পোস্টের প্রথমেই বলে দেই যে এটি মোটেও বিজ্ঞান বিষয়ক কোন পোস্ট নয়। এখানে ধর্মবাদীদের কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি কিছু যুক্তির অবতারনা করতে যাচ্ছি। জানিনা যুক্তিগুলো কতটা গ্রহনযোগ্য বা বাস্তবসম্মত হবে। তারপর প্রশ্নগুলো বারবার আসে বলে এগুলো নিয়ে প্রায়ই মাথায় চিন্তা খেলে। তাই কিছু সমাধান খোঁজার এই প্রচেষ্টা।

প্রশ্ন ১- মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র মেনে। তাহলে সেই সূত্রগুলো এলো কোত্থেকে? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন ঈশ্বরের হাত আছে!!

উ- এই প্রশ্নের সবচেয়ে সহজ উত্তর হচ্ছে যে আপনি আগে থেকেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী হওয়ায় আপনার সব কিছুই ঐ ঈশ্বরে গিয়ে শেষ হয়!
এটা যুক্তির দিক দিয়ে কোন উত্তর হয় নি। আসুন যুক্তি খেলি। প্রশ্নের প্রধান টার্নিং পয়েন্ট কোনটি? অবশ্যই “পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র”।
এক্ষেত্রে প্রথমেই বলব যে, পদার্থ বিজ্ঞানের এই সূত্র গুলো মেনেই যে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে হবে এমন কোন কথা কি আছে? মহাবিশ্ব তো অন্য কোন ভাবেও সৃষ্টি হতে পারত। তখন বিজ্ঞানীরা অন্য কোন সূত্র খুঁজে নিতেন। মোদ্দা কথা হল এই যে, সূত্র অনুযায়ী কিছু হয় না, আমরাই আমাদের কাজের সুবিধার জন্য সব কিছুর ভেতর থেকেই একটা সূত্র খুঁজে নেই। কোন কিছুই নিয়ম মাফিক হয় না, আমরাই একটা ক্রম খুজে নেই।
এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হওয়ায় এটার উত্তর পরবর্তী প্রশ্নগুলোতেও ক্রমান্বয়ে আসতে থাকবে।

প্রশ্ন ২-এই যে আপনি বললেন কোন কিছুই নিয়ম মাফিক হয় না(!!) কথাটাই তো ভূয়া! প্রতিদিন সূর্য পুর্ব দিকে উঠছে, পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছে, এর থেকে নিয়মের বড় উদাহরন আর কিই বা হতে পারে!?

উ- ভালো প্রশ্ন। প্রথম কথা হল, এখানে আমাদের পৃথিবীতে সূর্য পুর্বে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়, কিন্তু অন্য কোন গ্যলাক্সিতে অন্য কোন সৌরজগতে হয়তো সেখানকার সূর্য উত্তরে ওঠে আর দক্ষিনে অস্ত যায়!
দ্বিতীয় কথা হল, দিকগুলো কারা ঠিক করে দিয়েছে? মানুষইতো কাজের সুবিধার জন্য উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম দিক নির্ধারন করে নিয়েছে! আপনি পুরো সৌরজগতের সাপেক্ষে চিন্তা করুন, তাহলে কিভাবে আপনি দিকগুলো নির্ধারন করবেন! পৃথিবীর সাপেক্ষে আপনি যে সব দিক ঠিক করছেন, সৌর জগতের সাপেক্ষে সে দিকগুলোর কোন অর্থ থাকে না, আবার সৌরজগতের সাপেক্ষেও যদি আপনি কোন দিক ঠিক করে নেন তাহলে মহাবিশ্বের মহাশুন্যের সাপেক্ষে সেই দিকেরও আবার কোন অর্থ থাকেনা!

প্রশ্ন ৩- এর পরেও আপনি প্রশ্ন করতে পারেন এই যে, আচ্ছা! দিকের কথা না হয় বাদই দিলাম!! তারপরও তো পৃথিবী একই ভাবে ঘুরছে, দিন হচ্ছে রাত হচ্ছে একই সময়ে বছর হচ্ছে, এগুলোও কি নিয়ম নয়?

উ-ভালো প্রশ্ন! কথা হল একই ভাবে ঘুরছে কে বলেছে! বছরের কোন সময় দিন বড় হচ্ছে, কোন সময় রাত। কোন সময় শীত পড়ছে, কোন সময় গরম। এই শীত গ্রীষ্মও কিন্তু প্রতি বছর মাস পরিবর্তন করছে, আগাচ্ছে পিছাচ্ছে। আবার সব দেশের ঋতুও এক না, দেশ ভেদে ভিন্ন, তা ও আবার পরিবেশগত কারনে দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে।
আবার যদি বছরের কথাই বলেন, যে সবসময়ই তো ৩৬৫ দিনে বছর হচ্ছে! তাহলে আবার ভূল হলো, প্রতি বছরই কিছু সময় বাড়তি থাকছে এবং প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর একটা দিন আমরা বাড়িয়ে নিচ্ছি!
যা হোক, এগুলো কিছুটা অর্থহীন কথাবার্তা হয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন ৪- এই যে সব কিছু এত “ফাইন টিউনড”, সুক্ষ ভাবে বিন্যস্ত তার কি হবে? সব কিছু এমন ভাবে বিন্যস্ত যে এর একটু এদিক ওদিক হলেই পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হত না! তাহলে?
উ- এটা আমার দেখা সবচেয়ে আজগুবি টাইপ প্রশ্ন! আরে ভাই, বৃত্ত থেকে বেরিয়ে তারপর চিন্তা করেন! আপনি একটা কাজ একভাবে চেষ্টা করে পারলেন না, তার অর্থ এই না যে কাজ টা আর কোন ভাবেই করা সম্ভব না। টমাস আলভা এডিসন ৫৯/৬৯ বার চেষ্টা করে তার মন মতো বাল্বের ডিজাইন করতে পেরেছিলেন। অর্থাৎ একটা কাজ একাধিক উপায়ে হতেই পারে। সৌরজগত এভাবে বিন্যস্ত না হয়ে অন্য ভাবে বিন্যস্ত হতেই পারত, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে না ঘুরে উত্তর-দক্ষিণেও ঘুরতে পারত, পৃথিবীর প্রাণীরা অক্সিজেনে শ্বাস না নিয়ে ক্লোরিনে শ্বাস নিতেই পারত!! একটা সম্ভাবনার দ্বার বন্ধ হওয়া মানে, হাজার খানেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাওয়া এটা নিয়ে নিশ্চয়ই কোন প্রশ্ন নেই!!

মজার ব্যপার হল, আমাদের ক্লাসে যখন আমাদের কে পৃথিবীর সব কিছুর নিয়মে (সব কিছুই সুন্দর ভাবে বিন্যস্ত, সব কিছুই নির্দিষ্ট form and order এ আছে! ঈশ্বর সব কিছুকে অতিমাত্রায় সুসজ্জিত করে বানিয়েছেন……ব্লা ব্লা ব্লা!!!) থাকা নিয়ে শেখানো হচ্ছিল এবং পরবর্তিতে ঐ বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেয়া হল তখনই চিন্তা করতে গিয়ে আমার মনে হয় যে আদতে কিছুই নিয়মে নেই!
আমাদের চিন্তার ধারাকেই আমাদের সমাজ একটা নিয়মে বেধে ফেলেছে, তাই আমরা নিয়মের বাইরে কোন কিছুই চিন্তা করতে পারি না, নিয়মের বাইরে সব কিছুই আমাদের বিরক্ত লাগে। যেমন আমাদের দেশে মেয়েরা গ্রামে হাফপ্যান্ট আর টিশার্ট পড়ে ঘুরতে বেরুলে গৃহিনীরা ছি ছি করবে আর ছেলে বুড়োরা হা করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে! কিন্তু অন্য কোন দেশে, বা আমাদেরই ঢাকা শহরের কোন কোন স্থানে ব্যপারগুলো অতিমাত্রায় স্বাভাবিক।
আবার ধরেন কেউ যদি ন্যংটো হয়ে ঘুরে তাহলেও আমরা তাকে পাগল বলব। কিন্তু ধরুন আস্তে আস্তে পৃথিবীতে এ ধরনের পাগলের সংখ্যা বাড়তে লাগল, তাহলে দেখা যাবে এরাই তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়ছে এবং কারো কাছেই ব্যপারটা আর অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না!(আদিম যুগে মানুষ কিন্তু ন্যংটো হয়েই ঘুরত! আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে মানুষ বাইরে এত ভাব দেখায়, কিন্তু সেক্সের সময় পুরোপুরি অপরিচিত একটা মানুষের সামনেও ন্যংটো হয়ে যেতে মানুষের বাধে না, এবং ইন্টারনেটে পর্ন দেখার সময় বন্ধুদের নিয়ে কোন কোন সময় বড় ভাইদের নিয়ে দেখতেও বাধে না!!)
অর্থাৎ কি দাড়ালো, আমাদের কে যেভাবে দেখতে শেখানো হচ্ছে আমরা সব কিছুকে সেভাবেই দেখছি। আমাদের মন কে যদি বেধে না ফেলা হত, তাহলে দেখা যেত এক এক মানুষ একই বিষয় কে এক এক দিক থেকে ব্যখ্যা করত।
তাহলে বাস্তবিক অর্থে এসকল নিয়মের আদৌ কি কোন অর্থ আছে!!!!

[আমার ধৈর্য অত্যন্ত নিম্ন মানের! তাই এক বসায় কোন লেখা শেষ করতে না পারলে পরে সেই লেখায় আর কখনো হাত দেয়া হয় না! তাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী, কারন আরো প্রশ্ন-উত্তর আসতে পারত। কিন্তু আমার ধৈর্যহীনতার কারনে আমি আর কষ্ট করে গবেষণা করতে যাইনি!!!এই পোস্টটা দেয়া মোটেই উচিত হচ্ছে না!! :P]