অবিশ্বাস নিয়ে অনেক তামাশা মশকরাতো হল। এবার কিছু চরম বিষয় নিয়ে আসুন ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা করি। আগের পোস্ট দুটোতেই অনেক গালগল্প হয়েছে। আর না। গালগপ্পো শেষ করে আসুন ইকটু চিৎকার করে গলা ফাটাই। ধর্ম,কোরান, বেদ, বাইবেল নিয়ে হাজারো পয়েণ্ট মাথায় খেলা করে। কিন্তু সেগুলো আমি যথা সম্ভব উহ্য রাখার চেষ্টা করব। কারন ওসব বাল্যশিক্ষার বইয়ের কোন গুরুত্ব আমার কাছে নেই।
এবার আমি চিৎকার করতে চাই, জবাব চাই। তাই এবার আর “হাবিজাবি” নয়, এবার ‘চরমপন্থা’!

প্রশ্ন-
১- পুরোনোটা আবার দিয়েই শুরু করি। হিজড়া সম্প্রদায় সৃষ্টির পেছনে সৃষ্টিকর্তার গূঢ় উদ্দেশ্য কি? তাদের কে এরূপ সীমাহীন কষ্ট ও দূর্ভোগের ভেতর ফেলানোর উদ্দেশ্যই বা কি!?

২- বিকলাঙ্গ ও অসুস্থ মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? ডিসকভারি চ্যানেলে একটা প্রোগ্রাম দেখায় ‘My Shocking Story’ শারীরিক অস্বাভাবিকতা (বিকলাঙ্গতাতো বটেই, বরং তার চেয়েও বেশি কিছু) নিয়ে। কারো মাথার সাইজ বেঢপ,কোন মহিলার পুরো শরীর (মুখ সহ) অবাঞ্ছিত লোমে ভর্তি, কারো গা দিয়ে যেন মাংস গলে গলে পরছে!! একজন সুস্থ মস্তিস্কের সৃষ্টিকর্তা কিভাবে এধরনের সৃষ্টি করেন? মানুষ গুলোকে সারা জীবন কি পরিমান ভয়াবহ জীবন যাপন করতে হয় তার কি কোন সীমা আছে?!

৩- বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সৃষ্টির পেছনেই বা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য কোথায়? অনেকে বলে বাবা-মায়ের পাপের ফল নাকি এই সব শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষ!! আরো মজার কথা পড়েছি ‘মোকসেদুল মোমেনিন’ বা ‘বেহেশতি জেওর’ এ!! ওখানে ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক’ অংশে লেখা আছে যে, স্ত্রীকে উপরে রেখে (!!!) রাত্রী যাপনে নাকি বিকলাঙ্গ সন্তান হয় (আসলে এটা লিখতে চাইনি। কিন্তু এত ফানি একটা ব্যখ্যা এড়াতেও পারলাম না। এই অংশের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী)!!!! স্ত্রীর-সাথে স্বামীর আরো যৌন সঙ্গমের আরো বহু নিয়ম কানুন ঐ বইতে দেয়া আছে, ওগুলো না মানলে নাকি সন্তান আন্ধা, কালা, বোবা, খোঁড়া এরকম হয়!! (আরো অতিরিক্ত ফানি টাইপ কিছু কথা ঐসব বইতে লেখা ছিল, কিন্তু বেশি পরিমান খোলামেলা হয়ে যায় বলে দিতে সাহস পাচ্ছি না!!!!) এসব কথার আদৌ কি কোন অর্থ আছে? বাবা-মা যাই করুক না কেন, সন্তান কে কি হিসাবে তাদের পাপের বোঝা বহন করতে হয়? তাও আবার এই অমানবিক কায়দায়?

৪- বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে, আর আফ্রিকার মরুভূমি, সুদানের দারফুর এসব জায়গায় মানুষ পানির অভাবে মারা যাচ্ছে! এটা কোন ধরনের সুন্দর সৃষ্টি? পরিকল্পিত সৃষ্টির এই দশা!! আমরা পানির যন্ত্রনায় মারা যাচ্ছি, আর তারা পানি না পেয়ে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে!! হায়রে আমার বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তা!

৫- মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব! ভালো কথা, তাহলে মানুষেরও কেন অন্যান্য প্রাণীর মতই সব কিছু করতে হয়? মানুষের বর্জ্য পরিত্যাগের ব্যপার না থাকলে কি কোন অসুবিধা ছিল? এই যে বর্জ্য পরিত্যাগের পেছনে আমাদের খাদ্যের বিশাল একটা অংশ মাঠে মারা যাচ্ছে, এর কি কোন অর্থ আছে? বর্জ্য পরিত্যাগ করতে না হলে মানুষকে তুলনা মুলক কম খেতে হত, তাতে খাদ্যের অপচয় কি কিছুটা হলেও কমত না?

৬- আসলে ৫নম্বর পয়েণ্টটার মূলত কোন অর্থ নেই। কারন মানুষকে গাছের মত নিজের খাদ্য নিজেকেই উৎপাদন করতে দিলে ব্যপারটাকি আরো ভালো হত না? তাতে খাদ্যের অভাবে অন্তত কাউকে মরতে হত না। খাদ্যের দখল নিয়ে মারামারিও হত না। খাদ্যে ভেজাল দেয়ারও কোন ব্যপার থাকতো না!!!

৭- ৬নম্বর পয়েন্ট দেখে অনেকেই হয়ত বলবেন যে, এসব রেখে আসলে সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পরীক্ষা করছেন!! কোন মানুষের অনেক সম্পত্তি আছে, তার খাওয়া পড়ার কোন অসুবিধা নেই। সে তার পাশের ক্ষুদার্ত মানুষটাকে সাহায্য করছে কিনা সেইটা পরীক্ষা করার জন্যই সৃষ্টিকর্তা ক্ষুদার্ত মানুষ রেখেছেন!!!( কি ভয়াবহ ধরনের আজব যুক্তি!! আরে ভাই, একজনকে পরীক্ষা করতে যেয়ে আরেকজনকে চরম কষ্টে রাখার অর্থটা কোথায়!!!!) এ প্রশ্নের জবাব কি আছে?

৮- সৃষ্টিবাদীরা বলেন সৃষ্টিকর্তা কতই না সুন্দর করে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন!! কতই না পরিকল্পিত তার সৃষ্টি!! কত গোছানো সাজানো! এই ফুল, পাখি কত সুন্দর সুন্দর সব জীব! কি সুন্দর প্রকৃতি!! আর আমি বলি, sorry!! আমায় ক্ষমা করবেন। আগে বুঝুন যে সৌন্দর্য ব্যপারটা আসলে কি? সৌন্দর্য মূলত নির্ভর করে যার যার দেশের সমাজ ব্যবস্থার উপর। যেমন ইংল্যান্ড আমেরিকায় বিকিনি পরা সৌন্দর্যের ব্যাপার হলেও আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এখনো সেটা ভয়াবহ অসৌন্দর্যের ব্যপার। আবার ধরেন ময়না টিয়া পাখি কে আমরা সুন্দর বলছি এবং কাক শকুনকে বলছি অসুন্দর, কারন আমাদের সমাজ আমাদের কে ওভাবেই বড় করেছে। আবার ধরেন একজন মানুষ সুট্যেড বুটেড হয়ে চললে আমরা তাকে সুন্দর বলছি আর রাস্তায় লুঙ্গি পরে খালি গায়ে শুয়ে থাকা মানুষটার দিকে আমরা ঘৃণার চোখে তাকাচ্ছি, যদিও আমরা জানি যে তার সামর্থ নেই বলে সে আজ খালি গায়ে। এই ঘৃণা বোধটাও সমাজেরই সৃষ্টি। অর্থাৎ সমাজ যা শেখাচ্ছে আমরা তাই ঠিক টিয়া পাখির বুলির মত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পার করে চলেছি।
এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন। মরুভূমিতে খেজুর গাছ, ক্যকটাস গাছ থাকার অর্থ কি? ওখানে ভালো কোন বড় সড় ফলের গাছ (আমাদের কাঠাল গাছের মত) হলে কি সেখানকার মানুষরা ভালো খেতে পারত না? একজন ক্ষুদার্ত মানুষের কাছে কি ফুল গাছের সৌন্দর্যের কোন অর্থ আছে??

৯- প্রাকৃতিক দূর্যোগের অর্থ বা প্রয়োজনীয়তা কোথায়? ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, দাবানল এসবের অর্থ কি? এত এত মানুষ, পশু পাখি মেরে ঈশ্বর আসলে কি বোঝাতে চান? তিনি কি এসব দিয়ে তার হিংস্র ক্ষমতার বহিপ্রকাশ দেখান!!!? তিনি সর্বশক্তিমান এই কথা বোঝানোর জন্যই কি তিনি এত এত মানুষ মারেন!! তার ক্ষমতার এতই দাপট!! তাহলে সৃষ্টিকর্তার সাথে হিটলারের বা জর্জ বুশের পার্থক্য কোথায়?? সবচেয়ে বড় ব্যপার হল , যে সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির জীবন মৃত্যুর নিশ্চয়তা দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা, তাকে পূজো করে কি আদৌ কোন লাভ আছে? সে নিজেই তো হত্যাকারী!! একজন খুনিকে পুজো করার কোন অর্থ কি আদৌ আছে!!

১০- এই প্রশ্নটাকে আমি বলি ভাগ্যের খেল!! ধরেন একটা দেশে যুদ্ধ লেগেছে। সেখানে যেকোন একটা মুসলিম পরিবারের সব সদস্য যুদ্ধে নানা ভাবে মারা গিয়েছে। শুধুমাত্র ঐ পরিবারের এক বছর বয়সের একটা শিশু কোন ভাবে বেঁচে গেছে। এখন একটা মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা ঐ শিশুকে কুড়িয়ে নিয়ে ভারতের কোন এক হিন্দু পরিবারে দত্তক দিয়ে দিয়েছে। এবং সে পরবর্তী জীবনে হিন্দু হিসাবেই জীবন যাপন করেছে। তাহলে ঘটনা কি দাড়াল? তার ভাগ্য (যেটা কিনা আবার নিয়ন্ত্রণ করেন সৃষ্টিকর্তা!!!) তাকে এক ধাক্কায় কাফের বানিয়ে দিয়েছে!!! দারুন না!!?? তার মানে দাড়াচ্ছে এই যে, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় মানুষ কাফেরে পরিনত হয়!!!

১১- সৃষ্টিকর্তা তো সব দেখেন, তাই না!! অন্তত ধর্মবাদীরা তাই দাবি করেন! সৃষ্টিকর্তা সর্বজ্ঞ,সর্বজ্ঞানী, সবজান্তা,ভবিষ্যতদ্রষ্টা!! তাহলে এবার খেল দেখি। ধরেন একটা সন্ত্রাসী একটা ভালো মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। এখন সৃষ্টিকর্তা যেহেতু ভবিষ্যতদ্রষ্টা,সেহেতু তিনি আগে থেকেই জানতেন যে এই লোক গুলি করে আরেকজন কে হত্যা করবে। সৃষ্টিকর্তা যেহেতু সব দেখছেন তাহলে গুলি করার মুহূর্ত হতে গুলি ঢোকার মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি সবটুকু তামাশাই দেখেছেন তাহলে তিনি কিছু করলেন না কেন? তিনি কি চাইলেই ঐ ভালো লোকটাকে বাঁচাতে পারতেন না? তাহলে বাচালেন না কেন?? আপনারা হয়তো বলবেন যে ঐ সন্ত্রাসীকে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টিকর্তা তখন কিছু বলেন নাই। পরকালে তাহার শাস্তি হইবেক!! পরীক্ষা যদি করতেই হয়, তাহলে গুলি করা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। গুলি করার পরে গুলিটা সরায়ে দাও। একজনকে পরীক্ষা করতে গিয়ে আরেকজনের জীবনের বারোটা বাজানোর অর্থ কি?

১২- কোন শিশুর জন্মের আগে তার পিতা মাতা কে হবে তা নিশ্চই সৃষ্টিকর্তা আগে থেকেই নির্ধারন করে থাকেন? সৃষ্টিকর্তা নিশ্চই কোন শিশুকে পিতামাতা ঠিক করার আগেই আন্তাজে অর্থহীন ভাবে কারো গর্ভে নিক্ষেপ করেন না? তাই যদি হবে, তাহলে পরকীয়ায় বা ব্যভিচারে বা ধর্ষণে দোষ কি? ধর্ষণের ফলে বা পরকীয়ার ফলে যে সন্তানের জন্ম হয় তাতে নিশ্চই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা বা সম্মতি আছে! তাহলে পরোক্ষ ভাবে পরকীয়া বা ধর্ষনেও সৃষ্টিকর্তার সম্মতি আছে?!

১৩- কারো এইডস হলে ধর্মবাদীরা বলেন যে,” কোথায় কি আকাম কুকাম করে আসছে, সৃষ্টিকর্তা তার শাস্তি দিচ্ছেন”!!! আরে ভাই অন্য আরেকজন থেকে রক্ত নিতে গিয়েও এইডস হতে পারে তো নাকি? আবার সামান্য নাপিতের দোকানের ব্লেড থেকেও নাকি এইডস হবার সম্ভাবনা থেকে যায়! অথবা এইডস আক্রান্ত পিতা মাতার শিশুও এইডসে আক্রান্ত হতে পারে। তাহলে এখানে এ্কজনের দোষে আরেকজনের বারোটা বাজানোর অর্থটা কি?
সব ক্ষেত্রেই দেখি একই অবস্থা!! একজনের দোষে আরেকজনকে অবিরাম শাস্তি পেতে হচ্ছে!! এটা কি কোন বিবেচকের মত কাজ? মহাজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার মহাজ্ঞানের এই দশা!!!

ধর্ম ও বুদ্ধিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস ছাড়ার জন্য এর থেকে বেশি আর কোন কারন আদৌ দরকার আছে কিনা আমার জানা নেই। আমি ধর্ম ছাড়ার পরেও বেশ কয়েকবার ফিরে যেতে চেয়েছিলাম (অবিশ্বাস্য শোনালেও মিথ্যা না) কিন্তু এসব প্রশ্ন আমাকে দূর থেকে বহু দূরে নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে, যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোন রাস্তা আছে কিনা আমার জানা নেই। এমনকি প্রতি নিয়তই নতুন নতুন ভ্রান্তিময় প্রশ্ন যুক্ত হচ্ছে আমার তালিকায়। সব হাবিজাবি না হয় না-ই জানলেন।
এই পোস্টের মধ্যদিয়েই মাথার ভেতরের সব গ্যঞ্জাম যেমন বের করে দিলাম, তেমনি আগামীতে যাতে কেউ ঝগড়া বাধালে তাকে সরাসরি আমার অবিশ্বাসের কারন দেখাতে পারি তারও ব্যবস্থা করে রাখলাম। এসব ব্যপারে (আসলে কোন ব্যপারেই-) আমি ঝগড়া ঝাটি মোটেও পছন্দ করিনা!!