের যে তুলনা করেছেন তা নিতান্তই যুক্তিহীন এবং বেমানান। কারণ বিগ-ব্যঙ্গ মতবাদটিতে তাপ বিকিরণের যে হিসেব বলা হয়েছে এবং পদার্থ বিদ্যার সুত্র অনুযায়ী যে সব ব্যাখ্যা আছে তার ভিত্তিতে শত শত প্রশ্ন ও আছে । সে সব প্রশ্নের জবাব দেবে কে ? । আপনি বিগ ব্যঙ্গ এর ছয়টি পর্যায় কালের সাথে কোরানের ছয় দিনের বিষয়টি গুলিয়ে নিয়েছন। অর্থাৎ ছয়টি পৃথক পর্যায় কালকে আপনি ছয় দিন হিসেবে ধরে নিয়েছেন। সাবাস !! ধমাধম মাস্তে কলন্দর !! তাহলে কোরআনে বর্ণিত সেই ছয়দিনের সর্বশেষ দিনটি এখনও শেষ হয়নি। কারণ ওটা আপনার দেয়া হিসেব অনুযায়ী তিনলক্ষ বৎসর থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, যেখানে দিন এখনও শেষ হয়নি সেখানে ছয়দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো কি ভাবে ? এতদ্ব্যতীত আমরা এও জানি কোরআনে বর্ণিত এক দিনের সমান পৃথিবীর এক হাজার বছরেরর সমান। সেই হিসেবে পৃথিবী ও মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ছয় হাজার বৎসর সময় লেগেছে। (ছুরা নং ২২ : ৪৭ আয়াত) এবং (ছুরা নং ৩২ :৫আয়াত)। এথেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আপনার জোড়া তালি দেয়া বিগ-ব্যাঙ্গ থিওরীর সাথে কোরআনের আয়াতের কোন সাযুজ্য নেই।
আপনার পুস্তকের (সৃষ্টি-মহাপ্রলয়তত্ত্বে ব্ল্যাহোল) ২৪ পৃষ্টায় পাওয়া যায় একটি চরম স্ববিরুধিতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। এই পৃষ্টা পাঠ করে সহজেই বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ এবং মোহাম্মদ (সঃ) উভয়েই এক-জাতীয় নুরের (আলো বা জ্যোতি) সমন্বয়ে সৃষ্টি। তাই যদি সত্যি হয় তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় মোহাম্মদ আল্লাহর এক অংশ (নাউজুবিল্লাহ) অথচ কোরানে বার বার বলা হয়েছে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অমার্জনীয় পাপ। (ছুরা নিসা, আয়াত ৪৮ দ্রষ্টব্য) এটা কি কোরান ঐশ্বরিক হিসেবে মান্যকারীদের জন্য বিরাট স্ববিরুধিতা নয় ?
পৃথিবীতে মানুষ যে ভাবে জন্ম গ্রহণ করে, হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ও তদ্রূপ সহজ সরল গৃহিনী বিবি আমেনার জরায়ুতে ৮ থেকে ১০ মাস গর্ভধারনের মাধ্যমেই জন্ম নিয়েছেন। তিনি এবং তাঁর মাতা পিতা সবাই ছিলেন রক্ত মাংশের মানুষ। এখন সেই মোহাম্মদকে তাঁর ভক্তরা ভাবে গদ গদ হয়ে পরক্ষ ভাবে আল্লাহর নুর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মুহাম্মদকে পরক্ষ ভাবে আল্লাহর অংশী করে নিচ্ছে। কোরআনের ৫:১৫ আয়াতে জ্যোতি বা নুর বলতে জ্ঞানের আলো বা জ্ঞানের নুর বুঝানো হচ্ছে । আল্লাহর শারিরীক অস্তিত্ব বলতে যদি নুর বা জ্যোতি বুঝানো হয়, তাহলে সেই জ্যোতি বা নুরের (শরীরের) কোন অংশ হযরত মোহাম্মদ নহেন। কোরআনে আরও উল্লেখ আছে “তোমরা আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে দাড় করিওনা”। আপনার বইয়ের ২৪ পৃষ্টা থেকে কোন প্রশ্ন না করেই মেনে নিলাম আল্লাহ তার নুর থেকে মোহাম্মদ (সঃ) কে সৃষ্টি করেছেন, সুতরাং এ সৃষ্টি তা হলে তো বাবা আব্দুল্লাহর বীর্যস্খলিত নহে। সুতরাং বিকৃত মনা খৃষ্টানদের মতো যদি কোন মুসলমান অতি-ভক্তির কারণে মোহাম্মদকে আল্লাহর পুত্র বলে ঘোষণা দেয় তাহলে আপনি কি দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করবেন ??? কিন্তু বইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহ ও মোহাম্মদ উভয়ের্ ম্যাটেরিয়েল তো (আলোক পদার্থ ) একই। অর্থাৎ একই জাতের একই শ্রেণীর নুর দিয়ে যখন সৃষ্টি করা হলো তখন তো বলা যায় ঃ- বেশী পরিমাণ নুরের দ্বারা নিজের শক্তিকে ও ক্ষমতাকে অটুট রাখলেন তাই তিনি বড় মাপের আল্লাহ। আর সামান্য বা কম পরিমাণ নুর দিয়ে যে হযরত মোহাম্মদকে সৃষ্টি করা হলো তিনি হলেন অতি ছোট মাপের আল্লাহ। বিষয়টি বুঝাবার জন্য বাধ্য হয়ে এমন কথা বলার জন্য আমি নিজেই আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে ‘ নাউজুবিল্লাহ’ পড়ছি।

(কাসাসুল আম্বিয়া পুস্তক ও কিছু কিছু হাদীছ মতে আল্লাহ নিজ নুরের ১০০ ভাগ থেকে মাত্র এক ভাগ আলাদা করেন। তারপর সেই (আলাদাকৃত) এক ভাগ থেকে ৯৯ ভাগ-অংশ রেখে বাকী এক ভাগ দিয়ে সৃষ্টি করা হয় হযরত মোহাম্মদকে)। সুতরাং এই জাতীয় কথাবার্তা আকারে, ইঙ্গিতে বলা ও অমার্জনীয় অপরাধ। তা আপনি ভাল জানেন, সুতরাং এ জাতীয় বক্তব্য আপনার পুস্তকে স্থান দেয়াটাই ধর্মীয় বিচারে মহাপাপ। আমি আপনার ভুল শুধরানোর জন্য বুঝাতে গিয়ে এই প্রসঙের অবতারণা করেছি, অতএব এ ব্যাপারে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেবেন না। আপনার পুস্তকের ২৫ পৃষ্টায় ছুরা নাজিয়াতের প্রথম চারটি আয়াত সম্বন্ধে বলতে গিয়ে আপনি পদার্থ বিদ্যার যে যোগ সুত্র খুঁজে পেয়েছেন এতে আমি অতি মাত্রায় বিস্মিত হয়েছি। আর ভাবছি এত বড় ভুল আপনি কেমন করে ঘটিয়েছেন ? যেখানে সুস্পষ্ট ভাবে ফেরেশতা গনের নামে (লক্ষ্য করুন এখানে বহু বচনের প্রয়োগ আছে, কয়েকজন ফেরেশতা ) শপথ করা হচ্ছে। যারা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মানুষের প্রাণ সংহার করেন ধীর গতিতে কিংবা দ্রুত গতিতে, এমনকি পানি কিংবা বায়ুর মধ্যে সন্তরণ করতে পারেন। এবং তাদের কর্তব্য কর্ম সম্বন্ধে শপথ নিয়ে বলা হচ্ছে আয়াত গুলোতে। সেখানে আপনি কি ভাবে পদার্থ বিদ্যার মহাকর্ষীয় বল, বিদ্যুত চুম্বকীয় বল, সবল কেন্দ্রীয় বল এবং দুর্বল কেন্দ্রীয় বলের সন্ধান পেলেন আমি বুঝিনা। ভাই আমার বিশেষ অনুরোধ আপনি ফেনসিডিল, হুইস্কি, ভদকা ইত্যাদি ত্যাগ করে সুস্থ হয়ে যান। নতুবা সমস্ত কোরআন ও ইসলাম আপনার দ্বারা বিপন্ন হবে।
আপনি আপনার বইয়ের বাহাত্তর (৭২) পৃষ্টায় ছুরা ওয়াকিয়াহ এর ৭৫নং আয়াত নিয়ে যে ভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা ও ঠিক নয়। আমাদের সৌর জগতের সুর্য হচ্ছে একটি তারকা । এই তারকা কখনও অস্ত যায়না। আমরা তবু ও বলি সুর্য অস্ত যাচ্ছে, তদ্রূপ চাঁদ অস্ত যায়, শুকতারা, ঝোপতারা ও অস্ত যায়। আহ্নিক গতির কারণে যখনই ধীরে ধীরে ঐ গ্রহ নক্ষত্রগুলি আমাদের দৃষ্টির বাইরে চলে যেতে শুরু করে আমরা তখনই বলি ওটা অস্ত যাচ্ছে । ১৪শত বৎসর আগে লোকেরা ও তাই বলতো। ওয়াকিয়াহ শব্দের অর্থ যদি অস্তগমন না হয়ে ধ্বংসই হয় কিংবা পতন হয়। তবু বলা যায় মহাবিশ্বে যা কিছু চলমান আছে কিংবা জীবিত আছে তারা কোন একসময়ে ধ্বংস হবে বা মৃত্যু মুখে পতিত হবে।
সুতরাং তাদের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। কোরআনের আয়াতে এই ধ্বংস উন্মুখ তারকাদের শপথ নিয়ে কিছু বলা হচ্ছে কিংবা অস্তাচলগামী নক্ষত্রদের নামে শপথ নিয়ে কিছু বলা হচ্ছে সেখানে আপনি “পতন স্থান” বলে আরেক শব্দের আমদানি করেছেন কোন বুদ্ধিতে ? পতন স্থান আর ধ্বংস হওয়া সম্পূর্ণ ভাবে দুটি ভিন্নার্থক শব্দ। ব্যাকরণের ভাষায় ধ্বংস হওয়া শব্দটি হচ্ছে ক্রিয়া, আর পতন স্থান শব্দটি হচ্ছে বিশেষ্য। সুতরাং আপনি ব্ল্যাক হোলের আবিষ্কারটিকে কোরানজাত করার জন্য যে ভাবে ভুলের কারিশমা চালিয়ে যাচ্ছেন এতে করে বিবেকবান মানুষের হতাশ হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
আপনি ৭৬ পৃষ্টায় উল্লেখ করেছেন আরেকটি আয়াত যেমন: “শপথ আকাশের এবং সহসা আঘাতকারীর। তুমি কি জানো সহসা আঘাতকারী বস্তুটি কি ? এটা একটা প্রজ্জ্বলমান জ্যোতিষ্ক “। (ছুরা নং ৮৬ ঃ ১-৩ আয়াত) এই আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় মোহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় ধুমকেতু ও উল্কাপাতের ঘটনা দেখেছেন। অথবা আকাশের তারকা ও রাশি নিয়ে যেসব জ্যোতিষী কিংবা জ্যোর্তিবিদরা কথাবার্তা বলতেন তিনি তাদের কথাবার্তা কিংবা গল্পগুজব শুনেছেন। বইয়ের ঐ পৃষ্টায় আর ও উল্লেখ আছে “আমি তো আসমানকে সুরক্ষিত ছাদ করে দিয়েছি” (ছুরা নং ২১ ঃ ৩২আয়াত) অনুরুপ আয়াত (২ ঃ ২২) (৪০ঃ ৬৪) (৪১ ঃ ১২) আবার অন্য আয়াতে আছে, যখন আকাশ ফাঁক হয়ে যাবে (৭৭ ঃ ৯) আপনি ঐসব আয়াত দিয়ে বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্য “ওযন লেয়ার” এর সত্যতা যাচাই করে দিচ্ছেন। দেখুন ওযন লেয়ার এর সাথে আকাশের তুলনা দেবেন না। আকাশ বলতে বুঝায় পৃথিবীর ভূ-উর্ধ্বস্ত ফাঁকা স্থান সহ সমস্ত মহাশুন্য। আর “ওযন লেয়ার” বলতে বুঝায় পৃথিবীর ভূমন্ডলের উর্ধ্বে পৃথিবীকে ঘিরে রাখা গ্যাসীয় মন্ডলী। অতএব আকাশ ফাঁক হওয়া আর ওযন লেয়ার ফাঁক হওয়া, বিষয় দুটি এক রকম নয়। যা আপনি জোড়াতালি দিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন।

এভাবে বহু ভুল-ত্রুটির ব্যাখ্যা আপনার বইটিতে রয়েছে যা বলতে গেলে প্রচুর সময় নষ্ট হবে। শেষমেশ আরেকটি কথা আপনাকে লিখে যাই। আপনার পুস্তকের ২১৬ পৃষ্টায় আলোর গতির বিবরণ
দিতে গিয়ে কোরআনের আয়াতকে আপনি যে ভাবে সাড়াশি দিয়ে টেনে এনে আলোর গতির চেয়ারে বসিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভাবে একটি অপব্যাখ্যা মাত্র। সেই আয়াত হচ্ছে ঃ- “তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছাবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান” (ছুরা নং ৩২ ঃ ৫ আয়াত) এমন এক দিনে বলতে শেষ বিচারের দিনের কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ বিচার দিনের দীর্ঘত্ব (ডে অফ জাজমেন্ট) হবে পৃথিবীর হাজার বছরের সমান। এখানে আলোর গতির সাথে হাটার, দৌড়াবার, উড্ডয়নের কিংবা দুরত্ব অতিক্রমের কোন হিসেবের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আপনি এসব কোথা থেকে খুঁজে খুঁজে বের করেন ? আপনার বিভিন্ন যুক্তি ও মনোবাসনা দেখে আমার এই ধারণা দৃঢ় হয়েছে যে, যদি কোন দিন আসমান ফেটে যায় আপনি নিশ্চয়ই কোরআন হাদিছ থেকে আইডিয়া নিয়ে সেই ফাটা আসমানকে সুই সুতা দিয়ে সেলাই করে টিকটাক করে দিতে পারবেন। আমি দোয়া করি কেয়ামত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ আপনার হায়াত দান করুন। আপনি আপনার পুস্তকের ৮৫ পৃষ্টায় উল্লেখ করেছেন গ্যালাক্সি কেন্দ্রে রয়েছে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব। এবং ৭৯ পৃষ্টায় উল্লেখ করেছেন মহাবিশ্বে রয়েছে অসংখ্য ও অগণিত গ্যালাক্সি আরও বিভিন্ন যায়গায় ব্ল্যাকহোল ও তৎসর্ম্পীয় বিষয়-বস্তু পাঠ করে বুঝা যায় মহাকাশে রয়েছে অনেক অনেক ব্ল্যাক হোল। আপনার বইয়ের উল্লেখ করা তথ্য থেকে যদি বলি, একশত গ্যালাক্সির মধ্যে কম করে হলেও যদি ৮/১০ ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তাহলে কোটি কোটি গ্যালাক্সির মধ্যে কতটি ব্ল্যাক হোলের অসিত্ব আছে তা কিছুটা অনুমান করা যায়। (আপনার বইয়ের ১৬৩, ১৬৫, ১৮৬ পৃষ্টা দ্রষ্টব্য) এবং সেই ব্ল্যাকহোল গুলো কত ধরনের হতে পারে তারও কোন সঠিক প্রমাণ নেই। অথচ আপনি আপনার বইয়ের ১৭৬ পৃষ্টায় উল্লেখ করেছেন বৈজ্ঞানিকরা সাত ধরনের ব্ল্যাক হোলের সন্ধান পেয়েছেন। অপর দিকে কোরানেও সাত ধরনের দোজখের কথা উল্লেখ আছে তাই আপনি এটার সাথে ওটার মিল দিয়ে যাচ্ছেন। মহাকাশের গবেষণার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও শিশু পর্যায়ে আছে। সাত ধরনের ব্ল্যাক হোল ? না সাত লক্ষ ধরনের ব্ল্যাকহোল মহাবিশ্বে আছে তা কেউ জানেনা। অথচ আপনি এখনই থেকেই কোরআনের আয়াত দিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন। আমরা জানি দোজখ সাতটি। কিন্তু আপনি তথ্য দিচ্ছেন সাত ধরনের দোজখ। অতএব আমার প্রশ্ন কোরআনের বাণী বেশী সত্য ? না আপনার বাণী বেশী সত্য ? অর্থাৎ সাতটি দোজখ না সাত ধরনের দোজখ কোনটি মেনে নেব ?

আল্লাহর সৃষ্ট অসীম জগতের সন্ধান করতে গিয়ে মানুষ জাতি আরও কত অসীম রহস্য জানতে ও দেখতে পারবে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সাধারণ মানুষ জাতিকে শাস্তি দিতে হলে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের পানিকে সুর্যের তাপে দাহ্য করা কি যথেষ্ট নয় ? অথবা ভূগর্ভ থেকে যে অগ্নিগিরির বিশালতা দেখি, তা কি যথেষ্ট নয়? সুতরাং ব্ল্যাকহোল এবং মহাবিশ্বের অন্যান্য সীমাহীন ভয়ঙ্কর সৃষ্টি সমুহ শুধুই মানব জাতিকে শাস্তির জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে এমনতর যুক্তি কিংবা মতবাদ কতটুকু গ্রহণ যোগ্য ? ঐসমস্ত ভয়ঙ্কর ও রহস্যময় বস্তু সমুহ আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মহাবিশ্বকে সচল রাখার জন্য। পুরো মহা-জগৎকে রিসাইকেল সিষ্টেমের মাধ্যমে তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য। কারণ এযুগের বিশাল বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও বিভিন্ন পরীক্ষিত সত্য তাহাই প্রমাণ দেয়। অতএব এরকম বিবেচ্য যুক্তি কি তুবড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় ? আপনার বইয়ের ২১৬ পৃষ্টায় কোরআনের (৩২ নং ছুরা সিজদাহ এর ৫) আয়াতে যা বলা হয়েছে তার সাথে আপনার বইয়ের বক্তব্যের কোন মিল নেই। ইহা একটি মিথ্যা অপব্যাখ্যা মাত্র। ঐ পৃষ্টায় এবং ২১৭ পৃষ্টায় আপনি আপেক্ষিকতাবাদ, আলোর গতি, ফেরেশতাদের গতিবেগ ইত্যাদি নিয়ে যে মহাখিচুড়ি পাকিয়েছেন তাতে আমার বিশ্বাস আপনি একদিন নোবেল পুরষ্কার পেয়ে যাবেন। ২১৯ পৃষ্টায় কোরআনের আয়াত (৭০ নং ছুরা মায়ারেজ এর আয়াত ৪) আরেকটি অপব্যাখ্যা মাত্র। ফিরিশতাদের গতিবেগ যদি আপনার তথ্যানুযায়ী সত্য হয়ে যায় তাহলে হেরা গুহায় নবী মোহাম্মদকে স্বশরীরে জড়িয়ে ধরে পড় তোমার প্রভূর নামে (ছুরা নং ৯৬ আয়াত নং ১) ছুরা আলাকে বর্ণিত তথ্যাদি সত্য হিসাবে প্রমাণ করবেন কি ভাবে ?
সমস্ত মহাবিশ্বের জগত ও জীবনের অস্তিত্বকে সচল ও বজায় রাখতে হলে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তাকে এভাবে বিশাল মহা পরিকল্পনাকারীর অসীম দক্ষতা থাকতে হবে। থাকতে হবে মহাজাগতিক বল, আলো, রশ্মি এবং পদার্থ ও রসায়ন সৃষ্টির মহাকৌশল। তাই সৃষ্টিকর্তাকে সকলেই কমবেশী বিশ্বাস করে তার সৃষ্টির অসীম বিশালতা দেখে। আর এই বিশালতার জ্ঞানটি অনেকেই পায় জগতকে অবলোকন করে, জীবনের বহুমুখী (প্র্যাকটিকেল) হাতে কলমে পাওয়া বাস্তব জ্ঞান থেকে এবং অনুমান থেকে। এজন্য কেউ ধর্মগ্রন্থের দ্বারস্থ হয় না। ধর্মগ্রন্থ কল্পনা, অনুমান ও বাস্তবতার এক খিচুড়ি । এর প্রত্যেকটি শব্দ ও প্রত্যেকটি বাক্য সত্য হয়ে যাবে এমন সত্যতার দাবী তারাই করে যারা বিজ্ঞানের আবিস্কৃত কোন তথ্যকে কিংবা সুত্রকে সত্য বলে বিশ্বাস করেনা। তারা মাঝামাঝি একটা জবাব তৈরি করে কেবল বলতে থাকে এটা আল্লাহর হুকুমে হয়েছে কিংবা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। তাহলে তো বলতেই হয় মানুষ ও আল্লাহর দিলের বা মনের খবর মাঝে মাঝে জানে। তারা এটা বলেনা “আল্লাহর দেয়া বুদ্ধির বদলে মানুষের চেষ্টায় তাই হয়েছে”।

ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাসের ব্যাপার। যারা সীমিত জ্ঞানের অধিকারী, যারা অনুসন্ধানে ইচ্ছুক নয়, যারা সহজেই ধর্ম গুরুদের বিশ্বাস করে কোন যুক্তি ছাড়াই তাদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই। ইহ জীবনে দুঃখ কষ্ট হলেও তারা সেটাকে নিজেদের দুর্ভাগ্য হিসেবে মেনে নেয়। মাথা ব্যথা হলে মাথায় ঔষাধ লাগাতে হবে এটাই তাদের ধারণা। কিন্তু মাথা ব্যথার জন্য পেটের পাকস্থলীতে বড়ি পড়লে সেটা কি ভাবে কাজ করে তা তাদের বোধগম্য নয়। সুতরাং সাধারণ ধর্ম বিশ্বাসীরা ধর্ম বিষয়ে কোন প্রশ্ন করেনা এবং এর বিপরীতে কোন মন্তব্য ও শুনতে চায়না। কোরআনকে আল্লাহর বাণী হিসেবে সহজে বিশ্বাস করার মত কয়েকটি নিখুঁত বাক্য আছে যেমন: “তারা কি বলে ? কোরআন তুমি তৈরি করেছো ? তুমি বল তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সুরা তৈরি করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডেকে নাও যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে “। (ছুরা নং ১১ঃ ১৩ আয়াত) এই বাক্যটি পুর্ব পাকিস্থানের মোনায়েম খাঁ কর্তৃক লেখকদের প্রতি সেই তিরস্কারের কথা মনে করিয়ে দেয়, তোমরা কেন কয়েকটি রবীন্দ্র-সঙ্গীত লিখতে পারো না ) আমরা ভালই জানি, সেই আরবীয় যুগে ঘরে ঘরে লেখক ছিলনা। আর বর্তমান যুগ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, হাজার হাজার লেখকের মধ্যেও দু’জনের লেখার ভাষা এবং ভাব কখনও এক হয়না। এমনকি বিষয়বস্তু এক হলেও দু’জনের প্রকাশভঙ্গী কখনও এক হয়না। সুতরাং উপরে উল্লিখিত কোরআনের বাক্যের চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে সে যুগের শিক্ষাহীন সমাজের জন্য বিরাট অর্থপূর্ণ । এবং এই আয়াতের শেষের দিকে বলা হয়েছে আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডেকে নাও। এই কথাটি বলার কি এমন প্রয়োজন ছিল ? এসব হচ্ছে আল্লাহর নামে আয়াতকে মজবুত করার একটা কৌশল মাত্র। ধর্ম বিশ্বাসীদের কাছে আল্লাহ সম্বন্ধে সর্বদাই একটা দুর্বলতা আছে। ভয়, গোনাহ, শাস্তি, ইত্যাদির কারণে। সুতরাং এত ক্ষমতাবান আল্লাহ সম্বন্ধে মোহাম্মদ নিজ মেধাগুণে বানিয়ে কিছু বলতে পারেন, এটা কখনও কেউ বিশ্বাস করতে চাইবেনা। কারণ আল্লাহর গুণগান ও প্রশংসা করা যেহেতু ইবাদত একারণে উপরে উল্লিখিত বাক্য আনয়ন করে মানুষকে বিশ্বাসী বা ইমানদার হওয়ার জন্য সীলমোহর করে দেয়া হয়েছে । এটাই হলো হযরত মোহাম্মদ এর খোলাখোলি অর্ন্তনিহিত চালাকি। এভাবে প্রচুর আয়াত আছে কোরআনে, যা পাঠ করার পর মানুষের মন কোরআন সরাসরি ঐশ্বরিক এই বিশ্বাসের অনুকুলে সীলমোহর হয়ে যায়। এবারে নীচের বক্তব্য থেকে আপনার বিবেককে একটু ঝালাই করুন।
আমরা পৃথিবীতে দেখেছি কোন কোন লেখক যখন উপন্যাস লিখতে শুরু করেন তখন তারা একটার পর একটা উপন্যাস লিখেই চলেন। কয়েকটা পুস্তক লিখার পর তারা গল্প ও চরিত্র সৃষ্টির নানা উপাদান পেয়ে যান জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এবং অনুমান থেকে। এভাবে তারা ডজন ডজন উপন্যাস লিখে যান। ঠিক এক’ই ভাবে নিজ সমাজ ও বিশ্ব সমাজের নানাবিদ ঘটনাবলী নিয়ে বহু লেখকরা বহু ধরনের নিবন্ধ মুলক বই লিখে যান। কেউ কেউ লিখেন কবিতার বই, কেউ কেউ লিখেন বাচ্চাদের গল্পের বই। কেউ কেউ লিখেন সাইন্স ফিকসন বই। তারা এভাবে শত শত গল্প ও প্রবন্ধ নিয়ে পুস্তক লিখেন কি ভাবে ? লিখার এত উপাদান বা উপকরণ কি ভাবে পান ? এর জবাব হচ্ছে গল্প সৃষ্টির বা বাক্য সৃষ্টির যে জ্ঞান তাদের মগজের কোষে রয়েছে (যা আল্লাহ তাদের দান করেছেন) সেটাকে তারা জাগতিক অভিজ্ঞতা ও কল্পনা শক্তির দ্বারা বাস্তবে রুপদান করেন। যে ব্যক্তি, যে সমস্ত বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে চান তারা সেই বিষয়-বস্তুর উপরে বেশী মাত্রায় চিন্তা ভাবনা করেন, কল্পনা করেন, অনুমান করেন। এতে বিভিন্ন ধরনের গল্প-উপকরণ বা গঠন মুলক উপকরণ তাদের চিন্তা শক্তিতে সৃষ্টি হয়। তারপর তা তাদের বক্তব্য হিসেবে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এখন সেটাকে আপনি লিখে রাখতে পারেন । শুনা যায় হযরত মুহম্মদ (সঃ) নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি তৎকালে লিখা পড়া শিখেছিলেন, বিবি খাদিজাকে বিয়ের অনেক আগেই তিনি পড়ালেখা করেছিলেন। যাইহোক তিনি লিখাপড়া না জানলেও তাওরাত, বাইবেল প্রভৃতি ধর্মীয় কাহিনী গুলো জানতেন। কারণ ইহুদী এবং খৃষ্টানদের প্রচুর বসতি ছিল আরব জাহানে। আমরা বাংলাদেশীরা মুসলমান হলেও আমাদের সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যে সব হিন্দু কিংবা উপজাতিরা বসবাস করে, আমরা কি তাদের ধর্ম এবং সামাজিক আচার আচরণ সম্মন্ধে জানিনা ? নিশ্চয়ই জানি। (এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন “ইসলাম ধর্মের উপকরণ” প্রবন্ধটি ) সুতরাং যে লোক যে বিষয়ের উপর অতিমাত্রায় আশিক বা মগ্ন হয়ে যায়, সে ঐ বিষয়ের উপর অনেক তথ্যাদি ও পেয়ে যায় জাগতিক জ্ঞান থেকে এবং অনুমান থেকে। মুহম্মদ (সঃ) তেমনি ভাবে ধর্মের জন্য অর্থাৎ অদৃশ্য শক্তি আল্লাহর জন্য অতি মাত্রায় আশিক বা মগ্ন ছিলেন। সেজন্য তিনি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন হাদীছ ও কোরআন। তিনি নিজেই উপযাচক হয়ে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তৎকালীন সামাজিক অবস্থার চরম অবনতির বিরুদ্ধে একটা শক্ত ধর্মীয় কাঠামো হবে উপযুক্ত হাতিয়ার। এই ফিলোসফি বা দূরদর্শন সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর চিন্তা ও মেধায়। এই দর্শনকে বাস্তবে রূপদান করতে গিয়ে তিনি জীবনের পাতায় পাতায় সৃষ্টি করেছেন কোরআনের আয়াত আর নিজ বিবেক বুদ্ধির উক্তিকে সাহাবীরা সাজিয়েছেন হাদিছ হিসেবে। এভাবেই কোরআন ও হাদিছের হয়েছে সৃষ্টি।