রায়হান সাহেব বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করেন। তিনি একসময় মুক্ত-মনায়ও লেখালেখি করতেন। মুক্ত-মনায় তাঁর লেখাগুলো পাবেন – এখানে। সেদিন তাঁর একটা লেখা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। লেখাটির শিরোনাম, “সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের স্বপক্ষে তিনটি স্বতন্ত্র প্রমাণ”। লিংক । তার লেখাটি পড়ে এতই মজা পেলাম যে ভাবলাম এ নিয়ে কিছু লেখলে মন্দ হয় না।

তিনি স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য তিনটি যুক্তি দিয়েছেন। আমরা একে একে দেখব তা স্রষ্টার অস্তিত্ব কতটুকু প্রমাণ করেছে। প্রথমেই লেখাটির ভূমিকায় চোখ রাখা যাক। তিনি লিখেছেন-

“প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের সবচেয়ে যুক্তিবাদী ও জ্ঞানী নাস্তিক। নিদেনপক্ষে তাঁর অনুসারীরা তেমনটাই বিশ্বাস করেন। সাদা চামড়ার বৃটিশ ও অক্সফোর্ড প্রফেসর হওয়ার সুবাদে অনেকেই তাঁর বাণীকে কোনরকম সংশয়-সন্দেহ ছাড়া গডের বাণীর মতই বিশ্বাস করে! তাঁর সবগুলো লেকচার, ডিবেট, ও ইন্টারভিউ শুনেছি। এমনকি একাধিকবারও শুনেছি। এখন পর্যন্তও কোরআন থেকে সরাসরি দু-একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর কোন সমালোচনা নজরে পড়েনি, যদিও কোরআন হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি। ইসলাম বলতে উনি মূলতঃ ৯-১১, ৭/১১, টেররিজম, সুইসাইড বোম্বিং, মুরতাদ হত্যা, ও নারীদের বোরখা ছাড়া অন্য কিছু বোঝেন বলে মনে হয়নি! এটি কি কোন যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক পন্থা হতে পারে! মিডিয়া যে কীভাবে মানুষকে ব্রেনওয়াশ করতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে প্রফেসর ডকিন্স, স্যাম হারিস, ও ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতো বড় বড় কিছু ‘যুক্তিবাদী’ নাস্তিক। আর এই যদি হয় অক্সফোর্ড প্রফেসর ডকিন্স, স্যাম হারিস, ও ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতো জ্ঞানী-গুণী লোকজনের অবস্থা তাহলে টম-ডিক-হ্যারি-দের অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে ভাবা যায়! যাহোক, প্রফেসর ডকিন্স কিন্তু সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। তাঁর প্রত্যেকটি কথা ও যুক্তি মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করেছি। তাঁর যুক্তিকে ইসলামের থিয়লজি ও কোরআনের সাথে তুলনা করে এবং সেই সাথে নিজের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে লোকটার প্রতি বেশ করুণাই হয়েছে। তাঁর মতো একজন জ্ঞানী-গুণী-স্মার্ট মানুষও যে কীভাবে লর্ড জিসাস ও বাইবেলের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন, সেটা যাদের ইসলামের থিয়লজি ও কোরআন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে তারা ছাড়া অন্য কেউ বুঝবেন না”।

দাঁড়ান একটু হেসে নেই। এবার এ অংশটি নিয়ে একটু সিরিয়াস কথা বলি-

১। তিনি রিচার্ড ডকিন্সকে ‘সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের সবচেয়ে যুক্তিবাদী ও জ্ঞানী নাস্তিক’ বলেছেন। প্রশ্ন হল, সবচেয়ে জ্ঞানী ও যুক্তিবাদী নাস্তিক বলতে কি বুঝায়? আর কিভাবে তা হওয়া যায়? আর রিচার্ড ডকিন্সের অনুসারীরা (!?) তেমনটি বিশ্বাস করেন? ‘তাঁর অনুসারী’ কথাটি এমনভাবে বলা হয়েছে যেন ডকিন্স একটি নতুন ধর্ম প্রচার করছেন যে তারঁ একপাল শিষ্য রয়েছে যারা শুধুই তাঁর অনুসরণ করে বেড়ায়।

২। ‘সাদা চামড়ার ব্রিটিশ’ বিষয়টি ঠিক বুঝলাম না। সাদা চামড়ার ব্রিটিশরা যা বলে তা কি সবাই খেয়ে বসে? সাদা চামড়ার ব্রিটিশ আর অক্সফোর্ড প্রফেসর হলেই তাঁর কথা কেউ কোনো রকম সংশয়-সন্দেহ ছাড়া গডের মত বিশ্বাস করে ফেলে – এমন কথা সত্যিই প্রথম শুনলাম। এ ধরণের আজগুবী কথা প্রবন্ধের শুরুতেই না বললে কি এমন বিশেষ কোনো সমস্যা ছিল?

৩। একটি বিষয় আমার মাথায় আসছে না। সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে রায়হান সাহেব এখানে রিচার্ড ডকিন্সকে নিয়ে আসলেন কেন? সম্ভবত উনি রিচার্ড ডকিন্সকে নিয়ে এসে তা-ই বোঝাতে চাইলেন যে তিনি যার তার বিরুদ্ধে এ মহা-মূল্যবান প্রবন্ধ লেখছেন না, স্বয়ং অক্সফোর্ড প্রফেসর ও সাদা চামড়ার ব্রিটিশ রিচা্র্ড ডকিন্সের বিরুদ্ধে লিখছেন!!

বিজ্ঞানীরা সচরাচর সাধারণ মানুষের কুসংস্কার, ধর্মবিশ্বাস এগুলো নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামান না। রিচার্ড ডকিন্স এখানে ব্যতিক্রম। তিনি ঈশ্বরের ও ধর্মের অসারতা অতি সহজ ভাষায় জনসাধারণের কাছে তোলে ধরেছেন। তাই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে হয়েছেন বিরাগ-ভাজন। বস্তুত তাঁর মত স্বচ্ছ চিন্তার যুক্তিবাদী ও সংগ্রামী মানুষ পাওয়া ভার। এজন্য আবার তিনি জনপ্রিয়। তাই বলে কোনো যুক্তিবাদী তাঁকে ‘গুরু’ বানিয়ে বসে রয়েছেন এমনটি শুনিনি। প্রশ্নহীন আনুগত্য আশা করে ধর্ম প্রচারক ষণ্ডারা, একজন যুক্তিবাদী নন। সমালোচনা, সংশয় ও প্রশ্নকে উৎসাহিত করেন একজন যুক্তিবাদী।

৪। রায়হান সাহেব বলেছেন, “তাঁর সবগুলো লেকচার, ডিবেট, ও ইন্টারভিউ শুনেছি”। ভালো কথা যদিও খুবই সন্দেহজনক। তিনি ডকিন্সের সবগুলো লেকচার, ডিবেট, ও ইন্টারভিউ শুনেছেন তবে তাঁর কোনো বই পড়েছেন কিনা বলেননি। আবার বলেছেন, “তাঁর প্রত্যেকটি কথা ও যুক্তি মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করেছি”। অর্থাৎ শুনেছেন, পড়েন নি!! (তিনি নাকি হুমায়ুন আজাদের একটাও বই পড়েননি আর তা আবার প্রচারের জন্য ব্লগে পোস্ট দিচ্ছেন। কী হাস্যকর! )

৫। রায়হান সাহেব বলেছেন, “এখন পর্যন্তও কোরআন থেকে সরাসরি দু-একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর কোন সমালোচনা নজরে পড়েনি, যদিও কোরআন হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি। ইসলাম বলতে উনি মূলতঃ ৯-১১, ৭/১১, টেররিজম, সুইসাইড বোম্বিং, মুরতাদ হত্যা, ও নারীদের বোরখা ছাড়া অন্য কিছু বোঝেন বলে মনে হয়নি! এটি কি কোন যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক পন্থা হতে পারে”।
কথা হল ডকিন্স কেনো কোরান থেকে দু-একটি আয়াত উদ্ধৃতি দিয়ে সমালোচনা করবেন? নাকি তিনি তা করতে বাধ্য? স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে শুরুতেই রায়হান গোঁজামিল পাকিয়ে দিচ্ছেন। স্রষ্টার অস্তিতে প্রমাণের শুরুতেই ডকিন্স কেনো কোরান থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সমালোচনা করলেন না এসব বলা কি সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ?
ইসলাম বলতে কেউ যদি ৯-১১, ৭/১১, টেররিজম, সুইসাইড বোম্বিং, মুরতাদ হত্যা, ও নারীদের বোরখা ইত্যাদি বোঝেন তবে খুব কি ভুল বোঝবেন? আস্ত কোরানই তো হুমকি-ধামকি, জ্বালিয়ে ফেলব, পুড়িয়ে ফেলব, অনন্ত কাল জ্বালাব, ধ্বংস করব, হত্যা কর, নারীরা শস্যক্ষেত্র ইত্যাদিতে ভরপুর। এখন কেউ এসে কোরানের কয়েকটি আয়াত ধরে টেনে লম্বা করে দিলেই বা নিজের মত ব্যাখ্যা করে দিলেই দায় সারা হয়ে যায় না।( ইসলামের প্রকৃত স্বরুপ বোঝতে হলে উইকি ইসলাম, ইসলাম ওয়াচ, আনসারিং ইসলাম, ফেইথ ফ্রিডম ইত্যাদি সাইটে যেতে পারেন।)

৬। বলেছেন, “মিডিয়া যে কীভাবে মানুষকে ব্রেনওয়াশ করতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে প্রফেসর ডকিন্স, স্যাম হারিস, ও ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতো বড় বড় কিছু ‘যুক্তিবাদী’ নাস্তিক”। আচ্ছা পৃথীবীর কতভাগ মিডিয়া নাস্তিকদের দখলে? যেখানে ধর্মবাদী-ধর্মজীবীদের মিডিয়ার অভাব নেই। তদের রয়েছে অগুণিত পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ইত্যাদি যেগুলোর কাজই হল শুধু ধর্ম প্রচার।

৭। ডকিন্স কবে থেকে লর্ড জিসাস ও বাইবেলের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন ঠিক জানি না। আবার কিভাবে ঘুরপাক খাচ্ছেন তা যাদের ইসলামের থিয়লজি ও কোরআন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে তারা ছাড়া অন্য কেউ নাকি বুঝবেন না। হাহ, হা। ব্যাপক বিনোদন!

এবার দেখব রায়হান সাহেবের প্রথম যুক্তি-

“১) মহাশূন্য, ছায়াপথ, গ্রহ-নক্ষত্র, ও বিলিয়ন বিলিয়ন প্রজাতি তথা প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে না। একদমই অসম্ভব। শূন্য থেকে তো দূরে থাক এমনকি সবকিছু ব্যবহার করেও এই মহাবিশ্ব তো দূরে থাক তার মতো ছোট-খাটো একটি মডেলও কেউ তৈরী করে দেখাতে পারবে না। নাস্তিকরা নিদেনপক্ষে এই মহাবিশ্বের ছোট-খাটো একটি মডেল তৈরী করে দেখাতে পারলেও শুরু করার মতো তাদের একটা পয়েন্ট থাকতে পারতো, যদিও তাতে প্রমাণ হবে না যে এই মহাবিশ্বের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেটাও তারা পারবে না। ফলে যারা বিশ্বাস করেন যে, তারা নিজেরা সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে, তারাই হচ্ছে প্রকৃত অন্ধ-বিশ্বাসী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এই ধরণের অন্ধ-বিশ্বাস ও কুসংস্কারের আসলে কোন তুলনাই হয় না। এর চেয়ে বরং পেগান ও গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে বিশ্বাস অনেক বেশী যৌক্তিক! যাহোক, প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব যেহেতু আছে সেহেতু তার একজন সৃষ্টিকর্তা থাকতেই হবে। এটি একটি অবজেক্টিভ ও অখণ্ডনীয় যুক্তি।”

প্রথম দুটি বাক্য লক্ষ্য করি। এখানে তিনি বলেছেন, “মহাশূন্য, ছায়াপথ, গ্রহ-নক্ষত্র, ও বিলিয়ন বিলিয়ন প্রজাতি তথা প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে না। একদমই অসম্ভব”।

নাস্তিকরা কি বলে মহাশূন্য, ছায়াপথ, গ্রহ-নক্ষত্র, ও বিলিয়ন বিলিয়ন প্রজাতি তথা প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই ন্যাচারাল মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে? মহাবিশ্বের উৎপত্তিসহ প্রাণীজগত ও উদ্ভিতজগতের উদ্ভব প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কাজ, এটি অন্য কারো অহেতুক কলহের বিষয় নয়। বলা বাহুল্য বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত ‘ঈশ্বর’ বা এরকম কোনো অলৌকিক সত্ত্বার অস্তিত্বের কোনো সন্ধান পান নাই। এক সময় আমরা মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। বিগ ব্যাং সহ বাদবাকী বিষয় বিজ্ঞানীদের গোচরে এসেছে এই সেদিন। আর মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত গবেষণায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আমাদের উচিত মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত যেসব বিষয় অজানা রয়ে গেছে তা জানার জন্য বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যৎ গবেষণার অপেক্ষায় থাকা। তা না করে কেউ যদি ‘ঈশ্বর’ কে নিয়ে এসে মহাবিশ্ব, উদ্ভিদ ও প্রাণীজততের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দিতে চান তবে অবশ্যই তাকেই ‘ঈশ্বর’ এর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে যা এখনো কেউ করতে পারেন নাই। আসলে ঈশ্বর দিয়ে কোনো ঘটনা ব্যাখ্যা করার কোনো মানেই নেই। যেমন ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে কেউ যদি বলেন তা ঈশ্বরের অভিশাপ বা পানিচক্র ঈশ্বরের আদেশে ঘটে তবে এ কথার কোনো গুরুত্ব আছে কি? আর যে কথা বারবার বলতে হয়- সবকিছুর পেছনে যদি কোনো কারণ থাকতে হয় তবে ঈশ্বরের পেছনেও তো কোনো কারণ থাকতে হবে যা এভাবে অনন্তকাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। (ঈশ্বরবাদিরা ঈশ্বরের পেছনে আর কোনো কারণ বা ঈশ্বরের কোনো স্রষ্টা নেই বলে বিশ্বাস করেন তাই অনেকে মজা করে বলেন- ইশ্বরই সবচেয়ে বড় নাস্তিক কেননা তিনি স্বীকার করেন না যে তার কোনো স্রষ্টা বা ঈশ্বর আছে।)

পরের কথায় আসি, “শূন্য থেকে তো দূরে থাক এমনকি সবকিছু ব্যবহার করেও এই মহাবিশ্ব তো দূরে থাক তার মতো ছোট-খাটো একটি মডেলও কেউ তৈরী করে দেখাতে পারবে না।” মহাবিশ্বের মডেল বানাতে পারলে তাতে কী হবে বা কী প্রমাণিত হবে আমার জানা নেই। মানুষের অজ্ঞতা ও অক্ষমতাকে ঈশ্বরবাদীরা ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখাতে চান যা নিতান্তই হাস্যকর। যেমন কেউ কেউ বলেন, আপনি কি পারবেন চাঁদ, সূর্য, পাহাড় এগুলো তৈরী করতে? আচ্ছা আমি যদি চাঁদ-সূর্য-পাহাড় এগুলো তৈরী করতে পারি না তবে তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব কিভাবে প্রমাণিত হল? নাস্তিকরা কি বলেন, আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বশ্বাস করি না তাই আমরাই ঈশ্বর? বরং নাস্তিকরা বলেন, ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ না থাকায় আমরা তাতে বিশ্বাস করি না। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প স্মরণ হল।

এক আস্তিক আর নাস্তিকের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে-
আস্তিকঃ দেখ ঈশ্বর কী সুন্দর ঝর্ণা তৈরী করেছেন পাহাড়ের গায়।
নাস্তিকঃ এটা তো প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই তৈরী হয়েছে, এখানে ঈশ্বর আসল কোথা থেকে?
আস্তিকঃ তাহলে আপনি এরকম একটি ঝর্ণা তৈরী করে দেখান তবে মেনে নেব আপনার কথা।
নাস্তিক বেচারা বহু কষ্টে পাহাড়ের অপর দিকে একটা কৃত্রিম ঝর্ণা তৈরী করে দেখালেন। এবার আস্তিক বললেন, ওহ, আপনি অনেক পরিশ্রম করে তা বানিয়েছেন যা আমার ঈশ্বর আদেশ করা মাত্রই এক নিমিষেই সৃষ্টি হয়ে গেল!! আর ঈশ্বর যদি সে ক্ষমতা আপনাকে না দিতেন তবে তা কি তৈরী করতে পারতেন?

আসলে মানুষের অক্ষমতা, সক্ষমতা, জ্ঞান, অজ্ঞান এক ব্যাপার আর ঈশ্বরের অস্তিত্ব ভিন্ন ব্যাপার। যেমন একজন মুসলিম ধর্মবাদী বলতে পারেন, পানি আল্লাহর নিয়ামত, আল্লাহ আমাদের জন্য পানি সৃষ্টি করেছেন। এবার কেউ যদি হাইড্রজেন আর অক্সিজেন এর সংমিশ্রণে কৃত্রিম উপায়ে পানি তৈরী করে দেখান তবে ঐ ধর্মবাদী তার অবস্থান থেকে কি এতটুকু টলবেন?
‘মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা’ কথাটির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। এতে আগেবাগেই ধরে নেয়া হয় মহাবিশ্ব কেউ না কেউ সৃষ্টি করেছে বা সৃষ্টি নামক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব উৎপত্তি লাভ করেছে। আর ধর্মবাদীদের সমস্যা হল তারা আগেই ধরে নেন মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ রয়েছে আর পরে এটি প্রমাণের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালান। এ বিষয়ের উপর অপার্থিবের একটি অসাধারণ প্রবন্ধ রয়েছে – WHO CREATED YOU?

রায়হান এবার বলছেন, “নাস্তিকরা নিদেনপক্ষে এই মহাবিশ্বের ছোট-খাটো একটি মডেল তৈরী করে দেখাতে পারলেও শুরু করার মতো তাদের একটা পয়েন্ট থাকতে পারতো, যদিও তাতে প্রমাণ হবে না যে এই মহাবিশ্বের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেটাও তারা পারবে না”।
শুরু করার মত একটা পয়েন্ট থাকলে তাতে স্রষ্টার বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব কিভাবে প্রমাণিত হয় তা বোঝা মুশকিল বটে। আস্তিকরা সবসময় একটা বিভ্রান্তির মধ্যে থাকে। কোনো কিছু যদি অজানা হয় তবে তার কারণ তাদের কাছে নিঃসন্দেহে ঈশ্বর। মহাবিশ্বের শুরু আছে? ও তাহলে শুরুটা হবে নিঃসন্দেহে ঈশ্বর থেকে। আর ঈশ্বরের শুরু? উত্তর হল, এজন্যই নাস্তিকরা বিভ্রান্ত!!

আমরা রায়হান সাহেবের স্বঘোষিত অখণ্ডণীয়(!!) যুক্তিটি দেখলাম। এবার যাওয়া যাক দ্বিতীয় যুক্তিতে –

“২) আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, ও মুহাম্মদ (সাঃ) সহ অনেক গ্রেট হিউম্যান নিজেদেরকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার মেসেঞ্জার বলে দাবি করেছেন। সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্বই না থাকলে কেউ নিজেকে যেমন সৃষ্টিকর্তার মেসেঞ্জার বলে দাবি করতে পারেন না তেমনি আবার সৃষ্টিকর্তা থেকে মেসেজ পাওয়ারও দাবি করতে পারেন না। এটি স্রেফ কোন উটকো দাবিও নয়। যেমন মুহাম্মদ (সাঃ) দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর পূর্বের মেসেঞ্জাররাও তা-ই করেছেন। যাহোক, তাঁদের দাবি থেকে মাত্র দুটি উপসংহারে পৌঁছা যেতে পারে: (ক) তাঁরা সবাই মিথ্যাবাদী ও প্রতারক ছিলেন, যেটা বিশ্বাস করা প্রায় অসম্ভব। বরঞ্চ তাঁদের সবায়কে মিথ্যাবাদী ও প্রতারক হিসেবে বিশ্বাস করাটাই হচ্ছে একটি অন্ধ-বিশ্বাস ও আত্মপ্রতারণা। (খ) তাঁদের মধ্যে একজনও যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এই মহাবিশ্বের যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তাতে সংশয়-সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই। ইসলামে বিশ্বাসীরা যেহেতু তাঁদের কাউকেই মিথ্যাবাদী বা প্রতারক হিসেবে বিশ্বাস করে না, কোরআনের আলোকে এমন বিশ্বাসের পেছনে কোন যৌক্তিকতাও নেই, সেহেতু তাদের কাছে এটি একটি অকাট্য প্রমাণ বা ধ্রুব সত্য। এমনকি ইহুদী-ক্রিস্টিয়ানদের কাছেও এটি একটি অকাট্য প্রমাণ বা ধ্রুব সত্য।”

যুক্তিটি ভাল করে খেয়াল করেন। কথা হল, আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, মুহাম্মদ এরা যে গ্রেট হিউম্যান ছিলেন সে সিদ্ধান্তে তিনি আসলেন কিভাবে? আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস -বাস্তবে এরা কেউ ছিলেন কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা সম্ভব। আমরা জানি, ‘জিসাস’ বলতে কেউ কোথাও আদৌ ছিলেন কিনা তা নিয়ে অনেকেরই দ্বিধা রয়েছে। এছাড়া আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস – তাদের সবাই কি আসলেই নবুয়তের দাবি করেছিলেন এবং করে থাকলে তাদের কাছে নবুয়তের ব্যাখ্যা কী ছিল তা নির্ধারণ করাও জঠিল ব্যাপার বটে।

মুহাম্মদ যদি নবুয়তের ঢং না করতেন তবে একটা জাতির ‘নেতা’ হতেন কিভাবে? এছাড়া আর কি করলে তিনি এতগুলো বিয়ে করতে পারতেন, এত সম্মান পেতেন, এত ক্ষমতাশালী হতে পারতেন? আর সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত হাজার-হাজার মানুষ তাঁর নামে মরতে পর্যন্ত প্রস্তুত – এ বিষয়টা সম্ভব হত কিভাবে?

আজ থেকে ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তির মূল্যায়ন নিয়ে অনেক বিতর্ক আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। সেখানে দেড় হাজার বছর আগে মুহাম্মদ কী করেছিলেন, কেন করেছিলেন তা নির্ধারণ করা আসলেই কষ্টকর। এছাড়া তথাকথিত নবি-রসুলদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল তাদের জীবনী রচনা করেছেন ও সংরক্ষণ করেছেন তাদের অন্ধ অনুসারীরা। তাই কালক্রমে তাদের দোষগুলো ঢাকা পড়েছে এবং ধীরে ধীরে তারা মহামানবের আকার ধারণ করেছেন।তাই এযুগে এসে তাদের দোষ খুঁজে পাওয়া অতি দুরহ ব্যাপার বটে, তা সত্ত্বেও যা পাওয়া গেছে তা-ই চমকে উঠার মত। উদাহরণস্বরুপ, আজ থেকে সামান্য কয়েক যুগ আগেও বহু বিবাহ ও শিশুবিবাহকে খারাপ মনে করা হত না- আর এজন্যই মুহাম্মদের এ ধরণের গর্হিত কার্যকলাপগুলোর খবর আজ আমরা জানতে পারছি। যদি বহু বিবাহ ও শিশুবিবাহের মত ঘটনা মুহাম্মদের বা তাঁর কাছাকাছি পরবর্তী যুগেই মন্দ বলে চিহ্নিত হত তবে সে খবর এখন বসে না পাওয়াই স্বাভাবিক ছিল।

মোটকথা, যেকোনো যুক্তিবাদি-ই আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, মুহাম্মদ এদের সম্পর্কে বিভিন্ন সন্দেহ পোষণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এদের নবুয়তি প্রমাণের দায়িত্ব কিন্তু যারা তা দাবি করে তাদেরই এবং তারা তা করতে পারে নি।

রায়হান বলেছেন, “(ক) তাঁরা সবাই মিথ্যাবাদী ও প্রতারক ছিলেন, যেটা বিশ্বাস করা প্রায় অসম্ভব”। বলেছেন, প্রায় অসম্ভব। ঠিক তার পরেই আবার বলেছেন, “বরঞ্চ তাঁদের সবায়কে মিথ্যাবাদী ও প্রতারক হিসেবে বিশ্বাস করাটাই হচ্ছে একটি অন্ধ-বিশ্বাস ও আত্মপ্রতারণা।” রায়হান কি ‘অন্ধ-বিশ্বাস ও আত্মপ্রতারণা’ এর মানে আসলেই জানেন না?

তিনি আবার বলেছেন, (খ) তাঁদের মধ্যে একজনও যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এই মহাবিশ্বের যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তাতে সংশয়-সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই। ইসলামে বিশ্বাসীরা যেহেতু তাঁদের কাউকেই মিথ্যাবাদী বা প্রতারক হিসেবে বিশ্বাস করে না, কোরআনের আলোকে এমন বিশ্বাসের পেছনে কোন যৌক্তিকতাও নেই, সেহেতু তাদের কাছে এটি একটি অকাট্য প্রমাণ বা ধ্রুব সত্য। এমনকি ইহুদী-ক্রিস্টিয়ানদের কাছেও এটি একটি অকাট্য প্রমাণ বা ধ্রুব সত্য”।
আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, মুহাম্মদ এদের কেউ যদি বাস্তবে থেকে থাকেন আর কোনো ‘সত্য কথা’ বলে থাকেন তবে তা এখন উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। একেকটি ধর্মে রয়েছে অসংখ্য গ্রুপ যাদের মধ্যে মতভেদ প্রবল। সবগুলো ধর্মের ক্ষেত্রেই আবার প্রতিটি ধর্মীয় গ্রুপই নিজ নিজ গ্রুপকে তাদের ধর্মের একমাত্র সঠিক অনুসারী বলে দাবি করে। যেমনঃ ইসলাম ধর্মে রয়েছে শিয়া, সুন্নি, কাদিয়ানী, আহলে হাদীস ইত্যাদি গ্রুপ যারা কেউ কেউ অপর গ্রুপের মুসলমানদের মুসলমান ভাবতেই নারাজ।
আব্রাহাম, মোজেস ও জিসাসকে নিয়ে কোরান ও বাইবেলের বর্ণনায় অনেক গরমিল রয়েছে। তাদের প্রচারিত ধর্মগুলোতে ঈশ্বরের ধারণাতে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। স্রষ্টার নাম যদি ‘আল্লাহ’ ছিল তবে সেই নামটি অন্য ধর্মে নেই কেন? আব্রাহাম, মোজেস ও জিসাসের নামও কোরানে বিকৃ্তরুপে আসার হেতু কী?

আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, ও মুহাম্মদ ইত্যাদি গ্রেট হিউম্যানরা বলেছেন, ‘ঈশ্বর আছে’ তাই সত্যি সত্যি ঈশ্বর রয়েছে এ ধরনের যুক্তি মস্তিষ্ক কতটা সুস্থ থাকলে বের হয় ঠিক জানি না। এই আজগুবী যুক্তিটি পুরোই দাড়িয়ে আছে যার উপর তাকে বলা হয়- আপিল টু অথরিটি এবং এ ধরণের যুক্তি একদম ফেলনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি আরেক অপ্রমাণিত বিষয়কে সামনে নিয়ে আসলেন –‘আব্রাহাম, মোজেস, জিসাস, ও মুহাম্মদ ইত্যাদি লোকের নবুয়তি’। একটি অপ্রমাণিত বিষয় দিয়ে আরেকটি অপ্রমাণিত বিষয়কে প্রমাণ করার এহেন চেষ্টা সত্যিই হাস্যকর।

এবার দেখব তৃতীয় যুক্তি যা আমাকে সর্বাধিক বিনোদন দিয়েছে- আগেরবার নবীদের দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে, এবার হবে কোরান দিয়ে ঈশ্বরের প্রমাণ।

“৩) কোরআন যে কোন মানুষের নিজস্ব বাণী হতে পারে না – তার স্বপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। যে কেউ নিরপেক্ষ মন-মানসিকতা ও ঠান্ডা মাথায় কোরআন নিয়ে স্টাডি করলে এই সিদ্ধান্তে উপণীত হবেন যে, কোরআনের মতো একটি গ্রন্থ লিখা মানুষের পক্ষে সত্যি সত্যি অসম্ভব। কারণ: (ক) কোরআনের মতো করে একটি গ্রন্থ লিখতে হলে সর্বপ্রথমে একজনকে একই সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী, প্রতারক, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, ও স্মার্ট হতে হবে। তার পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে কোরআন লিখা হয়েছে প্রত্যক্ষ উক্তিতে, পরোক্ষ উক্তিতে নয়। অর্থাৎ কোরআনের বক্তা হচ্ছেন স্বয়ং এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা (সৃষ্টিকর্তা দাবিদার), কোন মানুষ নয়। এমনকি কোরআনের ভাষা ও বাচনভঙ্গিও অন্য যে কোন গ্রন্থ থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। (খ) কোনভাবেই স্বঘোষিত নাস্তিক হওয়া যাবে না। কারণ স্বঘোষিত নাস্তিক হয়ে সৃষ্টিকর্তার নামে কিছু লিখলে মিথ্যাবাদী ও জোচ্চোর হিসেবে জনগণের কাছে হাতে-নাতে ধরা খেয়ে যাবে! ফলে স্বঘোষিত নাস্তিকরা কিন্তু ইচ্ছে করলেও কোরআন বা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থের মতো একটি গ্রন্থ লিখতে পারবে না! (গ) কোরআনের মধ্যে যে তথ্য আছে তার সঠিক ব্যাখ্যা এখন পর্যন্তও কেউ দিতে পারেনি। কেউ বলে কোরআন হচ্ছে মুহাম্মদের বাণী। কেউ বলে ইহুদী রাবাইদের বাণী! কেউ বলে ক্রিস্টিয়ান পাদ্রীদের বাণী! কেউ বলে স্যাটানের বাণী! কেউ বলে ডেভিলের বাণী! কেউ বলে মৃগীরুগীর বাণী! কেউ বা আবার বলে মুহাম্মদের কোন এক সেক্রেটারির বাণী! তার মানে কোরআন বিরোধীরাই এখন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি!

সকালবেলা কোরআনকে মুহাম্মদের বাণী বলে দাবি করা হয়। ভাল কথা। কিন্তু দুপুর হতে না হতে মত পাল্টে যায়! তখন কোরআন হয়ে যায় ইহুদী রাবাইদের বাণী! বিকালবেলা হয় ক্রিস্টিয়ান পাদ্রীদের বাণী! সন্ধ্যায় আবার হয়ে যায় ডেভিলের বাণী! ডিনারের সময় হয় স্যাটানের বাণী! মাঝরাতে আবার হয়ে যায় মৃগীরুগীর বাণী! এ নিয়ে সারারাত ধরে গাঞ্জা টেনে কোন কুল-কিনারা না পেয়ে ভোরবেলা হতাস হয়ে হয়তো বলা হয়, কোরআন আসলে উপরোল্লেখিত সবারই বাণী! প্রকৃত মৃগীরুগী ও ডেলিউডেড যে কে বা কারা, সেটা বোঝার জন্য তসলিমা নাসরিন হওয়ার দরকার নাই নিশ্চয়! দশজন কোরআন বিরোধীকে যদি আলাদাভাবে মন্তব্য করতে বলা হয় সেক্ষেত্রে তারা হয়তো নিদেনপক্ষে পাঁচ রকম উপসংহারে পৌঁছবে। মানব জাতির ইতিহাসে দ্বিতীয় কোন গ্রন্থ সম্পর্কে এরকম বিজেয়ার (Bizarre) ও র্যা ন্ডম (Random) মতামত নেই। কোরআন বিরোধীরাই আসলে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, কোরআন কোন মানুষের বাণী নয়। কিন্তু একই কথা কোরআনে বিশ্বাসীরা বলতে গেলেই যত্তসব দোষ! তবে কোরআন বিরোধীরা যেমন কোন যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই কোরআনকে ডেভিল বা স্যাটানের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে, কোরআনে বিশ্বাসীরা তেমনি অনেক যুক্তি-প্রমাণের আলোকে কোরআনকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে”।

মুহাম্মদকে অনেকে মানসিক রুগি বলে মনে করেন। এমন হওয়া ওতো সম্ভব যে মুহাম্মদের মাথায় কোনো ভাবের উদয় হল আর তিনি তা মনে করলেন আল্লার বাণী এবং তাঁর আদেশে অহি লেখকরা একে কাব্যে রুপদান করলেন ( এবং পরবর্তীতে লোকেরা মনে করতে লাগল যে কোরান যেভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে সেভাবেই তা নাযিল হয়েছিল)। তবে মুহাম্মদ সত্যিই মানসিক রুগি ছিলেন কি না তা নিয়ে সহজেই আপত্তি তোলা যায়। এক্ষেত্রে অভিযোগ তোলা সম্ভব যে মুহাম্মদ স্বজ্ঞানে কোরানকে অলৌকিক বলে চালিয়ে দিয়ে ভাঁওতাবাজি করেছিলেন যদিও সেজন্য তাঁকে রায়হান সাহেবের কথামত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মিথ্যাবাদি, প্রতারক, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান বা স্মার্ট বলা যায় কি না তা অনেকটাই বিতর্কের বিষয় হতে পারে তবে মুহাম্মদ যে একজন ‘জিনিয়াস’ ছিলেন সে বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

(কোরানের অলোকিকতা সম্পর্কে একটা আকর্ষণীয় আলোচনা পাবেন ‘নাস্তিকের ধর্মকথা’ এর এই লেখায় আল্লাহ, মুহম্মদ সা এবং আল-কোরআন বিষয়ক কিছু আলোচনার জবাবে)
প্রশ্ন উঠতে পারে, কোরানকে অলৌকিক বলে ঘোষণা দিয়ে মুহাম্মদের তবে কি লাভ হয়েছে?
আগেই বলেছি, মুহাম্মদ “মুহাম্মদ” হতে পেরেছিলেন কোরানকে আল্লার বাণী বলে প্রচারের মাধ্যমে। আজ থেকে ১৪০০ বছরের অধিক সময় আগে এরকম প্রচার ও তাতে বিশ্বাস করার মত লোকের অভাব ছিল না যেখানে আজকের যুগেও এমন উদ্ভট বিষয়ে বিশ্বাসের মত মানুষের সংখ্যা কম নয়। এখনো অনেক ভণ্ড পীরের হাজার হাজার মুরিদের খোঁজ পাবেন একটু খবর নিলেই।

মুহাম্মদ একজন নারীর(খাদিজা) ব্যবসা দেখাশুনাকারী থেকে একটা জাতির নেতা পেরেছিলেন কোরানকে অলৌকিক বলে প্রচারের মাধ্যমে। মুহাম্মদের যা কিছু অর্জন সব এর মাধ্যমেই। নিচের কয়েকটি আয়াত লক্ষ্য করি-
“হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে”। (৩৩:৪৫-৪৬)

“হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ্ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু”।।(৩৩:৫০ )

“আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর”।(৩৩:৫৬ )

স্বীয় পোষ্যপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করলে তা জায়েজ করার জন্য নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল করানো হল-
“অতঃপর জায়েদ যখন জয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পুষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে”। (সূরা আহযাব, ৩৩:৩৭)

কী অবস্থা দেখেন। এভাবে নিজেকে মহিমান্বিত করতে, সুবিধা আদায় করতে এমনকি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যায় পড়লেও তা সমাধানের জন্য মুহাম্মদ নিজের ইচ্ছেমত আয়াত নাযিল করে নিয়েছেন।

“কোরআন লিখা হয়েছে প্রত্যক্ষ উক্তিতে, পরোক্ষ উক্তিতে নয়।” ভাল কথা, কোরানকে পরোক্ষ উক্তিতে রচনা করলে একে আল্লার বাণী বলে প্রচার করা যেত কিভাবে? আমরা দেখতে পাই মুহাম্মদের যুগেও কিছু আলোকিত মানুষ ছিলেন যারা কোরানের অলৌকিকতার দাবিকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নেন নি।

“(খ) কোনভাবেই স্বঘোষিত নাস্তিক হওয়া যাবে না। কারণ স্বঘোষিত নাস্তিক হয়ে সৃষ্টিকর্তার নামে কিছু লিখলে মিথ্যাবাদী ও জোচ্চোর হিসেবে জনগণের কাছে হাতে-নাতে ধরা খেয়ে যাবে! ফলে স্বঘোষিত নাস্তিকরা কিন্তু ইচ্ছে করলেও কোরআন বা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থের মতো একটি গ্রন্থ লিখতে পারবে না।”
>এগুলো অপ্রয়োজনীয় কথা যদিও পড়তে বেশ ভালই লাগে। 🙂

“(গ) কোরআনের মধ্যে যে তথ্য আছে তার সঠিক ব্যাখ্যা এখন পর্যন্তও কেউ দিতে পারেনি। কেউ বলে কোরআন হচ্ছে মুহাম্মদের বাণী। কেউ বলে ইহুদী রাবাইদের বাণী! কেউ বলে ক্রিস্টিয়ান পাদ্রীদের বাণী! কেউ বলে স্যাটানের বাণী! কেউ বলে ডেভিলের বাণী! কেউ বলে মৃগীরুগীর বাণী! কেউ বা আবার বলে মুহাম্মদের কোন এক সেক্রেটারির বাণী! তার মানে কোরআন বিরোধীরাই এখন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি।”

কোরান আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের একটি গ্রন্থ। এখন একে নিয়ে যদি বিতর্ক হয় বা এর কিছু বিতর্কিত দিক থাকে তবে তা কিভাবে একে অলৌকিক গ্রন্থ বলে প্রমাণ করে? কোরানের মধ্যে যে তথ্য আছে তার সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে না পারলেই কোরান কিভাবে অলৌকিক গ্রন্থ হয় ? আল্লা নামক কেউ মানুষের জন্য কোনো মেসেজ পাঠাবেন আবার সেই মানুষ তা ঠিকমত বুঝতে পারবে না- এটি তো বরং কোরানের অলৌকিকতার দাবির বিপক্ষে যায়।

মজার ব্যাপার হল, রায়হান সাহেব স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণের নামে একেতো বলছেন অবান্তর সব কথাবার্তা আবার কোরানকে যারা অলৌকিক নয় বলে মনে করেন তাদের প্রতি বিষোদগার করে বলছেন, “এ নিয়ে সারারাত ধরে গাঞ্জা টেনে কোন কুল-কিনারা না পেয়ে ভোরবেলা হতাস হয়ে হয়তো বলা হয়, কোরআন আসলে উপরোল্লেখিত সবারই বাণী।” হাঃ হা। তিনি নিজেই গাঞ্জার মত কিছু টেনে টেনে এ লেখাটি লিখেছেন কি না তার বিচার বরং পাঠকরাই করুক। তারপর আবার বলছেন, “প্রকৃত মৃগীরুগী ও ডেলিউডেড যে কে বা কারা, সেটা বোঝার জন্য তসলিমা নাসরিন হওয়ার দরকার নাই নিশ্চয়! দশজন কোরআন বিরোধীকে যদি আলাদাভাবে মন্তব্য করতে বলা হয় সেক্ষেত্রে তারা হয়তো নিদেনপক্ষে পাঁচ রকম উপসংহারে পৌঁছবে।” কোরান নিয়ে দশজন যদি পাঁচরকম উপসংহারে পৌছেন তবে তা কোরানকে কিভাবে অলৌকিক বলে প্রমাণ করে? উহ, হাসতেও ভুলে গেছি। ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রত্যাদেশ পাওয়ার মত উদ্ভট ও হাস্যকর দাবি করা হয়েছে, এটা নিয়ে দশজন দশধরণের কথা তো বলবেই। এটা যদি প্রমাণ করা যেত তা অলৌকিক বলে তবে তো আর একে নিয়ে এরকম বিতর্ক হওয়ার কথা না। আরেকটু হাসার জন্য নিচের অংশটুকু পড়েন-
“তবে কোরআন বিরোধীরা যেমন কোন যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই কোরআনকে ডেভিল বা স্যাটানের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে, কোরআনে বিশ্বাসীরা তেমনি অনেক যুক্তি-প্রমাণের আলোকে কোরআনকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে”।

“এবার মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হচ্ছে, এই মহাবিশ্বের যে সৃষ্টিকর্তা নাই, তার স্বপক্ষে নাস্তিকদের কাছে স্বতন্ত্র কোন যুক্তি-প্রমাণ আছে কি-না। ওয়েল, বিশাল একখান অশ্বডিম্ব! আর থাকবেই বা কী করে। থাকার প্রশ্নই ওঠে না। এ কারণেই তারা (অপ)বিজ্ঞানের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছে। (অপ)বিজ্ঞান-ই হচ্ছে তাদের গড! অথচ মুসলিম কিডদের কাছে বিজ্ঞান ও অপবিজ্ঞান হচ্ছে মনুষ্য তৈরী দুটি টুল মাত্র! মুসলিম কিডদের কাছে যেটি নিছকই একটি টুল, অক্সফোর্ড প্রফেসর ডকিন্সের মতো নাস্তিকদের কাছেও সেটিই হচ্ছে গড!”

পুরোকথাই গোঁজামিল ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈশ্বরের অস্তিত্বের একটাও প্রমাণ দিলেন না তারপর এখন আবার বলছেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই তা প্রমাণ করার কথা। ঈশ্বরবাদিরা যেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্ব দাবি করেন তাই তা প্রমাণের দায়িত্ব যে তাদেরই তা তারা কবে বুঝবে? আমি আমার মনের মাধুরী মিশিয়ে এক ধরণের ঈশ্বরের ধারণা দিলাম তারপর এর আর কোনো প্রমাণ দিলাম না আর পরে কেউ তাতে সংশয় করলে বললাম, তাহলে আপনার কাছে এই ধরণের ঈশ্বর নেই বলে কোনো প্রমাণ আছে কি না? এভাবে নিজের প্রমাণের দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়াকে বলে ‘শিফটিং দা বারডেন অফ প্রুফ’।
কোনো কিছুর অস্তিত্ব যিনি দাবি করেছেন তাকেই তার প্রমাণ দিতে হয়। আমি দাবি করলাম, পৃথিবীতে অংবং নামক এক ধরণের অদৃশ্য প্রাণী বসবাস করে (অথবা আমার অদৃশ্য হবার ক্ষমতা আছে) কিন্তু এর কোনো প্রমাণ দিলাম না। এতে কি আমার দাবি গ্রহণযোগ্য হবে অথবা কাউকে এ ধরণের প্রাণী নেই বলে প্রমাণ করার চ্যলেঞ্জ দিতে পারব? ঈশ্বরের বেলায়ও একই কথা। যারা দাবি করেন ঈশ্বর নামক কেউ আছে তাদেরকেই এর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে। তারা যদি তা প্রমাণ করতে না পারেন তবে তো এখানেই খেল খতম, একে আর আলাদাভাবে অপ্রমাণ করার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
ঈশ্বর বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুবিধার্তে ইসলামের আল্লার ধারণাকে বিবেচনায় আনি। আল্লাহ নিরাকার, আবার তিনি সর্বত্র বিরাজমান, অসীম ক্ষমতার অধিকারী, অসীম দয়ালু, সর্ব জ্ঞানী, তার একপাল ফেরেশতা নামক পাইক-পেয়াদা রয়েছে, রয়েছে সিংহাসন(আরশ) যা বহন করছেন আটজন ফেরেশতা। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, অসীম ক্ষমতার অধিকারী, অসীম দয়ালু, সর্ব জ্ঞানী এগুলো মানবীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ঐশ্বরিক সত্ত্বায় আপতন ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লার বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের মধ্যে সীমিত পরিসরে বিদ্যমান তাই মানুষের পক্ষে এগুলোর কল্পনা খুবই সম্ভব। আল্লা এতই হিংসুক যে কেউ তার সাথে কাউকে শরিক করলে বা কাউকে তার সমান মনে করলে সে অপরাধ কখনো ক্ষমা করবেন না। কোরানে আছে-

“নিশ্চয় আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন।”( সুরা নিছা, ৪:১১৬)

“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।”(সুরা মায়িদাহ, ৫:৭২)
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” ( সুরা নিছা,৪:৪৮)

আবার দেখুন-
যদি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। (সূরা আম্বিয়া, ২১:22)

আল্লাহ প্রতিশোধগ্রহণ কারী!! দেখুন-
“নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী”। ( সূরা আলে ইমরান, ৩ : ৪)

“নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী”। (সূরা ইব্রাহীম, ১৪ : ৪৭)

“ আল্লাহ কি পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন?” (সূরা আল-যুমার, ৩৯ : ৩৭)

ঈশ্বরের নিরাকারত্ব, ফটকা দয়ালুতা, করুণাময়তা, জ্ঞানময়তাসহ সকল বৈশিষ্ট্যকে সামনে আনলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ঈশ্বরই মানুষের কল্পনাসাধ্য সবচেয়ে বড় অশ্বডিম্ব বৈ কিছু নয়।

রায়হান সাহেব এবার ক্ষেপেছেন বিজ্ঞানের উপর। বলেছেন,

“এ কারণেই তারা (অপ)বিজ্ঞানের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছে। (অপ)বিজ্ঞান-ই হচ্ছে তাদের গড! অথচ মুসলিম কিডদের কাছে বিজ্ঞান ও অপবিজ্ঞান হচ্ছে মনুষ্য তৈরী দুটি টুল মাত্র! মুসলিম কিডদের কাছে যেটি নিছকই একটি টুল, অক্সফোর্ড প্রফেসর ডকিন্সের মতো নাস্তিকদের কাছেও সেটিই হচ্ছে গড! অধিকন্তু, বিজ্ঞান যেহেতু একটি পরিবর্তনশীল বিষয়, বিশেষ করে প্রোবাবিলিস্টিক ক্ষেত্রে, সেহেতু বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে দর্শনভিত্তিক কোন বিষয়ে স্বতন্ত্র কোন যুক্তি বা তত্ত্ব দাঁড় করাতে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অপবিজ্ঞান!”

রায়হান সাহেবের হাবভাবে মনে হচ্ছে, কেউ বিজ্ঞানকে ফেলে রেখে শুধু তাঁর মহান আজগুবী ও অপ্রমাণিত আল্লাহ ও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে ফেললেই যথার্থ সত্যেকে পাওয়া যাবে অন্যথায় নয়। যতই বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটছে মানুষ ততই সত্যের কাছাকাছি পৌছে চলছে। হ্যা, সত্যের কাছাকাছি পৌছার একমাত্র অবলম্বন বিজ্ঞান। কিন্তু ধর্মের প্রধান অবলম্বন হল ‘বিশ্বাস’; কেউ ধর্মের বিষয়গুলো নিয়ে ঠিকমত ভাবতে পেরেছে কি না, এটা বিজ্ঞানসম্মত কিনা –এগুলো ধর্মের বিবেচনার বিষয় নয়- কোনো মতে ধর্মে ভাল রকম একটা বিশ্বাস স্থাপন করানো গেলেই ধর্মের পোয়াবারো। যা সত্য, যা প্রমাণ করা যায় তা অহেতুক কাউকে বিশ্বাস করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে না। বিজ্ঞান প্রমাণ নির্ভর, তাই বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে কাউকে বিশ্বাস করানোর জন্য ধর্মের মত উঠেপড়ে লাগতে হয় না।
বিজ্ঞান দিন দিন সূক্ষ থেকে সূক্ষতর, গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে, তা ক্রমাগত সত্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে আর এজন্যই তাকে মাঝে মাঝে পরিবর্তিত হতে হয়। আর প্রমাণহীন ও অপরিবর্তনীয় ধর্ম বিশ্বাস অন্ধ আবেগের অচলায়তন তৈরী করে দেয় মানুষের মন ও মেজাজে ফলে সত্যের কাছাকাছি পৌছার দ্বার উন্মুক্ত করা তার জন্য একেবারেই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

আমরা রায়হান সাহেবের ঈশ্বর প্রমাণ দেখলাম। এখন প্রশ্ন হল, তিনি কেন এসব হাস্যকর অবান্তর যুক্তি দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন? এটা কি তাঁর চিন্তার ক্ষেত্রে ধর্ম-বিশ্বাসের প্রতিবন্ধকতার অনিবার্য ফলাফল?