পবিত্র কোরান শরীফে আল্লাহ তাআলা সূরা আল-মুমিনুন (বিশ্বাসী)-এ এরশাদ করেছেন:

“আল্লাহ্ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ্ পবিত্র।“ – সূরা ২৩:৯১

যদি অনেক ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকত সেক্ষেত্রে এটা ধারণা করা নির্বুদ্ধিতা যে ঈশ্বরগণ পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হবেন। ঈশ্বর হচ্ছেন আস্তিক মনের বিশ্বজগৎ সম্পর্কিত সকল সন্দেহের সমাধান স্বরুপ মহাজাগতিক ধ্রুবক। তাঁরা এতটা ঝগড়াপ্রবণ, হীন-মন্য এবং অসহিষ্ঞু এটা বলার কারণ কি? বিবেচনাটা কি অনেকটা অনৈশ্বরিক এবং নেতিবাচক হয়ে গেল না? তবে কি আল্লাহ তাআলা ততটাই ঝগড়াপ্রবণ, হীন-মন্য এবং অসহিষ্ঞু!!??

একটা সিস্টেম–কে ভালভাবে বুঝতে হলে ঐ সিস্টেমের অংশ হতে হয়। যেহেতু, আল্লাহ তা আলা কল্পিত ঈশ্বর পদ্ধতির একজন সদস্য তিনি যদি এভাবে মাবুদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে থাকেন তবে বুঝতে হবে তার নিজের মধ্যেও সৃষ্টির প্রতি লোভ এবং তা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার মত পবিত্র গুণাবলী বিদ্যমান!

এইরকম গুণাবলী সম্বলিত ঈশ্বরে বিশ্বাস অবিবেচনাপ্রসূত এবং ক্ষীণ মনমানসিকতারই পরিচয়; তা ঈশ্বরের একটি বা এক গাদা সন্তান থাকুন আর নাই থাকুন।

সূরা আল-ইসরায় বলা হয়েছে:

“বলুনঃ তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্য থাকত; তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌছার পথ অন্বেষন করত।“ – সূরা ১৭:৪২

ইংরেজীতে

“Say (O Muhammad SAW to these polytheists, pagans, etc.): If there had been other âliha (gods) along with Him as they assert, then they would certainly have sought out a way to the Lord of the Throne (seeking His Pleasures and to be near to Him).”

‘Throne’ শব্দের অর্থ কিভাবে আরশ হল বুঝতে পারছি না। বিশেষজ্ঞরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে ‘Throne’ শব্দের গতানুতিক অর্থ যা, তা হলে ব্যাখ্যাটা আরো বেশী বোধগম্য হয়।

বাংলা অর্থ আরো স্পষ্ট করার দরকার। ভুল হলে বলবেন। অর্থটা এরকম যে, অন্যান্য উপাস্যরা আরশের মালিকের অন্বেষণ করত আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য লাভের আশায়। দুটি আয়াত পরস্পর বিরোধী। যদি অন্য উপাস্যরা আল্লাহর অনুগামী হয় তবে তারা কিভাবে নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যায় এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয়?

ধরে নেই, ইসলামী প্রভু আল্লাহর মত ঈশ্বরগণ ততটা খারাপ নন। তাদের মধ্যে দয়া, সহিষ্ঞুতা ইত্যাদি মহান গুণাবলী বিদ্যমান। এসব ইতিবাচক গুণাবলী সমৃদ্ধ ঈশ্বরগণ নি:সন্দেহে একাধিক বিরাজ করতে পারেন। হিন্দু ধর্মের ৩৩ কোটি দেব দেবী তো নস্যি। অসীম এই বিশ্বভ্রমান্ডে হয়ত পড়ে আছেন নাম না জানা কত ঈশ্বর!

কিন্তু বহুঈশ্বরবাদীদের কোন ক্ষমা নেই।

১.

“নিশ্চয় আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। “ – সুরা ৪:১১৬

ইংরেজীতে

“Allah forgiveth not (The sin of) joining other gods with Him; but He forgiveth whom He pleaseth other sins than this: one who joins other gods with Allah, Hath strayed far, far away (from the right)”

২.

“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।“ – সুরা ৫:৭২

ইংরেজীতে

“Verily, whosoever sets up partners in worship with Allâh, then Allâh has forbidden Paradise for him, and the Fire will be his abode. And for the Zâlimûn (polytheists and wrong doers) there are no helpers.”

৩.

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” – সুরা ৪:৪৮

ইংরেজীতে

“Verily, Allâh forgives not that partners should be set up with him in worship, but He forgives except that (anything else) to whom He pleases, and whoever sets up partners with.”

বহুঈশ্বরবাদী বা শিরককারীরা মানব হত্যাকারীদের অপেক্ষা বেশী অপরাধী এবং তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড অপেক্ষা কঠোর। [১]

তারা তো আমাদের মতই মানুষ। যে যে ধর্মের সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করে সে ধর্মেরই অনুসারী হয়। তাদের প্রতি এতটা ঘৃণা ছড়ানোর কি কারণ? খ্রিস্টকে আমাদের নবী বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে সে খ্রিস্ট আর খ্রিস্টানদের জেসাস খ্রিস্ট আকাশ-পাতাল ফারাক।

ইসলামের আবির্ভাবের সময়ে খ্রিস্টধর্ম অনেক প্রভাবশালী ছিল। আব্রাহামীয় ধর্মগুলো সে সময়ের মানুষ বরণ করে নিচ্ছিল। আর বহুঈশ্বরবাদীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল। তাই খ্রিস্টান ধর্মের অনেক কিছু মেনে নেয়া হল। কিন্তু অবলা পাগান, তাদের ক্ষমা নেই! খ্রিস্টানরাও তাদের প্রাণভরে হত্যা করেছে, করেছে মুসলিমরাও। জোর যার মুল্লুক তার।

ধর্ম নাকি সংস্কৃতি যা মেনে নিলে কোন ক্ষতি নেই। আমার মনে হয় ধর্ম ঠিক সংস্কৃতির সংজ্ঞায় পড়ে না। ধর্ম সংস্কৃতিহীন, অন্ধ এবং ভয়ংকরভাবে হিংস্র। আমি শুধু বহুঈশ্বরবাদের প্রেক্ষিতে এ কথা বলছি না, অনেক প্রসঙ্গেই এ কথা সত্য। ভবিষ্যতে আরো উদাহারণ টানব।

** জাকির নায়েকের প্রিয় অনুবাদক ইউসুফ আলির অনুবাদ অনুসরণ করা হয়েছে।
১. http://www.faithfreedom.org/faq/70.htm