মুসলিম মানস, পর্ব-১

সাধারন মুসলিম জনমানুষের মানসপটের খবর জানার জন্য ইদানিং আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু পরিচিত জন ও বন্ধু বান্ধবের সাথে (যারা সবাই মুসলমান) ইসলাম নিয়ে আলাপের চেষ্টা করেছি। আর তা থেকে বেশ কিছু মজাদার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সঞ্চয় করেছি। যা থেকে তাদের মানস পটের একটা ছবি পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠেছে। সে গুলো এবার আমি একে একে বিবৃত করব।
এক পরিচিত জনকে, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী, প্রশ্ন করলাম
-ইসলাম কি শান্তির ধর্ম ?
সে তো খুব আত্ম বিশ্বাস সহকারে উত্তর দিল- অবশ্যই।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম – আপনি কি কোরান শরিফ পড়েছেন?
সে অকাতরে বলল-আরবী কোরান কিছু কিছু পড়েছে কিন্তু বাংলাতে পড়া হয়নি।
আবার তাকে প্রশ্ন করলাম- আপনি কি আরবী বোঝেন ?
– না । – তার জবাব।
এবার আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম- কোরান না পড়ে, না বুঝে আপনি এত আত্মবিশ্বাস সহকারে কিভাবে উত্তর দিলেন যে ইসলাম শান্তির ধর্ম ?
সে তখন দৃঢ়তার সাথে বলল- বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে, ইসলামী জলসায়, ইদানিং টেলিভিশনে বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের বক্তব্য শুনেছে আর তারা সবাই কোরান হাদিস উদ্ধৃত করে বলেছে ইসলামই হলো একমাত্র শান্তির ধর্ম। আর তা ছাড়া আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম শান্তিরই হবে এতে তো সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কোরান বলেছে – ইহা সেই গ্রন্থ যাতে কোন সন্দেহ নেই।
তখন আমি তাকে কোরান শরিফ খুলে দেখালাম অনেকগুলো সূরা যে গুলোতে বলা হচ্ছে- কাফেরদের হত্যা কর, তাদের বসতি থেকে উচ্ছেদ কর, তাদের সাথে যুদ্ধ কর যে পর্যন্ত না তারা ইসলাম কবুল না করে ইত্যাদি।
তখন সে বিন্দু মাত্র বিচলিত না হয়ে বলল- আপনি সম্পূর্ন কোরান তফসির সহকারে পড়ুন তাহলে দেখবেন কোরান শান্তির কথা বলছে।
এবার আমি বেশ বিরক্তির সাথে বললাম- আমি পুরো কোরান তফসির সহকারে কমপক্ষে ১০/১২ বার পড়েছি, প্রতিদিন পড়ি কিছু না কিছু , আর তা পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে কোরানে বস্তুত পক্ষে শান্তির কথা কিছুই বলে নি, বরং বলেছে- হিংসার কথা, খুন খারাবির কথা , অশান্তির কথা। অথচ আপনি একবারও কোরান না পড়ে , তফসির না জেনে এত আত্মবিশ্বাস সহকারে বলছেন কোরান শান্তির কথা বলেছে। এটা কোন যুক্তির কথা হলো ?

উদাহরন স্বরূপ, আমি কোরানের সূরা নিসার ৮৯ নম্বর আয়াতটা তাকে কোরান বের করে দেখালাম-

তারা চায় যে তারা যেমন কাফের তোমরা তেমনি কাফের হয়ে যাও যাতে তোমরা ও তারা সমান হয়ে যাও। অতএব তাদের মধ্য হতে কাউকে বন্ধু রূপে গ্রহন ক’রো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে না আসে। অত:পর তারা যদি বিমুখ হয়, তাদেরকে পাকড়াও কর, যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধু রূপে গ্রহন ক’রো না, সাহায্যকারী রূপে গ্রহন ক’রো না। ( বলা বাহুল্য, এ বিখ্যাত আয়াতটি বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যানে অনেকেই জানেন)

তাকে বুঝালাম ইসলামে কাফের বলতে তাদেরকেই বুঝায় যারা আল্লাহ ও তার নবীর প্রতি ইমান আনে না। সে অর্থে যত অমুসলিম আছে সবাই কাফের কারন তারা সৃষ্টি কর্তাতে বিশ্বাস করলেও মোহাম্মদকে নবী মানে না আর তার কোরান কে আল্লাহর বানী মানে না। এখন কথা হচ্ছে, প্রতিটি মানুষের কাছে তার নিজ ধর্ম শ্রেষ্ট। একজন মুসলমান যেমন তার ধর্ম ইসলামকে শ্রেষ্ট মনে ক’রে অমুসলিমদের কাছে দাওয়াত দেয়ার অধিকার রাখে, তেমনি একজন খৃষ্টান, হিন্দু বা বুদ্ধিষ্টও একজন মুসলমানের কাছে তার ধর্মের দাওয়াত দেয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু দাওয়াত গ্রহন করা বা না করা যার যার অভিরুচি। সেখানে কোন জোরা জুরি করা বা বল প্রয়োগ করা সভ্য জগতের রীতি নীতির পরিপন্থি। কিন্তু আলোচ্য আয়াতে দেখা যায়- ইসলাম অন্য ধর্মের কোন অধিকারই স্বীকার করে না তার মানে, সভ্য জগতের প্রচলিত কোন রীতি নীতির ধার ধারে না, শুধু তাই নয়, ইসলামের দাওয়াত গ্রহন না করলে আল্লাহ মুসলমানকে নির্দেশ দিচ্ছেন অমুসলিমদের সাথে সাথে হত্যা করতে তার মানে প্রাচীন যুগের বর্বর রীতির বহি:প্রকাশ এটা। তো এধরনের বর্বর একটা বানী কিভাবে আল্লাহর বানী হতে পারে ?এর পরেও লোকটি মোটেও হাতোদ্যম হলো না, বলল – এর পিছনে নিশ্চ্য়ই আল্লাহর কোন গোপন রহস্য আছে যা আমরা জানি না।

মোট কথা -অনেক যুক্তি প্রদর্শন করলাম কিন্তু কোনকিছুতেই কাজ হলো না, তার মনে বিন্দু মাত্র রেখাপাত করানো গেল না , এতই মজবুত তার ইমান। আমি তাতে আরও বললাম- ইসলাম যখন অমুসলিমদের হত্যা করার হুকুম দিচ্ছে, কিন্তু যেহেতু দুনিয়ার মুসলমানরা এখন দুর্বল বলে সেটা পারছে না , তার মানে যখন তারা শক্তিশালী হবে তখন তারা ঠিকই অমুসলিমদের মেরে কেটে সাফ করে দেবে,. কোরান সেটাই সুনির্দিষ্ট ভাবে বলছে। এটাই যদি মুসলমানদের মনের অভিসন্ধি হয়ে থাকে তাহলে যারা অমুসলিম তাদের অধিকার আছে আত্মরক্ষার ও ভবিষ্যত নিশ্চিত শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের। এ ধরনের চিন্তা ধারা থেকে অমুসলিমরা যদি ঐক্য বদ্ধ হয়ে এখন দুনিয়ার গোটা মুসলমান জাতিকে মেরে কেটে সাফ করে দেয় তাহলে কোরানের বিধান অনুযায়ী সেটা অন্যায় হবে না । আপনি কি বলেন? তাহলে দেখা যাচ্ছে- মুসলমানরা দুনিয়াতে টিকে আছে অমুসলিম তথা তাদের ভাষায় কাফেরদের করুনার ওপর ভর করে। কাফেররা যদিও জানে মুসলমানদের গোপন দুরভিসন্ধির কথা তার পরেও তারা এক জোট হয়ে মুসলমানদেরকে দুনিয়া থেকে উচ্ছেদ করে দিচ্ছে না। এটা তাদের পরম দয়ারই বহি:প্রকাশ। সেই ১৪০০ বছর আগে আপনাদের আল্লাহর নবী কিন্তু সে মানবতাটুকু দেখান নি, সে দয়া দেখান নি। তিনি মক্কা বিজয়ের পর যারা তার ইসলাম কবুল করে নি তাদেরকে কচুকাটা করেছেন, এরপর আশে পাশে যে সব ইহুদি গোষ্ঠির লোকজন বাস করত তাদেরকে হত্যা করে তাদের নারীদেরকে গনিমতের মাল হিসাবে ধর্ষণ করেছেন, তাদের বাচ্চা কাচ্চাদের বন্দী করে দাস বানিয়েছেন। সেই তুলনায় বর্তমানকার কাফেররা আপনার মহানবীর চাইতে অনেক অনেক বেশী মহান চরিত্রের অধিকারী। কি বলেন ?এবার লোকটা মুখে আর কোন শব্দ উচ্চারন করতে পারল না। তবে দেখলাম এবারও একটা অজুহাত সে খাড়া করল- বলল- ওসব ইহুদি নাসারাদের বানান গল্প, মহানবী ও ধরনের কাজ কখনো করেন নি। তখন আমি তাকে সহি বুখারী আর মুসলিম থেকে বের করে একে একে কিছু হাদিস দেখালাম । আমি তাকে মোহাম্মদের খায়বার আক্রমন ও খায়বারবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করার ঘটনার যে হাদিস সেটা দেখালাম।যেমন –

আনাস হ’তে বর্নিত -আল্লাহর নবী রাতের বেলায় খায়বারে পৌছলেন। এটা তার স্বভাব ছিল যখন তিনি কোন শত্রুর কাছে তিনি রাতের বেলা পৌছলে তখনি আক্রমন করতেন না , ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। ভোর হলে পর যখন ইহুদিরা তাদের কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হলো তখন তাদের নজরে মোহাম্মদ ও তার সশস্ত্র সঙ্গী সাথীদের দেখল। মোহাম্মদ তখন বলল- আল্লাহু আকবর, খায়বর ধ্বংস হল, আমরা যখন একটা জাতির সাথে যুদ্ধের জন্য তাদের দিকে অগ্রসর হই, তাদের কাছে সকালটা হয় ধ্বংসের। সহি বুখারী, বই নং-৫৯, হাদিস নং-৫১০

এর পরের ঘটনা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। প্রায় ৬০০ (মতান্তরে ৯০০) ইহুদি পুরুষকে সেদিন মোহাম্মদের বাহিনী হত্যা করেছিল। আর এরপর তাদের সর্দার কিনান এর স্ত্রী সাফিয়াকে নিয়ে মোহাম্মদ রাত কাটিয়েছিলেন বিয়ে ছাড়াই। উনি কিভাবে একটা নারীকে বিয়ে ছাড়া রাত কাটাতে পারেন যেখানে তার স্বামী, পিতা , ভাই, আত্মীয় স্বজন সবাইকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছেন সেদিনই , এটা কি কোন আল্লাহর নবীর চরিত্রের সাথে মানানসই ? আল্লাহর নবী তো দুরের কথা , কোন সভ্য মানুষ এটা করতে পারে ? অবশ্য পরদিন উনি সাফিয়াকে বিয়ে করেছিলেন।আমি তাকে বললাম – উপরের হাদিস থেকে একটা বিষয় পরিস্কার যে মোহাম্মদ আতর্কিতে খায়বার আক্রমন করেছিলেন, কারন যখন আক্রমন করেছিলেন তখন খায়বরবাসীরা সকালবেলাতে কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল । এটা কোন আত্মরক্ষার আক্রমন ছিল না। আক্রমনটা ছিল এম্বুস ধরনের । তার মানে নিরীহ একদল মানুষের ওপর মোহাম্মদ আর তার দল বল বিনা নোটিশেই কোন উস্কানি ছাড়াই চুড়ান্ত জিঘাংসায় ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। যা ছিল তখনকার আমলের যুদ্ধের পরিপন্থি। এ কেমন আল্লাহর নবী যিনি নিরীহ জনসাধারনের ওপর হামলা করে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে আনন্দ উল্লাস করেন ? তবে কোরানের ৪: ৮৯ আয়াত অনুযায়ী কিন্তু বিষয়টা ঠিকই আছে। সেখানে বলা হয়েছে ইসলামের দাওয়াত কবুল না করলে তাদের ওপর হামলা করা যাবে, নির্বিচারে খুন করা যাবে, সেটা কোন খারাপ কাজ হবে না। খায়বারের ইহুদিদেরকে আগেই ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল আর তারা তা কবুল করে নি , সেকারনেই তাদের ওপর এহেন ভয়াবহ আক্রমন। এই হলো – ইসলামের শান্তির নমুনা! এত উদাহরন যখন দেখালাম আমার পরিচিত লোকটি তো তখন থ।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- নবীজি ৫১ বছর বয়সে ৬ বছরের শিশুকন্যা আয়শাকে বিয়ে করেছিলেন , জানেন ?
সে বলল- না তা তো জানিনা, তবে আয়শা নবীজির স্ত্রী ছিলেন তা জানি।
বললাম- আপনার ৬ বছরের মেয়েকে ৫১ বছরের একজন পুরুষ বিয়ে করতে চাইলে আপনি তাকে কি বলবেন ?
সে বলল- তাকে লম্পট, বদমাইশ বলব।

সাথে সাথে আমার প্রশ্ন- তাহলে নবীজির বেলায় কি বলতে হবে ? ,সে নিরুত্তর রইল।

– আপনি কি জানেন , নবীজি ১৩ টা বিয়ে করেছিলেন আর এছাড়া তার আরও দাসী বাদি ছিল ?
– আমি তো জানি তার ৪ টা বউ ছিল।
– আপনি কি জানেন তিনি লুঠ করার উদ্দেশ্যে মদিনাবাসীদের একত্র করে ৩১২ জন লোক নিয়ে মক্কাবাসীদের বানিজ্য কাফেলায় আক্রমন করতে বেরিয়েছিলেন?
– আমরা তো জানি মক্কাবাসীরা আক্রমন করার জন্য মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল, ওহুদ প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মক্কাবাসীদের সৈন্যসংখ্যা ছিল ১০০০ এর বেশী। আল্লাহর সাহায্যে নবীজি তাদেরকে পরাস্ত করেন।
– ভুল জানেন, সিরিয়া থেকে মক্কায় ফেরার বানিজ্য কাফেলায় ৫০ জনের মত লোক ছিল, যখন তাদের নেতা সুফিয়ান জানতে পারল তাদের মালামাল লুট করার জন্য মোহাম্মদ দল বল নিয়ে রওনা হয়েছে তখন সে বানিজ্য কাফেলাকে একটু ঘুর পথে নিয়ে যায়। আর মক্কায় সাহায্যের জন্য খবর পাঠায়। খবর পেয়ে মক্কাবাসীরা তাদের মালামাল রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসে, মদিনা আক্রমন করার জন্য নয়। এর পর ওহুদ প্রান্তরে মোহাম্মদের সাথে মরুভুমিতে দীর্ঘ পথ ভ্রমনে ভীষণ ক্লান্ত মক্কাবাসীদের যুদ্ধ হয় ও মক্কাবাসীরা পরাজিত হয়। পরাজয়ের অন্য কারনের মধ্যে আছে -মক্কাবাসীদের মধ্যে কিছু মোহাম্মদের অনুসারীও ছিল যাদেরকে মক্কাবাসীরা জোর করে তাদের সাথে এনেছিল যারা যুদ্ধের সময় মক্কাবাসীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। যাহোক, যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর বিপুল মালামাল মোহাম্মদের দলের আয়ত্বে আসে। তখন মক্কাবাসী আর মদিনা বাসীদের মধ্যে লুঠের মালামাল বন্টন নিয়ে কোন্দল শুরু হয়। মক্কাবাসীরা মদিনাবাসীদেরকে লুঠের মালের ভাগ দিতে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে মদিনাবাসীরা বলে তারা মোহাম্মদ ও অন্য হিজরতকারী মক্কাবাসীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, তারপর মক্কাবাসীদের সাথে তাদের কোন দ্বন্দ্ব না থাকা সত্ত্বেও তারা মোহাম্মদের কথা মত(প্রথমে মদিনাবাসী মক্কার বানিজ্য কাফেলাকে আক্রমন করতে চায়নি, মোহাম্মদ তখন কোরানের বানী নাজিল করে ও লুঠের মালের ভাগ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দলে ভেড়ান) তাদের আক্রমন করেছে তাই লুঠের মাল তাদের প্রাপ্য। এ নিয়ে প্রায় মারামারির পর্যায়ে গেলে মোহাম্মদ একটা সমঝোথা করে দেন। তার মানে মদিনাবাসীরা ইসলামের জন্য যতটা নয় , তার চাইতে লুঠের মালের ভাগ পাওয়ার জন্যই এসেছিল। অন্যদিকে হিজরতকারী মক্কাবাসীরা ছিল ভীষণ পাজি ও স্বার্থপর, তারা মদিনা বাসীদের সাহায্যকে স্বীকার করতে চায়নি। এখন প্রশ্ন হলো- খোদ আল্লাহর নবী যেখানে উপস্থিত সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে কিভাবে ? আজকের যুগে আমরা যদি কাউকে আল্লাহর নবী হিসাবে চুড়ান্ত ভাবে জানি ও বিশ্বাস করি তাহলে আমরা এহেন লুটের মাল বন্টনের মত তুচ্ছ ঘটনা ঘটানোর কথা তো কল্পনাও করতে পারি না ।

আমি তাকে তখন বদর যুদ্ধের যাবতীয় ঘটনা বের করে দেখালাম। আরও বললাম- ইসলাম আর মোহাম্মদ সম্পর্কে আপনাদের শূধু ভাল ভাল খবর গুলো জানানো হয় , বিতর্কমূলক ঘটনাগুলো গোপন করা হয়। কখনো জানতেও দেয়া হয় না । আর এটাই একটা বড় সমস্যা।

এর পর সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে বলল- ভাল করে পড়ে দেখতে হবে বিষয়টি কি ও এই বলে সে আমার কাছ থেকে তড়ি ঘড়ি উঠে চলে গেল।

ইসলাম যে মোটেও কোন শান্তির ধর্ম নয়, এটা বোঝার জন্য সত্যিকার অর্থে কোরান বা হাদিসের আর কোন কিছুই পড়ার দরকার হয় না , উক্ত একটি মাত্র আয়াতই আর উপরের হাদিসই তা প্রমান করার জন্য যথেষ্ট। একই সাথে একই ভাবে এ ধরনের ঘৃন্য ও বর্বর কথা যে পরম দয়ালু আল্লাহ বলতে পারেন না , তাও সাথে সাথে যে কোন সাধারন বুদ্ধি বিবেক সম্পন্ন মানুষ বুঝতে পারে। কিন্তু আমার সে পরিচিত লোকটি তা বুঝতে অক্ষম হলো , শুধু তাই নয় তার মত কোটি কোটি মুসলমান বন্ধুরাও তা বুঝতে অক্ষম। আমি উক্ত আয়াতের তফসির সম্পর্কে জানার জন্য বেশ কিছু অনলাইন কোরান ঘেটেছি , বোঝার চেষ্টা করেছি আসলে কোন প্রেক্ষাপটে সেটা নাজিল হয়েছিল। আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, আগে পরের আয়াত গুলোর তফসির নানা কায়দায় বলা হয়েছে কিন্তু নির্দিষ্টভাবে উক্ত আয়াতের কোন তফসির কোথাও নাই।

এবার একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী নারীর কথা বলব যে প্রচন্ড রকম ধার্মিক ও তাবলিগ জামাত করে। সে সব সময় বোরখা ও নেকাব পরে চলাচল করে।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম- এত নামাজ রোজা আর ধর্ম কর্ম পালন করেন কিসের জন্য?
বলল পরকালে নাজাত পাওয়ার জন্য করে। জিজ্ঞেস করলাম – নাজাত জিনিসটা কি ?
বলল- বেহেস্তে যাওয়ার জন্য নামাজ রোজা করে। জাহান্নামের হাত থেকে বাচার রাস্তাই হলো নাজাত।
তখন আমি বললাম – আপনি কি জানেন বেহেস্তে নারীদের জন্য আনন্দ ফুর্তির উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই নেই ?
সে আশ্চর্য হয়ে বলল-অবশ্যই আছে , সেখানে নারীরা খুব আনন্দে ও সুখে থাকবে।
আমি বললাম – না। বেহেস্তে শুধুমাত্র পুরুষদের ব্যবস্থা যেমন সেখানে আছে অসংখ্য যৌবনবতী হুর, মদের নহর ইত্যাদি যা নারীদের আনন্দ ফুর্তিতে কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
সে খুব চালাকি করে বলার চেষ্টা করল- কোরানে তো কোথাও লেখা নাই যে নারীর জন্য আনন্দ ফুর্তির কোন ব্যবস্থা নেই ।
আমি বললাম- ওটা লেখার দরকারও তো নেই । কোরানে বার বার বেহেস্তের যে বর্ননা দিয়েছে তাতে সে জায়গাটা যে নারীদের বসবাসের জন্য খুব আকর্ষনীয় জায়গা তা মনে হয় না। উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে একটা টেইলারিং শপের কথা । যদি শপটিতে ঢুকে দেখা যায় ভিতরটা শুধু পুরুষদের পোষাক দ্বারা সজ্জিত তাহলে বুঝতে হবে সেটা বিশেষভাবে শুধু পুরুষদের জন্য শপ। সেখানে ব্যখ্যা করার দরকার নেই যে সেটা নারীদের জন্য না আর তা বুঝতে সামান্য সাধারন জ্ঞানই যথেষ্ট। সুতরাং বেহেস্ত যে শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য নয় , সেটা কোরানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না থাকলেও যা উল্লেখ করা আছে তা দিয়ে বোঝা যায় তা শুধুমাত্র পুরুষ মানুষদের জন্য।

তখন সে বলল- নারীরা সাধারন ভাবে ধর্ম কর্মের প্রতি বেশী মনোযোগী থাকে, পুরুষরা কম অমনযোগী থাকে তাই পুরুষদের আকৃষ্ট করতেই আল্লাহ তাদেরকে বেহেস্তের নারী আর মদের লোভ দেখিয়েছেন।
আমি বললাম- এবার আপনি মনের অজান্তে হলেও সত্যি কথাটা বলে ফেলেছেন। তবে আপনার ধারনাও ভুল। তা হলো- নারীরা প্রকৃতিগত ভাবেই নাকি গুনাহের কাজ করে থাকে আর সেকারনেই তাদের অধিকাংশই দোজখে যাবে যা সহি বোখারী হাদিসে বলা আছে। সুতরাং পুরুষদের জন্য নয় , বরং নারীদেরকেই বেশী লোভ দেখানো উচিত ছিল। কারন তারাই নাকি বেশী দোজখে যাবে। হেদায়েত তাদের জন্যই বেশী দরকার ছিল। আর তার পরেও এ কেমন আল্লাহ যে বেহেস্ত তৈরী করতে গিয়ে নারীদের সুবিধা/ আনন্দ ফুর্তির কথা বেমালুম ভুলে গেলেন ? ভুল করে একটা আয়াতেও তো নারীদের জন্য যেসব সুবিধা বেহেস্তে আছে তার কিছু কথা বলতে পারতেন যেখানে তিনি কম করে হলেও ১০ টা আয়াতে পুরুষদের মজা ফুর্তির আয়োজনের কথা বলেছেন ।

বেহেস্তের মজা ফুর্তির সুযোগ কি আছে তা জানতে – এখানে ক্লিক করুন

এর পরেও কিন্তু মহিলাটা আমার যুক্তিকে গ্রহন করে নি। প্রতিটি প্রশ্নেরই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু যখন আর যুক্তি দিতে পারেনি তখনই সে অকাতরে বলল- নিশ্চয়ই আল্লাহ পরহেজগার নারীদের জন্য কোন না কোন ব্যবস্থা রেখেছেন। বলাবাহুল্য, এ মহিলা দাবী করেছিল সে কিছু কিছু বাংলা কোরান শরিফ পড়েছে তবে পুরো পড়েনি।

তো এই হলো- সাধারন মুসলমানের মানস চিত্র। তাদের মধ্যে ৯৯% এর ও বেশী কোরান কখনই মাতৃভাষায় পড়েনি ( যারা অনারবীয় মুসলমান), নামাজ পড়ার জন্য ও রমজান মাসে কিছু কিছু আরবী আয়াত তোতাপাখীর মত আউড়ে যায় , অনেক সময় গোটা কোরান রোবটের মত খতমও করে ফেলে মাথা মুন্ডু না জেনেই, যার অর্থ কিছুই তারা জানে না, সে আয়াতে অমুসলিমদেরকে খুন করতে বলছে নাকি তাদের নারীদেরকে ধর্ষন করার অনুমাতি দিচ্ছে তা কিছুই তারা জানে না, অথচ প্রচন্ড বিশ্বাস করে বসে আছে কোরান হলো আল্লাহর কিতাব, মোহাম্মদ হলো আল্লাহর নবী, ইসলাম হলো মহা শান্তির ধর্ম, আর কোরান হলো মহাবিজ্ঞানময় গ্রন্থ। আর তাদের সাথে ইসলাম, কোরান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই অধিকাংশই প্রথমে আলোচনাই করতে চায় না , তার পর কায়দা করে আলোচনা করলে ও একটু ভিন্ন মত প্রকাশ করলে, তারা প্রথম যে সবক দেয় তা হলো – কোরান তফসির সহকারে পড়তে ,না বুঝলে বার বার পড়তে – কিন্তু নিজেরা ওসবের ধার কাছ দিয়েও যাবে না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে – মুসলমানদের অধিকাংশই এরকম মানসিকতার অধিকারী কেন ?

প্রথম কারনটি হলো- মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করার পর , ধনী নির্ধনী নির্বিশেষে সব শিশুদের প্রাথমিক পাঠ শুরু হয় আরবি অক্ষর দিয়ে আর তার পর শুরু হয় কোরান পড়া , ইসলাম শিক্ষা এসবের মধ্য দিয়ে। তখন প্রথম যে পাঠ দেয়া হয় তা হলো – এই দুনিয়ার মালিক আল্লাহ , তিনি বেহেস্ত দোজখ সৃষ্টি করেছেন, মোহাম্মদ তার শেষ নবী, তিনি মহামানব, আল-আমীন বা বিশ্বাসী, তার চরিত্রে কোন কলংক নেই , যাবতীয় গুনপনা দিয়ে তার চরিত্র পূর্ন কারন আল্লাহ তাকে সব গুন দিয়েছে, কোরান হলো আল্লাহর বানী, হাদিস হলো মোহাম্মদের উপদেশ, জীবনের নানা ঘটনাবলীর বর্ননা যা মানুষকে কেয়ামত পর্যন্ত অনুসরন করতে হবে। বর্তমানে এসবের সাথে যোগ করা হচ্ছে- মোহাম্মদ হলো শ্রেষ্ট সাহিত্যিক, শ্রেষ্ট বিজ্ঞানী, শ্রেষ্ট সমাজ সংস্কারক, শ্রেষ্ট দার্শনিক সব কিছুর শ্রেষ্ট। এতসব কিছু পড়ার পরই শুরু হয় তার সাধারন পাঠ মানে বিদ্যালয় শিক্ষার কারিকুলাম। তার মানে একটা শিশুর কচি মাথায় প্রথমেই ইসলাম, কোরান আর মোহাম্মদ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত সব ধারনা দিয়ে দেয়া হয় যা সে বয়ে বেড়ায় সারা জীবন। কচি শিশুর মস্তিষ্ক হলো অনেকটা সিস্টেম সফটওয়ার বিহীন মস্তিষ্কের মত, – উইন্ডোস-এক্সপি, ভিস্তা বা লিনাক্স ইন্সটল ছাড়া একটা কম্পিউটারের মত। এর পর তার মাথায় ইসলাম, কোরান ও মোহাম্মদ সম্পর্কিত অতিরঞ্জিত তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ সিস্টেম সফটওয়ার ঢুকিয়ে দেয়া হয়। যার ফল হলো- পরবর্তীতে সারা জীবন সে সেটার মধ্য দিয়েই চলাচল করে, দুনিয়ার বাকী সব কিছুই সে সেই সফটওয়ারের সাথে সমন্বয় করে চলে, যা এই সফট ওয়ারের সাথে সমন্বিত হয় না বা তাল মিলাতে পারে না, যেমন- মুক্ত চিন্তা বা কোরান ও মোহাম্মদ সম্পর্কিত ভিন্ন কিন্তু ইতিহাস নির্ভর বাস্তব তথ্য, তাকে তারা বাতিল বা অগ্রহনযোগ্য হিসাবে রায় দেয়। তাই এর পর তারা যতই উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করুক না কেন, তারপরেও যত যুক্তিই প্রদর্শন করা হোক না কেন তারা প্রথমেই তাকে প্রত্যাখ্যান করে তার ব্রেনে রক্ষিত সেই ছোট বেলাকার ধ্যান ধারনার সাথে সংগতি পূর্ন না দেখে। যখন যুক্তিতে আর পেরে ওঠে না তখন তারা হয় তারা আর এ বিষয়ে আলাপ করতে চায় না বা সোজা বলে দেয়- অনেককিছুই গোপন বিষয় আছে যা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

দ্বিতীয় কারন হলো- মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত অহর্নিশ প্রচারনা বা প্রপাগান্ডা। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জলসা, রেডিও, টেলিভিশন, রাজনৈতিক সভা সর্বত্র অনিবার্যভাবেই ইসলাম চলে আসবেই আর তাতে ইসলামের গুনগান বা কোরানের অলৌকিকতা বা অভ্রান্ততা প্রচার করা হবে, মোহাম্মদ যে কি অসীম মহামানব ছিল তা প্রচার করা হবে। ফলে মানুষের মনে তাদের ছোটবেলাকার জানা জিনিস আরও বেশী করে জেকে বসে। বর্তমান কালে-টেলিভিশনের বহুবিধ ইসলামী চ্যানেল এ বিষয়ে অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে। সেখানে অহর্নিশ মনগড়া ও আজগুবি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে যার বিপরীতে কোন চ্যানেল নাই যেখানে এসব বিষয়কে যুক্তির মাধ্যমে খন্ডন করে কোন কিছু প্রচার করা হয়। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট দেশ তো দুরের কথা , পশ্চিমা দেশ সমুহেও নাই । ইসলাম সম্পর্কিত এসব প্রচার প্রচারনায় ইদানিং আরব দেশের বিপুল পেট্রোডলারের সহায়তা এসব কার্যক্রমকে বেগবান করেছে। কিন্তু বিপক্ষে একটাও টিভি চ্যানেল নাই যেখানে এসব দাবীকে ভ্রান্ত প্রমান করা হয়। আছে কিছু বই পুস্তক বা ইন্টারনেট সাইট যেখানে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করা হয় যেখানে খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষ প্রবেশ করে আর তারা কিছু কিছু অনুধাবন করতে পারে, কিন্তু এর চাইতে টিভি চ্যনেল অনেক বেশী শক্তিশালী।

প্রপাগান্ডার মধ্যে আছে যেমন –

১। এ যাবত বিজ্ঞানের যত আবিষ্কার হয়েছে তার সব কিছুই কোরানে আছে আর যা প্রমান করার জন্য আবার পেট্রোডলার সমর্থিত কিছু টিভি চ্যনেল ও ব্যাক্তিবর্গ বিপুল শ্রম ও অর্থ অকাতরে ব্যয় করে চলেছে। তারা ডার্উইনের বিবর্তনবাদ থেকে শুরু করে হালের ব্লাক হোল পর্যন্ত সব কিছু কোরানে খুজে পাচ্ছে আর তা মহাসমারোহে অসংখ্য টি ভি চ্যানেলগুলোতে প্রচার করছে যা করতে তারা অকাতরে পেট্রোডলার খরচ করছে।
২। কিছু কিছু খ্যতিমান ব্যক্তিত্বের সম্পর্কে প্রচার করা হয়ে থাকে যে তারা ইসলাম গ্রহন করেছে ইসলামের অভ্রান্ততা স্বীকার করে। উদাহরন স্বরূপ চাদে অবতরনকারী প্রথম মানুষ নীল আর্মস্ট্রং এর কথা ফলাও করে প্রচার করা হয় যে তিনি নাকি চাদে থেকে ফেরার পর ইসলাম ধর্ম কবুল করেছেন। কিন্তু বার বার তার অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করার পরও এ অপপ্রচারে বিরতি দেয়া হয় নি যা আবার অধিকাংশ মুসলমান ভাইরা জানে না। ফলে তারা প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে অন্ধকারে থাকে।

তৃতীয় কারন হলো- অশিক্ষা, দারিদ্র, কুসংস্কার। মুসলমান প্রধান অধিকাংশ দেশই দরিদ্র , অনুন্নত আর সেসব দেশের শিক্ষার হারও কম। এসব দরিদ্র কুসংস্কারচ্ছ্ন্ন মানুষ গুলো দুনিয়ার আরাম আয়েশ থেকে ভীষণভাবে বঞ্চিত। তাই তারা বিশ্বাস করে- ইহজগতে একটু কষ্ট করে ধর্ম পালন করলে পরকালে যদি বেহেস্তে যাওয়া যায় তাহলে সেটাই তো বড় প্রাপ্তি। কারন কোরানে বার বার বলা হয়েছে- ইহজগত দুদিনের জন্য, পরকাল হলো অনন্ত। তাই মানুষগুলো ইহ জগতের না পাওয়ার বেদনা থেকেই পরকালের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়ে পড়ে আর বেশী করে ধর্ম কর্মে মনোনিবেশ করে।

চতুর্থ কারন হলো- অনুন্নত দেশ সমুহে বিশেষ করে উপমহাদেশের দেশ গুলোতে প্রচলিত আধুনিক শিক্ষার বিস্তার যতটা না ঘটেছে তার চেয়ে বেশী ঘটেছে কোরান হাদিস ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষার বিস্তার। বিগত বিশ বছরে একটা প্রাইমারী স্কুলের পরিবর্তে যদি ২ টি প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে , সেখানে ১টা মাদ্রাসার পরিবর্তে কম করে ৫ টা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যার একটা বিরাট অংশই আবার পেট্রোডলারের সহায়তায়। আর মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে আরও বেশী হারে। তার মানে মোটামুটিভাবে গোটা মুসলিম বিশ্বে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের বিষয়টা গৌণ হয়ে ধর্ম শিক্ষাটা প্রধান ভুমিকায় চলে এসেছে। আর সরকারগুলোও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা প্রদান করে থাকে। তার মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মাদ্রাসাই হলো সম্পূর্ন আধুনিক শিক্ষা বর্জিত, যাদেরকে কওমী মাদ্রাসা বলা হয়, যেখানকার শিক্ষা কারিকুলাম সম্পূর্নতই কোরান ও হাদিস। এমনকি বাংলাদেশে এরকম মাদ্রাসায় মাতৃভাষা বাংলাও শিক্ষা দেয়া হয় না, অংক বিজ্ঞান তো অনেক কল্পনার বাইরের ব্যপার। দেখা গেছে বর্তমানে যে সব ইসলামী উগ্রপন্থি লোকজন আছে তাদের অধিকাংশই এসব মাদ্রাসা থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত। বাংলাদেশে বর্তমানে এরকম মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার যেখানে লক্ষ লক্ষ ছাত্র পড়াশোনা করে, আর চোখের সামনেই তারা উগ্রবাদী ধ্যান ধারনা নিয়ে গড়ে উঠছে, এসবের বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই। তথাকথিত মডারেট মুসলমানরাও কিন্তু এসবে বিরোধিতা করে না , বরং ইসলাম প্রসারে ব্যপক ভুমিকা রাখে বলে তারা এসব মাদ্রাসাতে অনেক আর্থিক সাহায্যও করে থাকে কারন এসব মাদ্রাসা কোন সরকারী অনুদান গ্রহন করে না। বহু লোক আছে যারা এসব মাদ্রাসায় তাদের সন্তানদের পড়ানোর জন্য আগেই মানত করে থাকে এই বিশ্বাসে যে তাতে তাদের গোটা পরিবার বেহেস্তে যাবে। বিষয়টাকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে একজন বেশ বিরাট ব্যবসায়ীর দেখা পেয়েছিলাম যে তার তিন ছেলের একটাকে এ ধরনের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছে , কারন সে সেই ছেলের জন্মের আগেই এ মাদ্রাসায় পড়ানোর মানত করেছিল। তার মানে বিষয়টি ভীষণ ভাবে পবিত্রতার প্রতিক। এছাড়া এসব মাদ্রাসাগুলো সাধারনত; গ্রামের অতি হত দরিদ্র পরিবারের ছেলেদেরকে, গরিব এতিম ছেলেদেরকে সংগ্রহ করে তাদের বিনা পয়সায় শিক্ষা দেয়ার নাম করে। গরিব মানুষগুলো ভাবে এমনিতেই তো তাদের সন্তানদেরকে লেখাপড়া করানোর সাধ্য তাদের নেই, যদি মাদ্রাসা তাদের সে দায়িত্ব নিয়ে নেয় এটা তো আল্লাহর নেয়ামত। তারা আরও মনে করে এতে করে তাদের বেহেস্তে যাওয়ার রাস্তা সুগম হবে। কিন্তু তারা বোঝে না বা জানে না যে তাদের সন্তানদেরকে সে মাদ্রাসাগুলোতে ইসলামের নাম করে কি শিক্ষা দিচ্ছে। মানুষের দারিদ্রের সুযোগে এভাবেই মুসলমান সমাজে জঙ্গীবাদী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ইসলামী মিথের নামে টিভি চ্যানেল গুলোতে ব্যপক ভূয়া প্রচারনা শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেই ধর্মীয়ভাবে গোড়া লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। এসব মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সৌদিরা সাহায্য করতে বেশী আগ্রহী, বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসার অধিকাংশই মূলত সৌদি সাহায্য পুষ্ট। কারন এখানে সত্যিকার অর্থেই একদল অন্ধ, উগ্র ও গোড়াপন্থি মানুষ সৃষ্টি হয়, যা সৌদিদের জন্য খুব বেশী দরকার। মোট কথা চারিদিকে এখন এমন অবস্থা বিরাজ করছে যেখানে ধর্মীয় ভাবে গোড়া না হওয়াটাই বেশ আশ্চর্য ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে , শিক্ষা বা শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ না করে সৌদিরা ইসলাম প্রচারে তাদের বিপুল অর্থ কেন ব্যয় করছে। কারনটা কিন্তু খুবই সোজা । সৌদিরা বুঝতে পেরেছে যে তাদের তেল বেশীদিন থাকবে না আর তখন তাদের কপালে খারাবি আছে, তারা যে রকম দুশ্চরিত্র আর অসভ্য ( বাংলাদেশ থেকে সেখানে কাজ করতে যাওয়া একটা মানুষের কাছেও সৌদিদের সম্পর্কে ভাল কথা শুনিনি) তাতে কেউ তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে যাবে না, এমতাবস্থায় তাদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন হবে মক্কা মদিনায় বেড়াতে আসা হ্জ্জ যাত্রীরা। বর্তমানেই প্রায় প্রতি বছর ৩ মিলিয়ন লোক হজ্জ পালন করতে সে দেশে যায়, এখন এই সংখ্যাটা যদি আরও বাড়ানো যায় তাহলে তাদের তেল ফুরালেও চিন্তা নেই, মজাসে দিন চলে যাবে তাদের। আর সে লক্ষ্য থেকেই তাদের ইসলাম প্রচার , মসজিদ, ইসলামিক টিভি, তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতদের পেছনে এত অর্থ লগ্নী , যাতে করে আরও বেশী লোক ধর্মের পথে আসে আর ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ্জ ব্রত পালন করে।একটা খসড়া হিসাব যদি করি , যেমন – মাথা পিছু যদি একজন হজ্জ যাত্রী মাত্র ২০০০ ডলারও হজ্জ এর সময় সৌদিতে ব্যয় করে ( যার নিচে হজ্জের মোট সময়কালীন সৌদিতে থাকা সম্ভব নয়) তাহলে মোট পরিমানটা দাড়ায়- ৬০০০ মিলিয়ন ডলার বা ৬ বিলিয়ন ডলার। এখন এই সংখ্যাটাকে যদি ১ কোটিতে উন্নিত করা যায় তাহলে আয় বেড়ে দাড়াবে ২০,০০০ মিলিয়ন বা ২০ বিলিয়ন ডলার , তাহলে তেল না থাকলেও সৌদি বাদশাদের চিন্তার আর কোন কারন থাকে না, আরাম আয়েশে বংশ পরম্পরা তারা এভাবে চলে যেতে পারবে। সোজা হিসাব। সুতরাং যতটা না তারা ইসলামের জন্যে অর্থ ব্যয় করে, তার চেয়ে বানিজ্যিক স্বার্থ আরও বেশী। অবশ্য এটাকে খারাপ বলাও যাবে না কারন যে কোন দেশই তার দেশের আয় বাড়ানোর জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, যেমন প্রতিটি দেশই তো পর্যটন খাতের উন্নয়ন করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। তাহলে সমস্যাটা কোথায় ? সমস্যাটা হলো- এ করে সৌদির আরবরা তাদের আখের গুটাচ্ছে ঠিকই কিন্তু মুসলিম বিশ্বের চরম সর্বনাশ করছে, মুসলিম দেশগুলো যেটুকু জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে তাদের দেশ গুলোকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত, তাতে বিরাট রকম ছেদ পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাতে আধা সভ্য আরবদের কিছুই যায় আসে না। কিন্তু আমাদের ধর্মপ্রান মুসলমান ভাইরা তা একটুও বুঝতে পারছে না। কিন্তু সৌদিরা যে সুবিধা পাবে তা তো অন্য আরব দেশগুলো পাবে না , তাই আমরা লক্ষ্য করি অন্য আরব দেশগুলো যেমন- সংযুক্ত আরব আমিরাত তারা চেষ্টায় আছে দেশটাকে আধুনিক করে গড়ে তোলার, পর্যটনের আকর্ষনীয় স্থানে তাদের দেশকে গড়ে তোলার। যাতে তেল ফুরিয়ে গেলেও খুব বেশী বিপদে পড়তে না হয়। যে কারনে সৌদি আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের কালচারের মধ্যে বিপুল তফাত। যে কেউ দুবাই গেলে তা সহজেই বুঝতে পারে।