[ও ভেই যেই বেক্কুনে মিলি জুম কাবা যেই/পূব ছড়া থুমত বর রিজেভ’ টুগুনোত/ পুরান রাঙ্গা ভূঁইয়ানি এবার বলি উত্যে হোই চেগার/ সে জুমোনি এ বঝরত মিলিমুলি খেই।…চাকমা কবিতা…ও আমার ভাই বন্ধুরা চল চল সকলে মিলে জুম কাটতে যাই/ বড় বড় পাহাড়ের চূড়ায়/ দূরের পূর্ব ছড়ার শেষ সীমানায়/আগে জুম করা ভূমিগুলো উর্বর হয়েছে/এ বছর মিলে-মিশে সেগুলো চাষ করে খাবো।…জুম কাবা, সলিল রায়, রান্যাফুল।।]
এক.
জুম চাষ হচ্ছে পাহাড়ের ঢালে এক বিশেষ ধরণের চাষাবাদ পদ্ধতি। পাহাড়ি মানুষের ঐতিহ্যবাহি এই ‘জুম’ শব্দটি থেকে চাকমা ভাষায় ‘জুমিয়া’ (জুম চাষী) ও জুম্ম (পাহাড়ি জনজাতি) শব্দটির উৎপত্তি। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এই তিন জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ পাহাড়িই জুম চাষী।
এ দেশের পাহাড় ও বনাঞ্চল হচ্ছে সরকারি খাস জমি। যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় সেখানে বসবাসরত পাহাড় ও অরণ্যচারী মানুষের এ সব জমির বন্দোবস্ত কোনো সরকারের আমলেই দেওয়া হয়নি। তাই পাহাড় ও বনাঞ্চলের ওপর আদিবাসী মানুষের এখনো কার্যত জন্মেনি কোনো অধিকার।
এক সময় নেত্রকোনা ও শেরপুর অঞ্চলের গারো পাহাড়ে মান্দি (গারো) ও হাজং এবং শ্রীপুর, কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ে খাসি বা খাসিয়ারাও জুম চাষ করতেন। কিন্তু প্রায় একশ বছর আগে বৃটিশ আমলে বন বিভাগ গারো পাহাড় এবং মধুপুর-গাজীপুর ভাওয়াল গড় এলাকার প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল (রিজার্ভ ফরেস্ট) হিসেবে ঘোষণা করে। একই সঙ্গে তারা বন ও পরিবেশ সংরক্ষণের নামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জুম চাষ ও শিকার।
এ কারণে গারো পাহাড়ে জুম চাষ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। খাসিয়া পাহাড়েও সাধারণ জুম চাষ অনেক আগেই বিলুপ্ত। তবে নানা প্রতিকূলতার ভেতরেও খাসিয়ারা পানজুম চাষ করছেন।
এদিকে ১৯৬২ সালে বন বিভাগ রাঙামাটিতে সদর দফতর করে কৃষি প্রধান অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘জুম নিয়ন্ত্রন প্রকল্প’ চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিলো, জুমিয়াদের জুম চাষে নিরুৎসাহিত করে সমতলের জমিতে বনজ ও ফলজ চাষে তাদের উৎসাহিত করা। এক দশক আগেও বন বিভাগের এই প্রকল্প খাতে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো। কিন্তু বাস্তবতার কারণেই এই প্রকল্প কখনোই সফল হয়নি। এখন এই প্রকল্পখাতে সরকারি অর্থ বরাদ্দও নেই।
দুই.
জুম চাষের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরনো। পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো ও খাসিয়া পাহাড়ের বাইরে ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা–‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত এই সাতটি রাজ্যে জুম চাষ ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এছাড়া চীন, নেপাল, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন মঙ্গোলিয় জনগোষ্ঠির পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষের প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিজস্ব শাসনরীতি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী কার্বারি (গ্রাম প্রধান) ও হেডম্যান (মৌজা প্রধান) নির্ধারণ করেন কোন পাহাড়ে কোন কোন জুমিয়া পরিবার কখন জুম চাষ করবেন। এ কারণে এ চাষাবাদ নিয়ে বিরোধ হয় না।
পাহাড়ের এই চাষ পদ্ধতি বেশ কষ্টসাধ্য। জুম চাষে একটি পরিবারের পাহাড়ি নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সকলেই অংশ নেন। আবার কোনো একটি বড় পাহাড়ে কয়েকটি গ্রামের জুমিয়ারা ঐক্যবদ্ধভাবে জুম চাষ করে থাকেন।
চাষের মৌসুমে প্রথমে নির্বাচিত পাহাড়টির জঙ্গল ও আগাছা বিশেষ কৌশলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কৌশলে আগুন ধরানো হয় বলে বনাঞ্চলে এই আগুন যেমন ছড়িয়ে পড়ে না, তেমনি টিকে থাকার স্বার্থেই পাহাড়িরা জুম চাষ করতে গিয়ে বন ও চাষ এলাকার কোনো বড় বা দামি গাছের ক্ষতি করেন না।
বৃষ্টির পর নির্বাচিত জুমের জমিতে পুড়ে যাওয়া জঙ্গল ও আগাছার ছাই সারের কাজ করে। এর পর বিশেষ ধরণের ছোট দা’এর মাধ্যমে ছোট্ট ছোট্ট গর্ত করে একই সঙ্গে কয়েক ধরণের ফসল বোনা হয়। ধান, গম, ভূট্টা, আলু, কলা, তরমুজসহ জুমের জমিতে প্রায় সব ধরণের খাদ্য শষ্য ও শাক-সব্জি চাষ করা হয়। জুমের ফসলের বীজ সমতলের চেয়ে ভিন্ন। এসব ফসল উৎপাদনে কোনো ধরণের সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়না। আর জুমের শষ্য, ফল-মূল ও তরি-তরকারির আকার-আকৃতি সমতলের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যের চেয়ে ভিন্ন; এগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু।
জুমের ফসল পরিচর্যার জন্য চাষাবাদের পাহাড়ে জুমিয়ারা গড়ে তোলেন অস্থায়ী মাচাং ঘর (চাকমা ভাষায়, মোনঘর)। এই মনঘরে চাষাবাদের মৌসুমে জুমিয়ারা একই সঙ্গে যেমন ফসলের দেখভাল করেন, তেমনি বুনো শুকর বা অন্য জীব-জন্তু ও পাখ-পাখালি যেনো ফসলের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকেও তারা লক্ষ্য রাখেন। জুমের জমি ঘিরে এ জন্য ‘কাবুক’সহ নানা ধরণের ফাঁদ পাতা হয়। তঞ্চঙ্গা জুমিয়াদের আবার এসব ফাঁদ পাতার সুখ্যাতি রয়েছে।
জুম চাষ নিয়ে পাহাড়ি লোকগাঁথা, গান ও ছড়া গান, প্রবাদ-প্রবচনও খুব সমৃদ্ধ। মোনঘর নিয়েও চাকমাদের নানা স্মৃতিকথা জড়িয়ে আছে জীবন-যাপনে।…
তিন.
পাঁচ-ছয় দশক আগেও একবার কোনো পাহাড়ে জুম চাষ করার পর অন্তত ১৫-২০ বছর সেখানে আর জুম করা হতো না। সেখানে এই দীর্ঘ সময়ে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল গড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া হতো; রক্ষা পেতো পাহাড়ি জমির উর্বরতা।
কিন্তু ৬০ দশকে কাপ্তাই বাঁধের কারণে বিপুল সংখ্যক পাহাড় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সংকুচিত হয় জুমের জমি। আর ৮০ র দশক থেকে এখনো পাহাড়ে সমতল অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের অভিবাসন গড়ে উঠছে।
এছাড়া পাহাড়ে ছয়টি সেনা নিবাস ও প্রায় সাড়ে চারশ অস্থায়ী সেনা ছাউনি এবং বিডিআর, ড়্যাব, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, বন বিভাগসহ নিরাপত্তা বাহিনীর অসংখ্য স্থায়ী এবং অস্থায়ী ছাউনির কারণেও বিপুল সংখ্যক পাহাড় ও বনাঞ্চল অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
এমনিভাবে দিন দিন জনসংখ্যার চাপে ও বন বিভাগের নানা নিয়ম-কানুনের ফলে সংকুচিত হচ্ছে জুমের জমি। তাই জুমিয়ারা অনেক জায়গাতেই এখন বাধ্য হয়ে মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের ব্যবধানে একই পাহাড়ে আবারো জুম চাষ করছে। এতে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে পাহাড়ের উর্বরতাও। তাই বিচ্ছিন্নভাবে অনেক জুমিয়া এখন চাষের জমিতে ধুপ সার বা ইউরিয়া ব্যবহার করছেন; যা আগে কখনোই দেখা যায়নি।
বলা ভালো, জুম চাষীরা হচ্ছেন সকলেই প্রান্তিক চাষী ও সাধারণতভাবে হত দরিদ্র। তাই জুম চাষ করা ছাড়া অন্য কোনোভাবেই তাদের টিকে থাকার উপায় নেই।
অন্যদিকে বহুবছর ধরে পাহাড়ে কল-কারখানা গড়ে না ওঠায় সৃষ্টি হয়নি বিকল্প আয়ের পথ।
চার.
আগেই বলা হয়েছে, বহিরাগতদের অব্যহত জনসংখ্যার চাপ, জুমের জমি সংকুচিত ও পাহাড়ের উর্বরতা নষ্ট হওয়া, বিকল্প আয়ের অভাব, চার দশক ধরে জুম নিয়ন্ত্রনের নামে বন বিভাগের মিথ্যে মামলাসহ নানা হয়রানী — এসব কারণে অর্থনৈতিকভাবে মার খেতে খেতে প্রান্তিক চাষী জুমিয়াদের জীবন এখন বড়ই বিপন্ন।
রাঙামাটির বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির নেতা গৌতম দেওয়ান এ বিষয়ে এই লেখককে বলেন, জুম নিয়ে জনমনে তো বটেই, এমন কি সরকারি মহলে রয়েছে নানা ভ্রান্ত ধারণা। এরমধ্যে জুমের আগুনে পাহাড়ের বনজ ও প্রানীজ সম্পদ ধ্বংস, জুমের কারণে পাহাড়ের ভূমি ক্ষয় বৃদ্ধি, জুম একটি পরিবেশ বিরুদ্ধ অবৈজ্ঞানিক চাষ পদ্ধতি — ইত্যাদি প্রধান।
তিনি বলেন, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির সন্তান জুমিয়ারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই জুমের আগুনে কখনো আগাছা বাদে কোনো বনজ বা প্রাণীজ সম্পদ নষ্ট করে না। এ ছাড়া জুম চাষে লাঙ্গল বা কোদাল ব্যবহৃত হয় না। জুমিয়ারা পাহাড়ে একটি ছোট্ট গর্ত খুঁড়ে একই গর্তে নানা রকম বীজ এক সঙ্গে বপন করেন বলে ভূমি ক্ষয় হওয়ারও প্রশ্ন আসে না।
গৌতম দেওয়ান বলেন, বরং এখন পাহাড়ে অপরিকল্পিত নির্মাণ ও পাহাড় কাটার ফলে ভূমি য় তথা পাহাড় ধ্বসের হার অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশী। কিন্তু জনসংখ্যার চাপে জুমের জমি কমতে থাকায় অন্তত পাহাড়গুলোকে ১৫ — ২০ বছর অনাবাদী রাখা হচ্ছে না বলে প্রাকৃতিক বনের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চাষযোগ্য সমতলভূমির সংখ্যা খুবই কম বলে পাহাড়ে জুম চাষের বিকল্প এখনো গড়ে ওঠেনি।
পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, ৬০ দশকে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করে প্রথম আঘাত হানা হয় বনাঞ্চলের ওপর। এই বাঁধের কারণে প্রায় ৫৪ হাজার একর জমি পানিতে তলিয়ে যায় বলে চাষের জমিও হয়ে পড়ে সংকুচিত। বাংলাদেশ আমলে পাহাড়ে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে।
তিনি বলেন, এছাড়া শান্তিচুক্তির (১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়) যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি বলে পাহাড়ে এখনো হয়নি ব্যাপক ও বড় ধরণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আড়াই দশকের অশান্ত পাহাড়ে কৃষির বিকল্প কোনো আয়ের ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। তাই ভূমিহীন দরিদ্র মানুষ জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জুম চাষ করছে।
সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা বলেন, আসলে যে ভাবে পাহাড়ে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, ভবিষ্যতে এখানে হয়তো আর জুম চাষ সম্ভব হবে না। প্রায় সাত লাখ ভূমিহীন এসব জুম চাষীদের এখনই পুনর্বাসনের জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। এ জন্য প্রাথমিকভাবে তাদের কিছু অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে এবং হর্টিকালচার, ফিসারিজ, কি ছোট ছোট প্রকল্প খাতে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে পুনর্বাসন করা জরুরি। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী জমির বন্দোবস্তি দিতে হবে এই সব বিপন্ন জুম চাষীদের।
বান্দরবানের পরিবেশ কর্মি জুমলিয়ান আমলাইয়ের রয়েছে জুমচাষের নিজস্ব অভিজ্ঞতা। বম জনজাতির এই নেতা বলেন, পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষের এই বিজ্ঞান সম্মত চাষাবাদ নানা দেশেই প্রচলিত। এসব দেশের তুলনায় আমাদের দেশের পাহাড়গুলো অনেক উর্বর। আমাদের জুম চাষীরা শত শত বছর ধরে শুধুমাত্র প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ফলিয়ে আসছেন পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফসল, সাক-সব্জি, ফল-মূল। নিতান্ত নিরুপায় হয়ে এখন তারা জুমের জমিতে ব্যবহার করছেন রাসায়নিক সার।
—
ছবি: ১. জুমের জন্য পাহাড়ে আগাছা পোড়ানো হচ্ছে, বান্দরবান, দিদারুল আলম। ২. জুম চাষ, বীজ বপন, ফিলিপ গাইন, সেড। ৩. জুম চাষ ও মোনঘর, গড়ে উঠেছে কলাবাগান, রাঙামাটি, লেখক। ৪. জুমের ফসল সংগ্রহ, ন্যাট-জিও ম্যাগাজিন, ১৯৭২, সংগ্রহ- লেখক।
—
তথ্যসূত্র: নিজস্ব সরেজমিন অনুসন্ধান, জুমলিয়ান আমলাই, বান্দরবান এবং সত্রং চাকমা, রাঙামাটি।।
[…] তটস্থ হয় পুরো পাহাড়। উজাড় হয় জুম চাষে সাজানো ফসলের বাগান। অথচ আদিবাসী মানুষ একে মেনে নেয় […]
@বিপ্লব রহমান ভাই,জুম চাষ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনার এই অনেক পুরাতন লেখাটি পড়ে। সত্যি আপনার বেশিরভাগ লেখাতেই আছে ভিন্নধর্মী এক স্বতন্ত্র আমেজ। শুভেচ্ছা নিন (F)
জুম চাষ সম্পর্কে অহেতুক ভ্রান্তি সবার দূর হবে এবং পাহাড়িদের সম্পর্কে বাঙ্গালীদের নেতিবাচক ধারনা এবং অবান্ধব সম্পর্কের চির অবসান ঘটবে এই কামনা করলাম আবারো বরাবরের মতই।
[…] ম্রো’দের অধিকাংশই পেশায় জুমচাষি (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ)। তাদের অধিকাংশের বসবাস পার্বত্য […]
[…] ম্রো’দের অধিকাংশই পেশায় জুমচাষি (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ)। তাদের অধিকাংশের বসবাস পার্বত্য […]
[…] তটস্থ হয় পুরো পাহাড়। উজাড় হয় জুম চাষে সাজানো ফসলের বাগান। অথচ আদিবাসী মানুষ একে মেনে নেয় […]
[…] আসা বাঙালিদের বসতি বাড়ছে পাহাড়ে। কমে আসছে জুমের পাহাড়। দিন দিন জীবন হচ… ফুল বিঝুতে চাকমা শিশু-কিশোররা নৈবদ্য […]
বিপ্লব,
কয়েকদিন আগে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আপনার একটা লেখা পড়লাম কালের কন্ঠ পত্রিকার রাজকূট এ। আজকে পড়লাম জুম চাষ নিয়ে। ভিন্ন গোষ্ঠী, ভিন্ন জাতিসত্ত্বা নিয়ে আপনার আগ্রহ, একনিষ্ঠ পদচারণা , লেখা সত্যিই প্রসংশনীয়। তবে একই ছবি আলাদা দুটো লেখায় বযবহার না করাই উত্তম। যেমন, জুম ফসল সংগ্রহ।
@গীতা দি,
আপনার নিবিড় পাঠের জন্য কৃতজ্ঞতা। ছবি বিষয়ক পরামর্শটুকু মনে থাকবে। চলুক। :yes:
জুম চাষ শব্দটি ছোটবেলা থেকেই পড়ে আসছি। যদিও বিস্তারিত জানা ছিল না।
আপনার দেওয়া জুম ফসলে দেখছি ধানও আছে। আমি জানতাম যে ধান হতে জমা পানি লাগে। পাহাড়ি ঢালে যা সম্ভব নয়। সেখানে ধান কিভাবে ফলে? বিশেষ ধরনের ধান বীজ আছে যাদের জমা পানি লাগে না?
@আদিল মাহমুদ,
ঠিক বলেছেন। জুমের ধান বীজসহ সব ধরণের ফসলের বীজ সমতলের চেয়ে আলাদা। এগুলোর চাষবাস পদ্ধতিও ভিন্ন। স্বাদ তো বটেই। জুমের ফসল পুরোপুরি প্রাকৃতিক জল-হাওয়ার উপর নির্ভরশীল। পাহাড়ে ঢালে জুম চাষ হয় বলে ফসলের গোঁড়ায় পানি জমে না। তবে বৃষ্টি বা ঝর্ণার পানি জুম চাষের জন্য অপরিহার্য।
আপনার আগ্রহকে সাধুবাদ জানাই। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
খুবই ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার। এই বিশেষ ধরনের বীজ পাহাড়িদের সরবরাহ করে কে? মানে প্রথম উতপত্তি হল কিভাবে? এমন তো নয় যে এরা এসব বীজ সাম্প্রতিককালে পেয়েছে। এসবের ব্যাবহার তো তারা আরো অনেক আগে থেকেই করে আসছে।
এক গর্তে বিভিন্ন ফসলের বীজ বোনাও বেশ ইন্টারেষ্টিং।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার আগ্রহের জন্য আবারো ধন্যবাদ।
জুম-বীজ জুমিয়ারা বংশপরম্পরায় সংগ্রহ করে আসছেন। সরকারি কৃষি ব্যাংক বা নোবেল-ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক এখনো তাদের কাছেই পৌঁছাতে পারেনি। 🙁
@আদিল মাহমুদ, আমার ধারণা ছিল ‘জুম’ পাহাড়ীদের একটি বিশেষ ফসল, যেমন, ধান, পাট, ইত্যাদি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
সেটা তো ঠিকই আছে। জুম চাষ একটি বিশেষ চাষ পদ্ধুতির নাম।
আমি বিস্মিত হয়েছি পাহাড়ি ঢালেও ধানের চাষ করা যায় শুনে। আমার ধারনা ছিল যে জমাটবদ্ধ পানি ধানচাষের জন্য আবশ্যিক। পাহাড়ি ঢালে নিশ্চয়ই জমাট পানির ব্যাবস্থা করা যাবে না।
আপনি হয়ত আরো ভাল ব্যাখ্যা করতে পারবেন, বিষয় তো আপনার।
@আদিল মাহমুদ,
বিষয়টা পুরোপুরি আমার নয়। বিপ্লব রহমানের চাক্ষুস অভিজ্ঞতা আছে। বিপ্লব হয়ত ভেবেছেন এটা ত সবাই জানে। আসলে তা নয়। অন্তত আমি জানি না। যেমন ‘জুম চাষ’ বলতে আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল এটি একটি বিশেষ ফসল চাষ।
পাহাড়ের ঢালুতেই খাঁজ কেটে (সিড়ির মত) ওরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমতল ভূমি বানায়। বছরের একটা সময় বৃষ্টি হয়। সমতল ভূমিতে চাষাবাদের সময় সূচীও কিন্তু বৃষ্টির সাথেই সম্পৃক্ত।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ধন্যবাদ। আরো পরিষ্কার হল।
ব্যাপারটা হল তারা পাহাড়ের ঢালে সমতল সিঁড়ির মত কিছু যায়গা বানায়।
আমাদের ক্লাস ফোরের সমাজ বিজ্ঞানে পার্বত্য অধিবাসীদের নিয়ে বেশ ভাল কিছু অধ্যায় ছিল। জুম চাষের কথা সেখানেই প্রথম পড়েছিলাম।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আপনি ঠিকই বলেছেন। পাহাড়ে ঢালে বিশেষ কৌশলে চাষ করা হয় বলে বৃষ্টির সময় পানি ফসলের গোড়ায় জমে না। আবার বৃষ্টির পানিতে জুম-বীজ ধুয়েও যায় না।
আমাদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা দরকার। জুম চাষ হচ্ছে চাষাবাদের একটি কষ্টকর প্রক্রিয়া। অনেক সময়েই একটি পরিবার তো বটেই, এমন কী একটি গ্রামের পক্ষেও বড় একটি পাহাড়ে জুম চাষ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন কয়েকটি গ্রাম মিলে যৌথভাবে জুম চাষ করা হয়। আগেই বলা হয়েছে, জুম চাষ ও ফসল তোলার ক্ষেত্রে আদিবাসী পাহাড়িরা কার্বারীর ঐতিহ্যগত বিচার-আচার মেনে চলেন। তাই জুম চাষ নিয়ে এ পর্যন্ত পাহাড়িদের মধ্যে কখনো কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা যায় নি।
জুম চাষ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে অহেতুক ভুল ধারনা বিদ্যমান। একটা কথা খুব সহজেই বোঝা যায় যে, জুম চাষের ফলে যদি জমি অনুর্বর হত তাহলে এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে চাষযোগ্য কোন জমি থাকার কথা নয়। কেননা আদিবাসীরা শতবছর ধরে এই চাষ করে আসছে।
যাই হোক সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসীদের পুনর্বাসনের দাবী জানাই। সাথে তাদের স্বায়ত্বশাসনেরও। যদিও জানি এ দাবী কোনদিনই সরকারের কর্ণে পৌছুবে না।
@সাইফুল ইসলাম,
আপনার দাবির সঙ্গে একমত। এমনকি শেষ বাক্যের সঙ্গেও। 🙂
@সাইফুল ইসলাম, যতদুর মনে পড়ে শেখ সাহেব সর্ব প্রথম পাহাড়ীদের উপর সাংস্কৃতিক আঘাত হানেন – “তোমরা বাঙ্গালী হয়ে যাও। ”
এথনিক্যালি ভিন্ন একটি জাতিগুষ্ঠীকে রাতারাতি নতুন আর একটি জাতিগুষ্ঠীতে রূপান্তরিত হওয়ার নির্দেশ/আহ্বান দেওয়া একজন রাষ্ট্রপ্রধানের ঠিক ছিল না বলে আমার ধারণা।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
অতি সংক্ষেপে আপনার তথ্য সঠিক। তবে ১৯৬০ সালে উন্নয়নের নামে কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্প করে পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়িদের ওপর প্রথম আঘাত হানা হয়েছে। সে সময় কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয় প্রায় ৫৪ হাজার একর চাষের জমি, উদ্বাস্তু হন প্রায় এক লাখ পাহাড়ি। …
পার্বত্য সমস্যার বিষয়ে আরো জানতে মুক্তমনায় আমার লেখা ই-বুক ‘রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে’ পড়ে দেখতে পারেন। [লিংক]
অনেক ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
এখন সরকার ৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে চাচ্ছে যেখানে বাঙালী ছাড়া অন্যসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগত সংখ্যালঘুদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় , ভাষা ও সংস্কৃতিকে অস্বীকার করা হয়েছিল।
আমরা পেছনে যেতে চাই—-সামনে নয়।
@গীতা দাস,
দারূণ বলেছেন।
@গীতা দাস, @ নৃপেন্দ্র সরকার,
এ ক ম ত। ‘৭২ এর সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়ার দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। :deadrose:
জুম চাষ সমন্ধে পরিষ্কার ধারণা ছিল না। এই পোস্টিংটি থেকে আমার ভাল ধারণা হল।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাব্য কিছু দিক নির্দেশনাও আছে। কৃষিব্যাংক এগিয়ে আসতে পারে। ধন্যবাদ, বিপ্লব রহমান।
টেলিকথা প্রসংগে কৃষিব্যাংকের আঞ্চলিক কর্মকর্তা নিতাইচাঁদ দাস সিলেট আদিবাসীদের উন্নয়নে নতুন উদ্যোগের কথা বলছিলেন। পরের টেলিকথায় জুম চাষীদের নিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখব তিনি কী বলেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আপনার প্রতিক্রিয়া পেয়ে ভালো লাগলো। টেলিকথা বিষয়ক তথ্য বিস্তারিত জানতে ইচ্ছে করছে। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
আমার বন্ধু নিতাই চাঁদ দাস সিলেট এলাকার কৃষিব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার। তার সাথে আমার আজকেই কথা হল। উপজাতিদের জন্য ৫% রেটে কৃষিঋণের ব্যবস্থা আছে। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে রেট ১০%।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
পাহাড়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, ওই কৃষি ঋণের খবর অতি শিক্ষিত ‘উপজাতি’র অনেকেই জানেন না। দুর্গম পাহাড়ের হত-দরিদ্র ‘আদিবাসীদের’ কথা সহজেই অনুমেয়। 🙁
@বিপ্লব রহমান,
১। আমারও স্থুল বুদ্ধি সেটাই বলে।
২। তারপর ঋণ পেতে ঘুষের পরিমান পাহাড়ীদের জন্য একটু বেশীই হবে মনে হয়। ফলে ৫% রেট ২৫% হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
তবু বিষয়টি নজরে আনার জন্য সবিশেষ ধন্যবাদ। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
আমি আবার কথা বলব। আমার বন্ধুটি একটি গুরুত্ব পূর্ণ পদে আছে। সে নিশ্চয় কোন পজিটিভ অবদান রাখতে পারবে।