কমরেড ওয়ালিউর রহমান লেবু কমিউনিষ্ট পার্টির তরুণ নেতা ছিলেন। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে ৮ ও ৯ সেক্টরের প্রধান সমন্বয়কারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরীর সুযোগ ছেড়ে দিয়ে সাধারণ ক্ষেতমজুর ও গণমানুষকে কমিউনিষ্টরদের পতাকাতলে সমবেত করার জন্য উলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গোপালগঞ্জের প্রতিটি মানুষের লেবুভাই।
একাত্তরের পরে গোপালগঞ্জে কোন দুর্নীতি অনিয়ম করতে দেন নি। তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পড়েছিল তৎকালীন কায়েমী স্বার্থবাদী লোকজন। মোল্লা জালাল উদ্দিন আহমদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ট বন্ধু। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে লেবুভাই ন্যাপ বা কমিউনিষ্ট পার্টির প্রার্থী হলে তিনি এমপি হতে পারবেন না। এ কারণে বঙ্গবন্ধুকে ধরলেন মোল্লা জালাল। বঙ্গবন্ধু লেবু ভাইকে ডেকে প্রার্থী না হওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন।

দৈনিক শক্তি পত্রিকার ১০ মার্চ ২০০০ সংখ্যায় এই তথ্যটি পাওয়া গেল:
সে সময় কোটালীপাড়ায় ন্যাপ (মোজাফ্ফর)এর পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন আরেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ বেদজ্ঞ। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিক্ষক এবং সৎ। মুক্তিযুদ্ধের সময় হেমায়েতবাহিনী শুধু যুদ্ধ করে নি, নানা কায়দায় লুটপাটও করেছে সোনাদানা, টাকা পয়সা। কমলেশ বেদজ্ঞ বাঁধা দিলেও হেমায়েত শোনে নি। কমলেশ একটি ডাইরীতে সে সব লুটপাটকৃত সম্পদের বিবরণী নোট করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হেমায়েতকে বলেন। হেমায়েত ফিরিয়ে দিলে বঙ্গবন্ধুর কাছে লেবুভাই আর কমলেশ বেদজ্ঞ ঘটনাটি জানান। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের পরে ডাইরীটি তাঁর কাছে আনার জন্য বলেন।

তাহলে লেবু ভাইয়ের প্রতি তিনটি পক্ষের তিনটি ক্ষোভ দেখা দিল :
এক. আওয়ামী লীগের সেই সব নেতা যারা ভবিষতে লেবুভাইয়ের জনপ্রিয়তার কারণে গোপালগঞ্জের এমপি আর নাও হতে পারেন।
দুই. হেমায়েতের লুটপাটের সম্পদের বিবরণী লিখিত ডাইরীটি কমলেশ-লেবুভাইদের কাছে আছে। বঙ্গবন্ধুর কাছে চলে যাবে। সুতরাং দুপক্ষের উদ্দেশ্য এক হয়ে গেল।
তিন. লেবু ভাইয়ের কারণে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের মালামাল স্থানীয় নেতৃবৃন্দ লুটপাট করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

এর সঙ্গে আরও দুটো পক্ষকে বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। তারা হলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং চিনাপন্থী বিপ্লবীগণ। মুসলিম লীগ-জামাতের সমর্থনপুষ্ট ওয়াহিদুজ্জামান পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। গোপালগঞ্জই তাদের পারেবারিক বাড়ি। নির্বাচনী আসনও এটা তাদের। সুতরাং তারা তাদের হৃত ক্ষমতা হারানোর জন্য এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের মধ্যে একটা হৈ চৈ বাঁধিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আর কোটালীপাড়ার পরে বরিশালের কিছু এলাকায় সিরাজ সিকদারের দলের লোকজন মস্কোপন্থীদের উত্থানে ম্যাও সাহেবের জন্য উদ্বিঘ্ন হবেন খুব স্বাভাবিক। সুতরাং পঞ্চম শক্তির কোপানলে পড়ে গেলেন কমিউনিষ্ট নেতা লেবুভাই।

লেবুভাই নিজে প্রার্থী না হলেও ন্যাপ কমিউনিষ্ট পার্টির সমর্থিত এমপি প্রার্থী কমলেশ বেদজ্ঞের জন্য কোটারীপাড়া এলাকায় নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ৭ মার্চ, ১৯৭৩ সালের সংসদ নিসদ নির্বাচনে কমলেশ বেদজ্ঞ পরাজিত হন। নির্বাচনী রেজাল্ট শেষে তারা গোপালগঞ্জে ফিরে আসবেন। এর আগে ৯ মার্চ কোটালীপাড়ায় একটি কর্মী সভা করেন। কমিউনিষ্ট পার্টিকে বেগবান করার আহবান জানান। এজন্য রাত্রিযিাপন করলেন বামন ধরের বাড়িতে। পরদিন সকাল ৭টায় লেবুভাই কমলেশ বেদজ্ঞ, বিষ্ণুপদ, মানিক, গঞ্জর প্রমুখ একত্রে সিকির বাজার থেকে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে পাঁয়ে হেঁটে রওনা হলেন।

টুপুরিয়া গ্রামের পৌঁছুলে হেমায়েতের নেতৃত্বে সশস্ত্র মোজাম সর্দার, মোহন প্রমুখ তাদের পথরোধ করে এবং কমলেশ বেদজ্ঞকে ডাইরীটি ফেরত দিতে বলে। ডাইরীটি দিতে অস্বীকার করলে তারা লেবুভাইদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম করে। একটি নৌকায় উঠিয়ে মাঝনদীতে নিয়ে নৌকাটি ডুবিয়ে দেয়। এ সময় সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মানিক এবং বিষ্ণু নিহত হন। মৃত অবস্থায় লুৎফর রহমান গঞ্জর নদীর পাড়ে পড়ে থাকে। লেবু ভাই সাঁতরে পাশ্ববর্তী হাবিবুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাড়িটি ঘেরাও করে হেমায়েত বাহিনী আগুন ধরিয়ে দিতে গেলে লেবু ভাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁকে তিনমাইল পর্যন্ত পায়ে দড়ি বেঁধে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় তারা। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে লেবুভাইকে হত্যা করা করে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো হয় প্রকাশ্যে এবং উপস্থিত গ্রামবাসীর সামনে। ঘাতকরা ছিল সশস্ত্র এবং ডাকাত হিসাবে কুখ্যাত। ক্ষমতাসীন দলের সাঙ্গপাঙ্গ। সেদিন গণমানুষের নেতা লেবু ভাইদের হত্যার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছিল—বেল পাকলে কাকের কী।

১১মার্চ, ১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্ট :
ফরিদপুরের পল্লীতে ৪ ব্যক্তিতে পিটাইয়া হত্যা
………………………………………
বার্তা সংস্থা ‘এনা’ পরিবেশিত এক সংবাদ প্রকাশ, গতকাল (শনিবার) ফরিদপুর জেলায় গোপালগঞ্জ মহকুমাধীন টুপুরিয়া গ্রামে উচ্ছৃঙ্খল জনতা বেআইনি অস্ত্র বহনের অভিযোগে ৪ ব্যক্তিকে পিটাইয়া মারিয়া ফেলিয়াছে ও অপর জনকে মারাত্মকভাবে আহত করিয়োছে।
ফরিদপুর পুলিশ বার্তা সংস্থাকে জানান যে, আহতদের মধ্যে একজন হইতেছেন গত ৭ মার্চের নির্বাচনে ফরিদপুর-১২ নির্বাচনী এলাকা হইতে ন্যাপ প্রার্থী শ্রী কমলেশ চন্দ্র বেদজ্ঞ। তিনি বলেন যে, অপর একজন উক্ত এলাকার নেতৃস্থানীয় কমিউনিষ্ট কর্মী জনাব ওয়ালিউর রহমান (লেবু) বলিয়া জানা গিয়াছে।

অভিযুক্ত খুনি হেমায়েতউদ্দিনঅভিযুক্ত খুনী হেমায়েত
১১মার্চ, ১৯৭৩ সালের দৈনিক সংবাদের রিপোর্টে বলা হয়—জাতীয় সংসদ ২১২ ও ফরিদপুর-১২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির (মোজাফ্ফর) প্রার্থি কমলেশ বেদজ্ঞ, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির বিশিষ্ট নেতা কমরেড ওয়ালিওর রহমান লেবু, ছাত্র কর্মি শ্রী শ্যামল ব্যানার্জী ও মানিককে গতকাল (শনিবার) সকালে কোটালীপাড়া থানায় টুপুরিয়া গ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ মহকুমা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিহতদের মধ্যে বিষ্ণুপদ নামে অপর এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন। ঘটনায় আহত ছাত্রকর্মি লুৎফর রহমান গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে মহকুমা প্রকাশক জানিয়েছেন।
উক্ত রিপোর্টে আরও লেখা হয়–
হত্যাকারীরা তাহাদের পিটাইয়া হত্যা করা পর দুইটি পিস্তল জমা দিয়া অভিযোগ করে যে, উক্ত কমলেশ বেদজ্ঞ এবং অন্যরা অস্ত্র লইয়া যাইতেছিল। আমাদের সুস্পষ্ট খবর, নির্বাচন শেষে অদ্য তাহারা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় স্বাভাবিক কাজে গোপালগঞ্জ যাইতেছিল। হত্যাকারিরা পূর্বাহ্ণে খবর পাইয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

ঘটনার পরে আঃ কাদের নামে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পাঁচতনের ক্ষত বিক্ষত দেহ গোলার পাটিতে পেঁচিয়ে গোপালগঞ্জে নিয়ে আসে। এখানে ডাক্তাররা দেখতে পান লুৎফর রহমান গঞ্জর তখনো জীবিত। তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। তিনি হত্যাকাণ্ডের নৃশংস বিবরণী দেন। তারপর তাকে ঢাকা পিজি হাসপালে পাঠানো হয়। এই জবানবন্দিটি পরবর্তিতে থানায় এফআরআই হিসাবে গণ্য করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোপালগঞ্জ থানার পুলিশ ১২ মার্চ খুনী হেমায়েত উদ্দিনকে দুটি রিভলবারসহ আটক করে। গোপালগঞ্জবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুলিশ হেমায়েতকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা জেলে পাঠিয়ে দেয়। আহত গঞ্জর সুস্থ হয়ে ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান। তিনি এখনও জীবিত।

লেবু ভাইকে হত্যার পরে বিক্ষোভরত বঙ্গবন্ধু কলেজ মাঠে গোপালগঞ্জবাসী
দৈনিক সংবাদের ১৫ মার্চের রিপোর্টে বলা হয়—গত ১০ মার্চের হত্যার প্রতিবাদে গত ১২ মার্চ গোপালগঞ্জ শহরে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হয়। ন্যাপ, কমিউনিষ্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন আহূত হরতালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সমর্থন দান করে। এই দিন বিকাল ৩টায় কলেজ ময়দানে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কমিউনিষ্ট নেতা আশু ভরদ্বাজ। জনসভায় বক্তৃতা করেন কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা মনি সিং ও কমরেড ফরহাদ। কেন্দ্রীয় ন্যাপ সম্পাদক পংকজ ভট্টাচার্য, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গোপালগঞ্জের আওয়ামী সভাপতি ডাঃ ফরিদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম রইস, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন খসরু, ছাত্রলীগ নেতা ইসমত কাদির গামা, গোপালগঞ্জ ন্যাপ সম্পাদক শওকত চৌধুরী প্রমুখ। ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি বলেছি লেবু হত্যার দৃশ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বাংলার মাটিতে হত্যাকারী যেই হোক না কেন।‘’

আটমাস পরে খুনী হেমায়েতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পদক—বীর বিক্রম। মামলাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। মনিসিংহের সঙ্গে লেবুভাইয়ের অনুজ মোহাম্মদ আতাউর রহমান দেখা করলে বঙ্গবন্ধু কান্নার সুরে বলেন, আমি জানতাম না ওরা লেবুকে মেরে ফেলবে।‘ হত্যাকারীকে বীরবিক্রম উপাধী দেওয়া ও তার জামিনের সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি জামিন বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে বীর বিক্রম উপাধী হেমায়েতের জন্য আগেই ঠিক করা ছিল। সেটা শুধু কার্যকর করা হয়েছে। ‘ভেতো বাঙ্গালীর রোজনামচা’ বইয়ে ঘটনাটি দিয়েছেন মোহাম্মদ আতাউর রহমান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে হেমায়েতবাহিনীরা মোশতাক বাহিনীর সঙ্গে ভীড়ে যায়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে হেমায়েতের অবস্থান হয় জাতীয়তাবাদি রাজনীতির ছায়াতলে। আর এরশাদরে সঙ্গেও ছিল। ১৯৮৪ সালে এএসপি এন রহমান জিএমএলএ-তে চার্জশীট দাখিল করেন। ঐ পর্যন্তই। এরপর পুলিশ কর্তৃক হেমায়েতের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত রিভলবার দুটি সহ কাগজপত্রই গায়েব হয়ে যাবে। ১৯৯৮ সালে পঁচিঁশ বছর পরে আবার মামলাটি শুনানি শুরু হয়। তখন আওয়ামীকাল। জজ আসামীদের জামিন বহাল রাখেন। আদালতের বাইরে তখন হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিল—আসামী হেমায়েত উদ্দিন, মুজাম সর্দার, ফারুকুজ্জামান কুরু, ফারুক হোসেন, মুজিবর রহমান, মকবুল হোসেন, শামসুল হক, নজির হোসেন, মোতালেব, মিলু, কুতুবুদ্দিন, লিয়াকত হোসেন, নবাব, ফরমান হোসেন ও হোসেন আলী। ১৯৭৩ সালে ১০ মার্চের পরে পুলিশ প্রহরায় হত্যাকারীরা গোপালগঞ্জ শহরে ঢুকতে পেরেছিল।

হেমায়েতরা আছেন দলেবলে। সরকার বদল হয় আর তারাও সর্বদাই সরকারের সঙ্গে বদল হন। শুধু একটি কাজ করেছিল আওয়ামী লীগের লোকজন। লেবুভাই স্মৃতি সংঘ নামে একটি ক্লাব স্থাপন করেছিল মকসুদপুরের আওয়ামী এমপির পৃষ্ঠপোষকতায়। তার সভাপতি করা হয়েছিল গোপালগঞ্জের একজন বিশিষ্ট রাজাকারকে। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা এমপিপুত্র।

জ্যাকসন হেইটসে ২ জুলাই দেখা হয়েছিল লেবু ভাইয়ের অনুজ আতাউর রহমানের সঙ্গে। তিনি নিউ ইয়র্কের ব্রংকসে একটি বাংলা স্কুল করেছেন। তিনি দুটি বই আমার হাতে তুলে দিলেন। একটি লেবু ভাই ফাউন্ডেশনের স্বজন, অন্যটি- তার আত্মজীবনী ভেতো বাঙ্গালীর রোজনামচা। স্বজন খুলে দেখি একটি রিপোর্ট। রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালে দৈনিক ঘোষণা পত্রিকায়।

পুত্র হত্যার বিচার হবে এ আশায় বসে আছেন একজন মুক্তিযোদ্ধার মা
……………………………………………………..
লেবু মিয়ার মা জোহরা বেগম। বয়সের ভারে ন্যূব্জপ্রায় পুত্র হত্যার বিচার চেয়ে আজও পথ চেয়ে বসে আছেন। গোপালগঞ্জের আড়পাড়া গ্রামের লেবু মিয়ার কবর। ঘরের পাশেই কবর। জানালার পাশে শূন্য দৃষ্টি মেলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন কবরের দিকে। আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন কবে পুত্র হত্যার বিচার পাবেন। ইত্যাদি।

জোহরা বেগম নেই। খুনী হেমায়েত আছে। কে এখন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবেন বিচারের আশায়?