আমেরিকা এবং ইসলাম। কেমেস্ট্রি অব রিলেশন।

গ্রাউন্ড জিরো বিতর্কের মধ্যেই আরেকটি সিভিল বিতর্কে উত্তাল হচ্ছে আমেরিকা। এবার
ডিবেট আরো চমকপ্রদ। ফ্লোরিডার রেভারেন্ড টেরি জোন্স 9/11 এর প্রতিবাদ জানাতে চান কোরান পুড়িয়ে। ব্যাস গোটা বিশ্ব উত্তাল। ইন্দোনেশিয়া থেকে আফগানিস্থানে মুসলিমরা উত্তাল ক্ষোভে-হিলারী ক্লিনটন কাতর আমেরিকার টলারেন্স ইমেজে ( কি সুন্দর বললেন মাত্র ৫০ জনের চার্চের জন্যে বদনাম হবে ত্রিশ কোটি আমেরিকানের!)। আর আফগানিস্তানে আমেরিকার জেনারেল ডেভিড পেট্রাস চিন্তিত আমেরিকান সৈন্যদের নিরাপত্তা নিয়ে। আফগানিস্তানের এক মোল্লা রাজনৈতিক পার্থী জানিয়ে দিয়েছে আমেরকাতে কোরান পোড়ালে সব জায়গায় তারা আমেরিকান মারবে। কিছু যায় আসে না যদি ৫০ জন আমেরিকান কোরান পোড়ায় এবং বাকীরা তার বিরোধিতা করে! গ্রাউন্ড জিরো মসজিদ বিতর্কে যিনি মুসলমানদের সমর্থন করেছিলেন, সেই নিউ ইয়ার্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ ও কোরান পোড়ানোর বিরোধিতা করছেন না। কারন আমেরিকার সংবিধানের প্রথম ও মূল বক্তব্য-ব্যাক্তিগত স্বাধীনতাতে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

আমেরিকা তার ফার্স্ট এমেন্ডমেন্ট এতটাই মেনে চলে, আমেরিকান সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত মানতে বাধ্য হয়েছে, কেও ব্যাক্তিগত সম্পত্তিতে আমেরিকান পতাকা পোড়ালে, রাষ্ট্রের কিছু করার নেই। কারন তা ব্যাক্তিস্বাধীনতার বিপক্ষে যাবে। বিতর্কিত পাদ্রী টেরি জোন্সও স্বীকার করেছেন কোন মুসলিম তার প্রাইভেট এলাকাতে বাইবেল পোড়ালে তার কোন বক্তব্য নেই।

টেরিকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যতই ধমকি দিক-তার যুক্তিও অখন্ডিত। সে যদি মনে করে কোরান এভিল এবং তার জন্যে সে কোরান পোড়াবে-সেই স্বাধীনতা আমেরিকান সংবিধান দিয়ে থাকে। ঠিক যে আইনে মুসলিমরা আমেরিকাতে ইসলাম পালনের স্বাধীনতা পাচ্ছে, ঠিক একই আইনে আমেরিকাতে আরেকজনের ইসলামের মুন্ডপাত করার ও স্বাধীনতা আছে।

এবার আসি মূল বিতর্কে কি ভাবে দেখবো এই কোরান পোড়ানো খেলা?

ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি পান্ডুলিপি পোড়ানো যায় না। একটা বই পোড়ানোর অর্থ আমার কাছে পরিস্কার না। কোরান পোড়ালে কি আয়াতগুলো নষ্ট হবে?

সুতরাং টেরি দেখাতে চাইছেন, ইসলামকে তিনি ঘৃণা করেন। কারন বইটা নাকি অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণায় ভর্ত্তি। সেটা যদি হয়েও থাকে আমি পরিস্কার ভাবেই বলব ঘৃণা দিয়ে ঘৃণার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় না। ইসলামে অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা এবং হিংস্রতাকে কেও যদি সভ্যতার শত্রু বা অসভ্যতা বলে মনে করে-এবং সেটি প্রকাশ করার জন্যে নিজে অসভ্যতা এবং ঘৃণার আশ্রয় নেয়- তার উদ্দেশ্য ও পন্থা ভুল। অন্যের অসভ্যতা ধরাতে নিজেদের সভ্য হতে হয়। অন্যের ঘৃণাটা দেখাতে নিজেকে ভালোবাসা দেখাতে হয়। অনেকে বলবেন-সেটাকে মুসলমানরা অমুসলমানদের দুর্বলতা বলে মনে করে এবং ইউরোপের মতন পেয়ে বসবে। আমি কিন্ত মনে করি ইউরোপ মুসলমানদের কখনোই ভাই হিসাবে মেনে নেয় নি-তারা ঘৃণা এবং বৈষম্যেই পেয়েছে। তাই তারাও ঘৃণাই উগরে দিয়েছে জাতিদাঙ্গাতে। বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গের দেভাঙ্গাতে গত দু দিন ধরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লেগেছে। তাতে মিলিটারি নামাতে হয়েছে পুরো এক ব্যাটেলিয়ান। বেশ কিছু হিন্দু দোকান ভাংচুর হয়েছে মুসলিম প্রধান দেভাঙ্গাতে। আশে পাশে সবাই ফিস ফাস করছে, যেখানেই মুসলমান সেখানেই দাঙ্গা।

কিন্ত সত্যিই কি তাই ? এর পেছনে বস্তুবাদি কারন খুব সিম্পল। মুসলিমদের মধ্যে জন সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ে-কারন তারা অশিক্ষার কারনে ধর্মের মাদকে জন্ম নিয়ন্ত্রন করে না। ফলে একটা লিমিটেড রিসোর্স শেয়ার করার জন্যে সর্বত্র একটা কঠিন পরিস্থিতে তাদের বাঁচতে হয়। এমন পরিবেশে তারা বড় হয় তাদের বঞ্চনার জন্যে অন্যদের দোষ বিক্রি করা সহজ। তারপরে সেই অন্যদের চোখে যখন ঘৃণা ছারা কিছু দেখে না-তখন তারা আরো বড় মৌলবাদি হয়ে ওঠে।

শুধু কিছু মিডিয়া এটেনশন টেনে অন্য ধর্মকে অপমান করে কি লাভ আছে আমি জানি না। কোরান যদি কেও এভিল বলে মনে করে, সে সেটা যুক্তি দিয়ে প্রমান করলেই সব থেকে ভাল করবে। অনেকেই তাই করছে। এবং তার বিরুদ্ধে মুসলমানরাও যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। এই দ্বন্দটাই কাম্য। কারন দ্বন্দের ফলেই উন্নতি বা অগ্রসরতা আসে।

বহুদিন ধরে ইসলাম এবং তার রাষ্ট্রীয় রক্ষকরা ধর্মের সমালোচনার এই স্বাধীনতা দেয় নি। আজ ইন্টারনেটের যুগে যখন সেন্সরশিপ অচল-সেখানে তাদের যুক্তিবুদ্ধি দিয়েই ইসলামকে ডিফেন্ড করতে হচ্ছে। এটা খুব ভাল। কারন সেক্ষেত্রে অবস্থার তাগিদেই তারা কোরানের উন্নততর ব্যাখ্যাগুলি আনতে সমর্থ হবে। ভারতে হাজার হাজার বছর আগে উপনিষদিক চিন্তা এই ভাবেই এসেছিল। বৌদ্ধদের চ্যালেঞ্জ খেয়ে, বেদকে বাঁচাতে বেদান্তের বা উপনিষদের জন্ম হয়। যা সেই বেদের উন্নততর ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়েই এসেছে।

সুতরাং ধর্মের সমালোচনা পুরো মাত্রায় চলুক। কিন্ত ধর্মের বিরুদ্ধে আমার অবস্থানটাকে যেহেতু আমি অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তোরন-অসভ্যতা থেকে সভ্যতায় যাত্রা বলে মনে করি-সেহেতু ধর্মের সমালোচনার ক্ষেত্রে আমি মোটেও অসভ্যতাকে সমর্থন করতে পারি না। সদালাপ বলে একটি মুসলিম মৌলবাদি সাইট যুক্তিবাদিদের বিরুদ্ধে যে অসভ্যতা করে-তাতে আমাদের বক্তব্য আরো জোরালো হয় যে-ধর্ম আসলেই লোকেদের অসভ্য করে। কিন্ত যুক্তিবাদিরা বা সভ্যতার দাবিদার কেও যদি, সেই অসভ্যতাই করে, তাহলে পার্থক্যটা কোথায় রইল? quran burning day