পূর্ববর্তী পর্বের পর …

ধর্মীয় সহিংসতা

আমি আগের পর্বটি শেষ করেছিলাম এই বলে যে, আজ আমরা যখন সমবেতভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি, বিলুপ্তপ্রায় পান্ডা কিংবা মেরু ভল্লুকদের রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হচ্ছি, এই ষোড়শ শতকে আমাদের ‘মহা শান্তিপ্রিয়’ পূর্বপুরুষেরাই প্যারিসের রাস্তায় জীবন্ত বিড়াল দড়িতে ঝুলিয়ে দিতো, তারপর তাতে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতো। সেই জীবন্ত বিড়াল যখন আগুনে পুড়ে ব্যাথায় কোঁকাতে থাকতো, সেটা ছিলো তাদের বিনোদনের উৎস। বিড়ালের চারপাশে সমবেত জনতা হাততালি দিয়ে চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতো। তাদের চোখের সামনে অসহায় বিড়ালটি একদল পাষন্ড লোকের বিনোদনের খোড়াক যোগাতে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যেতো।

বিড়ালের দুর্ভাগ্যের খবর শুনেই যদি আপনার চোখে পানি চলে আসে তবে এক সময় হিন্দুদের একসময় খুব ভক্তিভরে পালন করা সতীদাহের কথা কি বলা যাবে? সেখানেও দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যেতো, তবে সেখানে বিড়ালের জায়গায় থাকতো জীবন্ত নারীদেহ! শুধুমাত্র ১৮১৫ সাল থেকে ১৮২৮ সালের মধ্যে ভারতবর্ষে সতীদাহের স্বীকার হয়েছে ৮১৩৫ জন নারী। এমনকি ১৯৮৭ সালেও রূপ কানোয়ার নামে একটি মেয়েকে রাজস্থানে পুড়িয়ে মারা হয়েছে ‘সতী মাতা কী জয়’ ধ্বনি দিয়ে। সারা গ্রামের মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিল ঘটনাটি – কেউ টু শব্দটি করে নি। কথিত আছে, ১৭২৪ সালে মারয়ারের রাজা অজিত সিংহের চিতায় উঠেছিল ৬৪ জন সতী, পানিতে ডুবে বুন্দির রাজা বুধ সিং মারা গেকে তার চিতায় উঠে ৮৪ জন; ১৬২০ সালে এক রাজপুত রাজা মারা গেলে তার চিতায় উঠেছিল নাকি ৭০০ জন সতী। এগুলো সবই ঘটেছিল হিন্দু ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার প্রতি অন্ধ আনুগত্যের কারণে। চিন্তা করুন পুরো ব্যাপারটা – জীবন্ত নারী মাংস জ্বলছে, ছটফট করছে, অনেক সময় বেঁধে রাখতে কষ্ট হচ্ছে, মাঝে মাঝে পালাতে চেষ্টা করছে – আফিম জাতীয় জিনিস গিলিয়ে দিয়ে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে আবার চিতায় তুলে দেওয়া হচ্ছে হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্যের দোহাই দিয়ে- কী চমৎকার মানবিকতা ছিলো সেসময় !

sati11

ছবি – হিন্দু ধর্মের সতীদাহ প্রথার শিকার হয়ে একসময় অসংখ্য নারী প্রাণ হারিয়েছিল।

তবে হিন্দু ধর্মকে আলাদাভাবে একঘরে করার কিছু নেই। সব ধর্মই কম বেশি এরকম সহিংস। ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের পবিত্রগ্রন্থের দিকে তাকালে দেখা যায়, পুরো বাইবেলটিতেই ঈশ্বরের নামে খুন, রাহাজানি, ধর্ষনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিছু উদাহরণ তো দেওয়া যেতেই পারে। যুদ্ধজয়ের পর অগনিত যুদ্ধবন্দিকে কব্জা করার পর মুসা নির্দেশ দিয়েছিলেন ঈশ্বরের আদেশ হিশেবে সমস্ত বন্দী পুরুষকে মেরে ফেলতে, আর কুমারীদের বাঁচিয়ে রাখতে যাতে তারা ইচ্ছে মত ধর্ষণ করতে পারে:

এখন তোমরা এই সব ছেলেদের এবং যারা কুমারী নয় এমন সব স্ত্রী লোকদের মেরে ফেল; কিন্তু যারা কুমারী তাদের তোমরা নিজেদের জন্য বাঁচিয়ে রাখ’ (গণনা পুস্তক, ৩১: ১৭-১৮)।

এই ভার্সের মূলকথা হল,সবাইকে মেরে ফেল, কেবল কুমারীদের বাঁচিয়ে রাখ যাতে ইচ্ছে মত ধর্ষণ করা যায়। একটি হিসেবে দেখা যায়, মুসার নির্দেশে প্রায় ১০০,০০০ জন তরুন এবং প্রায় ৬৮,০০০ অসহায় নারীকে হত্যা করা হয়েছিল[1] । এছাড়াও নিষ্ঠুর, আক্রামনাত্মক এবং অরাজক বিভিন্ন ভার্সসমূহের বিবরণ পাওয়া যায় যিশাইয় (২১: ৯), ১ বংশাবলী (২০:৩), গণনা পুস্তক (২৫: ৩-৪), বিচারকর্তৃগন (৮: ৭), গণনা পুস্তক (১৬: ৩২-৩৫), দ্বিতীয় বিবরণ (১২: ২৯-৩০), ২ বংশাবলী (১৪:৯, ১৪:১২), দ্বিতীয় বিবরণ (১১: ৪-৫), ১ শমূয়েল (৬:১৯), ডয়টারনোমি (১৩:৫-৬, ১৩:৮-৯, ১৩:১৫), ১ শমূয়েল (১৫:২-৩), ২ শমূয়েল (১২:৩১), যিশাইয় (১৩: ১৫-১৬), আদিপুস্তক (৯: ৫-৬) প্রভৃতি নানা জায়গায়।

বিশ্বাসী খ্রীষ্টানরা সাধারণতঃ বাইবেলে বর্ণিত এই ধরনের নিষ্ঠুরতা এবং অরাজগতাকে প্রত্যাখান করে বলার চেষ্টা করেন, এগুলো সব বাইবেলের পুরাতন নিয়মের (ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ) অধীন, যীশু খ্রীষ্টের আগমনের সাথে সাথেই আগের সমস্ত অরাজগতা নির্মূল হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এটি সত্য নয়। বাইবেলের নতুন নিয়মে যীশু খুব পরিস্কার করেই বলেছেন যে তিনি পূর্বতন ধর্মপ্রবর্তকদের নিয়মানুযায়ীই চালিত হবেন :

এ কথা মনে কোর না, আমি মোশির আইন-কানুন আর নবীদের লেখা বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি’ (মথি, ৫: ১৭)।

খ্রীষ্ট ধর্মের অনুসারীরা যেভাবে যীশুকে শান্তি এবং প্রেমের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন, সত্যিকারের যীশু ঠিক কতটুকু প্রেমময় এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যীশু খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন যে :

‘আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে কোর না। আমি শান্তি দিতে আসি নাই, এসেছি তলোয়ারের আইন প্রতিষ্ঠা করতে। আমি এসেছি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে দাঁড় করাতে; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি’ (মথি, ১০: ৩৪-৩৫)।

ব্যভিচার করার জন্য শুধু ব্যভিচারিনী নন, তার শিশুসন্তানদের হত্যা করতেও কার্পন্য বোধ করেন না যীশু:

‘সেইজন্য আমি তাকে বিছানায় ফেলে রাখব, আর যারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করে তারা যদি ব্যভিচার থেকে মন না ফিরায় তবে তাদের ভীষণ কষ্টের মধ্যে ফেলব। তার ছেলেমেয়েদেরও আমি মেরে ফেলব ‘(প্রকাশিত বাক্য, ২: ২২-২৩)।

 

শুধু বাইবেল নয়, মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরাণের বেশ অনেকটা জুড়েই রয়েছে অনর্থক উত্তেজক নির্দেশাবলীর ছড়াছড়ি,  সেখানে খুব স্পষ্টভাবেই আছে অমুসলিম, মুশরিক, ইহুদী, খ্রীষ্টান, কাফেরদের হত্যা এবং নির্যাতনের নির্দেশ (কোরান : ২:১৯১, ৯:৫, ৯:১২৩, ৮:৬৫, ৯:২৯, ৩:৮৫, ৫:১০, ৯:২৮, ২:১৯৩, ১৪:১৭, ৫:৩৪, ২২:১৯, ৫:৫১, ৯:২৩, ৩:২৮, ৪৮:১৩, ৬৯:৩০-৩৩, ২:২১৬, ৪৭:৪, ৮:১২, ৯:৩৯ ইত্যাদি দ্রঃ) ।

মহানবী মুহম্মদ নিজেই এ ধরণের আয়াতগুলোর সার্থকতা দিতে গিয়ে ৬২৪ খ্রীস্টাব্দে বনি কুয়ানুকা, ৬২৫ খ্রীস্টাব্দে বনি নাদির আর ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে বনি কুরাইজার ইহুদী ট্রাইবকে আক্রমণ করে তাদের হত্যা করেন। বনি কুয়ানুকার ইহুদীদের সাতশ জনকে এক সকালের মধ্যে হত্যা করতে সচেষ্ট হন[2] , আর বনি কুরাইজার প্রায় আটশ থেকে নয়শ লোককে হত্যা করেন, এমনকি তারা আত্মসমর্পণ করার পরও[3] । হত্যার ভয়াবহতা এতোই বেশি ছিলো যে, ক্যারেন আর্মস্ট্রং-এর মতো লেখিকা, যিনি মুসলিম সমাজের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় হিসবে গন্য হন, তিনি পর্যন্ত মুহম্মদের কর্মকান্ডকে নাৎসী বর্বরতার সাথে তুলনা করেছেন[4] । মহানবীর জীবনী থেকে এধরণের অনেক উদাহরণই দেওয়া যায়। যেমন, খাইবার দখলের পর মুহম্মদ (দঃ) সাফিয়া নামের ১৭ বছরের সুন্দরী ইহুদী নারীকে অধিগ্রহণ করেন, এবং তা করেন তার বাবা, মা, ভাই বোন এবং আত্মীয় স্বজনকে হত্যার পরপরই। রায়হানাকে অধিগ্রহণ করেন বনি কুরাইজা দখলের পর। মুক্তমনা সদস্য আকাশ মালিক তার ‘যে সত্য বলা হয়নি’ ই-গ্রন্থে তার এসব ‘মানবিক’ কর্মকান্ডের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন[5],

‘(মহানবীর) এই কাজকর্ম কোন ‘শান্তির’ বাণী বয়ে আনে না, বরং কোরানের ‘পরমত সহিষ্ণুতা’র যে আলামত হাজির করার চেষ্টা করেন মুসলিম স্কলারেরা, তাকে প্রতিনিয়ত যেন ব্যাঙ্গ করে।

ইবনে সাদের প্রথম দিককার জীবনী-সঙ্কলন কিতাব আত তাবাকাত (Kitaab at Tabaqaat al Kabeer) থেকে জানা যায়, মহানবী তার শেষ দশ বছরে অন্ততঃ ৭৪ টি হামলা যুদ্ধ (আরবীতে গাজওয়া) সম্পন্ন করেছিলেন[6]। আল তাবারি নবী মুহাম্মদ (দঃ) তাঁর জীবনে ঘটা যে ষাটটি যুদ্ধের কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন তার ‘তারিক আল রসুল ওয়া আল মুল্লুক’ গ্রন্থে, এর মধ্যে উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ ছাড়া সবগুলোই ছিল আক্রমণাত্মক[7]। মুহম্মদের প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাক তার ‘সিরাত রসুলাল্লাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, মুসলমানরা বানু হাওয়াজিন গোত্রকে পরাজিত করার পরে প্রায় ৬ হাজার নারী ও শিশুকে মুসলমানদের হাতে। যুদ্ধ থেকে সংগৃহীত নারীরা ইসলামী যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টিত হয়। যেমন, রায়হানা নামের এক সুন্দরী ইহুদিনীকে নবী নিজের জন্যেই নির্বাচিত করেন। রায়তা নামের সুন্দরী বন্দিনীটি হযরত আলী তার জন্য নেন, জয়নাব নামের আরেক যুদ্ধবন্দী নারী পড়ে আবার হযরত ওসমানের ভাগে। হযরত ওমর আবার তিনি নিজে না নিয়ে ভোগ করার জন্যে তা প্রিয় পুত্র আব্দুল্লাহর হাতে তুলে দেন বলে কথিত আছে। শুধু রায়হানা নয়, জাওয়াহিরা এবং সাফিয়া নামের আরও দুই রক্ষিতা ছিল নবীর। জওয়াহিরা তার হাতে আসে বানু আল-মুস্তালিক অভিযান থেকে, সাফিয়া আসে খায়বারের বানু নাজির গোত্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান থেকে। এমনকি কিছু হাদিসে উল্লিখিত আছে যে, যুদ্ধজয়ের পর স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষনেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন মহানবী[8]।

মহাভারত থেকে আমরা পাই কীভাবে শ্রীকৃষ্ণ তার সখা অর্জুনকে ভাতৃঘাতি যুদ্ধে প্ররোচিত করেছিলেন। গুরুজ্ঞাতিদের বিনা দ্বিধায় হত্যা করতে উৎসাহ দিতে গিয়ে কৃষ্ণ অর্জুনকে সে সময় বলেছিলেন[9],

দেহিনোহস্মিন যথা দেহে কৌমারং যৌবনাং জরা।

তথা দেহান্তরপ্রাপ্তির্ধীরস্তত্র ন মুহাতি।।

অর্থাৎ, দেহীর দেহে যেমন কৈশোর, যৌবন, জরা অনিবার্য, তেমনি পরজন্মে ভিন্ন দেহপ্রাপ্তিও অনিবার্য, সুস্থিত ব্যক্তিরা তাতে মোহগ্রস্থ হয় না। এই মূল বক্তব্যকে কৃষ্ণ আরো পল্লবিত করে অর্জুনকে বলেছিলেন, আত্মা অবিনাশী, এর জন্ম মৃত্যু নেই, ইনি কাউকে হত্যা করেননা, বা কারো দ্বারা হত হন না। ইনি অক্ষয় ও অনাদি। যে এ সত্য জেনেছে, সে কাউকে প্রকৃতপক্ষে হনন করতে পারে না। গীতায় বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের মুখঃসৃত বিখ্যাত শ্লোকটি এখানে প্রাসঙ্গিক –

বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা-
ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী।।

নোইনং ছিদান্তি শস্ত্রানি নৈনং দহতি পাবকঃ।
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ।।

অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশোষ্য এব্ব চ।
নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থানুরচলোহইয়ং সনাতনঃ।।

অব্যক্তোহয়মচিন্ত্যেহয়মবিকার্যোহয়মুচ্যতে।
তস্মাদেবং বিদিত্বৈনং নানুশোচিতুমহর্ষি।

অর্থাৎ, মানুষেরা যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নূতন বস্ত্র পরিধান করে, আত্মা তেমনি জীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে নূতন শরীর গ্রহণ করে। একে শস্ত্র ছিন্ন করতে পারে না, অগ্নি দগ্ধ করতে পারে না,জল ভেজাতে পারে না, বাতাস শুকোতে পারে না। এ অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য, অশোষ্য, শাশ্বত, সর্বজ্ঞ, স্থির, অচল এবং সনাতন। ভাষার অতীত, চিন্তার অতীত এবং বিকারহীন বলে কথিত। এগুলো জানবার পরে, হে অর্জুন – তুমি আর শোক করতে পার না।এভাবেই শ্রকৃষ্ণ বৈধতা দিতে চেয়েছেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ আর পাইকারী প্রাণনাশকে।

গনহত্যা কিংবা যুদ্ধবাজির কথা যদি বাদও দেই, নৈতিকতা কিংবা মূল্যবোধের ধারক হিসেবেও আজ তেমন উন্নত কিছু মনে হবে না আজ হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ কিংবা পুরাণগুলোকে। কিছুদিন আগে রণদীপ বসু মুক্তমনায় আট পর্বে লিখেছিলেন, অস্পৃশ্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং একজন বাবাসাহেব[10] নামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সিরিজ। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন,

পৃথিবীতে যতগুলো কথিত ধর্মগ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে মনে হয় অন্যতম বর্বর, নীতিহীন, শঠতা আর অমানবিক প্রতারণায় পরিপূর্ণ গ্রন্থটির নাম হচ্ছে হিন্দুদের ‘মনুস্মৃতি’ বা ‘মনুসংহিতা’।

কথাটি মিথ্যে নয়। এই মনুসংহিতা থেকে আমরা পাই- মানুষের সমৃদ্ধি কামনায় পরমেশ্বর নিজের মুখ থেকে ব্রাক্ষ্মণ, বাহু থকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য, আর পা থেকে শুদ্র সৃষ্টি করেছিলেন (১:৩১)। একই কথা বলা হয়েছে অন্য শ্লোকেও –

সর্বস্যাস্য তু সর্গস্য গুপ্ত্যর্থং স মহাদ্যুতিঃ।
মুখবাহুরুপজ্জানাং পৃথক্ কর্মাণ্যকল্পয়ৎ।।(১:৮৭)

অর্থাৎ, এই সকল সৃষ্টির অর্থাৎ ত্রিভুবনের রক্ষার জন্য মহাতেজযুক্ত প্রজাপতি ব্রহ্মা নিজের মুখ, বাহু, উরু এবং পাদ- এই চারটি অঙ্গ থেকে জাত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের পৃথক পৃথক কার্যের ব্যবস্থা করে দিলেন।

হিন্দুরা জোর গলায় বলেন, ঈশ্বরের চোখে নাকি সবাই সমান, অথচ, তাদের ধর্মগ্রন্থেই আছে ব্রাক্ষ্মণদের মাথা থেকে আর শুদ্রদের পা থেকে তৈরী করেছিলেন মহান ঈশ্বর! মনু বলেছেন- দাসত্বের কাজ নির্বাহ করার জন্যই বিধাতা শুদ্রদের সৃষ্টি করেছিলেন (৮:৪১৩)। এই সমস্ত নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বাসার সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে চলে যাওয়ার পর গঙ্গা-জল ছিটিয়ে গৃহকে ‘পবিত্র’ করা হয়। শ্রী এম.সি.রাজার কথায়, ‘আপনি বাড়ীতে কুকুর-বিড়ালের চাষ করতে পারেন, গো-মুত্র পান করতে পারেন, এমনকি পাপ দূর করার জন্য সারা গায়ে গোবর লেপতে পারেন, কিন্তু নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ছায়াটি পর্যন্ত আপনি মারাতে পারবেন না’ ! মনুসংহিতার দৃষ্টিতে শুদ্রদের উপার্জিত ধন সম্পত্তি তাদের ভোগের ও অধিকার নেই। সব উপার্জিত ধন দাস-মালিকেরাই গ্রহণ করবে -এই ছিল মনুর বিধান – ‘ন হি তস্যাস্তি কিঞ্চিত স্বং ভর্ত্তৃহার্যধনো হি সঃ’ (৮:৪১৬)। শুদ্ররা ছিল বঞ্চণার করুনতম নিদর্শন; তাদের না ছিল নাগরিক অধিকার, না ছিল ধর্মীয় বা অর্থনৈতিক অধিকার। শুদ্রদের যাতে অন্য তিন বর্ণ থেকে আলাদা করে চেনা যায় এবং শুদ্ররা যেন প্রতিটি মুহূর্তে মনে রাখে যে তিন বর্ণের মানুষের ক্রীতদাস হয়ে সেবা করবার জন্যই তাদের জন্ম। তিন বর্ণের মানুষদের থেকে শুদ্ররা যে ভিন্নতর জীব, মনুষ্যেতর জীব তা জানানোর জন্য প্রতি মাসে মাথার সব চুল কামিয়ে ফেলবার নির্দেশ দিয়েছেন মনু (৫:১৪০)।

শুধু মনুসংহিতা নয়, হিন্দুদের পূজনীয় মহাকাব্যগুলোতেও বর্ণবাদের ছাপ স্পষ্ট। মহাভারতে আমরা দেখি নিষাদ বালক একলব্যকে দ্রোনাচার্য ধনুর্বিদ্যা শিখাতে অস্বীকার করেছিলেন, কেবল একলব্য ছোট জাতের ছিলো বলেই। পরে একলব্য নিজে নিকেই অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শি হয়ে উঠলে দ্রোণ নিজের প্রিয় ছাত্র অর্জুনকে উপরে রাখতে ‘গুরু দক্ষিণা’ হিসেবে বুড়ো আঙ্গুল কেটে নেন। এ থেকে পরিস্কার যে, হিন্দু ধর্মের নৈতিকতা অনুযায়ী ছোটজাতের লোকজনের বিদ্যাচর্চা করা ঠিক না। বুড়া আঙ্গুল কাটা যায় তাতে। আবার রামায়নে আমরা দেখি, তপস্যা করার তথা বেদ পাঠ করার অপরাধে রাম শম্বুক নামের এক শুদ্রের শিরোচ্ছেদ করেছিল। এই ঘটনা হিন্দুদের ‘রামরাজ্যের’ প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরে।

নারীদের সম্পর্কেও উচ্চারিত হয়েছে চরম অবমাননাকর কিছু শ্লোক। মনুর দৃষ্টিতে নারী স্বভাবব্যভিচারিণী, কামপরায়ণা; কাম, ক্রোধ, পরহিংসা, কুটিলতা ইত্যাদি যত খারাপ দোষ আছে, সবই নারীর বৈশিষ্ট্য, এসবই দিয়ে নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে[11]! যেমন, মনুসংহিতার একটি শ্লোকে (২: ২১৩)বলা হয়েছে –

স্বভাব এষ নারীণাং নরাণামিহ্ দূষণম্।
অতোহর্থান্ন প্রমাদ্যন্তি প্রমদাসু বিপশ্চিতঃ।।

অর্থাৎ, ইহলোকে (শৃঙ্গার চেষ্টার দ্বারা মোহিত করে) পুরুষদের দূষিত করাই নারীদের স্বভাব; এই কারণে পণ্ডিতেরা স্ত্রীলোকসম্বন্ধে কখনোই অনবধান হন না।

আরো বলা হয়েছে –

মাত্রা স্বস্রা দুহিত্রা বা না বিবিক্তাসনো ভবেৎ।
বলবানিন্দ্রিয়গ্রামো বিদ্বাংসমপি কর্ষতি।। (২:২১৫)

অর্থাৎ, মাতা, ভগিনী বা কন্যার সাথে কোনও পুরুষ নির্জন গৃহাদিতে বাস করবে না, কারণ এদের চিত্ত এতোই চঞ্চল যে, এরা বিদ্বান্ ব্যক্তিকেও আকর্ষণ করে কামের বশবর্তী করে তোলে।

মনু সংহিতা মতে, নারীর গৃহকর্ম এবং সন্তান উৎপাদন (৯:২৬)। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যই নারী এবং সন্তান উৎপাদনার্থে পুরুষ সৃষ্টি হয়েছে (৯:৯৬)। নারী মন্ত্রহীন, অশুভ (৯:১৮), নারীদের জন্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত-অমন্ত্রক (২:৬৬); কন্যা, যুবতী, রোগাদি পীড়িত ব্যক্তির হোম নিষিদ্ধ এবং তা করলে তারা নরকে পতিত হয় (১১:৩৭)! স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে –

বিশীলঃ কামবৃত্তো বা গুণৈর্বা পরিবর্জিতঃ
উপচর্যঃ স্ত্রিয়া সাধ্ব্যা সততং দেববৎ পতিঃ॥ (৫:১৫৪)

বাংলা করলে দাঁড়ায়, স্বামী দুশ্চরিত্র, কামুক বা নির্গুণ হলেও তিনি সাধ্বী স্ত্রী কর্তৃক সর্বদা দেবতার ন্যায় সেব্য।

কোনো নারী (স্ত্রী) যদি স্বামীকে অবহেলা করে, ব্যভিচারিণী হলে সংসারে তো নিন্দিত হবেই সাথে-সাথে যক্ষা, কুষ্ঠ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়, শুধু তাই নয় পরজন্মে শৃগালের গর্ভে জন্ম নিবে সেই নারী (৫:১৬৩-১৬৪); শুধু স্বামীর সেবার মাধ্যমেই নারী স্বর্গে যাবে (৫:১৫৫)। সাধ্বী নারী কখনো জীবিত অথবা মৃত স্বামীর অপ্রিয় কিছু করবেন না (৫:১৫৬)। স্বামী মারা গেলে স্ত্রী সারা জীবন ফলমূল খেয়ে দেহ ক্ষয় করবেন, কিন্তু অন্য পুরুষের নামোচ্চারণ করবেন না (৫:১৫৭)। অথচ স্ত্রী মারা গেলে দাহ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করেই স্বামী আবার দার পরিগ্রহ করবেন (৫:১৬৮)।

ধরণের অসংখ্য বিভৎস এবং অমানবিক ঘটনা ছড়িয়ে আছে ধর্মগ্রন্থের পাতায় পাতায়, যেগুলোকে অহরহ ‘নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের সার্বজনীন উৎস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটি নিঃসন্দেহ যে, যীশু, মূসা কিংবা মুহম্মদ ‘মানবিক’ কাজের যে সমস্ত নমুনা ধর্মগ্রন্থের পাতায় রেখে গেছেন, তার চাইতে আমরা আজ অনেক বেশি মানবিক জীবন যাপন করছি। রামের সেই তথাকথিত ‘রামরাজ্য’ কিংবা ‘মনুরাজ্য’র চেয়ে আমরা আজ ভাল আছি একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

তবে যে ব্যাপারটি বোঝা প্রয়োজন তা হল, ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত এবং নবী পয়গম্বরদের সে সময়কার ভায়োলেন্সগুলোকে কেবল ধর্মগ্রন্থ থেকে ঢালাওভাবে আয়াত তুলে তুলে সমালোচনা করার পাশাপাশি এর নৃতাত্ত্বিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি বিবর্তনীয় বিশ্লেষণও কিন্তু হাজির করা প্রয়োজন। নইলে বিশ্লেষণ কিন্তু অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। আমি আমার ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামের একটি প্রবন্ধে এ নিয়ে কিছুটা আলোচনা করেছিলাম। আমি প্রবন্ধটিতে বলেছিলাম, মানুষ আসলে আদিমকাল থেকে বহু সংঘাত, মারামারি এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌছেছে। একটা সময় সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করাটা ছিল মানব জাতির টিকে থাকার ক্ষেত্রে অনেক বড় নিয়ামক। যে গোত্রে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিতে পারা গিয়েছিল যে যোদ্ধারা সাহসের সাথে যুদ্ধ করে মারা গেলে পরলোকে গিয়ে পাবে অফুরন্ত সুখ, সাচ্ছ্বন্দ্য, হুর পরী উদ্ভিন্নযৌবনা চিরকুমারী অপ্সরা, (আর বেঁচে থাকলে তো আছেই সাহসী যোদ্ধার বিশাল সম্মান আর পুরস্কার) – তারা হয়ত অনেক সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছে এবং নিজেদের এই ‘যুদ্ধাংদেহী জিন’ (আক্ষরিক অর্থে অবশ্যই নয়) পরবর্তী প্রজন্মে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেছে। মানব সভ্যতাকে অনেকে শিশুদের মানসজগতের সাথে তুলনা করেন। শিশুদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই একটা সময় পর্যন্ত অভিভাবকদের সমস্ত কথা নির্দ্বিধায় মেনে চলতে হয় –এ আমরা জানি। ধরা যাক একটা শিশু চুলায় হাত দিতে গেল, ওমনি তার মা বলে উঠল – চুলায় হাত দেয় না – ওটা গরম! শিশুটা সেটা শুনে আর হাত দিল না, বরং সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিলো। মার কথা শুনতে হবে – এই বিশ্বাস পরম্পরায় আমরা বহন করি – নইলে যে আমরা টিকে থাকতে পারবো না, পারতাম না। এখন কথা হচ্ছে – সেই ভাল মা-ই যখন অসংখ্য ভাল উপদেশের পাশাপাশি আবার কিছু মন্দ বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন উপদেশও দেয় – ‘শনিবার ছাগল বলি না দিলে অমঙ্গল হবে’, কিংবা ‘রসগোল্লা খেয়ে অংক পরীক্ষা দিতে যেও না – গেলে গোল্লা পাবে’ জাতীয় – তখন শিশুর পক্ষে সম্ভব হয় না সেই মন্দ বিশ্বাসকে অন্য দশটা বিশ্বাস কিংবা ভাল উপদেশ থেকে আলাদা করার। সেই মন্দবিশ্বাসও বংশপরম্পরায় সে বহন করতে থাকে অবলীলায়। সব বিশ্বাস খারাপ নয়, কিন্তু অসংখ্য মন্দ বিশ্বাস হয়ত অনেক সময় জন্ম দেয় ‘বিশ্বাসের ভাইরাসের‘। এগুলো একটা সময় প্রগতিকে থামাতে চায়, সভ্যতাকে ধ্ব্বংস করে। যেমন, ডাইনী পোড়ানো, সতীদাহ, বিধর্মী এবং কাফেরদের প্রতি ঘৃণা, মুরতাদদের হত্যা এগুলোর কথা বলা যায়।

যা হোক, সার্বিকভাবে ভায়োলেন্স কতটুকু কমেছে সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, বহুদিন ধরে চলে আসা বর্বর কুৎসিৎ রীতি নীতি আমরা অনেকাংশেই ত্যাগ করতে পেরেছি, পেরেছি বিশ্বাসের ভাইরাসের বিভিন্ন প্রতিষেধক তৈরি করতে। নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে আমরা আজ সচেতন হয়েছি।ধর্মানুমোদিত না হবার পরেও (মনে রাখতে হবে, কোন ধর্মেই দাসপ্রথাকে বিলোপের আহবান জানানো হয়নি) আমরা পৃথিবীতে দাসমুক্তি ঘটাতে পেরেছি,আধুনিক গণতান্ত্রিক আইনে লিঙ্গ ও বর্ণের পার্থক্য কিংবা জাতিভেদ বিলোপ করতে পেরেছি। মেয়েরা অফিস আদালতে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে, আজ কোন নারীকে আর মৃত স্বামীর চিতায় প্রাণ দিতে হয় না, কিংবা বেদ পড়ার জন্য শম্বুকের মত কোন হতভাগ্য শুদ্রকে। চুরি করার জন্য হাত কেটে ফেলার মত বিধান কিংবা ব্যাভিচারের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যার মত কিছু আইন বর্বরতার সাক্ষ্য হিসেবে এখনো দু চারটি সনাতন ইসলামী রাষ্ট্রে দেখা গেলেও সার্বিকভাবে সাড়া পৃথিবীতে এ ধরণের বর্বর আইনের চর্চা কমে এসেছে। এমনকি বাংলাদেশের হাইকোর্টে সম্প্রতি ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, এ আমরা পত্রিকায় ক’দিন আগেই দেখলাম[12]। ইন্টারনেটের কল্যাণে ধর্মীয় নীতি আর আইন কানুনগুলোর সমালোচনা এমনকি বাংলা ব্লগসাইটগুলোতেও খুব উজ্জ্বলভাবেই লক্ষ্যনীয়। আর পশ্চিমে তো এ ধরণের বর্বর প্রথা আর অমানবিক আইন কানুন বহুদিন ধরেই অনুপস্থিত;এমনকি হত্যা, খুন খারাবির মত নৃশংসতাও উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে কমে এসেছে বলে অনেক গবেষক মনে করেন আজ। স্টিভেন পিঙ্কার তার ‘হিস্ট্রি অব ভায়োলেন্স’ প্রবন্ধে বলেন[13] –

Social histories of the West provide evidence of numerous barbaric practices that became obsolete in the last five centuries, such as slavery, amputation, blinding, branding, flaying, disembowelment, burning at the stake, breaking on the wheel, and so on. Meanwhile, for another kind of violence—homicide—the data are abundant and striking. The criminologist Manuel Eisner has assembled hundreds of homicide estimates from Western European localities that kept records at some point between 1200 and the mid-1990s. In every country he analyzed, murder rates declined steeply—for example, from 24 homicides per 100,000 Englishmen in the fourteenth century to 0.6 per 100,000 by the early 1960s.

মিথ অব নোবেল স্যাভেজ

কিন্তু যত আশাবাদীই হই কিংবা হওয়ার অভিনয় করি নাকেন কেন, সত্যি বলতে কি মানুষের বেঁচে থাকার ইতিহাস আসলে শেষ পর্যন্ত সহিংসতারই ইতিহাস। যে কোন প্রাচীন ইতিহাসভিত্তিক জনপ্রিয় চলচিত্রগুলোতে চোখ রাখলেই দেখা যায় এক রাজা আরেক রাজার সাথে যুদ্ধ করছে,কেউ ষড়যন্ত্র করছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য, কেউবা পার্শ্ববর্তী রাজ্য আক্রমণের জন্য মুখিয়ে আছে, কখনো গ্ল্যাডিয়েটরদের ক্ষুদার্থ সিংহের খাঁচায়, কখনো বা নরবলি দেয়া হয়েছে কিংবা কুমারী নারী উৎসর্গ করা হয়েছে রাজ্যের সমৃদ্ধি কামনায়। আমরা ইতিহাসের সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে যত পেছনের দিকেই যাই না কেন, এ ধরনের যুদ্ধ এবং অমানবিক নৃশংসতার হাত থেকে আমরা নিস্তার পাই না। আমাদের আদিম পূর্বপুরুষেরা কেউ বা যুদ্ধ করেছে লাঠি সটা দিয়ে, কেউ বা বল্লম দিয়ে, কেউ বা তীর ধনুক দিয়ে কিংবা কেউ বুমেরাং ব্যবহার করে। আদিম গুহাচিত্রগুলোতে চোখ রাখলেই দেখা যায় তীক্ষ্ণ সেসব অস্ত্র ব্যবহার করে তারা পশু শিকার করেছে, কখনো বা হানাহানি মারামারি করেছে নিজেদের মধ্যেই। তারপরেও আমাদের স্কুল কলেজের বই পত্রে শেখানো হয়েছে কিংবা জনপ্রিয় মিডিয়ায় বহুদিন ধরে বোঝানো হয়েছে আমরা নাকি খুব শান্তিপ্রিয় জীব। তারা পশুদের মত নির্বিচারে হানাহানি মারামারি করে না। আসলে মানুষ খুব ‘শান্তিপ্রিয় প্রজাতি’ – সমাজে গেড়ে বসা এই মিথটিকে স্টিভেন পিঙ্কার তার ব্ল্যাঙ্ক স্লেট চিহ্নিত করেছেন ‘মিথ অব নোবেল স্যাভেজ’ (Myth of Nobel Savage)হিসেবে। অবশ্য এই অযাচিত মিথটিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে নৃতাত্ত্বিক এবং সমাজতাত্ত্বিকদের অবদানও ফেলে দেবার মতো নয়। তারা প্রথম থেকেই উৎসাহী ছিলেন আমাদের অন্ধকার জীবনের ইতিবৃত্তগুলো বেমালুম চেপে গিয়ে একধরণের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি জনমানসে প্রোথিত করতে। সে সব ‘শান্তিকামী নৃতত্ত্ববিদেরা’ এক সময় সোৎসাহে বলে বেড়াতেন যে, ছোট খাট যুদ্ধ টুদ্ধ হলেও মানবেতিহাসের পাতায় কোন নরভক্ষণের (canabalism) দৃষ্টান্ত নেই। তারপর তারা নিজেরাই নিজেদের কথা গিলতে শুরু করলেন যখন সহিংসতা,হানাহানি, যুদ্ধ, হত্যা এবং এমনকি নরভক্ষণেরও গণ্ডায় গণ্ডায় আলামত বেরিয়ে আসতে শুরু করলো। প্রাথমিক একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ পাওয়া যায় প্রায় আটশ হাজার বছর আগেকার পাওয়া ফসিলের আলামত থেকে। অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্রিস্টি জ়ি টার্নার বহু পরিত্যক্ত মানব হাড়-গোড় বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, সেগুলো আসলে রান্না করে ভক্ষণ করা হয়েছিলো, আর তা করেছিলো সমসাময়িক মানুষেরাই। তাদের সে সময়কার থালা বাসন এবং অন্যান্য রন্ধন সামগ্রীতেও মায়োগ্লোবিনের (পেশী প্রোটিন) নিদর্শন স্পষ্ট[14]।এমনকি আমরা হোমোস্যাপিয়েন্সরা আজ থেকে ৫০,০০০ বছর আগে নিয়ান্ডার্থালদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেলাম এবং সম্ভবত তাদের অবলুপ্তির কারণ ছিলাম আমরাই – শান্তিপ্রিয় আধুনিক মানবদের পুর্বসূরীরা[15]। ইরাকের ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে শানিদার গুহায় পাওয়া বিভিন্ন আলামত আর রালফ সোলেকি[16] এবং স্টিভেন চার্চিলের গবেষণা থেকে জানা গেছে সম্ভবতঃ আধুনিক হোমোস্যাপিয়েন্স মানুষের নিক্ষপ্ত অস্ত্র সস্ত্রের আঘাতেই নিয়ান্ডার্থালদের মৃত্যু হয়। শানিদার গুহায় পাওয়া নিয়ান্ডার্থালদের ফসিলের ক্ষতের সাথে আধুনিক মানুষের হাত থেকে নিক্ষিপ্ত হালকা বর্শার আঘাতের সামঞ্জস্য বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়[17]। শুধু তাই নয়,গবেষক ফার্নান্ডো রেমিরেস রোসির গবেষণা থেকে জানা গেছে,কিছু জায়গায় যুদ্ধজয়ের পরে হোমোস্যাপিয়েন্সরা ঘটা করে নিয়ান্ডার্থালদের মাংস ভক্ষণ করে উৎসব পালন করতো। অধ্যাপক রোসি স্পষ্ট করেই বলেন, ‘এটা পরিস্কার যে, আধুনিক মানুষেরা নিয়ান্ডার্থালদের খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করেছিলো’[18]।

nean_derthal_churchil1

neanderthal_jaws

ছবি – (ক) স্টিভেন চার্চিলের হাতে দুই ধরণের অস্ত্রের মডেল । বাম হাতে নিয়ানডার্থালদের ভারী অস্ত্র, আর ডান হাতে আদিম আধুনিক মানুষের হাল্কা বর্শা জাতীয় অস্ত্র, যার আঘাতের ছাপ নিয়ান্ডার্থালদের ফসিলে স্পষ্ট। (খ) ফার্নান্ডো রেমিরেস রোসির আলামত থেকে স্পষ্ট যে, হোমোস্যাপিয়েন্সরা নিয়ান্ডার্থালদের সাথে কেবল যুদ্ধই করেনি, তাদের মাংসও ভক্ষণ করেছিলো একসময়।

পুরুষালী সহিংসতা

আমরা জানলাম মানব বিবর্তনের ইতিহাস আসলে সহিংসতার ইতিহাস; কিন্তু এর মধ্যে আবার পুরুষেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি সহিংস, এবং এটার কারণ আমাদের বৈজ্ঞানিকভাবেই বিবর্তনীয় পথ পরিক্রমার আলোকে খুঁজতে হবে। বিবর্তনীয় বিজ্ঞানীরা বলেন, পুরুষেরা এক সময় ছিলো হান্টার বা শিকারী, আর মেয়েরা ফলমূল সংগ্রাহক। প্রয়োজনের তাগিদেই একটা সময় পুরুষদের একে অন্যের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে; অন্য গোত্রের সাথে মারামারি হানাহানি করতে হয়েছে; নিজের সাম্রাজ্য বাড়াতে হয়েছে; অস্ত্র চালাতে হয়েছে। তাদেরকে কারিগরী বিষয়ে বেশি জড়িত হতে হয়েছে। আদিম সমাজে অস্ত্র চালনা, করা শিকারে পারদর্শী হওয়াকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার অন্যতম নিয়ামক হিসবে চিহ্নিত করা হত। যারা এগুলোতে পারদর্শী হয়ে উঠেছে তারাই অধিক হারে সন্তান সন্ততি এ পৃথিবীতে রেখে যেতে পেরেছে, যারা এগুলো পারেনি তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যাবে পুরুষেরা শুধু আত্মরক্ষা করতেই যুদ্ধ করেনি, যুদ্ধ করেছে সাম্রাজ্য বাড়াতে আর সম্পত্তি আর নারীর দখল নিতে। জন টুবি, লিডা কসমাইডস, রিচার্ড র‌্যাংহাম তাদের বেশ কিছু গবেষণায় দেখিয়েছেন, যে ট্রাইবাল সোসাইটিগুলোতে সহিংসতা শক্তিশালী পুরুষদের উপযোগিতা দিয়েছিল টিকে থাকতে, এবং তারা সেসময় যুদ্ধ করতো নারীর দখল নিতে[19]। এমনকি এখনকয়ার ট্রাইবাল সমাজগুলোতে এই মানসিকতার প্রভাব বিরল নয়। এর বাস্তব প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পেয়ছেন ভেনিজুয়ালার আদিম ট্রাইব ইয়ানোমামো (Ya̧nomamö)দের নিয়ে গবেষণা করে। নৃতত্ত্ববিদ নেপোলিয়ন চ্যাংনন এই ট্রাইব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে খুব অবাক হয়েই লক্ষ্য করেন,

‘এরা শুধু সম্পদ আহরণের জন্য যুদ্ধ করেনা, এরা যুদ্ধ করে নারীদের উপর অধিকার নিতেও’।

দেখা গেল ট্রাইবে যতবেশি শক্তিশালী এবং সমর-দক্ষ পুরুষ পাওয়া যাচ্ছে, তত বেশি তারা নারীদের উপর অধিকার নিতে পেরেছে।

yacca7nomamo

ছবি – ইয়ানোমামো গোত্রের পুরুষেরা পার্শ্ববর্তী গ্রাম আক্রমনের আগে এভাবেই সমরশিক্ষা গ্রহণ এবং নিজেদের মধ্যে প্রদর্শন করে থাকে। (ছবি – সায়েন্টিফিক আমেরিকানের সৌজন্যে)

আসলে যতই অস্বীকার করা হোক না কেন, কিংবা শুনতে আমাদের জন্য যতই অস্বস্তি লাগুক না কেন, গবেষকরা ইতিহাসের পাতা পর্যালোচনা আর বিশ্লেষন করে বলেন, বিশেষতঃ প্রাককৃষিপূর্ব সমাজে সহিংসতা এবং আগ্রাসনের মাধ্যমে জোর করে একাধিক নারীদের উপর দখল নিয়ে পুরুষেরা নিজেদের জিন ভবিষ্যত প্রজন্মে ছড়িয়ে দিয়েছিল। শুধু প্রাককৃষিপূর্ব সময়ে নয়, তার পরবর্তী সময়গুলোতেও ভায়োলেন্সের ছাপ প্রবলভাবেই বিদ্যমান। ইতিহাসে চেঙ্গিস খানের (১১৬৭-১২২৭) মতো যুদ্ধবাজেরা একেকটি একটি বড় উদাহরণ। চেঙ্গিস খান শুধু যুদ্ধই করতেন না, যে সাম্রাজ্যই দখল করতেন, সেখানকার নারীদের ভোগ করতেন উৎসাহের সাথে। তিনি বলতেন[20],

সর্বোত্তম আনন্দজনক ব্যাপার নিহিত রয়েছে শত্রুকে ধ্বংসের মধ্যে, তাদেরকে তাড়া করার মধ্যে আর তাদের যাবতীয় সম্পদ লুটপাটের মধ্যে, ধ্বংসের আর্তনাদে আক্রান্তদের আপনজনের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরা অবলোকন করতে, তাদের অশ্বের দখল নিতে, আর তাদের স্ত্রী এবং কন্যাদের নগ্নশরীরের উপর উপগত হতে।

পুরুষদের এই সনাতন আগ্রাসী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় আজকের সমাজে ঘটা যুদ্ধের পরিসংখ্যানেও। এখনো চলমান ঘটনায় চোখ রাখলে দেখা যাবে – প্রতিটি যুদ্ধেই দেখা যায় অসহায় নারীরা হচ্ছে যৌননির্যাতনের প্রথম এবং প্রধান শিকার। বাংলাদেশে, বসনিয়া, রুয়ান্ডা, আলবেনিয়া, কঙ্গো, বুরুন্ডিয়া, প্যালেস্টাইন, ইরাক, ইরান সহ প্রতিটি যুদ্ধের ঘটনাতেই সেই নগ্ন সত্যই বেরিয়ে আসে যে, এমনকি আধুনিক যুগেও নারীরাই থাকে যুদ্ধের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু।

শুধু আধুনিক যুগই বা বলি কেন, ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, যৌনতার কারণে পৃথিবীতে যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং রক্তপাতও কম হয়নি। তার উল্লেখ পাওয়া যায় সাহিত্যে, ইতিহাসে, আর শিল্পীর ভাস্কর্যে। পশ্চিমা বিশ্বে হোমারের সেই প্রাচীন সাহিত্য ইলিয়াড শুরুই হয়েছিলো একটি যুদ্ধকে কেন্দ্র করে, আর সেই যুদ্ধ আবার হয়েছিলো একটি নারীকে অপহরণের কারণে – সেই হেলেন; হেলেন অব ট্রয়। আমাদের সংস্কৃতিতেও প্রাচীন রামায়নের কাহিনী আমরা জানি – রাম-রাবণের যুদ্ধ হয়েছিলো সীতাকে অপহরণের জন্য। এ ধরণের সাহিত্যের উপকরণ এবং উপকথা সব সংস্কৃতিতেই কমবেশি ছড়িয়ে আছে। এ থেকে একটি নিষ্ঠুর সত্য বেরিয়ে আসে – ব্যাপক আকারে জিন সঞ্চালনের জন্য যুদ্ধ পুরুষদের একটি আকর্ষনীয় মাধ্যম ছিলো প্রতিটি যুগেই।

knight_and_day_08

ছবি – জেমস বণ্ড কিংবা নাইট এণ্ড ডের মতো ছবিগুলোতে প্রদর্শিত পুরুষালী, সহিংসতা, ক্ষিপ্রতা এবং দৈহিক উৎকর্ষতা কি আসলে বির্তনীয় মনোবিজ্ঞানজাত চাহিদার স্বপ্নীল রূপায়ন?

আজ আমরা যারা পৃথিবীতে বাস করছি, শান্তি-প্রিয় নিরুপদ্রুপ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, তারা সবাই কিন্তু সেই আদিম সমাজের সহিংস পূর্বপুরুষদের বংশধর, যারা অস্ত্র চালনায় ছিলো দক্ষ আর সুচারু এবং যারা সাহসিকতা, বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর সমরদক্ষতার মাধ্যমে স্বীয় গোত্রকে দিয়েছিলো বাড়তি নিরাপত্তা, আর নিঃসন্দেহে অর্জন করতে পেরেছিল বহু নারীর প্রণয় এবং অনুরাগ। ঠিক সেজন্যই পুরুষদের এই ‘পুরুষালি’ গুণগুলো সার্বজনীনভাবেই নারীদের কাছে প্রত্যাশিত গুণ হিসেবে স্বীকৃত। বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক সলোমন আ্যাশ সেজন্যই বলেন, ‘আমরা এমন কোন সমাজের কথা জানি না, যেখানে সাহসিকতাকে হেয় করা হয়, আর ভীরুতাকে সম্মানিত করা হয়’। এ থেকে বোঝা যায় যে, সাহসিকতার মত গুণগুলোকে আমাদের আদিম পুর্বপুরুষেরা যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের অজান্তেই নির্বাচিত করেছিলো। এখনো সেই গুণগুলোর উৎকর্ষতার চর্চাকে ইনিয়ে বিনিয়ে মহিমান্বিত করার অফুরন্ত দৃষ্টান্ত দেখি সমাজে। জেমসবন্ড, মিশন ইম্পসিবল কিংবা আজকের ‘নাইট এণ্ড ডে’র মতো চলচিত্রগুলো ফুলিয়ে ফাপিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যার কেন্দ্রে থাকে প্রায় অমানবীয় ক্ষমতাসম্পন্ন হিরোইক ইমেজের একজন পুরুষালী চরিত্র, যে অসামান্য বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর সাহসের মাধ্যমে একে একে হাজারো বিপদ পার হয়ে চলেছে, আর অসংখ্য নারীর মন জয় করে চলেছে।

চলবে…

——————————————————————————–

তথ্যসূত্রঃ

[1] Moses commands the murder of approximately 100,000 young males and, roughly, 68,000 helpless women.

Consider women and children of your own family: No matter how sick they may lay, or how they may go against a religion, how would you feel if a man named Moses, claiming to speak for God, sent men into your house and hacked to pieces the women and male children? Also, how would you react if they spotted a female child, dragged her off with them to do as they please with her? Note that these innocent virgins served for their own sexual pleasures (Ref. Moses’ Mass Murder, Dark Bible, Atrocities , only a few)

[2] Ibn Ishaq, The Life of Muhammad, trs. A Guillaume, Oxford University Press, Karachi, 2004 imprint, p545

[3] Tabari, Abu Ja’far Muhammad b. Jarir, “The Victory of Islam”, vol viii, pp.35-36

[4] K. Armstrong Muhammad: A Western Attempt to Understand Islam, Gollanz, 1991, London, p. 207.

[5] আকাশ মালিক, যে সত্য বলা হয়নি, মুক্তমনা ইবুক।

[6] S. Moninul Haq, Pakistan Historical Society. Ibn Sa’d’s Kitab Al-Tabaqat Al-Kabir Vols. 1&2. ISBN 81-7151-127-9

[7] আকাশ মালিক, যে সত্য বলা হয়নি, মুক্তমনা ইবুক।

[8] সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-১১, হাদিস নং-২১৫০ দ্রঃ

[9] ভগবদগীতা, ২/১৩

[10] রণদীপম বসু, অস্পৃশ্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং একজন বাবাসাহেব, পর্ব, ০১-০৮; মুক্তমনা

[11] অনন্ত বিজয় দাশ, ‘সনাতন ধর্মে’র দৃষ্টিতে নারী, বিজ্ঞান ও ধর্ম সংঘাত নাকি সমন্বয়; মুক্তমনা ই-বুক।

[12] হাইকোর্টের রায়: ফতোয়া অবৈধ ও বেআইনি, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি, জুলাই ০৮, ২০১০

[13] Steven Pinker, A History Of Violence, Edge, online version : http://www.edge.org/3rd_culture/pinker07/pinker07_index.html

[14] Ann Gibbons, Archaeologists Rediscover Cannibals, Science, Vol. 277. no. 5326, pp. 635 – 637, 1997

[15] Jane Bosveld, “Did We Mate With Neanderthals, or Did We Murder Them?”, Discover Magazine, November 2009

[16] Ralph S. Solecki, Rose L. Solecki, Anagnostis P. Agelarakis, “The Proto-Neolithic Cemetery in Shanidar Cave”, 2004

[17] শিক্ষানবিস, শানিদার গুহার নিয়ানডার্থালেরা, মুক্তমনা।

[18] Jane Bosveld, “Did We Mate With Neanderthals, or Did We Murder Them?”, Discover Magazine, November 2009

[19] Tooby, J., and L. Cosmides. “The Evolution of War and Its Cognitive Foundations.” Proceedings of the Institute for Evolutionary Studies, 88 (1988): 1–15. ;Wrangham, R. W. “Evolution of Coalitionary Killing.” Yearbook of Physical Anthropology 42 (1999): 1–30.

[20] Trevor Royle, Collins Dictionary of Military Quotations, Collins; New Ed edition, 1991