বই শব্দটির সংজ্ঞা কি আমার সঠিক জানা নেই-তবে মিশরের প্যাপিরাসে লেখা পাতা গ্রীকদের হাতে গুঁতো খেয়ে, মানব সভ্যতার বিবর্তনে বই এর জন্ম।ছাপাখানার জন্মের সাথে সাথে বই এর বিতরন সুলভ হয়-বলা যেতে পারে ১৪৪০ সালে গুটেনবার্গের ছাপাখানা ছিল বই এর প্রথম প্রযুক্তি বিপ্লব। আগে মুখে মুখে জ্ঞান ছড়াত-ফলে জ্ঞানের চর্চা ছিল সীমাবদ্ধ। গুটেনবার্গের আবিস্কারে দেশের সীমানা ভাংল জ্ঞান-বিজ্ঞান। মনে রাখতে হবে উনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার রেনেসাঁসের অনেকটা জুরে আছে সেই সময় ইউরোপ থেকে আসা ইংরেজি বই এর সহজলভ্যতা।

প্রিন্ট মিডিয়া প্রায় পাঁচশো বছর ধরে রাজত্ব করেছে বা এখনো করছে। ইন্টারনেটের মিডিয়া বিপ্লবের সামনে বই এর ভবিষ্যত কি-সেটা খুব একটা পরিস্কার না। তবে কিছু কিছু চিত্র পরিস্কার হচ্ছে

১। নিউজ মিডিয়া সম্পূর্ন ইন্টারনেট ভিত্তিক হবে-কারন অনেক। এখন একজন সাংবাদিক ঘটনাস্থল থেকেই সংবাদ তার পত্রিকাতে ছাপাতে পারে। সংবাদ সময়ের সাথে সাথে বাসি হয়। তার ওপর আছে মাত্রারিক্ত প্রিন্টের খরচ। ফলে আমেরিকাতে নিউজ পেপারের প্রিন্ট এডিশন কমছে দ্রুত হারে- গত দশকে এখানে মারা গেছে প্রায় ৮০০ সংবাদপত্র। আবার ইন্টারনেটে খুলছে নতুন কমিউনিটি বেসড সংবাদপত্র-তার সংখ্যা হাজার হাজার।

২। কিন্ত বই এর কি হবে? ইন্টারনেটে উপন্যাস পড়া প্রায় অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথ অনলাইন এখন সম্পূর্ন ভাবে পাওয়া যায়। কিন্ত ইন্টারনেটে বই পড়াটা চাপের। কারন আমাদের চোখের যে ফোকাল ভিষন সেটা দিয়ে গোটা স্ক্রীনের ওপর চোখ রেখে পাতার ওপর পাতা উপন্যাস পড়-মোটেও আনন্দদায়ক না।

৩। অন্য দিকে প্রিন্টিং খরচ বেড়েছে হু হু করে। আগে লাইব্রেরী বই কিনত। লোকে লাইব্রেরী মেম্বারশিপ দিয়ে পড়ত। এখন আমরা সবাই বিশ্ববাসী। হাতের কাছে লাইব্রেরী কোথায় পাব? প্রিন্ট বই এর যা দাম কিনে পড়া মধ্যবিত্তর জন্যে বেশ চাপের। আমার কাছে আবার অন্য সমস্যা। ঘরে যথেষ্ট জায়গা নেই বই রাখার।

৪। তাহলে বই এর ডিজিটাল ফর্মাট ছারা উপায় নেই। ডিজিটাল ফর্মাটে বই নিয়ে আসার দুটি মূল সমস্যা। বই এর এডব পিডিএফ বা পোর্টেবল ডিজিটাল ফর্মাট সবথেকে জনপ্রিয়। সমস্যা হচ্ছে পি ডি এফ কেনার পরে যে কেও সেই পি ডি এফ তার বন্ধুকে ইমেল করতে পারে বা ইস্নাইপস বা অন্য হাজার হাজার সাইটে ডকুমেন্টটা তুলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারে। এই পাইরেসি ঠেকাতে ডিজিটাল রাইট ম্যানেজমেন্ট লাগাতে হয় পিডিএফে। তবে সেটাও সেফ না। কারন সেখানে পিডিএফের সাথে পাসওয়ার্ডটা শেয়ার করলে-সেই পাইরেসি চলতেই থাকবে। ফলে ইবুকের জন্যে আরো উন্নত ডিজিটাল রাইট ম্যানেজমেন্ট এসেছে যেখানে আমরা প্রতিটা আই পি এড্রেস থেকে রিডিং ট্রাক করতে পারি। এই প্রযুক্তি আমরা এখন পরিক্ষামূলক ভাবে বই বাজারে চালাচ্ছি। এই মাসের মধ্যেই কমার্শিয়াল ভাবে এটাকে চালানো ইচ্ছা আছে। তবে প্রযুক্তিতে সমস্যা না থাকলেও বাংলা প্রকাশনা শিল্পের অধিকাংশই ব্যাপারটা বুঝতে চাইছে না। ফলে বই এর স্বত্ত্ব পেতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। অথচ এটা পেলে নানান সাইটে যেসব বই স্ক্যান করে তুলে দেওয়া হচ্ছে এবং তাতে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, সেটা আটকানো যেত। সুনীল হুমায়ুনের সব বই স্ক্যান করা পিডিএফ ফর্মাটে একাধিক সাইট থেকে পাওয়া যায়। মুর্ছনা বলে একটা সাইট এই চোর্য্যবৃত্তি বেশ পেশাদারি ভাবে করছে। সে হয়ত বাংলা সাহিত্য লোককে পড়াতেই এটা করছে-কিন্ত এতে বাংলা সাহিত্যিকদের ক্ষতি হচ্ছে-প্রকাশকদের ক্ষতি হচ্ছে। প্রকাশকদের আরো ক্ষতি অপেক্ষা করছে। অথচ আমাদের বইবাজার সংস্থার সাথে প্রকাশকরা সহযোগিতা করলে, আমরা এটা আটকাতে পারতাম এবং লোকেরা অনেক সুলভে বাংলা বই পড়ার সুযোগ পেত। তবে অনেকেই এটা বুঝতে পেরেছেন। যারা বুঝেছেন, তাদের ই-বইগুলি সুলভে সেপটেম্বর মাসেই চলে আসবে।

৫। আমাজন ডট কম (www.amazon.com) আবিস্কার করে কিন্ডল বলে একটি ডিভাইস। যা বই এর মতন দেখতে। এবং সেই ডিভাইসে একদম বই এর মতন করে ৩০০০ পিডিএফ রাখা যায়। মানে আই টিউনে লোকে যেভাবে গান শোনে ঠিক সেই ভাবে একটা ডিজিটাল বই-লাইব্রেরীই লোকেরা এখন নিয়ে ঘোরা ফেরা করতে পারে। সমস্যা হচ্ছে কিন্ডল এখনো বাংলা পিডিএফ সাপোর্ট করে না। কিন্ডলের পিডিএফ আলাদা সফটয়আরে বানাতে হয়। আমরা কিন্ডলের সাথে কথাবার্তা বলছি। মুশকিল হচ্ছে আমার কাছে এখন খুব সীমিত সংখ্যায় বাংলা বই এর ডিজিটাল কপিরাইট আছে। এটা বেশী থাকলে আমাজনের কাছে অনেক বেশী শক্তিশালী দাবী জানানো যেত। তবে আমার ধারনা আস্তে আস্তে সবাই এর গুরুত্ব বুঝবে।

৬। এর মধ্যে বাংলা বই আমরা আমাজন ডট কম (www.amazon.com) এ তুলে দিচ্ছি। আমাজন বই এর বৃহত্তম অনলাইন মার্কেট। সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলা বই বিক্রি হত দু একটা। আমাদের প্রায় ১৯,০০০ বাংলা বই এখানে তোলার পরিকল্পনা এই বছরের মধ্যে । এখন শারদিয়া সংখ্যা গুলি এই লিংকে পাওয়া যাবে –সব বাংলা পত্রিকার গ্রাহক হওয়াও যাবে। তবে এখন শুধু উত্তর আমেরিকাতে। এর পরে ইউরোপ, ভারত এবং বাংলাদেশেও চালু হবে-তবে দাম সব দেশের জন্যে আলাদা হবে। এই সপ্তাহের শেষেই আমাজনে হাজারের বেশী বাংলা বই চলে আসবে ( এখানে চোখ রাখুন)। এবং পরের মাস থেকে যারা আমাদের ডিজিটাল কপিরাইট দেবেন, তারাদের বইগুলির পিডিএফ ও আমাজন থেকেই কেনা যাবে। বা বই বাজার সাইট থেকেও কেনা যেতে পারে। পি ডি এফ ফর্মাটে বিদেশে বাংলা বই এর দাম ৮০% কমে যাবে বা ১/৫ হয়ে যাবে-এবং তার পরেও লেখকরা অনেক বেশী টাকা পাবেন। এখন ত অধিকাংশ লেখক প্রকাশকদের কাছ থেকে টাকাই পান না।

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বই এর ব্যাবসার সাথে জড়িত কেও না-কিন্ত গত দুবছর থেকে যখন দেখলাম প্রবাসী বাঙালীরা নিজেদের দলাদলি নিয়েই বেশী ব্যাস্ত, ঠিক করলাম নিজেরাই করব। আগের বছরই এই বই বাজারের
পরিকল্পনা শুরু করেছিলাম। তবে সফটওয়ার বানানোর কাজ শুরু হয়েছে এপ্রিল থেকে। স্যোশাল মিডিয়া টেকনোলজি এই কাজ করছে এবং আই বি এমের অভিজিৎ দেব সরকার প্রজেক্টটির প্রযুক্তি লিডার। এছারাও মনোজিত, সৌমেন্দু এবং রাহুল গুহ নানা ভাবে সাহায্য করছেন।

নিউ ইয়ার্কের মুক্তধারা সংস্থার বিশ্বজিত সাহা আমার এই কাজে এগিয়ে না আসলে , বই বাজারকে দিনের আলো দেখাতে অনেক দেরী হত। প্রযুক্তি এবং মার্কেটিং আমি ভাল জানলেও বই এর ব্যাবসাটাই জানতাম না। তার ওপর কোলকাতার বুকফেয়ার্স গীল্ড আমার আমার আবেদন নাকচ করে দেয়!
তবে এখন দ্রুত গতিতে আমাদের কাজ হচ্ছে এবং আশা করব এক দু বছর বাদে মাসিক গ্রাহক হওয়ার বিনিময়ে বাঙালীরা যে কোন সাহিত্য বা বাংলা বই অনলাইন পড়তে পারবে্নআমাজনের কিন্ডল

বাংলা ভাষার ভবিষ্যত এমনিতেই খুব উজ্জ্বল না। এর পর বই এর যদি মাত্রছারা দাম হয়-তাহলে বাংলা প্রকাশনা শিল্প ডুবে যাবে। সুতরাং বাংলা বই কে সুলভে অনলাইন করতেই হবে।

প্রকাশকরা বা গ্রাহকরা আমার সাথে এই ইমেলে যোগাযোগ করতে পারেনঃ [email protected]
আর যারা নতুন কি কি বই আসছে জানতে চান-তারা ফেসবুকে বই বাজার পেজে জয়েন করুন। আপনাদের প্রোফাইলে নতুন বই এর সংবাদ চলে আসবে।