অথবা মিড লাইফ ক্রাইসিস-এই ভাবেই শুরু করা যেত। চারিদিকে যত বন্ধু বান্ধব আছে-যে দিকে তাকাচ্ছি-সবাই নিজের চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্ট। এদের সবার একটা কমন প্রফাইল আছে-ছাত্র জীবনে সবাই মেধাবী ছাত্র। আই আই টি থেকে পাশ করার পর সবাই নামকরা কর্পরেটে ঢুকে গেছে। আর্থিক দিয়ে কেওই অসফল না-মানে জীবনে সেই অস্তিত্ববাদি সংকট নেই। কিন্ত ইদানিং সবাই আমাকে বলে-জীবন চেটে গেছে! সবাই নাকি সেই কর্পরেট জীবন থেকে বেড়তে চাইছে। দ্বাসত্ব মুক্তি টাইপের ব্যাপার।

আমি লেখা লেখি এবং নানান কাজে ব্যাস্ত থাকায় আসলে নিজের চাকরিতে অত সময় দিতে পারি না-চাই ও না। গত পাঁচ বছর ধরে এটাই আমার রুটিন। কারন কর্পরেট জীবনের অন্তঃসারশুন্যতা নিয়ে ২০০৩ সালেই আমার গভীর উপলদ্ধি হয়। কঠিন অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি ধণতন্ত্র আসলে একটা জাঁতাকল। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এতদিনে বেড়লাম না কেন? ব্যাপারটা হচ্ছে এখানে যাও বা কিছু করছি-তা বাস্তবে সমাজ বা মানুষের কাজে আসে। একাডেমিক্সএ আমাদের লাইনে যে গবেষনা হয়-তার পুরোটাই ফালতু। শুধু পেপার উৎপাদনের জন্যে ধান ভাঙাগীত। ফলে বাকী উপায় ছিল-ব্যাবসাতে ঝাঁপ দেওয়া বা এন জি ও খুলে দেশোদ্ধার করা। শেষেরটিতে এত দুর্নীতি নিজের চোখে দেখা-ভরসা হয় নি। তবে চাকরি ছেরে দুবার ব্যাবসা করার চেষ্টা করেছি-দুবারই ব্যার্থ হয়ে চাকরিতে ফিরে যেতে হয়েছে। শেষে বুঝেছি আসলে কয়েক মাসে ব্যাবসা নামে না-দীর্ঘ দু তিন বছর একটানা চেষ্টা করলে-কিছু দাঁড়ায় হয়ত। তাও সেটা কর্পরেট বেতনের প্রতিস্থাপক হওয়া কঠিন-ফলে কর্পরেট ঘানির কালো তৈল উৎপাদনই জীবন কায়া।

বাকীদের উপলদ্ধি হয়ত এত দ্রুত আসে নি-ফলে তারা জীবনের একটা দশক কর্পরেটকে দিয়ে এখন নিজেদের প্রশ্ন করছে-জীবনে কি করিলাম? বিলগেটসের মতন মাইক্রোসফট ও বানাইতে পারি নাই-লালনের মতে গান ও বাধিতে পারি নাই! রাস্তার ধারে একজন চায়ের দোকানের মালিকের দোকানটার ও একটা লেগাসি থাকে- কর্পরেট বাবুদের মাইনা ছারা কিছু নাই! জীবনের ইঁদুর দৌড়ে কর্পরেট গুহাতে জোরে দৌড় মেরে সবাইকে পেছনে ফেলে ঢুকে সবাই দেখছে-সেই গুহাতে যত ঢুকবে-ততই অন্ধকার-টানেলের শেষে আলো নেই।

এই বেশ ভাল আছি বলে উইকেন্ডে পার্টি করে অনেকেই বহুদিন চালিয়েছে। বরং বলা ভাল-এই সব অসস্তিকর প্রশ্নগুলো আসলে আগে এরা কেও নিজেদের জিজ্ঞাসা করে নি। প্রশ্নটা আইডেন্টিটির এবং লেগাসির। একটা না একটা দিন এগুলো মানুষকে তাড়া করবেই। অনেকেই তাদের হিন্দু মুসলিম আইডেন্টি নিয়েই খুশি-তাদের সীমিত পরিচিতির পরিসরে লোকজন তাদের গুরুত্ব দিলেই, তারা নিজেদের জীবন সার্থক বলে মনে করে। সমস্যা হচ্ছে তাদের নিয়ে-যারা ভাবে জীবনে কিছু করতে পারত-সেটা করতে হয়ত কর্পরেটে ঢুকেছিল-শেষে বুঝেছে কিছু করার জন্যে কর্পরেটে ঢোকা মুর্খামি-ওটা ঘানি টানার জায়গা।

তবে কে জানে-সম্পূর্ন জীবন বলে হয়ত সত্যিই কিছু নেই। অসম্পূর্ন জীবনই হয়ত আসল জীবন। অথবা হতেও পারে এটা আঙুর ফল টক টাইপের একটা মনোলগ।